অভিবাসনজীবন ও জীবিকাটিপসটেকনোলজিবাংলাদেশভ্রমন

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার ও বুকিং করার নিয়ম

দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যাতায়াতের জন্য আকাশপথে ভ্রমণ অনেক বেশি সময় সাশ্রয়ী, সুবিধাজনক, এবং যথেষ্ট আরামদায়কও বটে। পর্যটক, অভিবাসী, হজ্জযাত্রী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাধারণত আকাশপথে ভ্রমণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে, ঘরে বসে নিজে নিজেই যদি আপনি অনলাইনে বিমানের টিকেট কেটে ফেলতে পারেন, তাহলে টিকেট কাটতে গিয়ে আপনাকে কোনো বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম জানা থাকলে, আকাশপথে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ঘরে বসেই খুব সহজে আপনি বিমানের টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন।

নিজস্ব স্মার্টফোন দিয়েই, আপনি অনলাইনে বিমানের যেকোনোধরনের টিকেট কাটতে পারবেন। অনলাইনে কাটা এসকল টিকেটের দামও তুলনামূলক কম থাকে।

নিজে নিজে বিমানের টিকেট কাটতে- অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম, কী কী লাগে, বিমানের টিকেট কাটার বিভিন্ন অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটসমূহ, ফ্লাইটের স্ট্যাটাস যাচাই পদ্ধতি, দেশের অভ্যন্তরীণ টিকেট ক্র‍য় কিংবা কম মূল্যে বিমানের টিকেট ক্রয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই লেখাটি থেকে।

সূচিপত্রঃ

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম

বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে আকাশপথে মানুষের যাত্রাকে সহজ করার জন্য এবং এই সেবাসমূহ অধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি (Travel Agency) ও এয়ারলাইন্স (Airlines) কোম্পানিগুলো অনলাইন টিকেট বুকিং (Booking) ব্যবস্থা চালু করেছে। 

এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, আপনি ঘরে বসেই দেশের অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক বিমানের টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। 

বিমানের টিকেট কাটার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট

আকাশপথে ভ্রমণের জন্য বিমানের টিকেট কাটার জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো হলোঃ

  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (Biman Bangladesh Airlines)
  • ফ্লাইট এক্সপার্ট (Flight Expert)
  • গোযায়ান (GoZayaan)
  • শেয়ার ট্রিপ (ShareTrip)
  • নভো এয়ার (Novoair)
  • এমি বিডি (Amybd) ইত্যাদি।

এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময়, বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে অনলাইনে টিকেট কাটার সুবিধা পাওয়া যায়। পাশাপাশি টিকেটের মূল্য পরিশোধের জন্য সহজ মাধ্যম হিসেবে ভিসা (Visa)/মাস্টার কার্ডের (Master Card) পাশাপাশি বিকাশ নগদ মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। 

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটতে কী কী লাগে?

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার জন্য অনেক ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় না। এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত কিছু তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হয় মাত্র। আর এর জন্য, এয়ারলাইন্স ওয়েবসাইটের প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন পেইজে, যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ এবং সচল মোবাইল নাম্বার ও ই-মেইল ঠিকানা দিতে হবে। এছাড়াও টিকেট কাটার জন্য একজন ব্যক্তির আরো কিছু জিনিস দরকার হয়। সেগুলো হলোঃ

  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে টিকেট সংগ্রহ করতে, একটি বৈধ আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট (Passport) এবং বৈধ ভিসা
  • যাত্রীর কাঙ্ক্ষিত যাত্রা শুরুর স্থান, ফ্লাইটের সময় ও গন্তব্যের তথ্য
  • টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে নির্ধারিত অনলাইন পেমেন্ট (Online Payment) মাধ্যমে পর্যাপ্ত টাকা।

এগুলো থাকলেই আপনি বিভিন্ন ট্রাভেল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গার বিমানের টিকেট কাটতে পারবেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম

বর্তমানে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে অনলাইনে বিমানের টিকেট সংগ্রহ করা যায়। তবে বৈদেশিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে, বাংলাদেশের সরকারি এয়ারলাইন্স থেকে টিকেট সংগ্রহ করেন অনেকেই।  

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বিমানের টিকেট কাটতে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এই লিংকে ভিজিট (Visit) করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করুনঃ 

ধাপ ১: কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের ফ্লাইট অনুসন্ধান

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর মূল ইন্টারফেসে প্রবেশ করার পর, ওয়েবসাইটের সার্ভিসসমূহের একটি পেজ দেখতে পাবেন। এখানে বুক ফ্লাইট (Book Flight) পেজটি দেখাবে। কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইট সিলেক্ট করার জন্য, প্রথমে টিকেটের ধরন, যেমন,ওয়ান ওয়ে One way)/রাউন্ড ট্রিপ (Round-trip)/মাল্টি সিটি (Multi-city) অপশন দেখা যাবে। এর মধ্যে যেকোনো একটি সিলেক্ট করুন।

শুধু যাওয়ার জন্য ওয়ান ওয়ে, আপ-ডাউন বা যাওয়া-আসার টিকেটের জন্য রাউন্ড-ট্রিপ সিলেক্ট করুন। একাধিক শহরের ফ্লাইট যেমন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের টিকেটের জন্য মাল্টি সিটি সিলেক্ট করুন।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ১

উপরোক্ত ছবিতে, ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রাউন্ড-ট্রিপের জন্য অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। এর জন্যঃ

  • ফ্লাইং ফ্রম (Flying from) অপশনে, ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর বিমানবন্দরটি সিলেক্ট করুন।
  • ফ্লাইং টু (Flying to) অপশনে গন্তব্যের বিমানবন্দর সিলেক্ট করুন।
  • প্রস্থানের তারিখ ঠিক করুন।
  • ফিরতি ফ্লাইটের তারিখ নির্বাচন করুন।
  • যাত্রীর সংখ্যা নির্বাচন করুন।
  • ফ্লাইটের শ্রেনী থেকে, বিজনেস ক্লাস (Business class/ইকোনমিক ক্লাস (Economic class) সিলেক্ট করুন।

সব তথ্য পূরণের পর, শো ফ্লাইটস (Show Flights) অপশনে ক্লিক করুন। এরপর স্ক্রিনে আপনি আপনার নির্ধারিত তারিখে নির্ধারিত গন্তব্যের কোনো ফ্লাইট থাকলে তার বিস্তারিত দেখতে পাবেন।

ধাপ ২: প্রস্থান ফ্লাইটের ধরন নির্বাচন

এখানে, ফ্লাইটের ধরন ও বিমান অনুযায়ী বিভিন্ন মূল্যের টিকেটসমূহ দেখতে পাবেন। একইসাথে, ফ্লাইটের কয়টি সিট খালি আছে তাও এখানে উল্লেখ থাকবে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ঘরে ক্লিক করুন। এক্ষেত্রে, ইকোনমিক ক্লাস সিলেক্ট করলে, আপনি তুলনামূলক কম দামে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত টিকেটের দাম, ফ্লাইটের খরচ এবং ভ্রমণের সময় অন্তর্ভুক্ত পরিষেবাগুলোর ধরন অনুযায়ী ফ্লাইটের ক্লাস নির্বাচন করা হয়।

(ফ্লাইট সিলেক্ট ও নির্ধারিত টিকেটের মূল্য পরিশোধের পূর্বে উপরে উল্লেখিত শর্তাবলী ও নির্দেশনাগুলো দেখে নিন।)

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ২

ধাপ ৩: ফ্লাইট ইকোনোমি সিলেক্ট

আপনি যেই ফ্লাইটটি সিলেক্ট করবেন, সেই ফ্লাইট অনুযায়ী ৩টি ভিন্ন মূল্যের টিকেট দেখতে পাবেন। সেগুলো হলোঃ

