টেকনোলজিমোবাইল ফোন

নতুন ফোন কেনার পরে করণীয়

নতুন স্মার্টফোন কেনার পরের মূহুর্তটা সকলের কাছেই বেশ আনন্দের। আপনি হয়ত প্রথমবারের মতো স্মার্টফোন কিনলেন, তাই ঠিক জানেন না এখন স্মার্টফোনটির সাথে কি কি করতে হবে৷ কিংবা আগে ফোন ব্যবহার করলেও পুরাতন ফোনের মতো করে কিভাবে নতুন ফোনটিকে সাজাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এছাড়াও আপনি স্মার্টফোন কেনার পরে আরো অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই আপনার জন্য আজকের এই লেখাতে নতুন স্মার্টফোন কেনার পরে যেসব কাজ করবেন তা আলোচনা করা হলো।

সূচিপত্রঃ

মোবাইলের বাক্সটি ভালোমতো যাচাই করুন

মোবাইলের বাক্সটি ভালোমতো যাচাই করুন 

পছন্দের মোবাইল ফোনটি যদি অনলাইন থেকে কিনে থাকেন সেক্ষেত্রে ডেলিভারি পাওয়ার পর অবশ্যই বাক্সটির ভেতরে ভালো করে যাচাই করে নিন। ডেলিভারির সময় বাক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা এসব খুঁটিয়ে দেখুন। ইকমার্স সাইটগুলোতে এধরনের ত্রুটি থাকলে ফেরত দেওয়ার সুবিধা থাকে। তাই ব্যবহার শুরুর করার পূর্বেই এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। অনলাইন থেকে না কিনলে, ফোনের বাক্সটিতে অন্যান্য জিনিসপত্র যেমন চার্জার, ইয়ারফোন এসব আছে কিনা চেক করে নিন। স্মার্টফোনটি অফিশিয়াল শো রুম থেকে না কেনা হলে অনেক সময় দোকানদাররা এসব জিনিস আলাদাভাবে বিক্রি করার জন্য রেখে দেয়৷ এজন্য তা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিৎ। এছাড়া ওয়ারেন্টি কার্ড এবং অন্যান্য কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা তা ভালো মতো যাচাই করে নিন।

ফোনটি পুরোপুরি চার্জ করুন

নতুন ফোন কেনার পর সেটিকে আপনার সুবিধামতো ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে ফোনটি নিয়ে বেশ সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। ফোনে চার্জ না থাকলে সেসব কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই নতুন ফোন সেটআপ এর কাজ শুরুর পূর্বে ফোনটিকে পুরোপুরি চার্জ করে নিন। এতে কাজের মাঝে চার্জ শেষ হওয়া জনিত সমস্যায় পড়তে হবেনা। 

ওয়াইফাই সংযুক্ত করুন

নতুন ফোনে আপনার প্রয়োজনীয় মোবাইল অ্যাপগুলো ইনস্টল করতে হবে, বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেট এর ডাটা প্যাকেজ দিয়ে এটি করা বেশ ব্যায়বহুল হবে এবং ইন্টারনেটের স্পিড ও কম হতে পারে৷ তাই ওয়াইফাই লাইনের সাথে সংযুক্ত করে নেওয়াটাই ভালো হবে। এর ফলে আপনার অতটা খরচ হবেনা, দ্রুত অ্যাপ ও ফাইলগুলো ডাউনলোড করা সম্ভব হবে এবং ডাউনলোড এর সময় ডাটা শেষ হয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধার সৃষ্টি হবে না।

গুগল অ্যাকাউন্ট এর সাথে সংযুক্ত করুন

গুগল অ্যাকাউন্ট এর সাথে সংযুক্ত করুন

এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফোন অন করলেই গুগলে সাইন ইন করার অপশন আসে। এটিকে স্কিপ না করে গুগল অ্যাকাউন্টে আপনার গুগল একাউন্টের ইমেইল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড সাইন ইন করে নিন। কারন স্কিপ করলেও পরবর্তীতে ফোনে গুগল প্লেস্টোর ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড এবং অন্যান্য কাজে গুগল একাউন্টে একসময় সাইন ইন করতেই হবে। এছাড়াও, গুগল একাউন্টের সাথে সংযুক্ত করলেই আপনি গুগল ড্রাইভ, গুগল ফটোস এ আগের ফোন থেকে যা যা আপলোড করে রেখেছিলেন সেসবের এক্সেস পেয়ে যাবেন।

অ্যাপ আপডেট করুন

নতুন ফোনে যেসব অ্যাপ আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে সেগুলো প্রায় সময়ই বেশ পুরাতন হয়ে থাকে। যেকোন অ্যাপের পুরাতন ভার্সনে বিভিন্ন ধরনের ফিচার কম থাকতে পারে। তাই গুগল প্লেস্টোর কিংবা অন্যান্য সোর্স থেকে সেসব অ্যাপের লেটেস্ট ভার্সন ইনস্টল করে নিন বা আপডেট করুন। এতে সেই অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং অ্যাপগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন।

অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করুন

নতুন ফোন কেনার পর এতে ফোন কোম্পানী কর্তৃক আগে থেকেই কিছু ফাইল কিংবা অ্যাপ দেওয়া থাকে। সেগুলোর কিছু কিছু আপনার প্রয়োজন হতে পারে, তবে অধিকাংশই আপনার কোন কাজে লাগবেনা। যেমন, গুগল ড্রাইভ / গুগল ফটোস থাকতে, কেউই সাধারণত ফোনের কোম্পানীর আলাদা অ্যাপ স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করেনা কারন সেগুলো গুগল অ্যাপগুলোর সমমানের নয়। যেহেতু এই অ্যাপগুলি ব্যবহার হবেনা তাই আপনার ফোনের মেমরি অকারনে দখল করে থাকবে। তাই অপ্রয়োজনীয় এসব অ্যাপ ডিলিট করে দিন। 

ব্লোটওয়্যার রিমুভ করুন

ব্লোটওয়্যার হচ্ছে কিছু বাণিজ্যিক অ্যাপ যেটা ফোন কোম্পানী আপনার ফোনে আগে থেকেই ইনস্টল করে রাখে। এই অ্যাপগুলো আপনার কোনো কাজে লাগেনা, বরং এগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান থেকে ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ করে এবং মেমরি দখল করে থাকে। তাই নতুন ফোন কেনার পর এসব ব্লোটওয়্যার গুলোকে আনইনস্টল করে দিন। যদি ফোনের পলিসির কারনে অ্যাপগুলোকে আনইনস্টল না করা যায়, তাহলে সেগুলো সেটিংস এ গিয়ে ডিজেবল করে দিন।

ফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

ফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

আপনার ফোনের তথ্যাবলী আপনার একান্তই ব্যক্তিগত, তাই এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অতি প্রয়োজনীয়। ফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফোনের সেটিংস এ সিকিউরিটি অপশনে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক, পাসওয়ার্ড সিস্টেম বা প্যাটার্ন লক সেটআপ করুন। এর ফলে আপনি বাদে অন্য কেউ আপনার ফোন হাতে পেলেও ফোন ওপেন করতে পারবেনা এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নিরাপদে থাকবে। এছাড়াও আপনি চাইলে আলাদা আলাদা অ্যাপ যেমন মেসেঞ্জার, ফটো গ্যালারি এসবের জন্য অ্যাপলক ব্যবহার করতে পারেন, এরফলে কেউ আপনার ফোন অন্য কোন কাজে ব্যবহারের জন্য ওপেন করলেও এসব নির্দিস্ট অ্যাপে ঢুকতে পারবেনা। এতে ব্যক্তিগত মেসেজ, ফটো ইত্যাদি নিরাপদ থাকবে। 

প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করুন

নতুন ফোন কেনার পর তাতে আপনার প্রয়োজনীয় সকল অ্যাপ থাকবেনা। তাই নিজের প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো গুগল প্লেস্টোর বা অ্যাপস্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিন। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যে গুগল প্লেস্টোর বা এরকম বিশ্বস্ত সোর্স ছাড়া অন্য কোন সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। অবিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে এর সাথে ফোনে ভাইরাস প্রবেশ করার সুযোগ থাকে। 

পুরাতন ফোনের ফাইল ট্রান্সফার করুন

যদি আপনার এর আগেও স্মার্টফোন থেকে থাকে, তাহলে পুরাতন ফোনটি ভিন্ন ভাবে কাজে লাগানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় অনেক ফাইল আপনার নতুন স্মার্টফোনে প্রয়োজন হবে। যেমন কন্ট্যাক্ট লিস্ট, বা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা ভিডিও। এগুলো কোন ফাইল শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার করে নতুন ফোনে নিয়ে আসা যায়। তবে তা বেশ সময়স্বাপেক্ষ হবে কারন আলাদা আলাদা করে নির্বাচন করে নতুন ফোনে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ক্লোন-ইট বা শেয়ার-ইট ধরনের ক্লোনিং অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে আগের ফোনটির সকল ডাটাই নতুন ফোনে নিয়ে আসতে পারবেন। এর ফলে আপনার ফোন নতুন হলেও আগের ফোনের সব তথ্যাদি চলে আসবে এবং তা আপনার জন্য পুরোপুরিভাবে সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযোগী হয়ে যাবে।

