চাকরিপেশাসরকারি চাকরি

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় টিপস

সরকারি চাকরি তো নয় যেন সোনার হরিণ, যার জন্য প্রতি বছর উচ্চাকাঙ্খী হয়ে স্নাতক পাস করা লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সত্যি বলতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সরকারি চাকরি করতে চায়। অনেকেই এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চলাকালীনই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কেউ বা নেয় পাস করে বেরোবার পর। প্রতি বছর বিসিএসসহ অনেক চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং চাকরির পদসংখ্যার চাইতে আবেদনে পরিমাণ হয় তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু চাকরির প্রস্তুতি যদি একটু কৌশলীভাবে নেওয়া যায় তাহলে চাকরি পাওয়ার পথ হয়ে যায় অনেকটাই সহজ।  আর সেই সকল বিষয়ে জানাতেই আমাদের আজকের এই লেখায় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি এবং টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সূচিপত্রঃ

সরকারি চাকরি পছন্দের কারণ

সরকারি চাকরি পছন্দ হওয়ার কারণের অভাব নেই। সরকারি চাকরিতে মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেতন, বাসস্থান সুবিধা, মহার্ঘ ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা, যাতায়াত ভাতা, চাকরি শেষে বিশাল অবসর ভাতাসহ আরো নানা সুবিধা বিদ্যমান যা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন সরকারি চাকরির গ্রেড, বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী লেখাতে। সবচেয়ে বেশি যেই কারণটি এদেশের মানুষকে সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষিত করে তা হলো এর স্থায়ীত্ব। বেসরকারি চাকরিতে যেমন কোনো কারণ ছাড়াই উর্ধ্বতনের এক কথাতেই চাকরি চলে যেতে পারে; সরকারি চাকরিতে তা হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। কোনো রকম অনিয়ম বা দুর্নীতি না করলে সরকারি চাকরি থেকে কেউ অব্যাহতি পেয়েছে এমন কমই শোনা যায়। সাথে সাপ্তাহিক দুই দিন সরকারি ছুটি ও বেসরকারি চাকরির তুলনায় কম কাজের চাপের কারণে প্রায় সকল চাকরিপ্রার্থীর প্রথম পছন্দ সরকারি চাকরি। এছাড়াও সরকারি চাকরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে কর্তৃত্বের হাতছানি, রয়েছে সম্মান। মোদ্দা কথা এই যে, সরকারি চাকরিতে সকল সুযোগ-সুবিধা বাদ দিলেও আপনি জীবনের এমন একটি দিক উপভোগ করতে পারবেন যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ঠিক এই কারণেই সরকারি চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায় বহুগুণ।

সরকারি চাকরির ধরন

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কথা বললে প্রথমেই যেটির নাম উঠে আসে সেটি হলো বিসিএস (BCS) তথা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service) পরীক্ষা। এই বিসিএস পরীক্ষাকে ঘিরে তোড়জোর কম নয়। কারণ সরকারি চাকরির নানা গ্রেড বা বিভাগ থাকলেও স্নাতক পাস কেউই ছোট গ্রেডের চাকরি করতে চায় না। ভাগ্যের ফেরে পরে হয়তো অনেকেই করে, কিন্তু সবার প্রথম চেষ্টা থাকে বিসিএসকে কেন্দ্র করেই। তাই এই লেখাতে মূলত বিসিএসকে নিয়েই কথা বলবো। তবে বিসিএস এর বাইরেও বেশ কিছু সরকারি চাকরির বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখন আসুন বিসিএস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক আরো কিছু তথ্য। 

