ইমেইল মার্কেটিংডিজিটাল মার্কেটিং

ইমেইল মার্কেটিং এর আদ্যোপান্ত

ইমেইল মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম সফল ও বহুল ব্যবহৃত উপায়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর জামানার শুরু হতেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে ইমেইল মার্কেটিং। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং আরও অনেক ধরনের মাধ্যম এলেও, ইমেইল মার্কেটিং এর সাফল্যের হার মোটেও কমে নি। পণ্য অথবা সেবা বিক্রিতে এর উচ্চ সাফল্যের কারণে এখনো অনেকেই ইমেইল মার্কেটিং এর কাজের দিকে ঝুকছেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই বিশেষায়িত বিভাগটি নিয়ে থাকতে পারে অনেক প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখাটি। 

সূচিপত্রঃ

ইমেইল মার্কেটিং কী?

ইমেইল মার্কেটিং হলো ইমেইল ভিত্তিক এমন এক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের খুব সহজে এবং তুলনামূলক নিশ্চিত ভাবে পণ্য সম্পর্কে অবহিত অথবা অন্যান্য কাজে প্ররোচিত করা যায়। যেমন কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করা, কোনো চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করা, কোনো অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করা অথবা কোনো পরিসংখ্যানে অংশগ্রহণ করা। ইমেইল মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য অনেক রকমের হতে পারে। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক, সব কয়টিরই সাধারণ বিষয় হলো পুরো প্রক্রিয়াটিই মূলত হয় ইমেইল এর মাধ্যমে, ঠিক এজন্যই এর নাম ইমেইল মার্কেটিং। 

কিভাবে কাজ করে ইমেইল মার্কেটিং?

ইমেইল মার্কেটিং এর পুরো প্রক্রিয়াটিই মূলত একটি সরাসরি প্রক্রিয়া। একে ডিজিটাল যুগের ‘দোরগোড়ায় বিজ্ঞাপনও’ বলা যায়। সাধারণত মার্কেটিং বা প্রচারণার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য গ্রাহক কোন ওয়েবসাইটে গেলে তবেই নানা বিজ্ঞাপন দেখতে পান। কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে গ্রাহককে কোনো সাইটে যেতে হয় না বরং পণ্যের প্রচারণা সরাসরি তার ইমেইলই করা হয়ে থাকে। ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রচারণার উদ্দেশ্য নানা রকমের হতে পারে। তা হতে পারে পণ্য বিক্রয় আবার হতে পারে বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের মতামত সংগ্রহ। 

ইমেইল মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য 

ইমেইল মার্কেটিং করার নানা ধরন রয়েছে। নানা কারণ রয়েছে। কারণসমূহের ওপর নির্ভর করে ইমেইল মার্কেটিং এর ধরন। সাধারণত যেসব কারণ ইমেইল মার্কেটিং পন্থাটিকে ব্যবহার করা হয়ঃ

পণ্য বিক্রয়

আরও ১০টি প্রচার মাধ্যমের মতই ইমেইল মার্কেটিং এরও প্রধান উদ্দেশ্য মূলত পণ্য অথবা সেবা বিক্রয়। আর সেই উদ্দেশ্য প্রায় সময়ই সরাসরি ফুটে ওঠে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে। সরাসরি নতুন পুরাতন পণ্যের নানা বিজ্ঞাপন অথবা নতুন ছাড়ের তথ্যাবলিতেই ভরে ওঠে ইমেইল মার্কেটিং এর সিংহভাগ। 

ব্র্যান্ড এওয়ারনেস (Brand Awareness)

ব্র্যান্ড এওয়ারনেস এমন দুটি শব্দ যার একসাথে কোনো বাংলা নেই। মূলত কোনো ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরি করাই ব্র্যান্ড এওয়ারনেস এর কাজ। এতেই এর নামের সার্থকতা। মূলত এটি মার্কেটিং এর অনেক বড় একটি অংশ। কারণ একটি ব্র্যান্ডের নাম মানুষ যত শুনবে, যত দেখবে ততই সেই ব্র্যান্ডের কথা তার অবচেতন মনে থেকে যাবে। এটি যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। 

সম্পর্ক তৈরি

আপনি যদি একজন ভোক্তা বা গ্রাহকের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে ঐ গ্রাহকের আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর এক্ষেত্রেও ইমেইল মার্কেটিং ভূমিকা রাখতে পারে। মূলত পুরোনো গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী একটু বিশেষায়িত ভাবে ইমেইল করতে পারলে তারা নিজেরা তো আবার পণ্য ক্রয় করেনই সাথে আরো অনেককে দিয়েই করান। 

