অনলাইনে আয়আউটসোর্সিংডাটা এন্ট্রিফ্রিল্যান্সিং

ডাটা এন্ট্রি কি? ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য

ডাটা এন্ট্রির কাজ বেশ আগে থেকেই সুপরিচিত এবং বহুল প্রচলিত। যারা সহজ কোনো মাধ্যমের সাহায্যে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তাদের অনেকেই ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে এই ক্যারিয়ারে পদার্পণ করেন। অনেকেরই ভাল কোনো কম্পিউটার বা তেমন বেশি দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও ফ্রিল্যান্সিং বা কম্পিউটার ভিত্তিক কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে। তাদের জন্য ডাটা এন্ট্রি হতে পারে শুরু করার ভাল একটি মাধ্যম। এছাড়াও ডাটা এন্ট্রির যেমন অনেক চাকরি রয়েছে তেমন ইদানীং অনেক চাকরিতেই সাধারণ পর্যায়ের ডাটা এন্ট্রির কাজ জানা থাকলে প্রাধান্য পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচিপত্রঃ

ডাটা এন্ট্রি কি?

মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, সম্পাদনা অথবা যাচাই এর কাজকেই বলে ডাটা এন্ট্রি। সাধারণত কাগুজে বা অন্য কোনো অফলাইন মাধ্যম থেকে ডাটাগুলোকে ডিজিটাল মাধ্যমে রুপান্তরের কাজটিই ডাটা এন্ট্রি হিসেবে বিবেচিত হয়। ঠিক একই ভাবে একটি ডিজিটাল মাধ্যমের তথ্য বা ডাটা অন্য ডিজিটাল মাধ্যমে নেওয়া, সাজানো, সম্পাদনা করা ইত্যাদিও ডাটা এন্ট্রির মধ্যেই পড়ে। ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) কথাটির দুইটি অংশ। প্রথমটি ‘ডাটা’ (Data) যার বাংলা শাব্দিক অর্থ ‘তথ্য’। দ্বিতীয় অংশটি হলো ‘এন্ট্রি’ (Entry) যার বাংলা অর্থ অন্তর্ভুক্তি। অর্থাৎ এর নাম থেকেই এটি কি তা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাওয়া সম্ভব। 

ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্র

ডাটা এন্ট্রির কাজটি অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের মতই চাইলে যেকোনো স্থানে বসেই করা যায়। আবার এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিসে বসে কাজ করাটাই পছন্দ করেন। মূলত এর ভিত্তিতে ডাটা এন্ট্রির কাজ বা চাকরিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

রিমোট জব

‘রিমোট’ (Remote) এর শাব্দিক অর্থ ‘দূরবর্তী’ হলেও মূলত রিমোট জব দ্বারা বোঝায় যেই চাকরির জন্য নির্দিষ্ট কোনো অফিসের প্রয়োজন নেই। 

ইন-হাউজ অথবা অন-সাইট চাকরি 

ইন-হাউজ (In-House) অথবা অন-সাইট (On-site) চাকরির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। মূলত অফিসে বসে গতানুগতিক ভাবে ডাটা এন্ট্রির কাজ করাটাকেই ইন-হাউজ বা অন-সাইট চাকরি বলে। আর এদের পার্থক্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

রিমোট জব 

ইন-হাউজ / অন-সাইট 

সাধারণত এই ধরনের কাজ কোনো প্রজেক্ট ভিত্তিক হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট প্রজেক্টের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় এবং প্রজেক্ট শেষ হলে কাজও শেষ হয়ে যায়।সাধারণত এই ধরনের কাজে চাকরি স্থায়ী হয়। অর্থাৎ একাধিক প্রজেক্টে কাজ করতে হয় আবার

