টেকনোলজিমোবাইল ফোন

ভালো মোবাইল ফোন চেনার উপায়

নতুন ফোন কেনার জন্য আপনাকে আগাম অভিনন্দন। বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন এর ব্যবহার এত বেশি যে বাজারে এর কয়েকশত ধরনের মডেল রয়েছে। তাই অনেকেই ফোন কেনার সময় কি কি বিষয় খেয়াল রাখবেন অর্থাৎ আপনার জন্য কোন ধরনের ফোন ভালো হবে তা ভেবে পান না বা দোটানায় ভুগেন। আজকের এ লেখাতে তাই আপনার জন্য ভালো মোবাইল চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আপনার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করুন

আপনি নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্যেই নতুন মোবাইল ফোন কিনছেন। কারন, এখন স্মার্টফোন শুধুমাত্র ফোনে কথা বলতেই নয়, বরং আরো হাজারো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। একেকটি স্মার্টফোন একেক ধরনের কাজ ভালোভাবে করতে পারে। তাই আপনি ঠিক কি কাজের জন্য বিশেষায়িত মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন তা নিয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে। যেমন আপনি যদি খুব বেশি গেমস খেলতে চান বা ভারী কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে প্রসেসর ভালো এমন মোবাইল কিনতে হবে, আবার যদি ভালো ছবি তুলতে চান তবে ক্যামেরা ভালো এরকম মোবাইল কিনতে হবে। আপনার চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর আপনি মোবাইল কেনার সময় নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলো মিলিয়ে নিয়ে সে অনুযায়ী মোবাইল কিনতে পারবেন। 

প্রসেসর

মোবাইল প্রসেসর

ভালো মোবাইল ফোনের অন্যতম প্রধান একটি দিক হচ্ছে প্রসেসর। কারন প্রসেসর হচ্ছে একটি স্মার্টফোনের প্রধান চালিকাশক্তি৷ যদি প্রসেসর উন্নত না হয়, তবে আপনি স্মার্টফোন এ বেশি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না এবং ব্যবহার করতে করতে ফোনটি ধীরগতির হয়ে যাবে। যারা মোবাইলে বিভিন্ন ভারী অ্যাপের কাজ করেন যেমন ফটো/ভিডিও এডিট করা, গেমস খেলা ইত্যাদি তাদের অবশ্যই প্রসেসর ভালো হতে হবে, নইলে এসব কাজ করতে গেলে প্রচুর ল্যাগ করবে অর্থাৎ আটকে যাবে। এর ফলে আপনার কাজ বাধাপ্রাপ্ত হবে যা বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়াবে। তাই ফোন অনেক বেশি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ফোন কেনার সময় এর প্রসেসর যাতে ভালো হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ এর উপরের প্রসেসরগুলোকে ভালো প্রসেসর বলা যেতে পারে। স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮, কিরিন ৯৮৫, কিরিন ৯০০০ ইত্যাদি বর্তমানকালের ভালো প্রসেসর, সামনে আরো ভালো প্রসেসর আসবে। আপনার বাজেট অনুযায়ী যে প্রসেসর টি ভালো হবে সেটিই নির্বাচন করুন। 

অপারেটিং সিস্টেম

আপনার স্মার্টফোনটি একটি ছোট আকৃতির কম্পিউটার। তাই কম্পিউটারের মতোই মোবাইলটি যে সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হবে সেটিই হলো অপারেটিং সিস্টেম৷ আপনার মোবাইল দিয়ে আপনি কি কি করতে পারবেন, মোবাইলে কি কি ফাংশন থাকবে, কি কি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন এসবকিছুই নির্ধারণ করবে অপারেটিং সিস্টেম৷ বিশ্বের অধিকাংশ মোবাইলেই অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয় গুগলের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। অ্যাপল কোম্পানীর ফোনগুলোতে ব্যবহৃত হয় আইওএস অপারেটিং সিস্টেম। এই দুইটি অপারেটিং সিস্টেম বাদে অন্য অপারেটিং সিস্টেম এর মোবাইল ব্যবহার আপনার জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে কারন তাহলে হয়ত অন্য কোন মোবাইলের সাথে তথ্য আদান প্রদান সহ কিছু কাজে বিঘ্ন ঘটবে। তাই মোবাইল কেনার সময় এন্ড্রয়েড বা আইওএস এ দুটির যেকোন একটিকেই নির্বাচন করুন। তবে অপারেটিং সিস্টেম প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকে।

