চাকরিপেশা

চাকরির অনিশ্চয়তা বোঝার উপায়

গত দুই বছর বৈশ্বিক মহামারিতে সারা বিশ্ব জুড়েই অসংখ্য লোক চাকরি হারিয়েছেন৷ বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়। অনেক চাকরিজীবীই কর্মক্ষেত্রে যেয়ে হুট করে শুনেছেন তার চাকরি নেই। আবার অনেককে হয়তো মাত্র এক মাসের নোটিশেই চাকরিটা হারাতে হয়েছে। একজন কর্মজীবী মানুষের জীবনে একটি চাকরির গুরুত্ব কতটা, তা আর বলে দিতে হবে না। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি চাকরিজীবীর ওপরেই কেউ না কেউ নির্ভরশীল। তাই নিজ ও আপনজনের জীবিকার অনিশ্চয়তা কাটাতে সব সময়ই থাকতে হবে সতর্ক। 

চাকরিটি থাকছে কি না তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া হয়তো যাবে না। কিন্তু কিছু লক্ষণ দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার চাকরিটি নিশ্চিত না অনিশ্চিত। আর লক্ষণগুলো বুঝতে হলে প্রথমেই জানতে হবে চাকরি অনিশ্চিত হওয়ার কারণ। মূলত কি কি কারণে আপনার চাকরি অনিশ্চিত হতে পারে এবং অনিশ্চয়তার লক্ষণগুলো কি কি তা নিয়েই আজকের এই লেখাটি।

সূচিপত্রঃ

চাকরি অনিশ্চয়তা বোঝার ৬ টি উপায়

কর্মদক্ষতার অভাব 

কর্মদক্ষতার অভাব হতে পারে আপনার চাকরি হারানোর প্রধান কারণ। কারণ চাকরিজীবী হিসেবে আপনার কাজই হলো দক্ষতার সাথে আপনার কাজগুলো শেষ করা।

কর্মদক্ষতার অভাব মূলত দুই ধরনের হরে পারেঃ

  • সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারা। 
  • নির্দিষ্ট কাজ করতে না পারা।

সময়ের কাজ সময়ে করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন কর্মজীবী কিছুদিন চাকরি করার পর তার কাজগুলো কিছুটা হলেও পারেন। কিন্তু কাজ কিছুটা পারলেই তা সময় মতো করে দেওয়া যায় না। সেজন্য চাই দক্ষতা৷ আর সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারলে আপনার প্রতিষ্ঠানের যে সার্বিক হিসাব থাকে তা কিন্তু ওলট পালট হয়ে যায়৷ কোনো একটি কাজ যদি এক-দুইজনের জন্য দেরি হয়ে থাকে, তাহলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তাদের নাম চলে যায় সহজেই৷ তেমনটা হলে কিন্তু আপনার নামটা ভালর চেয়ে খারাপের খাতাতেই পড়বে বেশি৷ 

নির্দিষ্ট একটি কাজ করতে না পারাও চাকরিতে ফেলতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। যদি কাজটি হয় আপনার জন্য সম্পূর্ণ নতুন তাহলে আপনি অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিতেই পারেন৷ কিন্তু কাজটি যদি আপনার ইতোমধ্যেই পারার মতো হয়ে থাকে, তাও তা না পারেন তবে কিন্তু সেটি নেতিবাচক। 

আর সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারা বা একেবারেই করতে না পারার মতো সমস্যাগুলো যদি বার বার হতে থাকে, তাহলে ধরে নেবেন আপনার চাকরিটি ধীরে ধীরে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। 