সাময়িক ভাবে প্রজেক্ট না থাকলেও চাকরি বহাল থাকে।

এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো যেখানে বসে যেভাবে খুশি কাজটি করা যায়। নির্দিষ্ট কোনো কর্মঘন্টা নেই। তবে সময়সীমা অবশ্যই রক্ষা করতে হয়।এই কাজে নির্দিষ্ট স্থান ও কর্মঘন্টা আছে। সময়সীমাও রক্ষা করতে হয়। 
পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট হারে না দিয়ে কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। পারিশ্রমিক মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। কাজ  যতটুকুই করুন। 
চাকরির পাশাপাশি কোনো খন্ডকালীন কাজ করতে চাইলে এ ধরনের রিমোট জব একটি ভাল উপায়। এটি খন্ডকালীন নয় বরং এটিই মূল কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। 
সাধারণত এই ঘরানায় নিয়মিত চাকরির সংখ্যা খুব কম। ইন-হাউজ কাজগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মিত চাকরি হয়। 

উন্নত বিশ্বে ডাটা এন্ট্রির কাজ রিমোট জবে রুপান্তরিত করা হলেও বাংলাদেশ সহ আরও অনেক দেশেই গতানুগতিক ইন-হাউজ প্রক্রিয়ায় ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পাদন হয়। 

ডাটা এন্ট্রির প্রকারভেদ 

ডাটা এন্ট্রির কাজ যেহেতু মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্যের অন্তর্ভুক্তি অথবা সেই তথ্যের সম্পাদনা বা যাচাই করণ। সেহেতু তথ্যের ধরন ও কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে অবশ্যই ডাটা এন্ট্রির নানা ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। প্রথমত কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে ডাটা এন্ট্রিকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। 

ডাটা রুপান্তর

এটি মূলত এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে তথ্যকে রুপান্তরিত করা। সেটি হতে পারে কাগজ থেকে মাইক্রোসফট এক্সেল এ, অথবা এক সফটওয়্যার থেকে আরেক সফটওয়্যারে। সাধারণত এই ধরনের কাজ কিবোর্ডের ইনপুটের সাহায্যেই করা হয়। আবার অনেক সময়ই কোনো রেকর্ডিং শুনে শুনে তা লেখায় রুপান্তর করতে হয়। মূলত এই কাজে তথ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধু মাধ্যমের পরিবর্তন হয়। 

ডাটা যাচাই

ডাটা এন্ট্রির সাহায্যে তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে রুপান্তরিত করলেও অনেক ভুলই হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিটি তথ্য আবার যাচাই করে দেখা উচিত যে আসলেই ঠিক ভাবে ডাটা এন্ট্রির কাজটি করা হয়েছে কি না। 

ডাটার শ্রেণিবিভাগ

ডাটা বা তথ্যের শ্রেণিবিভাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। ডিজিটাল মাধ্যমে এত বেশি ডাটা অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যে সেগুলো যদি সঠিক ভাবে সাজানো না থাকে তবে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। আর ডাটাকে এভাবে সাজানোটাও ডাটা এন্ট্রির কাজের মধ্যেই পড়ে। 

কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে করা প্রকারভেদ তো জানলেন। কিন্তু ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো আসলে কাদের প্রয়োজনে মেটাতে হয় তা বোঝাটাও জরুরী। কারণ তার ওপর ভিত্তি করে ডাটা এন্ট্রির তথ্যগুলো অনেকটাই ভিন্নতা পায়। তথ্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ডাটা এন্ট্রি হতে পারে নানা প্রকারের। যেমনঃ

হিসাব ও অর্থায়ন

হিসাব রাখার ক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রির কাজ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। মূলত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই তাদের হিসাব নিখুঁত ভাবে রাখতে হয়। অনেক হিসাব সরাসরি ডিজিটাল মাধ্যমে রাখা হলেও বিশাল সংখ্যক হিসাব কাগজে কলমে করা হয়। কিন্তু সার্বিক হিসাব করতে চাইলে সকল মাধ্যমের হিসাবকে এক স্থানে রাখা চাই। তাই প্রায় সকল বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ডাটা এন্ট্রির জন্য আলাদা কর্মী থাকে অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিজেদেরই এই কাজ করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে তথ্যগুলো মূলত সংখ্যাভিত্তিক হয়। বিশেষত টাকার হিসাবই নির্ভুল ভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। 

