ওয়েবসাইটটেকনোলজি

হোস্টিং কি? হোস্টিং এর প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রকারভেদ

হোস্টিং, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে এই গোটা ইন্টারনেট জগত। মূলত ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া সকল তথ্যই কোনো না কোনো হোস্টিং এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।  সাধারণত হোস্টিং কি, ডোমেইন কি, ডিএনএস কি এসব প্রশ্ন তাদের মনেই আসে যারা ইন্টারনেট জগতটিকে বুঝতে চান। কিভাবে এই বিশাল জগতটি কাজ করে তা জানতে চান। আর প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা থাকা আরও জরুরী। সেজন্যই আজকের এই লেখাতে তুলে ধরা হয়েছে হোস্টিং ঠিক কি, কত প্রকার, এটি ঠিক কিভাবে কাজ করে সহ এর সম্পূর্ণ বিস্তারিত। 

সূচিপত্রঃ

হোস্টিং কি?

হোস্টিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে কিছু নির্দিষ্ট ফাইলসমূহ কোনো নেটওয়ার্কে পাবলিশ (Publish) হয় এবং ওই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ফাইলগুলো আক্সেসিবল (accessible) বা অভিগম্য হয়ে যায়। ঠিক একই ভাবে যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজের ফাইলসমূহকে ইন্টারনেটে পাবলিশ করা হয় এবং ইন্টারনেটে সংযুক্ত যেকেউ সেই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারে, তাকে ওয়েব হোস্টিং বলে। 

উপরের লেখাটুকু থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, হোস্টিং জিনিসটি সবসময়ই ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেই হবে এমন কোনো কথা নেই। এটি যেকোনো নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা হতে পারে একটি কোম্পানির নিজস্ব নেটওয়ার্ক বা একটি বাসার হোম নেটওয়ার্ক (Home Network)। কিন্তু ইন্টারনেট নিজেই যে একটি নেটওয়ার্ক। বস্তুত এটি পৃথিবির সবচেয়ে বিশাল নেটওয়ার্ক। আর হোস্টিং এর সবচেয়ে বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে ওয়েব হোস্টিং বা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেই। তাই বর্তমানে হোস্টিং বলতে সাধারণত ওয়েব হোস্টিংই বোঝায়। আর এ লেখাতেও মূলত আলোচনা করা হয়েছে ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কেই। 

হোস্টিং কিভাবে কাজ করে

সংজ্ঞার ভাষায় কঠিন মনে হলেও বাস্তবে হোস্টিং এর কার্যপ্রণালী খুবই সহজ। মূলত এটি একটি বাসা বা অফিস ভাড়া নেওয়ার মতো। ধরা যাক আপনি কোনো এলাকায় থাকতে চান। সেখানে আপনি বাসা ভাড়া নিলেন এবং আপনার আসবাব সেখানে রাখলেন। এবার আপনার আত্নীয়-স্বজন চাইলে আপনার বাসায় আসতে পারবে। অর্থাৎ আপনি যতদিন বাসাটি ভাড়া করে রাখবেন ততদিন আপনার একটি নিজস্ব স্থান আছে। 

ঠিক একই ভাবে ওয়েবসাইটের ফাইলসমূহ সংরক্ষণ করা এবং ফাইলগুলোকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমেই কাজ করে হোস্টিং নামক এই প্রক্রিয়া। তবে ওয়েব হোস্টিং এর প্রক্রিয়াটিতে রয়েছে মূলত দুইট পক্ষ। তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয় হোস্টিং এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া। 

  • হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার (Hosting Service Provider)
  • ওয়েবসাইটের মালিক 

হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার (Hosting Service Provider) 

হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার হলো এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যারা হোস্টিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যাকএন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (Backend Infrastructure) তৈরি করে অসংখ্য ওয়েবসাইটকে হোস্ট করে থাকে। এ ধরনের কোম্পানি ওয়েবসাইট হোস্টিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সেবাই দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সবচেয়ে জরুরীঃ-

ডাটা সেন্টার স্পেস / স্টোরেজ

ডাটা সেন্টার স্পেস দিয়ে মূলত বোঝায় স্টোরেজ বা ফাইল রাখার স্থান। ওয়েবসাইট একটি ইন্টারএকটিভ প্ল্যাটফর্ম (Interactive Platform) যা বস্তুত অনেকগুলো ওয়েবপেজের সম্বনয়। অপরদিকে ওয়েবপেজ হলো কিছু হাইপারটেক্সট ডকুমেন্ট যাতে থাকতে পারে লেখা, ছবি, ভিডিও অ্যানিমেশন সহ নানা কিছু। ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে, ওয়েবপেজ তথা ওয়েবসাইট হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে এ থাকা কিছু নির্দিষ্ট ডাটার সম্বনয়। আর ডাটা রাখার জন্য চাই একটি স্থান। ডাটা সেন্টার স্পেস দিয়ে সরাসরি বোঝায় একটি স্টোরেজ যেখানে ওয়েবসাইটের সকল ডাটা সংরক্ষিত থাকে। 

