অনলাইন ব্যাংকিংব্যাংকিং

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

আজকাল নগদ টাকার লেনদেন অনেক কমে গেছে। কারণ যাই হোক না কেন মানুষ এখন নগদ টাকা রাখার চেয়ে ব্যাংকে টাকা রাখতেই ভরসা পায়। ব্যাংকিং খাতের উন্নতি, নানান রকম সুবিধা প্রদান ইত্যাদি কারণকে সামনে রেখে ব্যাংক একাউন্ট থাকা প্রায় অপরিহার্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চাকরীজিবী/ব্যবসায়ীরাই নন বরং গৃহিনী, ছাত্র-ছাত্রী সবারই ব্যাংক একাউন্ট থাকা উচিত। তাই আজকে আমরা জানবো ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, এবং একাউন্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব তথ্য।

সূচিপত্রঃ

ব্যাংক কি?

সহজ করে বলতে গেলে ব্যাংক হলো টাকা লেনদেনের জন্য গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান; যা এক পক্ষের মানুষের সঞ্চিত অর্থকে আমানত হিসেবে জমা রাখে। আবার সেই অর্থকেই নিজেদের পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে অন্য পক্ষের মানুষকে সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করে।

ব্যাংক কত প্রকার?

কার্যক্রমের ভিত্তিতে ব্যাংককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-

১। কেন্দ্রীয় ব্যাংক: একটি দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠfন হলো সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে। তেমনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ হলো দেশের অন্যান্য ব্যংক সমূহকে নিয়ন্ত্রন করা। একই সাথে দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতে কে নিয়ন্ত্রনে রাখাও এ ব্যাংকের দায়িত্ব। সেজন্য প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণ করা, আন্তঃব্যাংক লেনদেনের সুদের হার বাড়ানো কমানো, দেশে টাকার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার মত কাজগুলো করে থাকে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর উপর ন্যস্ত। 

২। বাণিজ্যিক ব্যাংক: বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল কাজ হলো অর্থের লেনদেন করা। মূলত এক পক্ষের টাকা গচ্ছিত রেখে তা অপর পক্ষকে ঋণ হিসেবে প্রদান করাই বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বাণিজ্যিক ব্যাংককেই একটি বিশাল পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত রাখতে হয়। প্রতিটি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকই সে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার অন্যতম ভূমিকা পালন করে। 

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ধরন

একটি দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলক একটিই থাকে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের রয়েছে বিভিন্ন ধরন। তবে মালিকানার ভিত্তিতে এদেরকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। 

সরকারী ব্যাংকবেসরকারী ব্যাংক
জনতা ব্যাংকট্রাস্ট ব্যাংক
কৃষি ব্যাংকপূর্বালী ব্যাংক
অগ্রণী ব্যাংক

(অনলাইন সেবা রয়েছে)

ডাচ বাংলা
সোনালী ব্যাংক
(অনলাইন সেবা রয়েছে)
ইসলামী ব্যাংক
(অনলাইন সেবা রয়েছে)
রুপালী ব্যাংক

(অনলাইন সেবা রয়েছে)

ফাস্ট সিকিউরিটি
(অনলাইন সেবা রয়েছে)

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বলতে সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়মকেই বোঝানো হয়ে থাকে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি দেশের সাধারণ মানুষকে সেবা দেয় না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে।

একাউন্ট ক্যাটাগরী

ভোক্তাদের প্রয়োজন বা একাউন্ট খোলার কারণের ওপর নির্ভর করেই বিভিন্ন একাউন্ট ক্যাটাগরী সাজানো হয়। প্রত্যেকটা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তাদের ক্যাটাগরী গুলো সাজানো থাকে। যেমন:

তবে এক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি অর্থাৎ দুইটি দেশের মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইলে আপনার প্রয়োজন হবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের। আর সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে পাসপোর্টের। কারণ এই ধরনের কার্ডগুলো পাসপোর্ট দিয়ে এনডোর্স (Endorse) না করলে কাজ করে না। 