প্রশাসন

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অসংখ্য তথ্য নিয়মিত ডিজিটাল মাধ্যমে রুপান্তর করতে হয়। যেমন আমাদের ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এখনো কাগজের ফর্ম চালু আছে। সে সকল তথ্য ডিজিটাল সার্ভারে প্রবেশ করাতে হয়। এছাড়াও যেকোনো হিসাব, দলিল অথবা ভাউচারের তথ্যও প্রশাসনিক প্রয়োজনে অনলাইনে আপলোড বা ডিজিটাল মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। 

ব্যবসায়িক তথ্য

এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা কাগজে কলমের হিসাবেই চলে। কিন্তু কোন পণ্যের স্টক কতটুকু আছে, কোন পণ্যের বিক্রির ভাল হচ্ছে এ সকল তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে রাখতে সকল কর্মীকেই ডাটা এন্ট্রি শিখতে হবে। 

ডাটা এন্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে ভবিষ্যতে ডাটা এন্ট্রির প্রভাব পড়বে তা পরিষ্কার। কিন্তু ঠিক কি কি দক্ষতা থাকলে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন বা একে একটি পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবেন। 

দ্রুত টাইপ করার ক্ষমতা

টাইপ করার গতি ডাটা এন্ট্রির কাজে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। যেহেতু পুরো কাজটিই টাইপের ওপর নির্ভরশীল তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই চায় তার কর্মচারীর টাইপ করার গতি খুবই দ্রুত হোক। মিনিটে নূন্যতম ৩০টি শব্দ টাইপ করতে না পারলে কোনো ডাটা এন্ট্রি চাকরিতে আবেদনই করা উচিত না। তবে এখন বেশিরভাগ ডাটা এন্ট্রি চাকরিতেই মিনিটে নূন্যতম ৪০-৫০টি শব্দ লেখার যোগ্যতা থাকতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেই নূন্যসীমা হতে পারে মিনিটে ৭০টি। 

ডাটাবেজ ও সাধারণ সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারনা

ডাটা এন্ট্রির কাজ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ডাটাবেজ ভিত্তিক সকল সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাইক্রোসফট এক্সেস অথবা এক্সেল, গুগল শিট এ ধরনের সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। এর বাইরেও বর্তমানে ইনফিনিটি, এন্ট্রি পয়েন্ট ১৪, টাইপফর্ম, ফাস্ট ফিল্ড, ফর্ম টুলস এর মতো অনেক আধুনিক সফটওয়্যার আছে যা ডাটা এন্ট্রির কাজকে নিয়ে গেছে অন্য পর্যায়ে। তাই সাধারণ সফটওয়্যারের বাইরে এসকল নতুন ও কার্যকরী সফটওয়্যার সম্পর্কেও ধারনা রাখতে হবে।

অফিসের সাধারণ যন্ত্রের ব্যবহারে দক্ষতা

ডাটা এন্ট্রির কাজের সাথে একটি অফিসের সাধারণ যন্ত্র যেমন প্রিন্টার, স্ক্যানার, ফ্যাক্স মেশিন এসব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফ্রিল্যান্স ডাটা এন্ট্রির কাজে এসবের ব্যবহার জানা দরকার না পড়লেও অফিসে বসে কাজ করতে গেলে অবশ্যই এসবের ব্যবহার জানা চাই।

নিখুঁত ভাবে কাজ করা

অন্য সকল কাজের থেকে ডাটা এন্ট্রির কাজ খুঁতহীন হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোডিং বা ডাটা এন্ট্রি এ ধরনের কাজগুলোর কোথাও ভুল হলে কোথায় ভুল হয়েছে তা পরে খুঁজে পাওয়া ভীষণ মুশকিল। তাই ঝামেলা এড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রথম থেকেই নিখুঁত ভাবে কাজ করা।

তথ্য সংগ্রহ এবং রিসার্চ করতে পারা

ডাটা এন্ট্রির কাজে সাধারণত সকল ডাটা উপস্থিত থাকে এবং তা সাজিয়ে নিতে হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আপনার নিজেকেই ডাটা যোগাড় করে নিতে হতে পারে। এছাড়াও ডাটা সংগ্রহ করতে হলে সাধারণ রিসার্চ স্কিল (Research Skill) থাকাটা আবশ্যক।