সার্ভার

অনেকেই সার্ভার এবং স্টোরেজকে একই মনে করেন। তবে আসলে এটি একই সিস্টেমের দুইটি অংশ। আবার অনেক সময় স্টোরেজকে সার্ভার এরই অংশ হিসেবে ধরা হয়। স্টোরেজ হলো একটি এমন একটি যন্ত্র যাতে সরাসরি ডাটাগুলো সংরক্ষিত থাকে। যেমন আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভটি একটি স্টোরেজ। অপরদিকে সার্ভার হলো এমন একটি যন্ত্র যা এই পুরো স্টোরেজটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রয়োজনে ডাটা সংরক্ষণ, সরবরাহ কিংবা নিশ্চিহ্ন করতে পারে। এমনকি আপনি যে এই লেখাটি পড়ছেন এটিও সার্ভার ব্যবহারের একটি উদাহরণ। সার্চ করার পরে আপনি যখন এই ওয়েবপেইজে প্রবেশ করতে চেয়েছেন তখনই সার্ভার আপনার কাছে তথ্য পাঠিয়েছে। একই ভাবে যেকোনো ওয়েবপেজ দেখা বা ব্যবহার করার পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হয় এক বা একাধিক সার্ভারের মাধ্যমে। 

এভাবেই হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি স্থান দেয় (স্টোরেজ) আবার ওয়েবসাইটটি মানুষকে দেখানোর ব্যবস্থাও করে দেয় (সার্ভার)। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতেই আপনার ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। এছাড়াও প্রোভাইডার ভেদে আরও অনেক ধরনের ফিচার থাকতে পারে। পৃথিবীর অধিকাংশ ওয়েবসাইট এরকম হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাহায্যেই খোলা হয়ে থাকে। কারণ একটি ছোট বা মাঝারি কোম্পানির পক্ষে নিজস্ব ডাটা সেন্টার তৈরি করা, সার্ভার বসানো, সফটওয়্যার বানানো, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা এগুলো প্রায় অসম্ভব। প্রোভাইডার কোম্পানি গুলো মূলত এ সকল কাজই বৃহৎ আকারে করে অল্প অল্প স্থান ওয়েবসাইটের মালিকদের ভাড়া দেয়। অনেকটা একটি মার্কেট তৈরি করে দোকান ভাড়া দেওয়ার মতো। 

ওয়েবসাইটের মালিক

হোস্টিং এর প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পক্ষটি হলো একটি ওয়েবসাইটের মালিক। ধরা যাক আপনি একটি ওয়েবসাইট খুলতে চান। এখন আপনি একটি হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি থেকে তাদের একটি প্ল্যান কিনলেন। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময় অবধি ঐ প্রোভাইডার আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ, তার জন্য সার্ভার সাপোর্ট এবং অন্যান্য সেবা দিতে বাধ্য থাকবে। এরপরে আপনি ঐ ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ফাইল আপলোডের মাধ্যমে সাইটটিকে সাজিয়ে নিলেন। এই ওয়েবসাইট তৈরিতে আপনার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। কারণ সার্ভিস প্রোভাইডার শুধু যায়গাটি দিলেও সাইটে কি কন্টেন্ট, কিভাবে, কোন সময়ে থাকবে তা সম্পূর্ণই নির্ভর করে ঐ সাইটের মালিকের উপরে। 

হোস্টিং এর প্রকারভেদ

খরচ করা অর্থের উপর ভিত্তি করে সকল হোস্টিংকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। 

  • ফ্রি হোস্টিং 
  • পেইড হোস্টিং 

খুব সহজেই এদের প্রধান পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে। ফ্রি হোস্টিং এ টাকা দিতে হয় না কিন্তু পেইড হোস্টিং এ টাকা দিতে হয়। তবে এদের রয়েছে আরও বেশ কিছু পার্থক্য। 

