টেকনোলজিরাউটার

রাউটার কি? রাউটার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য

রাউটার শব্দটি বর্তমানে সময়ে অতি পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত এই যন্ত্রটির দেখা এখন মেলে প্রায় প্রতিটি ঘরে। কিন্তু খুব সাধারণ এই যন্ত্রটি সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে অনেক কাজই করা যায় যা এর বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই জানে না। এছাড়াও রাউটারের সঠিক ব্যবহার করতে না জানলে ব্যবহারকারী সব সময়ই ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুকিতে থাকেন। তাই নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ও রাউটারের সর্বোচ্চ সুবিধাগুলো জানতে পড়ুন লেখাটির শেষ পর্যন্ত। 

সূচিপত্রঃ

রাউটার কী?

রাউটার মূলত বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র যা আপনার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল থেকে শুরু করে টিভি ও প্রিন্টারের মতো স্মার্ট ডিভাইস (Smart Device) গুলোকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এই যন্ত্রটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত অবদানগুলোর একটি। 

রাউটার প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৫-৭৬ সালে। তবে সেই রাউটারটি ছিল একটি আইপি রাউটার (IP Router)। বর্তমান সময়ে আমরা যে সকল রাউটার প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি সেগুলো আসলে ওয়াই-ফাই রাউটার। তবে শুধু ওয়াই-ফাই সুবিধাই নয়। বর্তমান প্রায় সকল রাউটারই অনেক ধরনের সুবিধার সংমিশ্রণে গঠিত। 

রাউটার ও মডেমের পার্থক্য

রাউটার ও মডেমকে অনেকে একই মনে করেন। আবার অনেকেই মনে করেন আগে যখন ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না তখন তারবিহীন সংযোগের জন্য মডেম (Modem) ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ আসার ফলে মডেম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাস্তবে দু’টি ধারনাই ভুল।

রাউটার যেমন মূলত সংযোগ স্থাপনের একটি যন্ত্র। ঠিক তেমনি মডেম হলো সেই সংযোগের ভেতর আদান-প্রদান হওয়া তথ্যগুলোকে বিশ্লেষণ করার একটি যন্ত্র। মডেমের কাজ বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে একটি যন্ত্র কিভাবে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়। 

যোগাযোগের বিভিন্ন প্রটোকল (Protocol) ব্যবহার করে অসংখ্য কম্পিউটারের সংযোগের মাধ্যমে সারা বিশ্ব জুড়ে যেই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যার মাধ্যমে অবাধে প্রায় সব ধরনের তথ্য আদান প্রদান করা যায় তাকেই বলে ইন্টারনেট। আর ইন্টারনেটের সাথে একটি কম্পিউটারের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটি খুব জটিল নয়। মূলত ওয়াই-ফাই, ব্রডব্যান্ড অথবা মোবাইল ডাটা, সকল ক্ষেত্রেই আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। আর নেটওয়ার্কটিই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। এভাবে অসংখ্য নেটওয়ার্ক মিলেই গড়ে ওঠে ইন্টারনেট। এখন নেটওয়ার্ক থেকে যখন একটি তথ্য আসে সেটি একদম সাদা-মাটা ভাবে আসে না। অর্থাৎ একটি ছবি কখনোই ছবি হিসেবে আসবে না। ধরা যাক ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যম রাউটারে একটি ছবি পাঠানো হলো। সেটি রাউটারে পৌছোবে কিছু তড়িৎ সংকেত অথবা ইলেক্ট্রিকাল সিগনাল (Electrical Signal) হিসেবে। আর সেই নির্দিষ্ট সংকেতটিকে তথ্যে রুপান্তর করার কাজটি করে মডেম। 

অর্থাৎ মডেম মূলত আধুনিক রাউটারেরই একটি অংশ যার সাহায্যে আগত সংকেতগুলো তথ্যে রুপান্তরিত হয়। আবার পাঠানো তথ্যগুলো ব্রডব্যান্ড সংযোগের লাইনে প্রবেশ করার আগে সংকেতে রুপান্তরিত হয়। 

রাউটারের প্রকারভেদ 

দৈনন্দিন জীবনে আমরা মূলত এক ধরনের রাউটার চিনলেও বাস্তবে অসংখ্য প্রজাতির রাউটার রয়েছে। এখানে তার মধ্যে প্রধান ৪ ধরনের রাউটার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

তারযুক্ত রাউটার (Wired Router) 

