চাকরিপেশা

কিভাবে বুঝবেন চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে?

জীবনে চলার পথে আয়-রোজগারের অন্যতম একটি মাধ্যম চাকরি। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকি আমরা। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা যায় চাকরি ছেড়ে দিলে নিজের জন্য ভালো। তবে অনেকেই এই বিষয়টা বুঝে উঠতে পারে না। এই বিষয়টি সহজ ভাবে উপস্থপনের জন্যই এই আর্টিকেলটি নিয়ে এসেছি আমরা। 

কেন চাকরি ছাড়বেন?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি সোনার হরিণ। ভালো মানের বেসরকারি চাকরি পাওয়াও কষ্ট সাধ্য। তবে ব্যাটে বলে মিলে যাওয়ার পরও অনেক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয় যে চাকরিটি ছেড়ে দিতে হবে। তবে চাকরি ছাড়ার আগে যা করা উচিত এবং যা করা উচিত নয়  এই বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। বিভিন্ন কারণে মানুষ চাকরি ছেড়ে থাকে। অনেক সময় কেউ কেউ চাকরির অনিশ্চয়তা বুঝতে পেরে নিজে থেকে চাকরি ছেড়ে দেয়, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে চাকরি ছাড়তে চায়। কিন্তু চাকরি ছাড়ার সময় হয়েছে কি না এই বিষয়ে নিশ্চিত না তারা।বেসরকারি চাকরি সহজে ছাড়া গেলেও সরকারি চাকরি ছাড়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও আইনকানুন রয়েছে যা মেনে সরকারি চাকরি ছাড়তে হয়। চাকরি ছাড়ার সময় হয়েছে কি না আর কি কি কারণে চাকরি ছাড়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে এ পর্যায়ে। 

যেভাবে বুঝবেন আপনার চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে

চাকরির অনিশ্চয়তা বুঝতে পেরে

চাকরি মানে এক রকম পরাধীনতার সাথে বাস করা। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পর বেরিয়ে যেতে হবে, ছুটি কম সব মিলিয়ে অনেক রকম সীমাবদ্ধতা আছে। তাছাড়া দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অত্যাধিক দুর্নীতি হয় এসব নিয়ে প্রতিবাদের সুযোগও থাকেনা। কেননা প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেখা যায় উল্টো নিজেরই ক্ষতি। যদি কোনো ভাবে বুঝতে পারেন যে আপনার চাকরিটি অনিশ্চিত, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে কোনো একটি কারণের জন্য তাদের সাথে রাখতে চাচ্ছে না; সেক্ষেত্রে আপনার যদি সম্ভব হয় অন্য কোথাও ভালো চাকরি পাওয়ার সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে অফিস থেকে বলার আগেই নিজেই পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়া। এতে করে আত্মসন্মানে আঘাত লাগবে না।

চাকরিতে বেতন নিয়ে আলোচনা করতে না পেরে

সরকারি চাকরিতে বেতন নিয়ে খুব একটা সমস্যা না হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন সমস্যা দেখা যায়। চাকরিতে যোগদান করার কয়েক বছর পার হলে বেতন বাড়ার কথা থাকলেও দেখা যায় বেতন অপরিবর্তনীয়ই থেকে যায়। বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলতেও হিনমন্যতায় ভোগে। কাজের তুলনায় প্রাপ্য কম হলে তা কখনোই সুখকর নয়। বেতন নিয়ে আলোচনা করতে না পেরে যদি সুযোগ থাকে অন্য কোথাও ভালো, অন্তত বর্তমানের থেকে বেশি বেতন, সন্মান পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন চাকরিতে যোগদান করাই ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কাজে একঘেয়েমী আসায় উৎসাহ হারালে

কোনো কাজে একঘেয়ে হয়ে গেলে তা কোনো কালেই করতে উৎসাহ পাওয়া যায় না। যদি এমন হয় যে আপনি যে কাজ করছেন তাতে একঘেয়েমী চলে আসছে , কোনো ভাবেই কাজে মন দিতে পাচ্ছেন না, উৎসাহ আসছে না এমন হলে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ যে কাজে উৎসাহ নেই সেই কাজ করে কখনো ভালো কিছু আশা করা যায় না। এমনটা অনেকেরই হয়। সেক্ষেত্রে যদি সুযোগ থাকে নতুন কোথাও যদি চাকরি করার সুযোগ থাকে তবে বর্তমানের চাকরি ছেড়ে দেওয়া নিজের জন্য ভালো। কারণ, মনের বিরুদ্ধে কিছু করে কেউ খুশি থাকতে পারে না। 

