টেকনোলজিরাউটার

পকেট রাউটার কি? পকেট রাউটার এর সুবিধা এবং অসুবিধা

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। আর এই প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে সব কিছুই হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট নির্ভর। দিন দিন প্রযুক্তি আরও অনেক উন্নত হচ্ছে। আর দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে বিনোদনসহ সব সময় আমাদের ইন্টারনেট এর দরকার হয়। কোনো কিছু জানার জন্য আমরা সব সময় গুগল সার্চ করি বা ইউটিউবে ভিডিও দেখে ইনফরমেশন নেই। তাই সব সময় প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট কানেকশনের। কিন্তু সবসময় আমাদের কাছে ইন্টারনেট কানেকশন থাকে না। বিশেষ করে আমরা যখন বাহিরে কোথাও কোনো প্রয়োজনীয় কাজে যেয়ে থাকি, যাত্রাপথে থাকি অথবা দেশ কিংবা বিদেশে গিয়ে থাকি, তখনও কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। এজন্য এসময়ে একটি সাশ্রয়ী ইন্টারনেট কানেকশনের দরকার হয়ে পড়ে। তাছাড়া কোথাও ঘুরতে গেলে ইন্টারনেটের অধিক বিল একটি বাড়তি খরচ হয়ে যায়। এ খরচকে একটু কমাতে তাই পোর্টেবল পকেট রাউটার অত্যন্ত দরকারি একটি ডিভাইস। কিন্তু মোবাইলে ডাটা ব্যবহারে অনেক সময় আমাদের কম স্প্রিডের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এর জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো পকেট রাউটার।

পকেট রাউটার 

পকেট রাউটার হলো ওয়াইফাই রাউটারের ছোট ভার্সন। ওয়াইফাই রাউটারের মত পকেট রাউটারেও রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। এর মূল সুবিধা হলো যত্রতত্র আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। 

আকারে ছোট ও ওজনে হালকা হবার কারণে এটি ক্যারি করাও বেশ সুবিধাজনক। পকেট রাউটারে পাসওয়ার্ড দিতে পারেন যাতে এটি সুরক্ষিত থাকে। আর বাসা, অফিস, জার্নিতে, রেস্টুরেন্টে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পেতে আপনি পকেট রাউটার ব্যবহার করতে পারেন। এর আরও একটি বিশেষত্ব হলো এটি এক বা একাধিক মানুষ ব্যবহার করতে পারে। ৩০-৫০ ফুট ব্যাসার্ধের মধ্যে ১০ বা তার বেশি ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত করা যায় পকেট রাউটারে।

তাই বলা যায়, পকেট রাউটার হলো এমন একটি ডিভাইস, যা সর্বত্র বহনযোগ্য, দেখতে ছোট এবং যার মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

পকেট রাউটার এর সুবিধা 

পকেট রাউটার ব্যবহারে বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে। সেগুলো হলো-

সহজে বহনযোগ্য

পকেট রাউটারের প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হলো এটি সহজে বহন করা যায়। আকারে ছোট হওয়ায় সহজেই এটি ব্যবহারযোগ্য। তাছাড়া যত্রতত্র বহন করার উপযোগিতাও রয়েছে। আপনি সেগুলিকে আপনার সাথে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন৷ ঘরে হোক কিংবা বাহিরে যেকোনো স্থানেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন পকেট রাউটারের মাধ্যমে। যেমন ধরুন, ট্রেন-লঞ্চ-বাস-কার কিংবা বিমানে ট্র্যাভেল করলেও আপনি যেমন পকেট রাউটার ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন ঠিক তেমনি প্রত্যন্ত অঞ্চল বা রেস্তোরাঁ, ঘরে কিংবা  অ্যাডভেঞ্চারে গেলেও আপনি এই পকেট রাউটার ক্যারি করতে পারবেন। পোর্টেবল সিস্টেম থাকায় পকেট রাউটার ব্যবহার আরও সুবিধাজনক। সহজে বহনযোগ্য, হালকা এবং সাইজে ছোট হবার কারণে দিন দিন পকেট রাউটারের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।

পকেট রাউটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ড

ইন্টারনেট হটস্পট তৈরির জন্য পকেট রাউটারে একটি সিমকার্ড সংযুক্ত করতে হয়। আপনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো ব্র্যান্ডের পকেট রাউটার কিনতে পারেন। যেমন- গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, টেলিটক, রবি, হুয়াওয়ে, টিপি লিংক প্রভৃতিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পকেট রাউটার বাজারে পাওয়া যায়। এর সাথে যেকোনো মোবাইল অপারেটর কোম্পানি যেমন- গ্রামীণফোন, টেলিটক, রবি, এয়ারটেল প্রভৃতি কোম্পানির একটি সিম ব্যবহার করতে পারেন। 

