কম্পিউটারকম্পিউটিংটেকনোলজি

এন্টিভাইরাস কি? সেরা ১০ ফ্রি এন্টিভাইরাস

বর্তমান বিশ্ব যেভাবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে সেই তথ্যের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা তাই অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরাস থেকে কম্পিউটারগুলোকে রক্ষা করতে দরকার এন্টিভাইরাস। আজকের এ লেখাতে এন্টিভাইরাস কি, কিভাবে কাজ করে এবং সেরা দশ এন্টিভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সূচিপত্রঃ

এন্টিভাইরাস কি? 

এন্টিভাইরাস হচ্ছে একটি সফটওয়্যার বা পোগ্রাম, যা আপনার ডিভাইসকে ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা করে থাকে। কম্পিউটার ভাইরাস যখন কম্পিউটার এ প্রবেশ করে ক্ষতি করার চেস্টা করে, তখন এন্টিভাইরাস স্ক্যান করার মাধ্যমে সেই ভাইরাসটিকে শনাক্ত করতে পারে ও তা রিমুভ করতে পারে। ভাইরাস যেমন একটি পোগ্রাম তেমনি এন্টিভাইরাস ও একটি পোগ্রাম ই, পার্থক্য হচ্ছে ভাইরাস তৈরি করা হয় ক্ষতি করার জন্য আর এন্টিভাইরাস তৈরি করা হয় সেই ভাইরাসকে নিস্ক্রিয় করার জন্য। অর্থাৎ, এন্টিভাইরাস হচ্ছে ভাইরাস থেকে ডিভাইসকে রক্ষা করার প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

এন্টিভাইরাস কিভাবে ভাইরাস থেকে রক্ষা করে? 

এন্টিভাইরাস একটি সফটওয়্যার অর্থাৎ কম্পিউটার পোগ্রাম। এটি যখন তৈরি করা হয় তখন এতে ভাইরাসের বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন ইনক্লুড করে দেওয়া হয়। ফলে যখন ভাইরাস ডিভাইসকে আক্রমন করে, তখন এন্টিভাইরাস স্ক্যান করার সময় সেই ভাইরাসের সাথে ওই প্যাটার্নের মিল খুজে পায়। সাথে সাথে এন্টিভাইরাস ভাইরাসকে শনাক্ত করে ফেলে এবং আপনাকে সতর্ক করে যে ভাইরাস আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে। এরপর সেই ভাইরাসযুক্ত ফাইলটি থেকে সেই প্যাটার্নের সাথে মিলযুক্ত অংশ রিমুভ করে দেয়৷ ফলে ডিভাইসটি ভাইরাসমুক্ত হয়। সাধারনত ভাইরাসের গঠন অনেক জটিল হয়, ফলে এটি শনাক্ত করা কঠিন হয় এবং শনাক্ত হলেও তা রিমুভ করা অনেক কঠিন হয়। তাই এন্টিভাইরাস এর পোগ্রাম ও অনেক জটিল হয়। নিত্যনতুন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে যা আগের ভাইরাসের প্যাটার্নের থেকে অনেক ভিন্ন। তাই এন্টিভাইরাস এর ও প্রতিনিয়ত আপডেট করে এই প্যাটার্ন কে ইনক্লুড করতে হয় যাতে নতুন এ ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করলে এন্টিভাইরাস সেটি শনাক্ত করতে পারে। এভাবেই এন্টিভাইরাসের মাধ্যমে ভাইরাসের বিভিন্ন প্যাটার্ন মিলিয়ে তা শনাক্ত ও রিমুভ করা হয়। 

সেরা ১০ ফ্রি এন্টিভাইরাস ডাউনলোড করুন

১) Avast Free Antivirus

Avast Free Antivirus

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সকল ফ্রি এন্টিভাইরাস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে এই Avast এন্টিভাইরাস। এই অ্যাপটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী হওয়ার পাশাপাশি ব্যবহারেও অনেক সহজ হওয়ার কারনেই এত এতটা জনপ্রিয়তা। তাই আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সেরা একটি এন্টিভাইরাস হতে পারে Avast Antivirus. 

