Written by 1:25 am গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আর্ট বা শিল্পে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের অত্যন্ত সুপরিচিত। মানব সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিবর্তনের সাথে সাথে আর্ট বা শিল্পেও বিবর্তনের মাধ্যমে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায়, আধুনিকতার স্পর্শে বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে চিত্র শিল্পের এই বিবর্তন শুধু আধুনিকতার সাক্ষী দেয় না, বরং পুরনো ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং নিজের বিভিন্ন প্রকারের গল্প ও বলে; যার সবকিছুই আমরা ক্রমেই জানতে পারবো। চিত্র শিল্পের শিল্পী, চিত্র অঙ্কনের প্রক্রিয়া, চিত্র প্রকাশের ধরণ ইত্যাদির সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছাঁপ রেখে একটা ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে বর্তমানের গ্রাফিক্স ডিজাইন। 

সূচিপত্রঃ

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

Graphics Design বা গ্রাফিক্স ডিজাইন, দুইটা ভিন্ন ইংরেজি শব্দ দ্বারা গঠিত একটি বিষয়। তন্মধ্যে, Graphics শব্দটি গ্রীক শব্দ, যার অর্থ “অঙ্কন বিষয়ক জ্ঞান”, আর ” Design” অর্থ “নকশা”। Organied Labour নামের একটি জার্নালে সর্বপ্রথম ১৯০৮ সালে Graphics Design বা গ্রাফিক্স ডিজাইন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে উইলিয়াম অ্যাডিসন ডুইগিন্স নামের একজন ১৯২২ সালে তার একটি নিবন্ধে গ্রাফিক্স ডিজাইন শব্দটি ব্যবহার করে জনপ্রিয় করে তোলেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয় ঘটিয়ে ছবি, বর্ণ বা অসংখ্য সাংকেতিক চিহ্ন, রেখা, রঙ ও নকশার এর মিথস্ক্রিয়তার মাধ্যমে সম্পুর্ন নতুন একটা দৃশ্যমান ছবি বা আকৃতি সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়। ডিজাইনারের সৃজনশীলতা ও দক্ষতার সমন্বয়ে সে ডিজাইন করে থাকে। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ইতিহাস 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যবহার শুরু হয়েছিল আনুমানিক ৪০,০০০-১০,০০০ খ্রীষ্টপূর্বের আগের প্রত্নপ্রস্তর যুগে। নৃবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নুড়ি পাথর, পশুর দাঁত ও শিং দ্বারা মানুষ তখন গুহায় চিত্র শিল্প অঙ্কন করতো। তৎকালীন জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রতীকী চিত্র তখন মানুষ গুহায় খোদাই করতো। নকশা ও চিত্রকর্মের আধুনিকায়নের শুরু হয় ৬০০০ বছর পূর্বে। পেপিরাস নামক কাগজ সদৃশ্য বস্তুতে মিশরীয়রা মুদ্রা শিল্পের শুরু করে। আবার গ্রীক সভ্যতায় জ্যামিতির বিভিন্ন চিত্র কর্ম গ্রাফিক্সের সাহায্যে অঙ্কন করা হতো।

হেনরি কোল নামের একজন ব্রিটেনের উদ্ভাবক ১৮৪৯ সালে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। তার জার্নাল অফ ডিজাইন এন্ড ম্যানুফ্যাকচার নামের জার্নালে সে ডিজাইন সম্বন্ধে আলোচনা করে। মধ্যযুগ ও রেনেসাঁ যুগেও বই, বিভিন্ন কারুকার্য শিল্প ও টেক্সটাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন করা হয়। যার প্রধান ছিলেন উইলিয়াম মরিস নামক একজন উদ্ভাবক। উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত গ্রাফিক্স ডিজাইনার হচ্ছে উইল এইচ ব্র‍্যাডলি এবং তার বিখ্যাত গ্রাফিক্স ডিজাইন করা বই ব্র‍্যাডলি দ্যা চ্যাপ।

