টেকনোলজিমোবাইল ফোনলাইফ স্টাইল

হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায়

বর্তমানে মোবাইল ফোন যেন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক যুগের সাথে তাল মেলাতে হলে এখন অবশ্যই চাই একটি ইলেক্ট্রনিক ডিজিটাল ডিভাইস। আর অধিকাংশ মানুষ সেই ডিভাইস হিসেবে বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোনকেই। কিন্তু মনের ভুলে হোক কিংবা অপরাধির পাল্লায় পড়ে হোক, দৈনিক বিপুল সংখ্যক মোবাইল হারানো যাচ্ছে। মোবাইল ফোন হারানো মানেই বেশ কিছু দিন প্রায় যোগাযোগ বিহীন হয়ে পড়া। তার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে অনেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখেন। তাই হারানো মোবাইল খুঁজে পেতে মানুষের ব্যাকুলতা তেমন অস্বাভাবিক নয়। তবে চলুন জানা যাক কিভাবে খুঁজে পেতে পারেন আপনার হারানো মোবাইলটি। 

সূচিপত্রঃ

জিডি করার মাধ্যমে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়া

অনেকেই মনে করেন জিডি করাটা বেশ ঝামেলাদায়ক এবং এতে কোনো লাভ নেই। বিষয়টি একেবারেই তা নয়। যদি আপনার মোবাইল ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে প্রথম কাজই হলো জিডি করা। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে থানায় জিডি করার মাধ্যমে আপনি পুরো ব্যাপারটিকে নথিভুক্ত করছেন। পরবর্তীতে কোনো ভাবে মোবাইলটি ফেরত পেলে মোবাইলটি যে আপনারই তা প্রমাণ করতে জিডির কপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই সবার আগে জিডি করুন। এক্ষেত্রে যেখান থেকে মোবাইল হারাবে সেখানকার থানাতেই জিডি করতে হবে। পুলিশি সহায়তা পেলে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়।

গুগলের ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ এর মাধ্যমে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়া

গুগলের ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ এর মাধ্যমে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়া

যদি আপনি ডিজিটালি আপনার ঘরে বসেই হারানো মোবাইলটিকে খুঁজে পেতে চান তাহলে এটিই আপনার জন্য সেরা উপায়। গুগল ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচারটি প্রত্যেকটি এন্ড্রয়েড ডিভাইসেই রয়েছে। যেকোনো এন্ড্রয়েড মোবাইল সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে একটি গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করতেই হবে। গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করার সাথে সাথেই ফাইন্ড মাই ডিভাইস ফিচারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। 

‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ চালু আছে কি না নিশ্চিত হোন

‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচারটি যদিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায় তবুও চালু আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া ভাল। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে প্রথমেই চলে যান আপনার মোবাইলের সেটিংস (Settings) অপশনে। সেখানে একটু স্ক্রল করলেই গুগল (Google) নামক অপশন পাবেন। গুগল অপশনে ঢুকে সার্ভিসেস অন দিস ডিভাইস (Services on this device) সেকশনটি পাবেন। সেখান থেকে ফাইন্ড মাই ডিভাইস অপশনটি খুঁজে পাবেন। তাতে ট্যাপ করলেই একটি স্ক্রিন ভেসে উঠবে। এতে সার্ভিসটি চালু আছে কি না তা বুঝতে পারবেন এবং কি কি উপায়ে আপনার মোবাইলটি খুঁজে পাওয়া যাবে তা দেখতে পারবেন। 

যে সকল প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ব্যবহার করতে পারবেন 

‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ সেবাটি যেকোনো প্ল্যাটফর্ম থেকেই ব্যবহার করা যায়। আপনি চাইলে আরেকটি মোবাইল ফোনে ‘Find My Device’ অ্যাপ নামিয়ে নিতে পারেন। অথবা ফোনের ব্রাউজার কিংবা কম্পিউটারের ব্রাউজার থেকে এই সেবাটি নিতে পারেন। Find My Device অ্যাপটি নামাতে চলে যান গুগল প্লে স্টোরে। সেখানই পাবেন অ্যাপটি। ব্রাউজার থেকে ঢুকতে এই লিংকে প্রবেশ করুনঃ  https://www.google.com/android/find । এছাড়া গুগলে সরাসরি ‘Find My Device’ লিখলেও পেয়ে যাবেন লিংকটি। 

মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে হারানো মোবাইল খুঁজে বের করা

যদি আপনার কোনো মোবাইল হারিয়ে যায় এবং সেই মোবাইলটিতে গুগল একাউন্ট সাইন ইন করা থাকে তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে অন্য মোবাইল থেকে হারানো মোবাইলটিকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। অন্য একটি অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইলে প্রথমে আপনার হারানো মোবাইলে থাকা গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করুন। সাইন ইন করার পরে প্লে স্টোর থেকে ‘Find My Device’ অ্যাপটি ইন্সটল (Install) করুন। মোবাইলে অ্যাপটি ‘Find Device’ হিসেবে থাকবে। অ্যাপটি চালু করলে প্রথমেই কোন গুগল একাউন্টের সাহায্যে অ্যাপটি ব্যবহার করতে চান তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। অতঃপর পুনরায় পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাপ থেকে একাউন্টে সাইন ইন করতে হবে। সাইন ইন করার পর নিচের চিত্রের মতো একটি পেজ দেখবেন।অ্যাপের সাহায্যে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায়

এই পেজটিতে মূলত গুগল ম্যাপের সাহায্যে আপনার মোবাইলের লোকেশন দেখানো হবে। যে সকল মোবাইলে এই গুগল একাউন্টটি সাইন ইন করা আছে সে সমস্ত মোবাইলই এখানে দেখাবে। চিত্রের লাল কালি দ্বারা চিহ্নিত অংশে কোন মোবাইলের তথ্য দেখতে চান তা নির্ধারণ করতে পারবেন। যেমন এই চিত্রে কালো রঙের প্রথম ডিভাইসটি হলো ‘Xiaomi Redmi Note 4’ । সাদা রঙের দ্বিতীয় ডিভাইসটি হলো ‘Xiaomi Poco M3’। ধরে নেই আমার প্রথম মোবাইলটি অর্থাৎ Note 4 হারানো গেছে। এই পেজটিতে আমি গুগল ম্যাপের সাহায্যে সহজেই এটি ঠিক কোথায় আছে তা বের করতে পারবো। অতঃপর সেই স্থানে গিয়ে হানা দিলেই মোবাইলটি উদ্ধারের একটি প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই লোকেশন কখনোই একদম সুনিপুণ হয় না। এটি কতটা নিখুঁত হবে তা নির্ভর করবে আপনার মোবাইলের জিপিএস এর মান কেমন তার ওপরে। তাই মোবাইল উদ্ধার করতে চাইলে কিছুটা বিস্তৃত যায়গা জুড়েই খোজ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ‘প্লে সাউন্ড’ ফিচারটি বেশ কাজে আসতে পারে। এ নিয়ে বিস্তারিত পরে উল্লেখ করছি। তবে মোবাইলের লোকেশন দেখা ছাড়াও এ অ্যাপের সাহায্যে তিনটি করণীয় বিষয় রয়েছে। 

১) প্লে সাউন্ড (Play Sound) 

২) সিকিউর ডিভাইস (Secure Device) 

৩) ইরেজ ডিভাইস (Erase Device)