ব্যাংক একাউন্ট এর ধরন

চলতি হিসাব (Current Account)

“চলতি” শব্দটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই একাউন্টটি করা হয় দৈনিক লেনেদেনের জন্য। এই একাউন্টে আপনি যখন খুশি টাকা রাখতে পারবেন আবার যখন খুশি যতোবার খুশি টাকা ওঠাতে পারবেন। যাদের দৈনিক কয়েকবার টাকা লেনেদেন করার প্রয়োজন পরে তাদের জন্য এধরনের একাউন্ট উপযোগী। সাধারণত ব্যবসায়ীরা এ ধরনের একাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন।  ছাত্র বা চাকুরিজীবীদের কে মাথায় রেখে চলতি একাউন্টের সুযোগ সুবিধা সাজানো হয়নি। এই হিসাবের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

  • সুদ দেয়া হয় না।
  • এ ধরণের একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ ধরা হয়।
  • কোনো মেয়াদ নেই।

সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account)

দৈনিক লেনদেন করার দরকার হয় না এমন সবার জন্যই সঞ্চয়ী একাউন্ট। অধিকাংশ চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী এবং পেনশনধারী ব্যাক্তিগণ এধরনের একাউন্ট ব্যবহার করেন। এ ধরনের একাউন্টে সপ্তাহে ২-১ বার টাকা লেনদেন করা যায়। আর বার্ষিক সুদের হার ৪%-৬% পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

ডিপোজিট পেনশন স্কিম (DPS) একাউন্ট

প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট একটি এমাউন্ট জমা করে রাখার জন্য খোলা যায় ডিপিএস একাউন্ট। গ্রাহকের ইচ্ছানুযায়ী এ ধরনের একাউন্টের মেয়াদ ৫, ১০, কিংবা ২০ বছরও হতে পারে। আবার ব্যংকভেদে এবং একাউন্টের মেয়াদ ভেদে সুদের পরিমাণও ভিন্ন হতে পারে। যেমন:

  • ৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস = ১০% সুদ (বার্ষিক)
  • ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী ডিপিএস = ১৫% সুদ (বার্ষিক)

ফিক্স ডিপোজিট রিসিট (FDR) একাউন্ট

একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে রাখতে চাইলে করতে হবে ফিক্স ডিপোজিট রিসিট (FDR) একাউন্ট। সর্বনিম্ন ২৫,০০০ টাকায় একটি এফডিআর একাউন্ট খোলা যায়। এ ধরনের একাউন্টে বার্ষিক সুদের হার ৯% – ১২%। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই একাউন্ট ভেঙে টাকা উত্তোলন করা যায়।

একাউন্ট খোলার আগে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন

একাউন্ট খোলার আগে আপনাকে কিছু বিষয় ভেবে এবং জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন আপনি সরকারী নাকি বেসরকারী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান, নির্দিষ্ট কোন ব্যাংকের কোন ক্যাটাগরীর সুবিধা গুলো আপনার প্রয়োজনীয়তা মেটাবে। 

সেই সাথে আপনার বাসা থেকে ব্যাংকটিতে যাতায়াত সুবিধা কেমন, অনলাইন ব্যাংকিং/ কার্ডের সুযোগ সুবিধা কেমন, ব্যাংকের বার্ষিক চার্জ/ফি কতো, সুদযুক্ত বা সুদমুক্ত ব্যাংকিং ঠিক কোনটা আপনার চাহিদা পূরণ করবে, এসব দিক বিবেচনা করেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ব্যাংকের একাউন্টটি আপনার জন্য উপযুক্ত।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে অনেক ধরণের কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, কিন্তু তাই বলে ভয়ের কিছু নেই, সব কাগজপত্র আপনার হাতের কাছেই আছে। তাহলে চলুন জেনে নেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজপত্র লাগে।

ফর্ম

আপনি কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন তা ঠিক করার পর আপনাকে সেই ব্যাংক থেকে একটি ফর্ম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে জমা দিতে হবে। ব্যংক ফর্ম আবার দু’ধরণের হয়। 

