অনলাইন ব্যাংকিংব্যাংকিং

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত

দেশের বেকার যুবকদের আশার আলো কর্মসংস্থান ব্যাংক। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায় উন্নয়ন, বিদেশে গমন, প্রকল্প উন্নয়ন ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণ নিতে হয়। উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পছন্দের হলো- কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি।

দেশের বেকার/ শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে ঋণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে কর্মসংস্থান ব্যাংক চালু করা হয়। বর্তমানে দেশজুড়ে ১৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ২১২টি শাখার নেটওয়ার্ক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণ নিতে ব্যাংক লোনের কর্মসূচি, ঋণের প্রদানের খাত, ঋণের আবেদন করার নিয়ম, ঋণ প্রাপ্তির শর্তাবলী, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, অনলাইনে ঋণের আবেদন, ঋণের মেয়াদ, সুদের হার, বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার উপায় ও অন্যান্য সকল তথ্য জেনে নিন এই আলোচনায়।

সূচিপত্রঃ

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ ও বিভিন্ন কর্মসূচি 

কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ প্রদান কর্মসূচির বেশ কিছু প্রকার রয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নিম্নোক্ত কর্মসূচি গুলোর আওতায় কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন-

(১) নিজস্ব কর্মসূচি

  • দেশের বেকার যুবসমাজ বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের উদ্যোগে ঋণ সহায়তা।
  • শিক্ষিত বেকারদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি (Small Enterprise Credit Program) 
  • যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান।

(২) সরকারের বিশেষ কর্মসূচি

  • কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে ঋণ সহায়তা প্রদান।
  • শিল্প কারখানা/ কর্মচ্যুত শ্রমিক/ প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছা-অবসরপ্রাপ্ত/ বিভিন্ন কর্মচারীদের কর্মসংস্থানে জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান।
  • বাঝুঁকানিশিনি- বাংলাদেশের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেই শিশুরা নিয়োজিত রয়েছে। এমন শিশুশ্রম নিরসনকল্পে এ ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। (EHC LB- Eradication of Hazardous Child Labour in Bangladesh)
  • বাংলাদেশ ব্যাংক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচি (বিবিমপ্রাস)।
  • বাংলাদেশ ব্যাংক ‘দুগ্ধ উৎপাদন ও কৃত্রিম প্রজনন খাতে পুন: অর্থায়ন কর্মসূচি (বিবিকৃপ)

(৩) কনজুমারস ক্রেডিট স্কীম/ ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) কর্মসূচি

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে ব্যাংকে কর্মরত স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিত্য ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্য সামগ্রী ক্রয় করার ক্ষেত্রে কনজুমারস ক্রেডিট স্কীমের আওতায় ঋণ প্রদান করা হয়। যেমন- 

  • কম্পিউটার/ল্যাপটপ ক্রয় ঋণ;
  • গৃহ নির্মাণ ঋণ;
  • মোটর সাইকেল ঋণ।

(৪) বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ কর্মসূচি 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে এ দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেকার যুবদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

(৫) বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা বেকার যুব মহিলাদের জন্য ঋণ কর্মসূচি 

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে সমাজের অনগ্রসর, আর্থিক সঙ্গতিহীন ও সুবিধাবঞ্চিত বিধবা/ স্বামী পরিত্যক্তা নারী জনগোষ্ঠিকে ঋণ সহায়তা প্রদান। এর মাধ্যমে আর্থিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে এর সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

(৬) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) বেকার যুবদের উন্নয়নে ঋণ কর্মসূচি 

সমাজের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠিকে (প্রতিবন্ধীদের) ঋণ সহায়তা প্রদান। তাদেরকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা প্রদান।

(৭) হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য ঋণ কর্মসূচি 

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতির এই কর্মসূচির লক্ষ্য হিজড়া সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদেরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক যেসকল খাতে ঋণ দেয়