ফ্রি ও পেইড হোস্টিং এর পার্থক্য 

পার্থক্যের

ধরন

ফ্রি হোস্টিং পেইড হোস্টিং 
১। ট্রাফিকএসব হোস্টিং এ একসাথে বেশি ব্যবহারকারী / ট্রাফিক প্রবেশ করতে পারে না। প্ল্যানের উপর নির্ভর করে বিপুল পরিমাণ ট্রাফিক একই সময়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারে। 
২। স্টোরেজফ্রি হোস্টিং এ কখনোই সাইটের জন্য বেশি স্টোরেজ দেওয়া হয় না। পেইড হোস্টিং এ আপনি যতটুকু টাকা খরচ করবেন ততটুকুই স্টোরেজ পাবেন। 
৩। কন্টেন্ট এর সংখ্যাঅনেক ফ্রি হোস্টিং প্রোভাইডার সাইটে কন্টেন্ট এর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ হয়তো ৭টি বা ১০টি কন্টেন্ট এর পরে আগের কন্টেন্ট ডিলিট না করলে নতুন কন্টেন্ট আপলোড দেওয়া যায় না।  পেইড হোস্টিং এ ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। স্টোরেজ থাকলে যত খুশি কন্টেন্ট আপলোড দিতে পারবেন। 
৪। নিরাপত্তাফ্রি হোস্টিং এ ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে না।  পেইড হোস্টিং এ ডাটা অনেকটাই নিরাপদ থাকে। 
৫। সার্ভার 

স্পিড

এ ধরনের হোস্টিং এ সার্ভারের স্পিড কম থাকে। ফলে আপনার সাইট কেউ ভিজিট করতে চাইলে তাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ফ্রি হোস্টিং এর তুলনায় স্পিড অনেক বেশি থাকে। বেশি খরচ করলে স্পিড আরও বাড়ানো যায়। 
৬। ডোমেইন নেমডোমেইন নেম এবং ইউআরএল (URL) টি মূলত ফ্রি হোস্টিং প্রোভাইডারের হয়ে থাকে। আপনার ওয়েবসাইটকে সাবডোমেইন হিসেবে দেখানো হয়। সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব। ইউআরএল ও কাস্টম করা সম্ভব। 

ফ্রি হোস্টিং এর ধরন নিয়ে আলোচনার খুব বেশি সুযোগ নেই। তবে পেইড হোস্টিং হতে পারে অসংখ্য ধরনের। সে সকল ধরনের প্রকৃতি বিবেচনায় প্রধান কয়েকটি ধরন সম্পর্কেই আলোচনা করা হলো লেখার এই অংশে।

শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)

শেয়ারড হোস্টিং হলো এমন এক ধরনের হোস্টিং যেখানে একই সার্ভারে কয়েকটি থেকে কয়েকশ ওয়েবসাইটকে হোস্ট করা হয়ে থাকে। তবে এক সার্ভারে হলেও একে অপরের ডাটা দেখার কোনো সুযোগ থাকে না। শেয়ারড হোস্টিং এর মান কেমন হবে তা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকলেও ভাল হোস্টিং প্রোভাইডার হলে অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকা যায়। সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি ওয়েবসাইট গুলো এ ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করে। 

সুবিধা 

  • একই সার্ভার অনেককে ভাড়া দেওয়া হয় বলে এর খরচ অনেকটাই কম। 
  • খুব বেশি জটিল কনফিগারেশনের প্রয়োজন হয় না, আগে থেকেই কনফিগার করা থাকে। 
  • এটি ব্যবহার করতে খুব বেশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন নেই। 
  • সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা নেই। 

অসুবিধা

  • একই সার্ভারে থাকা একটি সাইটের ট্রাফিক হটাৎ বেড়ে গেলে বাকি সাইট গুলোর উপর প্রভাব পড়ে। 
  • হটাৎ করে জটিল কনফিগারেশনের প্রয়োজন পড়লে তার সুযোগ থাকে না। 
  • হেভি-ট্রাফিক সম্পন্ন সাইটের জন্য এমন হোস্টিং ভাল নয়। 

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হোস্টিং (Virtual Private Server Hosting) 

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার মূলত শেয়ারড হোস্টিং এরই আরেকটি রূপ যেখানে এক সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করা হলেও প্রত্যেক ওয়েবসাইট নিজস্ব রিসোর্স পায়। অর্থাৎ এখানে প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য একটি করে ভার্চুয়াল পার্টিশন তৈরি করা হয়। ফলে সার্ভারের কিছু নির্দিষ্ট অংশ শুধু ওই ওয়েবসাইটের জন্যই কাজ করে। এতে করে শেয়ারড হোস্টিং এর এক সাইটের ট্রাফিকের কারণে অন্য সাইটের প্রভাবিত হওয়ার যে সমস্যা সেটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

সুবিধা

  • নিজস্ব রিসোর্স থাকায় পারফর্মেন্স সবসময়ই একই থাকে। 
  • পার্টিশন থাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। 
  • সার্ভারের রুট অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। 
  • সাইটকে অনেক বেশি কাস্টমাইজড করা যায়। 