সুবিধাসমূহঃ

  • ভাইরাসের বিরুদ্ধে অনেক কার্যকরী। ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি কতটা কার্যকর প্রমানের জন্য এটির যতগুলো টেস্ট করা হয়েছে তাতে এটির স্কোর বেশ ভালো৷ 
  • ভিপিএন রয়েছে। এটি ব্যবহার করে আপনার লোকেশন ও নেটওয়ার্ক ট্রাফিক গোপন করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
  • উইন্ডোজ, Mac OS, এন্ড্রয়েড সবধরনের অপারেটিং সিস্টেম এই এটি ব্যবহার করা যাবে।
  • ম্যালওয়ার থাকতে পারে এমন URL Link দিয়ে ম্যালওয়ার প্রবেশের আগেই ব্লক করে দেয়।
  • এটির একটি do not disturb এর ফিচার রয়েছে যার ফলে এটি আপনাকে বিভিন্ন পপ আপ বিজ্ঞাপন বা স্ক্যাম নোটিফিকেশন থেকে রক্ষা করে থাকে।

অসুবিধাসমূহঃ

  • এন্ড্রয়েড ও IOS এ এর ভাইরাস শনাক্ত করার ও রিমুভ করার ক্ষমতা কিছুটা সীমিত। এটি কম্পিউটারের জন্যই বেশি উপযুক্ত।
  • ফায়ারওয়াল ফিচার থাকলেও তা অতটা আধুনিক নয়। 
  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই। 
  • স্ক্যান চলাকালীন কম্পিউটারের গতি কিছুটা স্লো করে দিতে পারে। 

২) Avira Free Antivirus

Avira Free Antivirus

জার্মানির এই এন্টিভাইরাস অ্যাপটিও সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়, প্রায় ৫০০ মিলিওন ইউজার এই এন্টিভাইরাসটি ব্যবহার করে থাকেন। শুধুমাত্র ভাইরাস স্ক্যান করার পর শনাক্ত করা ছাড়াও এটি আলাদা কিছু সুবিধা প্রদান করে বলেই এই এন্টিভাইরাসটি এত জনপ্রিয়৷ 

সুবিধাসমূহঃ

  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার রয়েছে।
  • সীমিত মাত্রার ভিপিএন ফিচার রয়েছে, যার ফলে আপনার লোকেশন ও ইন্টারনেট ট্রাফিক গোপন করা সম্ভব হয়৷ 
  • অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে এই অ্যাপটির একটি ‘প্রাইস কম্পেরিজন ফিচার’ রয়েছে। অর্থাৎ একটি ই-কমার্স সাইট থেকে আপনি পন্য করতে গেলে অন্যান্য সাইটেও এই পন্যের মূল্য কত তা আপনাকে তুলনা করে দেখানো হয়, ফলে আপনার জন্য অর্থ সাশ্র‍য় করে সেরা পন্যটি বাছাই করতে সুবিধা হয়।
  • ফিশিং সাইট ও ম্যালওয়ার যুক্ত URL লিংক সম্পর্ক আপনাকে আগাম সতর্ক করে এবং ব্লক করে দেয়।

অসুবিধাসমূহঃ

  • এটির ভাইরাস শনাক্ত করা ও ভিভাইসের সেই ভাইরাসমুক্ত করার ক্ষেত্রে পারফর্মেন্স অত ভালো নয়৷ সাধারন ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকরী হলেও আপনি যদি আপনার ডিভাইসকে একদম নতুন ও খুব শক্তিশালী ভাইরাস থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে চান সেক্ষেত্রে এটি অত কার্যকর নয়। 
  • অনেক গুলো ফিচারের ক্ষেত্রে পেইড ভার্সনটি ক্রয় করতে হয়। তবে সাধারন ব্যবহারকারীরা ফ্রি ভার্সনটি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।

৩) Microsoft Defender Antivirus

Microsoft Defender Antivirus

উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের কাছে এই এন্টিভাইরাসটি অত্যন্ত পরিচিত, কারন সব উইন্ডোজ এই এই এন্টিভাইরাসটি ডিফল্ট ভাবেই ইনস্টল করা থাকে। তবে উইন্ডোজ ছাড়াও অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীরাও  চাইলে মাইক্রোসফট এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।