  • সুপার সেভার ইকোনোমি (Super Saver Economy)
  • ইকোনোমি সেভার (Economy Saver)
  • ইকোনোমি ফ্লেক্সি (Economy Flexi)

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার মাধ্যমে, সবচেয়ে কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে, সুপার সেভার ইকোনোমি সিলেক্ট করে পরবর্তী ধাপে যান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৩

ধাপ ৪: রিটার্ন টিকেটের ধরন নির্বাচন

এই ধাপে, আপনার নির্বাচিত প্রস্থান (ডিপার্ট- Depart) ফ্লাইট ও ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য উপরে দেখতে পাবেন। এবার রাউন্ড-ট্রিপ টিকেটের ক্ষেত্রে রিটার্ন টিকেটের (Return ticket) জন্য একইভাবে অপশনগুলো সিলেক্ট করুন।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৪

ধাপ ৫: ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য রিভিউ

রাউন্ড-ট্রিপের জন্য আপনার প্রস্থান ফ্লাইট ও রিটার্ন ফ্লাইট নির্বাচন করার পর একটি রিভিউ (Review) পেজ দেখতে পাবেন। এখানে থাকবে-

  • ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, 
  • ফ্লাইটের যাত্রা স্থান ও গন্তব্য, 
  • ফ্লাইট টিকেটের মূল্য, 
  • ট্যাক্স (Tax) ও অন্যান্য ফি সম্পর্কিত তথ্য।

আপনার প্রয়োজনে এখান থেকে চেঞ্জ ফ্লাইট (Change Flight) অপশনে ক্লিক করে নতুনভাবে ফ্লাইট সিলেক্ট করতে পারবেন। সকল কার্যক্রম ধাপে ধাপে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পর, নিচের কন্টিনিউ টু প্যাসেঞ্জারস (Continue to passengers) অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৫

ধাপ ৬: যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য প্রদান

এই পেইজে, যাত্রীর প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী দিতে হবে। আগেই এই ওয়েবসাইটে রেজিস্টার করে থাকলে, প্যাসেঞ্জার অপশন থেকে ‘মি’ (Me) সিলেক্ট করুন। অন্যথায়, ধারাবাহিকভাবে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পূরণ করুন:

  • যাত্রীর নামের শিরোনাম/টাইটেল (Mr./Mrs. ইত্যাদি) সিলেক্ট করুন।
  • গিভেন নেম (Given name) অপশনে, যাত্রীর পুরো নাম/নামের প্রথম অংশ লিখুন।
  • সারনেম (Surname) অপশনে, যাত্রীর নামের শেষ অংশ লিখুন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যাত্রীর জন্মতারিখ লিখুন। এক্ষেত্রে প্রথমে দিন, তারপর মাস এবং সর্বশেষ বছর সিলেক্ট করুন।
  • যাত্রীর লিঙ্গ নির্বাচন করুন।

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার সময় যাত্রীর সব ব্যক্তিগত তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র/অনলাইন জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্ট অনুযায়ী পূরণ করুন। যাতে করে, ফ্লাইটের আগে এয়ারপোর্টে কোনো জটিলতার সম্মুখীন না হতে হয়।

যাত্রীর কন্টাক্ট ইনফরমেশন (Contact Info) অপশনে, যাত্রীর ফোন নাম্বার ও ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। এসব তথ্য পূরণের পর, নিচের ‘কন্টিনিউ টু সিট সিলেকশন’ (Continue to seat selection) অপশনে ক্লিক করুন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৬

ধাপ ৭: যাত্রীর আসন নির্বাচন

এই পেইজে আপনি, ফ্লাইটের আসনগুলোর তালিকা দেখতে পাবেন। যেই সিটগুলো আগেই বুক করা হয়ে গেছে এবং আপনার টিকিটের ক্লাস অনুযায়ী যেসব সিট আপনি বুক করতে পারবেন না সেগুলো লাল রঙের দেখাবে। বাকি সবুজ রঙের সিটগুলো থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী সিট সিলেক্ট করে, ‘কন্টিনিউ টু এক্সট্রাস’ (Continue to extras) অপশনে ক্লিক করুন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৭

