কম্পিউটারকম্পিউটিংটেকনোলজি

কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেখানে কম্পিউটার আমাদের নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন, সেই কম্পিউটার এর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এই সময়ের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। কখনো ব্যবহারকারীর অসতর্কতা কিংবা প্রযুক্তিগত কারনে ভাইরাস দ্বারা কম্পিউটার আক্রান্ত হতেই পারে৷ আজকের এ লেখাতে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো৷ 

ভাইরাস শনাক্তকরণ

যেকোন রোগের চিকিৎসা করার আগে যেমন সবার আগে রোগটি চিহ্নিত করতে হয়, তেমনি কম্পিউটার কে ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে আগে ভাইরাসকে শনাক্ত করতে হবে। অনেক সময়েই কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও ইউজার বুঝতে পারেন না৷ ফলে ভাইরাস কম্পিউটার এর অন্যান্য আরো অনেক বেশি অ্যাপ ও ফাইলের এক্সেস পেয়ে যায়, যার ফলে ইউজারের আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যায়। কিছু সাধারন লক্ষন দ্বারা কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বুঝা যায়৷ যদি আপনার কম্পিউটার এ এসব লক্ষনের কোনোটি দেখা যায়, তবে আপনার দ্রুত ভাইরাস স্ক্যান করে নিশ্চিত হয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে ভাইরাস আপনার ডিভাইসের তেমন ক্ষতি করার আগেই আপনি তা নিরাপদ করতে পারেন। যেমন কোন ওয়েবসাইটকে অসতর্কতাবশত অ্যাড শো করার জন্য পারমিশন দিয়ে দিলে তারা ওই ওয়েবসাইতে থাকার সময় আপনাকে বিভিন্ন পপ আপ অ্যাড দেখাতে পারে, যা ঠিক ভাইরাস এর কারনে নয়। আপনি পারমিশন অফ করে দিলেই কিংবা অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এসব লক্ষন দেখা গেলে আপনার মনে ভাইরাস নিয়ে অবশ্যই সন্দেহ জাগা উচিত। সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য খুব কম্পিউটার একদম সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সনের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে স্ক্যান করাবেন। পুরনো অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে ভাইরাস স্ক্যান করলে তা আপনার ডিভাইসে থাকা ভাইরাসটিকে শনাক্ত করতে পারবেনা, কারন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে। ভাইরাস স্ক্যান করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে আপনার কম্পিউটারটি ঠিক কোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে ও কতটুকু বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলোর পেইড ভার্সন ব্যবহার করে এই ভাইরাস স্ক্যানটি করতে পারেন, সেগুলো ভাইরাস শনাক্তকরনে অনেক বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। 

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গেলে করণীয়

যদি স্ক্যান করার পর আপনি নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনার ডিভাইসে ভাইরাস রয়েছে, তখন আপনার নিজের নিরাপত্তার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিছু কাজ করতে হবে, যাতে ভাইরাসটির কবল থেকে আপনার ডিভাইসটিকে মুক্ত করার আগ অব্ধি এটি আপনার আর কোন ক্ষতি সাধন করতে না পারে। 