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এই ধরনের রাউটারে তারের ব্যবহার রয়েছে। একে ইংরেজিতে বলে ওয়্যারড রাউটার (Wired Router)। এই ধরনের রাউটারে শুধু ব্রডব্যান্ড সংযোগের তারই থাকে না বরং রাউটারের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি যন্ত্রই তার দিয়ে যুক্ত থাকে। এই ধরনের রাউটার সাধারণত অফিসে শুধু কম্পিউটারের ভেতরে সংযোগ তৈরি করতেই ব্যবহৃত হয়। যেহেতু প্রতিটি তারের সংযোগ দেওয়ার জন্য একটি করে পোর্টের দরকার তাই এই রাউটারের সংযোগ সংখ্যা বেশ কম। তবে সরাসরি তারের সাহায্যে কম্পিউটারগুলো সংযুক্ত থাকে বিধায় এই রাউটারের তথ্য আদান প্রদানের গতি অনেক বেশি। সকল যোগাযোগ তারের মাধ্যমে হয় বলে এটি হ্যাক করাটা অনেক কঠিন। কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত তারের ব্যবহারের কারণে বাসায় এ ধরনের রাউটারের ব্যবহার বিলুপ্ত হয়েছে। 

তারবিহীন রাউটার (Wireless Router) 

এটিই মূলত সেই রাউটার যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে রাউটার হিসেবে চিনি। তারযুক্ত রাউটারের সাথে এর মূল পার্থক্য হলো এর সাথে ব্রডব্যান্ড সংযোগের তার যুক্ত থাকলেও আর কোনো তার সাধারণত যুক্ত থাকে না। নেটওয়ার্ক তৈরি এবং আশে পাশের যন্ত্রগুলোকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করার জন্য এটি মূলত ওয়াই-ফাই এর উপর নির্ভরশীল। এই প্রক্রিয়ায় ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে আসা ডাটা প্যাকেজ (Data Package) গুলো রেডিও তরঙ্গে পরিণত হয়ে যায়। অতঃপর তা আশে পাশে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সীমার মধ্যে অবস্থিত সকল স্মার্টি ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, প্রিন্টার, টিভি এগুলো তার ছাড়াই রাউটারের সাথে ডাটা প্যাকেজ আদান প্রদান করতে পারে। রাউটার আবার সেই গ্রহিত ডাটা প্যাকেজকে পরিবর্তিত করে ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে পাঠিয়ে রাউটারের সাথে সংযুক্ত সকল যন্ত্রকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করে। 

এজ রাউটার (Edge Router) 

এজ রাউটার মূলত ভোক্তা পর্যায়ে তেমন ব্যবহৃত হয় না। এর কাজটি মূলত আইএসপি (ISP) বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার পর্যায়েই। পূর্বেই বলেছি, ইন্টারনেট মূলত বিশ্বজড়া অসংখ্য নেটওয়ার্কের একটি সমষ্টি। এখন আপনার রাউটার আপনার বাসার মধ্যেই যেমন আপনার স্মার্ট ডিভাইসগুলো নিয়ে একটি ছোট নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। ঠিক তেমনই আপনার আইএসপিও তার সকল গ্রাহকদের নিয়ে একটি তুলনামূলক বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। আবার আপনার এলাকার সকল আইএসপি মিলে গঠন করছে আরো বৃহৎ একটি নেটওয়ার্ক। বিষয়টি অনেকটা খাল থেকে নদী, নদী থেকে সমুদ্র এবং সমুদ্র থেকে মহাসমুদ্রের মতো। 

এই আইএসপি পর্যায়ে দুইটি নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে যেই যন্ত্রটির প্রয়োজন একেই বলে এজ রাউটার। এটি মূলত একটি নেটওয়ার্কের প্রান্তে অপর একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় বলেই এর নাম এজ রাউটার। এজ – Edge অর্থ প্রান্ত। একে বাংলায় প্রান্তিক রাউটারও বলা যেতে পারে। দুইটি নেটওয়ার্ককে যুক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হয় বলে এটি খুবই উচ্চ হারে ডাটা আদান প্রদান করতে পারে। 

কোর রাউটার (Core Router) 

এজ রাউটারের মতো কোর রাউটারও জন সাধারণের ব্যবহারের জন্য নয়। এটিও মূলত আইএসপিরাই ব্যবহার করে থাকেন। এজ রাউটার যেমন দুইটি নেটওয়ার্কের ভেতর অতি উচ্চ মাত্রায় ডাটা আদান প্রদানে নিয়োজিত থাকে, ঠিক তেমনি কোর রাউটার একই নেটওয়ার্কের ভেতর সেই কাজটি করে থাকে। অর্থাৎ কোনো একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক যেমন আইএসপি, কোনো বড় প্রতিষ্ঠান অথবা কোনো আঞ্চলিক সংযোগ এ সব কিছুর মধ্যেই আইপি প্যাকেজ (IP Package) অর্থাৎ মূলত তথ্যের আদান প্রদানের গতিশীল রাখাটাই কোর রাউটারের কাজ। এই ধরনের রাউটার বিভিন্ন ধরনের ইন্টারফেসে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহৃত এমন রাউটারের জন্য স্বভাবতই অতি উচ্চ গতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। 