  • ব্যক্তিগত একাউন্ট ফরম: সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে একাউন্ট ফর্মের শিরোনাম এক বা একাধিক ব্যাক্তির নামে হয় তাই ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম। 
  • প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফরম: প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়ের নামে একাউন্ট খুলতে চাইলে এ ধরনের ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয় যে ফর্মের শিরোনাম প্রতিষ্ঠানের নামেই থাকে। 

ইউটিলিটি বিলের কাগজ

আপনার বাসার গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির বিল (যেকোনো ১টি) লাগবে। আর আপনি যদি ভাড়া বাসায় থাকেন সেক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে বিলের কাগজ চেয়ে নিতে পারেন। আপনার স্থায়ী বা অস্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা এই কাগজ টা চায়।

ছবি

আবেদনকারীর ২-৩ কপি সত্যায়িত পাসপোর্ট টাইপ ছবি লাগবে। সত্যায়িত বলতে বোঝায় প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তা (গ্রেড ১-৯) দ্বারা ‘সত্যায়িত’ লিখে সিল করানো। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংকের কর্মকর্তাও সত্যায়িত করে দেন। অথবা ছবি সত্যায়িত করার প্রয়োজনও পড়ে না। 

নমিনী

ব্যাক্তিগত একাউন্ট খোলার জন্য নমিনী থাকা বাধ্যতামূলক। আপনি মারা গেলে আপনার একাউন্টের দায়িত্ব যে পাবে সেই হচ্ছে নমিনী, যাকে আপনি নিজে থেকে মনোনীত করছেন। নমিনী পরিবারের সদস্য কাউকেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই, আপনি আপনার বিশ্বস্ত যে কাউকেই মনোনীত করতে পারেন এমনকি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কাউকেও নমিনী বানাতে পারেন। নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্র এর ফটোকপি এবং সত্যায়িত ১ কপি ছবি লাগবে। যদি তা না থাকে তবে নমিনীর জন্ম সনদ দিলেও হবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট খুলতে গেলে নমিনী দিতে হয় না। 

স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড

ব্যাংক একাউন্ট ফর্মের সাথেই এই ফর্মটি ‍দিয়ে দেয়া হয় যেখানে ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে আবেদনকারীকে স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। 

পরিচয়দানকারী

ঐ ব্যাংকে একাউন্ট আছে এমন কাউকে পরিচয়দানকারী হতে হবে। আপনার কোনো পরিচিত থাকলে ভালো, না থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তারাই পরিচয়দানকারী হয়ে একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দেন। আর তার জন্য একাউন্ট ফর্মে পরিচয়দানকারী ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, একাউন্ট নম্বর দিতে হয়। সবশেষে পরিচয়দানকারীকে স্বাক্ষর করতে হয়।

অতিরিক্ত কাগজপত্র

আবেদনকারী এবং প্রয়োজনীয় ব্যাক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে আসাটা জরুরী। এছাড়াও যেসব কাগজপত্র লাগতে পারে:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও  নাগরিক সনদ (কমিশনার/ মেয়র/ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত) 
  • পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম সনদ, চাকরি পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইত্যাদি
  • স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে চাইলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও আরো কিছু কাগজ লাগে। যেমন:

১: ট্রেড লাইসেন্স ও টিন নম্বর।

২: একাউন্ট পরিচালনাকারীদের নাম পদবী যুক্ত সিল।

৩: বায়িং হাউজ বা অন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি । 

৩: অংশিদারী প্রতিষ্ঠান হলে লাগবে পার্টনারশিপ ফর্ম, এবং একাউন্টটি কে পরিচালনা করবে সে ব্যাপারে একটি রেজ্যুলেশন। এই রেজ্যুলেশনে পরিচালকমন্ডলী সবার স্বাক্ষর থাকতে হবে।

৪: সমিতি হলে সেই সমিতির গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন ফর্ম, এবং এনজিও ব্যুরো হতে লাইসেন্স।

৫: পাবলিক লিমিটেড ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন।

এক নজরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ব্যক্তিগত একাউন্টস্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টপ্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট
১: দুই কপি ছবি

