অনলাইনে আয়ডিজিটাল মার্কেটিংফ্রিল্যান্সিং

ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যাবতীয় তথ্য

বর্তমানের বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় খুব পরিচিত দুটি শব্দ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। মূলত ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে নানা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মার্কেটিং এর প্রক্রিয়াটিকেই বলে ডিজিটাল মার্কেটিংডিজিটাল মার্কেটিং কি এই প্রশ্নের উত্তর পেলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্যারিয়ার নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। বিশেষত বর্তমান তরুণ প্রজন্ম প্রথাগত ক্যারিয়ার গড়ার রাস্তা থেকে সরে এসে অনেকটাই ঝুঁকছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্যারিয়ারের দিকে। আর তার মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হতে পারে একটি দারুণ পছন্দ।

সূচিপত্রঃ

ডিজিটাল মার্কেটিং এ কাজের ধরন

ক্যারিয়ার তৈরি করতে গেলে প্রথমেই যেই প্রশ্নটি মাথায় আসে সেটি হলো এই ক্যারিয়ারে কি কি কাজ করতে হবে। অর্থাৎ কাজের ধরনগুলো কি কি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সকল কাজ অবশ্যই কোনো পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন কেন্দ্রিক। যেমনঃ 

  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization-SEO)
  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (Search Engine Marketing-SEM)
  • সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social Media Marketing-SMM)
  • কস্ট পার অ্যাকশন মার্কেটিং (Cost Per Action-CPA)
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) 
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং (Content Marketing) 
  • ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing)
  • অটোমেটেড মার্কেটিং (Automated Marketing)
  • এসএমএস মার্কেটিং (SMS Marketing)
  • ই-কমার্স মার্কেটিং (E-commerce Marketing)
  • কপিরাইটিং (Copywriting) 
  • বিজনেস এনালিটিকস (Business Analytics)
  • মার্কেটিং স্ট্রাটেজিস্ট (Marketing Strategist) 

এই সকল কাজই ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ। প্রতিটি কাজের জন্যই রয়েছে একাধিক পদ। সাধারণ শিক্ষনবিশ থেকে শুরু করে আপনি হয়ে উঠতে পারেন বিভাগীয় প্রধান। আবার এক ধরনের কাজের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং এর দুনিয়ায় প্রবেশ করে খুব সহজেই পরিবর্তন করতে পারেন কাজের ধরন। তাই চলুন জানা যাক, ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে প্রবেশ করতে আসলে আপনার কি ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে প্রয়োজনীয় দক্ষতা

প্রতিটি ক্যারিয়ারেই সফল হওয়ার জন্য চাই কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা। সেই দক্ষতা হতে পারে প্রায়োগিক দক্ষতা কিংবা চিন্তন দক্ষতা। ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল ক্যারিয়ার গড়তেও এমন কিছু দক্ষতা প্রয়োজনীয়। প্রথমেই আলোচনা করা যাক প্রায়োগিক দক্ষতাগুলো নিয়ে। 

ডাটা এনালিটিকস (Data Analytics)

প্রত্যেক ডিজিটাল মার্কেটার এরই উচিত ডাটা এনালিটিকস সম্পর্কে সাধারণ ধারনা রাখা। বিশেষ করে গুগল এনালিটিকস সম্পর্কে। গুগল এনালিটিকস হলো গুগলের একটি সেবা যেটি কোনো ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ট্র্যাক ও রিপোর্টের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সাল থেকে চালু হওয়া এই সেবাটি বেশিরভাগ ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই ব্যবহার করে থাকেন। এর সাহায্যে একটি সাইটের দর্শনার্থীরা কোন ট্রেন্ড (Trend) বা কোন প্যাটার্ন (Pattern) এ সাইটটি ব্যবহার করছে তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়। আর ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে আসতে চাইলে গুগল এনালিটিকস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা নিতান্তই জরুরী। 

ওয়েবসাইট প্ল্যাটফর্ম (Website Platform)

