অভিবাসনভিসা

সৌদি আরব ভিসাঃ ধরন, খরচ, মেয়াদ এবং আবেদন নিয়ম

বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রতিবছরই হাজার হাজার বাংলাদেশি কাজের জন্য সৌদি আরব যায়। এছাড়াও হজ্জ, চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি নানা কাজে সৌদি আরব যাওয়া হয়। তবে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে নানারকম প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকেই।

পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনা অবস্থিত সৌদি আরবে। এছাড়াও স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়ে কর্মক্ষেত্র উন্নতি করা যায়। ইসলামী শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্যও সৌদি আরব বিখ্যাত।

এক দেশে নাগরিক অন্য দেশে প্রবেশের অনুমতি পত্র হচ্ছে ভিসা। সৌদি আরব যেতে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম, ভিসার প্রকারভেদ, কি কি ডকুমেন্টস লাগে, কত টাকা খরচ হয়, ভিসার মেয়াদ কতদিন, সৌদি আরব কাজের ভিসা, সৌদি ভিসা কোথায় করবো ইত্যাদি সকল তথ্য থাকছে এই পোস্টে।

সূচিপত্রঃ

সৌদি আরব ভিসার প্রকারভেদ

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রয়োজনে যায়। বর্তমানে সৌদি আরবে বেশ কয়েক ধরনের ভিসা পাওয়া যায়। এগুলো হলো –

  • সৌদি আরব টুরিস্ট ই-ভিসা
  • হজ্জ ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা
  • বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসা

এছাড়াও সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী কাজের ভিসায় যেতে চাইলে বিভিন্ন প্রকার ভিসা রয়েছে। যেমন-

  • আমেল মঞ্জিল ভিসা
  • আমেল আইদি ভিসা
  • কোম্পানি ভিসা
  • চাওয়াক খাছ ভিসা
  • মাজরার ভিসা

বর্তমানে সবগুলো ভিসাই বাংলাদেশীদের জন্য খোলা রয়েছে। প্রতিটি ভিসারই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসকল ভিসার ধরন, কাজ, প্রসেসিং, খরচ ও মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হয়। 

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম 

১ই মে ২০২৩ থেকে বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরবের ই-ভিসা কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র টুরিস্ট ভিসার জন্যই সৌদি আরবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করা যায়। এছাড়া অন্যান্য ভিসার জন্য আবেদন করতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন এজেন্সি কিংবা সৌদি এম্বাসির শরণাপন্ন হতে হয়। 

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুসরণ করে ভিসা হাতে পেতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-

ধাপ ১: ভিসার ধরন নির্বাচন

একই সময়ে সৌদি আরবের যেকোনো একটি ভিসা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুসারে সৌদি আরব ভিসার প্রকারভেদ থেকে কোন ভিসায় যেতে চান তা নির্বাচন করুন।

ধাপ ২: ভিসার আবেদন পত্র পূরণ

যেকোন ভিসায় সৌদি আরব যেতে চাইলে সৌদির ভিসা প্রসেসিং এজেন্সী (Saudi Arabia Visa Processing Agency) বা এম্বাসি (Embassy) থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তা সঠিকভাবে পূরণ করুন। অনলাইন থেকে আবেদন পত্র ডাউনলোড করে থাকলে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই তার জন্য স্পষ্ট রেজুলেশনে হয়ে থাকে।

ধাপ ৩: প্রয়োজনে কাগজপত্র জমাদান

সৌদি আরবের ভিসা প্রসেসিং করার জন্য এজেন্সি বা এম্বাসিতে ভিসার ধরন অনুযায়ী যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা আবেদনপত্রের সাথে জমা দিন।

ধাপ ৪: ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান

এম্বাসিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভিসার প্রসেসিং ফি ভিন্ন হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংক চালান এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করুন।

