যেসকল বাজে অভ্যাস প্রতিনিয়ত আপনাকে অসুস্থ করে তুলছে
সকালে বিছানা থেকে উঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত নানারকম অভ্যাসের সাথে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না প্রতিদিনকার অনেক অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আজকের এই আর্টিকেলে প্রতিদিনকার সেসব বাজে অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শরীর অসুস্থ করে ফেলে এমন ৩৫টি বাজে অভ্যাসঃ
১) আঙুল ফোটানো
ক্লান্তি দূর করতে কম বেশি আমাদের সবারই হাত পায়ের আঙ্গুল ফোটানোর অভ্যাস আছে। তবে এই অভ্যাসটা আমাদের ক্ষতির কারণও হতে পারে। সিনোভিয়াল ফ্লুয়িড নামে একটি জলীয়দ্রবণ আঙ্গুলের জয়েন্ট গুলোকে সহজেই নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আঙ্গুল ফোটানোর সময় এই তরলটিতে ক্ষুদ্র বুদবুদের সৃষ্টি হয় এবং অস্থিসন্ধির অভ্যন্তরীণ আর্টিকুলার কার্টিলেজের ক্ষয় বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তীকালে আঙ্গুলের অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত বাত রোগ অষ্টিওআর্থাইটিসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাছাড়া সবসময় হাত বা পায়ের আঙ্গুল ফোটাতে থাকলে হাত ফুলে যাওয়া এবং সময় বাড়ার সাথে সাথে আঙ্গুলের কার্যক্ষমতাও কমে যেতে পারে।
২) নখ কামড়ানো
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ছোট বাচ্চার মতো নখ কামড়ানোর অভ্যাস আছে। তবে এই বাজে অভ্যাসের কারণে সহজেই দেহে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে এবং দাঁত ও নখের ত্বকের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপনার এই অভ্যাস থেকে থাকলে, তা দ্রুত পরিহার করুন।
৩) ঘরে তালা দেওয়ার ব্যাপারে একের অধিক বার পরীক্ষা করা
দরজা তালাবন্ধ করে রেখেছি কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কখনও কখনও চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরে বাড়িতে ফিরে যাই। এই অভ্যাস অফিসে বা কাজে যেতে দেরী হওয়ার এবং বাড়ির লোকেরও বিরক্তির কারণ হতে পারে। এমনকি তৎক্ষণাৎ মানসিক চাপও সৃষ্টি করতে পারে এই অভ্যাস।
৪) বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরে নিয়ে প্রবেশ করা
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যে মাটিতে হাঁটি সে সম্পর্কে আমরা তেমন কোনো ধারণা রাখি না। আমরা প্রতিদিন বাইরের পুরোনো খাবারের কণা, রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ জুতার সাথে বহন করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসি। হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকরা জানিয়েছেন ২৫% এরও বেশি জুতা ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল নামে একটি ব্যাকটেরিয়া বহন করে। এটি একটি বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেন যা ডায়রিয়া এবং অন্যান্য গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৫) ঘুম থেকে উঠেই তৎক্ষণাৎ চা বা কফি পান করা
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে। এটি মেটাবলিজমের হার বাড়ায়, ব্রেন শাণিত করে এবং পুরো দিন তরতাজা রাখে বলে ঘুম থেকে উঠেই চা বা কফি পান অনেকের কাছে অধিক পছন্দের। তবে পরিমাণে বেশি কফি খাওয়া ব্লাড প্রেশার এবং পাকস্থলীর এসিড বাড়ানো সহ স্বাস্থ্যের অন্যান্য দিকের ক্ষতি করে।
৬) একটানা একই ভাবে বসে থাকা
আধুনিক কর্মক্ষেত্র কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। এই অভ্যাস মেটাবলিজম বা বিপাককে ধীর করে দেয় যার অর্থ আপনার ওজন দিন দিন বাড়তে পারে। তাছাড়া এটি হৃদরোগ, ভাস্কুলার ডিজিজ এবং রক্ত জমাট বাঁধাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সাথেও যুক্ত। এই অভ্যাসটা দূর করতে কাজের ফাঁকে একটু বিরতি নিন, চারদিকে ঘুরুন এবং বসার সময় মাথা সোজা করে শিরদাঁড়া টানটান করে বসুন।
৭) বাথরুমে ফোন ব্যবহার করা
আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই এ বাজে অভ্যাসটা রয়েছে। কিন্তু এটা করা আসলেই উচিত নয়। বাথরুমে যাওয়ার সময় এবং অন্য কোনো সময়ে ফোন ব্যবহার করুন কিন্ত – বাথরুম করার সময় করবেন না। টয়লেটের আসন, হাতল এবং কল হ্যান্ডেলগুলো ফ্লু ভাইরাস, কলিফর্ম এবং সালমোনেল্লার সহ ভয়ংকর জীবাণুতে পরিপূর্ণ থাকে। টয়লেট ব্যবহার এবং হাত ধোয়ার মধ্যে ফোনের স্পর্শ পড়ে। আবার টয়লেট করার পরে হাত ভালো ভাবে না ধুয়েই অনেকে ফোন ব্যবহার করে এবং এই জীবাণুগুলো আমাদের ফোনে থাকে যা আমরা আমাদের মুখের সামনে তুলে ধরি বা খাওয়ার সাথে সাথে জীবাণু বহন করি।
৮) উচ্চ শব্দে গান শোনা
কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার সময় হেডফোনের ভলিউম ৭৫ এর নিচে রাখার কথা আমাদের অনেকেরই খেয়াল থাকে না। হেডফোনে একটানা গান শুনলে শোনার ক্ষমতা ৪০-৫০ ডেসিবেল কমে যায়। কানের পর্দা কাঁপে। দূরের আওয়াজ শুনতেও অসুবিধা হয়। তাছাড়া বয়সের সাথে সাথে প্রচণ্ড জোরে মিউজিক শোনলে শ্রবণশক্তি হ্রাস করতে পারে। বয়স্কদের শ্রবণশক্তি চিন্তাভাবনা এমনকি মস্তিষ্কের টিস্যু হ্রাসের সাথে যুক্ত থাকার কারণে এমনটা হয়। তাই যতটা সম্ভব শব্দ শোনার সাধারণ মাত্রা প্রায় 60 ডেসিবেল এ রেখে শুনুন।
৯) প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার
হাইড্রেটেড না পানিশূন্য ত্বককে জ্বলজ্বল করে এবং ক্লান্তি বজায় রাখে, তবে প্লাস্টিকের বোতল থেকে পানি পান করলে শরীর আসলে ভাল থাকে না। প্লাস্টিকের বোতলে বিসফেনল এ বা বিপিএ নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে এবং এই রাসায়নিক পানিতে ঢুকে যায় এবং পানি পান করার সাথে সাথে রাসায়নিকগুলোও গলায় প্রবেশ করে। এই রাসায়নিকটি ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টি করে এবং হরমোনজনিত সমস্যার দিকে ঠেলে দেয় এবং প্রজনন হ্রাস করে এবং মেদ বাড়ায়।
এছাড়া হার্ভার্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রস্রাবের মধ্যে যাদের বিপিএ’র সর্বোচ্চ ঘনত্ব রয়েছে তাদের কোমর বড় এবং স্থূল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের পরিবর্তে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক-মুক্ত, স্টেইনলেস স্টিল এর জগ ব্যবহার করুন।
১০) তাড়াহুড়ো করে খাওয়া
চাকুরি সহ অন্যান্য কাজে অনেকেই ব্যস্ত সময়সূচির কারণে সঠিক সময়ে ঠিক মতো বসে খাবার খায় না। এতে খাবারগুলো ঠিকই পড়ে থাকে কিন্তু শরীরের উৎপাদনে কোনো কাজে দেয় না। মধ্যাহ্নভোজ এবং রাতের খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে খাবার শেষ হলে খাবার হজম প্রক্রিয়ায় পুরোপরি যেতে পারে না তাছাড়া মস্তিষ্ক দেহ পূর্ণ কিনা তা সনাক্ত করতে প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় নেয়। খুব তাড়াহুড়ো করে খেলে খিটখিটে অন্ত্র সিন্ড্রোম, বাত এবং হৃদরোগ সহ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্যাগুলো আপনার পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম এবং বমি বমি ভাব দেখা দিয়ে আপনাকে আরামদায়ক দিন কাটাতে বাধা দেয়। তাই তাড়াহুড়ো না করে ধীরে সুস্থে খাবার খাবেন।
১১) রোদে বেশি না থাকা
পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো না পেলে আপনার ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যথাসম্ভব সকাল ১০টার পর থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে যেকোনো সময়ে সূর্যের আলোতে আসেন কারণ এই সময়টাতে ভালো রোদ মেলে।
১২) পর্যাপ্ত পানি পান না করা
প্রচুর পরিমাণে পানি না খেলে আপনি ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার ঝুঁকিতে পযান। যা আপনার শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে প্রসারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো দুর্বল করে দেয়।
১৩) কর্মক্ষেত্রে অনেক চাপের মধ্যে থাকা
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনাকে নানান ধরনের রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত চাপ আসলে বার্নআউটের মতো রোগে পড়তে পারেন। এজন্য বেশী চাপ হয়ে গেলে পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
১৪) ডেস্কে খাবার খাওয়া