প্লে সাউন্ড

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এর সাহায্যে মূলত মোবাইল থেকে আওয়াজ করা হয়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার হারানো বা চুরি যাওয়া মোবাইলটির রিংটোন ফুল ভলিউমে টানা পাচ মিনিট বাজাতে পারবেন। এক্ষেত্রে যদি ওই মোবাইলটি সাইলেন্ট (Silent) বা ডু নট ডিস্টার্ব (DND- Do not Disturb) মোডেও থাকে তাহলেও শব্দ হবে। আপনি যদি কোনো এলাকায় মোবাইল উদ্ধার করতে যান তাহলে এটি খুবই জরুরী একটি ফিচার। যেহেতু বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে খুজতে হবে তাই কাছাকাছি গিয়ে প্লে সাউন্ড ফিচার চালু করে দিলে মোবাইল খোজাটা সহজ হয়ে যেতে পারে। তবে বিষয়টি বুঝতে পেরে চোরের মোবাইল বন্ধ করে দেয়ার কিছুটা ঝুঁকি এ প্রক্রিয়ায় আছে। যদি বাস, ট্রেন বা লঞ্চে আপনার মোবাইল চুরি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে এই উপায়টি ব্যবহার করে চোরকে ধরতে পারবেন। এছাড়াও যদি বাসার কোনো স্থানে রেখে আর খুঁজে না পান তখন এই উপায়টি কাজে লাগতে পারে। মোবাইল খুঁজে পেলে ‘STOP SOUND’ বাটনে ক্লিক করলেই শব্দ বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা যেই মোবাইল থেকে শব্দ বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন তার পাওয়ার বাটন (Power Button) এ একবার ক্লিক করলেও হবে।

সিকিউর ডিভাইস

অনেকেই মোবাইলে ব্যাক্তিগত অনেক ছবি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি জমা রাখেন। তা হারিয়ে গেলে যেমন সমস্যা, অন্যের হাতে পড়লে আরো বড় সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে গুগল দিয়েছে ‘সিকিউর ডিভাইস’ ফিচার। মোবাইলের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারলে এই ফিচারের সাহায্যে খুব সহজেই মোবাইলকে পুরোপুরি লক করে ফেলা যায়। ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকলে সাথে সাথেই এটি কার্যকরী হয়। ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত না থাকলে যখনই সংযুক্ত হবে তখনই ফিচারটি কার্যকর হবে। ফলে মোবাইলটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। শুধু তাই নয় এই ফিচারের সাহায্যে সহজেই মোবাইলের লক স্ক্রিনে আপনার তরফ থেকে একটি ম্যাসেজ দিয়ে রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০টি বর্ণ লিখতে পারবেন। হারানো মোবাইলটি যতবারই কেউ চালু করবে সে এই ম্যাসেজ দেখবে। একই সাথে আপনার মোবাইল নাম্বারও দিয়ে দিতে পারেন। ফলে কোনো সৎ ব্যাক্তির হাতে পড়লে আপনার মোবাইলটি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যাবে। চাইলে অবশ্য কোনো ম্যাসেজ বা নাম্বার ছাড়াও মোবাইলটি সিকিউর করতে পারবেন।

ইরেজ ডিভাইস

ইরেজ ডিভাইস ফিচারটিকে বলা চলে শেষ সম্বল। যদি মোবাইল উদ্ধারের সকল আশা ত্যাগ করেন তাহলে এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে মোবাইলটিতে থাকা সমস্ত ডাটা ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সাথে মোবাইলে সাইন ইন করা আপনার গুগল একাউন্টটিও মুছে যাবে। ফলে আর কখনোই ফাইন্ড মাইড ডিভাইস এর সাহায্যে এটিকে খুঁজে করতে পারবেন না। তবে এর মাধ্যমে আপনার মোবাইলের স্পর্শকাতর তথ্যাসমূহ অন্যের হাতে পড়া থেকে বিরত থাকবে।

ওয়েবসাইটের সাহায্যে হারানো মোবাইল খুঁজে বের করা 

যদি আপনি আরেকটি মোবাইল যোগাড় করতে বা ‘Find Device’ অ্যাপটি নামাতে অসমর্থ হন তাহলে যেকোনো কম্পিউটার বা মোবাইলের ব্রাউজার থেকেও গুগলের এই পরিষেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন। মোবাইল খুঁজে পেতে প্রবেশ করুনঃ  https://www.google.com/android/find । এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার গুগল একাউন্টটি সাইন ইন করলেই হুবুহু অ্যাপের মতো লে-আউট দেখতে পাবেন। এবং অ্যাপের মতো একই নিয়মে পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। 

