জীবন ও জীবিকাবাংলাদেশলাইফ স্টাইল

নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণে যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ

ট্রেন ভ্রমণকে বলা হয় সবচেয়ে নিরাপদ যাত্রা। ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেনের জানালা দিয়ে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা এক অনন্য মাত্রা যোগ করে, তাই অনেকেরই ট্রেনে ভ্রমণ সবচেয়ে প্রিয়। তবে এ যাত্রা সাধারনভাবে নিরাপদ হলেও ট্রেনে ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করা উচিত, যাতে আপনি অনেক প্রকার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারেন ও সমস্যা এড়াতে পারেন৷ আজকের এ লেখাটিতে ট্রেন ভ্রমণে যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

ট্রেন ভ্রমণের আগে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ

  • ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই যথাযথ তথ্য নিয়ে রাখুন। যাতে আপনার রেল স্টেশনে গিয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে না হয়। কোথাও কোন সমস্যার জন্য ট্রেন দেরীতে আসবে কিনা এধরনের খোঁজখবর ও নিয়ে রাখবেন।
  • সম্ভব হলে অগ্রিম রেলওয়ের ই-টিকেট কিনে রাখুন। এখন অধিকাংশ ট্রেনের টিকেটই অনলাইনে বুক করা যায়৷ এর ফলে আপনাকে রেল স্টেশনে আগাম গিয়ে টিকেটের লাইনে দাড়াতে হবেনা। অধিকাংশ টিকেট আগে বুক হয়ে যাওয়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে ভালো কোন সিট বা কেবিন নাও পেতে পারেন, সেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবেনা। এছাড়াও, বর্তমান বিশ্বে যে কোভিড মহামারী চলছে এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের লাইনের ভীড় এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • যদি আপনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার জন্য ট্রেন ভ্রমন করেন তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার ইস্যুকৃত ই-পাসপোর্ট সাথে রাখুন। কারন যদি বর্ডারে চেকিং এর সময় সঠিক তথ্য না দিতে পারেন তাহলে বিভিন্ন রকম ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে।
  • ভ্রমণে বের হওয়ার আগে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। এতে আপনার ভ্রমণকালীন সময়ে অসুবিধা হতে পারে। 
  • আপনার সাথে বমির ওষুধ, প্যারাসিটামল, শ্বাসকস্ট থাকলে ইনহেলার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ঔষধ অবশ্যই সাথে রাখুন। 
  • আপনার সব টাকা পয়সা একটি মানিব্যাগে না রেখে আলাদা আলাদা কয়েকটি ভাগ করে রাখুন৷ অর্থাৎ ব্যাগে কিছু টাকা, মানিব্যাগে কিছু টাকা, অন্য ব্যাগে আরো কিছু টাকা এভাবে ভাগ করে রাখুন৷ এর ফলে একটি পকেটমার হলেও বা হারিয়ে গেলেও আপনি একেবারে সব টাকা হারিয়ে ফেলবেন না ও বিপদ থেকে কিছুটা রক্ষা পাবেন। 
  • খুব শক্ত জুতা ব্যবহার করবেন না। মেয়েরা হাই হিল ধরনের জুতা ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না, এতে চলাচলের নানাবিধ অসুবিধা হতে পারে।
  • একটি চেক লিস্ট বানিয়ে ভ্রমণের জন্য সবকিছু নিয়েছেন কিনা নিশ্চিত হয়ে তবেই রওনা দিন৷ যদি ট্রেন স্টেশনে গিয়ে এরপর টের পান তাহলে হয়ত সেটি আর এসে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে থাকবেনা বা সম্ভব হবেনা৷ 
  • বাসার থেকে খাবার নিয়ে যাওয়াই উত্তম। রেল স্টেশনে খাবারের দাম যেমন বেশি তেমনি অপরিচিত কারো থেকে খাবার কিনে খাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ন, তাতে কোন অপদ্রব্য মেশানো থাকতে পারে। 
  • কিছুটা সময় হাতে রেখেই বের হন। ট্রেন ছাড়ার মূহুর্তে স্টেশনে হাজির হয়ে তড়িঘড়ি করে উঠার চেয়ে আস্তেধীরে গিয়ে আপনার সিটে বসে শান্তভাবেই যাত্রা শুরু করুন। এতে একদিকে যেমন ট্রেন মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকলো না তেমনি আপনার ভ্রমণটাও আনন্দদায়ক হলো শুরু থেকেই।
  • খুব দামী স্বর্নের বা অন্যান্য অলংকার পরে ট্রেনে না উঠাই ভালো৷ এতে ছিনতাইকারী বা অন্যান্য অসৎ ব্যক্তিদের থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়৷
  • মোবাইল, ল্যাপটপের চার্জ ফুল করে নিন এবং পাওয়ারব্যাংক সাথে রাখুন৷ কারন ট্রেনে চার্জ দেওয়ার যে সিস্টেম থাকে তা অনেকক্ষেত্রেই কাজ নাও করতে পারে৷ 

