কম্পিউটারটেকনোলজিহার্ডওয়্যার

হার্ডওয়্যার কি? হার্ডওয়্যারের সম্পর্কে বিস্তারিত

বর্তমান এ তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কম্পিউটার বিক্রি। বাংলাদেশে কম্পিউটার বিক্রি বলতে মূলত কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বিক্রিই বোঝায়। কারণ এদেশের খুব বেশি মানুষ সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করেন না। কিন্তু কম্পিউটার ক্রয় করতে গেলে বেশিরভাগ মানুষই হার্ডওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানের অভাবে কিছুই বুঝতে পারেন না। কম্পিউটারের কোন হার্ডওয়্যারটি কোন কাজে লাগে তা জানলে হার্ডওয়্যার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বুঝতে পারবেন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের গুরুত্ব। তার পাশাপাশি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ধারণা হবে পরিষ্কার। আর সে উদ্দেশ্য পূরণেই আজকের এই লেখায় থাকছে হার্ডওয়্যার ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচিপত্রঃ

হার্ডওয়্যার কি?

কম্পিউটারের যে সকল অংশের আকার আছে, সরাসরি দেখা যায়, প্রয়োজনে স্পর্শ করা যায় এবং সে সকল অংশ কম্পিউটারের বিভিন্ন কার্যাবলী যেমন প্রসেসিং, স্টোরেজ, কমিউনিকেশন ইত্যাদি পূরণে ভূমিকা রাখে তাদের হার্ডওয়্যার বলে।

মূলত কম্পিউটার বলতে আমরা যেই বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক বস্তুকে চোখে দেখি, তার পুরোটাই হার্ডওয়্যার। কম্পিউটারের অপর গুরুত্বপূর্ণ অংশ সফটওয়্যার সরাসরি ধরা যায় না, ছোয়াও যায় না তাই একজন সাধারণ মানুষ যে সকল বস্তু দেখে একটি যন্ত্রকে কম্পিউটার হিসেবে নির্ধারণ করবেন তার সবই আসলে হার্ডওয়্যারের অংশ। 

হার্ডওয়্যারের প্রকারভেদ

হার্ডওয়্যার মূলত দুই প্রকার। তবে এই দুই প্রকারের ভেতরেও আবার প্রকারভেদ আছে এবং তার ভেতরেও নানা রকম ভাগ আছে। লেখার শুরুতেই তাই হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন প্রকারভেদ গুলো তুলে ধরা হলো।

যন্ত্রের পরিবেশগত অবস্থানের উপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যারকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। 

  • বহিরাগত হার্ডওয়্যার / এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার (Externel Hardware) 
  • অভ্যন্তরীন হার্ডওয়্যার / ইন্টার্নাল হার্ডওয়্যার (Internal Hardware) 

এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যারের রয়েছে আবার দুইটি ভাগ। 

  • ইনপুট ডিভাইস (Input Device)
  • আউটপুট ডিভাইস (Output Device) 

অপরদিকে ইন্টার্নাল হার্ডওয়্যারেরও রয়েছে দুইটি ভাগ 

  • প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device) 
  • স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device) 

মূলত এই সব ধরনের হার্ডওয়্যার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেই কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে বেশ পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে। সে প্রক্ষিতে প্রথমেই আলোচনা থাকছে এক্সটার্নাল বা বহিরাগত হার্ডওয়্যার নিয়ে।

বহিরাগত / এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার (External Hardware) 

এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার মূলত সে সকল হার্ডওয়্যার যেগুলো মূল কম্পিউটার সিস্টেম বা কেসিং এর বাইরে অবস্থান করে। এই হার্ডওয়্যার গুলো সাধারণত বিভিন্ন তার বা ক্যাবলের সাহায্যে সরাসরি মাদারবোর্ড বা কেসিং এর সাথে সংযুক্ত থাকে। 

কেসিংকে আবার অনেকেই সিপিউ (CPU) বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit) নামে চেনে। কিন্তু কম্পিউটারের সকল হিসাব নিকাশ বা প্রসেসিং সম্পন্ন করার যে ইউনিট অর্থাৎ প্রসেসর, সেটির নামও সিপিউ। আর সিপিউ নামটি প্রসেসর এর ক্ষেত্রেই যথাযথ। তাই এই লেখায় কম্পিউটার সিস্টেম বলতে মূলত কেসিংকে এবং সিপিউ বলতে প্রসেসরকেই বোঝানো হয়েছে। 

ইনপুট ডিভাইস (Input Device) 

ইনপুট ডিভাইস হলো সে সকল হার্ডওয়্যার যেসবের সাহায্যে কম্পিউটারে ডাটা বা কমান্ড ইনপুট দেওয়া হয়। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করেই কাজ করে। আর একজন ব্যক্তির কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমই হলো এই ইনপুট ডিভাইস। এমন কিছু ইনপুট ডিভাইস হলোঃ 

কিবোর্ড (Keyboard) 

ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং পরিচিত দুইটির একটি হলো কিবোর্ড (Keyboard)। কিবোর্ড হল মূলত অনেকগুলো বাটন সম্পন্ন একটি ইলেক্ট্রিক ডিভাইস যেটার বিভিন্ন বাটন চাপ দিলে কম্পিউটার বিভিন্ন ইনপুট গ্রহণ করে থাকে। এই বাটন গুলোকেই বলে ‘কি’ (Key) অথবা ‘কি ক্যাপ’ (Key Cap)। সাধারণত কিবোর্ডের সাহায্যে বর্ণ, সংখ্যা ও বেশ কিছু বিশেষ চিহ্ন সরাসরি ইনপুট দেওয়া যায়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ড সমূহকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। 

কুয়েট্রি কিবোর্ড (QWERTY Keyboard) 

কুয়েট্রি (QWERTY) কিবোর্ড দ্বারা মূলত কিবোর্ডের বর্ণ সংস্থাপন বা কোন বর্ণ বা লেটার (Letter) কিবোর্ডের কোথায় বসবে তা বোঝা যায়। এমনকি  QWERTY নামটাও এসেছে এখান থেকে QWERTY শব্দের প্রতিটি বর্ণ ‘Q’ , ‘W’, ‘E’ , ‘R’, ‘T’ , ‘Y’ আমাদের কিবোর্ডের বর্ণমালার একদম প্রথম সারিতে থাকে। এই কুয়েট্রি কিবোর্ড আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার ল্যাথাম। ১৮৭৪ সালে গণ-উৎপাদন শুরু হওয়ার পর সকল স্থানেই এখন দেখা মেলে এই ধরনের কিবোর্ডের। 

মেমব্রেন ও মেকানিক্যাল কিবোর্ড  (Membrane & Mechanical Keyboard) 

উপরে উল্লেখিত কুয়েট্রি কিবোর্ডের ধরনটি মূলত কিবোর্ডের বর্ণগুলো কিভাবে সাজানো হয় তার উপর ভিত্তি করে তৈরি। কিন্তু কিবোর্ডের বাকি ধরনগুলো মূলত সেসব কিবোর্ডের কার্যপ্রণালী এবং গঠনপ্রণালীর উপর ভিত্তি করেই সৃষ্ট। 

কিবোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত হলো মেমব্রেন (Membrane) কিবোর্ড। অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মেকানিক্যাল (Mechanical) কিবোর্ডও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এদের পার্থক্য ব্যাখ্যার মাধ্যমেই এদের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard)মেকানিক্যাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard)
১। একটি সেন্ট্রাল প্রেশার প্যাড থাকে। প্রতিটি কি ক্যাপে চাপ পড়লে তা নিচে নেমে এসে সার্কিটে ইনপুট দেয় এবং স্ক্রিনে ওই বর্ণটি দেখায়। ১। প্রত্যেকটি কি ক্যাপের জন্য আলাদা আলাদা সুইচ থাকে। প্রতিটি সুইচের ভেতরে স্প্রিং থাকে। স্প্রিং এ চাপ পড়লে কম্পিউটার ইনপুট নেয়। 
২। কি ক্যাপ গুলো একে অপরের সাথে প্রায় লেগে থাকে।২। কি ক্যাপ গুলো আলাদা থাকে। 
৩। কি ক্যাপ গুলো প্রায় লেগে থাকে বিধায় তরল ও ধুলার ক্ষেত্রে বেশি প্রতিরোধী। একই কারণে এই কিবোর্ড পরিষ্কার করাও পরিশ্রম সাধ্য। ৪। তরল ও ধুলার ক্ষেত্রে কম প্রতিরোধী। তবে প্রতিটি কি ক্যাপ আলাদা করে খুলে খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। 
৫। হালকা, সহজে বহনযোগ্য এবং দামে কম। ৫। ভারী এবং তুলনামূলক ভাবে দাম অনেকটাই বেশি। 

এছাড়াও কিবোর্ডের রয়েছে অসংখ্য ধরন যার সম্পর্কে বিস্তারিত বলার তেমন সুযোগ নেই এই লেখায়। খুব সংক্ষেপে যেই কয়টি ধরন সম্পর্কে না বললেই নয়। 

এরগোনমিক কিবোর্ড (Ergonomic Keyboard) 

সাধারণ কিবোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে কিবোর্ডের সাথে সুবিধাজনক অবস্থানে হাত রাখতে হয়। কিন্তু মানবদেহের হাত যেই অবস্থায় রাখলে সবচেয়ে শরীরর জন্য সবচেয়ে ভাল হয়, এরগোনমিক কিবোর্ড সেই অবস্থার কথাই মাথায় রেখে তৈরি। 

প্রজেকশন কিবোর্ড (Projection Keyboard)

এটি খুবই বিশেষ ধরনের কিবোর্ড। এটি মূলত একটি প্রজেক্টর যার সাহায্যে কিবোর্ডের একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয়। আর সেই প্রতিচ্ছবিতে টাইপ করলেই ইনপুট চলে যায় কম্পিউটারে। 

মাউস (Mouse)

ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কিবোর্ডের পরেই মাউসের স্থান। মাউস এমন একটি ডিভাইস যা ছাড়া আসলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের পক্ষে কম্পিউটার চালানো অসম্ভবই বলা চলে। আমরা কম্পিউটার মনিটরে যেই পয়েন্টার দেখে থাকি তাকে মূলত কার্সর (Cursor) বলে। আর মাউস নাড়ানোর মাধ্যমে এই কার্সরই যেকোনো দিকে নড়ে থাকে।

