কম্পিউটিং

দ্রুত টাইপ শেখার উপায় | টাইপিং শেখার সফটওয়্যার

আপনি পড়াশোনা করছেন অথবা চাকরি করছেন, বর্তমানে যেকোনো জায়গায় আপনার কাজের জন্য কম্পিউটার বা অন্য ডিজিটাল ডিভাইস  ব্যবহার করতে হয়। আর এক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিভিন্ন কাজ করতে টাইপিংয়ের প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন, আপনার অফিসে বা শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো দরখাস্ত লিখতে, ই-মেইল (Email) পাঠাতে, কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing), প্রেজেনটেশন (Presentation), প্রোগ্রামিং (Programming) বা যেকোনো রিপোর্ট (Report) তৈরির কাজেও টাইপিংয়ের প্রয়োজন হয়। এমনকি আমাদের দৈনন্দিন নানা কাজে ইন্টারনেট ব্রাউজ (Internet Browse)  করতেও টাইপ করতেই হয়। আর এসব ক্ষেত্রে-

  • দ্রুত টাইপিং আপনার কাজগুলো আরো তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। 
  • দ্রুত টাইপিংয়ের মাধ্যমে, আপনি একাডেমিক (Academic) বা আপনার প্রফেশনাল (Professional) কাজের সাথে সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেন।
  • চাকরির বাজারে, দ্রুত টাইপিং একটি মূল্যবান দক্ষতা। যা আপনাকে অনেকখানি এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
  • প্রোগ্রামিংয়ের সময় দ্রুত টাইপিংয়ের মাধ্যমে কোডিং দ্রুত করা সম্ভব হয়। যা নির্দিষ্ট কোডিং প্রকল্প তাড়াতাড়ি শেষ করতে সহায়তা করে।
  • ট্রান্সক্রিপশনবিদদের, তাদের কাজের বিভিন্ন লেখালেখি নির্ভুলভাবে অতিশীঘ্র  টাইপ করার জন্য দ্রুত টাইপিং একটি অপরিহার্য দক্ষতা।

দ্রুত টাইপিং শেখার উপায়

দ্রুত টাইপ করতে পারার ক্ষমতা যেকোনো ক্ষেত্রে আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। যেমন ধরুন, লেখার জন্য আপনার মাথায় কোনো আইডিয়া এলে, তখনি সেটা দ্রূত লিখে না ফেললে কিছুক্ষণ পর তা ভুলে যেতে পারেন। তখন হয়তো আপনি অনেক চেষ্টার পরও তা আর কিছুতেই মনে করতে পারেন না। দ্রুত টাইপ করতে পারলে আপনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনি চিন্তা করার সাথে সাথে টাইপ করে যেতে পারেন। এতে করে আপনার লেখার সময় স্বাভাবিক ছন্দে যেটাই আপনার মাথায় আসবে আপনি সাথে সাথে লিখে ফেলতে পারবেন। এর ফলে আপনার লেখার মানও আরো ভালো হতে থাকবে। এখন আমরা দ্রুত টাইপিংয়ের কয়েকটি উপায় জানার চেষ্টা করব।

টিপস ১- টাচ টাইপিং (Touch Typing)

টিপস ১- টাচ টাইপিং (Touch Typing)

“টাচ টাইপিং” (Touch Typing) একটি টাইপিং কৌশল। কী-বোর্ডে না দেখে হাতের দশটি আঙ্গুল ব্যবহার করে টাইপ করার কৌশলকে বলা হয় টাচ টাইপিং। এই কৌশলের সাহায্যে দ্রুত, নির্ভুলভাবে এবং দক্ষতার সাথে টাইপ করা যায়। টাচ টাইপিং দ্রুত টাইপিংয়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি পন্থা। এই কৌশল শিখতে পারলেই আপনি অনেক দক্ষ একজন টাইপিস্ট হয়ে উঠতে পারবেন।