  • মৎস্য সম্পদঃ মৎস্য চাষ, উৎপাদন, পুকুর প্রস্তুত ইত্যাদি প্রয়োজনে।
  • প্রাণিসম্পদঃ দুগ্ধ খামার, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল/ভেড়া পালন, ব্রয়লার, ককরেল, লেয়ার মুরগীর খামার, কোয়েল/ টার্কির খামার ইত্যাদি খাতে।
  • যানবাহন/পরিবহন সেবাঃ পণ্য/যাত্রী পরিবহন সেবা প্রকল্পের আওতায় যাবতীয় কার্যক্রমে ঋণ প্রদান।
  • শিল্প-কারখানাঃ উৎপাদনশীল শিল্প, নবায়নযোগ্য শিল্প, যন্ত্রপাতি/খাদ্য তৈরির কারখানা ইত্যাদি শিল্পে।
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পঃ মৃৎ শিল্প, কামারের কাজ, তাঁত শিল্প, কাঠের/ স্টীলের আসবাবপত্র তৈরিকরণ, বাঁশ ও বেত শিল্প, যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা, ক্ষুদ্র প্রিন্টিং, চামড়াজাত শিল্প ইত্যাদি।
  • অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রকল্পঃ মাশরুম চাষ, ফল চাষ, ফুল চাষ, মৌমাছি চাষ, নকশীকাঁথা, নার্সারি ইত্যাদি।
  • সেবা খাতঃ সেলুন/লন্ড্রি, কম্পিউটার সেবা, ফটোকপি সেবা, মোবাইল ফোন মেরামত, সেলাই মেশিন, ওয়ার্কশপ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ক্লিনিক/দন্ত চিকিৎসা, স্টুডিও, কোচিং সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি।
  • বানিজ্যিক খাতঃ মনোহারি, তৈরী পোষাক ব্যবসা, প্রাণিখাদ্য/ মৎস্যখাদ্য বিক্রয়, ধান/ চাল/অন্যান্য কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য ব্যবসা/বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসা ইত্যাদি।

 

কর্মসংস্থান ব্যাংকে ঋণের আবেদন করার নিয়ম

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী আবেদন করার জন্য আপনার এলাকায় নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হবে। আপনি যদি কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তাবলী পূরণ করে থাকেন তাহলে নির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করে আবেদন করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে বললে একটি আবেদন ফরম প্রদান করবে, তা সঠিকভাবে পূরণ করুন। ( বি:দ্র: ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে আবেদন ফরমের মূল্য ৩০০ টাকা। ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে ৪০০ টাকা। তার বেশি হলে আবেদন ফরমের মূল্য হবে ৫০০ টাকা)।

তথ্য পূরণের পাশাপাশি প্রয়োজন নথিপত্র গুলো ফরমের সাথে যুক্ত করে জমা দিন। অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করে ব্যাংক কর্মকর্তা আবেদনটি গ্রহণ করবে।

স্থানীয় শাখায় ঋণ মঞ্জুরের ক্ষমতা থাকলে ১০ দিনের মধ্যেই তার নিষ্পত্তি হবে। ঋণ মঞ্জুরের ক্ষমতা আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থানান্তর হলে ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। তবে এই ক্ষমতা আঞ্চলিক কার্যালয়ের হাতে না থাকলে প্রধান কার্যালয় পাঠানো হলে ঋণ নিষ্পত্তি হতে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সময় লাগতে পারে। 

এবার কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতির শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তাবলী 

যেকেউ চাইলেই কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেনা। এর জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতির শর্তাবলী গুলো হলো-

১। উদ্যোক্তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

২। যে শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করবে সেই শাখার নির্ধারিত এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। সেই স্থানের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে অন্য কোন স্থায়ী বাসিন্দাকে ঋণের গ্যারান্টার হতে হবে।

৩। বেকার বা অর্ধবেকার উদ্যোক্তা হতে হবে।

৪। উদ্যোক্তার বয়স ১৮-৪৫ বছর হতে হবে। তবে পূর্বের ঋণ গ্রহীতা হলে বয়স সীমা শিথিলযোগ্য।