সুবিধাসমূহঃ

  • এটি উইন্ডোজে ডিফল্ট ভাবেই ইনস্টল করা থাকে। তো উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের আলাদা করে ডাউনলোড করার ঝামেলা পোহাতে হবেনা।
  • স্ক্যান চলাকালীন সময়েও কম্পিউটারের গতি স্বাভাবিক থাকে, অন্যান্য এন্টিভাইরাস অ্যাপের মতো কম্পিউটারের গতি স্লো করে দেয় না।
  • অ্যাপটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। অর্থাৎ এটি বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি। তাই আপনি এটি ব্যবহার করে স্ক্যান করা ও ভাইরাস রিমুভ করার কাজটি সহজেই করতে পারবেন। 
  • অন্য কোন এন্টিভাইরাস অ্যাপ না থাকলে তা এমনিতেই সর্বদা অন থাকে এবং ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

অসুবিধাসমূহঃ

  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই
  • বিল্ট-ইন ভিপিএন ফিচার নেই
  • ফিশিং শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এটির পারফর্মেন্স অতটা ভালো নয়। 

৪)  Adware Antivirus

Adware Antivirus

ফ্রি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে Adware Antivirus টিও বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনার অপারেটিং সিস্টেম এর নিরাপত্তা সিস্টেম ছাড়াও বাড়তি নিরাপত্তার জন্য থার্ড পার্টি এন্টিভাইরাস অ্যাপ হিসেবে এটি আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। 

সুবিধাসমূহঃ

  • ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো পারফর্মেন্স দেখায়। সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তা এই অ্যাপটি দিয়েই পূরন করা সম্ভব।
  • এর রয়েছে ইমেইল প্রটেকশন ফিচার। এটি ইমেইল গুলো স্ক্যান করার মাধ্যমে এটাচমেন্ট হিসেবে কোন ভাইরাস থাকলে তা রিমুভ করে আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এছাড়াও, এটির বিশেযশ ফিচার রয়েছে যাতে আপনার কয়েকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির জন্য আলাদা তালিকা করতে পারেন, যাদের মেইল স্ক্যান করার প্রয়োজন নেই। এভাবে আপনার সময় সাশ্র‍য় হবে।
  • অ্যাপটি ডাউনলোড ও ব্যবহার করার প্রসেস খুবই সহজ। 

অসুবিধাসমূহঃ

  • অন্যান্য ফ্রি এন্টিভাইরাস এর মতো এটি ফিচারের ক্ষেত্রে অতটা সমৃদ্ধ নয়, ফিচার খুবই কম ও সিম্পল।
  • ম্যালওয়ার থাকতে পারে এরকম URL লিংক শনাক্ত করে সতর্ক করার ক্ষেত্রে এর পার্ফমেন্স অতটা ভালো নয়।
  • এটি নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না বাকি এন্টিভাইরাসগুলোর মতো। তাই কিছুটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

৫) ZoneAlarm Antivirus

Zonealarm

যদি আপনি ব্যক্তিগত ফায়ারওয়াল এর সেরাটা চান তাহলে আপনার জন্য জন্য এন্টিভাইরাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হলো ZoneAlarm Free Antivirus. ফায়ারওয়াল দ্বারা নেটওয়ার্ক ট্রাফিক কন্ট্রোলের মাধ্যমে হ্যাকারদের ইন্টারনেট অ্যাটাক থেকে আপনার সিস্টেম নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয়। 

সুবিধাসমূহঃ

  • এর ফায়ারওয়াল বেশ উন্নত। এন্টিভাইরাসের প্রধান কাজ হচ্ছে ভাইরাস বা ম্যালওয়ার সিস্টেমে প্রবেশ করলে তা শনাক্ত করা, আর এর সাথে এই ফায়ারওয়ালের কাজ হচ্ছে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক কন্ট্রোল আর মনিটর করা। এর ফলে আপনার ডিভাইসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • এই অ্যাপটির সেফ সার্চ ফিচার এর মাধ্যমে আপনি ফিশিং সাইট থেকে রক্ষা পেতে পারেন। সেফ সার্চের ক্ষেত্রে এটি আপনার ব্রাউজ করা ওয়েবসাইট গুলোকে স্ক্যান করে এবং যদি ওয়েবসাইট এমন কোন তথ্যের এক্সেস চায় ( যেমন আপনার পাসওয়ার্ড)  যা আপনার জন্য নিরাপদ নয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে তা প্রদান করা থেকে বিরত করে। ফলে আপনি ফিশিং সাইট থেকে রক্ষা পান।
  • উইন্ডোজ, এন্ড্রয়েড ও IOS এর জন্য উপযুক্ত
  • ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর পারফর্মেন্স সন্তোষজনক। 

