আউটসোর্সিংডিজিটাল মার্কেটিংফ্রিল্যান্সিং

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং বৈশ্বিক পটভূমিতে খুব নতুন কিছু না হলেও বাংলাদেশের অনেকের কাছেই এখনো এটি বেশ নতুন বটে। ডিজিটাল মার্কেটিং নামটি শুনলেও অনেকেই এখনো জানেন না এটি দিয়ে আসলে কি বোঝায়। অনেকেই একে জানেন আয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু কিভাবে এর সাহায্যে আয় করা যায় তা সম্পর্কে সঠিক ধারনা নেই অধিকাংশেরই। কিন্তু ধারনা থাকুক আর নাই থাকুক, বর্তমান যুগে আমি আপনি সবাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতাভুক্ত। আর বিজ্ঞাপনের এই নতুন রুপটি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের লেখাটিতে।

সূচিপত্রঃ

মার্কেটিং কি?

মার্কেটিং এর বাংলা অর্থ বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন কী তা আমরা সবাই জানি। সংজ্ঞা দিতে চাইলে বলতে হয়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের লক্ষ্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে ক্রেতাতে রুপান্তর করার জন্য যা যা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন, তার পুরোটিই বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং এর অর্ন্তভুক্ত। 

মূলত ব্যবসা কার্যক্রমের আদিকাল থেকেই এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। কারণ পণ্য বিক্রয় করতে হলে অবশ্যই তা সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পরিচিত করে তুলতে হবে, বিজ্ঞাপন করতে হবে। কিন্তু এই সংজ্ঞার ভেতরে পৃথিবীর সকল ধরনের বিজ্ঞাপনই পরে। কিন্তু মানবসভ্যতা যতই আধুনিক যুগে অগ্রসর হচ্ছে ততই আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর আরো নির্ভশীল হয়ে পড়ছে। আর সেখান থেকেই জন্ম ডিজিটাল মার্কেটিং এর। 

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তার পণ্য অথবা সেবার বিজ্ঞাপন করে তখন তাকে বলে ডিজিটাল মার্কেটিং। সহজ ভাষায়, বিজ্ঞাপনের ডিজিটাল রুপ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। অর্থাৎ বিক্রেতা যখন ওয়েবসাইট, ই-মেইল, এসএমএস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে, সেই প্রক্রিয়াটিই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। যত দিন যাচ্ছে, ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর স্থান ততই বেশি দখল করে নিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

ট্রেডিশনাল, ডিজিটাল ও অনলাইন মার্কেটিং এর পার্থক্য 

ট্রেডিশনাল শব্দের অর্থ ঐতিহ্যগত বা প্রথাগত। বিজ্ঞাপন জগতের শুরুতে বিজ্ঞাপনের যে ধারা ছিল তা এখন নেই। কালের প্রভাবে অসংখ্যবার সেসব ধারার পরিবর্তন হয়েছে। আর তাই একেক কালে প্রথাগত বিজ্ঞাপন বলতে একেকটি ধারাকে বোঝায়। বর্তমানে প্রথাগত বিজ্ঞাপন বলতে বোঝায় মূলত দুইটি উৎসকে। 

  • ছাপানো মাধ্যম। যেমনঃ খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, পোস্টার ইত্যাদি। 
  • টিভি চ্যানেল। 

যদিও টিভি চ্যানেলগুলো ডিজিটাল মাধ্যমের মধ্যেই পড়ে কিন্তু তবুও এটি প্রথাগত বিজ্ঞাপন ধারারই অংশ। কারণ বেশ কয়েক দশক ধরেই টিভির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো থেকে যা অনেকটাই পুরোনো। 

ট্রেডিশনাল বা প্রথাগত মাধ্যমের পরেই আসে আমাদের আজকের আলোচনার মুখ্য বিষয়, ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং কি তা আগেই আলোচনা করেছি। এর অর্থ অনুযায়ী এটি পুরোপুরি ডিজিটাল মাধ্যম নির্ভর। কিন্তু অনেকেই একে গুলিয়ে ফেলে অনলাইন মার্কেটিং এর সাথে।