মূলত এই তিনটি পরিষেবার মাধ্যমেই ‘Find My Device’ অ্যাপটি আপনার মোবাইল খুঁজে পেতে অথবা মোবাইলের ডাটা সুরক্ষিত করতে আপনাকে সহায়তা করবে। তবে যদি আপনার হারানো মোবাইলে এই অ্যাপটি ইন্সটল করা না থাকে তাহলেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ গুগলের ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ সেবাটি চালু থাকলেই আপনি অন্য মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে আপনার হারানো মোবাইলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

গুগল ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ পরিষেবা ব্যবহারের শর্ত

গুগল ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ সেবাটি চমৎকার হলেও এটি সবসময়ই কার্যকর হবে এমনটি কিন্তু নয়। এই সেবাটি কাজ করতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ হতে হয়। সেগুলো হলোঃ

  • মোবাইলটি চালু থাকতে হবে। 
  • মোবাইলে একই গুগল একাউন্ট সাইন ইন করা থাকতে হবে। 
  • মোবাইল ডাটা অথবা ওয়াই ফাই এর সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। 
  • মোবাইলটি গুগল প্লে’তে দৃশ্যমান হতে হবে। 
  • লোকেশন অর্থাৎ জিপিএস সেবা চালু থাকতে হবে। 
  • সর্বোপরি ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ পরিষেবা সেটিংস থেকে চালু থাকতে হবে। 

অর্থাৎ যদি আপনার হারানো মোবাইল পাওয়া ব্যাক্তি অসৎ ও বুদ্ধিমান হয় তাহলে খুব সহজেই মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায় বন্ধ করে দিতে পারবে। যেমন মোবাইলটি বন্ধ করে রাখলে কোনোভাবেই তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আবার মোবাইলে যদি আপনি স্ক্রিন লক দিয়ে না রাখেন তাহলে সহজেই সে আপনার গুগল একাউন্টটি সেটিংস থেকে রিমুভ করে দিতে পারে। এছাড়াও লোকেশন সার্ভিস সাধারণত কেউই সার্বক্ষণিক চালু রাখে না। কারণ এটি অনেক চার্জ ব্যবহার করে। তবে ঐ ব্যাক্তি যদি মোবাইল থেকে গুগল একাউন্ট মুছে না ফেলে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে তাহলেই আপনি মোবাইলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মোবাইলের অবস্থান জানতে না পারলেও মোবাইলটিকে সিকিউর এবং প্রয়োজনে ইরেজ করে দিতে পারবেন। আর কোনো ভাবে লোকেশন সেবা চালু থাকলে মোবাইল উদ্ধারের বেশ ভাল সম্ভাবনাই রয়েছে।

