ইমেইল মার্কেটিংডিজিটাল মার্কেটিং

ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়

ডিজিটাল মার্কেটিং, যত দিন যাচ্ছে এর চাহিদা ততই বাড়ছে। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিং এরই অন্যতম সফল একটি মাধ্যম ইমেইল মার্কেটিং। পরিসংখ্যান মতে, বাকি সকল ডিজিটাল মার্কেটিং মাধ্যমের তুলনায় ইমেইল মার্কেটিং এ খরচের তুলনায় পণ্য অথবা সেবা বিক্রয়ের হার অনেক বেশি। এ ছাড়াও ইমেইল মার্কেটিং বেছে নেওয়ার রয়েছে আরো অনেক কারণ। তাই ইমেইল মার্কেটিং এর দক্ষতা যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই স্থান করে নিতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর দুনিয়াতে। তবে ইমেইল মার্কেটিং শিখতে হলে অবশ্যই প্রথমে জানা চাই এর কিছু পরিভাষা। 

সূচিপত্রঃ

ইমেইল মার্কেটিং এর পরিভাষা

ইমেইল মার্কেটিং এর জগতে খুবই পরিচিত কিছু শব্দাবলী নতুনদের কাছে মনে হতে পারে একদমই দুর্বধ্য। এই দুর্বধ্য শব্দগুলোকে পরিচিত করাটাই একজন ইমেইল মার্কেটিং পেশায় যোগ দিতে চাওয়া ব্যক্তির প্রথম কাজ। চলুন জানা যাক এমন কিছু পরিভাষাঃ

  • সাবস্ক্রাইবারঃ ইমেইল মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন কিছু মানুষ যারা আপনার দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলো নিজে থেকেই পেতে চায়। আপনাকে সেই সকল বিজ্ঞাপন পাঠানোর অনুমতি যেসব মানুষ দিয়ে থাকে তারা হলেন সাবস্ক্রাইবার।
  • অপট-ইনঃ বিজ্ঞাপনগুলো তাদের মেইলে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটিকেই বলে অপট-ইন। একে ভিন্ন ভাষায় সাবস্ক্রাইবও বলা চলে। সাধারণত একজন সম্ভাব্য গ্রাহক তার ইমেইল প্রদানের সাথে সাথেই আপনাকে এই অনুমতি দিয়ে থাকে।
  • অপট-ইন ফর্মঃ যে ফর্মের সাহায্যে অনুমতিটি চাওয়া হয় এবং ইমেইল নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় তাকেই বলে অপট-ইন ফর্ম।
  • লিডঃ লিড হলো মূলত সম্ভাব্য গ্রাহকদের দ্বারা প্রদানকৃত তথ্য। সাধারণত যা হয়ে থাকে ইমেইল।
  • লিড-ম্যাগনেটঃ অপট-ইন ফর্মের সাহায্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে তথ্য নিতে চাইলে আপনাকে হতে হবে কৌশলী। সাধারণত কোনো অফার, ডিসকাউন্ট, ফ্রি ট্রায়াল অথবা ফ্রি কোনো পণ্যের সাহায্যেই সম্ভাব্য গ্রাহকদের ইমেইল প্রদান করতে উৎসাহী করা যায়। এসব অফার অথবা ডিসকাউন্ট যার সাহায্যে আপনি এসব তথ্য তথা লিড সংগ্রহ করছেন মূলত তাই হলো লিড-ম্যাগনেট।
  • লিস্টঃ অসংখ্য গ্রাহকের ইমেইল ও প্রয়োজনে অন্যান্য তথ্যাবলী সংগ্রহের পরে তথ্যের যে বিশাল তালিকা হয় তাই লিস্ট। বর্তমানের আধুনিক জগতে এই লিস্টকে অন্যতম মূল্যবান বস্তু হিসেবেও বিবেচনায় করা হয়।
  • গ্রুপঃ ইমেইলের ও অন্যান্য তথ্যের বিশাল তালিকাকে যখন প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ম অনুযায়ী নিজেরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে তখন সেই ভাগগুলোকে গ্রুপ বলে।
  • সেগমেন্টঃ যখন ইমেইলের তালিকায় থাকা ইমেইলগুলো তাদের ক্রয়ের ইতিহাস, একটিভ থাকার সময় ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যায় তখন তাকে সেগমেন্ট বলে।
  • অটোমেশনঃ এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আপনার গ্রাহকদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেইল যাবে। মূলত এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াটি চালু হয় যখন গ্রাহকেরা নির্দিষ্ট কোনো কাজ করে থাকে। যেমন সে যদি কোনো পণ্য তার পছন্দের তালিকায় রেখে থাকে এবং সেই পণ্যে কোনো ছাড় চলে তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই গ্রাহকের কাছে এ সম্পর্কিত একটি ইমেইল যাবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই অটোমেশন।

