অনলাইন ব্যাংকিংফ্রিল্যান্সিংব্যাংকিং

পেওনিয়ার কি? পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

ফ্রিল্যান্সিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, বৈদেশিক অনলাইন বিজনেস করলে পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেওনিয়ার খুবই সুবিধাজনক। ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট মাধ্যম প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক বড় বড় মার্কেটপ্লেস গুলোতে যেসকল পেমেন্ট মেথড রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য হচ্ছে পেওনিয়ার (Payoneer)। এটি ব্যবহার করা সহজ এবং পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদান ব্যবস্থাও দ্রুততম। তাই পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সকল তথ্য ও ছবিসহ রেজিস্টার প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো-

সূচিপত্রঃ

পেওনিয়ার কি? (What is Payoneer?)

পেওনিয়ার গ্লোবাল ইনকর্পোরেটর (Payoneer Global Incorporated)- একটি আমেরিকান আর্থিক পরিষেবা সংস্থা। এটি একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও পেমেন্ট মাধ্যম। এর মূল কাজ অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর, ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা। এটি প্রায় ২০০ টিরও বেশি দেশে ১৫০ টিরও বেশি কারেন্সি -তে গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দেয়।

বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সার এবং বৈদেশিক ব্যবসায়ী ও সেবা প্রদানকারীদের বিশ্বব্যাপী কোম্পানি এবং মার্কেটপ্লেসে পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদানের জন্য পেওনিয়ার একাউন্ট সহজলভ্য ও সহজ উপায়। 

বাংলাদেশ থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবো কিভাবে? 

বাংলাদেশ থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। পেওনিয়ার (Payoneer) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করে একাউন্ট খোলা যায়। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তথ্য এবং ব্যাংকিং ইনফরমেশন দিয়ে একাউন্ট রেজিস্টার করতে পারবেন।

পূর্বে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক ছিলো। দেশের নির্দিষ্ট কোন তালিকাভুক্ত ব্যাংক একাউন্টের তথ্য প্রয়োজন হতো। তবে বর্তমানে নিম্নোক্ত ৩ টি উপায়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা যায়-

(১) ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দিয়ে।

(২) ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে।

(৩) বাংলাদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ও অ্যাপ ব্যবহার করে, রেমিটেন্স অপশন থেকে।

কারা পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবে?

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কোন জটিল শর্তাবলী পূরণ করতে হয় না। তবে একাউন্ট ভেরিফাই করতে আবেদনকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। 

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এনআইডি কার্ড ব্যবহার করতে হবে। যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদের এনআইডি কার্ড না থাকায় পেওনিয়ার একাউন্ট রেজিস্টার করতে পারবেনা।

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

পেওনিয়ার একটি অনলাইন বা ভার্চুয়াল ব্যাংকিং সেবা। এখানে নগদ অর্থের লেনদেন এবং সঞ্চয় ব্যবস্থা নেই। ফলে বাড়তি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু সাধারণ নথির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পেওনিয়ারে দুই ধরনের একাউন্ট খোলা যায়। 

  • ইন্ডিভিজুয়াল একাউন্ট (Individual Account)
  • কোম্পানি একাউন্ট (Company Account)

পেওনিয়ারে দুই ধরনের একাউন্ট খুলতে ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। যথা-

(১) ইন্ডিভিজুয়াল একাউন্ট

(২) কোম্পানি একাউন্ট

  • কোম্পানির তথ্য (Company Information)।
  • ট্যাক্স ইনফরমেশন (Tax Information)।
  • ট্রেড লাইসেন্স (Trade License)।
  • কোম্পানির পেমেন্ট ইনফরমেশন (Payment Information)।

এ সকল তথ্য থাকলেই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে প্রথমেই  পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। এবার ধারাবাহিকভাবে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-

ধাপ ১: রেজিস্টার অপশনে প্রবেশ করুন

হোম পেজে নিচের ছবির মতো ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। এই পেজটির ডান দিকের উপরের ট্রান্সলেট অপশন থেকে আপনার সুবিধার্থে বাংলা ও ইংরেজি ভাষাসহ অন্যান্য ভাষায় দেখতে পাবেন। এখান থেকে রেজিস্টার লেখাতে ক্লিক করুন (Register)।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ১