আইএমইআই (IMEI) এর মাধ্যমে হারানো মোবাইল উদ্ধার

আইএমইআই (IMEI) এর মাধ্যমে হারানো মোবাইল উদ্ধার

আইএমইআই হলো যেকোনো মোবাইল ফোনের পরিচয় দানকারী সংখ্যা। এর পূর্ণরুপ হলো International Mobile Equipment Identity। এটি এমন একটা সংখ্যা যা প্রতিটি মোবাইলের জন্য আলাদা হয়ে থাকে। এই সংখ্যার মাধ্যমে একটি মোবাইলকে অন্য যেকোনো মোবাইল থেকে নিশ্চিত ভাবে আলাদা করা যায়। শুধু তাই নয়, যদি আপনার হারানো বা চুরি যাওয়া মোবাইলটি থেকে আপনার সমস্ত তথ্য মুছে ফেলা হয় এমনকি সিমও পরিবর্তন করা হয় তাহলেও এই নাম্বারটির সাহায্যে মোবাইল খুঁজে বের করা সম্ভব। কারণ ঐ মোবাইলটিতে যেই সিমই ঢোকানো হোক না কেন, সেই সিম যখন তার নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে তখনই সেই সংযোগের মাধ্যমে মোবাইলের IMEI তথ্য সিম কোম্পানির কাছে চলে যাবে; এবং IMEI নাম্বারটিকে যদি আগে থেকে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয় তাহলে মোবাইলটির অবস্থান খুঁজে বের করা যাবে। আইএমইআই নাম্বারকে কালো তালিকাভুক্ত করে চাইলে মোবাইলটিকে ব্লকও করে দেওয়া যেতে পারে। ফলে ঐ মোবাইলের সাহায্যে আর কোনো মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়া যাবে না। অর্থাৎ কথা বলা যাবে না অথবা ডাটা ব্যবহার করা যাবে না। কার্যত মোবাইলটি অকার্যকর হয়ে পড়বে। বর্তমানে দেশে অবৈধ মোবাইলের ব্যবহার দমনে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।

তবে আইএমআই এর মাধ্যমে মোবাইল উদ্ধার করার পদ্ধতিটির একটি সমস্যা রয়েছে। সমস্যাটি হলো এটি যার তার কাজ নয়। এভাবে মোবাইল উদ্ধার করতে হলে সরাসরি সিম কোম্পানি ও পুলিশের সহায়তা লাগবে। সাধারণত মোবাইল হারানো বা চুরি হওয়ার ঘটনায় কখনই এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কোনো মামলায় হারানো মোবাইল অত্যন্ত জরুরী আলামত হলে আদালতের নির্দেশে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাই ব্যাক্তিগত ভাবে আইএমইআই এর সাহায্যে মোবাইল খুঁজে পাওয়ার আশা না করাই ভাল। 

সতর্কবাণী

মোবাইল খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়। প্লে স্টোরে সার্চ দিলেই নানা রকম আইএমইআই ট্র্যাকার অ্যাপ পাওয়া যায়। এগুলো মূলত হ্যাকারদের বানানো ভুয়া অ্যাপ ছাড়া কিছুই নয়। অ্যাপগুলোর রিভিউ সেকশনে ঢুকলেই হ্যাকারের ভুয়া গুণগাণ অথবা আসল রিভিউয়ারের তিক্ত অভিজ্ঞতা চোখে পড়বে। পূর্বেই বলেই আইএমইআই এর সাহায্যে মোবাইল খোজা যার তার কাজ নয়। তাই এ ধরনের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড না করাই ভাল। এতে কোনো লাভ তো হবেই না, উলটো আপনার বর্তমান মোবাইলও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। 

একই ভাবে আরো অনেক অ্যাপ রয়েছে যেগুলো আইএমইআই ব্যবহারের দাবি না করলেও মূলত গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস এর অনুরুপেই বানানো। এ ধরনের অ্যাপ গুগলের ন্যায় একই পদ্ধতি অনুসরণ করেই কাজ করে। কিন্তু থার্ড পার্টি এসব অ্যাপ ব্যবহারের চেয়ে গুগলের ‘Find Device’ অ্যাপের উপর নির্ভর করা অনেক যৌক্তিক বলে মনে করি। তবে আপনি যেই কোম্পানির মোবাইল ব্যবহার করেন সেই কোম্পানি যদি এ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে তবে তা গ্রহণ করা যৌক্তিক। যেমন স্যামসাং ব্যবহারকারীরা ‘Find My Mobile’ নামক গুগলের মতো স্যামসাং এর অনুরুপ সেবা ব্যবহার করতে পারেন।

