এসইওডিজিটাল মার্কেটিং

এসইও (SEO) কি? এসইও সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

এসইও, বর্তমানে সময়ে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলো একটি তালিকা করলে এসইও এর নাম থাকবে সবার ওপরে। কারণ ইন্টারনেটের এই সুবিশাল জগত থেকে যেকোনো কিছু খুঁজে নিতে চাইলে আমরা প্রথমেই যেই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করি, স্বভাবতই সেটি হলো ‘সার্চিং’ (Searching)। আর এই সার্চিং বা সার্চ এর পরে আমরা ঠিক কি কি ফলাফল পাবো তা পুরোপুরি নির্ভর করে এখন এসইও এর ওপরে। তাই অনলাইন জগতে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে চাইলে যেমন এসইও সম্পর্কে জানার প্রয়োজন আছে। ঠিক তেমনটাই প্রয়োজন আছে একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে জানা যে ঠিক কিসের ভিত্তিতে আপনাকে দেখানো সার্চ রেজাল্ট গুলো তৈরি হচ্ছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়েই আজকের এই লেখাটি। 

সূচিপত্রঃ

এসইও (SEO) কি?

এসইও এর পূর্ণরুপ হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization)। মূলত কোনো ব্যক্তি কিছু সার্চ করার পরে কি কি ফলাফল কোন ক্রমানুসারে দেখাতে হবে তা সংশ্লিষ্ট সার্চ ইঞ্জিন যেসব জিনিসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে তাকেই বলে এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

এসইও মূলত ওয়েবসাইটের মালিক অথবা প্রচারকের দ্বারা সৃষ্ট কিছু কৌশল যার সাহায্যে সাইট সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলের তালিকায় আরও উপরে উঠে যায়। একটি সার্চ ইঞ্জিন যখন কোনো সার্চ রেজাল্ট তৈরি করে থাকে তখন বেশ কিছু সূচকের ওপর ভিত্তি করে ফলাফলগুলোকে ক্রমানুসারে সাজায়। যেই সকল কৌশল অনুসরণ করে সার্চ ইঞ্জিনের চোখে ওয়েবসাইটকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায় এবং ক্রমের উপরের দিকে উঠানো যায় সেই সকল কৌশলকেই একত্রে বলা যায় এসইও। তবে এসইও সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই জানতে হবে সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে। কারণ এসইও মূলত সার্চ ইঞ্জিন কোন পেজটিকে উপরে তুলে ধরবে সেটা নির্ধারণেরই কিছু কৌশল মাত্র। 

সার্চ ইঞ্জিন (Search Engine) কী?

সার্চ ইঞ্জিন হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) সার্চ করার জন্য এমন একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার যা কিছু নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে সুনির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ফলাফল বা সার্চ রেজাল্ট তুলে ধরে। 

সার্চ ইঞ্জিন টার্মটি শুধু যে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় তা নয়। বরং আরও অনেক নির্দিষ্ট ডাটাবেজেও বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন গুগলকে আমরা সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে চিনলেও, ফেসবুকে যে সার্চ করা হয় তা ফেসবুকের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন। এভাবে প্রতিটি ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার এরই একই রকম অথবা ভিন্ন ভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থাকতে পারে। 

সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে? 

এসইও কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে বোঝা চাই সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে। সাধারণত সকল সার্চ ইঞ্জিনই মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে। 

  • ক্রলিং (Crawling)
  • ইন্ডেক্সিং (Indexing)
  • সার্চ রেজাল্ট (Search Result)

ক্রলিং (Crawling)

এই ধাপে প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিন ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া নিত্য নতুন ওয়েবপেজ চিহ্নিত করে। এর জন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ক্রলার (Crawler) বা বট (Bot) নামক কিছু ছোট সফটওয়্যার। ক্রলারের কাজ বুঝতে হলে বুঝতে হবে হাইপারলিংক (Hyperlink) সম্পর্কে। হাইপারলিংক হলো লেখা অথবা ছবির ভেতর মিশে থাকা বিশেষ এক ধরনের লিংক। প্রতিটি ওয়েবপেজই কোনো না কোনো ভাবে আরেকটি ওয়েবপেজের সাথে সংযুক্ত। আর ক্রলিং প্রক্রিয়ায় সার্চ ইঞ্জিনের বট গুলো এই সংযোগ ধরেই খুঁজে বের করে নিত্য নতুন ওয়েবপেজ। 