ইমেইল মার্কেটিং করার উপায়

এই লেখাটি মূলত আপনি কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং শিখবেন তার ওপর ভিত্তি করে লেখা। তবে ইমেইল মার্কেটিং শিখতে চাইলে ইমেইল মার্কেটিং কী, কিভাবে কাজ করে, ইমেইল মার্কেটিং এর প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ইমেইল লিস্ট ইত্যাদি সম্পর্কেও জানা জরুরী। কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং এর মূল বিষয়টা কিন্তু সম্ভাব্য গ্রাহকদের দ্বারা ইমেইলটি পড়ানো। আর ইমেইলটি হওয়া চাই এমন যাতে ইমেইলটি পড়লেই গ্রাহক প্রলুব্ধ হন ইমেইলের সাথে সংযুক্ত লিংকটি চালু করতে অথবা ইমেইলের সাথে সম্বলিত অন্য যেকোনো কাজ করতে। মূলত এটি করতে পারাই ইমেইল মার্কেটিং। আর লেখার এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে এই কাজটিই করার উপায়। 

স্প্যাম ফিল্টার এড়ানোর উপায় 

ইমেইল মার্কেটারদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধার নাম হলো স্প্যাম ফিল্টার (Spam Filter)। আপনারা সকলেই স্প্যাম ফিল্টারের বা স্প্যাম বক্সের সাথে পরিচিত। মূলত যে সকল ইমেইল একজন ব্যবহারকারীর পাওয়ার কথা না সেগুলোকেই গুগল বা অন্য ইমেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করে। স্প্যাম বক্স বেশিরভাগ গ্রাহকই স্বভাবত খুলে দেখেন না। আর আপনার ইমেইলটি যদি স্প্যাম বক্সের অর্ন্তগত থাকে তাহলে প্রথমেই একটি বাজে দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তাহলে জানা যাক কি কি করা উচিত স্প্যাম বক্স এড়াতে। 