৫। উদ্যোক্তার কাঙ্খিত প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ/ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (Department of Youth Development), বিসিক (BSCIC), সোশ্যাল ডেডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (Social Development Foundation- SDF) বা অন্যান্য সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হবে।

৬। ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক আচরণে সুনাম থাকতে হবে।

৭। উদ্যোক্তার ইকুইটি (Enquity) বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

৮। অন্য কোনো ব্যাংক, এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপী নন এমন।

৯। কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতির ঋণ নীতিমালার সকল নিয়ম অনুসরণে সক্ষমতা থাকতে হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

  • সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাংকের ঋণ প্রদানকারী শাখায় নির্ধারিত ঋণের আবেদনের ফরম পূরণ।
  • আবেদনকারীর এবং গ্যারান্টারের ২ কপি করে পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি।
  • আবেদনকারীর এবং গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্রের উভয় পাশের সত্যায়িত ফটোকপি। (বাধ্যতামূলক নয়)।
  • আবেদনকারীর এবং গ্যারান্টারের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র হিসেবে দলিল/টর্চার ফটোকপি বা নাগরিকত্ব সনদ।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

এছাড়াও কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতির যে কর্মসূচি এবং খাতের আওতায় ঋণ নিতে চাচ্ছেন সে অনুযায়ী বিভিন্ন প্রমাণপত্র ব্যাংক চাইতে পারে। যেমন-

  • যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ঋণের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ০৩টি দরপত্র।
  • ১ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে ঋণের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের কপি।
  • ঔষধের দোকানের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্সের কপি।
  • প্রকল্প ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় বিবরণী ইত্যাদি।

কর্মসংস্থান ব্যাংক অনলাইন লোন আবেদন

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসংস্থান ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ চালু করা হয়। এর আওতায় অনলাইনে কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের আবেদন করা যায়। আবেদন করার জন্য ভিজিট করুন- কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন– এই লিংকে। এবার একটি ফরম দেখতে পাবেন, তাতে ১১ টি তথ্য পূরণ করতে হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক অনলাইন লোন আবেদন  

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী অনলাইন আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-

(১) ইউর প্রজেক্ট এরিয়া (Your Project Area)

যে শাখায় ঋণ নিতে চান তা নির্বাচন করুন।

(২) এপ্লিকেন্ট ফুল নেম (Applicant Full Name)

ঋণ গ্রাহকের/ আবেদনকারীর সম্পূর্ণ নাম ইংরেজিতে লিখুন।

(৩) ন্যাশনাল আইডি নাম্বার (National ID Number)

ঋণ গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখুন।

(৪) মোবাইল নাম্বার (Mobile Number)

ঋণ গ্রাহকের একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখুন।

(৫) ফাদার/স্পাউস নেম (Father/Spouse Name)

ঋণ গ্রাহকের বাবা বা স্বামীর নাম লিখুন। এক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী লিখতে পারেন।

(৬) মাদার’স নেম (Mother’s Name)

ঋণ গ্রাহকের মায়ের নাম লিখুন।

(৭) প্রেসেন্ট অ্যাড্রেস (Present Address)

আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানার সম্পূর্ণ তথ্য, যেমন- হোল্ডিং, বাড়ি, গ্রাম/এলাকা, উপজেলা/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন, জেলা ধারাবাহিকভাবে লিখুন।

(৮) গ্যারান্টার নেম (Guaranter Name)

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে অনলাইনে ঋণ আবেদন করার জন্যও একজন গ্যারান্টার বা ঋণের জামিনদার প্রয়োজন হয়। এই ধাপে গ্যারান্টারের সম্পূর্ণ নাম লিখুন।

(৯) গ্যারান্টার ন্যাশনাল আইডি নাম্বার (Guarantor National ID Number)