টাইপিংয়ের গতি বাড়ানোর প্রথম শর্ত হলো কোন আঙ্গুল দিয়ে কোন অক্ষর টাইপ করবেন তা বোঝা। কি-বোর্ডের উপর ঠিকমতো হাত রাখতে না পারলে দ্রুত টাইপ করা যায় না। এজন্য কী-বোর্ডে আঙ্গুল রাখার নিয়মটি মনে রাখা জরুরী। নিয়মটি হলো:

  • আপনি যদি প্রতিটি অক্ষরের জন্য এক বা একাধিক আঙ্গুল ব্যবহার করেন, তবে টাইপ করতে দেরি হবে। আর তাই কী-বোর্ডে হাতদুটো এমনভাবে রাখতে হবে যেনো আপনার দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পেসবারের ঠিক মাঝখানে থাকে।
  • এরপর কী-বোর্ডে অক্ষর যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেখান থেকে এটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথমে কিউ (Q) থেকে সারি, দ্বিতীয় এ (A) থেকে সারি এবং তৃতীয় জেড (Z) থেকে সারি।
  • আপনার বাঁ হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বিতীয় সারির এ (A)-এর উপর, অনামিকা এস (S)-এর উপর, মধ্যমা ডি (D)-এর উপর, তর্জনী এফ (F)-এর উপর রাখতে হবে। আবার তর্জনী দিয়ে জি (G) অক্ষরও টাইপ করতে হবে।
  • এরপর ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল সেমিকোলনের (;) উপর, অনামিকা এল (L)-এর উপর, মধ্যমা কে (K)-এর উপর, তর্জনী জে (J)-এর উপর রাখতে হবে। তর্জনী দিয়ে এইচ (H) অক্ষর টাইপ করতে হবে।
  • বাঁয়ে কোনো অক্ষর টাইপ করার পর স্পেস চাপতে হলে ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যবহার করতে হবে। আর ডানে কোনো অক্ষর টাইপ করার পর বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে স্পেস চাপতে হবে।
  • ছোট-বড় অক্ষর টাইপ করার সময় বাঁয়ের কোনো শব্দ বড় অক্ষরে (Capital Word) লিখতে হলে তখন ডানপাশের সিফট (Shift) চাপতে হবে। ঠিক একইভাবে ডানে বড় অক্ষর লেখার জন্য বাঁ পাশের সিফট নির্বাচন করতে হবে।

নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে টাচ টাইপিং শেখা সহজ হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে কী-বোর্ড দেখে দেখে টাইপ করলেও ধীরে ধীরে না দেখে টাইপ করার দক্ষতা অর্জন করা যায়।

টিপস ২- টাইপিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করা

টিপস ২- টাইপিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করা

টাইপিংয়ের উন্নত কৌশলগুলো শেখার আগে কী-বোর্ড লে-আউটের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিৎ। প্রতিটি বাটন (Button)-এর অবস্থান পরিষ্কার মনে রাখা প্রয়োজন। কী-বোর্ড না দেখে টাইপ করার অনুশীলন করা উচিৎ। এক্ষেত্রে টাচ টাইপিং হলো দ্রুত টাইপিংয়ের ভিত্তি। কারণ এই পদ্ধতিতে টাইপ করতে গেলে তা বাটনগুলোর পরিবর্তে স্ক্রিনে ফোকাস করতে সাহায্য করে। টাইপিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কী-বোর্ডে প্রত্যেকটি বাটনের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা রাখা। যেমন:

  • কী-বোর্ডে কোন বাটনের অবস্থান কোন স্থানে তা পর্যবেক্ষণ করতে কিছু সময় নিতে হবে।
  • QWERTY লে-আউট বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এটি সবচেয়ে পরিচিত কী-বোর্ড লে-আউট।
  • অক্ষর, সংখ্যা এবং চিহ্নের সারির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • সিফট, স্পেসবার, এন্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বাটনগুলোর অবস্থান মনে রাখতে হবে।
  • না দেখে টাইপ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো মাসেল মেমোরি (Muscle Memory)। এই উপায়ে অনুশীলনের মাধ্যমে না দেখে আপনার আঙ্গুলগুলো আপনি যে বাটনে প্রেস করতে চান তা প্রেস করবে।