  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইমেইল ব্যবহারকারীর অনুমতি নেওয়া। অর্থাৎ কোনোভাবেই ইমেইল লিস্ট ক্রয় করে গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়া ইমেইল পাঠানো উচিত না। এতে করে আপনার অধিকাংশ ইমেইলই স্প্যাম সমস্যার সম্মুখীন হবে। অপট-ইন ফর্মের সাহায্যে গ্রাহকদের ইমেইল সংগ্রহ করাটাই স্প্যাম বক্স এড়ানোর সর্বোত্তম উপায়। 
  • একটি একক  আইপি অ্যাড্রেস (IP Address) ব্যবহার করে ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ করুন। বাংলাদেশে সাধারণত বেশিরভাগ ইন্টারনেট সংযোগই যৌথ বা ‘শেয়ারড’ (Shared)। কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং এর কাজে একক আইপি অ্যাড্রেসের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। কারণ এর যৌথ সংযোগে অন্য ব্যবহারকারীর কার্যক্রম স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হলে আপনার ওপরেও তার প্রভাব পড়বে। ফলস্বরুপ আপনার পাঠানো ইমেইল গুলোও স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হবে। 
  • আপনার পাঠানো ইমেইলের টেমপ্লেট (Template) সহজ ও সাবলীল রাখুন। 
  • ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত খুব বেশি শব্দ ব্যবহার করবেন না। ব্যবহার করলেও বহুল প্রচলিত শব্দের পরিবর্তে কোনো সহজ সমার্থক শব্দ ব্যবহার করুন। 
  • ইমেইলের সাহায্যে সম্ভব হলে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যুক্ত করুন। 
  • একটি ভেরিফাইড ডোমেইন (Verified) থেকে ইমেইল পাঠান। মূলত আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আলাদা ডোমেইন তৈরি করুন এবং ডোমেইনের নামটি যে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই সম্পদ তা নিশ্চিত করুন। 
  • সর্বোপরি আপনার গ্রাহকেরা কিভাবে আপনার মেইলগুলোকে স্প্যাম বক্স থেকে রেহাই দিতে পারে সেই পদ্ধতি জানিয়েও একটি মেইল করতে পারেন।

গ্রাহকদের সেগমেন্টে ভাগ করুন

ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল হলো গ্রাহকদের সেগমেন্টে ভাগ করা। মূলত গ্রাহকদের নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলাটাই মূলত সেগমেন্টেশন (Segmentation)। এর সুবিধা অনেক। যেমনঃ

  • গ্রাহকদের জন্য ইমেইলের সাবজেক্ট লাইন (Subject Line) বা হেড লাইন (Head Line) তথা শিরোনামটি লেখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। 
  • একই শিরোনামের সাহায্যে সকল গ্রাহককে আকৃষ্ট করার চেয়ে গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী শিরোনামের সাহায্যে আকৃষ্ট করাটা অধিক কার্যকরী। 
  • এর সাহায্যে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অনাগ্রহী গ্রাহকেরা অপ্রয়োজনীয় ইমেইল কম পাবেন। ফলে আন-সাবস্ক্রাইব করার হারও অনেক কমে যাবে। 
  • সেগমেন্ট করার মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকদের অটোমেশন অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার অর্ন্তভুক্ত করা যাবে। 

তবে মূল বিষয় হলো গ্রাহকদের ঠিক কোন কোন ভাগে ভাগ করতে হয়। নিচে সেই বিষয়গুলো আলোচনা করা হলোঃ 

নতুন গ্রাহকঃ নতুন গ্রাহকদের সবসময়ই একটি আলাদা ভাগে রাখা উচিত। কারণ যেহেতু তারা নতুন তাই তাদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা প্রথমেই পাওয়া সম্ভব নয়। নতুন গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সময় অবধি এই ভাগে রাখা উচিত। 

আগ্রহঃ যেকোনো বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই গ্রাহকের আগ্রহ বেশ বড় ভূমিকা রাখে। পূর্ব থেকে কোনো ধরনের পণ্যে আগ্রহী থাকলে অবশ্যই গ্রাহকদের ওই ধরনের পণ্য সম্পর্কিত ইমেইল পাঠানো উচিত। 

স্থানঃ গ্রাহকের স্থানও অনেক সময় এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। কোনো স্থানের ডেলিভারি চার্জ কিছুদিনের জন্য ফ্রি হলে অথবা ওই অঞ্চলের জন্য অফার থাকলে অবশ্যই তা গ্রাহকদের জানানো উচিত। 

পছন্দঃ গ্রাহকদের ইমেইল করার সময় মাথা রাখতে হবে যে তারা কি ধরনের ইমেইল পছন্দ করে। যদি তারা ব্লগ ধরনের ইমেইল আগ্রহী হয়ে থাকে তাহলে একরকম ইমেইল পাঠাতে হবে। আবার যদি শুধু চিত্র সম্বলিত ইমেইলে আগ্রহী হলে সে ধরনের ইমেইল পাঠাতে হবে। 