ব্যাটারি 

প্রচলিত প্রথাগত রাউটারের চেয়ে পকেট রাউটার তুলনামূলক ভিন্ন। কারণ পকেট রাউটার চালাতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। আর এই ব্যাটারির কারণে পকেট রাউটার মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। কারণ পকেট রাউটারের ব্যাটারিতে চার্জ দিলে তা সাধারণত ৬-৮ ঘন্টা লাস্টিং করে। রিচার্জএবল ব্যাটারি সিস্টেমের কারণ আপনি সহজেই যেকোনো জায়গায় ক্যারি করতে পারেন। ইউএসবি ক্যাবল দিলে চার্জ দেওয়া যায়। তাছাড়া প্রয়োজনে ল্যাপটপে ক্যাবল সংযোগ দিয়েও সাময়িকভাবে ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে নিতে পারেন।

ইন্টারনেট সুবিধা 

বর্তমান যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার। আবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আজকাল মানুষ গুগলের দারস্থ হয়। আর সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউবের জনপ্রিয়তাও দিনদিন বাড়ছে। আর এই সবকিছুর মূলে রয়েছে ইন্টারনেট। যত্রতত্র মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরও সহজ করেছে পোর্টেবল পকেট রাউটার। 

বাড়তি কেবলের প্রয়োজন নেই

আজকাল বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে কেবলের প্রয়োজন হয়না। তাই এসব ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি তারের ঝালেলাও নেই৷ তারবিহীন ভাবে অবাধে এসব ডিভাইস নিয়ে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন বাসা বাড়ি কিংবা অফিসে বা পাবলিক প্লেসে ওয়াইফাই রাউটারে বাড়তি কেবলের প্রয়োজন হয়। এসব কেবল অনেক সময়ই বিপদের কারণ। তবে পোর্টেবল পকেটে রাউটার এসব ঝামেলা মুক্ত একটি ডিভাইস। আপনি সম্পূর্ণ তারবিহীনভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত কেবল ব্যবহার ঝামেলা ও ঝুঁকি বয়ে আনে। তাই নিরাপদ থাকতে পকেট রাউটার ব্যবহার করতে পারেন। 

অধিক মানুষের ব্যবহার 

পকেট রাউটারের আরও একটি সুবিধা হলো একসাথে অনেক মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইসকে কানেক্ট করতে পারে পকেট রাউটার। সে কারণে অনেক মানুষ একই সাথে বিভিন্ন ডিভাইস সুবিধাও গ্রহণ করতে পারে।

নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি 

পকেট রাউটার ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হলো এটি আপনি পাবলিক প্লেসে ইউজ করতে পারবেন এবং  সিকিউটিরি নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ পাবলিক প্লেসে অনেক সময় ফ্রি ওয়াইফাই থাকে, যা মূলত সকলে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনার হাতে থাকা পকেট রাউটারে পাসওয়ার্ড থাকার দরুন চাইলেই সকলে তা ব্যবহার করতে পারবে না। এতে বাফারিং বা নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা বা সিকিউরিটি নিয়ে বাড়তি চিন্তার কারণ নেই।

দাম

পকেট রাউটার একটি বহনযোগ্য এবং ছোট ডিভাইস। বাসা থেকে যাত্রাপথ বা যেকোনো স্থানেই আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওয়াইফাই রাউটার থেকে পোর্টেবল রাউটারের দাম তুলনামূলক কম। তবে বাজারের বিভিন্ন দামে পকেট রাউটার কিনতে পাওয়া যায়। মোটামুটিভবে ২-৩ হাজার টাকায় আপনি পকেট রাউটার কিনতে পারবেন।

কিন্তু ওরিজিনাল ব্র্যান্ডের পকেট রাউটার কিনতে হলে আপনাকে অবশ্যই শো-রুম থেকে কিনতে হবে।

অসুবিধা

পকেট রাউটার ব্যবহারে অসুবিধার তুলনায় সুবিধায় বেশি। তবুও এর সামান্য কিছু অসুবিধা রয়েছে। চলুন জেনে নেই সেগুলো-