অপটিক্যাল মাউস (Optical Mouse) 

সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত মাউস হলো অপটিক্যাল মাউস। আমরা সাধারণত যেই ধরনের মাউস ব্যবহার করে থাকি তার নিচে একটি লাল রঙের আলো বিচ্ছুরিত হতে দেখা যায়। এটিই অপটিক্যাল মাউস এর বৈশিষ্ট্য। এই ধরনের মাউস থাকে 

  • লাইট ইমিটিং ডায়োড – লেড (LED) 
  • অপটিক্যাল সেন্সর (Optical Sensor) 
  • ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং (Digital Signal Processing) 

লাইট ইমিটিং ডায়োডের সাহায্যে মাউস থেকে ইনফ্রারেড (Infrared) বা অবলাল আলো বিচ্ছুরিত হয়। সেই আলো কোনো সমতলে পড়ে ফেরত আসলে তা অপটিক্যাল সেন্সর বুঝতে পারে। মাউস নাড়ালে ঐ তলের ওপর উপরে আলোর পরিবর্তন হয় যা সেন্সর ধরতে পারে। আর ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং এর সাহায্যে কার্সর কতটুকু নড়বে সে ইনপুট পৌছে যায় কম্পিউটারে। মূলত এটিই আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত মাউসের কাজ করার উপায়। 

লেজার মাউস (Laser Mouse)

অপটিক্যাল মাউস এবং লেজার মাউস এর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এই দুইটির কাজ করার প্রক্রিয়া প্রায় পুরোপুরি এক। এদের মৌলিক পার্থক্য হলো অপটিক্যাল মাউস লাল রঙের অবলাল আলো বিচ্ছুরণ করে। অপরদিকে লেজার মাউস মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরের আলো ব্যবহার করে যার ফলে মনে হয় মাউসে কোনো আলোই নেই। তবে লেজার মাউসের ইনপুট অপটিক্যাল মাউস থেকে বেশি হয়ে থাকে। 

ট্যাকবল মাউস (Tackball Mouse)

ট্যাকবল মাউস হলো ‘বল যুক্ত’ মাউস। অর্থাৎ এই মাউস আলো বিচ্ছুরণের জন্য কোন সমতলের উপর নির্ভর করার বদলে নিজের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ কাজটি করে। এ ধরনের মাউসে মূলত একটি ‘বল’ (Ball” থাকে। ব্যবহারকারী সাধারণত এই বলটিকে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে নাড়িয়ে থাকেন। আর সেই নড়াচড়ার মাধ্যমেই কম্পিউটারে কার্সর নড়াচড়ার প্রয়োজনীয় ইনপুট যায়। 

মাইক্রোফোন (Microphone)

মাইক্রোফোন হলো এমন এক ধরনের যন্ত্র যা বাতাস থেকে শব্দ তরঙ্গ গ্রহণ করে তাকে ডিজিটাল সিগন্যালে রুপান্তরিত করতে সক্ষম। গান, কথা থেকে শুরু করে যেকোনো শব্দ কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার জন্যই চাই মাইক্রোফোন। একেক ধরনের মাইক্রোফোন শব্দকে ডিজিটাল রুপ প্রদানের জন্য একেক ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে। এমন কিছু ধরন হলোঃ 

  • কন্ডেন্সার মাইক্রোফোন (Condenser Microphone) 
  • ডাইনামিক মাইক্রোফোন (Dynamic Microphone) 
  • ফাইবার অপটিক মাইক্রোফোন (Fiber Optic Microphone)
  • ইলেক্ট্রেট মাইক্রোফোন (Electret Microphone)
  • শটগান মাইক্রোফোন (Shotgun Microphone). 

ওয়েবক্যাম (Webcam)

ওয়েবক্যাম হলো মূলত এক ধরনের ক্যামেরা যা কম্পিউটারে সরাসরি ভিডিও ইনপুট দিয়ে থাকে। এই ধরনের ক্যামেরা দুই ধরনের। 

  • ইন-বিল্ট ক্যামেরাঃ এই ধরনের ক্যামেরা সাধারণত ল্যাপটপেই পাওয়া যায়। আগে থেকেই ভেতরে থাকে বলে এর নাম ইন-বিল্ট ক্যামেরা। 
  • এক্সটার্নাল ক্যামেরাঃ ইন-বিল্ট ক্যামেরা না থাকলে অথবা তাতে সন্তুষ্ট না হলে আলাদা করে যেই ক্যামেরা কিনে লাগানো হয় সেটিই এক্সটার্নাল ক্যামেরা। 

বর্তমানে সফটওয়্যারে সাহায্যে চাইলে আমাদের মোবাইল ফোনকেও খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে ওয়েবক্যাম হিসেবে। 

স্ক্যানার (Scanner)

