কম্পিউটারটেকনোলজিল্যাপটপহার্ডওয়্যার

কিবোর্ড কি? কিবোর্ডের পরিচিতি ও প্রকারভেদ 

গত কয়েক দশকে প্রযুক্তিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সত্যিই অভাবনীয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব বেশ সুস্পষ্ট। এখন মানুষের জীবনধারণের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তাই আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বে কম্পিউটারের কোনো বিকল্প নেই। ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র, সর্বত্র এই ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্যকলাপ চলতে থাকে। আর এই কম্পিউটারেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনপুট ডিভাইস হলো কিবোর্ড। কিন্তু এই কিবোর্ডের মূল ভাবনাটি এসেছে, বিগত দশকে ব্যবহৃত টাইপরাইটার থেকে। প্রযুক্তির উন্নয়নে আদিকালের সেই টাইপরাইটার বিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে আজকের কিবোর্ড। বর্তমানে সর্বত্র নানা কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই কিবোর্ড সম্পর্কে আমাদের কিছু স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। তাই আজকের লেখাতে আমরা কিবোর্ডের বিস্তারিত পরিচিতি, এটি কীভাবে কাজ করে, কিবোর্ডের প্রকার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

কিবোর্ড কী?

কিবোর্ড হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস (Input Device) যা বিভিন্ন বর্ণ, সংখ্যা ও চিহ্ন সম্বলিত বাটন (Button) তথা ‘কি’ (Key) এর সমন্বয়ে গঠিত। এটি কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার জন্যই মূলত ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একটি কিবোর্ড ইউএসবি ক্যাবল (USB Cable) অথবা ব্লুটুথ অ্যাডাপ্টারের (Bluetooth Adapter) সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। কিবোর্ডের এক-একটি বাটন বা কি প্রেস করে কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন ইনপুট দেয়া যায়। কিবোর্ড ব্যবহার করে লেখালেখি ছাড়াও কম্পিউটারে আরো অনেকধরনের কমান্ড (command) দিয়ে বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই যেমন ধরুন, ব্রাইটনেস (Brightness) কমানো-বাড়ানো, স্পিকার মিউট করা, কোনো ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা ইত্যাদি। এছাড়া কিবোর্ডের একাধিক কি-এর সমন্বয়ে গঠিত কিবোর্ড শর্টকাটগুলো ব্যবহার করে কম্পিউটারে আরো অনেক কাজ সহজে করে ফেলা যায়।

কিবোর্ড পরিচিতি 

কিবোর্ড মূলত কি বা কি ক্যাপ-এর সমন্বয়। কিবোর্ডে সাধারণত ১০৪ থেকে ১০৬ টি পর্যন্ত কি ক্যাপ থাকে। এই কি ক্যাপগুলোকে প্রধাণত চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

  • টাইপিং কি’স (Typing Keys) 
  • নিউমেরিক কিপ্যাড (Numeric Keypad) 
  • ফাংশন কি’স (Function Keys) 
  • কন্ট্রোল কি’স (Control Keys) 
কিবোর্ড পরিচিতি 
সূত্রঃ কম্পিউটার হোপ

টাইপিং কি’স 

আমরা যেসব ‘কি’ ব্যবহার করে সাধারণত বিভিন্ন বর্ণ লিখে থাকি, সেগুলোকে বলে টাইপিং কি’স। এই টাইপিং কি’গুলোর অবস্থানের ভিত্তিতেই কিবোর্ডের ধরন নির্ধারিত হয়। প্রায় সবধরনের কিবোর্ডে টাইপিং কি’গুলো তিনটি সারিতে বিভক্ত থাকে। সেগুলো হলোঃ

  • প্রথম সারি – টপ রো (Top Row) 
  • দ্বিতীয় সারি – হোম রো (Home Row)
  • তৃতীয় সারি – বটম রো (Bottom Row) 

উল্লেখ্য যে, কিবোর্ডের হোম রো-এর উপর আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে রাখাকে কিবোর্ডে হাত রাখার আদর্শ অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

নিউমেরিক কি’স

কিবোর্ডের ডানদিকে থাকা ০ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০টি সংখ্যা, দশমিক, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ চিহ্ন সম্বলিত কি’সমূহ হলো নিউমেরিক কি’স। এসব কি বা বাটন প্রেস করে কম্পিউটারে বিভিন্ন সংখ্যাজনিত ইনপুট দেয়া হয়। এছাড়াও কিবোর্ডে আলাদা করে দেয়া, নাম লক (Num Lock) কি প্রেস করে নিউমেরিক কিপ্যাডটি চালু করতে হয়।

