অনলাইন ব্যাংকিংব্যাংকিং

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

বর্তমানে ব্যাংক মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তা, সঞ্চয়, নিরাপদ লেনদেন ইত্যাদি নানা কারণে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক খুবই জনপ্রিয়। তাই আজ আমরা জানবো ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সকল তথ্য।

১৯৮৩ সালে দেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বর্তমান সময় পর্যন্ত এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার পূর্বে একাউন্টের প্রকারভেদ, সরাসরি বা অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, একাউন্টের সুবিধা-অসুবিধা, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি জানার গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কিত এ ধরনের সকল তথ্যই থাকছে আজকের আলোচনা।

সূচিপত্রঃ

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট এর প্রকারভেদ

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (Islami Bank Bangladesh Limited) বর্তমানে ৩ ধরনের একাউন্টে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এগুলো হলো-

  1. ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট (Islami Bank Current Account)
  2. ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট (Islami Bank Savings Account)
  3. ইসলামিক ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট (Islami Bank Student Account)

বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একাউন্টের ধরন ভিন্ন। ক্যাটাগরি অনুসারে এসকল ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, একাউন্টের সুবিধা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসও ভিন্ন।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

বর্তমানে ২ ভাবে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়। যথা-

  • সরাসরি স্থানীয় শাখা বা এজেন্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে
  • অনলাইনে সেলফিন অ্যাপের মাধ্যমে

(১) ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য একাউন্টের ধরন নির্বাচন করে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ ইসলামী ব্যাংকের শাখা বা এজেন্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করবে এবং স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ করবে।

সকল তথ্য ও ডকুমেন্টস সঠিক হলে একাউন্টের প্রাথমিক ডিপোজিট সম্পন্ন করে তাৎক্ষণিকভাবে একটি একাউন্ট করতে পারবেন। পরবর্তীতে, চেক বই, ডেবিট কার্ড প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।

(২) বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন (Cellfin) অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই মাত্র ২-৫ মিনিট সময়ে অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে, চেক বই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি সেবা পেতে যে শাখা বা এজেন্ট অফিসের অধীনে একাউন্ট খুলবেন সেখানে ৩ মাসের মধ্যে উপস্থিত হওয়া অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট আবেদন ফরম

ইসলামিক ব্যাংক একাউন্ট আবেদনের জন্য ব্যাংক কর্তৃক একটি ৪ পৃষ্ঠার ফরম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফরমটি ডাউনলোড করার জন্য, Islamibankbd.com এই লিংকে ভিজিট করে ফরমের পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন। 

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট আবেদন ফরম

ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট 

দৈনন্দিন লেনদেনের প্রয়োজনে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের একটি সুসংগত মাধ্যম হলো কারেন্ট একাউন্ট। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধনী ব্যক্তিদের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত। ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টে প্রতিদিন চাহিদার মত অসংখ্য বার লেনদেন করা যায়। 

কারেন্ট একাউন্টের জন্য কোন সুদের হার প্রযোজ্য থাকে না এবং ব্যাংক চার্জও দিতে হয় না। দেশের যেকোনো নাগরিক এই একাউন্ট খুলতে পারবে। 

ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে

কারেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো:-

  • সঠিকভাবে পুরনকৃত আবেদন ফরম।
  • আবেদনকারীর যেকোনো একটি আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট- জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এক কপি।
  • আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • আবেদনকারী দ্বারা সত্যায়িত নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি ও ছবি।
  • ঠিকানার তথ্য নিশ্চিত করতে ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি)।
  • আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
  • ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলে ই-টিন সার্টিফিকেট
  • প্রাথমিক ব্যাংক ডিপোজিট ১,০০০ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী আবেদনপত্রের সাথে এ সকল ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়।

ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টের সুবিধা

  • কারেন্ট একাউন্টে আনলিমিটেড লেনদেন করা যায়।
  • যেকোনো পরিমাণ/অংকের টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়।
  • ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয় না।
  • ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টে টাকা প্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করতে পারে।
  • চাহিদা মাত্র টাকা প্রদানে ব্যাংক বাধ্য থাকে।
  • ইসলামী ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।