যোগাযোগ দক্ষতা

একজন ডাটা এন্ট্রি ক্লার্কের জন্য যোগাযোগ করতে পারা ক্ষমতা খুবই জরুরী। কারণ ডাটা এন্ট্রির কাজ অনেক বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে হয়ে থাকে। তাই অনেক ধরনের ডাটাই ডাটাবেজে ইনপুট করতে হয় যেখানে ব্যকরণগত ভুল হলে তা বেশ সমস্যাদায়ক। এছাড়াও অনেক সময় গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি শুনে শুনে ডাটা পূরণ করতে হয়। কখনও বা ফোন কলের সাহায্যে ডাটা সংগ্রহ করে এন্ট্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন ডাটা এন্ট্রি পেশাজীবির যোগাযোগ দক্ষতা উঁচু পর্যায়ের হওয়াটা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। 

ডাটা এন্ট্রি  শেখার উপায়

ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যান্য অনেক কাজ শেখার থেকে ডাটা এন্ট্রি শেখাটা বেশ সহজ। যদিও ডাটা এন্ট্রিতে অনেক ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন হতে পারে. তবে শেখার শুরুটা অবশ্যই সাধারণ কিছু দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমেই শুরু হয়। 

টাইপিং শিখন ও অন্যান্য যন্ত্রাদির সাথে পরিচয় 

ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখতে চাইলে প্রথমেই নিজের টাইপিং দক্ষতা ঝালাই করে নিতে হবে। কাজ শেখার আগেই মিনিটে অন্তত ৩০টি শব্দ টাইপ করতে পারার ক্ষমতা থাকা জরুরী। এছাড়াও একই সাথে কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাদি যেমন স্ক্যানার, প্রিন্টার ইত্যাদির ব্যবহার ভাল করে জেনে নিতে হবে। একই সাথে কম্পিউটারের সাধারণ সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ভাল ধারনা অর্জন করতে হবে। 

ডাটা এন্ট্রির কাজ শেখার জন্য বর্তমানে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হলো অনলাইনে কোর্স করা। বর্তমানে এমন কোনো বিষয় নেই যেই বিষয়ে অনলাইনে কোর্স থাকে না। নিচে ডাটা এন্ট্রির সম্পর্কিত কিছু কোর্সের কথা তুলে ধরা হলো। 

স্কিলশেয়ার (Skillshare)

অনলাইনে দক্ষতা অর্জন করার জন্য স্কিলশেয়ার বর্তমানে সেরা একটি মাধ্যম। প্রথম ১ মাস এই সাইটটি থেকে বিনামূল্যে যেকোনো কোর্স করা যায়। ডাটা এন্ট্রির জন্য এই সাইটটিতে রয়েছে এক্সেল সম্পর্কিত অনেকগুলো কোর্স। মাইক্রোসফট এক্সেস মূলত ডাটাবেস সফটওয়্যার হলেও এক্সেলও ডাটা এন্ট্রির কাজে বহুল ব্যবহৃত। এই সাইটটি থেকে আপনি এক্সেল সম্পর্কিত অনেক কোর্সই করতে পারবেন। যেমনঃ

  • বিগিনারস গাইড টু মাইক্রসফট এক্সেল ডাটা এন্ট্রি (Beginners Guide to Microsoft Excel Data Entry)
  • এক্সেল স্কিলস ফর বিজনেস (Excel Skills for Business) 
  • এক্সেল ফর দি রিয়েল ওয়ার্ল্ড (Excel for the Real World) 

এই তিনটি কোর্স একাউন্ট খোলার এক মাসের মধ্যে করলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবেন। আর এই তিনটি কোর্সের মাধ্যমে আপনি এক্সেল এর সকল বেসিক থেকে শুরু করে এক্সেলের নানা ফাংশন, ফিল লিস্ট, কাস্টম ফিল, ফিল্টার, কাট অ্যান্ড ড্র্যাগ টুল, এক্সেলে গ্রাফ তৈরি, হিসাব করা, সাধারণ ডাটা এন্ট্রি, রিবন ব্যবহার, ডাটা ফরমেটিং এর মতো অসংখ্য কাজ সঠিক ভাবে শিখতে পারবেন। 

ইউডেমি (Udemy)

