কম্পিউটারকম্পিউটিংটেকনোলজি

কম্পিউটার ভাইরাস কি? এর লক্ষন ও যেভাবে ছড়ায়

বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। আর এই যুগে কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলে ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমন। আজকের এ লেখাত কম্পিউটার ভাইরাস ও এর সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ 

সূচিপত্রঃ

কম্পিউটার ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস

তথ্য প্রযুক্তির বিশ্বের ভাইরাস এর সাথে অণুজীব ভাইরাসের অনেক মিল থাকলেও এই কম্পিউটার ভাইরাস কোন জীবিত কিছু নয়৷ কম্পিউটার ভাইরাস মূলত কোডিং এর মাধ্যমে বানানো একটি প্রোগ্রাম, যা কোন ফাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে অনুমতি ছাড়াই আপনার ডিভাইসে ঢুকে আপনার ডিভাইস ও তথ্যের ক্ষতিসাধন করতে এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে৷ জৈবিক ভাইরাসের যেমন পোষক দেহ এর দরকার হয় তেমনি কম্পিউটার এর ভাইরাস এর কোন ফাইল, অ্যাপ বা এরকম কোন রূপেই আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে হয়। এটি ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই বা অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে কম্পিউটার এর সিস্টেমের অন্যান্য প্রোগ্রাম গুলোকে মডিফাই করে ফেলে। ফলে কম্পিউটারটি আক্রান্ত হয়; এর ফলে কম্পিউটারটির অন্যান্য সেসব প্রোগ্রাম এবং ডাটা ভাইরাস এর নিয়ন্ত্রণে এসে পড়ে। আর ঠিক তখনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ

কম্পিউটারের ভাইরাসের কোন নির্দিস্ট সংখ্যক প্রকারভেদ নেই। যেই ব্যক্তি ভাইরাসটি কোডিং এর মাধ্যমে তৈরি করছেন সে এই ভাইরাসটির নানারূপ দিতে পারেন, নানানভাবে তা তৈরি করে পারেন। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব ভাইরাস তৈরি ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে মোটাদাগে ভাইরাস যেধরনের ক্ষতিসাধন করে থাকে তার উপর ভিত্তি করে ভাইরাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ভাইরাস এর মধ্যে ৯০% ই এসব ধরনের যা দ্বারা কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহারকারীরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot sector virus)

এই ধরনের ভাইরাস গুলো আপনি যখন কম্পিউটার চালু করেন তখন এক্সেস পেয়ে থাকে এবং আপনার কম্পিউটার এর নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়৷ যদি কোন ভাইরাস থাকা ইউএসবি ড্রাইভ যেমন পেনড্রাইভ বা অন্য কিছু সংযুক্ত করা হয় তখন এ ধরনের ভাইরাস গুলো প্রবেশ করে থাকে।

ওয়েব স্ক্রিপ্টিং ভাইরাস (Web scripting virus)

এ ধরনের ভাইরাস গুলো এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে যেন তা বিভিন্ন ওয়েবপেজের কোডকে ব্রেক করে আপনাকে অটোমটিকলি ভিন্ন একটি ওয়েবপেজে নিয়ে যায়। যদি আপনি ওই ধরনের কোন ওয়েবপেজকে কোন এক্সেস দিয়ে ফেলেন কিংবা আপনার ব্রাউজার যদি সুরক্ষিত না হয়, তাহলে ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করে।

ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস (Browser hijacker virus)

আপনি যখন ব্রাউজার ব্যবহার করে কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন বা কোন ফাইল ডাউনলোড করেন, সেখানে বিশেষভাবে প্রোগ্রাম করা থাকায় সেই ফাইল গুলোর সাথে ভাইরাস এক্সটেনশন বা প্লাগইন হিসেবে আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। এরপর তা আপনার ব্রাউজার কে প্রভাবিত করে আপনাকে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে এবং আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আপনাকে অন্য ওয়েবসাইট এ নিয়ে যায়৷ সেসব ওয়েবসাইটে নিয়ে গেলে সেখান থেকে আরো ভাইরাস প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে৷

রেসিডেন্ট ভাইরাস (Resident virus)

এই ভাইরাসটি দ্বারাই অধিকাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারী আক্রান্ত হয়ে থাকে৷ এসব ভাইরাস কোন ফাইল আকারে আপনার ডিভাইস এর মেমোরিতে কোনভাবে প্রবেশ করে। এটি আপনার ডিভাইস এর অপারেটিং সিস্টেমকে যেকোন সময় আক্রান্ত করে সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করতে পারে৷