পেশাঃ আপনার গ্রাহকের পেশা তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এবং ক্রয় ক্ষমতাকে অনেকটাই প্রভাবিত করবে। তাই আপনি যদি গ্রাহকের পেশা সম্পর্কে অবগত থাকেন তাহলে একই পেশার মানুষদের আলাদা ভাগে ভাগ করুন। তাদের পেশা সম্পর্কিত পণ্য আসলে তাদেরকে আলাদা ভাবে ইমেইল করুন।

বয়সঃ আপনার গ্রাহকদের বয়স অনেকটাই প্রভাবিত করে তারা আপনার পণ্যে আগ্রহী হবে কি না। যেমন একটি কিশোর ছেলেকে আপনি ঘরের ফার্নিচার কেনার প্রলোভন দেখালে তা বিফলে যাবে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন নূন্যতম ২৫ বছরের উপরের গ্রাহকদেরই পাঠানো উচিত। আবার ভিডিও গেমস সম্পর্কিত ইমেইল কিশোরদের মধ্যে যতটা জনপ্রিয়তা পাবে, মধ্যবয়ষ্কদের মধ্যে তার সিকিভাগও পাবে না। 

নিষ্ক্রিয়তাঃ গ্রাহক যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনার কোনো লিংকে প্রবেশ না করেন তাহলে তাকে নিষ্ক্রিয় গ্রাহক হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি কামনা করে একটি অথবা দুইটি মেইল করতে পারেন। 

উল্লেখ্য যে, সেগমেন্টে ভাগ করার একটি বড় দিক হলো নিষ্ক্রিয় গ্রাহকদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া। তাই একটি নির্দিষ্ট সময় কোনো গ্রাহক নিষ্ক্রিয় থাকলে তালিকা হালকা করতে তাকে বাদ দিয়ে দিন। এই সময়টি হতে পারে কয়েক মাস থেকে ৬ মাস। এমনকি এক বছর। 

সঠিক টেমপ্লেট নির্বাচন করুন

টেমপ্লেট হলো মূলত আগে থেকে তৈরি করে রাখা কিছু এইচটিএমএল (HTML) ফাইল যা সরাসরি কপি পেস্ট অথবা সিলেক্ট করার মাধ্যমে খুব সহজেই ইমেইলে পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। মূলত এই ধরনের ফাইলের সাহায্যে ইমেইলগুলো হয়ে ওঠে আরো অনেক দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। ইমেইল মার্কেটিং এ সঠিক টেমপ্লেট ব্যবহারের সুবিধাগুলো বর্ণনা করলেই এর গুরুত্বটা পরিষ্কার হয়ে যাবেঃ 

  • ইমেইল টেমপ্লেটের সাহায্যে বিজ্ঞাপনকারীদের অনেকটাই সময় বাঁচে। কারণ নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলার জন্য তেমন আলাদা কোনো সময় ব্যয় করতে হয় না বললেই চলে। 
  • ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অসংখ্য ইমেইল আদান প্রদান হয় যার হিসাব রাখা কষ্টকর। তাই সেগমেন্ট অনুসারে আলাদা টেমপ্লেটের ইমেইল পাঠালে হিসাব রাখাটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। 
  • টেমপ্লেট ব্যবহারের ফলে কর্মীদের পরিশ্রম অনেকটাই কম হয়। ফলস্বরুপ মনুষ্যকৃত ভুলের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে যা গ্রাহকের সন্তুষ্টি লাভে অনেকটুকুই সাহায্য করে।
  • টেমপ্লেট ব্যবহার করলে সাধারণত একই ধরনের টেমপ্লেট ব্যবহার করা হয়। এতে আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। 
  • টেমপ্লেটের মাধ্যমে তৈরিকৃত ইমেইল সাধারণ ইমেইলের চেয়ে অনেক আকর্ষণীয় হওয়ায় এই ইমেইল তুলনামূলক অনেক বেশি বার খোলা হয়। এটি ইমেইল মার্কেটিং এ সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি।