অসুবিধাজনকঃ

  • এর বেশ কিছু ফিচার এখনো একদম বেসিক ধরনের, যার আরো আপডেট প্রয়োজন।
  • ম্যালওয়ার যুক্ত ওয়েবসাইটের ব্রাউজ করার আগেই আগাম সতর্ক করার ক্ষেত্রে এর পারফর্মেন্স অতটা সন্তোষজনক নয়।

৬) Sophos Home Free Antivirus

Sophos Home Free

যারা একাধিক ডিভাইস এ ব্যবহারের জন্য এন্টিভাইরাস চাচ্ছেন তাদের জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে এই Sophos Home Free Antivirus. এর প্যারেন্টাল ফিল্টারিং সহ অন্যান্য ফিচারের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সুবিধাসমূহঃ

  • ম্যালওয়ার থাকতে পারে এমন ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে আগাম সতর্ক করা ও আপনার সিস্টেমকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী।
  • বেশ কিছুক্ষেত্রে এটি AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর থ্রেট শনাক্ত করতে পারে। ফলে AI ব্যবহার করে হ্যাকাররা আপনার ডিভাইস থেকে তথ্য চুরি বা অন্য ক্ষতি করতে চাইলে তা এটি প্রতিরোধ করতে পারবে।
  • এটি বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি।
  • এতে রয়েছে প্যারেন্টাল ফিল্টারিং, অর্থাৎ আপনি এটি দ্বারা আপনার সন্তান বা শিশুরা ইন্টারনেটে কি কি ব্রাউজ করতে পারবে তা ঠিক করতে পারবেন। এতে শিশুরা অনিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

অসুবিধাসমূহঃ

  • ফ্রি ভার্সনটিতে ফুল স্ক্যান করতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। 
  • কুইক স্ক্যান ফিচারটি এভেইল্যাবল নয়। ফুল স্ক্যান ই করতে হবে।
  • ফিশিং সাইটের বিরুদ্ধে এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতটা শক্তিশালী নয়।
  • ভিপিএন, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই।

৭) AVG Antivirus Free

AVG Antivirus Free

AVG এন্টিভাইরাস বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় বরং ভরসাযোগ্য একটি সফটওয়্যার। পেইড ভার্সনটি ছাড়াও AVG এন্টিভাইরাসের ফ্রি ভার্সন ও এখন এভেইল্যাবল। তাই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে AVG এন্টিভাইরাস হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম সেরা একটি অপশন।

সুবিধাসমূহঃ

  • ম্যালওয়ারের বিরুদ্ধে এর পারফর্মেন্স বেশ সন্তোষজনক। 
  • এতে ইমেইল স্ক্যানার রয়েছে৷ যার ফলে ইমেইল এটাচমেন্ট হিসেবে কোন ম্যালওয়ার এসে থাকলেও আপনি তা ওপেন করার আগেই তা স্ক্যান করে ম্যালওয়ার শনাক্ত করে ফেলতে পারে এবং আপনার সিস্টেমকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • ডাউনলোড ও ব্যবহার করা খুব সহজ৷  অ্যাপটি খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি।
  • স্ক্যান ধীরগতিতে হলেও স্ক্যান চলাকালীন কম্পিউটার এর গতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। 

অসুবিধাসমূহঃ

  • IOS এ এটি ব্যবহার করা যায়না।
  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই।
  • বিল্ট ইন ভিপিএন নেই।
  • এর স্ক্যান প্রসেসটি খুবই ধীরগতির। 

