চাকরিপেশা

চাকরিতে যেভাবে বেতন নিয়ে আলোচনা করবেন

আমাদের দেশে নিতান্ত শখের বশে চাকরি করেন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। এদেশে অধিকাংশ মানুষই নিজের বা নিজের পরিবারের ভরণপোষণ অথবা পরিবারের আয়কে আরো কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যই চাকরিতে প্রবেশ করেন। সেখানে প্রত্যেকে তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী মাস শেষে নির্দিষ্ট একটা অঙ্কের বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু চাকরিজীবীর সঠিক ধারণা না থাকায় অনেক সময়ই অনেক প্রতিষ্ঠান তার অধীনে কাজ করা চাকরিজীবীদেরকে কম বেতনে চাকরি করার জন্য নিয়োগ দিতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে চাকরির বাজারে একটি পদের চাকরির বেতন বৃদ্ধি পেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে একজন চাকরিজীবীকে তার বেতনের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করতে হয়। এবং সেসময়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো বেশী বেতনের জন্য মনোনীত হতে হয়। এ বিষয়ে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করতে হয় এ বিষয়ে ধারণা থাকা খুবই জরুরী। তাই এখানে কিভাবে চাকরিতে বেতনের ব্যাপারে আলোচনা করতে হয় সে সম্পর্কে লেখা হচ্ছে।

যেসকল ক্ষেত্রে চাকরিতে বেতন নিয়ে আলোচনা করা উচিত

চাকরিতে প্রবেশের সময় হঠাৎ করেই বেতনের বিষয়ে কথা বলা বা আলোচনা করা উচিত নয়। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদারিত্ব প্রকাশ করে। এখানে কোন কোন সময় চাকরিতে বেতন নিয়ে আলোচনা করতে হবে তার ব্যাপারে উল্লেখ করা হলোঃ

চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার ক্ষেত্রে যা করবেন

চাকরি জীবন শুরুর আগে প্রায় সবাইকে আগে ঐ চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে হয়। চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ইন্টারভিউ এর মাঝে বা শেষে বেতন নিয়ে আলোচনা করা। এক্ষেত্রে সবসময়ই কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

নিজে থেকে বেতনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন না

চাকরির ইন্টারভিউ এর সময় একজন প্রার্থীর নিজে থেকে কখনোই বেতনের কথা উত্থাপন করা উচিত নয়। ইন্টারভিউ এর প্রায় পুরোটা সময় নিজের যোগ্যতা প্রদর্শন করতেই ব্যয় করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চাকরিদাতা নিজেই বেতন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। সে সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে নিজের চাহিদার ব্যপারে জানিয়ে দিতে হবে চাকরিদাতাকে। ইন্টারভিউতে নিজে থেকে বেতনের কথা উত্থাপন করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূর্বলতা প্রকাশ করে। এই বিষয়টি ঐ প্রার্থীর চাকরির জন্য মরিয়া থাকার বিষয়টিও বোঝায়। যা একজন প্রার্থীকে চাকরিদাতার সামনে অরক্ষিত করে ফেলতে পারে। এর ফলে চাকরিদাতা ঐ বিষয়টিকে ব্যবহার করে আবেদনকারীকে প্রয়োজনের তুলনায় কম বেতনে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

ইন্টারভিউতে বেতনের প্রসঙ্গে নিয়োগকর্তার সাথে তর্কে জরাবেন না

চাকরির ইন্টারভিউতে নিয়োগকর্তারা সবসময়ই কম বেতনে অধিক দক্ষতার কর্মী নিয়োগ দিতে চাইবেন। তাই ইন্টারভিউতে বেতনের প্রসঙ্গ আসার পরে আবেদনকারীকে তারা কম বেতনে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিতেই পারেন। এটি কখনো কখনো নিয়োগকর্তারা আবেদনকারীর চাকরিটির এবং পদের বেতনের বিষয়ে আবেদনকারীর যথাযথ জ্ঞান আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্যও করে থাকতে পারেন। এধরনের পরিস্থিতিতে কোন অবস্থাতেই বেতন বাড়ানোর জন্য দরদাম করা যাবে না। সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে আবেদনকারী তার আশানুযায়ী বেতনের পরিমান বলতে পারেন এবং নিয়োগকর্তারা উক্ত বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তর্কে না জড়িয়ে ভদ্রভাবে চাকরিটি প্রত্যাখ্যান করে ইন্টারভিউ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

চাকরির পদ এবং নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনের পরিমান জানুন

চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে আবেদন করা পদ এবং কোম্পানীর ব্যাপারে এবং উক্ত পদের জন্য কত টাকা বেতন দেওয়া হয় তা জেনে নিতে হবে। পদের পাশাপাশি আবেদনকারীর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কারণে কোথাও কোথাও বেতনের তারতম্য হতে পারে। তাই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে অনলাইন থেকে অথবা সম্ভব হলে উক্ত কোম্পানীতে কর্মরত কোন চাকরিজীবীর থেকে বেতনের ব্যপারটি জেনে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজের চাহিদার পরিমানটি ঠিক করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ইন্টারভিউতে সুযোগ থাকলে সেই অনুযায়ী বেতনের চাহিদা প্রকাশ করতে হবে নিয়োগদাতাদের কাছে। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সবসময়ই খেয়াল রাখা উচিত। প্রথমত খুবই অবাস্তব ভাবে বেশী অঙ্কের বেতন চাওয়া যাবে না এবং দ্বিতীয়ত নিজের চাহিদার চাইতে সামান্য পরিমানে বেশী বেতনের দাবী জানাতে হবে। যাতে করে নিয়োগদাতারা আবেদনকারীর চাকরির বেতন সম্পর্কে ধারণা আছে তা বুঝতে পারে।  