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস

পূর্বেই বিসিএস সম্পর্কে প্রাথমিক বিষ্য উল্লেখ করেছি। মূলত বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক সমস্ত কাজ সংগঠিত হয় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা। আরেকটু সোজা ভাষায় বলতে গেলে, দেশের নীতি নির্ধারণ রাজনীতিবিদেরা করলেও দেশটা চলে কিন্তু আসলে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। আর বিসিএস এমন এক পরীক্ষা যার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিগুলো প্রদান করা হয়ে থাকে। বিসিএস এর রয়েছে মোট ২৬টি বিভাগ। এগুলোকে বলা হয়ে থাকে ‘ক্যাডার’ (Cadre)। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডার হলো ১০ টি। প্রফেশনাল ক্যাডার ১২টি। এর বাইরে আরো ৪টি ক্যাডার রয়েছে যাতে সাধারণ ও প্রফেশনাল দু’ধরনের নিয়োগই হয়ে থাকে। নিচে বিসিএস এর সাধারণ ক্যাডারগুলোর নাম দেওয়া হলোঃ

  • BCS (Foreign Affairs)
  • BCS (Postal)
  • BCS (Administration)
  • BCS (Railway Transportation & Commercial)
  • BCS (Police)
  • BCS (Ansar)
  • BCS (Audit & Accounts)
  • BCS (Family Planning)
  • BCS (Taxation)
  • BCS (Customs & Excise)

এর মধ্যে বিশেষত চারটি ক্যাডার নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। সেগুলো হলোঃ 

১)  BCS (Foreign Affairs)

২)  BCS (Administration)

৩)  BCS (Police)

৪)  BCS (Customs & Excise)

অবশ্যই আপনার মনে প্রশ্ন আসছে যে এই চারটি ক্যাডারের বিশেষত্ব কী, যার কারণে এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এ সবকয়টির বিশেষত্ব আমি আলাদা করে ব্যাখা করবো। তবে প্রাথমিকভাবে জেনে রাখুন যে, সরকারি চাকরিতে সবচেয়ে সুবিধাজনক, ক্ষমতা সম্বলিত ও সম্মানজনক ক্যাডার হলো এই চারটি ক্যাডার। 

বিসিএস ফরেইনঃ

এক কথায় বিসিএস পরীক্ষার শ্রেষ্ঠ পরীক্ষার্থীরাই এই ক্যাডারে সুযোগ পায়। আবারো বলছি, শ্রেষ্ঠ। লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের মাঝে সার্বিকভাবে মেধা তালিকার সবচেয়ে উপরে থাকা কয়েকজনই বিসিএস ফরেইন বা পররাষ্ট্র বিভাগে যোগদান করতে পারেন। কারণ এই বিভাগের কাজ হলো বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরা এবং অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা। একইভাবে যেকোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে অন্য দেশের সমর্থন আদায় করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে। এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ কূটনীতিকদের জন্য ইস্যু করা বিশেষ লাল পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন এবং সম্পূর্ণ ভিআইপি মর্যাদায় ইমিগ্রেশন পার হন। এই ক্যাডারে সর্বনিম্ন সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করা যায়। 

বিসিএস এডমিনঃ

পররাষ্ট্র ক্যাডারের পর এটিই হলো সর্বজনবিদিত দ্বিতীয় ক্যাডার। এই ক্যাডারের অধীনে চাকরিরত কর্মকর্তারা প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী হন। অর্থাৎ সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা মূলত এদের মাধ্যমেই কার্যকর হয়। যেকোনো স্থানে এরা সরকারের সরাসরি প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত হন এবং আপদকালীন পরিস্থিতিতে পুলিশ একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করে। এই ক্যাডারে যোগদানের সময় মাঠ পর্যায়ে সহকারি কমিশনার হিসেবে যোগদান করতে হয়। অথবা সরাসরি সচিবালয়ে সহকারী সচিব পদেও নিয়োগ পাওয়া যায়। 

বিসিএস পুলিশঃ

বিসিএস এর অন্যতম ক্যাডার হলো এই পুলিশ ক্যাডার। পুলিশ সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই বিরুপ প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগদান করা প্রত্যেক পুলিশ অফিসারই পুলিশের সহকারি সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। নিজের যোগ্যতাবলে সে হতে পারে পুলিশের আইজিপি অর্থাৎ ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ। পুলিশের চাকরিতে খাটুনি বেশি হলেও ভালো আবাসন, অবসর ভাতা ও ক্ষমতা সবমিলিয়ে এই ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম পছন্দ।