সাধারণত বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে কীবোর্ড, মাউস এবং ডেস্কে সাধারণত জীবাণুতে ভরা থাকে। তাই সুস্থ থাকতে এমন নোংরা জায়গায় অবশ্যই খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৫) অন্যদের কলম ব্যবহার করা
প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা এখনও কলম ব্যবহার করি তবে কলম জীবাণুতে পরিপূর্ণ থাকতে পারে। তাই অন্যদের কলম ব্যবহার না করে নিজের কলম ব্যবহার করাই শ্রেয়।
১৬) যথেষ্ট পরিমাণে না ঘুমানো
অনেকেই রাতে ফেইসবুক বা ইউটিউবে সময় ব্যয় করেই ঘুমানোর যথোপযুক্ত সময়ের কাটা পার করে দেয়। এতে করে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এবং আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হবে। আর এতে প্রমাণ মেলে আপনার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কম কার্যকর। ভালো ঘুমানোর জন্য সঠিক নিয়মকানুন মেনে চলুন যাতে করে শরীরে প্রতিদিনের ঘুমের ঘাটতি হ্রাস পায়।
১৭) অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খাওয়া
সুগার সমৃদ্ধ ডায়েট সাধারণভাবেই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। এটি অন্ত্র ব্যাকটেরিয়ায় ইমিউন সিস্টেম এর মতো প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
১৮) বাইরে থেকে বাড়ি এলে পোশাক পরিবর্তন না করা
আপনি কি জানেন যে কোনও অসুস্থ ব্যক্তি যদি আপনার চারপাশে কাশি বা হাঁচি দেয় তবে তাদের লালা বা শ্লেষা আপনার কাপড়ের সাথে ঝুলতে পারে? তাই যথাসম্ভব বাড়ি ফিরে আপনার ব্যবহৃত পোশাক পরিবর্তন করুন ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করুন।
১৯) লিফট ব্যবহার করা
লিফটের বোতামগুলো অনেক লোকের স্পর্শ পড়ে, এজন্য লিফটের বোতামগুলো জীবাণুতে ঠাসা। তাই জীবাণু এড়াতে লিফটের ব্যবহার কমিয়ে দিন। লিফট এর বদলে সিঁড়ি ব্যাবহার করুন, এতে করে আপনার শারীরিক ব্যায়াম হবে এবং শরীর ভালো থাকবে।
২০) হিল জুতা ব্যাবহার করা
মেয়েরা সাধারণত নিজেকে লম্বা এবং আরো আকর্ষণীয় দেখানোর জন্যই হিল পরে। তবে স্টিলেটটোস হিল আরামদায়ক নয়। হিল পড়ার কারণে যে ব্যাথা হয় তা দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণ হতে পারে। এক গবেষনায় দেখা গেছে ঘন ঘন হিল পরার কারণে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস, অ্যাকিলিস টেন্ডিনোপাথি, পায়ের গোড়ালির সমস্যা, হাঁটুর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যা, নিতম্বের সমস্যা এবং পিঠে ব্যথার মতো সমস্যা হয়।
২১) খুব বেশি ব্যয়াম করা
বেশি বেশি অনুশীলন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে এর অত্যধিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ব্যায়ামের পরে স্ট্রেস হরমোনের অবিচ্ছিন্নভাবে বের হওয়া সর্দি ধরার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
২২) অন্য লোকের খাবার খাওয়া
অফিসে যার সাথে আপনার খুব ঘনিষ্ঠ থাকে তার সাথে পানীয় বা খাবার শেয়ার করা এড়িয়ে যান। কারণ খাবারে ভাগ দিলে নিজেকে জীবাণু ভাগ করে নেওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন।
২৩) সকালের নাস্তা না খাওয়া
নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের অংশ ব্যতীত আপনি ইচ্ছে করে সকালের খাবার এড়িয়ে গেলে সারা দিন আপনার শক্তির স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে সর্দি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
২৪) সিঁড়ির হ্যান্ডেল স্পর্শ করা
অফিস, শপিং সহ বিভিন্ন জায়গাতে সিঁড়ির হ্যান্ডেল ছোঁয়া এড়িয়ে যেতে হবে কারণ বিভিন্ন লোকের সিঁড়ির হ্যান্ডেলে স্পর্শ থাকে। এতে করে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২৫) জিমনেশিয়ামের সরঞ্জাম ব্যবহার করার আগে পরিষ্কার না করা
সারাদিন জিমনেশিয়ামের সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফেলে রাখলে জীবাণু ও ময়লা জমে যায়। তাই যখনই সম্ভব হয় জিমের মেশিনগুলো দিনের শুরুতে ব্যবহার করার আগে ভালভাবে মুুছে নিন।
২৬) ধূমপায়ী বা ধূমপায়ীদের সঙ্গে থাকা