জরুরী কাগজপত্রকে যান্ত্রিক রুপ দেওয়ার জন্য যেই যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তাই স্ক্যানার। স্ক্যনার মূলত কোনো কাগজ বা ছবির উপর আলো ফেলার মাধ্যমে কাজ করে। স্ক্যান করতে দেওয়ার বস্তুর উপরে আলো ফেললে তা কাচ ও লেন্সের মধ্যে দিয়ে ফটোসেনসেটিভ (Photosensitive) প্রযুক্তির উপরে প্রতিফলিত হয়। ফলে ঐ বস্তুটির একটি ডিজিটাল রুপ সৃষ্টি হয়। 

গ্রাফিক্স ট্যাবলেট (Graphics Tablet)

গ্রাফিক্স ট্যাবলেট হলো সমতল, চাপের প্রতি সংবেদনশীল এমন একটি প্যাড যাতে স্টাইলাশ (Stylush) এর সাহায্যে আপনি আকতে বা লিখতে পারবেন এবং তা কম্পিউটারে সরাসরি তা ইনপুট হবে। স্টাইলাশ হলো কলমের ন্যায় একটি বস্তু যা দিয়ে স্ক্রিনে লেখার কাজ করা যায়। সাধারণত যারা ডিজিটাল আর্টের কাজ করেন অথবা অনলাইনে ক্লাস নেন, তাদের জন্য এই গ্রাফিক্স ট্যাবলেটের দরকার হয়ে থাকে। 

আউটপুট ডিভাইস (Output Device) 

যে সকল ডিভাইসের সাহায্যে কম্পিউটার তার প্রসেস করা ডাটা মানুষের সামনে তুলে ধরে, সে সকল ডিভাইসকেই একত্রে আউটপুট ডিভাইস বলে। মূলত আমরা কম্পিউটারকে ডাটা এবং কমান্ড ইনপুট দিয়ে কি ফলাফল পেলাম, সেই ফলাফল জানার যন্ত্রই হচ্ছে এই আউটপুট ডিভাইস। 

মনিটর / ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিন (Monitor / Electronic Screen)

ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে যেমন কিবোর্ড ঠিক তেমনি আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মনিটর। মনিটর হলো এমন এক ধরনের আউটপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে কম্পিউটার তার ফলাফল গুলোকে ভিডিও, চিত্র বা লেখা আকারে তুলে ধরে। তবে অনেকে মনিটর শব্দটি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে নারাজ। অনেকের কাছে ল্যাপটপের স্ক্রিনটি হলো ‘ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিন’, মনিটর নয়। তবে দুইটি বস্তুর কাজ একই হওয়ায় এখানে একই সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। 

১৯৭৩ সালে প্রথম কম্পিউটার মনিটর পরিচিতি লাভ করার পরে এর সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ধরন। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ধরন হলোঃ

  • ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর (Flat Panel Monitor) 
  • ক্যাথড রে টিউব মনিটর (Cathod Ray Tube Monitor) 
  • টাচস্ক্রিন মনিটর (Touch Screen Monitor) 
  • লেড মনিটর (LED Monitor) 
  • ওলেড মনিটর (OLED Monitor) 
  • ডিএলপি মনিটর (DLP Monitor) 

এর মধ্যে টাচস্ক্রিন মনিটর এবং লেড মনিটরের সাথে বর্তমান সময়ের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। 

টাচস্ক্রিন মনিটর (Touch Screen Monitor)

এই ধরনের মনিটর সাধারণত ল্যাপটপেই বেশি দেখা যায়, যা ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিন নামে পরিচিত। তবে বিশ্বের অনেক দেশেই ডেস্কটপের জন্যও টাচস্ক্রিন মনিটর বর্তমানে সহজলভ্য। এই মনিটরটির পুরো স্ক্রিনই একটি টাচপ্যাচ হিসেবে কাজ করে। অনেকটা মোবাইলের মতো। ফলে মনিটরের যেকোনো অংশে ক্লিক করেই আপনি মাউসের কাজ করতে পারবেন আরামসে। তাই একে একই সাথে ইনপুট ডিভাইসও বলা হয়ে থাকে।

লেড মনিটর (LED Monitor) 

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কম্পিউটার মনিটর হলো এই লেড মনিটর। এই মনিটর ‘লাইট ইমিটিং ডায়োড’ (Light Emitting Diode) প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে কাজ করে। সেখান থেকেই LED নামটির সৃষ্টি। এ ধরনের মনিটর স্ক্রিনের পেছনে একটি লেড প্যানেল থাকে যেখানে অসংখ্য ডায়োড থাকে। সেসব ডায়োড থেকে আলো বিচ্ছুরণ হয়ে স্ক্রিনে পড়ে এবং আমরা স্ক্রিনে চিত্র দেখি। এটিই হলো লাইট ইমিটিং ডায়োড এর পদ্ধতি। এই মনিটরটিঃ 

  • বেশ নির্ভরযোগ্য 
  • কমদামী 
  • বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী। 

স্পিকার (Speaker)

স্পিকার হলো এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয় এবং সেই যান্ত্রিক শক্তি বাতাসে চাপ সৃষ্টির সাহায্যে নানা ধরনের শব্দের তৈরি করে। মনিটরের পরে এটিই সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত আউটপুট ডিভাইস। একে বেশ কয়েকটি ভাগেই ভাগ করা যায়। 