মূলত যেই কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে একটি ওয়েবসাইট গঠিত হয় তাই ওয়েবসাইট প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট প্ল্যাটফর্ম হলো ওয়ার্ডপ্রেস ডট অর্গ (wordpress.org) । সমগ্র ইন্টারনেটের ৪৩% এরও বেশি ওয়েবসাইট এই প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্মিত। এছাড়াও আছে ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম (wordpress.com), উইক্স (Wix), শপিফাই (Shopify), ডোমেইন ডট কম (Domain.com), স্কয়ারস্পেস (Squarespace)। এই সকল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে অল্প বিস্তর ধারনা থাকা এবং সবচেয়ে ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে মোটামুটি ভাল ধারনা থাকাটা একজন ডিজিটাল মার্কেটার এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার পাশাপাশি এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS) সম্পর্কে কিছুটা ধারনা থাকলে তাও সুবিধা বয়ে আনবে একজন ডিজিটাল মার্কেটারের জন্য। 

ডিজাইন (Design)

সকল ডিজিটাল মার্কেটার এর জন্যই ডিজাইন নিয়ে কিছুটা ধারনা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষত ইউআই (UI) তথা ইউজার ইন্টারফেস (User Interface) ও ইউএক্স (UX) তথা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (User Experience) এর ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি জরুরী। একজন গ্রাহক ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপের কোন  ইন্টারফেস পছন্দ করবেন অথবা পণ্য ব্যবহারের সময় তার অভিজ্ঞতা কেমন হবে এ সবই ডিজিটাল মার্কেটিং কে প্রভাবিত করে।

অটোমেশন (Automation)

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রায় পুরোটিই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। এরকম অনেক অটোমেশন টুলসই আছে যা ডিজিটাল মার্কেটারদের কাজকে আরো সহজ এবং নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। যেমনঃ একটিভ ক্যাম্পেইন (Active Campaign), পারডট (ParDot), কন্সটান্ট কন্ট্যাক্ট (Constant Contact)। এই জাতীয় অটোমেশন টুলস সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারনা না থাকলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটা বেশ কঠিনই হয়ে যাবে। 

উপরে এখন অবধি যেই কয়টি দক্ষতা সম্পর্কে পড়েছেন তার সব কয়টিই মূলত প্রায়োগিক দক্ষতা। অর্থাৎ যেসব নির্দিষ্ট প্রযুক্তি বা পদ্ধতি ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে একজন ব্যক্তিকে সুবিধা এনে দেব, তা নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও কিছু চিন্তন দক্ষতাও এনে দিতে পারে বেশ কিছুটা সুবিধা। পরবর্তীতে অংশে আলোচনা করা হচ্ছে সেসব চিন্তন দক্ষতা নিয়েই। 

সামাজিক দক্ষতা

যেকোনো ক্যারিয়ারের সফল হওয়ার ক্ষেত্রেই সামাজিক দক্ষতার বেশ বড় একটা ভূমিকা আছে। আর যেকোনো ধরনের মার্কেটিং ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সেটা আরো জরুরী। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী হলো পণ্য সম্পর্কে মানুষ কি ভাবছে, তারা একটি বিজ্ঞাপনকে কিভাবে গ্রহণ করছে তা জানা। আর তা নিশ্চিত ভাবে জানতে মানুষের সাথে যোগাযোগ অর্থাৎ কথা বলার বিকল্প নেই। একজন ডিজিটাল মার্কেটারকে অবশ্যই তার সহকর্মী থেকে শুরু করে ক্ষেত্র বিশেষে ক্রেতাদের সাথেও কথা বলতে হয়। এর মাধ্যমে সে যেকোনো বিষয়ে তাদের মনোভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। 

বিশ্লেষণ দক্ষতা

বিশ্লেষণ দক্ষতা, একটি অতি প্রয়োজনীয় গুণাবলী যেটি অন্যান্য ক্যারিয়ার এও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পূর্বেই গুগল এনালিটিকস এর কথা উল্লেখ করেছি। আর গুগল এনালিটিকস থেকে শুরু করে অন্যান্য অটোমেশন টুলস গুলো ব্যবহার করতেও প্রচুর বিশ্লেষণ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কয়েক গুচ্ছ তথ্য দেখে তা বিশ্লেষণ করে সিধান্তে উপনীত হয়ে সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন করাটাই ডিজিটাল মার্কেটারের কাজ। 

মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা

দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অন্যান্য যেকোনো পেশা থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে অনেক বেশি জরুরী। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এখনও একটি নতুন ক্যারিয়ার এবং এটি খুবই পরিবর্তনশীল। আধুনিক যুগে খুব দ্রুত নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে। ফলস্বরুপ কয়েক মাসের ব্যবধানেই হয়তো দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নেওয়া আর সে অনুযায়ী কাজ করার দক্ষতাটা অবশ্যই থাকা চাই একজন ডিজিটাল মার্কেটারের।

বহু কাজে পারদর্শিতা

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারের সফল হওয়ার জন্য যেই প্রায়োগিক দক্ষতা গুলো আলোচনা করা হয়েছে, তা পড়লেই বোঝা যায় এই ক্যারিয়ারে বহু কাজেই দক্ষ হতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে কাজের ধরন অনেক রকমের হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজই একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত অথবা নির্ভরশীল। তাই নিজের কাজের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু নিয়েই ধারনা রাখতে হবে একজন ডিজিটাল মার্কেটারকে। এতে করে তার যেমন হুট করে ছোট খাটো কাজেই অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না, তেমনই অন্যরা ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না তাও বুঝতে পারবে। 

প্ররোচনা

বিজ্ঞাপন করার প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো প্ররোচিত করতে পারা। বিজ্ঞাপন মানেই কোনো একটি পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে একজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে উৎসাহিত করা। একজন সাধারণ দর্শককে ক্রেতাতে রুপান্তর করতে একটি পণ্যের উপযোগিতার যতটুকু স্বার্থকতা আছে, তার সমান বা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি স্বার্থকতা আছে প্ররোচনার। মানুষ অনেক সময়ই প্ররোচনার বশে অনেক কিছু কিনে ফেলে যা তার না কিনলেও হতো। তাই একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে হতে হবে ভাল প্ররোচক। কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে স্পর্শ, গন্ধ ও সরাসরি কথা বলা ছাড়াই একজন দর্শককে ক্রেতায় রুপান্তর করা যায়, সে ব্যাপারে থাকতে হবে দক্ষতা। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারের সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং সারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে এর সুবিধাগুলোই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। স্বল্প খরচ, বৈশ্বিক নাগাল, প্রতিযোগিতার সুযোগ, গ্রাহক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এসব সুবিধার কারণে উদ্যোক্তারা ডিজিটাল মার্কেটিংকেই তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য বেছে নেন। কিন্তু আজকের লেখায় উদ্যোক্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং একজন কর্মীর দৃষ্টিকোণ থেকে ডিজিটাল  মার্কেটিং এর সুবিধাগুলো আলোচনা করা হয়েছে। 

নতুন ক্যারিয়ার

নতুন ক্যারিয়ার সবসময়ই সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। যেকোনো বিষয়ের নতুন ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেই অনেক সহজে অনেক ওপরে ওঠা যায়। এটা হয়তো প্রথাগত ক্যারিয়ারে সম্ভব নয়। যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং এখনো নতুন একটি ক্ষেত্র তাই সৃজনশীল উপায় পরিশ্রম করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নতুন ক্ষেত্রের সুযোগ ব্যবহার করেই অনেক প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুতই অনেক ওপরে উঠেছে। 

স্থানিক সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং যেহেতু প্রায় পুরোটাই অনলাইন নির্ভর তাই ডিজিটাল মার্কেটারদের আসলে অফিসে বসে থাকার কোনো দরকার নেই। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানই কর্মীদের অফিসে কাজ করাটা পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই আবার তাদের কর্মীদের পুরোপুরি স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আর কোভিড মহামারির সময় ডিজিটাল মার্কেটিং এর কর্মীরাই সবচেয়ে সহজে ‘হোম অফিস’ (Home Office) শুরু করতে পেরেছে। 

নমনীয়তা

অনেক ডিজিটাল মার্কেটারই প্রজেক্ট অথবা ঘন্টা ভিত্তিতে কাজ করেন। একটি নির্দিষ্ট অফিসে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টায় কাজ করার সুযোগ থাকলেও ফ্রিল্যান্স কাজ করার সুযোগটাই বেছে নেন অনেকে। আর এ সুবিধার মাধ্যমে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে সময় মিলিয়ে নেওয়া যায় সহজেই। যেমন ছাত্রদের জন্য এই নমনীয়তা অনেকটাই জরুরী। 