ইমেইল করার হার নির্ধারিত রাখুন

অধিকাংশ গ্রাহকেরা ইমেইল মার্কেটিং এর অগণিত ইমেইলের কারণে বিরক্ত। তাই বেশিরভাগ গ্রাহকেরা কিছুদিনের মধ্যেই আন-সাবস্ক্রাইব করে ফেলেন। তাই এমনটা করা থেকে বিরত থাকুন। কোন গ্রাহককে কত সময় আগে ইমেইল করা হয়েছে সেটি বিবেচনায় রাখুন। এ ক্ষেত্রে ‘ফ্রিকোয়েন্সি ক্যাপিং’ (Frequency Capping) নামক ফিচারের ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এই ফিচার সুবিধা দিয়ে থাকেন। ফলে একজন গ্রাহকেরা ইমেইলের কোটা পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্দিষ্ট সময় অবধি তার কাছে আর কোনো ইমেইল যায় না।

সঠিক সময়ে ইমেইল করুন 

সঠিক সময়ে ইমেইল করার উপর অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ইমেইলটি খুলে দেখা হবে কি না। একেক দেশে একেক অঞ্চলে গ্রাহকেরা একেক সময়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই ইমেইল পাঠানোর সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক আসলে কোন অঞ্চলের। ইউরোপের গ্রাহকদের এবং এশিয়ার গ্রাহকদের দিনের রুটিন এক হবে না। তাই তাদের রুটিন অনুসারে ইমেইল পাঠাতে হবে যাতে ইমেইলটি খুলে দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণ ধারনার উপর নির্ভর না করে কিছুদিন যাবত পরিসংখ্যান চালানো উচিত। নির্দিষ্ট সময়ের পর এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে কখন ইমেইল পাঠালে বিশেষত আপনার গ্রাহকদের দৃষ্টি বেশি আকর্ষণ করছে।

ভাল সাবজেক্ট লাইন লিখুন

ভাল একটি সাবজেক্ট লাইন লেখার ওপরই ইমেইল মার্কেটিং এর অনেককিছু নির্ভর করে। কারণ ইমেইল মার্কেটিং এর ইমেইল গ্রাহকেরা কখনোই পুরোপুরি পড়ে দেখে না। তাদের প্রথম দৃষ্টি পড়ে সাবজেক্ট লাইনের ওপরেই। সাবজেক্ট লাইনটি পছন্দ হলে তবেই গ্রাহক বাকি ইমেইলে চোখ বুলায়। 

  • যেহেতু সাবজেক্ট লাইন প্রথমেই চোখে পড়ে তাই সেটি হতে হবে কৌতূহল উদ্দীপক। 
  • সাবজেক্ট লাইন খুব বেশি বড় করা উচিত নয়। খুব জটিল শব্দ ব্যবহার না করাটাই শ্রেয়। 
  • অনেক ইমেইল মার্কেটার সাবজেক্ট লাইনকে অসম্পূর্ণ রাখাটাকে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। যেমনঃ বাজারের সেরা পণ্যটি কেনার গোপন কথা….. 

মোবাইলের জন্য ব্যবহারযোগ্য করুন

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোনো পন্থার পক্ষেই সম্ভব নয় মোবাইলকে উপেক্ষা করে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ শুধুমাত্র কম্পিউটারের সাহায্যেই নিজের ইমেইলগুলো খুলে দেখতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষই বড় কোনো কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করে। ইমেইল খুলে দেখার মতো স্বাভাবিক কাজে মোবাইলের ব্যবহারটাই এখন স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান মতে ৬৭% ইমেইলই মোবাইলের সাহায্যে পড়া হয়। তাই মোবাইলের জন্য আপনার ইমেইলটিকে যেভাবে সাজাবেন।