ফাংশন কি’স 

১৯৮৬ সালে আইবিএম (IBM) তাদের কিবোর্ডে ফাংশন এবং কন্ট্রোল ‘কি’ যুক্ত করে। কিবোর্ডে একদম উপরের সারিতে এফ১ (F1) থেকে এফ১২ (F12) লেবেলযুক্ত এই বারোটি ফাংশন কি সাজানো থাকে। এই বারোটি কি ‘সফট কি’ নামেও পরিচিত। এসব কি মূলত প্রিন্টিং বা ফাইল সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে শর্টকাট কি হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। যদিও প্রতিটি ফাংশন ‘কি’ কম্পিউটারে কোনো না কোনো বিশেষ কাজের ইনপুট দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার ভেদে এসব ফাংশন কি আলাদাভাবে কাজ করে থাকে। যেমন, ডিভাইসে ‘অভ্র’ সফটওয়্যারটি চালু থাকলে এফ১২ কি চাপলেই, বাংলা থেকে ইংরেজি অথবা ইংরেজি থেকে বাংলায় ইনপুট পরিবর্তিত হয়। কিন্তু অভ্র বন্ধ থাকলে এফ১২ বাটন কম্পিউটারে ভিন্ন কোনো কাজের ইনপুট দেবে।

কন্ট্রোল কি’স 

কন্ট্রোল কি’স এর ভেতর সবচেয়ে পরিচিত চারটি ‘কি’ হলো ‘অ্যারো কি’স’ (Arrow Keys)। এর সাহায্যে আপনি লেখার সময়ে যেকোনো দিকে কার্সর (Cursor) নিতে পারবেন। এছাড়াও ইনসার্ট (Insert), হোম (Home), পেজ আপ (Page UP), পেজ ডাউন (Page Down), ডিলিট (Delete), এন্ড (End) ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কন্ট্রোল কি রয়েছে, যেগুলো ডিভাইসে গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট দিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।  

কিবোর্ড কীভাবে কাজ করে? 

কিবোর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে কিবোর্ড কীভাবে কাজ করে তাও আমাদের জানা প্রয়োজন। কিবোর্ডে ‘কি’ ছাড়াও, রয়েছে এর নিজস্ব প্রসেসর (Processor), রম (ROM) ও সার্কিট বোর্ড (Circuit Board)। 

কিবোর্ডের সার্কিট বোর্ডেটির একটি বড় অংশ কিবোর্ডের কিপ্যাড অংশের নিচে বিস্তৃত থাকে। এটিকে বলে কি ম্যাট্রিক্স (Key Matrix)। এই সার্কিটে প্রতিটি কি ক্যাপ-এর নিচে একটি করে সুইচ (Switch) থাকে। যখনই আপনি একটি ‘কি’ চাপ দিয়ে থাকেন, তখনই সুইচটিতে চাপ পড়ে এবং সার্কিটের ঐ অংশের ভেতর দিয়ে স্বল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের সাথে সাথেই কিবোর্ডের প্রসেসর তা ধরে ফেলে এবং রমে সংরক্ষিত ডাটার সাথে তা মিলিয়ে দেখে। রম-এর মেমোরি অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিহ্ন সম্বলিত ‘কি’ প্রেস (Press) করে কম্পিউটারে নির্দিষ্ট ইনপুট দেওয়া যায়। তবে একই সাথে দুইটি কি বা বাটন প্রেস করা হলে, দুটির মধ্যে সম্পৃক্ততা যাচাই করে কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া হয়। যেমন, শিফট (Shift) চেপে এ (a) প্রেস করলে ছোট হাতের অক্ষরের বদলে বড় হাতের অক্ষর বসবে। এভাবেই মূলত প্রতিটি কিবোর্ড কাজ করে থাকে।

কিবোর্ডের প্রকারভেদ

কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যেভেদে বিভিন্নধরনের কিবোর্ড পাওয়া যায়। নিচে বিভিন্নপ্রকারের কিবোর্ডের বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ 