আবেদনকারীর পূর্ববর্তী চাকরির বেতনের ব্যপারে জানাবেন না

চাকরির ইন্টারভিউতে কখনো কখনো নিয়োগকর্তারা আবেদনকারীর পূর্ববর্তী চাকরির বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন। এটি স্বাভাবিক একটি বিষয়। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী চাকরিতে নিজের অবদান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার থেকে পাওয়া প্রশংসাপত্র, ঐ কোম্পানীর মুনাফা বৃদ্ধিতে নিজের অবদান বলতে হবে। কিন্তু এরপর প্রসঙ্গক্রমে ঐ চাকরিতে পাওয়া বেতনের পরিমান জানতে চাইতে পারেন নিয়োগকর্তারা। এটি জানানো কোন ক্রমেই উচিত নয়। এধরনের প্রশ্নের উত্তর সর্বদা খুব সাবধানতার সাথে এড়িয়ে যেতে হবে। যদি কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে আপনি এই বিষয়ে জানাতে আগ্রহী নয় তা ভদ্রতার সাথে বলতে হবে। এই প্রশ্নটি সাধারণত সবসময়ই আবেদনকারীর বিরুদ্ধে তাকে কম বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চাকরির বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যা করবেন

চাকরি করার মাঝে বিভিন্ন কারণেই চাকরিজীবীর কখনো মনে হতে পারে যে সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী যথেষ্ট বেতন পাচ্ছে না। এধরনের পরিস্থিতিতে কোন কোন ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কিভাবে বেতন বাড়ানোর কথা বলতে হবে সেগুলো এখানে দেওয়া হলোঃ

উক্ত পদের বেতনের ব্যপারে জেনে নিন

বেতন বাড়ানোর আবেদন করার আগে অবশ্যই নিজের পদে একই কোম্পানীতে কত বেতন দেওয়া হচ্ছে, অন্যান্য কোম্পানীতে এই পদের জন্য কত বেতন দেওইয়া হচ্ছে সেগুলো জেনে নিতে হবে। এরপর যদি সে অনুযায়ী বেতন কম হয়ে থাকে তাহলেই আবেদন করতে হবে বেতন বাড়ানোর জন্য। এছাড়াও বেতন কাঠামো সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নিয়ে রাখতে হবে বেতন বাড়ানোর আবেদন করার আগে। বেতন বাড়ানোর আবেদন করার সময় নিজের বেতন গ্রেড থেকে কিছুটা বেশী বেতন চাওয়াটাই ভালো।

সুনির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন বাড়ানোর জন্য দাবি করুন

বেতন বাড়ানোর জন্য দাবী করার সময় সবসময় একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করে দিতে হবে। কখনোই বেতন বাড়ানোর পরিমান নির্ধারণ করার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট পরিমান উল্লেখ না করার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেতন বাড়ানোর বিষয়টির গুরুত্ব থাকে না। ফলে আবেদন ব্যর্থ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস থাকার বিষয়টিও খুবই প্রয়োজনীয়। চাকরিজীবীকে তার বেতন বাড়ানোর জন্য খুবই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে হবে এবং সঠিকভাবে বেতনের অঙ্কটি উল্লেখ করে দিতে হবে।

আবেদনের সুনির্দিষ্ট যুক্তি প্রদর্শন করুন

বেতন বাড়ানোর আবেদন করার সময় উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুনির্দিষ্ট যুক্তি দেখাতে হবে বেতন বাড়ানোর। আবেদন করার পরে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বেতন বাড়াতে চাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে। সেই সময় আত্মবিশ্বাসের সাথে আবেদনকারী কিভাবে কোম্পানীর লাভ অর্জনে ভূমিকা রাখছে সেটি দেখাতে হবে। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় বেতন কাঠামো, অন্যান্য সহকর্মীদের বেতনের বিষয়েও উল্লেখ করতে হবে। কোনক্রমেই বেতন বাড়ানোর আবেদন করে চুপ করে থাকা যাবে না বা অস্পষ্ট ভাবে কথা বলা যাবে না। এছাড়াও ব্যাক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে, বা কোন ধরনের সহমর্তিতা আদায়ের চেষ্টা করে বেতন বাড়ানোর আবেদন করার চেষ্টা না করাই ভালো।

শেষকথা

বর্তমানে সময়ের সাথে খুব দ্রুতই জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বাড়ছে। তাই তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য অনেকেরই বেতন স্কেল অনুযায়ী বৃদ্ধি পাওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারার অভাবে অনেকেই নিজের চাহিদার কথা ঠিক ভাবে বলতে পারে না চাকরির সময়। ফলে বেতনের দিক থেকে অনেকেই অনেক কম মূল্যে কাজ করে ঠকছে। তাই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন চাইতে পারার বিষয়টি সবারই জানা প্রয়োজন। এই ব্যাপারে উপরের লেখাটি আপনাদের সাহায্য করবে বলেই আশাবাদী। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button