উচ্চ চাহিদা

দিন যত চাচ্ছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ততটাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন শুধু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর ভর করেই ব্যবসা করে। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হচ্ছে অসংখ্য ডিজিটাল মার্কেটার এর। তাই আপনি যদি দক্ষ হন, তাহলে কাজ পেতে অসুবিধা হবে না একদমই। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারের অসুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারের যেমন বেশ সুবিধা আছে, ঠিক তেমনি অসুবিধাও আছে। যেগুলো ধাপে ধাপে নিচে আলোচনা করা হলোঃ

উচ্চ প্রতিযোগিতা

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারটি নতুন বলে যেমন এতে রয়েছে সম্ভাবনা। ঠিক তেমনি এর প্রতিযোগিতার মাত্রাও বাড়ছে খুব দ্রুত হারে। বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে অনেকেই এখন বুঝতে পেরেছেন এর গুরুত্ব। তাই অনেকেই নামছেন কাজে। কিন্তু স্বল্প বিদ্যা আর অল্প অনুশীলন নিয়ে খুব একটা দক্ষতা অর্জন করা যায় না। তাই বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গড়পড়তা আর ১০ জন ডিজিটাল মার্কেটারের মত হয়ে খুব একটা লাভ নেই। 

পেশাদারিত্বের অভা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং কিছুটা নতুনই বলা চলে। তাই এই ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন চুক্তি করে তখন অনেকটাই ফাঁক-ফোঁকর থেকে যায়। ফলে অনেক সময় দেখা যায় চুক্তি থাকলেও কাজ সম্পন্ন করে সঠিক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না অনেক ডিজিটাল মার্কেটার। এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নিতে গেলেও দেখা দেয় নানা জটিলতা। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে আয়ের চিত্র 

ডিজিটাল মার্কেটিং পেশাটি বর্তমানে অন্যতম অর্থদায়ক পেশাগুলোর একটি। কারণ এটি এমন একটি চাকরি যার দেশের বাজারও ভাল। বাইরের বাজারও ভাল। দেশের বাজারে একজন ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজারের বেতন ৪০ হাজারের মতন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই তা ৬৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার অবধি হতে পারে। এটি নির্ভর করবে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তার ওপর। এছাড়াও কেউ যদি আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করেন তাহলে তার জন্য রয়েছে আরো বড় সুযোগ। বর্তমানে অনেক বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তাদের কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার চাকরিগুলোর বেতন বছরে ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ ডলার অবধি হতে পারে। আপনার দক্ষতা এবং নিজেকে তুলে ধরার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে আপনি আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের অবস্থান কতটা শক্ত ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে অভিজ্ঞতা অর্জনের উপায় 

প্রতিটি ক্যারিয়ার এই অভিজ্ঞতা বেশ বড় একটা ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল মার্কেটিংও তার ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু নতুনেরা সবসময়ই যেই সমস্যাটির মুখোমুখি হন সেটি হলো সবাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থিই চায়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অবলম্বনে আপনি যেসব পন্থা অনুসরণ করতে পারেনঃ

ইন্টার্নের জন্য আবেদন করা

ডিজিটাল মার্কেটিং এ কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি না পেলে এর বিকল্প হিসেবে ইন্টার্ন (Intern) করতে পারেন। ইন্টার্নের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন ভাল সম্মানী পাওয়া যায় না। অনেকসময় বিনা পারিশ্রমিক এও ইন্টার্ন করতে হয়। তবে চেষ্টা করবেন সম্মানী সহ কোনো ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে ঢোকার। ইন্টার্নের মাধ্যমে বাস্তবিক কাজগুলো সম্পর্কে আপনার সম্যক ধারনা হবে। এবং আপনার দক্ষতা ঠিক কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন তা নিয়েও দ্বিধা দূর হবে। 

পরিচিত কারো মাধ্যমে কাজ শুরু করা

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যে আপনি একটু খোজ করলেই আপনার আশে পাশের কাউকে পাবেন যিনি এর সাথে জড়িত। সরাসরি পরিচিত না হলেও পরিচিত এর পরিচিত বা এমন কোনো সূত্রে কেউ থাকবেই। তাদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য নেওয়া চেষ্টা করুন। বিরক্ত না করে যদি আদায় করে নিতে পারেন তাহলে দেখবেন অল্প সময়েই অনেক কিছু শিখে গেছেন।

স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া

প্রথমেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার মনোবল না থাকলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানেই কাজ শুরু করুন। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেক আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট সম্পন্ন করে থাকে। তাই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই শুরু করতে পারেন আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার।

কিভাবে বুঝবেন ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার আপনার জন্য কি না?