  • যেহেতু অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারটি ইতিমধ্যেই আপনি ইনস্টল করে নিয়েছেন, তাই আর ইন্টারনেটের প্রয়োজন হবেনা এখন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিভাইসের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দিন ও অ্যারোপ্লেন মুড অন করুন৷ এরফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ভাইরাস ছড়ায় তা নতুন করে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 
  • আপনার কম্পিউটারটি “Safe Mood” এ রিস্টার্ট দিন। সেফ মুড হচ্ছে মূলত কম্পিউটারের মাত্র কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করে সেফভাবে চালানোর জন্য একটি সিস্টেম। এতে বেশিরভাগ অ্যাপ অকার্যকর থাকে বিধায় ভাইরাস যুক্ত অ্যাপটিও চালু হয়ে ক্ষতি করতে পারেনা। সেফ মুডে নিতে হলে আপনার প্রথমে আপনার কম্পিউটারটিকে বন্ধ করে এরপর আবার অন করতে হবে। যখন স্ক্রিনে লাইট জ্বলবে, তখন F8 বাটনটি প্রেস করতে হবে যার ফলে Advanced Boot Options এর মেন্যু আপনার সামনে শো করবে। সেখান থেকে ” সেফ মুড উইথ নেটওয়ার্কিং” এর অপশনটি আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে। এতে ডিভাইসটি সেফ মুডে চলে যাবে। 
  • সকল ধরনের টেম্পোরারি ফাইল ডিলিট করে দিন। অর্থাৎ আপনার ডিভাইসের মেমরিতে থাকা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কুকিস ও অন্যান্য টেম্পোরারি ফাইল ডিলিট করে মেমরি ক্লিন করুন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এরকম টেম্পোরারি ফাইল আকারে ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। তাই এরকম মেমরি ক্লিন আপ করলে হয়ত টেম্পোরারি ফাইলের সাথে ভাইরাসটিও ডিলিট হয়ে যাবে। 
  • এবার আপনার অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারটি অন করে পুরো ডিভাইসে ভাইরাস স্ক্যান করুন। এতে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাইরাস শনাক্ত হবে। তা অ্যান্টি ভাইরাসের মাধ্যমে ডিলিট বা নিস্ক্রিয় করে দিন। 
  • যদি ভাইরাস ডিলিট হয়ে যায়, তখন আপনি সেফ মুড অফ করে স্বাভাবিকভাবেই আপনার কম্পিউটারটি আবারো রিস্টার্ট দিয়ে ব্যবহার শুরু করতে পারেন।
  • ভাইরাস রিমুভ হওয়ার আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমটি নতুন করে সেট-আপ করে নেওয়াটাই ভালো হবে। অর্থাৎ উইন্ডোজ ১০ বা যেটিই আপনি ব্যবহার করে থাকেন তা নতুন করে ইনস্টল করুন ও সেট-আপ করুন। ভাইরাস থেকে বাঁচতে লেটেস্ট ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত।
  • আপনার কম্পিউটার পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে আপনার ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট সহ সবকিছুর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এসব একাউন্ট নিরাপদ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন৷ 
  • আপনার ডিভাইসের সকল সফটওয়্যার, ব্রাউজার আপডেট করে লেটেস্ট ভার্সনটি ব্যবহার করুন। এগুলো ক্রমাগত আপডেট আনার মাধ্যমে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে থাকে।

এভাবেই আপনি আপনার ডিভাইস থেকে কোন ভাইরাসকে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহজেই রিমুভ করতে পারেন। তবে ঠিক কিভাবে এই ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করলো তা খুজে বের করা ও ভবিষ্যতে যাতে একইভাবে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। যদি এর সোর্স হয়ে থাকে কোন ওয়েবসাইট বা কোন ইনফেক্টেড ইউএসবি ড্রাইভ, সেটি আর ব্যবহার না করা বা ভাইরাসমুক্ত করে এরপরেই ব্যবহার করাই উচিত হবে। 

কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে যা করণীয়

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গেলে কিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যবস্থা নিতে নিতে আপনার কোন ক্ষতি ততক্ষনে হয়ে যেতে পারে, তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো ভাইরাস দ্বারা যাতে আক্রান্ত না হতে হয় সে ব্যবস্থা করা। ডিভাইস ব্যবহারকালীন সময়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

  • ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকা। কেউ কোন সন্দেহজনক লিংক দিলে তা ওপেন করবেন না। হয়ত সেই লিংকে প্রবেশ করার সাথেই সাথেই ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। 
  • নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ছাড়া সাধারন ওয়েবসাইট থেকে কোন ধরনের অ্যাপ বা ফাইল ডাউনলোড করবেন না। কারন অনেক ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ বা ফাইলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অবস্থাতেই ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে থাকে।
  • কোন ইউএসবি ড্রাইভ যেমন পেনড্রাইভ, মেমরি কার্ড ইত্যাদি ডিভাইসে প্রবেশ করালে তা ওপেন করার আগে কিংবা কোন এক্সেস দেওয়ার আগে তা অ্যান্টি ভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নিতে হবে। 
  • বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা সূত্র ছাড়া কেউ যদি ইমেইলে কোন ফাইল সেন্ড করে তা ওপেন করা উচিত করা হবে না। বিশ্বব্যাপী ছড়ানো ভাইরাসের একটি বড় অংশ ইমেইল এটাচমেন্ট এর মাধ্যমেই প্রবেশ করে থাকে।
  • যেকোন অ্যাপকে কোন পারমিশন দেওয়ার আগে তার ম্যানুয়াল ভালো করে পড়ে নিবেন। যদি নিরাপদ মনে হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই পারমিশন দিবেন। যেমন আপনি যদি কোন ফটো এডিটিং অ্যাপ ডাউনলোড করে থাকেন, সাধারনভাবে এটির আপনার ফটো গ্যালারির এক্সেস চাওয়া ছাড়া অন্য কিছুর এক্সেস চেয়ে পারমিশন চাওয়ার কথা নয়। তাই এমন অ্যাপ যদি আপনার ডিভাইসের কন্ট্যাক্ট সহ অনেক ধরনের এক্সেস চায় তা অবশ্যই সন্দেহজনক এবং সেক্ষেত্রে আপনি এই পারমিশন গুলো দিবেন না বা অ্যাপটি ব্যবহার করবেন না।
  • পাব্লিক নেটওয়ার্ক এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন ভালোমানের ভিপিএন ব্যবহার করুন। এ ধরনের ভিপিএন ম্যালওয়ার ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রবেশ করতে চাওয়া ভাইরাস থেকে আপনার ডিভাইসকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • কোন কারন না থাকলেও নিয়মিত আপনার ডিভাইসটিকে স্ক্যান করবেন। এতে আপনার অজান্তে কোন ভাইরাস প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকলে শনাক্ত হয়ে যাবে এবং আপনি তা রিমুভ কর‍তে সমর্থ হবেন। 
  • বিশ্বস্ত ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করুন ( যেমন গুগল ক্রোম )। যদি সাধারন ব্রাউজার ব্যবহার করেন যার সিকিউরিটি নিয়ে সন্দেহ আছে তা আপনার ডিভাইসে ভাইরাস প্রবেশ করার অন্যতম কারন হতে পারে। 
  • ডিভাইসের সকল অ্যাপ বা সফটওয়্যার এর আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করুন। এতে পুরাতন সাধারন ভাইরাসগুলো আর কোন ক্ষতি করে উঠতে পারেনা। 
  • ব্যাকআপ স্টোরেজ রেডি রাখুন। ভাইরাসের আক্রমনে যদি আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি বা ডকুমেন্ট মুছেও যায় যাতে সেই ব্যাক আপ স্টোরেজ থেকে তা আবারো পুনরুদ্ধার করা যায়।

উপরোক্ত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করআর মাধ্যমে ভাইরাসের আক্রমন হতে আপনার ডিভাইসটিকে আপনি নিরাপদ রাখতে পারবেন। ফলে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং অনেক ধরনের ক্ষতি ও ঝামেলার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। 

শেষকথা

প্রযুক্তির যেমন অনেক সুফল আমরা পাচ্ছি, তেমনি এর কারনে কিছু নতুন সমস্যার ও সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। যার একটি উদাহরন হলো এই কম্পিউটার ভাইরাস। এ লেখাতে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচতে যা যা করণীয় এবং আক্রান্ত হয়ে গেলে কি ব্যবস্থা নিতে হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় পড়লে এ পরামর্শগুলো আপনার কাজে লাগবে, এমনটাই কামনা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও কি ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে?

উত্তরঃ হ্যাঁ। ইন্টারনেট ছাড়াও ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। আপনি যদি কোন ভাইরাস ইনফেক্টেড ইউএসবি ড্রাইভ প্রবেশ করেন কিংবা কোন ভাইরাসযুক্ত ফাইল কারো ডিভাইস থেকে আপনার ডিভাইসে শেয়ার করেন, সেক্ষেত্রে ভাইরাসটিও প্রবেশ করে আপনার ডিভাইসের ক্ষতিসাধন করে থাকে। 

কতদিন পরপর কম্পিউটার স্ক্যান করানো উচিৎ?

উত্তরঃ এর কোন নির্দিস্ট ধরাবাধা নিয়ম নেই। নিয়মিত ই স্ক্যান করাতে পারলে ভালো এতে ভাইরাস যদি প্রবেশ করেও থাকে আপনি ভুলবশত পারমিশন বা এক্সেস দিয়ে ফেলার আগেই বা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা শনাক্ত করে ফেলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। নিয়মিত না করলেও প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক বা দুইবার ভালো মানের এন্টিভাইরাস দিয়ে আপনার ভাইরাস স্ক্যান অবশ্যই করা উচিৎ।

যদি ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরেও ডিলিট না হয় তবে কি করবো?

উত্তরঃ যদি ভাইরাসটি ডিলিট না হয় তবে আপনার অ্যান্টি ভাইরাসটি হয়ত সেই ভাইরাসটিকে ধ্বংস করার জন্য উপযুক্ত না। এক্ষেত্রে এন্টিভাইরাসটির লেটেস্ট ভার্সন ব্যবহার করতে হবে। যদি তাও না হয় তবে অন্য কোন কোম্পানীর অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে দেখতে হবে। কিছুতেই সমাধান না হলে কোন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞকেই দেখানো ভালো, যার এ সংক্রান্ত গভীর জ্ঞান রয়েছে।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button