 এছাড়াও লেনদেনের পরিমাণ ব্যাংকিং শর্ত পূরণ করলে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা যায়।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট

সেভিংস একাউন্ট ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাংকিং সেবা। ব্যাংকে নিয়মিত অর্থ জমা রেখে তা থেকে নিয়মিত একটি লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য এই একাউন্টটি খোলা হয়। ব্যক্তিগত সেভিংস একাউন্ট, সঞ্চয়ী সেভিংস একাউন্ট, ব্যবসায়িক সেভিংস একাউন্ট ইত্যাদি হিসাব রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী শাখা বা এজেন্ট অফিসে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টে জমাকৃত অর্থ ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী হালাল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। সেখান থেকে প্রাপ্ত লোভ্যাংশের সর্বনিম্ন ৬৫ ভাগ হিসাবধারীদের মধ্যে ওয়েটেজের ভিত্তিতে বন্টন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিমাসে স্বল্প পরিমাণ নির্ধারিত লভ্যাংশ একাউন্টে জমা হয় এবং বছর শেষে লভ্যাংশের বাকি টাকা জমা হয়।

এটি কারেন্ট ব্যাংক একাউন্টের মতো হলেও সেভিংস একাউন্টে মাসিক লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। সঞ্চয়ী সেভিংস একাউন্টে নিয়মিত লভ্যাংশ বা সুদের হার পেতে চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অর্থ উত্তোলন করা যায় না। এক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনে ডিপোজিট ভেঙে অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে লভ্যাংস পাওয়া যাবে না। 

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে সেভিংস একাউন্ট খুলতে কিছু ডকুমেন্টস লাগে। যেমন-

  • ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে পূরণ।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এক কপি। আবেদনকারী প্রাপ্তবয়স্ক না হলে অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সহ জমা দিতে হয়।
  • আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • একাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক সত্যায়িত নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি ও ছবি।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি)।
  • আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
  • প্রাথমিক সেভিংস একাউন্ট ডিপোজিট ৫০০ টাকা।

এছাড়াও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সেভিংস একাউন্ট করলে প্রতিষ্ঠানভেদে কিছু ভিন্ন ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। যেমন-

  • ব্যক্তিগত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলে টি আই এন সার্টিফিকেট (TIN Certificate)।
  • ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান হলে ট্রাস্টের দলিল বা প্রমানপত্র।
  • মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় হলে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন।
  • আবেদনকারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি কোন লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন (Memorandum and Articles of Association) এর সত্যায়িত কপি।

এছাড়াও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানভেদে প্রাতিষ্ঠানিক দলিল বা প্রমাণপত্র আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হয়।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের সুবিধা

সেভিংস একাউন্টে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন-

  • জমাকৃত অর্থের উপর নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পাওয়া যায়।
  • পায়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়। 
  • ব্যাংক বিভিন্ন খাতে এই টাকা ইনভেস্ট করে মুনাফ অর্জন করতে পারে। 
  • সেভিংস একাউন্ট খুলতে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মে মাত্র ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়।

ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট

শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে স্টুডেন্ট একাউন্ট। শিক্ষার্থী অবস্থায় সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। 

স্টুডেন্ট একাউন্টে শিক্ষার্থীরা স্বল্প পরিমাণ অর্থও জমা দিয়ে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সঞ্চয় করে থাকে।

ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে

অন্যান্য একাউন্টের মতো স্টুডেন্টদের জন্য ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে কিছু ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলো- 

  • শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট কার্ড, এনআইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টের কপি।
  • অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
  • শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • নমিনির ১ কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • গ্রাহকের স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
  • কমপক্ষে ১০০ টাকা প্রাথমিক ডিপোজিট।

ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা

  • এ ধরনের একাউন্টের লেনদেনে কোন এটিএম (ATM) চার্জ দিতে হয় না।
  • অনলাইনে বা সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয়ে মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়।
  • শিক্ষার্থীদের জমানো টাকার উপর স্বল্প পরিমাণ মুনাফাও পাওয়া যায়।
  • সঞ্চয় হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় ব্যবহার করা যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
  • ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখায় একাউন্ট ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা যায়।

শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের মানসিকতার সৃষ্টি হয়।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে সেলফিন (Cellfin) অ্যাপটি ইনস্টল করে নিন। তারপর-

  • আইডি কার্ড
  • আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র
  • নমিনির আইডি কার্ড

সাথে নিয়ে নিচের ছবিসহ দেখানো ধাপগুলো অনুসরণ করুন-

ধাপ ১: সেলফিন অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন

অ্যাপস ওপেন করে লগিন পেজের নিচে রেজিস্টার (Register) বাটনে ক্লিক করুন। তারপর,

  • রেজিস্ট্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ (Bangladesh) সিলেক্ট করুন। 
  • আপনার যেহেতু পূর্বে একাউন্ট নেই তাই ডকুমেন্ট হিসেবে ন্যাশনাল আইডি (National ID) সিলেক্ট করুন। 
  • মোবাইল সিম অপারেটর,
  • মোবাইল নাম্বার, ও
  • ৬ ডিজিটের একটি কোড লিখুন।
  • মোবাইল কোড ভেরিফাই করুন।
  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সামনের ও পিছনের ছবি আপলোড করুন।
  • ক্যামেরার সামনে আপনার ফেস ভেরিফাই করে সাবমিট করুন। 

সকল কাজ সম্পন্ন হলে পুনরায় লগইন অপশনে গিয়ে মোবাইল নাম্বার ও পিন দিয়ে লগইন করুন।

ধাপ ২: ওপেন একাউন্ট অপশন

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে অ্যাপসের ড্যাশবোর্ড থেকে নিচের ওপেন একাউন্ট (Open A/C) অপশন এ ক্লিক করুন। প্রথমবার একাউন্ট খোলার জন্য পরবর্তী পেজে আবার সেলফিন পিন কোড দিয়ে সাবমিট করুন।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ধাপঃ ২

ধাপ ৩: ব্রাঞ্চ ও পেশার তথ্য দিন

এই ধাপে, 

  • কোন ব্রাঞ্চে একাউন্ট খুলতে চান তা সিলেক্ট করুন।
  • আবেদনকারীর পিতার ও মাতার নাম।
  • আবেদনকারীর বৈবাহিক অবস্থা।
  • আবেদনকারীর মাসিক আয়।
  • তহবিল বা আয়ের উপায় সিলেক্ট করুন।
  • আবেদনকারীর পেশা (Profession) সিলেক্ট করুন।
  • আবেদনকারীর ঠিকানা (হোল্ডিং নং, গ্রাম, বাড়ির নম্বর)।
  • আবেদনকারীর জেলা, উপজেলা/থানা এবং পোস্ট কোড লিখে সাবমিট করুন।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ধাপঃ ৩

সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর সকল তথ্য একটি প্রিভিউ পেজে দেখতে পাবেন। ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে সেখানে তথ্যগুলো পুনরায় যাচাই করে কনফার্ম (Confirm) বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৪: একাউন্টের ধরন নির্বাচন

আপনি ইসলামিক ব্যাংকের কোন ধরনের একাউন্ট খুলতে চান তা নির্বাচন করুন। এখানে অনেক ধরনের একাউন্ট দেখতে পাবেন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় একাউন্ট হিসেবে- মুদারাবা সেভিংস একাউন্ট (Mudaraba Savings Account- MSA) সিলেক্ট করতে নেক্সট (Next) ক্লিক করুন।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ধাপঃ ৪

সেলফিন অ্যাপ রেজিস্টার করার সময় আপনার আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছিল, তাই পুনরায় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দিতে হবেনা।

ধাপ ৫: নমিনির তথ্য প্রদান

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী আপনি যাকে নমিনি নির্বাচন করবেন তার এনআইডি কার্ড অনুযায়ী-