গ্রাফিক্স ডিজাইন ও লেটারিং নামের প্রথম একটি চ্যাপ্টার পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া তে ও ১৯২৭ সালে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্বলিত প্রথম বই পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৮ সালে লন্ডনে গ্রাফিকস ডিজাইন ব্যবহার করা হয়। সাদা, নীল নকশা সম্বলিত গ্রাফিক্স লোগো ও আন্ডারগ্রাউন্ড সাইন করতে এডওয়ার্ড জনস্টন গ্রাফিক্সের টাইপোগ্রাফির সাহায্য নিয়েছিলেন। ১৯২০ সালে সোভিয়েত গঠনবাদ আন্দোলনের সময় বাড়ি, ব্যানার, পোস্টার,ফেস্টুন, পোশাক, আসবাবপত্র, লোগো ইত্যাদি গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করে করা হয়েছিল। আধুনিক টাইপোগ্রাফি’র নীতিগুলো প্রথম লিপিবদ্ধ করা হয় Jan Tschichold এর নিউ টাইপোগ্রাফি বইয়ে। এছাড়াও হার্বার্ট বেয়ার, লাসজলো মোহলি, এল লিসিস্টিকি টাইপোগ্রাফি’র জগতে নতুন মাত্রার যোগ করে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিল্পের প্রভাব ২০০০ সালের পর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফার্স্ট থিংক ফার্স্ট ২০০০ ম্যানিফেস্টো, Emigre 51 এ ১৯৯৯ সালে। তারপর থেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের এই বিপুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রকারভেদ 

বাণিজ্যিক ও ব্যাক্তিগত ব্যবহার এর ওপর নির্ভর করে গ্রাফিকস ডিজাইন কে কয়েকটি প্রকারে ভাগ করা যায়।

  • প্রোডাক্ট ডিজাইন
  • লোগো ডিজাইন 
  • ব্র‍্যান্ডিং ডিজাইন 
  • ওয়েব ডিজাইন 
  • প্রেস ডিজাইন
  • অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডিজাইন 
  • পাবলিকেশন ডিজাইন 
  • মোবাইল এপ্লিকেশন ডিজাইন 
  • Ul/UX ডিজাইন

প্রোডাক্ট ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে বড়ো মার্কেটপ্লেসের অন্যতম হলো প্রোডাক্ট ডিজাইন। প্রোডাক্টের বাজার, প্রোডাক্ট সম্বন্ধে জ্ঞান, প্রোডাক্ট কে ভোক্তার নিকট আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রোডাক্ট ডিজাইনের বিকল্প নেই। Prototyping, 2D/3D Modeling ও Market Researching হচ্ছে প্রোডাক্ট ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। 

লোগো ডিজাইন 

ব্যাক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে লোগো তাদের পরিচয় বহন করে। সুতরাং যেকোনো বিজনেসের প্রতিষ্ঠান এর ক্ষেত্রে লোগো প্রতিষ্ঠানের ধারক হওয়ার পাশাপাশি তাদের লোগো আরও আকর্ষণীয় করে তোলে প্রতিষ্ঠানের মান কে। লোগো ডিজাইন গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের অন্যতম। 

ব্র‍্যান্ডিং ডিজাইন 

পণ্যের বিপণন বার্তা গ্রাহকদের নিকট পৌছানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপের অন্যতম বিজনেসে৷ পণ্যের ট্যাগলাইন পণ্য কে আরও অনন্য করে ধারণ করে। ব্রান্ডিং এর বার্তা ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি অংশ। 

ওয়েব ডিজাইন 

আধুনিক প্রযুক্তি তে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। ওয়েব ডিজাইন গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্রের একটি। ওয়েবসাইট কে আকর্ষণীয় ডিজাইন মাধ্যমে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করে গ্রাফিক্স ডিজাইন। Wireframing, Basic Coding Skill ওয়েবসাইট ডিজাইনের অন্যতম সব দক্ষতা। 