অসুবিধা

  • আগে থেকে কনফিগার করা থাকে না বলে সরাসরি কন্ট্রোল প্যানেলে যাওয়া যায় না। কমান্ড লাইন ব্যবহার করে প্রাথমিক ভাবে সাইট দাড়া করাতে হয়। যার জন্য অনেকটাই প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন। 
  • কতটুকু সার্ভার রিসোর্স আপনার সাইটের জন্য প্রয়োজন হবে তা ঠিক করাটাও সবার জন্য সহজ কাজ নয়। 

ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) 

ক্লাউড হোস্টিং এবং ভিপিএস এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো ক্লাউড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট একটি সার্ভারে হোস্ট হওয়ার বদলে একাধিক সার্ভারে হোস্ট হয়ে থাকে। ফলে ওয়েবসাইটটি কোন একক সার্ভারের উপর নির্ভরশীল হয় না। সাধারণ অনেক বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গুলো এ ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে। যেমন নেটফ্লিক্স। 

সুবিধা

  • একাধিক সার্ভার ব্যবহার করায় ডাউনটাইম (Downtime) থাকে না বললেই চলে। 
  • প্রয়োজনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সার্ভারের রিসোর্স ব্যবহার বাড়িয়ে দেওয়া যায়। 
  • লোড ব্যালান্সিং এর মাধ্যমে হেভি-ট্রাফিক এবং ডিডস অ্যাটাকের বিরুদ্ধে ভাল কাজ করতে পারে। 
  • সার্ভারকে প্রচুর পরিমাণে কাস্টমাইজ (Customize) করা যায়। 

অসুবিধা

  • এই সার্ভার চালানোর খরচ ভিপিএস হোস্টিং থেকেও বেশি। 
  • অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার ঘন্টা হিসেবেও ভাড়া দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে খরচের হিসাবটা বেশ জটিল। 
  • অভিজ্ঞতা ছাড়া কারও পক্ষে এই ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন। 

ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting) 

যে হোস্টিং এ এক বা একাধিক সার্ভারকে পুরোপুরি একটি নির্দিষ্ট সাইটের জন্য বরাদ্দ করা হয় তাকে ডেডিকেটেড হোস্টিং বলে। মূলত এ ধরনের হোস্টিং শুধু বড় বড় কোম্পানি গুলোই কিনে থাকে। কারণ এর খরচ এবং কার্যক্ষমতা দুটিই অনেক বেশি। সার্ভার পুরোপুরি একটি সাইটের জন্য বরাদ্দ থাকে বিধায় ডাটার নিরাপত্তা থাকে চুড়ান্ত। আর এই সার্ভারের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এটি ভাড়া করা প্রতিষ্ঠানের। এক্ষেত্রে সার্ভারের জন্য অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারও নির্ধারণ করে দিতে পারে ওয়েবসাইটের মালিক। 

সুবিধা

  • সার্ভারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। 
  • নিরাপত্তা এবং নির্ভরশীলতা সেরা মানের। 
  • সেরা ব্যান্ডউইথ। 

অসুবিধা

  • খুবই খরুচে। 
  • এটি ব্যবহার করতে পূর্ণ প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 

ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WordPress Hosting)

ওয়ার্ডপ্রেস হলো মূলত একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এটি এতটাই জনপ্রিয় যে সমগ্র ইন্টারনেটের ৩৪% ওয়েবসাইট এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে তৈরি করা। তাই খুব স্বভাবতই হোস্টিং প্রোভাইডাররা ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য বিশেষ ভাবে হোস্টিং প্ল্যান তৈরি করে বিক্রি করে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে এ ধরনের হোস্টিং একদমই জরুরী নয়। যেকোনো হোস্টিং এ সাধারণ ভাবেই ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ব্যবহার করা যাবে। 

সুবিধা 

  • খরচ কম। 
  • নতুন গ্রাহকেরাও ব্যবহার করতে পারে। 
  • ওয়ার্ডপ্রেস কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করলে ফলাফল বিশেষ ভাবে ভাল পাওয়া যায়। 
  • আগে থেকেই ওয়ার্ডপ্রেসের বিভিন্ন থিম, প্লাগ-ইন ইন্সটল করা থাকে।

অসুবিধা

  • অন্য কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের জন্য অতটা ভাল নয়। 

ম্যানেজড হোস্টিং (Managed Hosting)