টিপস ৩- কী-বোর্ড শর্টকাট শেখা

টিপস ৩- কী-বোর্ড শর্টকাট শেখা
সূত্রঃ মাইক্রোসফট

কী-বোর্ড শর্টকাট হলো কম্পিউটারে একটি নির্দিষ্ট কাজ বা কমান্ড (Command) সম্পাদন করার জন্য এক বা একাধিক বাটনের সংযোজন। কী-বোর্ড শর্টকাটগুলো কী-বোর্ড ব্যবহারকারীর দক্ষতা বাড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে। যা ব্যবহারকারীদের আরো দ্রুত নেভিগেট (Navigate) করতে সাহায্য করে এবং এতে করে মাউস (Mouse) ব্যবহার ছাড়াই নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করা যায়। 

কী-বোর্ড শর্টকাটগুলো এক বা একাধিক বাটনের সমন্বয়ে গঠিত। যা নির্দিষ্ট কাজ বা আদেশগুলোকে নির্দেশ করে। এই সংমিশ্রণগুলোতে মডিফায়ার বাটন যেমন, (Ctrl, Alt, বা Shift)-এর সাথে প্রায়শই অন্যান্য বাটন যেমন, যেকোনো (অক্ষর, সংখ্যা বা চিহ্ন)-সহ চাপতে হয়। যখন সঠিকভাবে শর্টকাটগুলো প্রেস করা হয় তখন নির্দিষ্ট কাজটি সম্পন্ন হয়। কী-বোর্ড শর্টকাটগুলো অপারেটিং সিস্টেম (Operating System), সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েব ব্রাউজার-সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।

টিপস ৪- বসার সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করা

টিপস ৪- বসার সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করা

টাইপ করার সময় আপনাকে বসার সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করতে হবে। এতে করে অত্যন্ত আরামদায়কভাবে আপনি টাইপ করতে পারবেন। বসার সময় সঠিক অঙ্গবিন্যাস শুধু যে শারীরিক চাপ কমায় তা নয়, বরং এতে করে আপনি নির্ভুলভাবে দ্রুত সহজে টাইপ করতে পারবেন। সঠিকভাবে বসার কারণে আপনি সামগ্রিকভাবে সুস্থও থাকবেন। একজন ছাত্র থেকে শুরু করে একজন পেশাদার বা কম্পিউটারে অনেক বেশি সময় কাটানো যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে বসার সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা, ভারসাম্যপূর্ণ সঠিক অঙ্গবিন্যাস অস্বস্তি, পেশী ক্লান্তি, কব্জি ব্যথা বা ঘাড়ে টান পড়ার মতো সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়। এ পদ্ধতিতে সোজা হয়ে বসে, আপনার পা মেঝেতে সমতল রাখুন। এবার কী-বোর্ডে আপনার হাত এবং হাতের আঙ্গুলগুলো নির্দিষ্ট স্থানে রেখে নিয়ম মেনে দ্রুত টাইপিংয়ের মাধ্যমে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কর্মদক্ষতা বাড়ানো যায়।

টিপস ৫- গেমস খেলে টাইপিং শেখা

টিপস ৫- গেমস খেলে টাইপিং শেখা

টাইপিং গেমগুলো টাইপিংয়ের গতি বৃদ্ধি এবং টাইপিংয়ের ভুল কমানোর জন্য একটি কার্যকরী এবং উপভোগ্য পদ্ধতি। এই ইন্টারেক্টিভ (Interactive) গেমগুলো দ্রুত টাইপ করা শেখার প্রক্রিয়াটিকে একটি বিনোদনমূলক অভিজ্ঞতায় রুপান্তরিত করে। এই সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে সবাই আরো দ্রুত টাইপ করার চেষ্টা করতে থাকেন। এতে করে আপনার আঙ্গুলগুলো কী-বোর্ডে সহজে নেভিগেট করার জন্য মাসেল মেমোরিকে অধিক শক্তিশালী করে তুলতে আরো পারদর্শী হয়ে ওঠে। টাইপিং গেমগুলো প্রায়শই বিভিন্ন পরিস্থিতির মাধ্যমে টাইপিং শেখাতে সাহায্য করে যাতে করে আপনি আনন্দের সাথে দ্রুত টাইপিং শিখে নিতে পারেন। টাইপিং গেম খেলার সময় টাইপিংয়ে যে দক্ষতা অর্জিত হয় তা পরবর্তীতে টাইপিংয়ের বিভিন্ন কাজগুলো সহজে করতে সাহায্য করে। একজন শিক্ষানবিস থেকে একজন কর্মজীবী, যে কেউ তাদের টাইপিং দক্ষতা আরো উন্নত করতে চাইলে, অধিক অনুশীলনের জন্য টাইপিং গেমগুলো খেলতে পারেন। এতে করে টাইপিং শেখার প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে।

