এফিলিয়েট মার্কেটিংডিজিটাল মার্কেটিংব্যবসামার্কেটিং

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি? সুবিধা, অসুবিধা এবং প্রকারভেদ

বর্তমানে যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্যই ডিজিটাল মার্কেটিং অন্যতম একটি মাধ্যম। যতই দিন যাচ্ছে, প্রথাগত মার্কেটিং এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং ততই শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম সুপরিচিত এবং সফল একটি মাধ্যম হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনোভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু অনেকেই এই প্রক্রিয়াটি দেখলেও জানেন না এটি আসলে কি, কিভাবে কাজ করে। অনেকে হয়তো বা খুঁজে নিতে চাচ্ছেন নতুন কোনো কাজের উপায়। সে সকল বিষয় মাথায় রেখেই এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বিস্তারিত। 

সূচিপত্রঃ

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়া যেখানে সাধারণত বিভিন্ন পরিচিত মুখ ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ ইত্যাদি বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে এফিলিয়েট লিংকের সাহায্যে গ্রাহকদের কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা কিনতে উৎসাহিত করেন এবং তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে মার্কেটিং এর অন্যান্য ধরনকে গুলিয়ে ফেলার তেমন সুযোগ নেই। কারণ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর রয়েছে দুইটি মৌলিক বিষয়। 

  • আলাদা বিজ্ঞাপনদাতা 
  • এফিলিয়েট লিংক বা প্রমো কোড

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এফিলিয়েট মার্কেটিং কাজ করার ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত মৌলিক বিষয় দুটিই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে তার পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো। 

ধাপ ১ঃ প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনো বিজ্ঞাপনদাতা বা প্রচারক ঐ প্রতিষ্ঠানের পণ্য যেকোনো মাধ্যমে প্রচার করবেন। সেই মাধ্যম হতে পারে ব্লগ, আলাদা ওয়েবসাইট, সামাজিক গণ্যমাধ্যম কিংবা পডকাস্ট। এক্ষেত্রে প্রচারককে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বাইরের কেউ অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষ হতে হবে। এই ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং করার সময় প্রত্যেক মার্কেটারের জন্য আলাদা একটি লিংক থাকে যা গ্রাহকেরা ঐ মার্কেটারের কন্টেন্টে পাবে। 

ধাপ ২ঃ প্রচারণায় আগ্রহী হলে গ্রাহকেরা ঐ লিংক ক্লিক করবে। ফলে সে চলে যাবে ঐ নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা বিক্রয় করার সাইটে। 

ধাপ ৩ঃ পণ্যটি পছন্দ হলে গ্রাহক সেটি ক্রয় করবে। 

ধাপ ৪ঃ পণ্যটি কেনার সাথে সাথে ট্র্যাকিং লিংকটির সাহায্যে গ্রাহকের এই কার্য্রক্রম ট্র্যাক বা রেকর্ড হবে। পণ্য বিক্রয়ের বিস্তারিতে যা যুক্ত হয়ে যাবে। 

ধাপ ৫ঃ পণ্যটি কেনার পরে গ্রাহককে ঐ ওয়েবসাইটের হোম পেজে পাঠানো হবে বা অন্যান্য পণ্য দেখানো হবে। আর একই সাথে ঐ প্রচারকের কোটায় একটি বিক্রয় যুক্ত হবে। 

ধাপ ৬ঃ গ্রাহকের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে প্রচারক টাকা পাবেন। এক্ষেত্রে যত বেশি গ্রাহক পণ্য বা সেবা কিনবেন প্রচারকের একাউন্টে তত টাকা জমা পড়বে। 

উল্লেখ্য যে, অনেক সময় এফিলিয়েট মার্কেটাররা এফিলিয়েট লিংকের বদলে প্রমোশোন কোড বা ডিসকাউন্ট কোডও ব্যবহার করে থাকেন। ক্রয়ের সময় এ ধরনের কোড প্রবেশ করালে কিছুটা মূল্যছাড় বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে গ্রাহকেরা হয়তো পণ্য ক্রয়ের সময় সেই প্রমো কোড ব্যবহার করে। এতে করে যেই এফিলিয়েট মার্কেটারের প্রমো কোড ব্যবহার করা হচ্ছে তার নামেও কিছু টাকা জমা হচ্ছে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