বিসিএস কাস্টমসঃ

কাস্টমস হলো মূলত এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় সংগঠিত নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তারা সবাই বিসিএস এর মাধ্যমে চাকরিতে ঢোকেন। এই ক্যাডারের চাকরিতে কর্মঘন্টা একেবারেই নির্দিষ্ট। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন, বেশ ভালো বেতন এবং প্রচুর বৈধ উপরি আয়ের জন্য এই ক্যাডার আদর্শ। 

বিসিএস এডুকেশনঃ

আরেকটি সুপরিচিত ক্যাডার হলো শিক্ষা ক্যাডার। এই ক্যাডারে মেধানুসারে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে সরকারি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের। যদি আপনি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক হন তাহলে আপনি সর্বোচ্চ সহকারী অধ্যাপক অবধি পদোন্নতি পাবেন। অর্থাৎ কলেজের শিক্ষক হয়ে একজন পূর্ণ অধ্যাপকের মর্যাদা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজে যোগদান। এছাড়াও আপনার প্রশাসনিক দক্ষতার উপর নির্ভর করে আপনি সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোতে কাজ করার। যা তুলনামূলক অনেক সুবিধাজনক ও কর্তৃত্বমূলক। 

এছাড়াও বিসিএস এর বাকি ক্যাডারগুলোর গুরুত্বও কিছু কম নয়। বিশেষত ট্যাক্স ক্যাডার ও অডিট ক্যাডারের চাকরি কাস্টমস এর মতোই সুবিধাজনক।

বিসিএস ব্যাতীত সরকারি চাকরি পাওয়ার উপায়

সামরিক বাহিনী

বিসিএস ব্যাতীত সরকারি চাকরি পাওয়ার উপায় বর্ণনা করতে গেলে সবার প্রথমেই যেটি আসবে সেটি হলো সামরিক বাহিনী। জ্বী, সামরিক বাহিনীর প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী একজন সরকারি চাকরিজীবি। তবে সাধারণ বেসামরিক জীবনের সাথে রয়েছে এর আকাশ পাতাল তফাৎ। হাড়ভাঙা খাটুনির পাশাপাশি সমানতালে পড়ালেখার পরে যখন আপনি একজন সেনা, নৌ অথবা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন পাবেন সেদিন থেকেই আপনার জীবনে একটি ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হবে। সত্যি বলতে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসবে সেদিন, যেদিন আপনি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবেন। 

সামরিক বাহিনীতে মূলত দুই ধরনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। লং কোর্স ও শর্ট কোর্স। বাহিনীতে মূলত লং কোর্স কর্মকর্তাদেরই আধিক্য বেশি এবং তারাই আধিপত্য বিস্তার করে থাকেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সার্কুলার অনুযায়ী আলাদা আলাদা পরীক্ষা দিতে হয়। এ পরীক্ষার ধাপ মোট ৪ টি।

১। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

২। প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা

৩। আন্তঃবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ

৪। চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা 

তবে এর বাইরেও স্নাতক শেষ করে আপনি চাইলে সামরিক বাহিনীর নির্দিষ্ট কিছু কোরে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করতে পারেন। যেমন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোর, মেডিকেল কোর। তবে এক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক পদ ফাঁকা থাকে। 

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে চাকরি

ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্থাৎ পুলিশের চাকরির কথা বিসিএস এর অংশে বলেছি। তবে শুধু বিসিএস নয় বরং অন্য উপায়েও পুলিশের চাকরি পাওয়া সম্ভব। সেটি হলো পুলিশের এসআই (SI) তথা সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি। পুলিশের এসআই পদটি অবশ্যই আপনাদের কাছে পরিচিত। মূলত একটি থানার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এসআইবৃন্দ। বিসিএস এ সফল না হলেও পুলিশের এসআই পদের সার্কুলার ছাড়লে সেখানে আপনি আবেদন করতে পারেন। অতঃপর সেই পরীক্ষায় সফল হলে আপনার প্রশিক্ষণ হবে সারদা পুলিশ একাডেমিতে। প্রশিক্ষণ শেষে একজন এসআই পদে আপনি জেলা পর্যায়ে অথবা মেট্রোপলিটন পর্যায়ে যোগদান করতে পারবেন। 