২: জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কর্ডের ফটোকপি।

৩: জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড না থাকলে:

৪: নমিনীর ক্ষেত্রে: 

  • এক কপি ছবি
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • নমিনী নাবালক হলে তার অভিভাবকের ছবি ও আইডি কার্ড।
১: দুই কপি ছবি

২: জন্ম নিবন্ধন

৩: স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ও

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কতৃক প্রদত্ত প্রত্তয়ন পত্র

৪: অভিভাবকের ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি।

১: বৈধ ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি

২: টিন (ট্যাক্স আইডিন্টিফিকেশন নাম্বার)

৩: একাউন্ট হোল্ডারের নাম পদবী যুক্ত সিল।

৪: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি

৫: পার্টনারশিপ ফর্ম ও রেজ্যুলেশন। 

ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া

উপরের সকল লেখা পড়ে থাকলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই ব্যংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বেশ ধারনা পেয়ে গেছেন। তবুও আপনাদের সুবিধার্থে মূল প্রক্রিয়াটিকে সরাসরি দেখানো হলোঃ 

ধাপ ১: ব্যাংক নির্ধারণ

কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান এবং কোন ধরনের একাউন্ট খুলতে চান তা ঠিক করুন।

ধাপ ২: কাগজপত্র সংগ্রহ

উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন। (ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে বা তাদের কাস্টমার সার্ভিস / হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও জেনে নিতে পারেন।)

ধাপ ৩: আবেদন

কাগজপত্র সহ আপনার পছন্দের শাখায় যান এবং আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করুন এবং প্রাথমিক ভাবে আপনি কতো টাকা জমা রাখতে চান তা প্রদান করুন। এছাড়াও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা জেনে নিন।

ধাপ ৪: সক্রিয় করুন 

এবার আপনার একাউন্ট সক্রিয় হবার পালা। আপনি কাগজপত্র জমা দিলে ব্যাংক কর্মকর্তারাই বাকি কাজ কেরে দেবেন। আর একাউন্ট স্বক্রিয় হবার পর আপনি একাউন্টে লেনদেন করতে পারবেন এবং ডেবিট কার্ড ও চেক ব্যবহার করতে পারবেন।

অনলাইনে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

অফলাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনেও পুরো দমে ব্যংকিং চলছে। তাই এখন অনেকেই অফলাইন একাউন্টের পাশাপাশি একটি অনলাইন একাউন্টও খোলেন। অনেকে আবার শুধু অনলাইন একাউন্ট খুলেও কাজ করেন। অনলাইন একাউন্ট খুলতেঃ-

ধাপ ১: অ্যাপ ডাউনলোড 

আপনার পছন্দের ব্যাংকটির অ্যাপ ডাউনলোড করুন। তাদের ওয়েবসাইটে গেলেই অ্যাপ ডাউনলোড করার লিংক পাবেন।

ধাপ ২: তথ্যাদি পূরণ 

অ্যাপে ঢোকার পর আপনি একাউন্ট ওপেন নামে একটি অপশন পাবেন সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করুন। 

ধাপ ৩ঃ ছবি প্রদান করুন

বেশিরভাগ ব্যাংকই অনলাইন একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ছবি চায়। এক্ষেত্রে নিজের একটি স্পষ্ট ছবি অ্যাপের সাহায্যে তুলে সাবমিট করুন। 

এর পরেই শেষ হবে আপনার অনলাইন একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া। তবে অনলাইন একাউন্টটি চালু করতে হলে আপনাকে সেই ব্যাংকের কোনো শাখায় যাওয়া লাগতে পারে।

একাউন্ট খোলার পর

একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে আপনাকে ব্যাংক থেকে জমা স্লিপ দিয়ে দিবে সেটা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। আর আপনার হিসাব নাম্বারটি ভালোভাবে লিখে রাখতে হবে। একাউন্ট খোলার সময় আপনার নামের বানানটি ঠিক  আছে কিনা সেটি খেয়াল করবেন। তাছাড়া আপনি যদি ডেবিট কার্ড নিতে চান তবে আবেদন করে আসতে হবে। 