ডাইরেক্ট একশন ভাইরাস (Direct action virus)

এ ধরনের ভাইরাসগুলো তখনই কাজ করে যখন আপনি সেই সমস্যাযুক্ত ফাইলগুলো ওপেন করেন বা অসচেতনতা বশত কোন পারমিশন দিয়ে ফেলেন। এছাড়া এই ভাইরাসগুলো সাধারন ফাইল হিসেবে পড়ে থাকে, নিজে থেকে কিছু করতে পারেনা। তবে ওপেন করে ফেললে তা সরাসরি সবকিছুর নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। 

পলিমরফিক ভাইরাস (Polymorphic virus)

এই ভাইরাসগুলো আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করার পর প্রতিনিয়ত এর কোডের ধরন বদলাতে থাকে। ফলে ফ্রি এন্টিভাইরাস দ্বারা এটিকে প্রতিহত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। 

ম্যাক্রো ভাইরাস (Macro virus)

অন্যান্য সফটওয়্যার তৈরিতে যে ম্যাক্রো কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয় এই ধরনের ভাইরাস তৈরিতেও একই ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে তা অন্যান্য ফাইল বা সফটওয়্যার এর মতো সহজেই প্রবেশ করে এরপর তার আসল রূপ দেখায়। কোন ইমেইল এ পাঠানো আক্রান্ত ফাইল ওপেন করলে এ ধরনের ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।

ম্যালওয়্যার ভাইরাস (Malware virus)

এ ধরনের ভাইরাস গুলো আপনার সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করার জন্য অর্থাৎ ডিভাইসে থাকা ফাইল বা অন্যান্য জরুরি তথ্যাবলি নস্ট করে ফেলার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে৷ 

ট্রোজান হর্স (Trojan horse virus)

এটি বিখ্যাত ও খুবই কমন একটি ভাইরাস যা দ্বারা ব্যবহারকারীরা আক্রান্ত হয়ে থাকে৷ এই ভাইরাসগুলো আপনার ডিভাইসকে আক্রান্ত করে এর তথ্যাবলি চুরি করা ও ডিভাইস এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। 

কম্পিউটার ভাইরাস যেভাবে প্রবেশ করে

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তথ্যের বিভিন্ন আদান প্রদান সবই এখন ডিভাইস কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে৷ এরকমই কোন সাধারন ফাইল এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে আদান প্রদান, নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড এর সময়েই সাথে প্রবেশ করে ফেলে ক্ষতিকর ভাইরাস। যেসব উপায়ে ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করে থাকে সেগুলো হলোঃ