  • আপনার ইমেইলটিকে সাবলীল রাখুন। মোবাইলে পড়ার সুবিধার্থে একটু বড় ফন্ট ব্যবহার করুন। 
  • ছোট আকারের ছবি ব্যবহার করুন। অনেক সময় ইমেইলের মধ্যে ছবি নাও দেখাতে পারে। নিশ্চিত করুন যাতে ছবি ছাড়াও ইমেইলটি আকর্ষণীয় থাকে। 
  • ইমেইলের বাটনটির আকার কিছুটা বড় রাখুন। কারণ বড় বাটন বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং মোবাইলে বড় বাটনে ক্লিক করাটাই তুলনামূলক সোজা। 

একজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লিখুন

এই কাজটির গুরুত্ব অনেক ইমেইল মার্কেটারই বোঝেন না। অনেকেই মনে করেন যেহেতু সকল গ্রাহককে উদ্দেশ্য করেই ইমেইল করা হবে তাই সকল গ্রাহককে উদ্দেশ্য করেই লেখা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো সকল ব্যক্তিই নিজেকে বিশেষ ভাবতে পছন্দ করে। আর তাই ইমেইল মার্কেটিং এর ভাষা সবসময়ই হওয়া উচিত একজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে। এর সাহায্যে ওই ব্যক্তি নিজেকে সামান্য হলেও বিশেষ অনুভব করবে। এমনকি সম্বোধনের সময় নির্দিষ্ট গ্রাহকের নাম ব্যবহার করাই শ্রেয়। অনেক ধরনের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এই কাজে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রতিটি ইমেইলই লেখা হিসেবে হওয়া চাই আকর্ষণীয় এবং সাবলীল। সাথে থাকা চাই নতুনত্বের ছোঁয়া যাতে গ্রাহক সহজেই বিরক্ত না হয়ে যান। 

এই নিয়মগুলো মূলত একজন গ্রাহক যেন ইমেইল খুলে পড়েন এবং নির্দিষ্ট পণ্য অথবা সেবাটি ক্রয় করতে আকর্ষিত হন সেই লক্ষ্যে লেখা। ইমেইল মার্কেটিং এর মূল কাজটি এটিই বিধায় এই নিয়মগুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করাটাই ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়। তবে এর পাশাপাশি ইমেইল মার্কেটিং এর পরিভাষাগুলো জানা, ইমেইল লিস্ট সমৃদ্ধ করার উপায়, সার্থক ভাবে লিড ম্যাগনেট ব্যবহার করতে পারা এমন অনেক কিছুর ওপরেই নির্ভর করে ইমেইল মার্কেটিং এর সার্বিক সফলতা।

ইমেইল মার্কেটিং শেখার স্থান ও খরচ 

মূলত ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে সাধারণ ধারনা এই লেখাটি পড়েই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং আরো ভাল ভাবে শেখার জন্য আরো অনেক স্থান রয়েছে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশ খরুচে। তবে এ ধরনের কোর্স শেষ করার পর নিঃসন্দেহ ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে সক্ষম হবেন। কোর্সের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হলে পাবেন সার্টিফিকেট। নিচে এমন কিছু স্থানের কথা উল্লেখ করা হলো। 

ইউডেমি (Udemy)

ইউডেমি এই কোর্সটি মূলত মেইলশিম্প ভিত্তিক একটি কোর্স। মূলত কেউ যদি তাদের ইমেইল মার্কেটিং সেবা মেইলশিম্প থেকে নিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য এটি সেরা পছন্দ। ৪.৫ ঘন্টার এই কোর্সটিতে ইমেইল মার্কেটিং এর পরিচয় এবং সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি রয়েছি মেইলশিম্প পুরোপুরি সেট আপ করার উপায়। রয়েছে নানা ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত। রয়েছে সাবজেক্ট লাইন লেখার কৌশল এবং ইমেইল মার্কেটিং এর বিশ্লেষণ। 