রাউটারের কাজ 

রাউটারের সাধারণ কার্যাবলী সম্পর্কে আমাদের সকলেরই অল্প-বিস্তর ধারনা রয়েছে। কিন্তু ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে মোবাইল, ল্যাপটপে ইন্টারনেট চালানোটাই রাউটারের একমাত্র কার্যকারিতা নয়। রাউটারের কার্যকারিতা এবং কিভাবে তা কাজ করে তা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত। 

হোম নেটওয়ার্ক স্থাপন

হোম নেটওয়ার্ক স্থাপন কথাটি অনেকেরই কাছেই অপরিচিত লাগতে পারে। পূর্বেই বলেছি যে রাউটার এমন এক যন্ত্র যা আপনার ঘরের স্মার্ট ডিভাইসগুলোকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে এবং তাদের সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ স্থাপন করে। নেটওয়ার্ক বলতে মূলত একাধিক স্মার্টি ডিভাইস যখন সংযুক্ত হয়ে একটি সমষ্টির সৃষ্টি করে তখনই তাকে নেটওয়ার্ক বলে। আর যখন এটি বাসা-বাড়ির স্মার্ট-ডিভাইসগুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয় তখন তাকে বলে হোম নেটওয়ার্ক। 

হোম নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এ ধরনের নেটওয়ার্কের জন্য ইন্টারনেট সংযোগের কোনো প্রয়োজন নেই। এর সাহায্যে একই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত অন্য স্মার্টি ডিভাইসগুলোর সাথেও সরাসরি তথ্য আদান প্রদান করা যায়। হোম নেটওয়ার্ক তৈরির মূলত দুইটি পন্থা আছে। 

এথারনেট ক্যাবল (Ethernet Cable) 

এথারনেট ক্যাবল মূলত তারযুক্ত একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় এথারনেট ক্যাবলে বা তারের সাহায্যে একাধিক স্মার্টি ডিভাইসকে রাউটারের সাথে যুক্ত করা হয়। যেমন দুইটি ডেস্কটপ বা একটি ডেস্কটপ দুইটি ল্যাপটপ। এর ফলে রাউটার মাধ্যমে তিনটি যন্ত্রই সরাসরি সংযুক্ত হয়। প্রয়োজনে এই তিনটি যন্ত্রের ভেতর ফাইল আদান প্রদানও খুব উচ্চ গতিতে করা যায়। একে বলে ল্যান (LAN) সংযোগ। এই ল্যান সংযোগের সাহায্যে অনেক ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টও হয়ে থাকে। 

তবে এ প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলো রাউটারে ক্যাবল লাগানোর পোর্ট নিদিষ্ট। ফলে খুব বেশি যন্ত্রকে সংযুক্ত করা যায় না। এছাড়াও রাউটার ভাল না হলে সকল স্মার্ট ডিভাইসের চাহিদাও রাউটার সমানভাবে মেটাতে পারবে না। তার পাশাপাশি একাধিক তারের ফলে তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা। 

ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) 

ওয়াই-ফাই শব্দটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। এটি মূলত একটি রেডিও সিগনাল যার সাহায্যে রাউটারের সাথে আশে পাশের স্মার্ট ডিভাইসগুলো সংযুক্ত হয়। ওয়াই-ফাই মূলত আইইইই ৮০২.১১ (IEEE 802.11) প্রোটোকলের অধীনে তারবিহীন সংযোগ স্থাপন করে। একে ইংরেজিতে বলে ডব্লিউ ল্যান (WLAN) বা ওয়্যারলেস ল্যান। মূলত এই প্রোটোকলের বিভিন্ন ভাগের অধীনে ওয়াই-ফাই একেক গতি আর একেক তরঙ্গে কাজ করে। যাই হোক, কারিগরি খুটিনাটি বাদ দিলে ওয়াই-ফাই মূলত তারবিহীন ব্যবস্থা যার সাহায্যে একটি রাউটার কোনো বাসায় থাকা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবলেট, প্রিন্টার, টিভি সহ আরো নানা স্মার্ট ডিভাইস নিয়ে একটি হোম নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। 

ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন

বেশিরভাগেরই ধারনা ওয়াই-ফাই আছে মানেই ইন্টারনেট সংযোগ আছে। বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও ওয়াই-ফাই থাকতেই পারে। উপরের অংশেই বলেছি হোম নেটওয়ার্ক বা ঘরোয়া নেটওয়ার্ক তৈরির জন্যই এথারনেট ক্যাবল অথবা ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতঃপর এই হোম নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ার পরেই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়ার পালা। 

রাউটার কো-এক্সিয়াল অথবা ফাইবার অপটিকস ক্যাবলের মাধ্যমে আসা ইন্টারনেটের সংযোগকে হোম নেটওয়ার্কের প্রতিটি যন্ত্রের কাছে পৌছে দেয়। অর্থাৎ প্রথমে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয় মূলত রাউটার। অতঃপর এথারনেট ক্যাবল অথবা ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে সংযুক্ত বাকি যন্ত্রগুলোর সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ স্থাপিত হয়। মূলত ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করাটাই রাউটারের প্রধান কাজ। 

রাউটারের ফিচারসমূহ

রাউটারের প্রধান কাজ ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ দেওয়া হলেও তার বাইরেও রয়েছে এর অনেক ফিচার। এর মধ্যে কিছু ফিচার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

সীমার হ্রাস-বৃদ্ধি

রাউটারের রেঞ্জ বা সীমা খুব সহজেই হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়। প্রতিটি রাউটার এরই একটি সর্বোচ্চ সীমা থাকে। কিন্তু সর্বোচ্চ সীমা যদি আপনার প্রয়োজন না হয়ে থাকে তাহলে চাইলেই রাউটারের সেটিংস থেকে রাউটারের রেঞ্জ কমাতে পারবেন। 

ব্লক করা 

রাউটারের সেটিংস থেকে চাইলে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসকেও ব্লক করা যায়। এই ফিচারটি মূলত রাউটারের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল (Parental Control) অথবা অ্যাডভান্সড (Advanced) অপশনের ভেতরে থাকে। এর সাহায্যে আপনি চাইলে বাসার নির্দিষ্ট কোনো ডিভাইস এর রাউটারের সাথে যুক্ত হওয়া বন্ধ করে রাখতে পারবেন।

ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা 

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এর সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইস এর স্ক্রিন টাইমও কমানো যায়। অর্থাৎ ওই স্মার্ট ডিভাইসটির জন্য একটি সময়ের একটি কোটা থাকবে। এর বেশি সময় ওই যন্ত্রটিকে থেকে আর রাউটারের সাথে যুক্ত হওয়া যাবে না। অনেক সময় অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের আসক্তি কমাতে এই ফিচার ব্যবহার করেন। অনেক প্রাপ্ত-বয়ষ্ক আসক্ত ব্যক্তি নিজের জন্যও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তবে এই সুবিধা বেশ আধুনিক রাউটার ছাড়া পাওয়া যায় না। 

সুরক্ষা 

এই সুরক্ষা মূলত ইন্টারনেটের নানা অশ্লীল অথবা আসক্তিকারক জিনিস থেকে সুরক্ষা। একদম আধুনিক রাউটারগুলোতে বর্তমানে এই সুবিধা রয়েছে। এর সাহায্যে নির্দিষ্ট অনেক সাইটই আপনি চাইলে ব্লক করে রাখতে পারবেন। ফলে ভিপিএন ব্যবহার করেও আপনার রাউটারের সাহায্যে সে সকল সাইটে প্রবেশ করা যাবে না। 

রাউটারের দাম 

যেকোনো পণ্যের দামই নির্ভর করে তার মানের ওপর। বাংলাদেশের বাজারে যেমন ৬০০ টাকার রাউটার রয়েছে তেমনই রয়েছে আসুস এর ৪৩ হাজার টাকা দামি রাউটার। তবে সাধারণ ক্রেতারা যে ধরনের রাউটার কিনে থাকেন সেগুলো ১০০০ থেকে ২-৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। 

মূলত ৬০০-৭০০ টাকার যেসব রাউটার পাওয়া যায় সেগুলো একদমই নিম্নমানের। এসব রাউটার শুধু কাজ চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোটামুটি ১০০০ টাকায় একটি ব্যবহারযোগ্য রাউটার কেনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে পণ্যটি মার্কোসিস (Mercusys) অথবা ওয়াভলিংক (Wavlink) ব্র্যান্ডেরই হবে। তবে বাজেট আর ২০০-৩০০ টাকা বৃদ্ধি করলেই আপনি পেতে পারেন শাওমি, টিপি লিংক অথবা টেন্ডা এর মত ব্র্যান্ডের রাউটার। 