লিড (Lead) তৈরি

লিড তৈরি মূলত গ্রাহক ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়ায় এসব তথ্য অনৈতিক ভাবে অথবা ক্রয় করে যোগাড় করা হয় না। বরং গ্রাহকেরা স্বেচ্ছায় যখন তাদের তথ্যাবলী যেমনঃ নাম, ইমেইল অ্যাড্রেস এসব প্রদান করেন তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলে লিড তৈরি করা। 

ইমেইল মার্কেটিং বেছে নেওয়ার কারণ

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর হাজারো রুপ রয়েছে। এই অসংখ্য নতুন রুপের ভিড়ে ইমেইল মার্কেটিং কতটা সফলতার সাথে তার অবস্থান ধরে রেখেছে সেই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে ইমেইল মার্কেটিং বেছে নেওয়ার কারণ। 

  • বর্তমানে পৃথিবীতে ৪ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ইমেইল পরিষেবার সেবা গ্রহণ করছেন। তাই কোনো পণ্য সম্পর্কে জানাতে হলে ইমেইল কে বাদ দেওয়ার কোনো উপায়ই নেই। 
  • অন্যান্য মার্কেটিং পদ্ধতির তুলনায় এর লাভের হার অনেক বেশি। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য খরচ হওয়া প্রতি ডলারের বিপরীতে ৩৪ ডলারের পণ্য বিক্রি হয়। 
  • ইমেইল থেকে পাওয়া বিজ্ঞাপনের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা সাধারণত সামাজিক গণ্যমাধ্যমের  বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতার চেয়ে একটু বেশি হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের খরচ করার মাত্রাটাও থাকে অনেকটাই বেশি। 
  • বিশ্বের ৭৯% ডিজিটাল মার্কেটারের কাছে ইমেইল মার্কেটিং সেরা ৩টি প্রচার মাধ্যমের একটি মনে হয়।
  • বিজনেস টু বিজনেস (B2B) মার্কেটারদের মধ্যে ৩১% মনে করেন ইমেইল নিউজলেটার (Newsletters) লিড অর্থাৎ সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সেরা মাধ্যম।
  • ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্তত ৬০% প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেতাদের ইমেইলসমূহ পূর্ববর্তী ক্রয়ের ভিত্তিতে ভাগ করে থাকেন। 
  • ৫৭.২% ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মতে তাদের কাছে অন্তত ১,০০০ থেকে ১০,০০০ এর বেশি ইমেইল রয়েছে। 
  • ৮৫.৭% ই-কমার্স মার্কেটারদের কাছে ইমেইল মার্কেটিং মূলত তাদের ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বাড়ানোর মাধ্যম।

সুতরাং উপর্যুক্ত পরিসংখ্যানগুলো পড়ে বুঝতেই পারছেন ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর দুনিয়ায় কতটা সফল। আর এই সফলতার কারণেই আজও ইমেইল মার্কেটিং একটি লাভজনক পেশাই বলা চলে।

ইমেইল লিস্টঃ ইমেইল মার্কেটিং এর প্রাণ

ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বস্তুটি, সেটি অবশ্যই আপনার ইমেইল লিস্ট। আপনার ইমেইল লিস্ট কত বড় আর পণ্যের সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক তার উপর নির্ভর করবে ইমেইল মার্কেটিং এর সফলতা। কারণ এই ইমেইল লিস্টের ইমেইলগুলোতেই আপনি পণ্যের প্রচারণা চালাবেন। তবে ইমেইল লিস্টের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। 

ইমেইল লিস্ট ক্রয়

অনেক স্থানেই পরামর্শ পাবেন ইমেইল লিস্ট ক্রয় করার। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কেনা ইমেইল লিস্ট খুবই বাজে ফলাফল দেবে। কারণ ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেই সমস্যাটি পোহাতে হয় তা হলো সম্ভাব্য ক্রেতা ইমেইলের বিজ্ঞাপনটি না দেখা। যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আপনাকে ইমেইলটি দিয়ে থাকে তাহলে তার আপনার পণ্য সম্পর্কিত ইমেইল খুলে দেখার সম্ভাবনা তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। কিন্তু ক্রয় করা ইমেইল লিস্টের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি কিরকম, তার রুচি কিরকম বা তার আপনার পণ্যটির ধরন সম্পর্কে আদৌ কোনো ধারনা আছে কি না তা কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। তার পাশাপাশি ক্রয় করা ইমেইল লিস্টে অনেক ইমেইলই অব্যবহৃত থাকতে পারে। ফলে ব্যর্থ ইমেইলের হার আরো বেড়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয়টি, আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের নানা দেশে স্প্যাম ইমেইলের বিরুদ্ধে কার্যকরী আইন রয়েছে। তাই সেসব দেশের ক্ষেত্রে ক্রয় করা ইমেইল ব্যবহার একদমই পরিহার করা উচিত। 