স্মার্টফোন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে হলে লেটেস্ট ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত৷ তাই মোবাইল কেনার সময় অপারেটিং সিস্টেম যাতে একদম লেটেস্ট ভার্সন বা অন্তত লেটেস্ট ভার্সনের এক বা দুই ভার্সন পুরাতন সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে এমন মোবাইল নির্বাচন করুন। এক বা দুই ভার্সন পুরাতন হলে চিন্তার কোন কারন নেই, সকল মোবাইলেই অপারেটিং সিস্টেম এর আপডেট আসে তা ডাউনলোড করে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে নেওয়া যায়৷ তবে বেশি পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম যেমন কিটক্যাট, ললিপপ ভার্সনের হলে কিনবেন না। কারন সেক্ষেত্রে, আপডেট করতে করতে অপারেটিং সিস্টেম এর লেটেস্ট ভার্সনে আসতে অনেক সময় লেগে যাবে। আবার একটি ফোন নির্দিস্ট এন্ড্রয়েড ভার্সন অব্ধিই ঠিকমতো কাজ করতে পারে তাই আপডেট নাও আসতে পারে। সেজন্য অপারেটিং সিস্টেম লেটেস্ট ভার্সনের এমন মোবাইল কিনুন। 

ব্যাটারি লাইফ

ব্যাটারি লাইফ

যাদের প্রায় সারাদিন ই বাইরে থাকতে হয় অর্থাৎ চার্জ দেওয়ার খুব একটা সুযোগ হয়না, তাদের ফোনের চার্জ যদি দ্রুত ফুরিয়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায় তবে ব্যাপক সমস্যার কারন হতে পারে। কিংবা আপনি যদি ফোন বেশি সময় ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও বারবার চার্জ দেওয়া বেশ অসুবিধাজনক। সেজন্য ফোন কেনার আগে ব্যাটারির ক্ষমতা কিরকম এবং এর চার্জার দিয়ে কত দ্রুত চার্জ করা যায় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। ৩০০০ থেকে ৬০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার পার আওয়ার ক্ষমতার ব্যাটারিসমৃদ্ধ ফোন বাজারে পাওয়া যায়৷ আপনি যদি ফোন বেশি সময় ধরে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার কমপক্ষে ৫০০০ mAh ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে একবার ফুল চার্জ করে নিলে সারাদিন ফোন চালাতে পারবেন। তবে যদি আরো বেশিমাত্রায় ফোন ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে আরো বেশি ক্ষমতার ব্যাটারিসমৃদ্ধ ফোন কিনতে করতে হবে।

র‍্যাম 

র‍্যাম আপনার মোবাইলের মেমরির ই একটা অংশ, এর পূর্ণরূপ Random Access Memory. এটি স্বল্পমেয়াদী মেমরি অর্থাৎ শুধুমাত্র কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য ধারণ করে। যে ফোনের র‍্যাম এর ক্যাপাসিটি যত বেশি সে ফোন ব্যবহার করে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন এবং একসাথে বেশি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে দুই জিবি থেকে ৬ জিবি বা আরো বেশি মেমরি ক্যাপাসিটির র‍্যামের ফোন বাজারে পাওয়া যায়। সিস্টেম অ্যাপ গুলোই র‍্যামের এক থেকে দেড় জিবি স্পেস দখল করে ফেলে, বাকি অংশটুকু দিয়ে অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। তাই র‍্যামের মেমরি ক্যাপাসিটি বেশি হতে হবে। অনেক বড় সাইজের অ্যাপ আছে যা কম র‍্যামের ফোনে কাজই করবে না। বিশেষত আপনি যদি গেম খেলতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই বেশি র‍্যামের স্মার্টফোন কিনতে হবে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, র‍্যাম বেশি হলেই ফোনের কার্যকারিতা বেশি, এটি পুরোপুরি সত্য নয়৷ ফোনের প্রসেসর কিরকম তার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এখানে৷ তবে এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে নামিদামী ব্রান্ডগুলোর যেটিতে র‍্যাম বেশি সেটিতে প্রসেসর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সেই অনুযায়ীই আপডেটেড থাকে, তাই বেশি র‍্যামযুক্ত ফোনের কার্যকারিতা বেশিই হয়। এই তুলনাটি আবার এন্ড্রয়েডের বদলে আইফোনের ক্ষেত্রে করলে হবেনা। একটি ২ জিবি র‍্যামের আইফোনের কার্যকারিতা এন্ড্রয়েডের ৬ জিবি র‍্যামের ফোনের সমান ও হতে পারে। আইফোন তাদের র‍্যামের মেমরি ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি না করে অন্যভাবে ফোনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে থাকে। তাই আপনি যদি ভালো একটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন কিনতে চান, সেক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন জিবি র‍্যামযুক্ত মোবাইল ফোন কিনুন। এর কম হলে আপনাকে বিভিন্ন কাজে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। 