টাইপিং শেখার সফটওয়্যার

আপনি দ্রুত টাইপিং শিখতে চাইলে আপনার জন্য আর একটি গ্রহণযোগ্য উপায় হলো সফটওয়্যার ব্যবহার করা। টাইপিং শেখার সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনি দ্রুত টাইপিং শিখে আপনার  টাইপিং দক্ষতা উন্নত করতে পারেন। এই সফটওয়্যারগুলোতে টাইপিং শেখানোর পাশাপাশি টাইপিং অনুশীলনও করা যায়। চলুন, কয়েকটি জনপ্রিয় টাইপিং শেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি-

টাইপিংমাস্টার (TypingMaster)

টাইপিংমাস্টার (TypingMaster)

টাইপিংমাস্টার (TypingMaster) একটি ব্যাপক জনপ্রিয় টাইপিং সফটওয়্যার। নবিস থেকে শুরু করে দক্ষ টাইপিস্ট, সবধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে। টাইপিংমাস্টার-এর একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এতে বিভিন্ন লেসন (Lesson), ইন্টারেক্টিভ ব্যায়াম এবং কর্মক্ষমতা ট্র্যাকিং করার মতো সুবিধা রয়েছে।

ফিচারস

  • টাইপিংমাস্টার-এ অনেক সূক্ষ্মভাবে লেসন ডিজাইন করা রয়েছে। এটি ধীরে ধীরে কী-বোর্ডের বাটনগুলোর সাথে এবং টাইপিংয়ের ধারণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
  • এতে টাইপিং শেখার জন্য এবং টাইপিংয়ের  গতি বাড়ানোর জন্য মাসেল মেমোরি আরো সমৃদ্ধ করতে বিভিন ব্যায়াম রয়েছে।
  • টাইপিংমাস্টার-এর রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক (Real Time Feedback) আপনার টাইপিংয়ে উন্নতির জন্য আপনার ভুলগুলোকে সাথে সাথে চিহ্নিত করে। এতে করে আপনি আপনার টাইপিংয়ের ভুলগুলো বুঝতে পারেন এবং তা সংশোধন করতে পারেন।
  • এই সফটওয়্যারে টাইপিং দ্রুত শেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের গেমস রয়েছে।
  • এতে টাইপিংয়ের অগ্রগতি, টাইপিং গতি ইত্যাদি নির্দিষ্ট করার জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম রয়েছে।

সফটওয়্যারটি সাতদিনের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এরপর ব্যবহারের জন্য অর্থ প্রদান করতে হয়। এর দুইটি ভার্সন (Version) পাওয়া যায়। একটি স্ট্যান্ডার্ড (Standard) এবং অপরটি প্রিমিয়াম (Premium)। স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন ব্যবহার করার জন্য ১৯.৯০ ডলার খরচ করতে হবে। অপরদিকে প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহারের জন্য আপনাকে ২৯.৯০ ডলার দিয়ে এই ভার্সন কিনতে হবে।

যারা তাদের টাইপিং দক্ষতাকে উন্নত করতে চান তাদের জন্য টাইপিংমাস্টার একটি অত্যন্ত উপকারী সফটওয়্যার। তাই টাইপিং দক্ষতা বাড়াতে যে কেউ নিশ্চিন্তে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।

টাইপিংক্লাব (TypingClub)

টাইপিংক্লাব (TypingClub)