ইন্ডেক্সিং (Indexing)

ক্রলিং ধাপটিতে যেমন অসংখ্য ওয়েবপেজকে খুঁজে বের করা হয়। ঠিক তেমনি ইন্ডেক্সিং ধাপে সেই ওয়েবসাইট গুলোকে সাজিয়ে রাখা হয়। এক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন গুলো তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি পেজের কন্টেন্ট বোঝার চেষ্টা করে। অতঃপর সে অনুযায়ী পেজ গুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজিয়ে রাখে। 

সার্চ রেজাল্ট (Search Result)

এইটিই সেই ধাপ যেখানে এসইও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। আপনি যখন গুগলে সার্চ করেন তখন এক বা একাধিক শব্দ লিখে সার্চ করেন। এই শব্দগুলো হতে পারে একটি বা একাধিক কিওয়ার্ড। এসইও এর কাজ হলো ঐ শব্দগুলো অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে ওয়েবসাইটের পেজটিকে গড়ে তোলে। ফলে গুগল এর বট যখন ক্রলিং করে সাইটটি পড়বে, সেটির কাছে আপনার পেজকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে। এভাবে গ্রহণযোগ্যতা যত বেশি হবে, সার্চ রেজাল্টে আপনার পেজের অবস্থান থাকবে তত উপরে।

জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন

বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং ডাটাবেজে সার্চ ইঞ্জিন থাকলেও এসইও জিনিসটি মূলত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাথেই জড়িত। আর এই ওয়েবের সার্চ ইঞ্জিন গুলোকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয় এসইও সম্পর্কিত সকল বিষয়ের। তাই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের গুরুত্বপূর্ণ সার্চ ইঞ্জিন গুলোর নাম ও ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাদের মার্কেটের শেয়ারের পরিমাণ ছক আকারে উল্লেখ করা হলো।

           সার্চ ইঞ্জিন (Search Engine)   মার্কেট শেয়ার (Market Share)
গুগল (Google)৯২.৩৭%
বিং (bing)৩.৫৭%
ইয়াহু! (Yahoo!)১.৩১%
ইয়ানডেক্স (YANDEX)০.৮২%
ডাক ডাক গো (DuckDuckGo)০.৬১%
 বাইডু (Baidu) ০.৫৮%

উপরের ছকটি থেকে একটি জিনিস পুরোপুরি পরিষ্কার যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল। তাই এই লেখাটি মূলত গুগল এসইও কে কেন্দ্র করেই লেখা। 

এসইও কিভাবে কাজ করে?

ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে। আর সেই প্রক্রিয়ার সাথেই এসইও এর কাজ করাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে আপনি যখন কোনো কিছু গুগলে সার্চ করেন তখন তা দেখানোর ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।

  • প্রাসঙ্গিকতাঃ কিওয়ার্ডের সাথে আপনার ওয়েবপেইজ কতটুকু প্রাসঙ্গিক সেটিই মুখ্য বিষয়। এক্ষেত্রে এসইও এর কাজ হলো বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ওয়েবপেজকে সার্চ ইঞ্জিনের চোখে আরও প্রাসঙ্গিক করে তোলে। এ সকল কৌশল সম্পর্কে লেখার পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  • নির্ভরযোগ্যতাঃ সার্চ ইঞ্জিনের ভাষায় একে বলে ‘অথোরিটি’ (Authority)। সার্চ ইঞ্জিনের দৃষ্টিতে কোনো ওয়েবসাইটের অনলাইনে অবস্থান যতটা শক্তিশালী, তার থেকে সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তাই দেখা যায় কোনো প্রতিষ্ঠিত সাইটে একটি কন্টেন্ট প্রকাশিত হলে তা যত সহজে র‍্যাংক পায়, অপ্রতিষ্ঠিত সাইটের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। 

র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর (Ranking Factor)

এসইও কাজ করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মুখ্য ভূমিকা রাখে সেগুলোকে বলে র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর। এ সকল র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয় তাই স্থায়ী ভাবে কোনো নীতিমালা অনুসরণের কোনো উপায় নেই। তবে কি ধরনের উপর ভিত্তি করে এসইও করতে হয় সে সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া যেতে পারে। 