গ্যারান্টার বা ঋণের জামিনদারের এনআইডি কার্ড নাম্বার লিখুন।

(১০) ইউর ডেট অব বার্থ (Your Date of Birth)

এই অপশনে ডানপাশের ড্রপডাউন অপশনটিতে ক্যালেন্ডার থেকে ঋণ গ্রাহকের জন্ম তারিখ নির্বাচন করুন।

(১১) প্রজেক্ট টাইপ এন্ড নেম (Project Type and Name)

আবেদনের ক্ষেত্রে এই ধাপটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ঋণগ্রাহক কেন ঋণ নিতে চাচ্ছেন, কোন কাজে ব্যয় করবেন, কত টাকা ঋণ প্রয়োজন ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই ঋণ গ্রাহককে বাছাই করে পরবর্তীতে ব্যাংক শাখায় ডাকা হবে।

অনলাইনে আবেদন করার পর সাধারণত ৭ কার্য দিবসের মধ্যে আবেদনের সময় দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। তারপর ব্যাংকের সাক্ষাৎকার, সরেজমিনে প্রজেক্ট পর্যবেক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আবেদনের ৩৫-৪০ কার্য দিবসের মধ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণ নিষ্পত্তি করা হয়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের মেয়াদ 

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের মেয়াদ সাধারণত ২ বছর হয়। তবে ঋণের পরিমাণ, প্রকল্পের প্রকৃতি, আকার, সম্ভাব্য মুনাফা ইত্যাদি বিবেচনা করে ঋণের মেয়াদ ১ বছর থেকে ৫ বছর হতে পারে। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের জন্য ঋণ সহায়তা কর্মসূচীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০৮ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে।

উৎপাদিত পণ্য/ সেবার বিপননের উপর ভিত্তি করে মাসিক/ ত্রৈমাসিক/ ষান্মাসিক/ এককালীন কিস্তিতে ঋণের পরিশোধসূচী নির্ধারিত হয়ে থাকে।

মেয়াদপূর্তির আগে ঋণ পরিশোধ করে পুনরায় ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী Early Settlement Fee (ESF) প্রদান করতে হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের সুদের হার

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে ঋণের খাত ও কর্মসূচি অনুযায়ী সুদের হার ভিন্ন। যথা- 

  • উৎপাদনশীল ও সেবামূলক খাতে ঋণের সুদের হার বার্ষিক শতকরা ১১%। ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ১% যোগ হবে।
  • বাণিজ্যিক খাতের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার  বার্ষিক শতকরা ১৩%। ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ১% যোগ হবে।
  • কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতে সদরঘাট বার্ষিক শতকরা ৮%-৯%।
  • ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক ঋণ কর্মসূচীর সুদের হার বার্ষিক শতকরা ১৩%।

সকল কর্মসূচিতেই ব্যাংকের সুদের হার পরিবর্তনযোগ্য।

বিনা জামানাতে কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ

দেশের বেকার বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে। সহজ শর্ত পূরণ করে ৫ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মসূচি অনুযায়ী ঋণের সুদের হার ৮%-১০% হতে পারে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে দেরি হলে ১০% সুদ দিতে হয়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে এই কর্মসূচিতে শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঋণ দেয়। তবে বিদেশে গমনের  জন্য ঋণ দেওয়া হয়না।

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের স্ট্যাম্প খরচ

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে নির্দিষ্ট মূল্যের স্ট্যাম্প প্রয়োজন হয়, যার মূল্য ঋণ গ্রহীতাকে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্ট্যাম্প খরচ হবে-

(১) ২,০০০ টাকার মূল্যের জন্য ১০ টাকা, ২,০০০-১০,০০০ টাকার মূল্যের জন্য ২০ টাকা, ১০০০০ টাকার উপরের মূল্যের জন্য ৫০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প ডিপি নোট প্রয়োজন হবে।