অনলাইন মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এরই একটি অংশ। মূলত অনলাইনের সাহয্যে যত ধরনের বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে তার সব গুলোই অনলাইন মার্কেটিং এর অর্ন্তভুক্ত। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে শুধু অনলাইন বিজ্ঞাপনকেই বোঝায় না। যেমন ফোনের এসএমএস এর সাহায্যে ক্রেতাকে যে পণ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয় তাও এক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং। আর ঠিক এখানেই অনলাইন মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর পার্থক্য। স্বভাবতই ডিজিটাল মার্কেটিং আরো বড় একটি বিষয়, অনলাইন মার্কেটিং যার অংশ মাত্র। 

কেন করবেন ডিজিটাল মার্কেটিং?

নতুন এক ধরনের বিজ্ঞাপন ধারা তখনই তৈরি হয়ে যখন তা ফলপ্রসু হয়ে থাকে। ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো লাভ। আর কেন ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন তার উত্তর এখানেই নিহিত। কারণ এটি লাভজনক। বিজ্ঞাপন মাধ্যমের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করা হয় সেই মাধ্যমটি কত দ্রুত কত বেশি মানুষের কাছে বিজ্ঞাপনটি পৌঁছে দিতে পারছে তার ওপর। আর ডিজিটাল মাধ্যমগুলো যত দ্রুত যত বেশি মানুষের কাছে তথ্য পৌছাতে পারে, প্রথাগত মাধ্যমগুলো স্পষ্টতই তার থেকে অনেক পিছিয়ে।

স্ট্যাটিস্টা (Statista) এর সূত্র মতে ২০২২ সালের এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীতে ৫ বিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। এর মধ্যে ৪.৬৫ বিলিয়ন একই সাথে সামাজিক গণমাধ্যমেরও ব্যবহারকারী। অর্থাৎ এই পৃথিবীরি ৬৩% লোক ইন্টারনেটের সাথে জড়িত। ইউরোপে যার হার সবচেয়ে বেশি, ৯৮%। অপর দিকে এশিয়াতে মোট ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি, ২.৮ বিলিয়ন। এটি শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান। বর্তমান পৃথিবীতে খুব বেশি মানুষ নেই যারা মোবাইল ফোন বা সমগোত্রীয় কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে না। 

অর্থাৎ সব মিলিয়ে এটি পরিষ্কার যে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষেরা ডিজিটাল মাধ্যমের ওপরে বেশ অনেকটা নির্ভরশীল। আর প্রথাগত মাধ্যমের চেয়ে অনেক দ্রুত, নিশ্চিত ও সহজেই বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় এই ডিজিটাল মাধ্যমে। তাই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার না করাটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই বোকামির নামান্তর মাত্র।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরন

ডিজিটাল মার্কেটিং এত বড় একটি বিষয় এবং এর এত রুপ রয়েছে যে এর সবগুলো রুপ নির্ধারণ করা মুশকিল। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান কিছু ধরন নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে লেখার এই অংশে। 

এসইও (SEO) 

এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এসইও কে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরন না বলে অনেকটা এর মাধ্যমই বলা চলে। মূলত কোন ওয়েবসাইট অথবা কন্টেন্টকে সার্চ ইঞ্জিনের সামনে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রক্রিয়াটিই এসইও। যখন গুগল অথবা বিং এর মতো সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে কিছু সার্চ করা হয় তখন ইঞ্জিন গুলো সার্চের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষণ করে ইঞ্জিনগুলো সেই তথ্যটিই আগে দেখায় যেটি সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। সেটি হতে পারে কোনো ব্লগ, কোনো ভিডিও অথবা কোনো ওয়েবসাইট। সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার কণ্টেন্টকে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তোলার প্রক্রিয়াটিই হলো এসইও। 

এসইও ডিজিটাল মার্কেটিং এর একদম প্রধান একটি মাধ্যম। কারণ কন্টেন্ট যতই ভাল হোক, সার্চ ইঞ্জিন তা প্রাসঙ্গিক মনে না করলে মানুষ তা দেখবে না। আর মানুষ না দেখলে বিজ্ঞাপনও সম্পন্ন হবে না। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social Media Marketing)