স্কিলশেয়ারের মতো ইউডেমিও একটি অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম। ইউডেমিতে ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কিত হাজার হাজার কোর্স রয়েছে। আপনার পছন্দ মতো যেকোনো কোর্স করতে পারেন যার মধ্যে থাকতে পারে নিচের দুইটি কোর্স। 

  • ডাটা এন্ট্রি কোর্স ফর বিগিনারস (Data Entry Course for Beginners)
  • জেরো অনলাইন একাউন্টিং (Xero Online Accounting) 

প্রথম কোর্সটির সাহায্যে ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কিত সকল বেসিক আপনার তৈরি হয়ে যাবে। এই কোর্সটি মূলত আজহারুল রাফি নামক একজন ফ্রিল্যান্সারের তৈরি যিনি ২০১২ থেকে ফ্রিল্যান্সিং করছেন এবং ৪টি কোর্সের সাহায্যে ১৩,০০০ এরও বেশি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। ২ ঘন্টা ৪২ মিনিটের এই কোর্সটি ইউডেমির অন্যতম জনপ্রিয় একটি কোর্স। এর সাহায্যে আপনি সহজেই শিখতে পারবেন ডাটা এন্ট্রির সকল বেসিক। জানতে পারবেন পিডিএফ ফাইল এবং ইমেজ কনভার্ট করার উপায়, ফ্রিল্যান্সার সাইটে পোর্টফলিও তৈরির উপায়। এছাড়াও এই কোর্সটিতে থাকছে আপওয়ার্ক (UpWork) থেকে লাইভ ডেমো অনুশীলনের ব্যবস্থা। সার্টিফিকেট সম্বলিত এই কোর্সটি একবার কিনলে সারা জীবনই ব্যবহার করতে পারবেন।

অপর দিকে জেরো অনলাইন একাউন্টিং কোর্সটি নতুন কারো জন্য নয়। সাধারণত অভিজ্ঞ ও বেশ দক্ষ ব্যক্তিরাই এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে থাকেন। 

অফলাইন কোর্স করা 

বাংলাদেশে এখন অনেক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নির্ভরযোগ্য মনে হলেও স্বনামধন্য এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও ডাটা এন্ট্রির কোর্স করতে পারেন। তবে সাধারনত অনলাইন ভিত্তিক প্রক্রিয়াতেই ডাটা এন্ট্রির অনেক কিছুই নিজে থেকে শিখে ফেলা যায়।

কেন করবেন ডাটা এন্ট্রি? 

কেন করবেন ডাটা এন্ট্রি এই প্রশ্নের উত্তর মূলত ডাটা এন্ট্রির সুবিধাগুলোর মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে।

সহজে শিখনযোগ্য

ডাটা এন্ট্রির কাজ অনেকটাই সহজে শেখা যায় বলে এটি শুরু করাটা বেশ সহজ। এমনকি এই কাজের জন্য কোনো সার্টফিকেটও প্রয়োজনীয় নয়। চাইলে ঘরে বসেই খুব সহজে শিখে ফেলতে পারবেন ডাটা এন্ট্রির অধিকাংশ কাজ। 

কাজের সুযোগ

অনেক খাতেই রয়েছে ডাটা এন্ট্রির কাজের প্রচুর সুযোগ। হিসাব রক্ষা, আইন, চিকিৎসা, প্রশাসন, ব্যবসা এমন অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে ডাটা এন্ট্রি করার প্রয়োজন হয়। তাই কাজের তেমন কোনো অভাব হবে না। 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আদর্শ

দিন যত যাচ্ছে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলো ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো ফ্রিল্যান্সিং এর সাহায্যেই করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কারণ সেসব দেশে একজন নিয়মিত কর্মীচারীকে অফিসে বসিয়ে কাজ করানোর যে খরচ তার চেয়ে অনেক কম খরচে কাজ করে দিচ্ছে এদেশীয় ফ্রিল্যান্সাররা। তাই এটি হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং এর একটি সহজ ক্ষেত্র। 

কম খরচ

ডাটা এন্ট্রি করতে খুব বেশি দামি যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। ফ্রিল্যান্সিং ভিত্তিক অনেক কাজের ভেতর  গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (Graphics Desgining), ভিডিও এডিটিং (Video Editing) বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু এ সকল কাজ ভাল ভাবে করতে চাইলে যেই মানের কম্পিউটার দরকার তার চেয়ে অনেক কম দামী কম্পিউটারেই খুব সহজে করা যাবে ডাটা এন্ট্রির কাজ। 