টাইপিংক্লাব (TypingClub) একটি অনলাইন টাইপিং টিউটর সফটওয়্যার। এটিতে একটি ইন্টারেক্টিভ প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যা সব বয়স এবং পেশার মানুষের জন্য দ্রুত টাইপিং শেখার ক্ষেত্রে সহায়ক। টাইপিংক্লাব এমন একটি ব্যতিক্রমী সফটওয়্যার, যা আপনার টাচ টাইপিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং আপনার টাইপিং অনুশীলনকে অধিক ফলপ্রসূ করতে সাহায্য করে।

ফিচারস

  • টাইপিংক্লাব-এ কাঠামোবদ্ধ পাঠ্যক্রম (Structured curriculum) রয়েছে। যা ধীরে ধীরে কী-বোর্ডের বাটন এবং টাইপিংয়ের সম্পূর্ণ ধারণাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে সাহায্য করে।
  • এই সফটওয়্যারে আকর্ষণীয় টাইপিং ব্যায়াম রয়েছে। যা নিয়মিত অনুশীলন করলে তা ব্যবহারকারীদের মাসেল মেমোরি বিকাশে সহায়তা করে।
  • এতে টাইপিংয়ে বিস্তারিত অগ্রগতি, টাইপিং গতি, এবং এর ভুল ইত্যাদি নির্দিষ্ট করার জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম রয়েছে।
  • এতে টাইপিং দ্রুত শেখার জন্য বিভিন্নধরনের গেমস রয়েছে। যা একটি কম্পিটিশনের মাধ্যমে টাইপিং শেখাতে সাহায্য করে।
  • টাইপিংক্লাব-এ ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট পাঠ বাছাই করতে পারে। যা অনুশীলনের মাধ্যমে নির্দিষ্টক্ষেত্রে উন্নতি করা যায়।

টাইপিংক্লাব বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। তবে এটি কম্পিউটারে ব্যবহার করার জন্য একটি লাইসেন্স কিনতে হয়। যার মূল্য প্রতি বছরে ৯৯.৭৫ ডলার। সাধারণত অনলাইনে ব্যবহার করলেই টাইপিংক্লাব-এর সব ফিচারস ব্যবহার করা যায়। 

এক কথায় টাইপিংক্লাব-এর ইন্টারেক্টিভ লেসন এবং আকর্ষণীয় ব্যায়ামের সংমিশ্রণ সকলের টাইপিং দক্ষতা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

রাটাটাইপ (Ratatype)

রাটাটাইপ (Ratatype)

রাটাটাইপ (Ratatype) হলো একটি অত্যাধুনিক অনলাইন টাইপিং প্ল্যাটফর্ম। যেটি এর উদ্ভাবনী কৌশল এবং গ্যামিফাইড লেসন (Gamified Lesson)-এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এর মাধ্যমে টাইপিং দক্ষতা উন্নত করার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ হয়। এটিতে ব্যবহারকারীদের জন্য তাদের টাইপিং গতি, নির্ভুল টাইপিং এবং সামগ্রিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কার্যকরী নানা পদ্ধতি রয়েছে। এসব অনন্য পদ্ধতির মাধ্যমে, রাটাটাইপ টাইপিং অনুশীলনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

ফিচারস

  • রাটাটাইপ-এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর গেম-ভিত্তিক শেখানোর পদ্ধতি। যা গ্যামিফাইড লেসন হিসেবে পরিচিত। ব্যবহারকারীরা টাইপিং রেস (Typing Race)-এর মতো গেমের মাধ্যমে নিজেদের টাইপিংয়ের গতি বৃদ্ধি করে। এই গ্যামিফাইড লেসন ব্যবহারকারীদের, তাদের নিজেদের এবং অন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। যা মানুষকে দ্রুত এবং আরো সঠিকভাবে টাইপ করতে অনুপ্রাণিত করে।
  • প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের টাইপ করার জন্য বিস্তৃত লেখা এবং প্যাসেজ (Passage) প্রদান করে। এতে দক্ষতার স্তর বিশেষে বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণ হয়।
  • রাটাটাইপ সফটওয়্যার-এর ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস (User friendly interface)-এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। নতুনরা সহজেই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • এতে টাইপিংয়ের বিস্তারিত অগ্রগতি, এর গতি এবং ভুল ইত্যাদি নির্দিষ্ট করার জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম রয়েছে। এটি টাইপিং শেখার সামগ্রিক রিপোর্ট প্রদান করে। যা কাউকে তার টাইপিং শেখার অগ্রগতি সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে।
  • এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।