ধাপ ৫: এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুসারে ভিসা প্রদানের পূর্বে সৌদি আরবের এম্বাসি/ কনস্যুলেটে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বিশেষ করে কাজের ভিসার ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য এই প্রক্রিয়াটিতে সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করুন।

ধাপ ৬: ভিসা আবেদন ট্র্যাক

সাধারণভাবে টুরিস্ট ভিসা ছাড়া অন্যান্য ভিসা হতে কিছুটা সময় লাগে। এম্বাসিতে বা এজেন্সিতে যোগাযোগ করে আপনার ভিসার বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।

ধাপ ৭: সৌদি আরবের ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট সংগ্রহ

আপনার ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হলে ভিসা সম্পর্কিত পাসপোর্ট এজেন্সি কিংবা এম্বাসি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

বর্তমানে কাজের ভিসার ক্ষেত্রে বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া একজন সাধারণ লোক হিসেবে সৌদি গেলে কাজ পেতে সমস্যা ও বেতন কম হবে।

সৌদি আরব ভিসা করতে কি কি লাগে?

সকল দেশের মতোই সৌদি আরবেও ভিসা পেতে বেশ কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। তবে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী ভিসার ধরনভেদে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসও ভিন্ন হয়। এগুলো হলো-

ট্যুরিস্ট ভিসা

  • সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
  • ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট
  • অনলাইনে আবেদন ও সৌদি এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার
  • ছবি

কাজের ভিসা

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী কাজের ভিসা পেতে প্রয়োজন হয়-

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড (ওয়ার্ক পারমিট পেতে ২১ বছর বয়স লাগে)
  • বিএমইটির ডাটাবেজে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন
  • বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচি থেকে সার্টিফিকেট
  • ৪ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • করোনা ভ্যাকসন সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • সৌদি এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার

ব্যবসায়/বিজনেস ভিসা

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন
  • সৌদি আরবের কোন কোম্পানির ইনভিটেশন বা আমন্ত্রণপত্র 
  • পূর্বে কোন দেশে ভ্রমণের প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্টে স্টিকার স্ট্যাম্প
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • এক বছরের ব্যাংক সলভেন্সি ও স্টেটমেন্ট
  • ৪-৬ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • ভিজিটিং কার্ড

হজ্জ ভিসা

  • মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ 
  • যাদের বয়স ১৮ এর কম তাদের অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট
  • ছবি

স্টুডেন্ট ভিসা

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী স্টুডেন্ট ভিসা পেতে প্রয়োজন হয়-

  • মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ 
  • যে কোন একজন অভিভাবকের বৈধ ইকামার কপি
  • শিক্ষার দিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। জন্মসূত্রে মুসলিম না হলে ইসলাম গ্রহণের প্রমাণপত্র।
  • ৪-৬ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।

ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন
  • সৌদি আরবে অবস্থানকারী ব্যক্তির পারিবারিক সদস্য হওয়ার প্রমাণপত্র
  • স্ত্রী ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় যেতে স্বামীর বৈধ ইকামার কপি
  • বিয়ের বৈধ কাবিননামা
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট

সৌদি আরবের বিভিন্ন ভিসা- ধরন, মেয়াদ ও খরচ 

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন ভিসার কার্যক্রম, মেয়াদ ও খরচ ভিন্ন হয়। সে সম্পর্কিত তথ্য নিচে দেওয়া হল-

সৌদি আরব টুরিস্ট ই-ভিসা

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে টুরিস্ট ভিসায় (Tourist Visa) যেতে চাইলে বর্তমানে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। টুরিস্ট ভিসা ৩ মাস সিঙ্গেল এন্ট্রি ও ৬ মাস মাল্টিপল এন্ট্রি হয়ে থাকে।

ট্যুরিস্ট ভিসার মূল্য ৩০০ রিয়াল নির্ধারন করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় ৮,০০০ টাকার মতো। তবে সব খরচ মিলিয়ে ৫০-৭০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