মৌলিক বৈশিষ্ট্য ধরন 
সংযোগ মাধ্যম তারযুক্ত কিবোর্ড 
তারবিহীন কিবোর্ড 
লেআউট (Layout) কুয়েরটি  কিবোর্ড (QWERTY Keyboard)
কুয়েরটজ কিবোর্ড (QWERTZ Keyboard) 
অ্যাজেরটি কিবোর্ড (AZERTY Keyboard) 
‘কি’ এর ধরন মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard) 
মেকানিকাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard) 

সংযোগ মাধ্যম বিবেচনায় দুইধরনের কিবোর্ডের বিস্তারিত নিচে আলোচিত হলো:

তারযুক্ত কিবোর্ড 

কিবোর্ড আবিষ্কারের পর থেকেই এটি সাধারণত একটি তারের মাধ্যমেই কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হতো। যদিও যুগে যুগে এমন তারের ধরনও বদলেছে। পূর্বে ডিন কানেক্টর (DIN Connector) ব্যবহৃত হলেও এখন সবাই ইউএসবি (USB) কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকে। এই ইউএসবি-এর ভেতরেও ইউএসবি ২.০, ৩.০, ৩.১ ইত্যাদি নানা ধরন রয়েছে। তারযুক্ত কি বোর্ডের কিছু সাধারণ সুবিধা-অসুবিধা হলোঃ 

সুবিধাঅসুবিধা
১। সংযোগ সরাসরি হওয়ায় ইনপুটের গতির কোনো পরিবর্তন হয় না। ১। তারের দূরত্ব যতটুকু ততটুকুর মধ্যেই ব্যবহার করতে হয়। 
২। তুলনামূলক দাম কম 

তারবিহীন কিবোর্ড 

তারবিহীন কিবোর্ড হলো সেসব কিবোর্ড, যেগুলো ব্যবহার করতে গেলে ডিভাইসের সাথে সরাসরি তারের সংযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারবিহীন কিবোর্ডগুলো সাধারণত ব্লুটুথ-এর মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট (Connect) করা হয়। ইউএসবি’র মতো ব্লুটুথ-এরও একাধিক ভার্সন রয়েছে। যদিও এখনো তার‍যুক্ত কিবোর্ডই বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে তারবিহীন কিবোর্ডও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারবিহীন কিবোর্ডের কিছু সুবিধা-অসুবিধা নিম্নরূপঃ

সুবিধাঅসুবিধা
১। কক্ষের যেকোনো অংশে বসে ব্যবহার করা যায়। ১। ডিভাইস থেকে বেশি দূরে থাকলে সিগনাল দুর্বল হয়ে ইনপুট ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে যায়।
২। তুলনামূলক দাম বেশি। 
৩। ব্যাটারি বার বার চার্জ করতে হয়। 

কিবোর্ড লেআউট ভেদে সমগ্র বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত তিনধরনের কিবোর্ডের বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো:

কুয়েরটি  কিবোর্ড (QWERTY Keyboard) 

বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত কিবোর্ড হলো কুয়েরটি (QWERTY) কিবোর্ড। ১৮৬৭ সালে আধুনিক টাইপরাইটারে প্রথম এইধরনের কিবোর্ডের লেআউট ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব জুড়েই এই কিবোর্ডের ব্যবহার রয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন যে, এধরনের কিবোর্ডের টাইপিং কি গুলোর প্রথম পাঁচটি বর্ণ হলো যথাক্রমে ‘Q’ , ‘W’, ‘E’, ‘R’, ‘T’, ‘Y’। এই পাঁচটি বর্ণের সমীকরণেই এই লেআউট এবং কিবোর্ডের ধরনটির নামকরণ করা হয়েছে। কুয়েরটি  কিবোর্ড (QWERTY Keyboard)

কুয়েরটজ কিবোর্ড (QWERTZ Keyboard) 

কুয়েরটজ কিবোর্ডটি ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড এসব দেশে এই ধরনের কিবোর্ডই বেশি ব্যবহৃত হয়। কুয়েরটি কিবোর্ডের সাথে এই কিবোর্ডের তেমন কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। শুধু এই কিবোর্ডের  কি লেআউটে ইংরেজি Y এর জায়গায় Z বাটন থাকে। 

কুয়েরটজ কিবোর্ড (QWERTZ Keyboard)

অ্যাজেরটি কিবোর্ড (AZERTY Keyboard) 