  • নমিনির নাম। 
  • নমিনির পিতা-মাতার নাম।
  • এনআইডি কার্ড নাম্বার/ পাসপোর্ট নাম্বার।
  • নমিনির সাথে আবেদনকারীর সম্পর্ক। 
  • নমিনির জেলা, উপজেলা, পোস্ট কোড ও সম্পূর্ণ ঠিকানা।
  • এনআইডি কার্ডের ছবি ও নমিনির ছবি আপলোড করে সাবমিট করুন।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ধাপঃ ৫

ধাপ ৬: আবেদন রিভিউ ও একাউন্ট নিশ্চিত করুন 

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে আবেদনের সকল তথ্য পূরণের পর আপনার আবেদনের একটি রিভিউ পেজ দেখতে পাবেন। নমিনির সকল তথ্য পুনরায় চেক করে একাউন্ট নিশ্চিত করতে কনফার্ম (Confirm) বাটনে ক্লিক করুন।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ধাপঃ ৬

ব্যাস, আপনার একাউন্টটি সঠিকভাবে ওপেন হয়ে যাবে এবং ব্যাংক একাউন্ট ওপেনেড সাকসেসফুলি (Bank Account Opened Successfully) মেসেজ দেখতে পাবেন। এখানে আপনার একাউন্ট নাম্বার ও একাউন্টে আই ও দেখতে পাবেন। প্রয়োজনে তা কপি করে অথবা মোবাইলে স্ক্রিনশট নিয়ে, ওকে (Ok) ক্লিক করুন।

উপরোক্ত ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী খুব সহজেই সেলফিন অ্যাপ থেকে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সমূহ

বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যাংকিং সেবাগুলোও ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে পড়ছে। ইসলামী ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং/ আই ব্যাংকিং (Internet Banking/ iBanking)- এর অনেক সার্ভিস গ্রাহকদের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে তুলছে। ইসলামী ব্যাংকের এসকল সার্ভিস গুলো হলো –

  1. মোবাইল রিচার্জ করা যায়।
  2. একাউন্ট স্টেটমেন্ট, ট্রানজেকশন সামারি সম্পর্কে জানা যায়।
  3. ফান্ড ট্রান্সফার করা যায়। (একই ব্রাঞ্চের অন্য একাউন্টে – ৫ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের অন্য শাখায় ফান্ড ট্রান্সফার করতে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থেকে অন্য ব্যাংক একাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার করতে সর্বনিম্ন ১০ ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, ভিসা-মাস্টার কার্ডের ট্রান্সফার করতে ৩০ টাকা চার্জ দিতে হয় মাত্র।
  4. অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে হিসাব খোলা যায়।
  5. ব্যাংক থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট এ মানি ট্রান্সফার করা যায়।
  6. আই ক্যাশ রেমিট্যান্স (I Cash Remittance) ফিচার ব্যবহার করা যায়।
  7. ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায়।
  8. অনলাইনে বাস, ট্রেন, বিমানের টিকেট ক্রয় করা যায়।

বর্তমানে এসকল সার্ভিস থাকায় ঘরে বসেই ব্যাংককে ব্যবহার করা যাচ্ছে মিনিটেই। 

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকায় অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মের মতই একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করার জন্য ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হতে হয় না। এক্ষেত্রে ৩ টি উপায়ে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করা যায়। যথা-

  • ইসলামী ব্যাংকের আই ব্যাংকিং (iBanking) ওয়েবসাইটে- আইবিবিএল আই ব্যাংকিং (IBBL iBanking) ওয়েবসাইটে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দিয়ে রেজিস্টার করে ড্যাশবোর্ডের ব্যালেন্স অপশন থেকে একাউন্ট চেক করতে পারবেন।
  • সেলফিন (Cellfin) অ্যাপের মাধ্যমে- আপনার একাউন্টটি সেলফিন অ্যাপে লগইন করে ব্যাংক একাউন্ট (Bank Account, Bank A/C) অপশন থেকে একাউন্ট ব্যালেন্স দেখতে পাবেন।
  • এসএমএস (SMS) এর মাধ্যমে- মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে IBB <space> BAL লিখে পাঠিয়ে দিন হেল্প সেন্টারে। বাংলালিংক সিম হলে ২৬৯৬৯, গ্রামীণফোন সিম হলে ১৬২৫৯ নাম্বারে। একাউন্ট করার সময় রেজিস্ট্রারকৃত সিম দিয়েই ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সার্ভিস চার্জ