মেয়াদ

পকেট রাউটার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদসীমা। নির্দিষ্ট সময় পর যেকোনো সিম কার্ডেরই ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই পকেট রাউটার ব্যবহারে নেতিবাচক ইন্টারনেট প্যাকেজ প্ল্যানের সীমাবদ্ধ থাকবে।

কম গতি

পকেট রাউটার দিয়ে একসাথে অনেক মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস চালাতে পারে। অনেক সময় এখানেই বাঁধে বিপত্তি। একসাথে একাধিক ডিভাইস চালানো বা একাধিক মানুষের ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট স্প্রিড হ্রাস পায়। ইন্টারনেটের কম গতির কারণে প্রয়োজনীয় কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।

সেটিং

বাহিরের দেশে ভ্রমণের সময় পকেট রাউটারের সেটিং পরিবর্তন করতে হয়। কারণ এর ইন্টারনাল সফটওয়্যার সেটিংস চেঞ্জ করে বিভিন্ন ডিভাইসে কানেক্ট করার জন্য কম্পিউটারের সাহ্যায্য নিতে হয়। অনেক সময় এই প্রোসেসিংটি বেশ সমস্যাপূর্ণ।

চার্জ

পকেট রাউটার ব্যবহারের জন্য এর ব্যাটারি রিচার্জের প্রয়োজন হয়। তাই আগে থেকেই এই ডিভাইসগুলি চার্জ করা প্রয়োজন এবং চার্জ না থাকলে ব্যাটারি ফুরিয়ে যেতে পারে। ব্যবহারের আগে পকেট রাউটার রিচার্জ করে নিন যাতে আট-দশ ঘন্টা বা তার বেশি একটানা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। ব্যাটারির চার্জ না থাকা বা লো হয়ে যাবার ফলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাজ করা থেকে সাময়িক বিরত থাকতে হয়।

ব্যবহার ব্যয়

ওয়াইফাই রাউটারের তুলনায় পকেট রাউটার ব্যবহার করা অত্যাধিক ব্যয়বহুল। কারণ নির্দিষ্ট কোম্পানির সিম দিয়ে এটি ব্যবহার করা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদে ডাটা প্যাকেট কেনা হয়। এসব প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমা ও ডাটা লিমিট থাকার কারণে আপনি ইচ্ছামতো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না।

হারিয়ে যাওয়া

পকেট রাউটার ব্যবহারে আর একটি অসুবিধা হলো হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া। এটি একটি ছোট ডিভাইস। যার কারণে আমরা যত্রতত্র এটি ক্যারি করতে পারি। আর সেকারণেই এটি হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হবার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। 

শেষকথা 

পকেট রাউটার ছোট হবার কারণে এটি বহন করা খুবই সহজ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকে আরও একটু সহজ করতে এবং যেকোনো জায়গায় এক বা একাধিক ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য পকেট রাউটারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।আপনি পকেট রাউটারকে পছন্দের সিম দ্বারা চালাতে পারবেন। যে অপারেটরের সিম এব ভেতরে প্রবেশ করাবেন সেই নেটওয়ার্কই কাজ করবে। এটির জন্য কোন আলাদা ভাড়া কিংবা মাসিক বিল দিতে হয় না।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. পকেট রাউটারের দাম কত?

উত্তরঃ বাংলাদেশে পকেট রাউটারের দাম মাত্র ২,৩৪৯ টাকা থেকে শুরু। তবে বাংলাদেশে ৫জি রাউটারের ব্যবহার শীঘ্রই শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে  এবং তখন দামও কমে আসবে।

২. পকেট রাউটারের মাসিক বিল কত? 

উত্তরঃ পকেট রাউটারে একটি সিম সংযুক্ত থাকে। বিধায় ডেটা প্যাকেজ কিনতে হয়। সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে প্যাকেজ কিনতে হয় এবং সেই অনুযায়ী বিল আসবে৷

৩. ভালো রাউটার চেনার উপায় কি?

উত্তরঃ রাউটারের অ্যান্টেনা বেশি হলে মনে করা হয় সেই রাউটারের সার্ভিস ভালো হবে।

৪. 4G পকেট রাউটারের দাম কত?

উত্তরঃ একটু ভালো মানের 4G রাউটার ১০০০০-৮০০০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া ৩৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য রাউটার পাওয়া যাবে।

৫. ওয়াইফাই রাউটার কি?

উত্তরঃ ওয়্যারলেস বা বেতারের মাধ্যমে যেসব রাউটার বিভিন্ন ডিভাইসকে কানেক্ট করে তাকে ওয়াইফাই রাউটার বলে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button