  • ইন্টারনেটের মাধ্যমেঃ ইন্টারনেট এখন তথ্য আদান প্রদানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তাই ভাইরাস ছড়াবার জন্যও অসাধু প্রোগ্রামাররা এই মাধ্যমটিকেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। আপনি কোন ভাইরাসযুক্ত অ্যাপ ডাউনলোড করলে, কোন ভাইরাস ইনফেক্টেড ফাইল ওপেন করলে বা ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করলে সেখান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। ৭০% এর বেশি ভাইরাস এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ডিভাইসগুলোতে প্রবেশ করে থাকে।
  • ইউএসবি ড্রাইভের মাধ্যমেঃ ভাইরাস আক্রান্ত ইউএসবি ড্রাইভ থেকে কোন তথ্য কম্পিউটারে রাখতে গেলে এর সাথে ভাইরাস ও প্রবেশ করতে পারে। আমরা পেনড্রাইভ, মেমরি কার্ড, অন্যান্য হার্ডড্রাইভ এসব দ্বারা এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে বিভিন্ন ফাইল আদান প্রদান করে থাকি৷ তখন সেসব ফাইলের সাথে ভাইরাস ও প্রবেশ করে এবং আপনার ডিভাইসটিকে আক্রান্ত করে। যদি ফাইল কপি নাও করা হয় তবুও আক্রান্ত ইউএসবি ড্রাইভ ডিভাইসে সংযুক্ত করলেই অটোমেটিক ভাবেই ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। 
  • ইমেইল এটাচমেন্টের মাধ্যমেঃ ইমেইল এটাচমেন্ট এর মাধ্যমেও আপনার ডিভাইসে ভাইরাস প্রবেশ করে থাকে। বিশ্বব্যাপী হ্যাকার রা বা অন্যান্য অসাধু প্রোগ্রামাররা ইমেইলের মাধ্যমে ভাইরাস পাঠিয়ে ফাঁদ পেতে থাকে। ইমেইল এ এটাচমেন্ট হিসেবে পাঠানো কোন সাধারন নামের ফাইল ( যেমন মনে হতে পারে কারো চাকরির জন্য পাঠানো জীবনবৃত্তান্ত, কিংবা কোন বই এর ডক ফাইল ) এ ক্লিক করলেই এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভাইরাসটি আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে ফেলে। এটি আপনার জিমেইল একাউন্ট সহ সবকিছুর এক্সেস নিয়ে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিতে পারে৷ ইউটিউবার বা অন্যান্যদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক হওয়ার জন্য এসব ভাইরাস ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনার কম্পিউটারের কন্ট্রোল নেওয়ায় আপনার জিমেইল ব্যবহার করে বাকিদের এই ভাইরাস পাঠানো হতে পারে।
  • ডাউনলোডেড ফাইল দিয়েঃ ইন্টারনেট এ কোন বিশ্বস্ত সোর্স ( যেমনঃ গুগল প্লেস্টোর ) বাদ দিয়ে অন্য কোন ওয়েবসাইট থেকে কোন অ্যাপ্লিকেশন, মুভি, গেমস, ফটো ইত্যাদি ডাউনলোড করলে সম্ভাবনা থাকে যে সেই অ্যাপে ভাইরাস থাকতে পারে। যখনই আপনি সে ফাইলটি ডাউনলোড করে নেন তখন তা আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে এবং ক্ষতিসাধন করার সুযোগ পায়।
  • স্ক্যাম লিংকের মাধ্যমেঃ এ ধরনের স্ক্যাম লিংকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াবার বিষয়গুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যাপকহারে ঘটে চলছে যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারে এখনো সকলে অত দক্ষ না। এরা নানান প্রলোভন দেখিয়ে যেমন আপনি লটারি জিতে নিয়েছেন, এত টাকা পাবেন ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে কোন আসল ওয়েবসাইট এর মতন দেখতে নকল ওয়েবসাইট বানিয়ে আপনাকে লিংক সেন্ড করে। আপনি লোভে পড়ে বা কৌতূহল বশত সে লিংকে ক্লিক করলেই বা কোনরকম পারমিশন দিলেই ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। তাই আপনার কখনোই অবিশ্বস্ত সূত্র থেকে এধরনের প্রলোভনমূলক স্ক্যাম লিংকে প্রবেশ করাট উচিত হবেনা। 

ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন

  • আপনার হোমপেজে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ করতে পারেন। যেমন আপনার হোমপেজে আলাদা কোন ওয়েবসাইট আইকন এসে পড়তে পারে, ডিফাল্ট ওয়েব ব্রাউজার চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে, ইত্যাদি৷ এছাড়াও ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনি তা রিসেট করলেও ঠিক হবেনা। 
  • কম্পিউটার ঘন ঘন ক্র‍্যাশ করলে সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার কারনে তা আপনার অপারেটিং সিস্টেমে নানাবিধ সমস্যা তৈরি করছে যার ফলে আপনার ডিভাইসটি বারবার আটকে যাচ্ছে বা ক্র‍্যাশ করছে। 
  • কম্পিউটার আগের চেয়ে অনেক ধীরগতির হয়ে যাবে। এটি সকল ভাইরাসের ক্ষেত্রে ঘটেনা তবে সাধারনভাবে ইন্টারনেট থেকে যেসব ভাইরাস ছড়ায় সেগুলোর ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারন লক্ষন যে আপনার কম্পিউটারটি তখন স্লো হয়ে যাবে। মোবাইল সহ সকল ডিভাইসই এ ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এর পারফর্মেন্সে কিছুট প্রভাব পড়েই আর তা বুঝা যায় এর গতি কমে যাওয়া দেখে৷ 
  • আপনার অজান্তেই আপনার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ হয়ে গেলে বা কিছুক্ষন পর পর ই পাসওয়ার্ড রিসেট এর নোটিফিকেশন দেখালে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। ম্যালওয়্যার প্রবেশ করলে এমনটা দেখা যায়। 
  • আপনার উইন্ডোজে বারবার কোন অ্যাড বা অস্বাভাবিক কিছু নোটিফিকেশন পপ-আপ করবে এবং আপনার স্ক্রিনে জায়গা দখল করে আপনাকে তা দেখতে বাধ্য করবে। সেক্ষেত্রে আপনার ডিভাইসটিতে ভাইরাস প্রবেশ করেছে৷ এসব পপ-আপ অ্যাডগুলো কোন নির্দিস্ট ওয়েবসাইটে না হয়ে সাধারন অবস্থাতেও আপনার হোমপেজে শো করতে পারে এবং আপনার কাজের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এটি ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারগুলোর একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ।
  • নিজে নিজে কোন অ্যাপ চালু বা বন্ধ হয়ে যাওয়া। ভাইরাস প্রবেশ করে আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিলে তা যেকোন অ্যাপ আপনার অনুমতি ছাড়াই বন্ধ করে দিতে পারে বা চালু করতে পারে। তাই এরকম কিছু দেখা গেলে ডিভাইসটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