(২) হাইপোথিকেশন ডিড, মূল দলিল জমা রাখার স্মারকলিপি ও তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি প্রতিটির জন্য ৩০০ টাকার এডহেসিভ স্ট্যাম্প প্রয়োজন হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক মৃত্যুঝুঁকি আচ্ছাদন স্কীম

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী নিজস্ব কর্মসূচীর আওতায় প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতার মৃত্যু ঝুঁকি আচ্ছাদন স্কীমের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে-

  • ঋণ গ্রহীতার মঞ্জুরীকৃত ঋণের মেয়াদ ১-২ বছর পর্যন্ত ০.৫০% হারে এবং ঋণের মেয়াদ ০২ বছরের বেশি হলে ০.৬০% হারে চাঁদা নগদে পরিশোধ করতে হবে। (অফেরতযোগ্য) 
  • ঋণের মেয়াদকালের মধ্যে গ্রাহকের মৃত্যু হলে কর্মসংস্থান ব্যাংকের পাওনা এই স্ক্রিম থেকে সমন্বয় করা হবে। মৃত ঋণ গ্রহীতার উত্তরাধিকারীদের কোন দায় বহন করতে হবে না।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্য কি 

  • দেশের বেকার বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
  • আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা।
  • উদ্যোক্তাকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা।
  • উদ্যোক্তাকে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণসহ কুটির শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করা।
  • দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা।
  • জিডিপিতে অবদান বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।

কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে ঋণ নিতে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন-

  • ঋণের জন্য সরাসরি ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কোন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিলে প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
  • ঋণের টাকা নগদে প্রদান না করে ঋণ গ্রহীতার নামে অর্ডার চেক (Order Check) অথবা, এসি পেই (A/C Payee) চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। তাই সঠিকভাবে অর্থ বুঝে নিন।
  • চেকের পিছনে ঋণ গ্রহীতা নিজের স্বাক্ষর দিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে হবে, কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।
  • রশিদ ছাড়া লেনদেন করা যাবেনা।

কর্মসংস্থান ব্যাংক শাখা সমূহ

বর্তমানে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ১৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ২১২ টি শাখা। তবে আপনার নিকটস্থ শাখা কোথায় অবস্থিত তা জানা প্রয়োজন। 

এক্ষেত্রে, গুগল ক্রোম ব্রাউজারে (Google Chrome Browser)- এ আপনার এলাকার নাম ও নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক লিখে সার্চ করুন। যেমন- মেঘনা উপজেলা নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক। এভাবে আপনার এলাকার সবচেয়ে নিকটে শাখাটিতে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে ঋণ নিতে পারবেন।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের যোগাযোগ ব্যবস্থা

প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা- রাজউক এভিনিউ, ঢাকা -১০০০

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: www.kb.gov.bd

ই-মেইল এড্রেস: [email protected]

কর্মসংস্থান ব্যাংক ফোন নাম্বার, জনসংযোগ কর্মকর্তা : 01719960769

শেষকথা

যুবকদের বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অত্যন্ত সুবিধাজনক। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ, বিনা জামানতের ঋণ প্রাপ্তি, সহজ শর্তাবলীর কারণে ঋণ পাওয়া যায় সহজেই। উপরোক্ত সকল তথ্য জেনে সঠিকভাবে ঋণ আবেদন করুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। গরুর খামার করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাবো কি?

হ্যাঁ, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ প্রদান করা হয়। গরুর খামার প্রাণিসম্পদ খাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণ নিতে পারবেন।

২। কর্মসংস্থান ব্যাংক কি সরকারি?

কর্মসংস্থান ব্যাংক বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তালিকাভুক্ত (Non-scheduled) ব্যাংক। এটি বেকারদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

৩। অনলাইনে আবেদন করে ব্যাংক লোন পাওয়া যায় কি?

হ্যাঁ, অনলাইনে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন করলে নিকটস্থ শাখা থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারপর ব্যাংক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সরাসরি আবেদনের মতোই যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে ঋণ প্রদান করে থাকে। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button