অনলাইন ভিত্তিক সার্টিফিকেট সম্বলিত এই কোর্সটির জন্য আপনার গুণতে হবে ৪৯.৯৯ ডলার। 

হাবস্পট (HubSpot)

হাবস্পট একাডেমির এই কোর্সটিতে রয়েছে মোট ৯টি লেসন, ২৮টি ভিডিও এবং ৯টি কুইজ। ৩ ঘন্টার এই কোর্সটি ইমেইল মার্কেটিংকে একেবারে গোড়া থেকে শিখতে সাহায্য করে। এই কোর্সটির সাহায্যে কিভাবে আপনার গ্রাহকদের তথ্য সাজিয়ে রাখবেন এবং কিভাবে তাদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করবেন তা নিয়েও পরিষ্কার ধারনা পাবেন। এছাড়াও একটি লিড অর্থাৎ একজন গ্রাহকের সাথে কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় সে নিয়েও ধারনা পাবেন। 

৩ ঘন্টার এই কোর্সটি আপনি পেতে পারেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তবে এর সার্টিফিকেটটি পেতে হলে আপনাকে একটি পরীক্ষা দিতে হবে। 

সিমপ্লিলার্ন (SimpliLearn) 

আপনার যদি ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে মোটামুটি ভাল ধারনা থেকে থাকে এবং আপনি অগ্রবর্তী পর্যায়ের কিছু চান তবে সিমপ্লিলার্ন এর কোর্সটি আপনার জন্য। এই কোর্সটিতে আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং এর কোনো মৌলিক জিনিস শেখানো হবে না। বরঞ্চ আপনি শিখতে পারবেন আপনার প্রতিনিয়ত লেখা ইমেইল গুলোকে কিভাবে আরো ফলপ্রসূ করা যায়, কিভাবে আরো ভাল সাবজেক্ট লাইন লেখা যায়। এর পাশাপাশি শিখতে পারবেন কিভাবে ইমেইল করার প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করা যায়, কিভাবে আরও ভাল ভাবে গ্রাহকদের তথ্যের তালিকা রাখা যায়। কিভাবে ল্যান্ডিং পেজ, চেকলিস্ট তৈরি করতে হয়। এছাড়াও এই কোর্সটিতে জিডিপিআর (GDPR) তথা জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন সম্পর্কেও শেখানো হয়। 

২০-২৫ ঘন্টার এই কোর্সটির মূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি। এটির সুবিধা পেতে হলে আপনাকে গুণতে হবে ৪৯৯ ডলার

শেষকথা

ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া সকল মানুষের জন্যই ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে একটি ভাল উপায়। খুব সহজে অনলাইনের সাহায্যে প্রক্রিয়াগুলো শিখে নিয়েই একজন ব্যক্তি কাজে নেমে পড়তে পারেন। তাই ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়গুলো অনুসরণ করে প্রয়োজনে ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন আপনিও। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ইমেইল মার্কেটিং এ সার্টিফিকেটের গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তরঃ ইমেইল মার্কেটিং এ সার্টিফিকেটের গুরুত্ব থাকলেও তা খুব বেশি না। অর্থাৎ অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে যেমন একটি সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো চাকরিতে আবেদনই করতে পারবেন না, ডিজিটাল তথা ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিষয়টা তা নয়।

২।  কি ধরনের কন্টেন্ট ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সেরা কাজ করে?

উত্তরঃ বর্তমানে নান্দনিক টেমপ্লেট ও অডিও ভিডিও যুক্ত কন্টেন্ট ইমেইল মার্কেটিং এ বেশি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে।

৩। ফ্রি ইমেইল মার্কেটিং কোর্সগুলো কতটুকু কাজের?

উত্তরঃ ইমেইল মার্কেটিং এর ফ্রি কোর্সগুলো অনেকটাই কাজের। এর মাধ্যমে আপনি বিনামূল্যে ইমেইল মার্কেটিং কোর্সের মৌলিক ধারনা পেতে পারেন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button