শেষকথা

মোবাইল ফোন একটি মূল্যবান বস্তু। সুরক্ষার খাতিরে নতুন মোবাইল ফোন কেনার পরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ। এটি এক দিকে যেমন দামী আবার অন্য দিকে অনেকের কাছে অনেক স্মৃতিজড়িত শখের বস্তু। শখের বস্তুটি হারিয়ে গেলে মানুষ খোঁজার চেষ্টা করবে এমনটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে অসৎ লোকেরা প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত। তাই উপরে বর্ণিত পদ্ধতি সব সময় নাও কাজ করতে পারে। কিন্তু হারানো বা চোরাই মোবাইল অনেকে কেনার পরে রিসেট না দিয়েও ব্যবহার করে এমন উদাহরণ কম নয়। তেমনটা হলে আপনার ভাগ্য বেশ ভালই বলা চলে। আশা করি উপরিউক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি আপনার হারানো মোবাইলটি খুঁজে বের করতে পারবেন। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) হারানো মোবাইলের জন্য জিডি করতে কি কোনো টাকার প্রয়োজন?

উত্তরঃ না, আইনত কোনো টাকার প্রয়োজন নেই।

২) আমার হারানো মোবাইলে যেই গুগল একাউন্ট সাইন ইন করা তার পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি, এক্ষেত্রে কি করণীয়?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে একাউন্টটি খোলার সময় যেই সিমটি ব্যবহার করেছিলেন তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সিমটি যদি মোবাইলের সাথে হারিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে প্রথমে সিমটি উদ্ধার করুন। জাতীয় পরিচয় পত্র সহ নিকটস্থ সার্ভিস সেন্টার থেকে সিম উদ্ধার করতে পারবেন। অতঃপর সিমের সাহায্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে বাকি কাজ সম্পন্ন করুন।

৩) পুলিশি সহায়তা ছাড়া কি কোনো ভাবে আইএমইআই দ্বারা মোবাইল খুঁজে পাবো?

উত্তরঃ না, পুলিশি সহায়তা ছাড়া সাধারণ নাগরিকের পক্ষে এটি সম্ভব নয়।

৪) আমার মোবাইলের আইএমইআই নাম্বারটি আমার মনে নেই। এজন্য জিডি করতে পারছি না, কি করণীয়?

উত্তরঃ মোবাইলের বক্স খুঁজে দেখুন। বক্সের নিচে, পাশে বা ভিতরে অবশ্যই আইএমইআই উল্লেখ করা থাকবে। অথবা  *#০৬# ডায়াল করে জানতে পারবেন।

৫) ফাইন্ড মাই ডিভাইস সেবা ব্যবহার করে মোবাইল ‘ইরেজ’ করলে কি মেমোরি কার্ডের ডাটাও মুছে যাবে?

উত্তরঃ এ প্রক্রিয়ায় মেমোরি কার্ডের ডাটা মুছে যেতে পারে, নাও যেতে পারে।

৬) গুগলের সাহায্যে আমার হারানো মোবাইলের ডাটা রিকভার করার কি কোনো উপায় আছে?

উত্তরঃ আপনার মোবাইলে যদি গুগল ড্রাইভ, গুগল কিপ, গুগল ফোটোজ ইত্যাদির ব্যাকআপ অপশন চালু করা থাকে তাহলে সেখানে জমা হওয়া ডাটা রিকভার করতে পারবেন। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

৭) আমি ফাইন্ড মাই ডিভাইস সেবা ব্যবহার করে আমার মোবাইলটি খোঁজার চেষ্টা করলে কি অপর ব্যাক্তি টের পাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, টের পাবে। হারানো মোবাইলটিতেও এ সংক্রান্ত একটি নোটিফিকেশন যাবে। তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগে থেকে সেভ হয়ে থাকা লোকেশন হিস্ট্রি দেখলে নোটিফিকেশন যাবে না। 

৮) মোবাইল বন্ধ করে দিলে কি কোনো ভাবে মোবাইলটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব?

উত্তরঃ না। ফাইন্ড মাই ডিভাইস বা আইএমইআই কোনো পদ্ধতির সাহায্যেই বন্ধ মোবাইল খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। তবে বন্ধ হওয়ার আগে প্রাপ্ত সর্বশেষ ডাটা দেখতে পারবেন। 

 

তথ্যসূত্রঃ

১) https://support.google.com

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button