সব মিলিয়ে ডাটা এন্ট্রির কাজের শিখনযোগ্যতা, সহজলভ্যতার কারণে ডাটা এন্ট্রি হতে পারে আপনার কাজ শুরু করার একটি আদর্শ মাধ্যম।

ডাটা এন্ট্রির অসুবিধা 

সুবিধার পাশাপাশি সকল পেশার মতো ডাটা এন্ট্রিতেও রয়েছে কিছু অসুবিধা।

  • ডাটা এন্ট্রির কাজগুলোর পারিশ্রমিক অনেকটাই কম। ফলে একে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নেওয়াটা বেশ কঠিন। 
  • ডাটা এন্ট্রির কাজ সহজ হলেও অনেক সময় সাপেক্ষ। 
  • ডাটা এন্ট্রির কাজ একঘেয়ে এবং এতে সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। 
  • অন্য যেকোনো কাজ থেকে ডাটা এন্ট্রির কাজ নিখুঁত ভাবে করাটা বেশি কঠিন ও পরিশ্রম সাপেক্ষ। 
  • অনেকেই ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে চায় বিধায় বর্তমানে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়েছে যারা কাজ করিয়ে নিলেও টাকা দেয় না। এমন প্রতিষ্ঠানের ফাঁদ থেকে বেচে থাকাটা একটি চ্যালেঞ্জ। 

শেষকথা

ডাটা এন্ট্রি একেবারেই সরল প্রজাতির কাজ হলেও একে অবহেলা করার তেমন সুযোগ নেই। সহজ কাজ বিধায় খুব বেশি দিন সময় না দিয়েই শুরু করতে পারেন এই কাজটি। চাইলে অন্য কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাজে লাগাতে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারেন। আবার অনেক সময় অন্য কোনো কাজ না ফেলে ডাটা এন্ট্রির সহজলভ্যতা আপনার জন্য হতে পারে আর্শিবাদস্বরুপ। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ডাটা এন্ট্রির কাজের পারিশ্রমিক কেমন?

উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রির কাজে পারিশ্রমিক কিছুটা কমই বলা চলে। বিশেষত বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানই ডাটা এন্ট্রির কাজে প্রতি ঘন্টায় ১০০-১৫০ টাকা দিয়ে থাকে। তবে এটি ৫০ টাকা যেমন হতে পারে, দক্ষ লোকের ক্ষেত্রে এই পারিশ্রমিক ঘন্টায় ৪০০ টাকাও হতে পারে। 

২। ডাটা এন্ট্রির কাজের কি কম্পিউটার আবশ্যক?

উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রির কাজ ফোনেও করা সম্ভব। কিন্তু ডাটা এন্ট্রির কাজের পরিমাণ অনেক এবং দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয় বলে কম্পিউটার থাকাটা এক্ষেত্রে অনেক সুবিধাজনক। 

৩। ডাটা এন্ট্রির কাজের ভবিষ্যত কেমন?

উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রির কাজের ভবিষ্যত আগামী বেশ কিছু বছর ভাল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ডাটা এন্ট্রির কাজের পরিধি অনেকটাই কমে আসতে পারে কারণ দিন যতই যাচ্ছে, সরাসরি ডিজিটাল ইনপুটের সংখ্যা ততটাই বেড়ে যাচ্ছে। 

 

তথ্যসূত্রঃ

১। ডাটা এন্ট্রি জবসঃ এ কমপ্লিট গাইড 

২। হাউ টু লার্ন ডাটা এন্ট্রি অ্যান্ড ক্যারিয়ার এভেইলএবল ক্যারিয়ার অপশন

৩। টপ সেভেন ফ্রি বেস্ট অনলাইন ডাটা এন্ট্রি কোর্সেস 

৪। হোয়াট আর ডাটা এন্ট্রি জবস

৫। হাউ টু লার্ন ডাটা এন্ট্রি 

৬। সেভেন কি স্কিলস ফর ডাটা এন্ট্রি জবস 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button