১৩০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে আপনি বেশ ভাল মানের রাউটারই পাবেন। এই দামের বাজারে রাজত্ব করে মূলত টিপি লিংকের রাউটারগুলো। ২ অথবা ৩ এন্টেনার রাউটারগুলোর সব কয়টিই ৩০০ এমপিএস গতি সমৃদ্ধ। টিপি লিংক ছাড়াও আপনি পেতে পারেন টেন্ডা, মার্কোসিস অথবা ওয়াভলিংক এর অনেক মডেল। শাওমির একটি দুইটি রাউটারও পেতে পারেন এই বাজেটে। 

২০০০ টাকার উপরের বাজেটেও রয়েছে টিপি লিংকের আধিপত্য। তবে এখানে বেশিরভাগ রাউটারই টিপি লিংক এর আর্চার সিরিজের। এছাড়াও রয়েছে আসুস এর মতো ব্র্যান্ড। টেন্ডা সহ অন্যান্য সকল ব্র্যান্ডেরই বেশ ভাল মডেলগুলো রয়েছে এই বাজেট রেঞ্জে।  Mikrotik অথবা Cudy ব্র্যান্ডের রাউটারও রয়েছে। এই বাজেটের বেশিরভাগ রাউটারই মূলত তিন অথবা চার এন্টেনা বিশিষ্ট। 

সাধারণত বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ সর্বোচ্চ ২০০০-৩০০০ টাকার রাউটার কিনে। অধিকাংশের বাজেটই সীমাবদ্ধ থাকে ১০০০-১৫০০ এর ভেতরে। তবে ৪০০০-৫০০০ টাকার ভেতরে চাইলে কেউ আসুস এর ৬ এন্টেনা সমৃদ্ধ রাউটার পেয়ে যাবে। আর এর উপরের বাজেটের রাউটার যারা কেনেন তাদের সিংহভাগই সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি। 

শেষকথা

বর্তমানে বৈশ্বায়ন এর যুগে অবাধ ইন্টারনেট সংযোগ দৈনন্দিন চাহিদাতেই পরিণত হয়েছে। সরকারি কাজ থেকে শুরু করে বেসরকারি অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল কাজেই ইন্টারনেটের ব্যবহার। আর একটি সংযোগ ব্যবহার করে একসাথে একাধিক স্মার্টি ডিভাইস কে ইন্টারনেটের আওতায় আনার জন্য রাউটারের বিকল্প কিছুই নেই। তাই জেনে রাউটার কিনুন এবং তার সকল ফিচার ব্যবহার করুন। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ভাল অভিজ্ঞতার জন্য ভাল ইন্টারনেট সংযোগ বেশি জরুরী নাকি রাউটার বেশি জরুরী?

উত্তরঃ দুটিই জরুরী। ভাল ইন্টারনেট সংযোগ এর কোনোই বিকল্প নেই। কিন্তু একটি বাসার প্রায় সবাই যখন রাউটারের ওপর নির্ভরশীল থাকে তখন ভাল ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা পেতে অবশ্যই ভাল রাউটার প্রয়োজন। 

২। রাউটার কতদিন টিকে?

উত্তরঃ রাউটার কিভাবে ব্যবহার করবেন তার ওপর নির্ভর করে কতদিন টিকবো। 

৩। ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই কি তাহলে হোম নেটওয়ার্কের সাহায্যে বাসার কম্পিউটারের ভেতর তথ্য আদান প্রদান করতে পারবো?

উত্তরঃ হ্যাঁ, পারবেন। হোম নেটওয়ার্কে আপনার ডিভাইসটিকে ডিসকাভারেবল (Discoverable) করে রাখলে অন্য ডিভাইস থেকে সহজেই আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। চাইলে এর সাহায্যে বিভিন্ন গেমসও এক সাথে খেলতে পারবেন। 

৪। রাউটারের সাহায্যে কি ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো সম্ভব?

উত্তরঃ এর উত্তর একই সাথে হ্যাঁ এবং না। আপনার আগের রাউটারের তুলনায় নতুন রাউটার ভাল হলে সেটির ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করার ক্ষমতা আরও ভাল হবে। ফলে আপনি ইন্টারনেটের গতিতে উন্নতি লক্ষ্য করবেন। কিন্তু একটি রাউটারের পক্ষে কখনোই আপনি আইএসপি (ISP) থেকে যতটুকু ইন্টারনেট পাচ্ছেন তার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button