এফিলিয়েট মার্কেটিং করার সময় মার্কেটারের সাথে ঐ পণ্য বা সেবার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এফিলিয়েট মার্কেটিংকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। 

আনএটাচড এফিলিয়েট মার্কেটিং (Unattached Affiliate Marketing)

আনএটাচড এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘অসংযুক্ত এফিলিয়েট মার্কেটিং’। সহজে ব্যাখ্যা করলে জিনিসটা অনেকটা এরকম যে, যেই ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং এ মার্কেটারের সাথে ঐ পণ্য বা সেবার কোনো রকম সম্পর্কই নেই তাকেই বলে আনএটাচড এফিলিয়েট মার্কেটিং। নামের সাথে মিল রেখেই পণ্যের সাথে মার্কেটার বা প্রচারকের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ স্বভাবতই ঐ পণ্য বা সেবার ওপর তার কোনো অথোরিটি (Authority) নেই। এক্ষেত্রে মার্কেটারের সাথে একজন সাধারণ বিক্রয়কর্মীর তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং তুলনামূলক অনেকটাই সহজ বলে অনেক এফিলিয়েট মার্কেটারই এর দিকে ঝুঁকছেন। এক্ষেত্রে একজন মার্কেটার শুধু মাত্র তার প্রচারযন্ত্র ব্যবহার করেই বিক্রয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্রেতার কাছে আস্থার স্থান তৈরি করা অথবা নিজের একটি কর্তৃত্ব তৈরির বিষয়টি এখানে অনুপস্থিত। এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং করা হয় শুধু টাকার জন্য। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মতেই লম্বা সময়ের জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং এর এই প্রকারটি সঠিক নয়। 

রিলেটেড এফিলিয়েট মার্কেটিং (Related Affiliated Marketing) 

রিলেটেড এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সম্পর্কযুক্ত এফিলিয়েট মার্কেটিং’। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং এ পণ্যের সাথে প্রচারকের কিছুটা সম্পর্ক থাকে। এক্ষেত্রে প্রচারক সাধারণত যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করেন, বা যে জন্য বিখ্যাত হয়েছেন, পণ্য তার সাথে সম্পর্কিত থাকে। যেমন কেউ যদি কম্পিউটার, প্রযুক্তি এসব নিয়ে কাজ করে থাকেন তবে তার জন্য কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টসের মার্কেটিং করাটা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং অনেক সময় সম্পর্কযুক্তও। 

কিন্তু রিলেটেড এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য হলো এক্ষেত্রে পণ্যের সাথে মার্কেটারের সরাসরি সংযোগ থাকে না বা পণ্যটি সে নিজে ব্যবহার করে না। এটি আনএটাচড এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে বেশি নির্ভরযোগ্য। তবে মার্কেটার নিজে ব্যবহার করা ছাড়াই প্রচারণা চালান বলে এটি শতভাগ নির্ভরযোগ্যও নয়। 

ইনভলবড এফিলিয়েট মার্কেটিং (Involved Affiliate Marketing)

ইনভলবড এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরশীল প্রকার। এর অর্থ ‘জড়িত’। অর্থাৎ এফিলিয়েট মার্কেটার এখানে পণ্য বা সেবার সাথে সরাসরি জড়িত থাকেন। তিনি এই পণ্যটি নিজে ব্যবহার করেছেন এবং তার প্রেক্ষিতেই এর প্রচার করছেন। যদিও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন। কিন্তু এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং মডেলে উদ্দেশ্য এটাও থাকে যে গ্রাহকদের কাছে সেরাটি পৌছে দেওয়া। 

ইনভলবড এফিলিয়েট মার্কেটিং যদিও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এফিলিয়েট মার্কেটিং মাধ্যম কিন্তু এতে প্রচারকের বেশ বড় দায়িত্ব নিতে হয়। কারণ ইনভলবড মার্কেটারদের কর্তৃত্ব এবং মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা বেশি। তাই স্বভাবতই তার রিভিউ দেখে মানুষ পণ্য কিনলে তার একটি দায়বদ্ধতা থাকে। আশে পাশে ইনভলবড এফিলিয়েট মার্কেটারের এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কার রেসার অভিক আনোয়ারের কথা। তিনি নিজে ব্যবহার করা টায়ারই গাড়ির জন্য সবাইকে কিনতে বলেন যা ইনভলবড এফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি উদাহরণ। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম

এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম হলো এমন কিছু মাধ্যম যেখানে আপনি সহজেই একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান সরাসরি কোনো জনপ্রিয় ইউটিউবার বা সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারকে (Social Influencer) এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এমন সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম গুলোর সাহায্যে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। আর এমন বেশিরভাগ প্রোগ্রামই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ দিয়ে থাকে। তেমন কিছু প্রোগ্রাম নিয়েই সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

আমাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম (Amazon Affiliate Program)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িত এমন অধিকাংশ লোকই সম্ভবত আমাজন এফিলিয়েট (Amazon Affiliate) প্রোগ্রামের নাম শুনেছেন। বিশ্বজুড়ে এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই আমাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম। এটি এতই বড় যে সারা বিশ্বের এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ৪৫% ভাগই হয় এই আমাজনকে ঘিরে। 

মূলত আমাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস (Online Marketplace)। এখানে নেই এমন কোনো পণ্য নেই। আর আপনি এই পণ্য গুলো রিভিউ করে অথবা এ সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারেন। তারা যদি আপনার লিংকের মাধ্যমে পণ্যটি কিনে থাকে তাহলে আপনি পাবেন কমিশন। পণ্য ভেদে যা হতে পারে ১ থেকে ২০%। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকাতে গড়ে প্রতি বছর একজন আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটার ৫৫ হাজারের ডলারেরও বেশি আয় করে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যা হতে পারে বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের বেশি। আবার সর্বনিম্ন হতে পারে বছরে ১৬ হাজার ডলারের কাছাকাছি। 

শপিফাই এফিলিয়েট প্রোগ্রাম (Shopify Affiliate Program) 

এফিলিয়েট দুনিয়ায় আরেকটি বৃহৎ নাম হলো শপিফাই (Shopify)। কানাডিয়ান এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ৩৫.২৮ বিলিয়ন স্টক প্রাইস (Stock Price) এর একটি প্রতিষ্ঠান। এটিও প্রায় সারা বিশ্বজুড়েই এফিলিয়েট প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। শপিফাই এর সাথে যুক্ত হতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে একটি চালু ওয়েবসাইট ও সুস্থিত অডিয়েন্স (Audience)। তবে শপিফাই এর সাথে কাজ করতে হলে অবশ্যই তাকে তৈরি করতে হবে অন্যন্য বা ইউনিক কন্টেন্ট এবং মেনে চলতে হবে শপিফাই এর গাইডলাইন। এর আরেকটি সুবিধাজনক দিক হলো এর নূন্যতম ডলার উত্তোলনের মাত্রা। মাত্র ১০ ডলার জমলেই চাইলে মার্কেটার তা উত্তোলন করতে পারবে ব্যাংক একাউন্ট অথবা পেপ্যাল (PayPal) থেকে। 

আমাজন অথবা শপিফাই এর বাইরেও রয়েছে অসংখ্য এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলোঃ 

এফিলিয়েট মার্কেটারদের আয় 

এফিলিয়েট মার্কেটারদের আয় কেমন তা নিয়ে অনেকের মনেই আছে প্রশ্ন। সত্যি বলতে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার কতটা আয় করবে তা নির্ভর করবে তার জনপ্রিয়তা এবং তার মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতার ওপর। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার প্রতি বছর গড়ে ৫৩,০০০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি আয় করেন। এর চেয়ে অনেক কম যেমন আছে, ঠিক তেমনি এর চেয়ে অনেক বেশি উপার্জনকারী এফিলিয়েট মার্কেটারও আছেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উপার্জনের চিত্রটি অনেকটাই ভিন্ন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটি মাধ্যম যেখানে আপনি চাইলেই সারা বিশ্ব থেকেই উপার্জন করতে পারবেন। তাই আপনার যদি দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনিও পারবেন বছরে এত হাজার হাজার মার্কিন ডলার আয় করতে। 

এফিলিয়েট মার্কেটাররা মূলত ৫টি মডেলে আয় করে থাকেন। নিচে সেগুলোর বিস্তারিত দেওয়া হলো। 