বর্তমান সময়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় যেই সাইটগুলোতে দিয়ে থাকে, সেগুলো হলো সোশ্যাল মিডিয়া। সামাজিক যোগাযোগের নামে দিনের অধিকাংশ সময়ই অনেক মানুষ এখানে ব্যয় করেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই বিক্রেতারা তাদের বিজ্ঞাপন এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিচ্ছেন। ফেসবুক স্ক্রল করলেই আমরা দেখতে পাই নানা ধরনের স্পন্সরড (Sponsored) বিজ্ঞাপন। এগুলো আসলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন যা ফেসবুক আমাদের পছন্দ অনুযায়ী নিউজ ফিডে দেখায়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ছোটবড় অনলাইন ব্যবসাই গড়ে উঠেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সাহায্যে। আবার অনেক অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও অনলাইনে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে পেজ খুলে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে।  

সিপিএ মার্কেটিং (CPA Marketing)

সিপিএ মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ বড় একটি অংশ। মূলত কোন দর্শকদের দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট কাজ করিয়ে নেওয়াই সিপিএ মার্কেটিং এর লক্ষ্য। তা হতে পারে পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করার মত সাধারণ কাজও। মূলত পণ্য অথবা সেবা বিক্রয়ের জন্যই সিপিএ মার্কেটিং ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও পরিসংখ্যান থেকে শুরু করে আরো নানা কাজেই এই ধরনের মার্কেটিং এর ব্যবহার হয়। বর্তমানে সিপিএ মার্কেটিংকে অনেক ডিজিটাল মার্কেটারই গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)

এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি ধরন যেখানে বিজ্ঞাপনের খরচ পণ্য বিক্রয়ের সাথে সরাসরি সংযুক্ত। কারণ প্রথাগত প্রচার মাধ্যম যেমন টিভি অথবা খবরের কাগজে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো আদৌ কত মানুষ দেখছে তা জানার কোনো উপায় থাকে না। আর বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্য যেহেতু পণ্য বিক্রয় করা। তাই কত মানুষ কোন স্থান থেকে বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য কিনছে তাও জানার কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে একজন উৎপাদক তখনই প্রচারককে টাকা দেন যখন বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রতি পণ্যের জন্য প্রচারককে বেশি টাকা দিতে হয়। কিন্তু সামগ্রিক হিসেবে প্রথাগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক বেশি কম ব্যায়বহুল। 

পে পার ক্লিক মার্কেটিং (Pay Per Click Marketing) 

পে পার ক্লিক মার্কেটিং অনেকটাই সিপিএ মার্কেটিং এর মতো। মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরনগুলো একটি আরেকটির অনেকটাই কাছাকাছি। পে পার ক্লিক মার্কেটিং এ মূলত একটি বিজ্ঞাপনে কতজন দর্শক ক্লিক করেছি তার ওপর ভিত্তি করেই টাকা দেওয়া হয়। এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো গুগল অ্যাড। ইউটিউবের ভিডিওতে অথবা গুগল অ্যাডসেন্স দ্বারা অনুমোদিত ওয়েবসাইট গুলোতে প্রতিদিনই মিলিয়ন ডলারের পে পার ক্লিক মার্কেটিং হয়ে থাকে। এছাড়াও ম্যাসেঞ্জারে, টুইটারে এবং লিংকড ইন এও এই ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং দেখা যায়। 

কন্টেট মার্কেটিং (Content Marketing)

কন্টেন্ট মার্কেটিং হলো মূলত কোনো কন্টেন্ট এর সাহায্যে ডিজিটাল মার্কেটিং করা। তা হতে পারে কোনো ব্লগ, ইনফোগ্রাফিক্স অথবা ভিডিও। মূলত প্রায় সকল ডিজিটাল মার্কেটিংই কোনো না কোনো কন্টেট এর সাহাচার্যে করা হয়ে থাকে। তবে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কন্টেন্ট এর সাহাচার্যে মার্কেটিং করা হয়ে থাকে না। বরং এখানে কন্টেন্ট নিজেই সরাসরি মার্কেটিং করে। যেমন একটি ব্লগের পুরো লেখাটি যদি একটি পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারনা দেয় তবে সেটি কন্টেন্ট মার্কেটিং। এই ধারনাটি সরাসরি না দিয়ে পরোক্ষ ভাবেও দিতে পারে। আর এধরনের মার্কেটিং হতে পারে ব্লগ, অডিও, ভিডিও থেকে শুরু করে ইনফোগ্রাফিক্স এর মাধ্যমেও। 

ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর একদম প্রথম দিকের একটি ধরন হলো এই ইমেইল মার্কেটিং। এখনো এটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর দুনিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। তবে অনেকেই মনে করেন ইমেইল মার্কেটং মানেই স্প্যাম (Spam) ইমেইল। বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। বরং গ্রাহকদের প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন সেবা কিংবা অফার সম্পর্কে জানানোর জন্য ইমেইল মার্কেটিং খুবই কার্যকর একটি উপায়। বর্তমানে অনলাইনে কোনো পণ্য বা সেবা কেনার সময় প্রায় প্রতিষ্ঠানই তাদের গ্রাহকদের ইমেইল পাঠানোর অনুমতি চায়। সেই অনুমতি দিলে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানটির নানা সুযোগ সুবিধা ও নতুন পণ্যের ব্যাপারে অবগত করাটাই ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ। এছাড়াও নতুন কোনো গ্রাহক যুক্ত হলে তাকে ইমেইল পাঠানো অথবা পুরাতন গ্রাহকদের বর্ষপুর্তিতে অভিনন্দন জানানোটাও ইমেইল মার্কেটিং এর মধ্যে পড়ে। 

অটোমেটেড মার্কেটিং (Automated Marketing)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম সুবিধা হলো এটির অনেক অংশই স্বয়ংক্রিয়। আর ডিজিটাল মার্কেটিং কে স্বয়ংক্রিয় করার প্রক্রিয়াটিই অটোমেটেড মার্কেটিং। অনেক সময়ই অনেক কাজই পুনরাবৃত্তিমূলক হয়ে পড়ে। আর সে ধরনের কাজকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সম্পন্ন করাটাই অটোমেটেড মার্কেটিং। যেমন ইমেইল মার্কেটিং এর অনেক বড় একটা অংশই হয়ে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ঠিক একই ভাবে কোন ক্রেতা কোন উৎস থেকে আসছে, সে কি কিনছে, ওয়েবসাইটে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণও করা যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর এর সব কিছুই অটোমেটেড মার্কেটিং এর অংশ। 

এসএমএস মার্কেটিং (SMS Marketing)

উপর্যুক্ত সব কয়টি পন্থাই মূলত অনলাইনে সম্পন্ন হলেও অনলাইন ছাড়াও আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং হয়। মূলত এসএমএস মার্কেটিং হলো এসএমএস এর সাহায্যে গ্রাহকদের নানা তথ্য অবহিত করা। যেমন নতুন পণ্যের বিক্রি, নতুন অফার। অনেকটা ইমেইল মার্কেটিং এর মতই।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং পুরো মার্কেটিং জগতেরই বেশ বড় একটা অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর এতটা বড় অংশ হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছে বলেই হয়তো আপনি এই লেখাটি পড়ছেন। কিন্তু কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই উন্নতি, কি কি সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ একে গ্রহণ করছে তাই জানুন বিস্তারিত। 

বৈশ্বিক নাগাল

ডিজিটাল দুনিয়াটা যেহেতু বৈশ্বিক, তাই খুব সহজেই একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দেওয়া যায় সারা বিশ্বে। এর জন্য আলাদা তেমন খরচ করতে হয় না। কিন্তু প্রথাগত বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করতে হলে খরচ অবশ্যই বেড়ে যায় অনেক গুণ। তাই পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে যদি কেউ বিজ্ঞাপন দিতে চান, তাহলে তার ডিজিটাল মার্কেটিংই ভরসা।                      