এধরনের কিবোর্ড সাধারণত ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং কিছু আফ্রিকান দেশে ব্যবহৃত হয়। কুয়েরটি কিবোর্ডের সাথে এই কিবোর্ডের লেআউটের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এই কিবোর্ড লেআউটে A এর জায়গায় Q এবং Z এর জায়গায় W থাকে। এটিতে M এর অবস্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে L এর পাশে এবং ক্যাপস লক (Caps Lock)-এর বদলে থাকে শিফট লক (Shift Lock)। অ্যাজেরটি কিবোর্ড (AZERTY Keyboard)

কিবোর্ডের কি-এর ধরন ভেদে বাজারে বিভিন্নধরনের কিবোর্ড পাওয়া যায়। তেমন কিছু কিবোর্ডের বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো:

মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard) 

মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard)

মেমব্রেন কিবোর্ডের কি ক্যাপগুলোর নিচে মেমব্রেন নামক প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। কিবোর্ডের সার্কিট ম্যাট্রিক্স এবং কি ক্যাপের মাঝখানে থাকে এই মেমব্রেন। এধরনের কিবোর্ডে এই মেমব্রেনের সাহায্যে ইনপুট দেয়ার কাজ করা হয়। এসব কিবোর্ডে কোনো ‘কি’ চাপলে তা মেমব্রেনে চাপ দেয়। এতে মেমব্রেন স্তরের নিচে অবস্থিত সার্কিটে চাপ লাগে, এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পন্ন হলে ডিভাইসে ইনপুট কমান্ড যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে মেমব্রেন কিবোর্ডই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এই কিবোর্ডের কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। যেমন:

সুবিধাঅসুবিধা
১। বেশ কম দামী। ১। মেকানিকাল কিবোর্ডের তুলনায় কম প্রতিক্রিয়াশীল। 
২। তেমন শব্দ হয় না। ২। জোরে চাপ না পড়লে অনেক সময় ইনপুট হয় না। 
৩। ধুলা-ময়লা কম আকর্ষণ করে। ৩। আলাদা করে ‘কি ক্যাপ’ খোলা যায় না। 
৪। সাধারণত ওজনে বেশ হালকা হয়ে থাকে। ৪। পরিষ্কার করা বেশ কষ্ট। 

মেকানিকাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard) 

মেকানিকাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard)

মেকানিকাল কিবোর্ড মেমব্রেন কিবোর্ড থেকে একদম আলাদা। মেকানিকাল কিবোর্ডের প্রতিটি কি’র জন্য আলাদা আলাদা সুইচ থাকে। অর্থাৎ এধরনের কিবোর্ডে প্রতিটি উকি ক্যাপই এক একটি আলাদা ইউনিট। মেকানিকাল কিবোর্ডের প্রতিটি কি’র নিচে থাকা আলাদা সুইচ আলাদা আলাদাভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে এবং ডিভাইসে ইনপুট দিতে সহায়তা করে। এই কিবোর্ডের কিছু সুবিধা-অসুবিধা হলো:

সুবিধাঅসুবিধা
১। প্রতিটি কি’র জন্য আলাদা সুইচ থাকায় এটি বেশ দ্রুতগতিতে কাজ করে।১। মেমব্রেনের কিবোর্ডের তুলনায় দাম অনেকটাই বেশি। 
২। একসাথে দুইটি ‘কি’ তে চাপ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ২। ধুলা-ময়লা বেশি আটকে থাকে। 
৩। প্রতিটি ‘কি ক্যাপ’ আলাদা করে খুলে আবার লাগানো যায়, পরিবর্তন করা যায়। ৩। মেমব্রেন কিবোর্ডের তুলনায় ওজন বেশি। 
৪। পরিষ্কার করা সহজ ৪। শব্দ অনেকটাই বেশি যা কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

ব্যাকলিট কিবোর্ড (Backlit Keyboard) 

ব্যাকলিট কিবোর্ড (Backlit Keyboard)

যেসব কিবোর্ডের কি ক্যাপ-এর নিচে আলো জ্বলতে থাকে, সেসব কিবোর্ডকেই বলে ব্যাকলিট কিবোর্ড। মেমব্রেন অথবা মেকানিকাল যেকোনোধরনের কিবোর্ডেই এই বিশেষ আলোর সুবিধা থাকতে পারে। এধরনের কিবোর্ডের প্রধান সুবিধা হলো রাতের বেলা কাজ ককিবোর্ডের নিজস্ব আলো কাজের ক্ষেত্রে দারুণ সহায়তা করে। আলাদা করে লাইট জ্বালানো ছাড়াই, সহজে কিবোর্ডের প্রতিটি ‘কি’ স্পষ্টভাবে দেখতে চাইলে ব্যাকলিট কিবোর্ডের কোনো বিকল্প নেই। 