৮) Kaspersky Security Cloud Antivirus

Kaspersky Security Cloud

Kaspersky ফ্রি এন্টিভাইরাস বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া এন্টিভাইরাসগুলোর একটি। এটি বেশ ভরসাযোগ্য একটি ব্র‍্যান্ড এবং এর পারফর্মেন্স ও ফ্রি এন্টিভাইরাস হিসেবে খুবই ভালো। তাই আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য আপনি Kaspersky এন্টিভাইরাসটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।

সুবিধাসমূহঃ

  • এটির ডাটাবেস প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। ফলে এটি নতুন ধরনের ভাইরাস থেকে আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষা দিতে পারবে।
  • ফিশিং সাইট শনাক্ত করা ও ব্লক করার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর। যার ফলে আপনার গোপনীয় তথ্য চুরি হওয়া বা ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
  • এটি স্ক্যান চলাকালীন সময়ে কম্পিউটারের গতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলে না অর্থাৎ গতি স্বাভাবিক ই থাকে।  
  • এন্টিভাইরাস এর টেস্টিং ল্যাবে এটি অ্যাপটির স্কোর খুবই ভালো। অর্থাৎ এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর এবং তা প্রমাণিত। তাই আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
  • সীমিত মাত্রায় ব্যবহারযোগ্য ভিপিএন রয়েছে।

অসুবিধাসমূহঃ

  • ফ্রি ভার্সনটিতে কোন সরাসরি টেক সাপোর্ট নেই। অর্থাৎ কোন সমস্যা হলে সরাসরি লাইভ চ্যাট বা কলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন না, অভিযোগ জানিয়ে অপেক্ষা করতে হবে৷ 
  • IOS এ এই এন্টিভাইরাসটির সকল ফিচার ঠিকঠাক কাজ করেনা। অর্থাৎ এটির পারফর্মেন্স IOS ব্যবহারকারীদের জন্য অতটা সন্তোষজনক নয়।

৯) Bitdefender

Bitdefender

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য এন্টিভাইরাস হিসেবে সেরা একটি অপশন হতে পারে এই Bitdefender. 

সুবিধাসমূহঃ

  • এর রয়েছে ‘বিহেভিয়ারেল থ্রেট ডিটেকশন সিস্টেম’ । যার ফলে আপনার ডিভাইসের কোন অ্যাপ বা ফাইল অস্বাভাবিক আচরন করলে তা বুঝতে পেরে একশন নিতে পারে এবং সেটি যদি ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে থাকে সেই ভাইরাসকে রিমুভ করতে পারে। 
  • এর অ্যান্টি ফিশিং ফিচার বেশ শক্তিশালী। ফলে কোন ভাইরাসযুক্ত URL এ প্রবেশ করার আগেই তা ব্লক করতে পারে।
  • এতে রয়েছে অ্যান্টি ফ্রড সিস্টেম। অর্থাৎ কোন ভুয়া ওয়েবপেজ যা আপনার ক্ষতি করতে পারে বা ক্রেডিট কার্ড, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য চুরি করতে পারে এমন ওয়েবপেজ সম্পর্কে আগেই সতর্ক করতে পারে। 

অসুবিধাসমূহঃ

  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই।
  • এর প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার থাকলেও তা অতটা কার্যকরী নয়।
  • উইন্ডোজ বাদে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমে এর কয়েকটি ফিচার কার্যকরী নয়।

১০) Panda Free Antivirus

Panda Free Antivirus

বিশ্বের এক কোটির ও বেশি কম্পিউটার ব্যবহারকারী এই এন্টিভাইরাসটি ব্যবহার করছেন। ফ্রি এন্টিভাইরাসগুলোর মধ্যে এই অ্যাপটিও আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন। 