সরকারি ব্যাংকে চাকরি

ব্যাংকে চাকরির প্রশ্নে সরকারি ব্যাংক সবার উপরে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বেসরকারি ব্যাংকে তুলনায় সরকারি ব্যাংকে কর্মঘন্টা সীমিত। এছাড়া সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। তাই চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরকারি ব্যাংকই থাকে শীর্ষে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করে আপনি সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকেই চাকরি পেতে পারেন। তবে বাংলাদেশের অন্যতম স্বচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা পদ্ধতি। গড়পড়তার চেয়ে অধিক মেধাবীরাই শুধু সেখানে চাকরি করার সুযোগ পেয়ে থাকে। 

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাতে চাকরি

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা তথা এনএসআই (NSI-National Security Intelligence) হলো এদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও পুলিশের বিশেষ বিভাগ ব্যতীত বেসামরিক ও সাধারণ নাগরিকদের গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি। সহকারি পরিচালক, গবেষণা কর্মকর্তা, ফিল্ড অফিসার, জুনিয়র ফিল্ড অফিসার ইত্যাদি পদসহ আরো নানা পদে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাতে চাকরি প্রদান করা হয়ে থাকে। সুযোগ থাকে অনেক উঁচুপদে যাওয়ার। বিসিএস এর ক্যাডার চাকরির পাশাপাশি এটিও হতে পারে বেশ ভালো একটি জীবিকা। 

বিজ্ঞানী পদে চাকুরী

সত্যি বলতে বিজ্ঞানী হিসেবে বাংলাদেশে খুব বেশি পদ নেই। খুব অল্প সংখ্যক পদ রয়েছে যাতে চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে সত্যিই মেধাবী হতে হবে। তবে দেশে থেকেও যারা গবেষণার কাজে যুক্ত হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চান তাদের জন্য এটিই সেরা উপায়। বাংলাদেশে বিজ্ঞানী হিসেবে চাকরি করার জন্য সেরা কর্মস্থল হলো ‘পরমাণু শক্তি কমিশন’। এছাড়াও ‘নদী গবেষণা কেন্দ্র, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র’, ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র’ হতে পারে আপনার স্বপ্নের কর্মস্থল। এছাড়াও বাংলাদেশে গড়ে উঠছে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা অদূর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

প্রকৌশলী পদে চাকরি

পুরো বাংলাদেশ জুড়েই রয়েছে অসংখ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রতেই প্রয়োজন একাধিক ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান। আর এসব নন ক্যাডার চাকরিতে আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমেই পদ প্রদান করা হয়। তার পাশাপাশি সরকারি সকল কল-কারখানাতেও ও বড় বড় প্রজেক্টে বিপুল চাহিদা রয়েছে প্রকৌশলীদের। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক, ও খুলনা বন্দর এও রয়েছে ভালো সংখ্যক প্রকৌশলীর পদ। সামনে তৈরি হচ্ছে পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর যা সৃষ্টি করবে বিপুল কর্মসংস্থানের। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ কর্তৃপক্ষের অধীনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সকল নৌ-যোগাযোগ সম্পন্ন হয়ে থাকে। নন ক্যাডার এই চাকরিতে একটু চেষ্টা করলে আপনি ঢাকা অথবা নারায়নগঞ্জে পোস্টিং পেতে পারেন। এছাড়াও নদী পারাপার থেকে শুরু করে নৌ-যোগাযোগের যেকোনো ব্যাপারে বিপুল সুবিধা উপভোগ করবেন। আর ১০ টি সরকারি চাকরির মতোই এতে রয়েছে নিশ্চয়তা ও ছকবাঁধা জীবনের হাতছানি। 