পে পার সেল (Pay Per Sale)

‘পে পার সেল’ মডেলটি সবচেয়ে সহজ এবং সোজা সাপটা। এই মডেলে এফিলিয়েট মার্কেটারের লিংক ব্যবহার করে যতজন কোনো পণ্য বা সেবা কিনবে, এফিলিয়েট মার্কেটারের একাউন্টে তত ডলার জমা হবে। এটিই হলো ‘পে পার সেল’ মডেল।

পে পার একশন (Pay Per Action)

‘পে পার একশন’ হলো এমন একটি মডেল যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। একশন দিয়ে বোঝায় কাজ। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুবিধা হয় এমন কোনো কাজ এফিলিয়েট মার্কেটারের প্রভাবে সংগঠিত হলে ঐ প্রতিষ্ঠান মার্কেটারকে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে।

পে পার ইন্সটল (Pay Per Install)

পে পার ইন্সটল মডেলটি সাধারণত গেম বা অ্যাপস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যবহার করে থাকে। এ মডেলের আওতায় কোনো এফিলিয়েট মার্কেটার কোনো গেম অথবা অ্যাপস এর প্রচার করে থাকে। মার্কেটারের লিংক থেকে কেউ অ্যাপসটি ইন্সটল করলেই মার্কেটার টাকা পেয়ে থাকেন। 

পে পার লিড (Pay per Lead) 

পে পার লিড এর সাথে ইমেইল মার্কেটিং ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূলত গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা যাবে এমন কোনো তথ্যই হলো লিড। সেটি হতে পারে ইমেইল, ফোন নম্বর অথবা ফেসবুক আইডি। আর গ্রাহকেরা যখন মার্কেটারের লিংকের সাহায্যে ঢুকে নিজেদের তথ্য দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই মার্কেটারও কমিশন পান। তবে এক্ষেত্রে কমিশনের হার বেশ কম। 

পে পার ক্লিক (Pay per Click) 

পে পার ক্লিক হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে সাধারণ পন্থা। কিন্তু সবচেয়ে সহজ বলেই এ ধরনের মডেল খুব একটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও এতে কমিশনের হার খুব বেশি নয়। এই ধরনের মডেল সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করার জন্য। তবে উপর্যুক্ত পাঁচটি মডেল ছাড়াও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর রয়েছে অসংখ্য পেমেন্ট মডেল (Payment Model)। 

কেন করবেন এফিলিয়েট মার্কেটিং?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর শত শাখা-প্রশাখার মধ্যে কেন এফিলিয়েট মার্কেটিংকে গুরুত্ব দেবেন বা আদৌ করবেন কি না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ঠিক তাই এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা গুলোকে কেন্দ্র করে কেন করবেন এফিলিয়েট মার্কেটিং এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। 

প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি

একজন মার্কেটার কেন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, উপার্জন। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক কেন অন্যান্য মার্কেটিং মাধ্যম থাকতে এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করবে তা জানাটাও কিন্তু জরুরি। 

পণ্য বিক্রয়

পুরো লেখাটা পড়ে নিশ্চয়ই বিষয়টি পরিষ্কার যে প্রতিষ্ঠান গুলো পণ্য বিক্রয়ের জন্যই এফিলিয়েট মার্কেটিং করিয়ে থাকে। মূলত মার্কেটিং ও এডভার্টাইজিং এর বাজেটটা এফিলিয়েট মার্কেটিং এ খরচ করলে বেশ ভাল ফলাফলই পাওয়া যায়। 

পরিচিতি বৃদ্ধি 

পরিচিতি বৃদ্ধি যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একে বলা যায় মার্কেটিং এর একদম বেসিক কনসেপ্ট (Concept)। আর তাই ওয়েবসাইটে অধিক ট্রাফিক আনাটাও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি লক্ষ্য। কারণ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাহায্যে কম খরচেই অনেক অনেক ভিজিটর আনা যায়। এর ফলে গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। তার পাশাপাশি এখানে পণ্য বিক্রয়েরও একটি সুযোগ থেকেই যায়। 

গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা

খুব সুপরিচিত মুখের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শুনলে অনেক গ্রাহকের মনেই ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে রাতারাতি একটি বিশ্বাস তৈরি হয়। ইংরেজিতে একে বলে ‘সোশ্যাল প্রুফ’ (Social Proof)। পরিসংখ্যান বলে, ৯৫ ভাগের উপরে মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করার আগে পণ্যটি সম্পর্কে রিভিউ পড়ে, খোজ খবর নেয়। তখন যদি সাইটটির একটি ভাল রেপুটেশন বা গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে তা পণ্য বা সেবা বিক্রিতে অনেকটাই সহায়তা করে। 

গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ

গ্রাহকের তথ্য বর্তমান ডিজিটাল জগতের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোর একটা। কারণ গ্রাহক সম্পর্কে যতটা তথ্য জানা যাবে, ততটাই নিশ্চিত হওয়া যাবে তার চাহিদা সম্পর্কে। আর তার চাহিদা মতো পণ্য আনতে পারলেই বাড়বে বিক্রি। মূলত এই প্রক্রিয়াটি একটি গণ প্রক্রিয়া। এতে করে অসংখ্য গ্রাহকের তথ্য একবারে সংগ্রহ করা হয়। এমনকি কোনো গ্রাহক যতক্ষণ একটি ওয়েবসাইটে অবস্থান করবে ততক্ষণই তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ হতে থাকবে। 

এছাড়াও গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায় সৃষ্টিতেও ব্যবহার করা যায় এফিলিয়েট মার্কেটিং। গ্রাহককে ব্যবসার অফার, আপডেট জানানোর জন্য সেরা মাধ্যম হলো ইমেইল মার্কেটিং। আর ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় ইমেইল সংগ্রহের একটি প্রকৃষ্ট মাধ্যম হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। শুধু ইমেইল নয়, ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে আরো নানা তথ্য যোগাড় করতে এফিলিয়েট মার্কেটিং রাখতে পারে দারুণ ভূমিকা। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা

একজন মার্কেটার অবশ্যই এফিলিয়েট মার্কেটিং এ যুক্ত হন উপার্জনের জন্য। কিন্তু সকল পেশাতেই কম-বেশি উপার্জন আছে। বিশেষত এফিলিয়েট মার্কেটিং এই কেন জড়িত হওয়া যেতে পারে চলুন জানা যাক সে সম্পর্কে। 

ক্রমবর্ধমান বাজার

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাজার কি অবিশ্বাস্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে তা এই পরিসংখ্যানটি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ২০১৭ সালে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের বাজার মূল্য ২০২২ সালে এসে ১৭ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। ভবিষ্যতে যে এর বাজার বাড়বে বই কমবে না, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। 

স্বল্প বা বিনা পুঁজি

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাজার এত বৃদ্ধির পেছনে যেই বিষয়টি সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে সেটি হলো এর স্বল্প বা বিনা পুঁজির ধরন। এফিলিয়েট মার্কেটিং সাধারণত করে থাকেন ইতোমধ্যে সুপরিচিত ব্যক্তিবর্গ। তাই তাদের আলাদা করে কোনো খরচ করতে হয় না। আবার কেউ যদি প্রথম থেকেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কাজ শুরু করেন তাহলেও একটি ওয়েবসাইট খুলে আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে খুব বেশি খরচ করতে হবে না।

কম ঝুঁকি

স্বল্প বা বিনা পুঁজির কারণে স্বভাবতই এফিলিয়েট মার্কেটিং এ ঝুঁকি অনেক কম। অন্য অনেক ব্যবসাতে স্বল্প পুঁজির সুযোগ থাকলেও দুর্ঘটনাবশত পণ্য নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা থেকেই যায়। কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কোনো পণ্যের অস্তিত্বই নেই। তাই এই ব্যবসাতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা একদমই কম। 

সহজ কার্যপ্রণালী

পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ কিংবা বিপণন, কোনো ক্ষেত্রেই এফিলিয়েট মার্কেটারের কোনো ভূমিকা নেই। এফিলিয়েট মার্কেটারের কার্যাবলী পণ্যের প্রচার ও প্রসারেই সীমাবদ্ধ। তাই এর চেয়ে সহজ কার্যপ্রণালী আর হয় না। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর অসুবিধা