ধাপ ৮: অতিরিক্ত সুবিধা নির্বাচন

এই ধাপে, অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে বাড়তি মালামাল বহনের সুযোগ পাবেন। অতিরিক্ত মালামাল/ব্যাগ বহন করতে চাইলে, এড ব্যাগস (Add bags) অপশনে ক্লিক করুন। তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাগের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ বাড়তি ফি পরিশোধ করতে হবে। অতিরিক্ত ব্যাগ বহনের সুবিধাটি নিতে না চাইলে ‘কন্টিনিউ টু পেমেন্ট’ (Continue to payment) অপশনে ক্লিক করুন।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৮

ধাপ ৯: টিকেটের মূল্য পরিশোধ

এখানে আপনার ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য ও সর্বমোট কতো টাকা পরিশোধ করতে হবে তা দেখানো হবে। টিকেটের মূল্য পরিশোধের জন্য পেজটি স্ক্রল (Scroll) করে নিচে যান। এখানে বেশকয়েকটি পেমেন্ট অপশন পাবেন। আপনি চাইলে, আপনার সুবিধামতো ভিসা/এএমইএক্স (AMEX)/মাস্টার কার্ডের পাশাপাশি নগদ ও বিকাশের মাধ্যমেও টিকেট ক্রয় করতে পারবেন। 

বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চাইলে, বিকাশ অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর নিচের টার্মস এন্ড কন্ডিশন (Terms & Conditions) ও প্রাইভেসি পলিসি (Privacy Policy) সম্পর্কিত ঘরে ক্লিক করুন। এরপর কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে পারচেজ (Purchase)/বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে পে উইথ বিকাশ (Pay with bKash) লেখাতে ক্লিক করে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করুন।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম। ধাপঃ ৯

ধাপ ১০: বিমানের টিকেট সংগ্রহ

পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, প্যাসেঞ্জার ডিটেলস অপশনে দেওয়া যাত্রীর ই-মেইল ঠিকানায় বিমানের ই-টিকেট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে যেকোনো নিকটস্থ সাইবার ক্যাফে বা দোকান থেকে আপনি বিমানের টিকেটটি প্রিন্ট (Print) করে নিতে পারবেন।

অনলাইনে বিমানের টিকেট চেক করার নিয়ম

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার পরে তা যাচাই করার প্রয়োজন হতে পারে। ফ্লাইট রুট (Flight Route) অথবা ফ্লাইট নাম্বার (Flight No.) দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। এর জন্য যেকোনো ব্রাউজার থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। তারপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ

  • ওয়েবসাইটের হোমপেইজের অপশনগুলো থেকে ফ্লাইট স্ট্যাটাস (Flight Status) অপশনে ক্লিক করুন। 
  • ফ্লাইট রুটের মাধ্যমে স্ট্যাটাস চেক করতে চাইলে, রুট অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনার নির্ধারিত ফ্লাইটটি কোন বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে তা সিলেক্ট করুন।
  • আপনার ফ্লাইটের গন্তব্যের শেষ বিমানবন্দরটি সিলেক্ট করুন।
  • ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর তারিখ সিলেক্ট করুন। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র চলতি দিনের এবং পরবর্তী ১ দিনের ফ্লাইটগুলোর অবস্থা জানতে পারবেন।

সবশেষে, নিচের সার্চ (Search) বাটনে ক্লিক করলে নির্দিষ্ট ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন।

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওয়েব চেক-ইন

বিমানে ভ্রমণের পূর্বে যাত্রীদের টিকেট যাচাইয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে চেক-ইন (Check-in) বলা হয়। চেক-ইন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি ধরা পরলে, যাত্রীর বিমান টিকেট বাতিল করা হতে পারে। তাই নিরাপত্তার জন্য পূর্বেই অনলাইনে ওয়েব চেক-ইন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে নিতে পারবেন। এছাড়াও ওয়েব চেক-ইন করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিমানবন্দরে লাইন বাইপাস (Bypass) করা।