কোনো ক্যারিয়ারে পথ চলা শুরু করার আগে অবশ্যই নিজেকে কিছুটা যাচাই করে নেওয়া উচিত যে সেই ক্যারিয়ারটি আপনার জন্য সঠিক কি না। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষতা যাচাই করে কিছুটা হলেও সিধান্ত নিতে পারবেন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারটি মূলত তাদের জন্যই আদর্শ যারা পরিবর্তনের সাথে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য চিন্তন দক্ষতাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকগুলো ভাগ আছে। একেক ধরনের কাজের জন্য একেক ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ বেশি উপযোগী। যেমন একজন প্রডাক্ট মার্কেটিং স্পেশালিস্ট (Product Marketing Specialist) এর পদে কাজ করতে চাইলে মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগে খুব দক্ষ হতে হবে। পাশাপাশি হতে হবে সুক্ষ্ণতার প্রতি মনোযোগী ও থাকা চাই বিশ্লেষণ দক্ষতা। 

অপরদিকে কন্টেন্ট মার্কেটিং ম্যানেজার (Content Marketing Manager) এর জন্য চাই ব্যাকরণ/গ্রামার ও লেখার ওপর দারুণ দখল। তার পাশাপাশি চাই এসইও ও ওয়েবসাইটের ট্রাফিক সম্পর্কে ভাল জ্ঞান, বুঝতে পারার ক্ষমতা। ব্লগের টপিক নির্ধারণ করার দায়িত্বটাও এই পদের লোকদের ঘাড়েই বর্তায়। 

সোশাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট (Social Media Specialist) হতে হলে প্রথমেই দখল থাকা চাই লেখা ও যোগাযোগ দক্ষতার ওপর। একই সাথে সোশাল ট্রেন্ড (Social Trend) সম্পর্কে ধারনা থাকা, সোশাল মিডিয়া টুলগুলো ব্যবহার করতে পারে আর তার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক দক্ষতা থাকাটাও এ পদের জন্য জরুরী। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন নানা পদের জন্যই নানা ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই এই ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে সফল হতে চাইলে, নিজেকে আগে যাচাই করে নেওয়াটা আবশ্যক। 

শেষকথা

যত দিন যাবে প্রথাগত মার্কেটিং এর স্থলে ডিজিটাল মার্কেটিং ততই স্থান করে নেবে। হয়তো আগামীর বিশ্বে ডিজিটাল মার্কেটিংই হবে প্রথাগত মার্কেটিং। আর এই বিপ্লবে অংশ নিতে পারেন আপনিও। কারণ এতে যেমন রয়েছে সফল ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ ঠিক তেমনি এই ক্ষেত্রটি হারিয়ে যাবে না তাও অনেকটাই সুনিশ্চিত। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার থেকে কি প্রযুক্তি ভিত্তিক অন্য কোনো ক্যারিয়ারে যাওয়া যাবে?

উত্তরঃ প্রযুক্তি ভিত্তিক ক্যারিয়ার অনেক ধরনের হতে পারে। ঐ ক্যারিয়ারের চাহিদার সাথে আপনার দক্ষতার মিল থাকলে অবশ্যই যাওয়া সম্ভব। 

২। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে অনলাইন পোর্টফলিও কতটা জরুরী?

উত্তরঃ খুবই জরুরী। আপনার ক্ষেত্রই যেহেতু ডিজিটাল তাই আপনার পোর্টফলিও অনলাইনে হওয়া উচিত। এতে করে চাকরিদাতা সহজেই আপনার দক্ষতা সম্পর্কে একটি ধারনা পাবেন। 

৩। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে কোন দক্ষতাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী?

উত্তরঃ যোগাযোগের দক্ষতা। কাউকে প্ররোচিত করতে হলে অবশ্যই তার সাথে আপনার সঠিক ভাবে যোগাযোগ করতে হবে। আর কোনো ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে চাকরি পেতে হলেও অবশ্যই আপনাকে নিজের দক্ষতাগুলো ভাল ভাবে তুলে ধরতে হবে। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button