যতোটুকু অর্জনের লক্ষ্য ছিলো তা অর্জন হয়ে যাওয়ায়

অনেক সময় আমরা কাজের গতি হারিয়ে ফেলি, এর অন্যতম একটি কারণ হলো যতোটা অর্জন করার আশা করা হয়েছিলো তা অর্জন করা হয়েছে। অর্জনের পর আর কাজটি করার উৎসাহ না থাকাই স্বাভাবিক। কেননা চাওয়া জিনিস পাওয়া গেলে মানুষ আর ওই কাজ ববা জিনিসটির উপর উৎসাহ পায় না। যে কারণে কাজে অনীহার জন্ম নেয়। যখন এমনটা দেখা যায় তখন ধরে নিতে হবে চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। 

প্রতিষ্ঠানে যোগ্য সন্মান না পেলে

চাকরিসূত্রে আপনি যেখানেই যান না কেনো সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য সন্মান বাঞ্ছনীয়। যদি প্রতিষ্ঠানে যোগ্য সন্মান না পাওয়া যায় তখন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে। দিনকেদিন কাজ করার ইচ্ছে হারিয়ে যাবে। যোগ্য সন্মান ছাড়া কোথাও কাজ করে শান্তি পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায় সহকর্মীরা যোগ্য সন্মান না দিয়ে বরং তাকে হাসির খোরাক বানাচ্ছে, এতে করে হিনমন্যতার সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠানে যোগ্য সন্মান না পেলে বুঝে নিতে হবে এই চাকরি আপনার জন্য না, চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।

অফিসের পরিবেশ কাজ করার অনুপোযোগী হলে

কাজ করার আগে চাই একটি সুন্দর পরিবেশ। যদি পরিবেশ ভালো না হয় তবে কাজ করে আনন্দ পাওয়া যাবে না কেননা পরিবেশের উপরই কাজের গতি নির্ভর করে। স্যাতস্যাতে, অপরিষ্কার পরিবেশ কাজের জন্য তো উপযোগী নয়ই তার উপর শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। এমন পরিবেশে দীর্ঘদিন কাজ করতে হলে বুঝে নিতে হবে আপনার চাকরি ছাড়ার সময় হয়েছে। 

প্রতিষ্ঠানের উন্নতি পরিলক্ষিত না হলে

প্রতিটি মানুষই চায় সে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে সেই প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত যেন ভালোর দিকে যায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দেখা যায় কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে নিজেদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য। অর্থাৎ এক রকম ভবিষ্যৎ আলোহীন দেখা যায়। এক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে নতুন কোথাও যুক্ত হওয়া উচিত।

অন্য কোথাও ভালো সুযোগ মিললে

প্রত্যেকেই ভালো অবস্থানে যেতে চায়। নিজের যোগ্যতা গুণেই পৌছাতে হয় সেসব অবস্থানে। অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেখানে চাকরি করছেন সেখানে অনেক ভালো কাজ করার পরও আপনার কোনো প্রমশন হচ্ছে না। কিন্তু আপনার ভালো কাজের কারণে যে কোনো ভাবেই যে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠান সুযোগ মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে যাচাই বাছাই করে যদি মনে হয় উক্ত প্রতিষ্ঠানটি আপনার জন্য ভালো হবে, ভালো সুযোগ সুবিধা মিলবে তবে আপনার বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।

শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে

যে কোনো কাজ করার আগে শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন। শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কাজই আনন্দদায়ক হয় না। কাজ আনন্দ মুখর করতে শারীরিক সুস্থতার বিকল্প নেই। অধিক শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে চাকরি ছেড়ে দেয়া ভালো। কেননা ঠিক ভাবে কাজ না করতে পারলে প্রাতিষ্ঠানিক নানা রকম চাপ আসে। যাতে মানসিক ভাবে ভেঙে পরার সুযোগ থাকে। যদি সম্ভব হয় যে চাকরি ছাড়লেও সুন্দর ভাবে জীবন কাটানো যাবে সেক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা সুস্থতাই সব কিছুর আগে।

শেষ কথা

চাকরি ছেড়ে দেওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সুখকর পরিস্থিতি না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় চাকরি ছেড়ে দেয়াও কখনো কখনো সুখকর। যদি চাকরিতে থাকলে মানসিক, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পরিমাণ বেড়ে যায়, সামর্থ থাকলে তার চাকরি ছেড়ে দেওয়া ভালো। তখন তার বুঝে নেয়া দরকার তার চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। তবে সব কিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button