স্টোরেজ

স্টোরেজ

আপনার মোবাইলে নানান রকম তথ্য জমা রাখার প্রয়োজন হবে৷ ছবি, ভিডিও, অন্যান্য ডকুমেন্টস রাখতে আপনার মোবাইল মেমরিতে ভালো পরিমানে স্পেস দরকার। তাই মোবাইল নির্বাচনের সময় মোবাইলের স্টোরেজ যেন বেশি হয় তা খেয়াল রাখবেন। কারন স্টোরেজ যত বেশি হবে, তত বেশি ফাইল আপনি মোবাইল মেমরিতে রাখতে পারবেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারের জন্য ইন্টার্নাল স্টোরেজ কমপক্ষে ৩২ জিবি এরকম মোবাইল নির্বাচন করুন। এছাড়াও ৬৪,১২৮ জিবি স্টোরেজের মোবাইল ও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। যদি আপনার আরো বেশি মেমরির প্রয়োজন হয় তাহলে এক্সটার্নাল মেমরি কার্ড সংযুক্ত করা যায় এমন মোবাইল কিনুন। তবে বর্তমানে ইন্টার্নাল স্টোরেজ এত বেশি হওয়ায় অনেক মোবাইলেই আলাদা করে মেমরি কার্ড যুক্ত করার অপশন থাকেনা। আপনার যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি স্টোরেজসম্পন্ন মোবাইল কিনুন। কারন, মোবাইল দ্রুত গতিতে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে চালাতে হলে অবশ্যই আপনাকে স্টোরেজের কিছু অংশ সবসময় খালি রাখতে হবে। 

ক্যামেরা

যদি আপনি স্মার্টফোনকে ছবি তোলা বা ভিডিও করার কাজে ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে উন্নত মানের ক্যামেরাসমৃদ্ধ স্মার্টফোন কিনুন। কোন স্মার্টফোনের ক্যামেরা মেগাপিক্সেল যত বেশি সেই ক্যামেরার রেজুলেশন তত ভালো। অর্থাৎ ছবি স্পষ্ট হবে এবং ডিটেইলস সহ সুন্দরভাবে ছবি তোলা এবং ভিডিও করা যাবে। যদি আপনি প্রফেশনাল হন এবং মোবাইল ফটোগ্রাফি করতে চান সেক্ষেত্রে কোন ফোনের ক্যামেরাতে সেটিংস বেশি অর্থাৎ ফোকাস, শাটারস্পিড সহ অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ন্ত্রনের সুযোগসুবিধা বেশি রয়েছে সে অনুযায়ী স্মার্টফোন নির্বাচন করুন। ভালোমানের ছবি তোলার জন্য মোবাইলের ক্যামেরা কমপক্ষে ৪৮ মেগাপিক্সেল এর হলে ভালো হয়। 

শেষকথা

বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যাপক চাহিদার কারনে বাজারে মোবাইলের ফোনের মডেল এর কোন অভাব নেই। আপনার যেমন টা দরকার তেমন মোবাইল ই পাওয়া যাবে। আজকের এ লেখাটি থেকে মোবাইল কেনার সময় আপনার জন্য পারফেক্ট মোবাইলটি বাছাই করার ক্ষেত্রে কি খেয়াল রাখতে হবে তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন, এমনটাই কামনা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) অফিসিয়াল না আনঅফিসিয়াল কোন ধরণের মোবাইল কিনবো?

উত্তরঃ অফিসিয়াল মোবাইল কেনাই সবসময় ভালো। এতে আপনি মোবাইলের ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, সমস্যা হলে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারবেন পাশাপাশি আরো অনেক সুবিধা পাবেন। আনঅফিসিয়াল মোবাইল নকল এবং ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার আশংকা থাকে তাই এসব ফোন কেনা ঝুঁকিপূর্ণ। 

২) ফোন অফিসিয়াল কিনা কিভাবে চেক করবো? 

উত্তরঃ অফিসিয়াল ফোন অবশ্যই বিআরটিসিতে নিবন্ধিত থাকবে৷ ফোন অফিসিয়াল কিনা জানার জন্য মোবাইলটি থেকে KYD এরপর স্পেস দিয়ে ১৫ সংখ্যার মোবাইলের IMEI নাম্বারট লিখে 16002 নম্বরে এসএমএস পাঠান। বিআরটিসি হতে ফিরতি এসএমএস এ আপনাকে অবহিত করা হবে যে ফোনটি অফিসিয়াল নাকি আনঅফিসিয়াল। 

৩) ফোনের ওয়ারেন্টি কতদিনের হয়ে থাকে?

উত্তরঃ এটি ফোনের মডেলের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারনত এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে যদি ফোনের কিছু নষ্ট হয় কোন কারনে, সেটি কোম্পানী নিজ খরচেই ঠিক করে দিবে।।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button