সৌদি আরব হজ্জ ভিসা

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ হজ্জ করতে যায়। এছাড়াও অসংখ্য মানুষ ওমরাহ হজ্জ পালন করতে যায়। 

২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্জ পালন করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক। ভিসা সংগ্রহ করতে চাইলে বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারস্থ হতে হয়। একজন ব্যক্তি এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জ ভিসা করতে চাইলে ভিসার মূল্যসহ সম্পন্ন হজ প্যাকেজে প্রায় ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুসারে বর্তমানে ওমরাহ হজ ভিসার মূল্য ৩০০ রিয়াল এবং আনুষঙ্গিক খরচ ২০০ রিয়াল সহ মোট ৫০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৪-১৫ হাজার। তবে সম্পূর্ণ ওমরা প্যাকেজে একজন ব্যক্তির ৭৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ খরচ হয়।

সৌদি আরব স্টুডেন্ট ভিসা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইসলামিক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী সৌদি আরবে স্টুডেন্ট ভিসায় যায়। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করার পর সেখান থেকে কনফার্মেশন লেটার প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও স্কলারশিপ পেয়ে সৌদি আরবে স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া যায়।

স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী বা কোর্সের মেয়াদকাল পর্যন্ত হয়। স্টুডেন্ট ভিসার মূল্য সাধারণত ২,০০০-৩,০০০ রিয়াল হয়ে থাকে। 

সৌদি আরব ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা

সৌদি আরবে পরিবারের কোনো সদস্য প্রবাসী অবস্থায় থাকলে পরিবারের লোকদের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা আবেদন করতে পারে। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের ভিসা সংগ্রহ করা যায়। বহিঃস্থ কোন আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা করলে পরবর্তীতে সমস্যা হয়।

পূর্বে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার জন্য জনপ্রতি ২০০০ রিয়াল খরচ হতো। ২০২৩ সালে সেই ভিসার মূল্য ৩০০ রিয়াল করা হয়েছে। তবে ভিসার মূল্য সহ আনুষঙ্গিক সকল খরচ মিলিয়ে ৩ মাসের ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় জনপ্রতি প্রায় ৪ হাজার বিয়াল খরচ হতে পারে। ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা ৩ মাস সিঙ্গেল এন্ট্রি ও ৬ মাস মাল্টিপল এন্ট্রিতে অবস্থান করা যায়।

সৌদি আরব বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসা

ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সৌদি সরকার বিজনেস ভিসার ব্যবস্থা রেখেছে। এ ভিসায় সৌদি আরবের কোন কোম্পানির ইনভিটেশন (Invitation) বা আমন্ত্রণপত্র পেয়ে সেই কোম্পানি ভিজিট করে তাদের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করতে পারবেন। তবে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসায় কাজ করার সুযোগ নেই।

ভিজিট ভিসা ৩ ধরনের মেয়াদী হয়ে থাকে। যথা-

  1. ৩ মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি
  2. ৬ মাসের মাল্টিপল এন্ট্রি
  3. ১ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি

একবারে সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান করে দেশে ফিরে এসে পুনরায় মাল্টিপল এন্ট্রিতে যেতে হবে। বিজনেস ভিসার মূল্য সিঙ্গেল এন্ট্রি প্রায় ২,০০০ রিয়াল এবং মাল্টিপল এন্ট্রি প্রায় ৩,০০০ রিয়াল।

সৌদি আরবে কাজের ভিসা ধরন, মেয়াদ ও খরচ 

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী কাজের ভিসা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। এসকল ভিসার ধরন, কাজ, মেয়াদ ও প্রসেসিং খরচ ভিন্ন। এবার সৌদি আরবের বিভিন্ন কাজের ভিসা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-

সৌদি আরব আমেল মঞ্জিল ভিসা

একজন সৌদি নাগরিক তার ঘরোয়া কাজের জন্য ৮ জন পর্যন্ত কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারে। যেমন- ঘরের দারোয়ান, ক্লিনার, মেইড ইত্যাদি। আমেল মঞ্জিল ভিসাতেই এই কাজ করা যায়। আমেল মঞ্জিল ভিসার মূল্য ১,৫০০-২,০০০ রিয়াল হয়, তবে সৌদি যেতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