ধাপ ২: প্রয়োজনীয় একাউন্ট অপশন বাছাই করুন

এই ধাপে, আপনার প্রয়োজন অনুসারে সঠিক একাউন্ট খুঁজুন। এখানে ৫ টি অপশন পাবেন। যথা-

  • ফ্রিল্যান্সার বা এসএমবি (Freelancer or SMB) – ফ্রিল্যান্সিং পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদানের জন্য।
  • অনলাইন সেলার (Online Seller) – অনলাইনে সেলার হিসেবে অর্থ লেনদেন।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার (Affiliate Marketer) – অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রি-কমিশন পেমেন্ট পেতে।
  • ভ্যাকেশন রেন্টাল হোস্ট (Vacation Rental Host) – ভ্যাকেশন ট্যুরিস্ট গাইডের অর্থ লেনদেনে।
  • আন্তঃব্যক্তিক (Individual) – দৈনন্দিন প্রয়োজনে অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম হিসেবে।

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ১টি অপশন সিলেক্ট করুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ২

পরবর্তী পেজে, “বিশ্বব্যাপী অর্থপ্রদান প্রেরণ এবং গ্রহণ উভয়ের জন্য পেওনিয়ার -এর সম্পূর্ণ ক্ষমতা পান (Get the full power of Payoneer- to both send and receive global payments)”- এই লেখাটিতে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩: একাউন্ট রেজিস্টার করুন 

এবার, আপনার নির্বাচনকৃত একাউন্ট অপশন দেখাবে। (যেমন- ফ্রিল্যান্সার বা এসএমবি সিলেক্ট করলে- Freelancer, Agency or service provider)। এখান থেকে রেজিস্টার (Register) বাটনে ক্লিক করলে পেওনিয়ার সাইন আপ (Payoneer Sign Up) পেজ আসবে।পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৩

ধাপ ৪: ব্যবসায়ের ধরন ও নিবন্ধনকারীর প্রাথমিক তথ্য পূরণ করুন

এই ধাপে প্রথমে, সিলেক্ট ইউর টাইপ অব বিজনেস (Select your type of business) অপশনে- কোম্পানি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সকল কাজের জন্য ইন্ডিভিজুয়াল (Individual) সিলেক্ট করুন।

তারপর, ইংরেজি অক্ষরে এই তথ্যগুলো পূরণ করুন-

  • নামের প্রথম অংশ (First name)।
  • নামের শেষ অংশ (Last name)।
  • ইমেইল এড্রেস (Email address)।
  • পুনরায় ইমেইল এড্রেস (Re-enter email address)।
  • রেজিস্টার কারীর জন্ম তারিখ (Date of birth)।

সর্বশেষ, নেক্সট (Next) বাটনে ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৪

ধাপ ৫: কন্টাক্ট ডিটেইলস পূরণ করুন

এবার, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী-

  • দেশ (Country)
  • সড়ক, এলাকা ও জেলার ঠিকানা
  • শহর (City/Town)
  • পোস্ট/ জিপ কোড (Post/ ZIP Code) লিখুন।

তারপর, কান্ট্রি কোড (+880) সিলেক্ট করে আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিন। নিচের ঘরে সেন্ড কোড (Send Code) লেখাতে ক্লিক করুন। সেই নাম্বারে ৬ সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড পাবেন। তা লিখে নেক্সট (Next) বাটনে ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৫

ধাপ ৬: সিকিউরিটি ডিটেইলস পূরণ করুন

এই পেজে, একাউন্টে নিরাপত্তার জন্য তথ্য দিতে হবে। 

  • প্রথমে, ইউজারনেম (Username) অপশনে ইমেইল এড্রেসটি দেখাবে। প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করতে পারেন।
  • এন্টার পাসওয়ার্ড (Enter password)- অপশনে, একাউন্টের নিরাপত্তায় একটি শক্তিশালী ও কঠিন পাসওয়ার্ড দিন। এবং পরবর্তী ঘরে তা পুনরায় লিখুন।
  • একটি নিরাপত্তা প্রশ্ন (Security Question) নির্বাচন করুন। তার উত্তর কি হবে, সেটি নিচের ঘরে লিখুন। (একাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে, বা ডিএক্টিভেট হলে মালিকানা নিশ্চিত করতে জিজ্ঞাসিত হবেন)
  • আইডি ডিটেলস (ID Details) অপশনে জাতীয়তা – ‘বাংলাদেশ সিলেক্ট করুন’।
  • আইডি টাইপ (ID type)- এনআইডি কার্ড/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স সিলেক্ট করুন। তারপর, আইডি নাম্বার লিখুন। 