রেলওয়ে অফিসার

উপযুক্ত পদাবলীর পাশাপাশি সরকারি চাকরির আরেকটি ভালো ক্ষেত্র হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে রেলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রেলের চাকরিতে অন্যান্য সরকারি চাকরির মতোই রয়েছে নিশ্চয়তা ও সুযোগ সুবিধা। ভাল আবাসন ব্যবস্থা ও রেলের যেকোনো ব্যাপারে রেলের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দারুণ সুবিধা পাবেন। 

এছাড়া এর বাইরেও সরকারি চাকরির রয়েছে আরো নানা সুযোগ। মূলত গ্রেডের মাধ্যমে সরকারি চাকরিসমূহকে ভাগ করা হয়। যত উঁচু গ্রেড চাকরির অবস্থান ততই ভালো। উপরের বর্ণিত ধাপগুলো পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে সরকারি চাকরি পাওয়ার মূল চাবিকাঠি বিসিএস পরীক্ষা হলেও, সে পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ না করেও আরো অনেক নন-ক্যাডার সরকারি চাকরি করা যায়। সেসবের সুযোগ সুবিধাও নেহায়েত কম নয়। এছাড়া কর্মকর্তা পদ বাদেও প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণে কর্মচারি চাকরিতে যোগদান করেন। এক্ষেত্রে পরীক্ষা-পদ্ধতি তুলনামূলক অনেক সহজ। তাদের আয় খুব একটা খারাপ নয় বরং রয়েছে সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধাও। একটু পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এমন চাকরিও হতে পারে একটি ভালো জীবিকা। 

সরকারি চাকরি পেতে করণীয় কিছু বিষয়

সরকারি চাকরি ছেলের হাতের মোয়া নয়। বিশেষত বিসিএস পরীক্ষার জন্য চাই কঠোর খাটুনি। তাই জেনে নিন এক্ষেত্রে করণীয় কিছু বিষয়।

দৈনিক রুটিন

সরকারি চাকরি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে একটি রুটিন মাফিক চলতে হবে। প্রথমেই একটি দৈনিক রুটিন বানিয়ে নিন যাতে পড়ালেখা করার সময়টুকু অবশ্যি বেশি থাকে। এরপর কঠোরভাবে সেই রুটিন মেনে মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে প্রথমে তুলনামূলক সহজ রুটিন মেনে ধীরে ধীরে আরো কড়া রুটিনে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। নিজেকে আরো পরিশ্রমী করে তুলুন।

সিলেবাস

একজন চাকরি প্রার্থী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই চাকরীর নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। পরীক্ষায় কী কী বিষয়ে প্রশ্ন হবে তা পরিষ্কারভাবে জানুন। আপনার পরীক্ষার সময়ে কোন বিষয় থেকে কোন ধরনের প্রশ্ন বেশি আসতে পারে তা ধারণা করার চেষ্টা করুন। এরপর সে অনুযায়ী নোট করে পড়ুন।

টিপস

কোন চাকরির পরীক্ষার জন্য কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তা জানা আপনার কর্তব্য। এক্ষেত্রে সিনিয়র ভাই বোনের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া যারা সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছে এমন কারো টিপস নিতে পারেন। অজানা অনেক বিষয় জানবেন যা চাকরির পরীক্ষাকে কিছুটা হলেও সহজ করে তুলবে। 

বিগত প্রশ্ন সমাধান

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান না করলে আপনি কোনোভাবেই প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা পাবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় বিগত বছরের প্রশ্নের সাহায্যে মক টেস্ট দিলে।  

বিশ্বাস এবং ধৈর্য

নিজের উপর নিজের বিশ্বাস রাখতে হবে আপনার। আপনিই পারবেন এবং এই পারার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস অটুট রাখার পাশাপাশি সমানভাবে আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে; হাল ছাড়া যাবে না। আর তাহলেই সাফল্যের দেখা মিলবে।

উপরিউক্ত কাজগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে প্রয়োগ করতে হবে। কারণ চাকরির বাজারে আপনি অনেকের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাই সঠিক পরিকল্পনা করুন ও কঠোর ভাবে উপরের নির্দেশনা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। ফলে প্রস্তুতির দিক দিয়ে আপনি অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। 