ইমেইল লিস্ট তৈরির উপায়

ইমেইল লিস্ট ক্রয় না করে এর সুবিধা নিতে চাইলে ইমেইল লিস্ট তৈরি করাটাই একমাত্র উপায়। এই প্রক্রিয়াটি অনেক সময় সাপেক্ষ। তবে সময় সাপেক্ষ হলেও নিরাপদ এবং তুলনামূলক অনেক কার্যকর বটে। ইমেইল লিস্ট তৈরির জন্য যেই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটিকে মূলত বলে অপট-ইন ফর্ম।

অপট-ইন ফর্ম

অপট-ইন ফর্ম মূলত একজন ব্যক্তিকে ইমেইল পাঠানোর অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া। অধিকাংশ ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে অবশ্যই অপট-ইন ফর্মের উপস্থিতি রয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাহক ঐ প্রতিষ্ঠান বা ঐ ওয়েবসাইটকে তার ইমেইলটি দেয় তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত ইমেইল পাঠানোর জন্য। যেই ডিজিটাল ফর্মে গ্রাহক এই অনুমতি প্রদান করে সেটিই অপট-ইন ফর্ম।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওয়েবসাইটের একটি অপট-ইন ফর্ম রয়েছে। কিন্তু শুধু ফর্মের উপস্থিতিই গ্রাহকের ইমেইল নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং কোনো অফারের মাধ্যমে সেই ফর্মে ইমেইল প্রদান করতে যদি গ্রাহককে আগ্রহী করে তোলা হয় তবে তা অনেক ভাল কাজ করে।

অপট-ইন ফর্মকে কার্যকরী করে তোলার উপায়

লিড ম্যাগনেট সম্পর্কে তো জানলেন। তবে লিড ম্যাগনেটের মূল উদ্দেশ্যই কিন্তু অপট-ইন ফর্মের সাহায্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে তাদের ইমেইল আদায় করা। তাই অপট-ইন ফর্ম তৈরির ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য কিছু পদ্ধতির অবলম্বন করতে হবে। 

  • আকর্ষণীয় হেডলাইনঃ অপট-ইন ফর্মের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো এর হেডলাইন। কারণ সরাসরি ইমেইল নিতে চাইলে কোনো গ্রাহকই তেমন আগ্রহী হয় না। কিন্তু সরাসরি সাবস্ক্রিপশনের কথা না লিখে অফারটিকে এক লাইনে বর্ণনা করে এমন আকর্ষণীয় হেডলাইন দিলে তা তুলনামূলক বেশি গ্রাহককে আগ্রহী করবে। 
  • আকর্ষণীয় চিত্রঃ অপট-ইন ফর্মের বাটনটিতে থাকতে পারে কোনো আকর্ষণীয় চিত্র। অনেক সময়ই দেখা যায় কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে এক কোণে একজন মানুষের ছবি ভেসে ওঠে এবং একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা আসে। এটি অপট-ইন ফর্মের বেশ কার্যকরী একটি প্রক্রিয়া। এছাড়াও কিছুটা আকর্ষণীয় আকারের রঙিন বক্স অথবা ওয়ার্ড আর্ট (Word Art) বাড়িয়ে তুলতে পারে ক্লিকের সংখ্যা।
  • সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ অপট-ইন ফর্মে ক্লিক করার পর গ্রাহককে অবশ্যই একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেখানো চাই। অর্থাৎ অল্প কথায় অফারটি কি সম্পর্কে এবং তার ইমেইল অ্যাড্রেসে যে পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনধর্মী ইমেইল পাঠানো হবে তা স্পষ্ট করা চাই।
  • সাবলীল ফর্মঃ অপট-ইন ফর্ম যেমন আকর্ষণীয় রাখতে হবে তেমনই রাখতে হবে সাবলীল। খুব বেশি নকশা গ্রাহককে উলটো বিরক্ত করে ফিরিয়ে দিতে পারে।
  • সঠিক স্থান ও সময়ঃ অপট-ইন ফর্মের মাধ্যমে গ্রাহক আপনার সেবায় সাবস্ক্রাইব করবে কি না তা অনেকটাই নির্ভর করে কখন তার কাছ থেকে ইমেইলটি চাওয়া হচ্ছে তার ওপরে। সাধারণত অপট-ইন ফর্ম এমন একটি স্থানে স্থাপন করতে হয় যাতে সহজে চোখে পড়ে। যেমনঃ
  • ফ্লোটিং বার (Floating Bar) 
  • সাইটের হেডার (Header) 
  • সাইডবার (Sidebar) 
  • পপ আপ (Popup) 
  • নির্দিষ্ট আলাদা পেজ 