  • লাউডস্পকারঃ সবচেয়ে বহুল পরিচিত স্পিকার। বড় অনুষ্ঠানের যেই সকল বিশাল আকৃতির স্পিকার ব্যবহৃত হয় সেগুলোই লাউডস্পিকার (Loudspeaker)। 
  • সাব-উফারঃ বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত স্পিকার। এগুলো আকারে কিছুটা ছোট এবং সাব-উফার প্রযুক্তির সাহায্যে লো ব্যান্ড অথবা লো-ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী। উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ উৎপাদনেও সক্ষম। 
  • পোর্টেবল স্পিকারঃ বর্তমানে স্পিকারের ক্ষেত্রেও বহনযোগ্যতা একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভ্রমণরত অবস্থায় গান শোনার জন্য এখন অনেকেই পোর্টেবল স্পিকার কিনছে যা ২ ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টাও ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।  

এছাড়াও রয়েছে উফার, সাউন্ডবার, আউটডোর স্পিকার, ওয়াল মাউন্ট স্পিকার থেকে শুরু করে স্পিকারের আরও অসংখ্য প্রকারভেদ।

প্রিন্টার (Printer)

প্রিন্টার হলো এমন একটি আউটপুট ডিভাইস যার সাহায্যে কম্পিউটারে সৃষ্ট যেকোনো ছবি বা লেখা প্রায় হুবুহু কাগজে পুননির্মিত করা হয়। অর্থাৎ কম্পিউটারের ডিজিটাল রুপ থেকে কোন ছবি বা লেখাকে কাগুজে রুপে নিয়ে আসাই প্রিন্টারের কাজ। প্রিন্টারের রয়েছে অসংখ্য ধরন। তবে কাজের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রিন্টারসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ 

ইংকজেট প্রিন্টার (Inkjet Printer)

যে প্রিন্টারে তরল কালি স্প্রে করার মাধ্যমে কাগজে ছবি তৈরি করা হয় সেই প্রিন্টারকে ইংকজেট প্রিন্টার বলে। এই ধরনের প্রিন্টারের ভেতরে একটি প্রিন্ট হেড (Print Head) থাকে যার ভেতরে থাকে তরল কালি। প্রিন্ট করার সময় একটি কাগজ লম্বালম্বি হয়ে বের হয় এবং তার উপরে প্রিন্ট হেডটা থাকে আড়াআড়ি। অর্থাৎ যখন কাগজটি ধীরে ধীরে বের হতে থাকে তখন প্রিন্ট হেড এই সম্পূর্ণ কাগজটির উপর ছুটে বেড়ায় এবং যেই স্থানে যেই রঙ প্রয়োজন সেখানে সেই রঙ স্প্রে করে। এই ক্ষেত্রে তিন ধরনের কালির সংমিশ্রণ ঘটিয়েই সব রং তৈরি করে থাকে এই প্রিন্টার। স্প্রে করার সময় তরল কালি প্রায় মাইক্রোস্কোপিক আকারে স্প্রে করা হয় এবং তা কাগজে অসংখ্য ডটের মতো বসে যায়। অর্থাৎ আমরা যেই প্রিন্ট দেখি তা মূলত অসংখ্য রঙিন বিন্দুর সম্বনয়। খালি চোখে আমাদের কাছে একটি ছবি মনে হয়। 

লেজার প্রিন্টার (Laser Printer)

ইংকজেট প্রিন্টারের সাথে লেজার প্রিন্টারের সবচেয়ে বড় যেই পার্থক্যটি সেটি হলো লেজার প্রিন্টার তরল কালির বদলে পাউডার কালি ব্যবহার করে। লেজার প্রিন্টারের কালি মূলত আসে টোনার থেকে। এই প্রক্রিয়াটি ইংকজেট প্রিন্টার থেকে অনেক বেশি জটিল। তবে লেজার প্রিন্টার ইংকজেট থেকে অনেক নিখুঁত ও দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে। এগুলো অনেক দীর্ঘস্থায়ীও বটে। কিন্তু ঠিক এ কারণেই লেজার প্রিন্টারের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। 

এক্সটার্নাল ডিভাইস সংযুক্ত করার মাধ্যম

বর্তমানে প্রায় সকল এক্সটার্নাল ডিভাইসের ক্ষেত্রেই তারের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ছাড়াও তারবিহীন ভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। 

তারযুক্ত মাধ্যম (Wired Connection)তারবিহীন মাধ্যম (Wireless Connection)
১। তার থাকে। ১। কোনো তার থাকে না। 
২। সংযোগের জন্য একটি প্রক্রিয়াই ব্যবহার করে। ২। সংযোগের জন্য তিনটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারে। 

  • ইউএসবি ডঙ্গল (USB Dongle) 
  • ওয়াইফাই (Wifi) 
  • ব্লুটুথ (Bluetooth) 
৩। গতি বেশি কিন্তু সহজে পরিবহন যোগ্য নয়।৪। সহজে পরিবহন যোগ্য কিন্তু গতি অনেক সময় কমে যায়।