সুবিধাসমূহঃ

  • এতে রয়েছে বিশেষ পিসি রিকভারি সিস্টেম, যার ফলে ভাইরাস আক্রান্ত ফাইলগুলো ডিলিট করার ক্ষেত্রে তা ভাইরাস বাদে বাকি ফাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷ 
  • সীমিতমাত্রায় ভিপিএন ফিচার রয়েছে। এর ফলে এটি আপনার নেটওয়ার্ক ট্রাফিক ও লোকেশন গোপন করতে পারে।
  • এর বিশেষ অ্যান্টি ফিশিং ইঞ্জিন এর ফলে এর এটি ভাইরাস বা ম্যালওয়ার যুক্ত URL লিংককে ব্লক করে দেয়। যার ফলে সেই লিংকে ক্লিক করলে যে ভাইরাস দ্বারা ডিভাইস আক্রান্ত হতো তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • অ্যাপটি দ্বারা ভাইরাস স্ক্যান ও রিমুভ করা ও অন্যান্য ফিচার ব্যবহার করা খুবই সহজ।

অসুবিধাসমূহঃ

  • এই এন্টিভাইরাসটি স্ক্যান করতে অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় অনেক বেশি টাইম নিয়ে থাকে। অর্থাৎ স্ক্যানিং এর ক্ষেত্রে এটি বেশ ধীরগতির।
  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নেই। 

শেষকথা

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারনে এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই লেখাটি থেকে আলোচিত এন্টিভাইরাস এর কার্যকর ও সেরা ১০ এন্টিভাইরাস সম্পর্কিত তথ্যগুলো আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তায় কাজে লাগবে, এমনটাই কামনা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কতদিন পরপর আপডেট করা উচিত? 

উত্তরঃ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর ক্ষেত্রে অন্যান্য অ্যাপের মত এই টাইম গ্যাপের বিষয়টি খাটে না। যদি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর নতুন ভার্সন এসে থাকে, সাথে সাথেই সেই ভার্সনে শিফট করা উচিত। কারন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত সবসময় লেটেস্ট ভার্সনটি। পুরাতন ভার্সন এর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবেনা কারন ভাইরাস ও নিত্যনতুন আপডেট হচ্ছে।

২) এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কোন সোর্স থেকে ডাউনলোড করবো?

উত্তরঃ যদি ডাউনলোড করতে হয় তবে অবশ্যই সেই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হবে। অন্যান্য কোন ওয়েবসাইট থেকে apk আকারে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডাউনলোড করা উচিত নয়, কারন তা এন্টিভাইরাস নয় বরং ভাইরাস ফাইল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যেহেতু সবসময় আপডেট করে লেটেস্ট ভার্সন ব্যবহার করতে হবে তাই অবশ্যই অফিশিয়ালভাবেই ডাউনলোড করাটাই বেটার।

৩) মোবাইলে ব্যবহারের জন্য কোন এন্টিভাইরাসটি ভালো হবে? 

উত্তরঃ মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম প্রধানত এন্ড্রয়েড ও IOS এর হয়ে থাকে। তাই এই দুই অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায় এমন যেকোন এন্টিভাইরাস মোবাইলে চলবে। আইফোন এর ক্ষেত্রে IOS ও অন্যান্য মোবাইলের ক্ষেত্রে এন্ড্রয়েডে চলবে এমন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। উপরে উল্লিখিত এন্টিভাইরাসগুলোর বেশিরভাগই মোবাইলেও চলবে। আপনি আপনার পছন্দমতো এগুলোর একটি ব্যবহার করতে পারেন। 

৪) ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যবহারের পরেও ভাইরাস রিমুভ না হলে কি করবো?

উত্তরঃ ফ্রি ভার্সনের এন্টিভাইরাসে অবশ্যই সকল ফিচার থাকেনা। যদি এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করার পরেও ভাইরাস শনাক্ত বা রিমুভ না করা যায়, সেক্ষেত্রে পেইড ভার্সনটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন৷ কিংবা অন্য কোন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। যদি তাতেও ভাইরাস দূর না হয় সেক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।

৫) কতদিন পরপর এন্টিভাইরাস দিয়ে আমার ডিভাইসকে স্ক্যান করবো? 

উত্তরঃ এটি আপনার উপর নির্ভর করে। চাইলে প্রতিদিন বা ২-৩ দিন পরপর ই করা উচিত। এতে ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করলেও বড় কোন ক্ষতি করার আগেই আপনি শনাক্ত করে তা দূর করতে পারবেন। আর প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ডিভাইসকে এন্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান অবশ্যই করতে হবে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button