কর্মক্ষেত্রে দেরি করে পৌছানো

কর্মক্ষেত্রে দেরি করে পৌছানো একজন চাকরিজীবীর সবচেয়ে নেতিবাচক দিকগুলোর একটা। কোনো কারণে এক-দুই দিন একটু দেরি হতেই পারে৷ কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত দেরি করেন তাহলে অবশ্যই তা সবার চোখে পড়বে। আর এক্ষেত্রে আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মনে এমন একটি ধারনা তৈরি হবে যে আপনি কাজে ফাকি দেন। সাধারণত দেরি করে আসাটা কাজে ফাকি দেওয়ারই লক্ষণ। তবে যদি এমনটাও হয় যে আপনি দেরি করে এসেও বেশি কাজ করেন, তাতেও কিন্তু আসলে লাভ নেই৷ হয়তো আপনি অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠানের বেশি কাজ করেন, কেউ হয়তো সময় মতো এসেও অতটা কাজ করে না। কিন্তু আপনি যে দেরি করে আসছেন এইটেই হবে মুখ্য বিষয়। আর ছাটাই করার সময় আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মনে সবার আগে আপনার চেহারাটাই ভেসে উঠবে৷ কারণ তার দৃষ্টিতে আপনি ফাকিবাজ। তাই নিয়মিত দেরি করে আসলে ধরে নেবেন আপনার চাকরির নিশ্চয়তা কমে গেছে অনেকটাই।

সহকর্মী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্কের অভাব

চাকরিতে বাদ পরার আরেকটি প্রধাণ কারণ হলো সুসম্পর্কের অভাব৷ শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটিই সত্যি৷ আপনার কর্মদক্ষতার চেয়েও আপনার সম্পর্কগুলো অনেক সময়ই কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো তা কাগজে-কলমে নয়, কিন্তু পরোক্ষভাবে অবশ্যই হয়।  

ইংরেজিতে কানেক্টিভিটি (Connectivity), নেটওয়ার্কিং (Networking) আর বাংলায় যোগাযোগ। যাই বলুন না কেন, সরকারি বেসরকারি সকল চাকরিতেই এর গুরুত্ব অস্বাভাবিক। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আরো বেশি সত্যি। বাংলাদেশে চাকরির পাওয়ার ক্ষেত্রেও যেমন আপনার যোগাযোগ ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমনই চাকরিটা ধরে রাখার ক্ষেত্রেও রাখবে। এক্ষেত্রে এমনটি নয় আপনার খুব শক্তিশালী ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ রাখা লাগবে। কিন্ত আপনার সহকর্মী আর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাটা আবশ্যকই বলা চলে।

সাধারণ সম্ভাষণ, সালাম দেওয়া বা নমষ্কার জানানোর মাধ্যমেই গড়ে তুলতে পারেন প্রাথমিক সম্পর্ক। সকলেরই সাথেই খুব ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন যাতে আপনার সাথে কারো খারাপ সম্পর্ক না থাকে। বিশেষত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ সম্পর্ক কাল হয়ে দাড়াতে পারে। যদি সকলের সাথে আপনার সুসম্পর্ক থাকে তাহলে আপনাকে চাকরিচ্যুত করার আগে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার ভেবে দেখবে। যেই সুবিধাটা একজন সাধারণ চাকরিজীবী হয়তো পাবেন না। তাই কর্মক্ষেত্রে পারতপক্ষে কারো সাথে ঝামেলাতে না যাওয়াটাই ভাল৷ 

অতএব আপনার ভেতর যদি শুধু নিজের মতো কাজ করা, কারো সাথে যোগাযোগ না রাখা, কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে না যাওয়া ইত্যাদি স্বভাব থাকে তাহলে তা বাদ দিন। কারণ এগুলো আপনার চাকরির অনিশ্চয়তা সৃষ্টিতে অবশ্যই ভূমিকা পালন করবে। 

আপনার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা

একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা প্রতিষ্ঠানটির সব চাকরিজীবীর ওপরেই প্রভাব ফেলে। প্রতিষ্ঠান যদি আর্থিক ভাবে সবল হয় তাহলে কর্মী ছাটাই হার থাকে অনেকটাই কম। কিন্তু অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান যদি আর্থিক ভাবে দুর্বল, ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে অনেক সময় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তূলনামূলক দক্ষ কর্মীদেরও ছাটাই করে ফেলে। গত দুই বছরে যার অনেক উদাহরণই আমরা দেখেছি।