তারযুক্ত মাধ্যমে গতি অনেকটাই নির্ভর করে কোন তার ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপরে। যেমন কো-এক্সিয়াল (Co-Axial) ক্যাবলের বদলে ফাইবার অপটিকস ক্যাবল ব্যবহার করলে গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে। অপরদিকে তারবিহীন মাধ্যমে সবকয়টিই রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি হলেও পারফর্মেন্সে অনেকটাই পার্থক্য থাকে। 

অভ্যন্তরীণ বা ইন্টার্নাল হার্ডওয়্যার (Internal Hardware) 

অভ্যন্তরীন বা ইন্টার্নাল হার্ডওয়্যার বলতে মূলত বোঝায় কম্পিউটারের কেসিং এবং কেসিং এর ভেতরে যে সকল যন্ত্র আছে সেগুলোকে। এই হার্ডওয়্যার গুলোকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। 

প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device)

কম্পিউটারের যে সকল যন্ত্র গুলো হিসাব নিকাশ অর্থাৎ প্রসেসিং এর সাথে সরাসরি জড়িত থাকে এবং নির্দেশনা মেনে ব্যবহারকারীর কাঙ্খিক ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে  সে সব যন্ত্রকে প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device) বলে। 

সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit – CPU) 

সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ হলো অসংখ্য ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের যন্ত্র যা কম্পিউটারের প্রায় সকল হিসাব নিকাশের কাজ করে এবং অন্যান্য ইউনিটের হিসাবের কাজকেও নিয়ন্ত্রিত করে। একে কম্পিউটারের মস্তিক বলা হয়ে থাকে। 

প্রসেসর হিসাব করার ক্ষেত্রে মূলত দুই ধাপে কাজটি করে। প্রথমত প্রসেসর মেমোরি থেকে প্রয়োজনীয় ডাটা আনে, এরপরে সিপিইউ এর এরিথমেটিক লজিকাল ইউনিট বা এএলইউ (Arithmetic Logical Uni -ALU) সেই ডাটার উপর সকল ধরনের গাণিতিক অপারেশন করে। অতঃপর ফলাফল পাওয়া গেলে দুইটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। হয় প্রাপ্ত ফলাফলটি পরবর্তী কোনো হিসাবের কাজে লাগে। না হয়, ফলাফটি এএলইউ থেকে স্থানান্তরিত হয় মেমোরিতে যায় এবং তা আউটপুট ডিভাইসে মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে পৌছায়।  

কোর এবং থ্রেড (Core & Thread)

সিপিইউ এর কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য অন্যতম যেই মানদন্ডটি রয়েছে সেটি হলো এর কোর কাউন্ট এবং থ্রেড কাউন্ট। অর্থাৎ প্রসেসরটিতে কোর এবং থ্রেডের সংখ্যা। মূলত কোর হলো একটি ফিজিক্যাল বা যান্ত্রিক জিনিস। যান্ত্রিক ভাবে প্রসেসরটি কয় ভাগে বিভক্ত সেই হিসাবকেই কোর কাউন্ট বলে। অপরদিকে থ্রেড জিনিসটি ভার্চুয়াল। মূলত কোর যত বেশি থাকবে, প্রসেসর তত দ্রুত হিসাব করবে, অপরদিকে একটি কোরের থ্রেড যত বেশি থাকবে, ওই কোরটি তত দ্রুত কাজ করবে। উল্লেখ্য, একটি কোরের সর্বোচ্চ দুইটি থ্রেড থাকতে পারে। একটি কোরের একাধিক থ্রেড থাকাকে ইন্টেল এর ভাষায় বলে হাইপারথ্রেডিং(Hyperthreading)

কোর এবং থ্রেড সম্পর্কে জানার গুরুত্ব হলো আপনি যখন কোনো প্রসেসর ক্রয় করতে যাবেন তখন আপনার পণ্য কেনার সিধান্তে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। খুব সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টেল এর সবচেয়ে আধুনিক সিপিইউ লাইন-আপ হচ্ছে Intel Core Processor 13th Generation. এই ১৩শ জেনারেশনের ক্ষেত্রে কোর কাউন্ট হলোঃ 

  • কোর আই ৫ঃ ১৪টি
  • কোর আই ৭ঃ ১৬টি 
  • কোর আই ৯ঃ ২৪টি 

অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন কোন প্রসেসরটি বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। 

জেনারেশন (Generation) 

সিপিইউ যাচাই এর ক্ষেত্রে শুধু কোর এবং থ্রেড কাউন্ট করলেই হয় না। বরং তা করলে বেশ বিপদে পড়তে হয়। সঠিক সিধান্ত হতে হলে জেনারেশনের ব্যপারটাও মাথায় রাখা চাই। প্রসেসরের জেনারেশন যত বাড়ে, এটি ততটাই শক্তিশালী হয়। এমনকি পার্থক্য এতটাই বেশি হয়ে যায় যে কোর আই ৩ ও পুরোনো কোর আই ৭ থেকে অনেক ভাল কাজ করতে পারে। যেমন Core i7 9700K একটি ৮ কোরের প্রসেসর। কিন্তু Core i3 12100 মাত্র ৪ কোরের একটি প্রসেসর হয়েও কোর আই ৭ এর নবম জেনারেশন এর একদম বা ভাল পারফর্ম করছে। 