ধুমপানের মতো খারাপ অভ্যাস আমাদের দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ব্রঙ্কাইটিস, এস্ফিসেমা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণও হতে পারে। তাছাড়া যক্ষা, চোখের সমস্যা এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো প্রতিরোধ ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ায়। এমনকি যারা ধুমপায়ীদের সঙ্গে থাকে তাদের হাঁপানি, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে এসবের থেকে সরে আসুন।
২৭) যোগব্যায়াম এড়িয়ে যাওয়া
যোগব্যায়াম শ্বাস প্রশ্বাসের উন্নতি করে এবং অন্যান্য উপকারের মধ্যে স্ট্রেস বা চাপের স্তর হ্রাস করতে পারে। আর এগুলোর সবই সর্দি প্রতিরোধের প্রতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২৮) ডায়েটে প্রোবায়োটিকের অভাব থাকা
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলো পরীক্ষা করে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রোবায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যকর অন্ত্রে উদ্ভিদ বজায় রাখতে সহায়তা করে। আর অন্ত্রের নানানধরনের রোগব্যাধি যেমন ক্রোনস ডিজিজ, পাউশিটিস, আলসার দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে উপকারী এই মাইক্রোঅর্গানিজম।
২৯) নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়া
জাঙ্ক ফুড বা অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের মন ও পেট ভরিয়ে দেয়। তবে প্রক্রিয়াজাত এই খাবারগুলো শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং আপনার অন্ত্রের উদ্ভিদে এর প্রভাব ফেলে দেয়।
৩০) মানুষের খুব কাছাকাছি কথা বলা
স্পষ্টভাবে ঠাণ্ডা লেগেছে এমন লোকদের কাছাকাছি আসা থেকে বিরত থাকুন। সাধারণভাবে, আপনি যখন মানুষের সাথে কথা বলেন তখন কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা সর্বদা নিরাপদ। এতে করে তাদের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে পার হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
৩১) জীবাণুতে পরিপূর্ণ বস্তু অপরিষ্কার রাখা
আপনার ব্যবহৃত কীবোর্ড, ফোন, পাশাপাশি সুইচ এবং দরজা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার রাখুন কারণ এসবে প্রচুর পরিমাণে জীবাণূ থাকে।
৩২) ক্রমাগত হ্যান্ড শেক করা
বর্তমানের বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়, তাই হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকুন বিশেষত যারা অসুস্থ তাদের সাথে। যদি এড়াতে না পারেন তাহলে পরে আপনার হাত ধুয়ে নিন এবং আপনার চোখ, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৩৩) হিউমিডিফায়ার ব্যবহার না করা
শুষ্ক বায়ু আপনার অনুনাসিক পথ অবরুদ্ধ করতে পারে, তবে হিউমিডিফায়ার আপনার ঘর আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।
৩৪) ভুল সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ভাল ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং জীবাণু প্রতিরোধে বাধা দিতে পারে। সর্দি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, ব্যাকটেরিয়া নয়। তাই নিয়মিত সাবান এবং পানির ব্যবহার বজায় রাখুন।
৩৫) সঠিকভাবে হাত না ধোয়া
সঠিকভাবে হাত ধোয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি, তবে আমাদের মাঝে অনেকেই খুব দ্রুততার সাথে হাত ধুই। করোনাকালে সুস্থ থাকতে সাবান, হালকা উষ্ণ পানি ব্যবহার করে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালভাবে হাত ধুয়ে নিন।
শেষ কথা
দৈনন্দিনের এসব অভ্যাস আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। তবে আপনার দৃঢ় ইচ্ছে আর একটুখানি প্রচেষ্টাই আপনাকে বাজে অভ্যাস থেকে ফিরে আনতে পারবে। আর আপনার বাজে অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে এগুলোর অলটারনেটিভ যেমন জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মতো ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন কিছু করতে পারেন। যদিও নিমিষেই বদঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারবেন না তবে ধৈর্য ধরে নিয়মিত চর্চা করুন আপনার পরিবর্তন চলে আসবে।