চাকরির নিয়োগ সম্পর্কে জানা

একজন চাকরি প্রার্থীর সরকারি চাকরির নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যদি কো্নো প্রার্থী নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না থাকে তাহলে সে ভালোভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারবে না, তাই চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত জব পোর্টাল গুলোতে খোঁজ রাখুন চাকরির পদ অনুযায়ী নিয়োগের ধরন বিভিন্ন হলেও সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো হলো-

  • প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষা
  • লিখিত পরীক্ষা
  • মৌখিক পরীক্ষা
  • মেডিকেল টেস্ট

প্রত্যেক সরকারি চাকরি প্রার্থীকে উপরের সবগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে প্রিলি বা বাছাই পরীক্ষা হয়। এটা সাধারণত বহুনির্বাচনী প্রশ্নে হয়ে থাকে। বহুনির্বাচনীতে উত্তীর্ণ হলে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ এবং সর্বশেষে মেডিকেল টেস্ট। 

কিভাবে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবেন?

সরকারি চাকরি পেতে হলে আপনাকে কিছু উপায় অনুসরণ করে নিজের মত পরিকল্পনা করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ব্যতীত সরকারি চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। আপনার প্রস্তুতি সহজ করার জন্য কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

  • চাকরির পড়াশোনার জন্য সঠিক পরিকল্পনা করুন। আপনি যদি আপনার স্নাতক শেষ করার আগে চাকরির পড়াশোনা শুরু করতে পারেন তাহলে তো খুব ভালো। যদি না করে থাকেন, তাহলে যে সময় আছে তার জন্য সঠিক পরিকল্পনা করুন।
  • পরীক্ষার মার্কস পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। 
  • চাকরির পরীক্ষার জন্য সব পড়ে শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো চিহ্নিত করুন।
  • কোনো টপিক পড়ার পরে সেই টপিকের প্রশ্নগুলো সাথে সাথেই সমাধান করে ফেলুন। 
  • পূর্ববর্তী পড়া ভুলে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই সময় পেলেই আগের পড়া ঝালাই করে নিন।  সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক পড়াগুলো বার বার পড়ুন।  

মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি

আপনি প্রিলিমিনারি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ মৌখিক পরীক্ষা স্কুল কলেজের মৌখিক পরীক্ষার মতো নয়। যদি আপনি মৌখিক পরীক্ষাতে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে আপনার চাকরি না হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনা। কারণ অসংখ্য পরীক্ষার্থীই লিখিত পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করে থাকে। কিন্তু চাকরি করতে হলে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেই চলে না। সফলতার জন্যে একজনের সাবলীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। মৌখিক পরীক্ষাতে মূলত আপনার ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতাই যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়াও পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করা হবে যার উত্তর স্পষ্টভাবে বলা চাই। যদি কোনো কারণে প্রশ্নের উত্তর না জানেন তাহলে মাথা চুলকে, নখ কামড়ে, অতিরিক্ত সময় নেওয়ার মতো ভয়াবহ ভুল মোটেও করবেন না। তাহলে সেখানেই আপনার সব আশা শেষ। সাবলীলভাবেই আপনার অপারগতা প্রকাশ করবেন। এছাড়াও যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেনঃ

  • আপনি যেখানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন সেই কোম্পানি / মন্ত্রনালয় / অফিস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে সেই অফিস এর ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখবেন।
  • আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে মৌখিক পরিক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

সরকারি চাকরির সার্কুলার

চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করার সাথে সাথে আপনার চাকরির সার্কুলার সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে। নাহলে অনেক ভাল পদের চাকরি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত চাকরির খোঁজ জানতে BD Government Job Circular চেক করতে পারেন। 

মন্তব্য

বাংলাদেশে চাকরির বাজারে সবচেয়ে নিরাপদ চাকরি হলো সরকারি চাকরি এই সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আর এর সাথে সাথে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

 

সর্বশেষ আপডেটের তারিখঃ ০৩/২৪/২০২১

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button