সৌদি আরব আমেল আইদি ভিসা

এই ভিসায় সৌদি আরবে কফিলের অনুমতি নিয়ে যেকোনো কাজ করতে পারবেন। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী সৌদর নাগরিক বা কফিল নিয়োগকারী কোম্পানি থেকে ২,০০০-২,৫০০ রিয়ালে ভিসা ক্রয় করে। পরে ৬,০০০-১০,০০০ রিয়ালে সে ভিসা বিক্রি করে।

সৌদি আরব কোম্পানি ভিসা

সৌদি আরবের চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। কাজের দক্ষতা দেখিয়ে কোম্পানিতে সরাসরি ভিসার আবেদন করা যায়। কোম্পানি ভিসা অ্যাপ করলে ভিসার মূল্য ২,০০০-২,৫০০ রিয়াল হয়ে থাকে। অন্যান্য সকল খরচ মিলিয়ে সৌদি যেতে ৩.৫-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়। 

সৌদি আরব চাওয়াক খাছ ভিসা

এটি মূলত সৌদি নাগরিকের হোম ড্রাইভার হিসেবে কাজের ভিসা। এ ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০-১,৭০০ রিয়াল তবে কফিলরা ভিসার মূল্য বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে। তাই সকল খরচ মিলিয়ে সৌদি যেতে  ৩-৩.৫ লক্ষ টাকা লাগে।

সৌদি আরব মাজরার ভিসা

এটি সৌদি আরবের বাগান বা কৃষিকাজ করার ভিসা। ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০-২,০০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে প্রসেসিং ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা লাগে।

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে সৌদি আরবের সকল শ্রমিক ভিসার মেয়াদকাল ২ বছর করা হয়েছে। তারপর তার প্রসেসিং করে দীর্ঘদিন অবস্থান করা যাবে

সৌদি আরব কোন কাজের চাহিদা বেশি?

২০২৩ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি- ‘বাংলাদেশ থেকে ৫ টি খাতে প্রতিবছর ৫,০০০ হাজার পেশাদার ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেবে সৌদি আরব’ বলে জানান সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম। এগুলো হলো- প্লাম্বার, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, অটোমোবাইল ও এসি মেকানিক।

সাধারণত অদক্ষ কর্মীদের বেতন ৮০০-১২০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে উক্ত ৫ টি কাজে দক্ষ শ্রমিকদের বেতন হবে ১৫০০-১৮০০ রিয়াল।

এই কাজগুলোতে ভিসা পেতে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি (BMET) থেকে পরীক্ষা ও দক্ষতা দেশের মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী সে সার্টিফিকেট জমা দিয়ে কাজের ভিসার আবেদন করতে হবে।

এছাড়াও কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ফ্যাক্টরি শ্রমিক, ড্রাইভিং, ক্লিনার, সেলসম্যান, গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবের কাজের চাহিদা অনেক বেশি।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসায় গেলে বেতন কেমন?

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসায় গেলে, কর্মীর বেতন কর্মদক্ষতা ও কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে। বর্তমানে প্লাম্বার, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, অটোমোবাইল ও এসি মেকানিক- এসকল কাজে দক্ষ শ্রমিকদের বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল হয়। তবে অন্যান্য কাজে অদক্ষ ব্যক্তিদের বেতন ১২০০-১৫০০ রিয়াল বা তার কম হয়।

সৌদি আরব ই-ভিসা করার নিয়ম?