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সব কিছুই যে সুবিধাজনক বিষয়টি সেরকম নয়। কিছু অসুবিধার দিকও রয়েছে যা আলোচনা করা জরুরী। 

সময়সাপেক্ষ

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর পুরো প্রক্রিয়াটিই বেশ সময়সাপেক্ষ। প্রথমত জনপ্রিয়তা অর্জন করাটা অনেক সময় এবং পরিশ্রমের ব্যাপার। আবার কেউ পুরোপুরি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্লগ সাইটের মাধ্যমে শুরু করলেও তা র‍্যাংক করাটা সময়ের ব্যাপার। তাই তাৎক্ষণিক ফলাফল চাইলে এফিলিয়েট মার্কেটিং খুব ভাল উপায় নয়। 

নিয়ন্ত্রণহীনতা

অনেক সময়ই দেখা যায় একজন এফিলিয়েট মার্কেটার যেই সকল বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে পণ্যটির প্রচার করছিলেন, পণ্যটি সেই সকল বৈশিষ্ট্যই হারিয়ে ফেলেছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় পণ্য তার গুণগত মানও হারাচ্ছে। কিন্তু এ সকল ক্ষেত্রে একজন এফিলিয়েট মার্কেটারের কিছুই করার থাকে না কারণ সে প্রতিষ্ঠানের কোনো অংশ নয়। এই সমস্যায় বেশি ভোগে রিলেটেড এফিলিয়েট মার্কেটাররা। 

প্রতিযোগিতা

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাঠ এখন মোটেও ফাকা নয়। এর জনপ্রিয়তা যতই বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। বিশেষত একই প্রতিষ্ঠানের একই পণ্যের এফিলিয়েট মার্কেটার এখন অনেকে। তাই স্বভাবতই এই তুমুল প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে একটি অসুবিধাজনক দিক। 

শেষকথা

সর্বোপরি এফিলিয়েট মার্কেটিং হতে পারে ঝুকিবিহীন উপার্জনের এক নিরাপদ উপায়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই অংশটির বৃদ্ধি হয়েছে অস্বাভাবিক হারে। বর্তমানে এটি হয়তো অনেকের পার্শ্ব উপার্জন। কিন্তু অনেকের কাছেই এটি উপার্জনের প্রধান এবং একমাত্র উপায়। আর একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবেও আমরা প্রতিনিয়ত এফিলিয়েট মার্কেটিং এর দ্বারস্থ হচ্ছি। যদি আপনার ভেতর থেকে থাকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা যাকে ইংরেজিতে বলে কনভিন্সিং পাওয়ার (Convincing Power), তাহলে এ পেশায় ভাল করতে পারেন আপনিও। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১।  বাংলাদেশে কি কোনো এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ! বাংলাদেশি প্লাটফর্ম চাইলে আপনি দারাজ, 10 মিনিট স্কুল সহ বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং কোম্পানির এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।

২। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পণ্যের মান খারাপ হলে মার্কেটারের দায়বদ্ধতা কতটুকু?

উত্তরঃ এফিলিয়েট মার্কেটিং এ পণ্যের মান খারাপ হলে মার্কেটারের সরাসরি দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু বেশি নেগেটিভ রিভিউ হলে মার্কেটার তার গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে যাতে করে তার পুরো ব্যবসায়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

৩। এফিলিয়েট মার্কেটিং কি বৈধ?

উত্তরঃ বৈধ পণ্যের প্রচার চালালে এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পূর্ণ বৈধ। 

৪। কোনো ধরনের পুঁজি ছাড়াই কি এফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?

উত্তরঃ যায়। তবে এক্ষেত্রে আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা অনেক বড় হতে হবে।

৫। বাংলাদেশে কি এফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয়?

উত্তরঃ বাংলাদেশে বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং বেশি জনপ্রিয়। অধিকাংশ সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররাই এফিলিয়েট মার্কেটিং করছে। আবার এফিলিয়েট মার্কেটিংকে পেশাগত ভাবে নিয়েছেন এমন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাও কম নয়। 

 

তথ্যসূত্র

১। শপিফাই (১)

২। শপিফাই (২

৩। ইনভেস্টোপেডিয়া 

৪। বিগকমার্স 

৫। বিজনেস অফ অ্যাপস 

৬। স্মার্ট ব্লগারস  

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button