এবার নেক্সট (Next) বাটনে ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৬

ধাপ ৭: একাউন্ট পেমেন্ট ও ব্যাংকিং ইনফরমেশন দিন

এবার, অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যাংকিং ইনফরমেশন দিন। 

আপনার ব্যাংক একাউন্ট- পার্সোনাল একাউন্ট (Personal Account) নাকি বিজনেস একাউন্ট (Business Account) তা সিলেক্ট করুন। তারপর ধারাবাহিকভাবে-

  • ব্যাংকের অবস্থানরত দেশের নাম;
  • কারেন্সি (Currency);
  • ব্যাংকের নাম;
  • উক্ত ব্যাংকের শাখার নাম;
  • হিসাবধারির নাম (Account Holder Name);
  • একাউন্ট নাম্বার (Account Number) লিখুন।

সর্বশেষ, 

(১) টার্মস এন্ড কন্ডিশন (Terms and Conditions) ও প্রাইভেসি অ্যান্ড কুকি পলিসি (Privacy and Cookie Policy)।

(২) প্রাইজিং এন্ড ফিস (Pricing and Fees)

এই দুইটি অপশনে, আই এগ্রি (I Agree) বক্সে ক্লিক করুন।

এবার সাবমিট (Submit) বাটনে ক্লিক করলেই পেওনিয়ার একাউন্ট সম্পন্ন হবে।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৭

ধাপ ৮: একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন রিভিউ করুন 

রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর একটি অভিনন্দন (Congratulations) পেজ আসবে। সেখানে অ্যাপ্লিকেশন কমপ্লিট এবং রিভিউ ইন প্রসেস (Review > in Process) দেখাবে। রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর একাউন্ট এপ্রুভ হলে লেনদেন করতে পারবেন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৮

উপরোক্ত নিয়মে সহজেই বাংলাদেশ থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন।

পেওনিয়ার একাউন্ট এপ্রুভ ও ভেরিফাই

পেওনিয়ার একাউন্ট রেজিস্টার করার পর তা এপ্রুভ হতে ৩ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়। একাউন্ট এপ্রুভ হওয়ার পূর্বে লেনদেন করা যায় না। তাই দ্রুত পেওনিয়ার একাউন্ট এপ্রুভ ও ভেরিফাই করার জন্য ভেরিফিকেশন ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।

এর জন্য, আপনার রেজিস্টার করা পেওনিয়ার একাউন্টে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন। তারপর-

  • ড্যাশবোর্ডের সেটিংস অপশন থেকে ভেরিফিকেশন সেন্টার (Verification Center) অপশনে যান।
  • এবার রেজিস্টারকারীর এনআইডি কার্ড/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ছবি বা স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
  • ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের জন্যও একাউন্টের ডকুমেন্ট আপলোড করতে পারেন।(ঐচ্ছিক)
  • ডকুমেন্টগুলো অবশ্যই জেপিজি (JPG), পিএনজি (PNG), পিডিএফ (PDF), জিআইএফ (GIF) ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে। 
  • ডকুমেন্টস সাইজ ৩ এমবি এর কম হবে।
  • ডকুমেন্টগুলো অবশ্যই ভেলিড (Valid) ও স্পষ্ট হতে হবে।
  • ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে সাবমিট (Submit) বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট হওয়ার পর “ডকুমেন্ট আপলোডেড সাকসেসফুলি (Document Uploaded Successfully)” লেখা একটি পপ-আপ মেসেজ দেখতে পাবেন। 

ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম 

ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করতে যেকোনো একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট থাকতে হবে। এজন্য ফাইভার (Fiverr) আপওয়ার্ক (Upwork) বা ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) মার্কেটপ্লেস এর রেজিস্টার করুন। তারপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-

  • একাউন্ট ড্যাশবোর্ড থেকে সেটিংস (Settings) মেন্যুতে যান।
  • সেলিং ট্যাব (Selling Tab) থেকে আর্নিং (Earning) অপশনে ক্লিক করুন।
  • এবার উইথড্রয়াল অপশন (Withdrawal Option) – এ ক্লিক করুন।
  • এবার লেনদেনের অপশন গুলোর মধ্যে, পেওনিয়ার ব্যাংক ট্রান্সফার (Payoneer Bank Transfer) ক্লিক করুন।
  • তারপর পেওনিয়ার রেজিস্ট্রেশন পেজে নিয়ে যাবে।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম 

বর্তমানে বিকাশ ফ্রিলান্সারদের সুবিধার জন্য পেওনিয়ার এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। যার ফলে, বিকাশ একাউন্ট-ধারি ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবে। নিচে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে দেখানো হলো-