বর্তমানে টুরিস্ট ভিসার জন্য সৌদি আরবের ই ভিসা আবেদন করা যায়। সৌদি ই-ভিসা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট, https://visa.visitsaudi.com/ – এ ভিজিট করে এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ ও ভিসা ফ্রি প্রদান করে অনলাইনে সৌদি ই-ভিসা করতে পারবেন।

সৌদি আরব ফ্রি ভিসা

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী ফ্রি ভিসা নামে কোন ভিসা চালু নেই। সাধারণত কফিলরা নির্দিষ্ট কোন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভিসা উত্তোলন করে তা ফ্রি ভিসা নামে শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করে। এটি একপ্রকার প্রতারণা। 

তবে ফ্রি ভিসা বলতে আমেল আইদি ভিসাকেও বোঝানো হয়ে থাকে। এ ভিসার আওতায় কফিলদের অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কাজ করা যায়। তার জন্য কফিলকে প্রতিমাসে শিক্ষানবিশ ভাতা দিতে হয়।

সৌদি ভিসা এজেন্সি

বাংলাদেশ থেকে সৌদি ভিসা প্রসেসিং করার বহু এজেন্সি রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু বিশ্বস্ত ও সুপরিচিত এজেন্সি হলো-

  • বিএস সার্ভিসেস
  • আল খিদ মা কনসালটেন্সি সেন্টার
  • আল মাহমুদ কনসালটেন্সি
  • আল হুমাইরা কনসালটেন্সি সার্ভিস
  • এমসি ডিভিশনস বিডি ভিসা সার্ভিস
  • আল-মানার কনসালটেন্সি লিমিটেড
  • আল নূর কনসালটেন্সি সেন্টার

শেষকথা

সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম না জেনে আমরা বিভিন্ন এজেন্সি ও দালালের শরণাপন্ন হই। মাঝে মাঝে তারা ভুল ভিসা দেয় ও দীর্ঘদিন সময় ব্যয় করে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য জেনে সচেতনতা অবলম্বন করুন। কাজের ভিসায় সৌদি যেতে অবশ্যই চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলোকে দক্ষতা অর্জন করুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। সৌদি আরব কাজের ভিসার দাম কত?

সৌদি আরবে কাজের ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২,৫০০ রিয়াল হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৫,০০০-৭৫,০০০ টাকা। তবে সৌদির কফিলরা ও ভিসা প্রদানকারী এজেন্সি এর মূল্য ৬,০০০-১০,০০০ রিয়াল নিয়ে থাকে।

২। সৌদি আরবের ভিসা পেতে কত দিন সময় লাগে?

সৌদি আরবের কাজের ভিসা আবেদন করার পর তা ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে টুরিস্ট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসিট ভিসা পেতে ৭-১৫ দিন সময় লাগে। স্টুডেন্ট ভিসা এবং হজ্জ ভিসা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম অনুযায়ী হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসা ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই প্রদান করা হয়।

৩। সৌদি আরব কাজের ভিসা পেতে কত বছর বয়স লাগে?

সৌদি আরব কাজের ভিসা পেতে ন্যূনতম ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স লাগে।

৪। কফিল কি? 

একটি দেশের স্থায়ী নাগরিক তার অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে পারে। একে কাফালা পদ্ধতি বলে। কাফালা পদ্ধতিতে যিনি বিদেশি কর্মীদের স্পন্সর করে সে দেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাকে কফিল বলা হয়। একজন কফিলের অধীনে কোন কর্মী বিদেশে গেলে তার কর্মে নিয়োগ, কাজ পরিবর্তন, ইকামা ইত্যাদি কফিলের উপর নির্ভর করে।

৫। ইকামা বা আকামা কি?

ইকামা বা আকামা হলো বিদেশি বাসিন্দাদের সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে অবস্থান, বসবাস ও কাজ করার জন্য অনুমতি পত্র। অবস্থানরত দেশের শ্রম আইন ও অভিবাসন নীতি মেনে বৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইকামা বা আকামা তৈরি করতে হয়। মেয়াদসম্পন্ন ইকামা ছাড়া সে দেশে অবস্থান করা অবৈধ।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button