মাদারবোর্ড (Motherboard)

মাদারবোর্ড হলো এমন এক সার্কিট বোর্ড যা কম্পিউটারের প্রায় সকল হার্ডওয়্যারকে যুক্ত করে। এটি নিজে ইন্টার্নাল হার্ডওয়্যার হলেও বিভিন্ন ধরনের সকেট বা পোর্টের সাহায্যে এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার গুলো মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে। এর ভেতর দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ডাটা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পরিবাহিত হয়। কারণ প্রতিটি যন্ত্রাংশ থেকে প্রসেসরে ডাটা যাওয়া এবং আসার কাজটা পুরোটিই হয়ে থাকে এই মাদারবোর্ডের সাহায্যে। 

গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (Graphics Processing Unit) 

গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট হলো এমন একটি যন্ত্র যা মূলত কম্পিউটারের সকল ধরনের গ্রাফিকাল আউটপুট তৈরি করে। একে ছোট করে জিপিইউ (GPU) ও বলে। আরও সহজ করে বললে, আমরা কম্পিউটারে যত ধরনের ভিডিও, ছবি অথবা যা কিছুই দেখে থাকি সব কিছুই গ্রাফিকাল আউটপুট। এবং এই গ্রাফিকাল আউটপুট তৈরি করে এই জিপিইউ। তবে এরও প্রকারভেদ রয়েছে। 

ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ (Integrated GPU) 

ইন্টিগ্রেটেড জিপিউ তথা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট হলো এমন এক ধরনের জিপিইউ যার নিজস্ব কোনো মেমোরি নেই বরং কম্পিউটারের র‍্যাম থেকে কিছু মেমোরি নিয়ে সকল গ্রাফিকাল আউটপুট তৈরি করে থাকে। এজন্য এই ধরনের জিপিইউ এর ক্ষমতা খুবই সীমিত। 

সাধারণত এসব জিপিইউ এর ক্ষমতা শুধু ভিডিও, ছবি এসব দেখানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে বর্তমানে এএমডি (AMD) এর ভেগা (Vega) এবং ইন্টেল (Intel) এর আইরিশ (Irish) আইজিপিউ (IGPU) ব্যবহারকারীদের স্বল্প মাত্রায় গেম খেলারও সুযোগ করে দিচ্ছে। উল্লেখ্য যে এই ধরনের গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটগুলো আগে থেকে প্রসেসরের সাথে থাকে বিধায়ই এদের ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ বলে। তবে সকল প্রসেসরের সাথে এমন সুবিধা থাকে না। বর্তমানে এএমডি এর রাইজেন ৭০০০ (Ryzen 7000) এর সকল প্রসেসরেই শুধু এরকম আইজিপিউ রয়েছে। এর আগের প্রসেসর গুলোর মধ্যে যেগুলোর নামের শেষে ‘জি’ (G) যুক্ত থাকতো শুধু সেসব প্রসেসরের ক্ষেত্রেই এমন সুবিধা ছিল। যেমনঃ Ryzen 5 3400G। অপরদিকে ইন্টেলের প্রসেসর গুলোর ক্ষেত্রে উলটো। ইন্টেলের যেসব প্রসেসরের নামে শেষে ‘কে’ (K) যুক্ত থাকে শুধু সেসব প্রসেসরই আইজিপিউ থাকে না। যেমনঃ intel Core i9-13900K। বাকি সকল প্রসেসর এই থাকে। 

ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড (Dedicated Graphics Card) 

ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড হলো একটি আলাদা কার্ড যা মূলত একটি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এবং সেটি আলাদা ভাবে গ্রাফিক্স প্রসেসিং এর কাজ করে। গ্রাফিক্স কার্ডকে কম্পিউটারের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ইউনিট বলা চলে। কারণ এর রয়েছে নিজস্ব প্রসেসর থেকে শুরু করে নিজস্ব হিট সিংক, নিজস্ব এক বা একাধিক ফ্যান। এটি একই সাথে কম্পিউটারের সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ইউনিট। জেনারেশন ও মডেল ভেদে এসব গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষমতায় বিস্তর ফারাক আসে। এই গ্রাফিক্স কার্ড গুলো ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ থেকে কয়েক গুণ অথবা কয়ে সহস্র গুণও শক্তিশালী হতে পারে। 

স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device) 

মূলত ডাটা সংরক্ষণ করে রাখার যন্ত্রকেই বলে স্টোরেজ ডিভাইস। এই স্টোরেজ ডিভাইস প্রধানত দুই প্রকার। 

প্রাইমারি স্টোরেজ / র‍্যাম (Primary Storage / Ram) 