প্রিন্ট ডিজাইন 

বর্তমান কাস্টমাইজড বিভিন্ন ব্যবহৃত পণ্য যেমন টি-শার্ট, মগ, স্টেশনারি, ফোন কাভার, চাবির রিং থেকে শুরু করে যতরকম কাস্টমাইজড প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, তার সবকিছুই সম্ভব হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনের ফলে। Layout ডিজাইন প্রিন্টিং ডিজাইনের অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা। 

পাবলিকেশন্স ডিজাইন 

বর্তমান যেকোনো বই, খাতা, ম্যাগাজিন সহ অসংখ্য পণ্য রয়েছে যেগুলো ডিজাইন করা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে। ই-বুক, লে আউট সহ বিভিন্ন ডিজাইন এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে।

অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডিজাইন 

অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডিজাইন টেলিভিশন সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউবে খুবই জনপ্রিয় এই কার্টুন ডিজাইন করে বানানো ভিডিও। ডিজাইনার স্কেচ থেকে অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডিজাইনে পরিণত করে। এক্ষেত্রে সৃজনশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্টোরিবোর্ডিং করা অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডিজাইন এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। 

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন

স্মার্টফোনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন এর ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন। অ্যাপ্লিকেশন এর সেটিংস থেকে শুরু করে সকল অপশন ও তার কালার গ্রেডিং সহ সবকিছুর ডিজাইন গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে করা হয়।

UI/UX ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ চাহিদাসম্পন্ন ডিজাইনিং হচ্ছে UI/UX ডিজাইন। সিনেমা, অ্যাপ্লিকেশন সহ সমস্ত গ্রাফিক্সের সেক্টরে UI/UX ডিজাইন অপরিহার্য। তাই এর আর্থিক মান ও তুলনামূলকভাবে বেশি।

তাছাড়া ভিডিও গ্রাফিক্স, ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে গ্রাফিক্সের ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশান গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ইত্যাদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যতম আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর সুবিধা 

বিশ্বজুড়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদার উর্ধ্বমুখী গ্রাফের পিছনে রিয়েছে নির্দিষ্ট কিছু কারণ বা সুবিধা ; যার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

সৃজনশীলতা

গ্রাফিক্স ডিজাইনে সৃজনশীলতা দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মানুষ চিত্রে শিল্পে অভিজ্ঞ ও আগ্রহী, তারা নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয় ঘটিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইন। যার ফলে সময়ের অপচয় রোধের পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত সুবিধা ও একসাথে গ্রহণ করা যায় গ্রাফিক্স ডিজাইনে। এই সৃজনশীলতার ফলে দেশি, বিদেশী বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজের পাশাপাশি সরাসরি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়া যায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে। 

চাহিদা

পৃথিবী যতই ডিজিটাল প্রযুক্তির চাদরে ঢাকা পড়বে ততোই সবকিছু কে ডিজিটাল করার প্র‍য়াস লক্ষ্য করা যাবে। ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান সবকিছুর চাহিদা বেশি। যার ফলে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের সুযোগ এই ক্ষেত্রে অনেক। গ্রাফিক্স ডিজাইন তুলনামূলক কিছুটা নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় এই ক্ষেত্রে দক্ষ লোকের সংখ্যা তূলনামূলক কম।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে চাকরির সুযোগ 

একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের জন্য দেশীয় অসংখ্য সুযোগ সুবিধা দিয়েও দক্ষ লোক খুঁজে পাচ্ছে না এখন বিভিন্ন কোম্পানি গুলো। ই-কমার্স সাইটের অধিকাংশই নির্ভর করে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর ওপর, তাছাড়াও ডিজিটাল কন্টেন্ট নির্মাণ করে এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রমোশনাল ডিস্প্লে, ডিজিটাল মার্কেটিং,কর্পোরেট রিপোর্ট, মিডিয়ার মতো বেশ কিছু খুবই উচ্চমানের সেক্টর রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং

চাকরি না করেও একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার বৈদেশিক বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার সুযোগ পায়। সেক্ষেত্রে দক্ষ ডিজাইনারের উপার্জিত অর্থের পরিমাণ অনেকাংশে বেশি থাকতে পারে। আবার কাজের স্বাধীনতা ও উপভোগ করে ডিজাইনার। বাড়িতে বসে সহজেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে সে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হচ্ছে ; যা দেশের অর্থনীতি তে ভূমিকা রাখছে। দেশীয় গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের সবচেয়ে বড়ো মার্কেটপ্লেস হচ্ছে Fiverr, Upwork, 99designs, Behance, Crowdspring, My fontএর মতো সেক্টর, যেখানে তারা ফ্রিল্যান্সিং করে থাকে মূলত এবং এখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডিজাইন কাজ করে।

উচ্চশিক্ষা নিস্প্রয়োজন 

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও শুধুমাত্র সাধারণ চলার মতো জ্ঞান থেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এ দক্ষ হয়ে অনেক বড়ো বড়ো কাজ করছে দেশীয় গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা। বৈদেশিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজের সময় উচ্চশিক্ষার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না, তারা দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করে থাকে। তাই পড়াশোনা ভালো না লাগলে বা শিক্ষাগত যোগ্যতায় খুব ভালো না হলেও খুব সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের এর ব্যবহার সমূহ 

প্রযুক্তির এই যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইনের অপরিসীম ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তন্মধ্যে,

  • কোম্পানির বা ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠানের লোগো ডিজাইন করা। 
  • বই, নিউজপেপার, ডিজিটাল ম্যাগাজিন, ইবুক সহ বিভিন্ন পাবলিশার্স এর ডিজাইন করা। 
  • ব্যানার, ফেস্টুন, ডিজিটাল আর্ট, পোস্টারের আকর্ষণীয় ডিজাইন করা যায়।
  • ডিজিটাল এডভার্টাইজমেন্টে গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহৃত হয়। 
  • ব্লগ,ওয়েবসাইটেও ব্যবহার হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন। 
  • বিভিন্ন নিমন্ত্রণ পত্র, ভিজিটিং কার্ড তৈরি করতে। 
  • অনলাইন, টিভি তে ব্যবহার করা যায় গ্রাফিক্স ও টাইটেলে ব্যবহৃত হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন। 
  • টি-শার্ট, স্টেশনারি সহ বিভিন্ন কাস্টমাইজড প্রোডাক্টের ডিজাইনেও ব্যবহৃত হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল

যেকোনো বিষয়ে দক্ষতার অর্জনের প্রক্রিয়ার পূর্বে সেই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রেখে সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন শুরু করতে হয়। দক্ষতা সেই কাজ শেখাবে কিন্তু সফট স্কিল গুলো সেই কাজ শিখে ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে।

আত্নবিশ্বাস

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দক্ষতা ও নিজের সক্ষমতা সম্বন্ধে ধারণা রেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে শেখা শুরু করতে হবে। অনেকের অনেক কিছু দেখে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে শেখা চালিয়ে যেতে হবে। হতাশ না হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনবরত পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়ায় সফলতার মূলকথা।

মনঃসংযোগ

গ্রাফিক্স ডিজাইন না শুধু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেকোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে মনঃসংযোগ খুবই প্রয়োজন। মনঃসংযোগ না করে দক্ষতা অর্জন করে সফল হওয়া সম্ভব না। কোনো অবস্থায় বা কোনো ক্ষেত্রেই কোনো কিছু ভেবে মনঃসংযোগ না হারিয়ে স্থীরচিত্তে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

ধৈর্য 

গ্রাফিক্স ডিজাইন খুবই সুক্ষ্ম একটা বিষয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে একটা বড়ো সময় প্রতিদিন দিতে হবে এবং টানা অনেকদিন তা অব্যাহত রেখে, তবেই দক্ষ হওয়া যাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এ।

ইন্টারনেট সম্বন্ধে ধারণা 

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার পূর্বে ইন্টারনেট সম্পর্কে সাম্যক ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। বিভিয় বিষয়ে গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন রিসোর্স থেকে অনেক কিছু জানার ক্ষমতা থাকা জরুরি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এ।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার সমূহ

গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলোর সাহায্য নিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন করা হয়ে থাকে। 

Adobe Photoshop

গ্রাফিক্স ডিজাইন জগতের সবচেয়ে পরিচিত সফটওয়্যার। ফটো রিটাচিং,কালারের পরিবর্তন, ম্যানুপুলেশন, বিভিন্ন ইফেক্ট যুক্তিকরণ ইত্যাদির সবকিছুই Adobe Photoshop এর কাজ।

Adobe Illustrator

Adobe এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফিক্স ডিজাইনের সফটওয়্যার। গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করে তৈরি করা কার্ডগুলো যেমন ভিজিটিং, বিজনের, পার্সোনাল ইত্যাদির সবই Adobe Illustrator ব্যাবহার করে ডিজাইন করা হয়।

Figma 

ফটোশপের বেসিক জানার পরে যেই সফটওয়্যার টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করা হবে সেটা হচ্ছে Figma বা ফিগমা। UI/UX ডিজাইনের মতো উচ্চমানের গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পন্ন করতে ব্যবহৃত হয় ফিগমা। অসংখ্য টুলস, প্লাগ ইন ও সুবিধা রয়েছে ফিগমা তে। 

Premier Pro

ভিডিও এডিটিং, ভিডিও গ্রাফি নিয়ে কাজ করতে Premier Pro বা প্রিমিয়ার প্রো এর বিকল্প নেই। এর বিভিন্ন ফিচার ও এলিমেন্টের মাধ্যমে সহজেই আকর্ষণীয় ভিডিও এডিটিং করা যায়।

এছাড়াও রয়েছে Adobe XD, After Effect, Indesign, Adobe Pagemaker, GIMP, Inkspace, CorelDRAW, QuarkXpress, Visme, Xara Design, Vectre ইত্যাদির মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফিক্স ডিজাইনের সফটওয়্যার রয়েছে। 

শেষকথা 

বর্তমানের প্রযুক্তির এই বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইনের অপরিসীম গুরুত্ব এবং তা কোন পর্যায়ে গিয়ে অবস্থান করছে উপরিউক্ত আলোচনায় স্পষ্ট। গ্রাফিক্স ডিজাইন চিত্র শিল্পের জগতে একটা শুধু বিপ্লবই নিয়ে আসেনি, গ্রাফিক্স ডিজাইন শিল্পী সহ অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যাক্তি কে আরও বড়ো একটা প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছে নিজেকে বিকশিত করার। তবে কালের বিবর্তনের সাথে সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির সাহায্য আরও উচ্চ স্তরে পৌছে গেছে। মার্কেটের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিজের দক্ষতা কে আরও সমৃদ্ধ করা অব্যাহত রাখতে হবে।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কত সময় লাগে?

উত্তর: গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ৪ বছরের ব্যাচেলর ও ২ বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি ও রয়েছে। তবে যদি শুধু প্রফেশনালি দক্ষ হতে গেলে ৬ মাস লাগতে পারে বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে। তবে নিজের ইচ্ছা ও অধ্যবসায় ভেদে সময়ের ভিন্নতা থাকবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কত টাকা আয় করা সম্ভব? 

উত্তর: গ্রাফিক্স ডিজাইনে কত টাকা আয় করা সম্ভব তার সম্পুর্ন নির্ভর করবে ডিজাইনারের দক্ষতার ওপরে। ডিজাইনার দক্ষতা কোন কোন ডিজাইনে সেই অনুযায়ী আয় করতে পারবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায় কী?

উত্তর: গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার দুইটা উপায় আছে। একটা বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে পেইড কোর্স করে, অপরটি ফ্রি তে ইউটিউব সহ আরও অন্যান্য রিসোর্স থেকে রিসার্চ করে ভিডিও দেখে শেখা।

Visited 1 times, 1 visit(s) today