ট্রেনে ভ্রমণকালীন যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ

  • রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে ট্রেন একটু উঁচুতে থাকে, যেটায় স্বাভাবিক ভাবে উঠা একটু কস্টকর। তাই খেয়াল করে সতর্কতার সাথে আগে ট্রেনে উঠার সিড়ির পাশে থাকা লোহার দন্ডটি শক্ত করে ধরে এরপর উঠুন৷ এতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
  • যেহেতু আপনি ট্রেন ভ্রমণের টিকেট কেটে রেখেছেন এবং দূরপাল্লার ট্রেন বেশ কিছুক্ষন স্টেশনে থাকে, সেহেতু অযথা ট্রেন আসার সাথে সাথেই ভীড় ঠেলে উঠতে যাবেন না। পকেটমার হওয়ার ঘটনাগুলো সাধারন এরকম ভীড় ঠেলে উঠতে গেলেই হয়, তাই ভীড় এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • যদি এমন হয় যে ট্রেন বেশিসময় দাঁড়াবে না এবং আপনাকে ভীড় ঠেলেই ট্রেনে উঠতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে সতর্ক থাকুন। একটা ভালো উপায় হতে পারে এসব জিনিস ব্যাগের অনেক ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে এরপর ভীড় এর মধ্যে যাওয়া। ভীড়ের মধ্যে আপনার পকেট থেকে হয়ত আপনার অজান্তে মোবাইল চুরি করে নিয়ে নেওয়া সহজ, কিন্তু সেই ভীড়ে আপনার ব্যাগ খুলে এত ভিতর থেকে আপনার অজান্তে নিয়ে নেওয়াটা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার, আপনি নিশ্চয়ই টের পেয়ে যাবেন বা বাকিরা দেখে ফেলবে। ফলে আপনি পকেটমারদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
  • ভ্রমণকালীন সময়ে আপনার সাথে যদি ছোট শিশু থাকে তাহলে তার দিকে বিশেষ নজর রাখুন। সে যাতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কোন দূর্ঘটনার স্বীকার না হয়। ট্রেনের বগির দরজা অনেক সময় খোলাই থাকে, শিশুরা যাতে দরজার কাছে যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন৷ কারন এতে ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ভালোমানের ট্রেনে যাত্রা করুন। যদি কোন পুরোনো যুগের ট্রেনকে ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করে থাকেন তাহলে ট্রেনের ঝাঁকুনি ও শব্দের কারনে হয়ত আপনার ভ্রমণের আনন্দ অনেকটাই নস্ট হয়ে যেতে পারে।
  • বাংলাদেশে ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ট্রেনে অনেকে পাথর নিক্ষেপ করে, যার ফলে অনেকে আহত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্রমতে, দেশের ২০ টি জেলায় প্রধানত এরূপ ঘটে আর পাথর নিক্ষেপের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট হচ্ছে ৭০ টি। তাই এসব স্পট সম্পর্কে আগাম জেনে নিয়ে এসব স্পট দিয়ে যখন ট্রেন যাবে তখন বাড়তি সতর্ক থাকবেন। ওই সময়ে জানালার বাইরে হাত বা মাথা বের করবেন না ও সম্ভব হলে জানালা থেকে একটু দূরে থাকবেন।
  • ট্রেন চলতে শুরু করার আগে মোবাইল, মানিব্যাগ বা অন্যান্য দামী কিছু অত বের করবেন না। কারন কেউ তা টান দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে ট্রেন থেকে বের হয়ে যেতে পারে। ট্রেন ছেড়ে দিলে এরপর যেহেতু স্টেশন আসার আগে নামতে পারবেনা আপনি চাইলে রেল পুলিশের সহায়তা নিয়ে তাকে খুঁজে পেতে পারেন, তবে ট্রেন চলার আগেই ঘটলে তাকে আর খুঁজে নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই ট্রেন ছাড়ার আগ অব্ধি বাড়তি সতর্ক থাকবেন। 
  • আপনার ব্যাগে একটি কার্ডে বা কাগজে আপনার নাম ঠিকানা সব লিখে রাখুন। যদি ব্যাগ হারিয়ে যায়, তাহলে যদি পুলিশ খুঁজে পায় বা অন্য কোন সৎ ব্যক্তি খুঁজে পান তিনি আপনাকে এই ঠিকানা ব্যবহার করে খুঁজে ফেরত দিতে পারবেন। 
  • যদি রাতের ট্রেন হয় তবে ঘুমিয়ে পড়ার আগে আপনার জিনিসপত্র নিরাপদে রাখুন। যাতে আপনি যখন ঘুমাচ্ছেন তখন তা চুরি না হয়ে যায়। 
  • আপনার টিকেট নিয়ে সতর্ক থাকুন৷ টিকেট হারিয়ে ফেললে বাড়তি অনেক টাকা জরিমানা গুনতে হবে, আর এটি বেশ অসম্মানজনক।
  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, করোনা টেস্ট এর রিপোর্ট ইত্যাদি সাথে রাখুন। ভ্রমণে যেই নতুন গন্তব্যে যাচ্ছেন সেখানে এসব ডকুমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।