গ্রাহককে কোন সময়ে সাবস্ক্রাইবের জন্য প্রলুব্ধ করা হবে তার উপরেও অনেকটাই সাফল্য নির্ভর করে। যেমন সাইটে ঢোকার সাথে সাথেই না চেয়ে কোনো লেখার মাঝামাঝি অথবা শেষে সাবস্ক্রাইব করতে বলা হলে সাফল্যের হার অনেক বেশি।

সব মিলিয়ে একটি ভাল লিড ম্যাগনেট বা ভিন্ন ভাষায় বললে অফার আর অপরদিকে একটি আকর্ষণীয় অপট-ইন ফর্ম আপনার ইমেইল লিস্ট তৈরির ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই দুইটি জিনিস প্রস্তুত হয়ে গেলে অপট-ইন ফর্মের লিংক সামাজিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আরো নানা প্রচার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন। মনে রাখবেন, যত বেশি ইমেইল পাবেন আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপনের পরিধি তত বাড়বে। 

লিড ম্যাগনেট

যেই অফারের সাহায্যে অপট-ইন ফর্মে গ্রাহকদের ইমেইল দিতে উৎসাহিত করা হয় সেই অফারটিকেই বলে লিড ম্যাগনেট। এখানে একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, ‘লিড’ বলা হচ্ছে মূলত গ্রাহক ও গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্যাবলীকে। আর ‘ম্যাগনেট’ বলা হচ্ছে অফারকে। অর্থাৎ এমন কোনো অফার যা গ্রাহকদের আকর্ষণ করবে। সাধারণত লিড ম্যাগনেট এমন একটি অফার যার জন্য আপনার আলাদা তেমন খরচ করতে হবে না। বা খরচ করলেও খুব কম করতে হবে। এই লিড ম্যাগনেট হতে পারে আপনার পণ্যেরই কোনো অংশ। অথবা পুরো সেবাটিরই কয়েকদিনের ফ্রি ট্রায়াল ভার্সন। অথবা হতে পারে প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো বস্তু যা আপনার পণ্য সম্পর্কে সম্ভাব্য গ্রাহককে করে তুলতে পারে আগ্রহী। 

কিভাবে তৈরি করবেন কার্যকরী লিড ম্যাগনেট?

কার্যকরী লিড ম্যাগনেট তৈরি করার ক্ষেত্রে অন্তত কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। 

  • সহজে ব্যবহারযোগ্যঃ লিড ম্যাগনেট জিনিসটি যেহেতু বিনামূল্যে দেওয়া হয় তাই স্বভাবতই এখান থেকে সহজ কোনো বস্তু পাওয়ার আশা রাখেন গ্রাহকেরা। তাই এখানে বিনামূল্যে হলেও বৃহৎ কোনো বস্তু না দেওয়াই শ্রেয়। যেমন পিডিএফ আকারে ২০০-৩০০ পেজের বই সাধারণত লিড ম্যাগনেট হিসেবে তেমন জনপ্রিয় হয় না।
  • প্রাসঙ্গিকঃ লিড ম্যাগনেট আপনার পণ্য অথবা সেবার সাথে প্রাসঙ্গিক হওয়াটা খুবই জরুরী। কারণ লিড ম্যাগনেটের অফারে গ্রাহক যা পাবে তার উপর নির্ভর করে আপনার পণ্য সম্পর্কেও সে অনেকটাই বিচার করবে। এছাড়া অন্তত নতুন ধরনের পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতেও সেই অফারটি অনেক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • তাৎক্ষণিকঃ লিড ম্যাগনেট বা অফার যেটিই বলুন না কেন, গ্রাহকেরা অবশ্যই তা তাড়াতাড়ি পেতে পছন্দ করে। যদি অফারের সেবাটি পেতেও দেরি হয় তাহলে তাদের মনে স্বভাবতই একটি নেতিবাচক ধারনা তৈরি হবে। তাই ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করার সাথেই সাথেই ডিসকাউন্ট (Discount), ফ্রি স্যাম্পল (Free Sample) বা ট্রায়াল পিরিয়ডটি (Trial Period) চালু করতে দ্বিধা করা উচিত নয়।

ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস

ইমেইল মার্কেটিং এর সাহায্যে ব্যবসার উন্নতি করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ একই সঙ্গে ব্যবসার হাজার হাজার গ্রাহককে আপনার বা আপনার কর্মীদের পক্ষে ইমেইল করা সম্ভব না। যদি সেই চেষ্টাও করেন, খুব সহজেই আপনার ইমেইলগুলো স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার খুব বড় সম্ভাবনা আছে। আর একই ইমেইল অথবা আইপি অ্যাড্রেস থেকে বেশি ইমেইল স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হলে তা সমস্যাদায়ক। এতে ঐ ইমেইল, আইপি অথবা দুটিই ফ্ল্যাগড (Flagged) হয়ে যায়। ফলস্বরুপ অনেক দরকারি ইমেইলও আর পাঠানো যায় না। 

নিচে কিছু স্বনামধন্য ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস এর নাম উল্লেখ করা হলোঃ

শেষকথা

সব মিলিয়ে ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে আপনার ব্যবসার জন্য একটি সফল বিজ্ঞাপনের মাধ্যম। বিশেষত আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি ই-কমার্স ভিত্তিক হয়ে থাকে তাহলে ইমেইল মার্কেটিং এর দ্বারস্থ হওয়া অনেকটাই বাধ্যতামূলক বটে। অপর দিকে আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এ একটি ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চান তবে ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে দারুণ একটি মাধ্যম। যদিও তার জন্য ইমেইল মার্কেটিং শেখার উপায়গুলো অনুসরণ করে এই দক্ষতা অর্জন করতে হবে ভাল ভাবে।   

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। পরিবর্তনশীল ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাজারে ইমেইল মার্কেটিং টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?

উত্তরঃ ডিজিটাল মার্কেটিং এর শুরু থেকে এখন অবধি যদি কোনো পন্থা টিকে থাকে তবে সেটি হলো ইমেইল মার্কেটিং। তাই খুব সহজেই বলা যায় এর টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেকটুকুই। 

২। ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ কেমন? 

উত্তরঃ এটি নির্ভর করবে আপনি কত জন গ্রাহকের জন্য কত দিনের প্যাকেজ কিনছেন। যেমন ড্রিপ এর গ্রাহকেরা মাসে ৪৯ ডলারের বিনিময়ে ২৫০০ সাবস্ক্রাইবারকে নিয়মিত ইমেইল পাঠাতে পারেন। আবার হাবস্পটের গ্রাহকেরা মাসে ২,০০০ ইমেইল ফ্রিতেই পাঠাতে পারেন। ৪৫ ডলার থেকে রয়েছে তাদের মাসিক প্যাকেজ। 

৩। ইমেইল মার্কেটিং নাকি ফেসবুক বুস্টিং, কোনটি লাভজনক?

উত্তরঃ আপনার ব্যবসা যদি বৃহৎ ই-কমার্স ঘরানার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ইমেইল মার্কেটিং। ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি (Mckinsey & Company) এর মতে ইমেইল মার্কেটিং সামাজিক গণমাধ্যম থেকে ৪০ গুণ বেশি কার্যকরী। 

৪। আমার ইমেইল মার্কেটিং কতটুকু সফল হচ্ছে তা বুঝবো কিভাবে?

উত্তরঃ আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির সাহায্যে জানুন যে আপনার পাঠানো মেইলগুলোর কতটি খোলা হচ্ছে, কতটির লিংকে ক্লিক করা হচ্ছে এবং কতটি থেকে আনসাবস্ক্রাইব করা হচ্ছে। তাহলেই ইমেইল মার্কেটিং এ কতটুকু সফল হচ্ছেন তা সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাবেন।   

 

তথ্যসূত্র

১। অপ্টইন মাস্টার

২। হাবস্পট

৩। মেইলশিম্প 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button