সাধারণত ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হিসাবধারীর কাছ থেকে ব্যাংক কিছুটা সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মে সেভিংস একাউন্ট খুললে সার্ভিস চার্জের তালিকা বড়। ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও তার পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো:-

(১) এসএমএস ব্যাংকিং চার্জ

সেভিংস একাউন্ট ধারীদের মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যাংকিং স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে এসএমএস ব্যাংকিং সার্ভিস চার্জ প্রতি ছয় মাসে ৫৭ টাকা + ভ্যাট ৭.৫ টাকা নেওয়া হয়।

(২) সেভিংস চার্জ

প্রতি ছয় মাস পর পর একাউন্ট ব্যালেন্স হিসাব করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করা হয়। যেমন-

  • ব্যালেন্স ১০,০০০-২৫,০০০ হলে- ১০০ টাকা+ ১৫% ভ্যাট কাটা হয়।
  • ব্যালেন্স ২৫,০০০ – ২ লক্ষ হলে- ২০০ টাকা+ ১৫% ভ্যাট কাটা হয়।
  • ব্যালেন্স ২-১০ লক্ষ হলে- ২৫০ টাকা+ ১৫% ভ্যাট কাটা হয়।
  • ব্যালেন্স ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে- ৩০০ টাকা+ ১৫% ভ্যাট কাটা হয়।

(৩) চেকবুক চার্জ

ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট ধারীদের চেক বই প্রদান করা হলে ১০ পাতার চেক বই এর জন্য ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়।

(৪) এটিএম কার্ড চার্জ

এক্ষেত্রে কার্ডভেদে বাৎসরিক চার্জের পরিমাণ কম বেশি হয়। এক্ষেত্রে লেনদেনের পরিমাণ অনুযায়ী বাৎসরিক ৪৬০ থেকে ৯২০ টাকা পর্যন্ত চার্জ দিতে হয়।

এছাড়া অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মে কোন বাড়তি ফি দিতে হয়না।

ইসলামী ব্যাংক হেল্পলাইন

ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কিত যেকোন সেবা পেতে বা তথ্য জানতে যোগাযোগ করতে পারেন-

E-mail: info@islamibankbd.com,

Fax: 880-2-9564532, 880-2-9568634,

Website: https://www.islamibankbd.com/

অথবা, সরাসরি স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকের শাখা অফিসে উপস্থিত হয়ে সেবা পেতে পারেন।

শেষকথা

বর্তমানে খুব সহজেই অনলাইনে কিংবা নিকটস্থ শাখায় ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী একাউন্ট খোলা যায়। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এই ব্যাংকে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়, সার্ভিস চার্জও তুলনামূলক কম। তবে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী অন্য সকল ব্যাংকের মতোই ইসলামী ব্যাংকেও ডিপোজিট করে লভ্যাংশ ভোগ করা থেকে বিরত থাকুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি

ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়?

ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের ক্ষেত্রে কারেন্ট একাউন্টে সর্বনিম্ন ১০০০, সেভিংস একাউন্টে সর্বনিম্ন ৫০০ এবং স্টুডেন্ট একাউন্টে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রাখা যায়।

ইসলামী ব্যাংকের শাখা কতটি?

বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট ৬২৩ টি শাখা রয়েছে। এছাড়াও ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদিত ব্যাংকের সংখ্যা ১০ টি। 

ইসলামী ব্যাংক কি সরকারি ব্যাংক?

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (Islami Bank Bangladesh Limited) একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button