ব্যাকলিংক (Backlink) 

হাইপারলিংক এবং ব্যাকলিংক দুইটি বিষয় আসলেই একই। মূলত অন্য একটি সাইট থেকে হাইপারলিংকের মাধ্যমে আপনার ওয়েবপেজকে সংযুক্ত করে দেওয়াকেই ব্যাকলিংক বলে। র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর গুলো অনেকটাই অনুমান নির্ভর হলেও ব্যাকলিংক যে একটি বৃহৎ র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর তা গুগল বহু বছর আগেই স্বীকার করেছে। তবে সকল ব্যাকলিংক র‍্যাংকিং এর ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রভাব ফেলে না।

  • ব্যাকলিংক এর প্রাসঙ্গিকতাঃ আপনার পেজে যেই টপিকের কন্টেন্ট আছে ব্যাকলিংক সে ধরনের সাইট থেকেই আশা উচিত। যেমন আপনার কন্টেন্টটি যদি হয় ‘পরীক্ষায় ভাল করার কৌশল’ সেক্ষেত্রে এর ব্যাকলিংক শিক্ষামূলক সাইট থেকেই আশা উচিত। খেলাধুলা জনিত সাইট থেকে এই কন্টেন্ট এর ব্যাকলিংক অতটা কার্যকরী হবে না।  
  • অথোরিটি এবং ব্যাকলিংকের সংখ্যাঃ যেই সাইট থেকে ব্যাকলিংক আনা হচ্ছে সেই সাইটের অথোরিটি কিরকম সেটিও কিছুটা প্রভাব ফেলে। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক ব্যাকলিংকের সংখ্যা বেশি হলে তার প্রভাবও ইতিবাচক হবে। এছাড়াও ব্যাকলিংকের অবস্থান যদি সাইডবার, বটম বারে না থেকে প্রধান কন্টেন্ট এ থাকে তাহলে সেটিও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

কিওয়ার্ড (Keyword)

ইতোমধ্যে কিওয়ার্ডের সাথে পেজের প্রাসঙ্গিকতার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘কিওয়ার্ড স্টাফিং’ (Keyword Stuffing) নামক একটি অসদুপায় এর ব্যবহার অনেক সাইটেই লক্ষ্য করা যায়। লেখার মধ্যে অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক ও অতিরিক্ত কিওয়ার্ড ব্যবহার করে অনেক সাইটের মালিকই র‍্যাংক করার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমানে গুগল খুব সহজেই এই কৌশল ধরতে পারে এবং শাস্তিস্বরুপ ব্যান ও ব্লক ও করে দিতে পারে। যে সকল স্থানে স্বাভাবিক কিওয়ার্ডের উপস্থিতি ইতিবাচক ফলাফল আনার সম্ভাবনা তৈরি করেঃ

  • হেডিং (Heading) 
  • সাব-হেডিং (Sub-Heading)
  • অল্টারনেটিভ টেক্সট (Alternative Text)  
  • ইউআরএল (URL) 

এসব স্থানে কিওয়ার্ডের উপস্থিতি অনেক সাইটেই লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও পুরো লেখা জুড়েই সাবলীল ভাবে কিওয়ার্ড এর উপস্থিতি এসইও এর ক্ষেত্রে বেশ জরুরী। 

লেখার মান

লেখার মান যদিও সরাসরি র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রাখে না কিন্তু লেখার সাবলীলতা, কি ওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার, তথ্যবহুলতা পাঠকদের আকৃষ্ট করে। আর লেখার মান ভাল হলে এবং লেখা আসল বা অন্যন্য হলে গুগল সেই কন্টেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যদিও গুগলের কাছে কোন ধরনের লেখার মান ভাল হিসেবে বিবেচিত হয় তা বিস্তারিত জানা যায় না।

ইন্টারনাল লিংক (Internal Link)

হাইপার লিংকের ক্ষেত্রে অন্য সাইট থেকে যেমন আপনার সাইটে পেজে লিংক করতে পারবেন। তেমনি নিজের সাইটের ভেতরেও একাধিক কন্টেন্ট এর ভেতরে লিংক করতে পারবেন। একে বলে ইন্টারনাল লিংকিং। এক্ষেত্রে একটি কন্টেন্ট কে ‘পিলার কন্টেন্ট’ (Pillar Content) বা প্রধান কন্টেন্ট ধরে নিয়ে তার সাথে প্রাসঙ্গিক আরও অনেক কন্টেন্ট লেখা হয়। ইন্টারনাল লিংকের মাধ্যমে সকল পেজ সংযুক্ত থাকে। এছাড়াও ভিন্ন টপিকের প্রাসঙ্গিক লেখাও সংযুক্ত থাকতে পারে।