ভাইরাস যা যা ক্ষতি করে

১) ভাইরাস মূলত একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম৷ এটি আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে অন্যান্য সফটওয়্যার গুলোকে মডিফাই করে ফেলে ও নিজের কিছু কোড তাতে ঢুকিয়ে ফেলে। এর ফলে সেই প্রোগ্রামটি কারপ্ট অর্থাৎ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় ও ভাইরাসের উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে। ফলে আপনি আর সেই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার কমান্ড অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ অ্যাপটি আর আপনার কাজের উপযুক্ত থাকবে না।

২) ভাইরাস এর একটি বিশেষ ধরন, স্পাইওয়্যার, আপনার সকল তথ্য ভাইরাসটি যে তৈরি করেছে তার নিকট পৌছে দিতে পারে। আপনার জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড, ব্যাংক একাউন্ট এর ডিটেইলস সহ আপনার ডিভাইস থেকে অনেক তথ্যাদি এভাবে ভাইরাসের কারনে চুরি হয়ে যেতে পারে। এসব তথ্যাদি ব্যবহার করে অসাধু গোষ্ঠী আপনার ক্ষতিসাধন করতে পারে।

৩) আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়ার কারনে এবং বারবার ক্র‍্যাশ করার কারনে আপনি ডিভাইসটি আর ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন না। ট্রোজান হর্স জাতীয় ভাইরাস যা থেকে ডিভাইসকে মুক্ত করা অতটা সহজ নয়, তার জন্য হয়ত আপনার ডিভাইসটিকেই ত্যাগ করতে হতে পারে, কারন অমন অবস্থায় ডিভাইসটি ব্যবহার করতে আর আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। ফলে আপনার সেই ডিভাইসটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকলো না।

৪) ভাইরাস আপনার ডিভাইসে আপনার গুরুত্বপূর্ন ফাইলকে ড্যামেজ করতে পারে। এতে আপনার অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগত অনেক তথ্য মুছে যেতে পারে বা নস্ট হয়ে যেতে পারে, যার কারনে আপনি বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

৫) ভাইরাস আপনাকে বিভিন্ন পপ আপ বিজ্ঞাপন হুট করে প্রদর্শন করে এবং স্ক্রিন থেকে তা সরতে দেয়না, আপনাকে জোর করে তা রাখতে বাধ্য করে৷ এসব অ্যাড যেমন আপনার কাজে বিঘ্ন ঘটায় এবং বিরক্ত করে, তেমনি অশালীন অ্যাড হলে তা আপনার জন্য বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির ও সৃস্টি করতে পারে।

কুখ্যাত কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

I LOVE YOU Virus

I LOVE YOU Virusনামটি বেশ রোমান্টিক হলেও এই আই লাভ ইউ ভাইরাসটি হলো এখন অব্ধি তৈরি করা সবচেয়ে বেশি ছড়ানো ও ক্ষতিকর একটি ভাইরাস । এটি ইমেইল এর মাধ্যমে ছড়িয়েছিলো৷ একটি ফাইল যেটার শিরোনাম দেখে মনে হবে প্রেমপত্র, তা ইমেইলের মাধ্যমে সেন্ড করা হয়েছিলো এবং তা ক্লিক করার সাথে সাথে এই ভাইরাস এক্টিভেট হয়ে ওই ব্যক্তির কনট্যাক্ট লিস্টে যতজন ছিলো সবাইকে এই ইমেইল সেন্ড করে দিয়েছিলো। এই ভাইরাসটি ১ কোটি কম্পিউটারকে আক্রমন করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং ব্যাপক ক্ষতি করেছিলো।

Klez Virus

Klez Virus২০০১ সালে তৈরি করা ক্লেজ ভাইরাসটি ওই সময়ের সারাবিশ্বের ৭.২% কম্পিউটারকে আক্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং বিশ্বব্যাপী মোট ২০ বিলিওন ডলারের ক্ষতি করেছিলো৷ এটিও ইমেইলের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিলো। 