নির্দিষ্ট স্থানে বিজ্ঞাপন

আপনি যদি প্রথাগত বিজ্ঞাপন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আসলে নির্দিষ্ট স্থানের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়াটা কঠিন। ধরা যাক আপনি ঢাকায় ব্যবসা করেন কিন্তু চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিজ্ঞাপন দিতে চান। এক্ষেত্রে আপনি যদি চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন তবে তা খুব একটা ফলপ্রসু হবে না। কারণ স্থানীয় চ্যানেল বা পত্রিকাগুলোর দর্শক খুব বেশি নয়। তাই চট্টগ্রাম বা যেকোনো অঞ্চলেই বেশি সংখ্যক গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে আপনাকে জাতীয় পর্যায়ের মাধ্যমগুলোরই স্মরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা অথবা টিভি চ্যানেলগুলোর খরচ স্বভাবতই অনেক বেশি। আর এখানেই কাজে আসতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে খুব সহজেই কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া যায় এবং এর জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচেরও তেমন কোনো দরকার নেই। 

স্বল্প খরচ

পুরো লেখাটা জুড়েই পাঠক নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর খরচটা অল্প। অন্তত প্রথাগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এ খরচ অনেকটাই কম। কারণ এখানে একসাথে আগে টাকা দিয়ে অনেক মানুষকে দেখানোর উপায় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গ্রাহক বিজ্ঞাপন দেখলে তবেই শুধু টাকা দেওয়ার। এভাবে শুধু গ্রাহক দেখলে তবেই বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করলে সামগ্রিক খরচটা তুলনামূলক বেশ কমই আসে। 

নির্দিষ্ট গ্রাহক সমাবেশ

নির্দিষ্ট গ্রাহক সমাবেশ ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। সকল সফল উদ্যোক্তাই তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করতে পারেন। একটি ব্যবসার সকল পণ্য অবশ্যই সকল গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে না। যেমন ইলেক্ট্রিক গ্যাজেট এর মতো পণ্য গুলো কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই বেশি জনপ্রিয়। একটু বয়ষ্ক মানুষদের কাছে এসবের গুরুত্ব কম। আবার প্রসাধন জাতীয় পণ্য নারীদের কাছে যতটা আকর্ষণীয় পুরুষদের কাছে অবশ্যই তা নয়। আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ, অঞ্চল অথবা আরো নানা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেখানো যায়। এতে যা হয় বিজ্ঞাপন দেখে গ্রাহকের কেনার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। একে ইংরেজিতে বলে টার্গেটেড মার্কেটিং। সম্ভাব্য গ্রাহক নির্দিষ্ট করার এই প্রক্রিয়াটি অনেক ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি। 

বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতার সুযোগ

সাধারণত প্রায় সকল ব্যবসার ক্ষেত্রেই বাজারের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে। তাদের বিশাল পুঁজি যেকোনো ক্ষেত্রেই তাদের এগিয়ে রাখে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও তাই। প্রথাগত বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা খরচ করে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে যা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। এই অসমতা এড়ানো সম্ভব শুধুমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেই। সঠিক ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করলে ছোট প্রতিষ্ঠানও পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক গ্রাহকদের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পৌছে দিতে পারবে। 

গ্রাহক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ

গ্রাহক সম্পর্কে একটি প্রতিষ্ঠান যত বেশি জানবে এবং যত ভাল ভাবে সেই তথ্যগুলো ব্যবহার করবে, প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের সম্ভাবনা ততই বেশি। কারণ বর্তমান যুগে তথ্যই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর গ্রাহক সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য একটি প্রতিষ্ঠানকে এনে দিতে পারে ব্যাপক সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটি এসব তথ্য কাজে লাগতে পারে নতুন পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে। গ্রাহকেরা কি ধরনের অফার পছন্দ করছে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে গ্রাহক কোন ধরনের পণ্য বেশিক্ষণ যাবত দেখছে, কোন কোন পণ্য এক ঝলক দেখেই সরে যাচ্ছে তার সবই হিসাব রাখা সম্ভব। আর এ সকল তথ্য বিশ্লেষণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে একবিংশ শতাব্দীতে একটি ডিজিটাল মাধ্যম নির্ভর ব্যবসার উন্নতির চাবিকাঠি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধা 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধাগুলোর কারণেই দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আর জনপ্রিয়তাই সমস্যা হয়ে উঠছে অনেক ডিজিটাল মার্কেটারের কাছে। বর্তমানে অতিরিক্ত ডিজিটাল মার্কেটিং এর কারণে বেশিরভাগ গ্রাহকই কিছুটা বিরক্ত। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কিছুটা বেশিই মার্কেটিং করতে যেয়ে পুরো ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টার ওপরই গ্রাহকের মনে একটি বিতৃষ্ণা তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। ফলে ঐ প্রতিষ্ঠান সহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সকল প্রতিষ্ঠানই। 

এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এ এখনো যুক্ত হচ্ছে আরো নানা নতুন নতুন প্রযুক্তি। প্রথাগত বিজ্ঞাপন যেমন স্থিতিশীল একটা বিষয় ডিজিটাল মার্কেটিং ঠিক তার উলটো। এই অস্থিরতার কারণে ডিজিটাল মার্কেটারদের প্রতিনিয়ত তাদের বিজ্ঞাপন নীতিতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে নতুন প্রযুক্তির সাথে, নিয়োগ দিতে হচ্ছে নতুন নতুন কর্মী। সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটিই অস্থিতিশীল। যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এর সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে বাজার থেকে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানই আবার নিজের সীমা ছাড়িয়ে গ্রাহকের অনেক ব্যক্তিগত তথ্যও অনৈতিক ভাবে সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। ফলে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের কেলেংকারি এমনকি তা গড়াচ্ছে মামলা অবধি। ডিজিটাল মার্কেটিং যতই বাড়ছে তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে কমছে গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। এমন নানা অসুবিধার কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বেশ সমালোচনা নিয়মিতই হয়ে থাকে। কিন্তু তবুও এর সুবিধাগুলোর কারণে সারা বিশ্বই ঝুঁকছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর দিকে। 

শেষকথা

বিজ্ঞাপন দুনিয়ার ভবিষ্যৎ যে নিশ্চিত ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর হাতে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেই বর্তমানে পৃথিবীর অনেক নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয় এর ওপর বিশেষায়িত ডিগ্রিও প্রদান করছে। যদিও এই পেশায় কাজ করতে হলে এখনো বিশেষায়িত কোনো ডিগ্রির তেমন কোনো দরকার হয় না। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই পেশায় চাইলে কাজ করতে পারেন আপনিও। তবে প্রতিযোগিতামূলক এই পেশায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই হতে হবে দারুণ দক্ষ ও পরিশ্রমী। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ডিজিটাল মার্কেটিং কে পেশা হিসেবে নেওয়াটা কতটা নিরাপদ?

উত্তরঃ প্রতিটি পেশাতেই কিছুটা ঝুঁকি কিছুটা সাফল্য থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং পেশাটা নতুন হিসেবে এর সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক, ঠিক তেমনই ঝুঁকিও অনেক। তবে কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে এখনই তার আদর্শ সময়। 

২। ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে আমার কোন বিষয়ে দক্ষ হতে হবে?

উত্তরঃ ডিজিটাল মার্কেটিং এর যেই অংশে কাজ করতে চান তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ হতে হবে। যেমন এসইও ম্যানেজার হলে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনার ব্যাপারে দক্ষ হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হলে লাইক, ফলোয়ার ইম্প্রেশন এসবের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

৩। বাংলাদেশে কি ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর বিশেষায়িত ডিগ্রি দেওয়া হয়?

উত্তরঃ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর ডিগ্রি দেওয়া হয় না। তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা টাকার বিনিময়ে কোর্স করান এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেন। 

৪। ডিজিটাল মার্কেটিং এ আয় কেমন?

উত্তরঃ এটি নির্ভর করবে আপনার দক্ষতার ওপর। অনেকে এই খাতে যেমন মাসিক মাত্র কয়েক হাজার টাকা আয় করেন তেমন অনেকে মাসিক লাখ টাকাও আয় করেন। 

তথ্যসূত্রঃ

১। হাবস্পট 

২। ইনভেস্টোপিডিয়া 

৩। মেইলশিম্প 

৪। সিমপ্লিলার্ন 

৫। স্ট্যাটিস্টা 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button