রাটাটাইপ গেমিংয়ের উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতার সাথে টাইপিং অনুশীলনকে মানুষের কাছে বেশ আনন্দময় করে তোলে। এর রিয়েল-টাইম রেস (Real time race), ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসের মাধ্যমে রাটাটাইপ ব্যবহারকারীদের দ্রুত টাইপ করার ক্ষমতা প্রদান করে।  

টাইপিং.কম (Typing.com)

টাইপিং.কম (Typing.com)

টাইপিং.কম (Typing.com) একটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যা সবধরনের ব্যবহারকারীদের টাইপিং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বানানো হয়েছে। এতে ব্যবহারকারীরা তাদের অগ্রগতি ট্র্যাকিং করতে পারে, এবং টাইপিং গেমগুলোর মাধ্যমে তাদের টাইপিং শেখাকে উপভোগ করতে পারে।

ফিচারস

  • এই প্ল্যাটফর্মে গ্যামিফাইড লেসনের মাধ্যমে টাইপিং শেখা যায়।
  • এতে নিজের মতো করে টাইপিং শেখা যায়। সেজন্য নিজের প্রয়োজন অনুসারে কোর্স বানিয়ে নেয়া যায়।
  • এটি টাচ টাইপিং শেখার উপর জোর দেয়।
  • এখানে নিজের শেখার অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য নিয়মিত প্রোগ্রেস রিপোর্ট পাওয়া যায়।
  • টাইপিং.কম শিক্ষামূলক পাঠ্যক্রমের মধ্যে টাইপিং দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে।
  • এটি বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের সাথে একসাথে কোলাবরেশনে কাজ করে।
  • এই সফটওয়্যারে অসংখ্য টাইপিং ব্যায়াম রয়েছে। যা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মাসেল মেমোরি আরো বিকশিত হয়। এর ফলে সহজে দ্রুত টাইপিং করার দক্ষতা অর্জন করা যায়।
  • টাইপিং.কম-এ কাঠামোবদ্ধ পাঠ্যক্রম রয়েছে। যা ধীরে ধীরে কী-বোর্ডের বাটন এবং টাইপিংয়ের সম্পূর্ণ ধারণাগুলো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সাহায্য করে।

স্টুডেন্টরা প্রতি মাসে ৩.৮৯ ডলার দিয়ে টাইপিং.কম ব্যবহার করতে পারে। এর একটি ফ্রি ভার্সনও রয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আকর্ষণীয় ফিচার সম্বলিত টাইপিং.কম সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজেই আপনি একজন দক্ষ টাইপিস্ট হয়ে উঠতে পারবেন।

টাইপসি (Typesy)

টাইপসি (Typesy)

বেশ সহজে টাইপিং দক্ষতা উন্নত করতে টাইপসি (Typesy) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় টাইপিং সফটওয়্যার। এর ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস যেকোনো ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। তাই প্রফেশনাল থেকে শুরু করে নতুন শিখতে চাওয়া শিক্ষার্থী সবাই এটি ব্যবহার করতে পারেন। টাইপসি টাইপিং গতি, নির্ভুলতা এবং টাইপিং সম্পর্কিত সামগ্রিক দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা একটা সফটওয়্যার।

ফিচারস

  • টাইপসি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই নয় বরং এটি বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখেও বানানো হয়েছে।
  • এর ইন্টারফেস এবং বিষয়বস্তু তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য ইউজার-ফ্রেন্ডলি হওয়ায় এটি টাইপিং শেখার প্রক্রিয়াকে তাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
  • এটি টাচ টাইপিং শেখানোর উপর বিশেষভাবে জোর দেয়।
  • টাইপিং করার সময় টাইপিংয়ের জটিল চিন্তাগুলোকে সহজ করে তুলে ধরতে এটি বিশেষভাবে কাজ করে।
  • বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট গেমস-এর মাধ্যমে এটি টাইপিং শেখানোর প্রক্রিয়াকে আরো আনন্দদায়ক করে তোলে।