সাধারণত নির্ধারিত ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে থেকে চেক-ইন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর ৪ ঘন্টা পূর্বে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর ৩ ঘন্টা পূর্বে এই চেক-ইন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়।

ওয়েব চেক-ইন করার জন্য-

  • ওয়েবসাইটের হোমপেইজের অপশনগুলো থেকে ওয়েব চেক-ইন অপশনে ক্লিক করুন।
  • ফ্লাইট বুকিং রেফারেন্স (PNR)/টিকেট নাম্বার লিখুন।
  • যাত্রীর নামের শেষ অংশ (Last name) লিখে সার্চ করুন।

আপনার বুকিং করা টিকেটের বিস্তারিত তথ্য আসলে, তা সঠিক আছে কিনা মিলিয়ে নিয়ে, আপনি ওয়েব চেক-ইন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। 

কম মূল্যে অতিরিক্ত সুবিধাসহ বিমানের টিকেট বুকিং

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছাড়াও দেশে অনেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীদের কিছু বাড়তি সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের সেরা কিছু ট্রাভেল এজেন্সী বা এয়ারলাইন্সে তুলনামূলক কম দামে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটা যায়। এমনকিছু প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্লাইট এক্সপার্ট, গোযায়ান, শেয়ার ট্রিপ, নভো এয়ার ইত্যাদি। 

এসব এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে কম দামে টিকেট কাটার পাশাপাশি যাত্রীরা আরো কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমনঃ

  • একই প্লাটফর্ম থেকে বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি এয়ারলাইন্সের বিমান টিকেট বুক করা।
  • বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের জন্য নানারকম ট্রিপের হট ডিলস (Hot deals)।
  • কুপন কোড (Coupon code) ব্যবহার করে টিকেটের মূল্যে বিশেষ ছাড় পাওয়া।
  • লস্ট বেগেজ প্রটেকশন (Lost Baggage Protection) নীতিমালা অনুযায়ী, আপনার কোনো ব্যাগ হারিয়ে গেলে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা।

এছাড়াও উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাসমূহ খুব দ্রুত এবং সহজেই উপলব্ধ করা যায়। এখানে আপনার সুবিধার জন্য উদাহরণস্বরূপ- ‘গোযায়ান’ ট্রাভেল কোম্পানির অনলাইন টিকেট বুকিং ব্যবস্থা দেখানো হলোঃকম মূল্যে অতিরিক্ত সুবিধাসহ বিমানের টিকেট বুকিং

এখানে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটের মতো একইরকমভাবে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইটের যাত্রা, গন্তব্য এবং যাত্রার তারিখ সিলেক্ট করে সার্চ করুন। তারপর একইসাথে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান টিকেট ও টিকেটের মূল্য দেখে যাচাই করে নিতে পারবেন। তারপর এখান থেকে, কম মূল্যে আপনার জন্য সঠিক বিমান টিকেটটি বাছাই করে কিনে নিয়ে আপনি আকাশপথে নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারবেন।

অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার অ্যাপস

বর্তমানে অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি এবং এয়ারলাইন্সের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। আপনি চাইলে স্মার্টফোন ব্যবহার করে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও বিমানের টিকেট কাটতে পারবেন। বিমানের টিকেট কাটার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো হলোঃ

এসকল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘গুগল প্লে স্টোর’ (Google Play Store) থেকে ইন্সটল করতে পারবেন। এসব অ্যাপের ইন্টারফেস ও সার্ভিসসমূহ প্রায় একই। সব অ্যাপগুলো থেকেও ওয়েবসাইটের মতো একই নিয়মে বিমানের টিকেট কাটতে পারবেন।

অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম

অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট কাটার জন্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে বিমানের টিকেট কাটার ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • গুগল প্লে স্টোর’ থেকে অ্যাপসটি ইন্সটল করে নিন। 
  • এবার অ্যাপসটি ওপেন করে হোমপেজে প্রবেশ করুন।
  • নতুন ফ্লাইট বুকিং করার জন্য, বুক ফ্লাইট (Book Flight) অপশনটিতে ক্লিক করুন।

অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম

এবার, উপরে দেখানো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম অনুসরণ করে টিকেট কেটে নিতে পারবেন। অন্য অ্যাপসের ক্ষেত্রেও একইভাবে টিকেট কাটার বিভিন্ন ধাপগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। একে একে সব ধাপ সম্পন্ন হলে এবং টিকেট মূল্য পরিশোধ করলে, আপনার দেয়া ই-মেইলে আপনি আপনার ফ্লাইটের টিকেট পেয়ে যাবেন।

দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান টিকেট কাটার নিয়ম

এই লেখাতে দেখানো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ/ডোমেস্টিক (Domestic)‌ ও আন্তর্জাতিক টিকেট ক্রয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সব ফ্লাইট বুকিং প্রক্রিয়া একই রকম।

তবে কোনো যাত্রীর পাসপোর্ট না থাকলেও ডোমেস্টিক ফ্লাইটের টিকেট কাটতে এবং সেই ফ্লাইটে যাত্রী আরোহন করতে পারবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেটের জন্য অবশ্যই যাত্রীর একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। 

শেষকথা

এই লেখাতে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অনলাইনে বিমানের টিকেট কাটার নিয়ম দেখানো হয়েছে। তবে এই নিয়ম অনুসরণ করে একইভাবে অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকেও আপনি বিমানের টিকেট ক্রয় করতে পারবেন। টিকেট ক্রয়ের পূর্বে এসব ওয়েবসাইটের শর্তাবলী ও নির্দেশনাগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে পারেন। টিকেটের মূল্য পরিশোধের আগে, টিকেট কাটার জন্য দেয়া যাত্রীর বিস্তারিত তথ্যসমূহ সঠিক কিনা, তা অবশ্যই একবার যাচাই করে নিন। আশা করছি, এই নিবন্ধে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, আপনি ঘরে বসে সহজে অনলাইনে বিমানের টিকেট কেটে ফেলতে পারবেন, এবং টিকেট কাটতে গিয়ে নানান ঝামেলা পোহানো থেকে কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি পাবেন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) ডোমেস্টিক ফ্লাইটের জন্য কী কী প্রয়োজন হয়? 

ডোমেস্টিক বা লোকাল ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়। সাধারণত চেক-ইন এবং বোর্ডিং গেটে একটি বৈধ ফটো আইডেন্টিফিকেশন উপস্থাপন করতে হবে।

(২) অনলাইনে সৌদি আরবের বিমানের টিকেট কাটার জন্য কী কী লাগবে?

সৌদি আরব বা অন্যান্য যেকোনো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেট কাটতে হবে। এর জন্য যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি বৈধ পাসপোর্ট, বৈধ ভিসা, ফ্লাইটের সময়, যাত্রা ও গন্তব্যের তথ্য দেয়া লাগবে এবং টিকেটের মূল্য পরিশোধের জন্য অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা লাগবে।

(৩) শিশুদের জন্য কি বিমানের টিকেট কাটতে হয়?

হ্যাঁ। শিশুদের জন্য বিমানের টিকেট কাটতে হবে। তবে শিশুদের বয়স অনুযায়ী বিমানের টিকেট ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত থাকে। সাধারণত ০-২ বছরের শিশুদের জন্য বেসিনেট বা দোলনা ব্যবহার করা হয়। এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকেই এটি দেওয়া হয়। তবে এর জন্য আগে থেকেই আবেদন করতে হবে। অন্যদিকে, ২-১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য টিকেটের ক্যাটাগরি এবং দাম আলাদা।

(৪) ফ্লাইট বুকিং করার পর পাসপোর্ট নাম্বার পরিবর্তন করা যাবে কী?

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। টিকেট বুকিং করার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে নানারকম তথ্যগত ত্রুটি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে, টিকেট কাটার পর যাত্রীর নামের বানান পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর দিনে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে পরিবর্তন করা যায়।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button