সাইটের গতি

সাইটের গতিও সার্চ ইঞ্জিনের কাছে একটি বড় বিষয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে চাইলে অবশ্যই সাইটের গতির একটি নূন্যতম মান বজায় রাখতে হবে। সাইটের লোডিং টাইম বেশি হলে গ্রাহকেরা তা পছন্দ করেন না। আর সেজন্যই গুগলও এ ধরনের সাইট সার্চ রেজাল্টের উপরের দিকে দিতে পছন্দ করে না।

কন্টেন্ট আপডেট

এক্ষেত্রে সকল কন্টেন্টকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কিছু টপিকের তথ্যাবলী পরিবর্তনশীল। যেমন ‘ফুটবল খেলার  নিয়ম’। আবার কিছু টপিকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যেমন ‘ফুটবলের ইতিহাস’। এক্ষেত্রে যেসব কন্টেন্ট আপডেট করার প্রয়োজন নেই সেগুলো দেখা যায় অনেক পুরোনো কন্টেন্টও দীর্ঘদিন যাবত প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান দখল করে রেখেছে। অপর দিকে আপডেটের প্রয়োজন হয় এমন কন্টেন্ট আপডেট না করলে অচিরেই তা নেমে আসে SERP এর নিচে।

সামঞ্জস্যতা ও নিরাপত্তা

র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে ইদানীং সামঞ্জস্যতা কিছুটা ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে যে সকল সাইট একই সাথে মোবাইল এবং কম্পিউটার উভয়ের জন্যই সামঞ্জস্য পূর্ণ সেসব সাইট র‍্যাংকিং এ এগিয়ে থাকে। পাশাপাশি সাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কিছুটা ভূমিকা রাখে র‍্যাংকিং এর ক্ষেত্রে।

সর্বোপরি এসইও এর জগত বিশাল এবং অনেক জটিল। এসইও করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে আরও অনেক বিস্তারিত। এসইও কী এই সম্পর্কিত এই লেখায় তাই একদম সাধারণ ধারণা গুলোই দেওয়া হলো। 

এসইও এর প্রকারভেদ

এসইও কিভাবে কাজ করে, কোন কোন বিষয় সাইট র‍্যাংকিং এর উপর মোটামুটি প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আপনারা পেয়েছেন। কিন্তু এসইও এর জগত আরও অনেক বিস্তৃত। আর এর ধরনও অনেক। 

টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO)

আমরা পূর্বেই জেনেছি যে সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলার বট গুলো কোনো পেজকে ক্রল করে তাকে ইন্ডেক্সিং করে। তাই এসইও এর অন্যতম লক্ষ্য হলো ওয়েবসাইটকে এমন ভাবে সাজিয়ে তোলা যাতে তা ক্রলারের জন্য পড়তে খুবই সুবিধা হয়। টেকনিক্যাল এসইও এই লক্ষ্যেই কাজ করে। উল্লেখ্য যে, একটি সাইট মানুষের চোখে দেখতে অনেক সুন্দর হলেও একটি ক্রলার বট সাইটকে সেভাবে দেখে না। ক্রলার শুধু টেক্সট ফাইল পড়তে পারে। তাই সাইটকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য ক্রলারের মতো করে গুছিয়ে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যা যা করণীয়ঃ 

  • Robots.txt ফাইলের কাজ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলারকে ওয়েবসাইটের কোন কোন পেজ সে পড়তে পারবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া। তাই এই ফাইলটি অপটিমাইজ করে নেওয়া খুবই জরুরী। 
  • সাইটের গঠন এবং ইউআরএল এর গঠন ঠিক করা। 
  • প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য এক্সএমএল সাইটম্যাপ (XML Sitemap) তৈরি করা। 
  • গুগল সার্চ কনসোলে ওয়েবসাইট যুক্ত করে ভেরিফাই করে নেওয়া। 
  • ক্রলারের ভুল করার স্থানগুলো সংশোধন করা। 
  • এসইও বান্ধব ওয়েব ডিজাইন করা। 