শেষকথা

কথায় আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগেই তা থেকে বাঁচতে এই লেখাটিতে উল্লেখিত বাড়তি সতর্কতাগুলো আমাদের অবলম্বন করা উচিত। এগুলো অবলম্বনের মাধ্যমে আপনার ট্রেন জার্নি অনেক নিরাপদ হবে এবং অনেক ধরনের বাড়তি ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন। সর্বোপরি, আপনার ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি অনেক বেশি আনন্দদায়ক হবে।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

ট্রেনের আগাম টিকেট কিভাবে কাটবো?

উত্তরঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে সকল সরকারি ট্রেনের জন্য অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার ব্যবস্থা করেছে৷ তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার গন্তব্য অনুযায়ী আসন ফাকা থাকলে পছন্দ মতো আসন নির্বাচন করে টিকেট কেটে নিতে পারবেন।

কতদিন আগে অনলাইন টিকেট বুক করা উচিৎ?

উত্তরঃ বর্তমানে ট্রেনের টিকেট কাটার সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী, ভ্রমণের ৫ দিন আগে থেকে টিকেট কাটতে পারবেন। তবে সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের টিকেট সবসময় থাকেনা, যাত্রীরা আগেই সব বুক করে ফেলে। তাই টিকেট পেতে হলে সাধারন সময়ে ৩-৪ দিন আগেই অনলাইন টিকেট কেটে ফেলা উত্তম। আর যদি ঈদ বা পূজার ছুটি হয় সেক্ষেত্রে যাত্রী অনেক বেশি থাকে, তাই টিকেট আরো দ্রুত শেষ হয়। সেক্ষেত্রে আরো আগে টিকেট বুক করে রাখতে হবে।

রেলের ই-টিকেট কোন ওয়েবসাইট থেকে কিনবো?

উত্তরঃ রেলের ই-টিকেট এর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। এতে আপনি কোন ক্লাসের সিট চাচ্ছেন, কোন স্টেশন থেকে কোন স্টেশন যাবেন এসব তথ্য বসিয়ে আপনার জন্য কোন উপযুক্ত সিটের ই-টিকেট এর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

এসএমএস এর মাধ্যমে রেলের টিকেট কিভাবে বুক করবো? 

উত্তরঃ মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমেও রেলের টিকেট কাটা সম্ভব। তবে এটি কেবল গ্রামীনফোন ও বাংলালিংক নাম্বার দিয়েই ক্রয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, আগে আপনাকে আপনার মোবাইলের রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে 1200 নাম্বারটিতে ‘TKET’ লিখে SMS সেন্ড করার মাধ্যমে। আপনার ফোনে টিকেটের দামের পরিমান টাকা থাকতে হবে। এরপর রেলওয়ে মন্ত্রনালয় এর নির্দেশনা অনুযায়ী এসএমএস এর মাধ্যমেও আপনি ট্রেনের টিকিট বুক করতে পারবেন।

কোন ট্রেন কখন ছাড়ে তা কিভাবে জানবো?

উত্তরঃ বাংলাদেশের সকল ট্রেনকেই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, পূর্বাঞ্চলের ট্রেন ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল সাইটে এসব ট্রেনের সময়সূচি অর্থাৎ কখন কোন স্টেশনে অবস্থান করবে সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তালিকা রয়েছে, সেখান থেকে আপনি র সংক্রান্ত তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button