তাই বেসরকারি চাকরি হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত ধারনা রাখুন। এক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে আপনার কোম্পানির ফাইন্সিয়াল স্টেটমেন্ট (Financial Statement) ভাল ভাবে পড়ুন। 

যদি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে লস করতে থাকে, তাহলে ধরে নেবেন আপনি সহ সবার চাকরিই অনিশ্চিত। এক্ষেত্রে নতুন চাকরির খোজ শুরু করাই ভাল। তবে সরকারি চাকরি হলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই চিন্তা না করলেও চলে। কারণ সরকারি চাকরিতে কিছু থাকুক না থাকুক, অপরাধ না করলে চাকরির নিশ্চয়তা আছে। 

আপনার সেকশনের গুরুত্ব

আপনি ও আপনার নিকট সহকর্মীরা  প্রতিষ্ঠানের কোন কাজটি করেন তা চাকরির স্থায়িত্বের সাথে খুব গভীর ভাবে জড়িত। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভাল থাকলেও একটি কাজের কার্যকারিতা ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্য শেষ হয়ে যেতে পারে। যেমন একটি সিরামিক কোম্পানিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়ার, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার এসব পদের গুরুত্ব কখনোই ফুরোবে না। কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এর গুরুত্ব চাকরির বছর খানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে। সেটা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে, একটি পুরো টিমের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তাই আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন কাজটি করছেন, সেটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটি মাথায় রাখতে হবে। যদি আপনার সেকশনের অনিশ্চয়তা বেশি মনে হয়, তাহলে চেষ্টা করুন আরো স্থায়ী কোনো সেকশনে বদলি হয়ে যাওয়ার। 

প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাটাই এর নীতি

কর্মী ছাটাই এর পলিসি (Policy) বা নীতি চাকরির অনিশ্চিয়তায় অনেক বড় ভূমিকাই রাখে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও নীতি থাকে কর্মীকে বদলি করার। অর্থাৎ কোনো সেকশনের গুরুত্ব শেষ হয়ে গেলে অনেক কর্মীকেই পুরোপুরি চাকরিচ্যুত না করে অন্য সেকশনে পাঠানো হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান হুট করেই কোনো কারণ না দেখিয়েই চাকরিচ্যুত করে। এসব কিছু নির্ভর করে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের ওপর। তাই আপনার চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই লক্ষ্য করতে হবে যে কর্মী ছাটাই এর হার কেমন। একই সাথে জানতে হবে তারা কি কি কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তাহলেই প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াই পলিসি বা নীতি সম্পর্কে একটি ধারনা পাওয়া যাবে। ফলে চাকরির অনিশ্চয়তা সম্পর্কেও ধারনা পাবেন।

চাকরির অনিশ্চয়তা কমানোর উপায় 

চাকরির অনিশ্চয়তা কমানোটা কখনোই পুরোপুরি আপনার নিয়ন্ত্রণে আসা সম্ভব না। তবে আপনি যদি কিছু সাধারণ নিয়মাবলী মেনে চলেন তাহলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি অনেকটাই কমতে পারে। 

ভয় পাবেন না 

চাকরিটা অনিশ্চিত এটা বোঝার পরে অনেকেই অনেক বেশি ভয় পেয়ে যান এবং চিন্তিত হয়ে পড়েন। চাকরি যেহেতু আমাদের রুজির ব্যবস্থা করে তাই এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ভয় পেলে বা চিন্তিত হলে কিন্তু লাভ হয় না। বরং উলটো ক্ষতিই হয়। কারণ মানুষ যখন মরিয়া হয়ে ওঠে তখন সে পদে পদে ভুল করতেই থাকে। 

উপরন্তু চাকরি হারানোর ভয় যে শুধু নিচু পদের কর্মচারীরা পায় তা কিন্তু নয়। বরং একদম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই ভয়ে থাকেন। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশের ৩,০০০ সিইও (CEO) বা চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের ওপর চালনো একটি সমীক্ষাতে দেখা যায় শতকরা ৭২ ভাগ সিইও চাকরি হারানোর ভয়ে থাকেন। কারণ তাদের বেশিরভাগ মনে করেন তারা নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় মতো পরিবর্তিত হতে পারছেন না। 