যে সকল হোস্টিং এ হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডারই সাইটের বেশিরভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে সে সকল হোস্টিংকে ম্যানেজড হোস্টিং বলে। সাধারণত একটি সাইট চালাতে গেলে তার রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে কিছুটা সময় ও পরিশ্রম দিতে হয়। কিন্তু এ কাজে যদি ওয়েবসাইট মালিকের দক্ষতা বা সময় না থাকে তাহলে তারা এ ধরনের প্ল্যান ক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে হোস্টিং প্রোভাইডার শুধু স্টোরেজ এবং সার্ভার সাপোর্ট দেন না বরং সাইট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিজের কাধে তুলে নেন। 

সুবিধা

  • ওয়েবসাইট মালিকের সময় এবং পরিশ্রম বাঁচে। 
  • দক্ষ লোকের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ হয় বিধায় অনেক সময় সাইটের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি পায়। 

অসুবিধা

  • এ ধরনের হোস্টিং এ খরচ বেশি। 
  • নিজের সাইটের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। 

ওয়েবসাইটের উপর হোস্টিং এর প্রভাব 

ওয়েবসাইটের উপর হোস্টিং এর প্রভাব বা এর প্রয়োজনীয়তা খুব সহজেই বোঝা যায়। এক বাক্যে বলতে চাইলে, হোস্টিং এর অস্তিত্ব না থাকলে ওয়েবসাইটেরও কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। তাই হোস্টিং এর প্রয়োজনীয়তা আলাদা করে ব্যাখা করার কিছু নেই। তবে একটি ভাল হোস্টিং ওয়েবসাইটের উপর বেশ ইতিবাচক প্রভাবই আনতে পারে। 

  • সাইট পারফর্মেন্সঃ হোস্টিং ভাল হলে সাইটের রক্ষণাবেক্ষণ ভাল হয় এবং সাইটের কন্টেন্টগুলো ভালভাবে সম্বনিত থাকে। ফলে অনেক সময়ই সাইটের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি পায়। 
  • কুইক রেসপন্স (Quick Response): দ্রুত গতির এসএসডি হোস্টিং নেওয়া হলে সাইটের লোডিং টাইমও কমে। ফলে গ্রাহক তুলনামূলক দ্রুত সাইটের সেবা নিতে পারেন। 
  • এসইও র‍্যাংকিং (SEO Ranking): গুগলের নীতামালা অনুসারে যে সকল সাইটের রেসপন্স টাইম ভাল সেগুলোকে র‍্যাংকিং এর ক্ষেত্রে প্রথম দিকে রাখা হয়। ফলে একটি ভাল হোস্টিং এর কারণেও এসইও এ র‍্যাংকিং এগিয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, টেকনিক্যাল সাপোর্ট সহ আরও নানা ধরনের প্রভাব একটি ওয়েবসাইটের উপর রয়েছে।

শেষকথা

বর্তমান এই ইন্টারনেট ভিত্তিক দুনিয়াতে যত দিন যাচ্ছে, হোস্টিং ততই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই থাকবে নিজস্ব ওয়েবসাইট। হয়তো আপনাকেও ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হতেই পারে। সেক্ষেত্রে যদি না জানেন যে হোস্টিং কিভাবে কাজ করে তবে পছন্দ সঠিক ভাবে করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ব্যাকএন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (Backend Infrastructure) কি?

উত্তরঃ বস্তুত এক বা একাধিক ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি হোস্ট করার জন্য যে সকল ইনফ্রাস্ট্রাকচার তথা কাঠামোর প্রয়োজন তাদের সমন্বয়কেই বলা ব্যাকএন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার।  

২। ইন্টারএকটিভ প্ল্যাটফর্ম (Interactive Platform) কি?

উত্তরঃ ইন্টারএকটিভ প্ল্যাটফর্ম বলতে এই লেখাতে ওয়েবসাইটকে বোঝানো হয়েছে। বর্তমানের ওয়েবসাইট গুলো অনেক আধুনিক এবং এগুলো ভিজিটরদের সাথে সরাসরি তথ্য আদান প্রদান তথা ইন্টারএকশন করতে পারে। তাই এটিকে ইন্টারএকটিভ প্ল্যাটফর্ম বলা হয়েছে। 

৩। কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System – CMS) কি?

উত্তরঃ কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হলো এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যার সাহায্যে একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তিও খুব সহজেই সাইটে নতুন কন্টেন্ট যুক্ত করতে পারবে, পরিবর্তন করতে পারবে এবং কন্টেন্ট এর সম্পাদনা করতে পারবে।

 

 

 

তথ্যসূত্র:

১। হোসটিঙ্গার 

২। ড্রিমহোস্ট 

৩। রক কন্টেন্ট 

৪। কিন্সটা 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button