অন-পেজ এসইও (On-Page SEO)

একটি ওয়েবপেজকে সার্চ রেজাল্টে উপরে উঠিয়ে আনার জন্য ওই ওয়েবপেজে যে সকল কাজ সম্পন্ন করা হয় সেই সকল কাজই অন-পেজ এসইও এর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মান সম্পন্ন কন্টেন্ট। এছাড়াও যে সকল সাধারণ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিতঃ 

  • আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক পেজ টাইটেল ব্যবহার করা। কারণ পেজ টাইটেল দেখেই গ্রাহক আপনার সাইটে প্রবেশ করবে। 
  • ইউআরএল প্রাসঙ্গিক ও সংক্ষিপ্ত রাখা। 
  • এইটিএমএল ট্যাগ (HTML Tag) ব্যবহার করে সাইটের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আকৃষ্ট করা। 
  • ছবি অপটিমাইজ করা এবং প্রয়োজনীয় মেটা ডাটা ও অল্টারনেটিভ টেক্সট যুক্ত করা। 
  • পেজের সকল কন্টেন্ট, ছবি, ট্যাগ, চার্ট থেকে শুরু করে সব কিছু সঠিক ফরম্যাটে রাখা। 

এছাড়াও অন-পেইজ এসইও এর রয়েছে আরও অনেক বিস্তারিত। 

অফ-পেইজ এসইও (Off-Page SEO)

যেকোনো ওয়েবপেজে ট্রাফিক আনার জন্য ঐ পেজ বাদে অন্য সকল স্থানে যত ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তার সবই অফ-পেইজ এসইও এর অন্তর্ভুক্ত। অফ-পেইজ এসইও এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ব্যাকলিংক। প্রতিষ্ঠিত সাইট থেকে যত বেশি প্রাসঙ্গিক ব্যাকলিংক আসবে, সাইটের র‍্যাংক তত উপরে উঠবে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে যদি ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট নিয়ে কথা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রেও সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটের কন্টেন্ট বেশি দেখাবে। একে বলে ব্রান্ড প্রমোশন। যেমন একই পণ্যের ব্যাপারে সার্চ করলে ‘আড়ং’ বা এমন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড এর পণ্য আসবে সবার ওপরে, এরপরে আসবে ছোট কোনো ব্র্যান্ড এর পণ্য।

লোকাল এসইও (Local SEO)

লোকাল এসইও এর নামের সাথেই এর কাজের মিল রয়েছে। কোনো ওয়েবসাইটের মালিক যখন একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বেশি ট্রাফিক চায় তখন সে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে ঐ নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সার্চ রেজাল্টে ঐ সাইটের উপরে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।

ই-কমার্স এসইও (ECommerce SEO)

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য বিশেষায়িত এসইও হলো ই-কমার্স এসইও। সাধারণ একটি ব্লগ সাইটের থেকে ই-কমার্স সাইটকে র‍্যাংক করানো তুলনামূলক জটিল। এক্ষেত্রেঃ 

  • সর্বপ্রথম ই-কমার্স সাইটটির হোমপেজ এবং ক্যাটাগরি পেজ সঠিকভাবে অপটিমাইজ করে নিতে হবে। 
  • সঠিক ভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট পেজ গুলো সাজাতে হবে। প্রোডাক্ট এর বর্ণনায় সঠিক এসইও পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। 
  • সকল ছবি, ভিডিওকে অপটিমাইজ করতে হবে এবং সামাজিক মাধ্যমে সাইটের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। 

এছাড়াও এর বাইরেও রয়েছে অনেক ধরনের এসইও। যেমন কন্টেন্ট এসইও, মোবাইল এসইও, নেগেটিভ এসইও ইত্যাদি। তবে নৈতিকতার ভিত্তিতে এসইও আবার দুই প্রকার। 

হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO) 

হোয়াইট হ্যাট এসইও বলতে এসইও এর সকল নৈতিক অনুশীলনকে বোঝায়। উপরে যা বর্ণনা করা হয়েছে তার সকলই গুগল এর গাইডলাইন অনুসরণ করে বর্ণিত। প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনেরই এমন গাইডলাইন থাকে যাতে এসইও করার সময় কোন কোন কাজ করলে ভাল ফলাফল আসবে আর কোন কোন কাজ করা যাবে না বর্ণনা করা থাকে। এই সকল গাইডলাইন মেনে যেই এসইও করা হয়ে সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং সঠিক ভাবে করতে পারলে অনেক লাভজনক। এসবই হলো হোয়াইট হ্যাট এসইও।

ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO)

হোয়াইট হ্যাট এসইও এর সম্পূর্ণ উলটো হলো ব্ল্যাক হ্যাট এসইও। এর দ্বারা মুলত এসইও জগতের সব নেতিবাচক অনুশীলনকে বোঝায়। এই প্রক্রিয়ায় মূলত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে তার সুযোগ নেওয়া হয়। যেমন উপরে কিওয়ার্ড স্টাফিং এর কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত ব্যাকলিংক কেনা, বটকে এক আর গ্রাহককে আরেক কন্টেন্ট দেখানো এমন সব প্রক্রিয়া ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এর অন্তর্ভুক্ত। 

এসইও এর গুরুত্ব

এসইও এর গুরুত্ব সম্পর্কে ইতোমধ্যে বেশ কিছুটা ধারনা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। লেখার অংশে মূলত দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

জ্ঞান আহরণের দৃষ্টিকোণ

জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে মানব সভ্যতা যতটা বই এর উপর নির্ভরশীল, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরশীল ইন্টারনেটের ওপরে। আর ইন্টারনেট থেকে কোনো তথ্য খুঁজে বের করতে চাইলে ব্যবহার করতে হয় সার্চ ইঞ্জিন। সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে সেরা তথ্যটা দিচ্ছে তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো এসইও। কারণ সার্চ ইঞ্জিন সেরা কন্টেন্টটি খুঁজে বের করার জন্য যেই সকল নিয়ম মেনে চলে, তা কন্টেন্ট নির্মাতাকেও মানতে হয়। আর সঠিক নিয়ম মেনে এসইও করার মাধ্যমেই সম্ভব সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টের প্রথম স্থান অধিকার করা। তাই আপনি জ্ঞান আহরণের জন্য কি পড়ছেন, কি জানছেন তাতেও রয়েছে এসইও এর ভূমিকা। 

ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ

বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার যে বিশাল ব্যাপ্তি ঘটেছে তার পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে এসইও এর উপরে। কারণ একটি পণ্য বা সেবা যতই ভাল হোক, মানুষের যদি সেটি নাই দেখে তবে সে সেটি কিনবে না। আর ব্যবসায়িক পণ্য যাতে মানুষ দেখে তা নিশ্চিত করার উপায়ই হলো এসইও। তাই বর্তমানে অনলাইনে সংগঠিত বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে এসইও। 

শেষকথা

বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী ও শক্তিশালী জিনিস হলো তথ্য। আর তথ্য সংগ্রহের সবচেয়ে বৃহৎ যে মাধ্যম, সার্চ ইঞ্জিন, এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে। তাই খুব সহজেই বোঝা যায় এর ক্ষমতা আর এর গুরুত্ব। তাই সকলেরই উচিত এসইও সম্পর্কে সাধারণ কিছু ধারণা গ্রহণ করা। তার পাশাপাশি এটি হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার এর একটি চমৎকার উদাহরণ। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। এসইও কি নিজে করা সম্ভব?

উত্তরঃ অবশ্যই সম্ভব। তবে সেজন্য আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকতে হবে। 

২। এসইও শেখার উপায় কি?

উত্তরঃ এসইও এর প্রাথমিক ধারণা অনলাইনে বিনামূল্যেই রয়েছে। উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের জন্য একটি ভাল পেইড কোর্স করতে পারেন।

৩। এসইও না করলে কি আমার সাইট / পেজ সার্চ রেজাল্টে একদমই দেখাবে না?

উত্তরঃ আপনার সাইট অথবা পেজ ইন্ডেক্স হয়ে গেলে সার্চ রেজাল্টে দেখাতেই পারে। কিন্তু তার সম্ভাবনা হবে অনেক কম।

৪। এসইও শিখে কি আয় করা সম্ভব?

উত্তরঃ অবশ্যই সম্ভব। এসইও স্পেশালিস্ট বর্তমানের ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় একটি অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন একটি পদ। 

 

 

 

তথ্যসূত্র

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button