ধাপ ১: বিকাশ অ্যাপে লগইন

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য, বিকাশ অ্যাপে আপনার নিজের আইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্টার করা বিকাশ একাউন্টে লগইন করুন। 

ধাপ ২: রেমিটেন্স অপশনে যান

বিকাশ অ্যাপের ড্যাশবোর্ড থেকে ‘আরও দেখুন’ লেখাতে ক্লিক করে রেমিটেন্স অপশনে যান।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ২

ধাপ ৩: পেওনিয়ার – লেখাতে ক্লিক করুন

এবার, আপনার বিকাশ একাউন্টে সরাসরি টাকা পেতে রেমিটেন্স সেবা প্রদানকারী হিসেবে পেওনিয়ার লেখাতে ক্লিক করুন।বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৩

ধাপ ৪: পেওনিয়ার একাউন্ট খুলুন

এই পেইজে,’ পেওনিয়ার একাউন্ট খুলুন’ লেখাতে ক্লিক করুন। তারপর, ওয়েবসাইটের মতো সাইন আপ (Sign Up) পেজ আসবে। সেখানে একইভাবে ৪ টি ধাপ সম্পন্ন করে একাউন্ট খুলুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট রিভিউ করতে ৩ কার্যদিবস সময় নেওয়া হলেও, বিকাশ থেকে রেজিস্টার করলে কিছু সময়ের মধ্যেই একাউন্ট এপ্রুভ হয়।বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৪

ধাপ ৫: বিকাশে পেওনিয়ার একাউন্ট লিংক করুন

একাউন্ট এপ্রুভ হলে লেনদেনের জন্য বিকাশের সাথে একাউন্ট লিংক করতে হয়। তার জন্য পুনরায় বিকাশ অ্যাপের রেমিটেন্স অপশনে যান। তারপর ‘আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট লিংক করুন’ লেখাতে ক্লিক করুন। 

ইমেইল এড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্টে সাইন ইন (Sign in) করলেই লেনদেন করতে পারবেন।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। ধাপঃ ৫

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা অসুবিধা 

সুবিধাসমূহ 

  • পেওনিয়ার থেকে বিকাশে মুহূর্তের মধ্যেই অর্থ উত্তোলন করা যায়।
  • ছোট ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্বল্প পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের সুবিধা।

অসুবিধা সমূহ

  • পেওনিয়ার থেকে বিকাশের ট্রানজেকশন ফি এর পাশাপাশি হিসাব বিকাশ থেকে ক্যাশ আউটের বাড়তি ফি দিতে হয়।
  • ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিদেশি মার্কেটপ্লেস থেকে বাংলাদেশি ব্যাংক একাউন্টে পেমেন্ট নিলে ২.৫-৩% ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া হয়। যা বিকাশে উইথড্র করলে পাওয়া যায় না।

ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা যায় যেসব সাইট থেকে

যেসকল মার্কেটপ্লেস ও ই-কমার্স সাইটে ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো- 

  • এমাজন এফিলিয়েট (Amazon Affiliate)
  • আপওয়ার্ক (Upwork)
  • ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)
  • ফাইভার (Fiverr)
  • পিপল পার আওয়ার (PeoplePerHour)
  • এয়ার এনবি(Airbnb)
  • এক্সপার্ট ৩৬০ (Expert360)
  • এনভাটো (Envato)
  • টি স্প্রিং (TeeSpring)

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ২৫ ডলার বোনাস পাওয়ার উপায়

বর্তমানে রেফার লিংক থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খুললে ২৫ ডলার সাইন আপ বোনাস দেওয়া হয়। তবে শুধু একাউন্ট খুললেই ২৫ ডলার পাওয়া যায় না।

আপনার একাউন্টে যখন ১০০০ ডলার পর্যন্ত লেনদেন হবে তখন ২৫ ডলার বোনাস আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে জমা হবে। 

অন্যদিকে, রেফারাল লিংক শেয়ার করে প্রতি রেফারে ২৫ ডলার করে বোনাস পাবেন। আপনার রেফারকৃত ব্যক্তির একাউন্টে সর্বমোট ১০০০ ডলার লেনদেন হলে একাউন্টধারী এবং আপনি উভয়ে ২৫ ডলার বোনাস পাবেন।

পেওনিয়ার এর সুবিধা

পেওনিয়ার বিশ্বব্যাপী অনলাইন পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদানের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। এই মাধ্যম ব্যবহার করে-

  • ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট পেতে সবচেয়ে সহজলভ্য দ্রুততম মাধ্যম।
  • ২০০ টিরও বেশি দেশের প্রায় ১৫০ টি লোকাল কারেন্সিতে লেনদেন করা যায়।
  • লোকাল ব্যাংকে এবং সরাসরি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ।
  • একাউন্ট খোলা তুলনামূলক সহজ এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা নেই।
  • একাউন্ট করলে ফ্রি মাস্টার কার্ড পাবার সুযোগ রয়েছে। যা দিয়ে অর্থ লেনদেন এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে শপিং করা যায়।
  • পেওনিয়ার টু পেওনিয়ার ট্রানজেকশনে কোন চার্জ নেই।
  • পেওনিয়ারের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। যা ব্যবহার করে মানি ট্রান্সফার ও একাউন্ট পরিচালনা করা যায়।
  • বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেও পেওনিয়ার থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায়।

পেওনিয়ার এর সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশিদের জন্য পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা সহজ হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো হলো-

  • ট্রানজেকশন ফি তুলনামূলক বেশি।
  • বিদেশ থেকে টাকা আনার ক্ষেত্রে কনভার্সন রেট কম পাওয়া যায়।
  • নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট বা ভার্চুয়াল পেমেন্ট মাধ্যম থেকে পেওনিয়ারে ফান্ড এড করা যায় না। শুধুমাত্র অন্যদের একাউন্ট বা ক্লায়েন্টদের থেকে পেমেন্ট নেওয়া যায়।

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড কিভাবে পাবো? 

আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে বিগত ৬ মাসে সর্বনিম্ন ১০০ ডলার পেমেন্ট পেলে পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তারপর একাউন্টে সাইন ইন (Sign in) করে পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড একটি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে। এর মাধ্যমে সহজেই ফ্রিল্যান্সিং পেমেন্ট নিতে পারবেন মুহূর্তেই। এই কার্ড দিয়ে বিশ্বের যেকোন দেশের মাস্টার কার্ড সাপোর্ট করে এমন এটিএম বুথ (ATM Booth) থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায়। 

পেওনিয়ার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা আসতে ১-৩ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে তাৎক্ষণিক অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।

শেষকথা

পেওনিয়ারের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এটি বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য আশার আলো। মার্কেটপ্লেস থেকে পেমেন্ট পাওয়ার এর থেকে সহজ উপায় নেই। তাই আপনিও যদি ফ্রিল্যান্সিং বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকেন তাহলে উপরোক্ত নিয়মে পেওনিয়ার একাউন্ট একাউন্ট খুলে সুবিধা ভোগ করুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কি টাকা লাগে?

না। কোন ফি বা প্রাথমিক ডিপোজিট লাগেনা।

(২) পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করবো কিভাবে?

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড আবেদন করতে একাউন্টে সাইন ইন (Sign in) করে, ড্যাশবোর্ডের উপরে বাম দিকে থ্রি লাইন মেন্যুতে যান। তারপর, ব্যাংকস এন্ড কার্ড (Banks & Card) পেজে গিয়ে, পেওনিয়ার কার্ড (Payoneer Card) অপশনে যান। এবার কারেন্সি (Currency) ও শিপিং অ্যাড্রেস (Shipping Address) এর তথ্য দিয়ে সাবমিট করুন।

(৩) পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের দাম কত?

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড পেওনিয়ার একাউন্ট হোল্ডারদের জন্য বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। তবে এটি ব্যবহার করলে বার্ষিক ২৯.৯৫ ডলার ফি কাটা হয়।

(৪) ভার্চুয়াল পেওনিয়ার কার্ড পেতে কতদিন লাগে?

পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে ভার্চুয়াল কার্ডের জন্য আবেদন করলে তা পেতে অবস্থান ভেদে প্রায় ১৪ কার্যদিবস সময় লাগে।

(৫) পেওনিয়ারের ট্রানজেকশন চার্জ কত?

পেওনিয়ার ব্যাংক ডেবিট লেনদেনের জন্য ১%। পেওনিয়ার থেকে ব্যাংক একাউন্টে তহবিল স্থানান্তর করতে ১.৫ ডলার। পেওনিয়ার টু পেওনিয়ার ফান্ড ট্রান্সফার করতে ০%। অ-স্থানীয় মুদ্রা স্থানান্তর করতে ২% চার্জ কাটা হয়।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button