এর্গোনোমিক কিবোর্ড (Ergonomic Keyboard) 

এর্গোনোমিক কিবোর্ড (Ergonomic Keyboard)
সূত্রঃ আরটিংস 

মানুষের ব্যবহারের সুবিধার্থে সঠিক যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর উপায়কেই বলা হয় এর্গোনোমিকস (Ergonomics)। আর সেই ধারনা থেকেই এর্গোনোমিক কিবোর্ডের উৎপত্তি। এই ধরনের কিবোর্ডগুলো সাধারণ কিবোর্ডের মতো আয়তাকৃতির হয় না। বরং এর টাইপিং কি’গুলো দুই ভাগে বিভক্ত এবং একটি অপরটির সাথে কিছুটা কৌণিক অবস্থানে থাকে। এর ফলে এই কিবোর্ডে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেও কবজির ব্যথা হয় না। তবে বাংলাদেশের বাজারে এমন কিবোর্ড কমই পাওয়া যায়। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে নিজের হাতের সাথে মাপ দিয়ে আলাদা করে এধরনের কিবোর্ড বানিয়ে নেয়া সম্ভব।

ভার্চুয়াল কিবোর্ড (Virtual Keyboard) 

ভার্চুয়াল কিবোর্ড হলো এমন একধরনের কিবোর্ড সফটওয়্যার, যেটির সাহায্যে মাউস ব্যবহার করেই লেখা যায়। প্রায় প্রতিটি কম্পিউটারেই এমন সফটওয়্যার থাকে। উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা অন-স্ক্রিন কিবোর্ড (On-Screen Keyboard) লিখে উইন্ডোজে সার্চ করলেই এই কিবোর্ড সফটওয়্যারটি পেয়ে যাবেন। আপনার কিবোর্ডের এক বা একাধিক কি ক্যাপ নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে, নতুন কিবোর্ড কেনার আগপর্যন্ত ভার্চুয়াল কিবোর্ড ব্যবহার করে আপনি আপনার কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।

প্রজেকশন কিবোর্ড (Projection Keyboard) 

প্রজেকশন কিবোর্ড (Projection Keyboard)

একটি সমতলের উপর কিবোর্ডের প্রতিচ্ছবি তৈরি করে প্রজেকশন কিবোর্ড। সেই প্রতিচ্ছবি স্পর্শ করেই, কিবোর্ডটি ব্যবহার করা যায়। এই কিবোর্ডটিকে অনেকে ভার্চুয়াল কিবোর্ডের সাথে গুলিয়ে ফেলে। তবে এই কিবোর্ড ভার্চুয়াল কিবোর্ডের চেয়ে একেবারেই আলাদা। ভার্চুয়াল কিবোর্ড কেবল একটি সফটওয়্যার মাত্র। আর প্রজেকশন কিবোর্ড হলো, কোনো নির্দিষ্ট সমতলে প্রজেক্টর দিয়ে তৈরি কিবোর্ডের ভার্চুয়াল ছায়ার মতো। যেই কিবোর্ডের ছায়ায় ভেসে ওঠা কি’গুলোতে স্পর্শ করেই কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া সম্ভব।

ফ্লেক্সিবল কিবোর্ড (Flexible Keyboard) 

ফ্লেক্সিবল কিবোর্ডগুলো হলো এমন এক ধরনের কিবোর্ড, যেসব কিবোর্ড সহজেই বাঁকানো যায়, ভাজ করে বা গুটিয়েও ফেলা যায়। আবার এসব কিবোর্ড ব্যবহার করতেও বেশ সুবিধা। কোনো একটি নির্দিষ্ট সমতলে রেখে ব্যবহার করা যায়। তবে এধরনের কিবোর্ডের দাম একটু বেশি আবার এগুলো সহজে ভেঙেও যায়।

শেষকথা 

আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনি কিবোর্ড সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। এতে করে কাজের ক্ষেত্রে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হলে তবেই আমাদের স্বার্থকতা।

 

 

 

সূত্র 

(১) কম্পিউটার হোপ (Computer Hope) 

(২) হাউ স্টাফ ওয়ার্কস (How Stuff Works) 

(৩) এডু সিবিএ (EduCBA)

(৪) এডুনটস (EduNots) 

(৫) পিসি ম্যাগ (PC Mag) 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button