টাইপসি সাতদিনের জন্য ফ্রি ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। তবে এরপর ব্যবহার করতে গেলে অর্থ প্রদান করতে হয়। এর বিভিন্নরকম প্যাকেজ রয়েছে। বিভিন্ন প্যাকেজের মূল্য বিভিন্নরকম। আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হন তাহলে প্রতি মাসে ৯ ডলার দিয়ে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।  

এই সফটওয়্যার শিক্ষানবিসদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য এটিতে আলাদা কিছু সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও প্রফেশনাল হিসেবে দ্রুত টাইপিং দক্ষতা বাড়াতেও টাইপসি অত্যন্ত কার্যকরী সফটওয়্যার।

শেষকথা

তাহলে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে, আজকের সময়ে টাইপিং দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা কতোটা! আমরা যখন তথ্য-উপাত্তের বিশাল ভাণ্ডার ব্যবহার করে কাজ করি তখন দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে নির্ভুল  টাইপ করতে পারা অত্যন্ত জরুরী। তাই দ্রুত টাইপিংয়ের দক্ষতা অর্জন করতে, টাইপিং সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করলে বা কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই সহজে যে কেউ একজন দক্ষ টাইপিস্ট হয়ে উঠতে পারবেন। কেননা, কিছু নির্দিষ্ট পন্থা এবং টাইপিং সফটওয়্যারগুলোর  অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ আমাদেরকে এতোটা দক্ষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে যে, আমাদের আঙ্গুলগুলো অনায়াসে কী-বোর্ডে নির্দিষ্ট বাটন খুঁজে পেতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং আশা করাই যায়, এই লেখায় উল্লেখিত নানা কৌশল এবং টাইপিং সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে আপনি একজন দক্ষ টাইপিস্ট হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। দ্রুত টাইপিং কি শুধুমাত্র পেশাদারদের জন্য?

উত্তরঃ না, আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, দ্রুত টাইপিং সবার সবধরনের কাজের ক্ষেত্রেই অনেক প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা। শুধু পেশাদার ক্ষেত্রে নয়, ই-মেইল কিংবা ডকুমেন্ট লেখা থেকে শুরু করে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে এ দক্ষতা আমাদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে। 

২। সফটওয়্যার ব্যবহার করে দ্রুত টাইপিস্ট হতে কতোক্ষণ লাগে?

উত্তর: দ্রুত টাইপিস্ট হয়ে উঠতে কতো সময় লাগবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কারো অনুশীলনের ধারাবাহিকতার উপর। নিয়মিত অনুশীলন এবং কার্যকরী টাইপিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমত বাংলা টাইপিং শিখে ফেলা যেতে পারে, এর পরে ইংরেজিও শিখে ফেলা যাবে খুব সহজেই। 

৩। দ্রুত টাইপ করার নির্দিষ্ট কোনো কৌশল আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, টাচ টাইপিং (Touch Typing), হাত সঠিক অবস্থানে রেখে হাতের সব আঙ্গুল ব্যবহার করে দ্রুত টাইপিংয়ের এই কৌশল কাজে লাগাতে পারেন। এই কৌশলে নিয়মিত অনুশীলন করে ধীরে ধীরে টাইপিং সেশন বাড়ানো গেলে তা আপনার টাইপিংয়ের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে।

৪। যদি আমি বছরের পর বছর ধরে একইভাবে টাইপ করি, তবে এরপর কী আমি আমার টাইপিং স্পিড বাড়াতে পারি?

উত্তর: আপনি অনেক বছর ধরে একই অভ্যাসে টাইপ করে আসলে আপনার সেই টাইপিং অভ্যাস পরিবর্তন করতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে তা অসম্ভব নয়। আপনি যদি নিয়মিত টাচ টাইপিং এর মতো কৌশল ব্যবহার করে টাইপিং করতে পারেন তবে আপনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দ্রুত টাইপিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button