পরিকল্পনা করুন

চাকরিটা অনিশ্চিত তা বোঝার সাথে সাথেই একটি পরিকল্পনা করে ফেলুন। প্রথমেই আঁচ করার চেষ্টা করুন কবে নাগাদ আপনার চাকরিটি যেতে পারে। এটি বোঝাটা বেশ কঠিন। আর কর্তৃপক্ষ যদি ইতোমধ্যে সিধান্ত নিয়ে থাকে যে আপনি বা আরো কয়েকজনের চাকরিটা আর থাকছে না, তাহলে সেই সিধান্ত বদলানোর সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। তবে আপনাকে আপনার চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে। কারণ যদি এখনো সিধান্ত না নিয়ে থাকে, তাহলে হয়তো আপনার চাকরিটা বজায় থাকতেও পারে।

পরিকল্পনা প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কি কি সমস্যা আছে। যদি মালিক পক্ষের কাউকে প্রতিষ্ঠানে স্থান দেওয়ার জন্য আপনার পদটির প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে আপনার কিছুই করার নেই। কিন্তু সমস্যাটি কিন্তু আসলে আপনার ভেতরেও থাকতে পারে। তাই নিজের সমস্যাগুলো বের করে সেগুলো খুব দ্রুত সমাধানে মনোযোগ দিন। 

ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন

অল্প সময়ের মধ্যে চাকরির নিশ্চিয়তা বাড়াতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই। পূর্বেই বলেছি, দুইজন চাকরিজীবীর মধ্যে যার সম্পর্ক সবার সাথে ভাল, তার চাকরীটিই বেশি স্থায়ী হয়। এছাড়াও ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি দলে কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে পারবেন। যা কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে আপনার কাজ করার আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। একাকী কাজ করে বিরক্ত বোধ করবেন না। এতে করে আপনার কাজের গতি বাড়বে যা আপনার চাকরির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে দাঁড়াবে। চাকরির স্থায়িত্ব বাড়াতে এবং কর্মক্ষেত্রে প্রফুল্ল থাকতে সহকর্মী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই।

কর্মদক্ষতা বাড়ান

একজন চাকরিজীবী হিসেবে আপনার কর্মদক্ষতা যত, প্রতিষ্ঠানে আপনার মূল্য তত। তাই যদি মনে করেন যে আপনার গুরুত্ব বা আপনার দলের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানে কমে যাচ্ছে, তাহলে কর্মদক্ষতা বাড়ান। সম্ভব হলে আরো বেশি পরিমাণে কাজ করে আপনার দলের গুরুত্ব তুলে ধরুন। আর যদি আপনার দলের কাজটিই গুরুত্বহীন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অন্য কাজে দক্ষতা অর্জন শুরু করুন। 

অনেকে মনে করেন তিনি যেই বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন শুধু সেই বিষয়েই দক্ষতা অর্জন করবেন। বিষয়টি এমন নয়। অনেক ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। যেখানে পরিচালনার করার কথা অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাত্রদের। আবার একই ভাবে একজন বিবিএ গ্র্যাজুয়েট যদি গ্রাফিক্সের কাজে অনেক ভাল হন, তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত কর্মক্ষেত্রে আপনি কি ডিগ্রি নিয়েছেন তার চেয়ে অনেক গুরুত্ব পায় আপনি কি কি কাজ পারেন। আপনি যদি ভাল ভাবে কাজ পারেন তাহলে আপনি সে বিষয়ে ডিগ্রি আছে কি নেই তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষত বর্তমান আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে দক্ষতার গুরুত্ব ডিগ্রির গুরুত্ব থেকে অনেক বেশি। বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রেও দক্ষতাই শেষ অবধি বেশি গুরুত্ব পায়। তাই যদি মনে করেন আপনি অন্য একটি দক্ষতা অর্জন করে ভিন্ন একটি কাজে আপনার প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে পারবেন। তাহলে বসে থাকবেন না। আপনার দক্ষতা যদি দুই মাত্রার হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানে আপনার গুরুত্বও দ্বিগুণ হবে। 