র‍্যাম হলো মূলত একটি অত্যন্ত দ্রুত গতির অস্থায়ী মেমোরি যেখানে প্রসেসরের তাৎক্ষণিক ভাবে প্রয়োজনীয় সকল ডাটা গুলো অস্থায়ী ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। র‍্যামের নাম স্টোরেজ ডিভাইসের সাথে অনেকেই অবাক হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে র‍্যাম একটি স্টোরেজ ডিভাইসই। র‍্যামকেই বলা হয় কম্পিউটারের প্রাইমারি স্টোরেজ বা মেইন স্টোরেজ। একটি প্রসেস চলাকালীন প্রসেসরের যে সকল ডাটা প্রয়োজন হয় তা সেকেন্ডারি স্টোরেজ থেকে নিয়ে আসা হয় র‍্যামে। এরপরে সেই ডাটা ব্যবহার করেই প্রসেসর কাজ করে।

সেকেন্ডারি স্টোরেজ (Secondary Storage) 

আমরা সাধারণত যা স্টোরেজ ডিভাইস বলতে বুঝি, মূলত সেগুলোই হলো সেকেন্ডারি স্টোরেজ। অর্থাৎ সাধারণ হার্ড ডিস্ক অথবা এসএস ডি। 

হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard Disk Drive) 

হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ হল এমন একটি ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল (Electro-mechanical) ডাটা স্টোরেজ যেটি কম্পিউটারের সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন, সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট সহ প্রায় যেকোনো ডাটা এক বা একাধিক ডিস্কে সংরক্ষণ করে রাখে। 

হার্ড ডিস্ক ড্রাইভে মূলত একটি বিশাল ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডিস্ক। একটি ডাটা হেডের সাহায্যে এই ডিস্কে ডাটা সংরক্ষণ করা হয় এবং মোছা হয়। মূলত কম্পিউটার ব্যবহারের শুরুতেই হার্ড ডিস্ক ফরম্যাট করা হয়। তখন কয়েকটি ড্রাইভ তৈরি করে নেওয়া হয়। আর সে সময়ই ডিস্কের ভেতরেও সেক্টর তৈরি হয়ে যায়। আর সেই সেক্টরের ভেতরে বিভিন্ন লাইনে ডাটা জমা থাকে। কম্পিউটার চালু হলেই এই ডিস্কটি ঘুরতে শুরু করে। আর ডাটা হেডের সাহায্যে হার্ড ডিস্কের নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট ডাটা রিড হয়। এভাবেই কাজ করে হার্ড ডিস্ক। ডিস্ক যত দ্রুত ঘুরে হার্ড ড্রাইভের গতি ততটাই দ্রুত হয়। আজকের দিনের হার্ড ড্রাইভ গুলোর গতি মিনিটে ৫৪০০ অথবা ৭২০০ ই হয়ে থাকে। তবে সর্বনিম্ন ১২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০০ হাজার অবধি হতে পারে।

সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD)

যত দিন যাচ্ছে, এসএসডি ততটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি এমন একটি স্টোরেজ ডিভাইস যার ভেতরের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (Integrated Circut) এ ডাটা স্থায়ীভাবে জমা করা হয়। এই হার্ড ড্রাইভের সাথে এর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো এটি ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল নয় বরং শুধু ইলেক্ট্রিকার যন্ত্র। তাই এর সকল প্রক্রিয়াই বৈদ্যুতিক। এতে ডাটা সংরক্ষণ করতে অথবা মুছে ফেলতে কোনো ডিস্ক ঘোরার প্রয়োজন হয় না। ফলে হার্ড ড্রাইভের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে কাজ করে এটি। তবে গতি দ্রুত হলেও এই ধরনের স্টোরেজ ডিভাইসের স্থায়ীত্বকাল তুলনামূলক কিছুটা কম। তার পাশাপাশি দামটাও তুলনামূলক অনেক বেশি। যেমন ১ টেরাবাইটের একটি হার্ড ড্রাইভ আপনি বর্তমানে বাজারে ৩৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। কিন্তু একটি ১ টেরাবাইটের এনভিএমই এসএসডি (NVME SSD) ক্রয় করতে হলে আপনার গুণতে হবে প্রায় ২০ হাজার টাকার। দামের পার্থক্য যে কতটা, তা এখান থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। 

অন্যান্য

একদম প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াও আরও কিছু জিনিস আছে যা প্রায় কাছাকাছি মাত্রার গুরুত্ব বহন করে। যেমন সিপিইউ কুলিং সিস্টেম (Cpu Cooling System)। এটি হতে পারে একটি সাধারণ ফ্যান, হতে পারে বিশালাকৃতির লিকুইড কুলার। কিন্তু কুলার ঠিক ভাবে চালু না থাকলে উইন্ডোজ কম্পিউটার পুরোপুরি চালু হতেই দিবে না। ঠিক একই ভাবে কম্পিউটারের ভেতরে বাতাসের প্রবাহ বজায় রেখে তাপমাত্রা সঠিক রাখতে কেসিং ফ্যান এরও অনেক ভূমিকা আছে। তার পাশাপাশি কেসিং বা চেসিস ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। কারণ দিন শেষে কম্পিউটারটির সকল যন্ত্রাংশ থাকে কেসিং এর ভেতরেই। 

শেষকথা 

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এত অগণিত সংখ্যক যে সে সম্পর্কে লিখে শেষ করার মুশকিল। তাই এই লেখাটিতে শুধু গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার গুলোর কথাই কিছুটা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এর মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে সকলেরই কিছুটা পরিষ্কার ধারণা হবে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button