ভালো মানের ফোন কভার ব্যবহার করুন

ভালো মানের ফোন কভার ব্যবহার করুনআপনার নতুন স্মার্টফোনটি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না। তাই ফোনে যাতে কোনরকম দাগ না পড়ে তাই অবশ্যই ফোনের জন্য ভালোমানের একটি ব্যাক কভার ব্যবহার করুন। ফোনের বিভিন্ন মডেল এর জন্য আলাদা আলাদা ব্যাককভার বাজারে পাওয়া যায়। ফোনের ডিসপ্লে যাতে সুরক্ষিত থাকে তাই ফোনের উপর গ্লাস প্রটেক্টর লাগিয়ে নিন। এর ফলে ফোনটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে হয়ত প্রটেক্টরটি ফেটে যাবে যা সহজেই কম খরচেই পরিবর্তন করা সম্ভব, কিন্তু ফোনের দামী ডিসপ্লে এর ফলে রক্ষা পাবে৷ এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় ফোনের ক্যামেরা ফোনের বডির থেকে একটু বারতি থাকে। এক্ষেত্রে সুরক্ষার জন্য ক্যামেরা প্রটেক্টর ব্যাবহার করুন।

শেষকথা

নতুন স্মার্টফোন কেনার পর সে স্মার্টফোনটি নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী ব্যবহারের জন্য কিছু কাজ করতে হয়৷ অনেকেই তা বুঝে উঠেন না যার ফলে ফোনের সর্বোচ্চ সুবিধা পান না। আজকের এ লেখাটি থেকে নতুন স্মার্টফোন কেনার পর কি কি করণীয় তা সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন এবং তা আপনার কাজে লাগবে, এমনটি কামনা করছি। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১)  নতুন ফোন কেনার পর কতক্ষণ চার্জ দিতে হয়? 

উত্তরঃ সাধারন ভাবে ফোনের ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে যতক্ষন সময় নেয় ঠিক ততক্ষনই চার্জ দিতে হবে। ফোনকে কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া উচিৎ নয়, এতে ফোনের পারফর্মেন্স এ প্রভাব পড়ে। আগে যখন নিকেল এর তৈরি ব্যাটারি ব্যবহার হতো তখন প্রথমবার ব্যবহারের পূর্বে ৮-১০ ঘন্টা চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন পড়তো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ ফোনের ব্যাটারিগুলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি; তাই এগুলোতে এত দীর্ঘসময় চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। 

২) পুরাতন ফোনের কনট্যাক্ট লিস্ট নতুন ফোনে কিভাবে ট্রান্সফার করবো?

উত্তরঃ পুরাতন ফোনে সেভ করা ফোন নাম্বারগুলো নতুন ফোনে নিতে সেই কনট্যাক্টগুলোকে সিলেক্ট করুন এবং Share as V-Card এ ক্লিক করুন৷ V-Card হিসেবে ব্লুটুথ বা অন্য কোন  মাধ্যমে নতুন ফোনে শেয়ার করলেই আপনার নতুন স্নার্টফোনটিতে সকল কনট্যাক্ট চলে আসবে। এছাড়াও পুরাতন ফোনে গুগল একাউন্ট লগইন থাকলে এবং সেখানে যদি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে তাহলে নতুন ফোনে সেই একাউন্ট লগইন করলে ব্যাকাপ ফাইল আপনাআপনি নতুন ফোনে চলে আসবে।

৩) ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ এর জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক কিভাবে সেট করবো?

উত্তরঃ ফোনের সেটিংস অপশনে গিয়ে অ্যাপ লক লেখা বারটির এর উপর ক্লিক করুন। সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকের অপশন পেয়ে যাবেন। যদি অ্যাপ লক অপশনটি খুঁজে না পান সেক্ষেত্রে সেটিংস এর উপরে সার্চ বারে অ্যাপ লক লিখে সার্চ দিলেই চলে আসবে।

৪) ব্লোটওয়্যার কি পুরোপুরিভাবে আনইনস্টল করে ডিলিট করা যাবে?

উত্তরঃ ফোনের নির্মান পলিসির কারনে কিছু ব্লোটওয়্যার আনইনস্টল বা ডিলিট করা যায়না৷ এসত্ত্বেও তা ডিলিট করতে হলে ফোন রুট করতে হবে। এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি এবং রুট করলে আপনার ফোনটি আর ওয়ারেন্টি সার্ভিসের জন্য গ্রহণযোগ্য থাকবে না৷ তাই নতুন স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এটি না করাই ভালো হবে৷ 

৫) নতুন স্মার্টফোন এ যেসব অ্যাপে সাইন ইন করতে বলা হয় সেগুলো কি নিরাপদ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সেসব অ্যাপ নিরাপদ। তবে সেসব অ্যাপ তেমন কোন কাজে আসেনা। এগুলো ফোনে ফোন কোম্পানী কর্তৃক ইনস্টল করা থাকে এবং আপনাকে সাইন-ইন করতে বলে শুধুমাত্র যাতে কোম্পানীটি বুঝতে পারে এই ফোনটি এখন বিক্রি হওয়ার পর ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে শুধু এই তথ্য কোম্পানীকে জানানোর জন্য আপনার ফোনের মেমরি নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো রাখার কোন দরকার নেই, সেগুলো আনইনস্টল / ডিজেবল করে দিন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button