অতিরিক্ত পরিশ্রম করুন 

আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবত কর্মক্ষেত্রে অলস হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন, তবে তা পরিবর্তন করার এখনই সময়। যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার চাকরির অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে, তাহলে আর অপেক্ষা করবেন না। যদি কর্মক্ষেত্রে দেরিতে আসার অভ্যাস থাকে তবে তা পুরোপুরি বাদ দিন। প্রয়োজনে অফিসের কাছেই বাসা নিন। 

কাজে অতিরিক্ত মনোযোগ দিন। দিনের কাজ দিনে এবং সময়ের কাজ সময়ের আগেই শেষ করার চেষ্টা করুন। এতে প্রমাণিত হবে যে আপনি চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনে যেসব বিরক্তিকর কাজ কেউ সহজে করতে চায় না তেমন কাজও কিছুদিন স্বেচ্ছায় করুন। বিশেষত কোনো ভোক্তা বা ক্লায়েন্ট (Client) যদি আপনার নামে অভিযোগ দিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করুন। ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চান ও তাকে বুঝিয়ে বলুন অভিযোগটি উঠিয়ে ফেলতে।

শেষকথা

অনেক মধ্যবিত্তের জন্যই একমাত্র চাকরিটি হারানো অত্যন্ত ভীতিকর একটি বস্তু। মানুষ একটি সামাজিক জীব। আর সমাজে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে চাইলে বেশিদিন অনিশ্চিত জীবন কাটানো যায় না। আর নিশ্চিত জীবনের জন্য চাই একটি আয়ের উৎস। আমাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তা চাকরি। তাই চাকরির অনিশ্চয়তা বোঝার সাথে সাথে তা কাটানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠুন। আর যদি বুঝতে পারেন যে আপনার পক্ষে তা সম্ভব নয় তবে অতি দ্রুত নতুন চাকরির খোঁজ করুন। সর্বোপরি একজন চাকরিজীবী হিসেবে সর্বদা সাবধান ও কর্মব্যস্ত থাকুন। যাতে চাকরি হারানোর মত বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীনই আপনাকে হতে না হয়।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। চাকরি হারানো বা চাকরির অনিশ্চিয়তার ব্যাপারে কি পরিবারকে জানানো উচিত?

উত্তরঃ এটা নির্ভর করবে আপনার পরিবারে কে কে আছেন এবং তারা কিভাবে খবরটিকে নেবেন তার ওপর। যদি তথ্যটি জানানোর পরে তারা নিজেরাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন তাহলে না জানানোই শ্রেয়। কারণ এতে আপনার ওপর আরো বেশি মানসিক চাপ পড়বে। চেষ্টা করুন নতুন চাকরি দ্রুত খোজার। আবার যদি নিশ্চিত হন যে চাকরিটি হারাচ্ছেনই এবং খুব সাথে সাথেই অন্য কোথাও চাকরির সম্ভাবনা নেই, তাহলে আগে থেকেই বিষয়টি জানানো ভাল।

২। চাকরির অনিশ্চিয়তার ব্যাপারটি সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করবো কি না?

উত্তরঃ যদি মনে করেন আপনার ওই সহকর্মীও আপনার মতই চাকরি হারাতে যাচ্ছে তাহলে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু আপনার সহকর্মীর সাথে যদি আপনার সম্পর্ক ভাল না থাকে অথবা সে যদি পরিপক্ক না হন তাহলে আলোচনা না করাই শ্রেয়। কারণ সে এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে হম্বি-তম্বি করলে তার প্রভাব অবশ্যই আপনার ওপর পড়বে।

৩। চাকরির অনিশ্চয়তা দেখা দিলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলা উচিত কি না?

উত্তরঃ তার সাথে সম্পর্ক খারাপ না থাকলে সরাসরিই কথা বলা উচিত। তাকে এই নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত যে আপনি এখন থেকে কর্মক্ষেত্রে আরো বেশি অবদান রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button