ব্যাংক একাউন্টের চার্জ/ফি

অনেকসময় লক্ষ্য করবেন এক ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকের চার্জ বা ফি’র পরিমাণ কম-বেশী হয়ে থাকে। আর এই ভিন্নতার প্রধান কারণটা হলো কার্ডের সুবিধায় ভিন্নতা। যে ব্যাংক বেশী সুবিধা দেয় সেই ব্যাংকের চার্জ একটু বেশীই হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কর্তৃক নির্ধারিত একটি চার্টের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংকের চার্জ এবং সুদের পরিমাণ কোন হারে দেয়া হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেমন সঞ্চয়ী একাউন্টে দশ হাজারের টাকার কম টাকা রাখলে ব্যাংক কোনো চার্জ কাটে না। এছাড়া সব ব্যাংকের একাউন্ট চার্জ প্রায় একরকমই থাকে। তবে হ্যা, কোনো কোনো একাউন্টে অফার থাকতে পারে। সাধারণত ব্যাংক ছয় মাস পরপর চার্জ কাটে এবং কার্ডের ক্ষেত্রে এক বছর পরপর চার্জটা কাটে। 

১। সঞ্চয়ী একাউন্টে টাকার পরিমাণ ভেদে ব্যাংক চার্জ হতে পারে ২৫০-৩০০ টাকা। 

২। ৫০ লাখ টাকা ঋণে প্রসেসিং ফি থাকে .০৫% বা ১৫,০০০ টাকা। ৫০ লাখ টাকার বেশী হলে প্রতি লাখে .০৩%; তবে এই ফি কখনোই ২০,০০০ টাকার বেশী হয়না।

৩। সঞ্চয়ী একাউন্ট বন্ধ করতে ফি লাগতে পারে ২০০ টাকা।

৪। একাউন্ট ট্রান্সফারের জন্য একই জেলায় ফি হয় ৫০ টাকা এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ১০০ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন কারণে চার্জের পরিমান বাড়তে পারে। যেমন:

  • এটিএম কার্ডের জন্য ভ্যাটসহ চার্জ যোগ হতে পারে। 
  • ভিসা/মাস্টার কার্ডের জন্য চার্জ বাড়তে পারে।
  • কিছু কিছু ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর চার্জ কাটেে।
  • এসএমএস সার্ভিস এর জন্য ও কিছু ব্যাংক চার্জ কাটতে পারেে।
  • আবার চেকবইয়ের জন্য এককালীন ছোট একটি চার্জ থাকতে পারে।

শেষকথা

আজকাল ব্যাংক একাউন্ট থাকাটা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। আর অনেক কাগজ-পত্র লাগবে ভেবে অনেকেই একটি একাউন্ট করাটাকে ঝক্কির কাজ মনে করেন। কাগজ-পত্র গুলো কিন্তু আমাদের হাতের নাগালেই থাকে। তাই আমাদের সবার উচিত একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে রাখা।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা খরচ হয়?

কোন টাকা খরচ হয় না তবে ৫০০-১০০০/= বা ২,০০০-৫,০০০/= টাকা একাউন্টে রাখতে হয়। যেটা আপনার একাউন্টেই থাকবে।

২। আমি কি বিভিন্ন শাখায় দুটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারি?

অবশ্যই খুলতে পারবেন, তবে একাউন্ট গুলো একটার সাথে অন্যটা যুক্ত থাকবে।

৩। আবেদনকারীকে নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে?

হ্যা, একাউন্ট খোলার সময় এবং চেক বই তোলার সময় আবেদনকারীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।

৪। আমার টাকার দাবিদার কি নমিনী হবে?

উত্তরঃ না। আপনার টাকার দাবিদার নমিনী হবেন না। যেমন কোনো বাবা যদি তার ভাইকে নমিনী করে মারা যান তাহলে তার সম্পত্তির মালিক ভাই নয়। যথাযথ নিয়ম অনুসারে সেই লোকের ছেলে মেয়ে। নমিনীর দায়িত্ব হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button