WannaCry Virus

WannaCry Virus২০১৭ সালে ওয়ানা ক্রাই ভাইরাসটি ২ লক্ষ কম্পিউটারকে আক্রমন করে এবং ৪ বিলিওন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করে। এই ভাইরাসটি কম্পিউটারে প্রবেশ করে পুরো কম্পিউটারটির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতো এবং একপ্রকার ভার্চুয়ালি জিম্মি করে ফেলতো, কারন ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারটির কোন ডাটা বা ফাইল কিছুই আর এক্সেস করা যেতো না। যেসব কম্পিউটার কিছুটা পুরানো প্রযুক্তির ছিলো সেগুলোই এই ভাইরাসটি সহজে আক্রান্ত হয়েছিলো। তাই বিশেষজ্ঞরা সবসময় কম্পিউটার সিস্টেমকে আপডেটেড রাখতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

Mydoom Virus

Mydoom Virusএখন অব্ধি তৈরি করা সবচেয়ে বেশি ছড়ানো ভাইরাস মনে করা হয় এই Mydoom Virus কে। ২০০৪ সালে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসটি ৫২ বিলিওন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে। এটি মূলত ফিশিং ইমেইল সেন্ড করে অর্থাৎ ভুয়া ফেসবুক বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের মতো নকল একটি পেজ বানিয়ে সেন্ড করে, যা আসল ভেবে ব্যবহার করতে গিয়ে ইউজাররা ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যান। এটি কম্পিউটারে প্রবেশ করে ব্যবহারকারীর কনট্যাক্ট লিস্ট এর গনহারে ইমেইল পাঠায়। এই ভাইরাসটি এখনো আছে, যা বিশ্বের ১% ফিশিং ইমেইল সেন্ড হওয়ার জন্য দায়ী৷ তবে এখনকার এন্টি ভাইরাসগুলো দিয়ে স্ক্যান করিয়ে এবং সতর্ক থাকলে এই ভাইরাসটি থেকে আপনার ডিভাইসকে মুক্ত রাখা সম্ভব

শেষকথা

প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন আমাদের জীবন যাপন অনেক বেশি সহজ হয়েছে, তেমনি সৃস্টি হয়েছে নতুন কিছু সমস্যার। তবে সতর্ক ও সচেতন থাকলে এধরনের সমস্যাগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে নিরাপদে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব।  আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে ভাইরাস সম্পর্কে আপনারা ধারনা পেয়েছেন এবং এটি কিভাবে ছড়ায় ও কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। এই তথ্যগুলো আপনার কম্পিউটার ব্যবহারে সাহায্য করবে, এমনটাই কামনা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

আমার ডিভাইসটি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবো?

উত্তরঃ যদি আপনার ডিভাইসটিতে উপরে উল্লিখিত লক্ষনগুলোর কিছু দেখতে পান বা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেন, সেক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নিবেন। এন্টিভাইরাস অবশ্যই আপডেটেড এবং লেটেস্ট ভার্সনের হতে হবে৷ তাহলে স্ক্যান করলে ভাইরাসটি শনাক্ত হবে এমনটা আশা করা যায় এবং এতে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন।

ইমেইল এর মাধ্যমে আসা ভাইরাস কিভাবে বুঝবো? 

উত্তরঃ কোন অপরিচিত ইমেইল একাউন্ট থেকে ইমেইল আসলে সেই ইমেইলের কোন ফাইল ওপেন করবেন না নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। এছাড়াও যদি সেই ইমেইল সমস্যাজনক হয়, গুগল নিজেই সেই ইমেইলের এর উপর কিছু সময় পর সতর্কবার্তা দিয়ে দেয়, যে কিছু লোক রিপোর্ট করছে এই মেইলটিতে ভাইরাস থাকতে পারে। এধরনের সতর্কবার্তা যুক্ত ইমেইল কোনকারনেই ওপেন করবেন না।

ভাইরাস থেকে বাঁচতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি? 

উত্তরঃ কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখতে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে এমন উপায়গুলো যেমন ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইউএসবি ড্রাইভ এর মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন, ফাইল শেয়ারের পূর্বে বা ওপেন করার পূর্বে স্ক্যান করে নিবেন। এছাড়াও নির্দিস্ট সময় পরপর লেটেস্ট ভার্সনের অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা ডিভাইস এর সকল ফাইল স্ক্যান করে নিবেন

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button