প্রযুক্তির এই যুগে যদি কোনো যন্ত্রকে সবচেয়ে জরুরী হিসেবে আখ্যা দিতে হয়, তবে সেই তকমাটি অবশ্যই পাবে কম্পিউটার। ২১ শতকের জীবন কম্পিউটারের সহায়তা ছাড়া আর কল্পনাও করা যায় না। তাই শুধু কম্পিউটার কি তা জানলেই চলবে না, জানা চাই কম্পিউটারের কার্যকারিতা, কর্মদক্ষতা এবং এর প্রতিটি অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূচিপত্রঃ
কম্পিউটার শব্দের অর্থ
অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজস (Oxford Languages) অনুযায়ী কম্পিউটার শব্দের অর্থ হলো, ‘একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা প্রোগ্রাম ভেদে নানা রকম নির্দেশনা অনুযায়ী বাইনারি ফর্মের তথ্য-উপাত্ত ধারণ ও হিসাবের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।’
‘Computer’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Computare’ থেকে। যার ইংরেজি অর্থ ‘To Compute’। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘গণনার জন্য’। মজার ব্যাপার হলো কম্পিউটার শব্দটি কিন্তু পূর্বে ব্যবহৃত হতো এক বিশেষ পেশার মানুষদের বোঝাতে। সেখান থেকেই কম্পিউটার শব্দটির উৎপত্তি। মূলত তারা ছিলেন মানব কম্পিউটার। তাদের কাজ ছিল যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর যেমন অ্যাবাকাস (Abacus), স্লাইড রুল (Slide Rules) ইত্যাদি ব্যবহার করে গণনা ও হিসাব-নিকেশের কাজ করা। পরবর্তীতে এই কম্পিউটার নাম ব্যবহৃত হতো যে সকল যন্ত্র গণনা ও হিসাব করতো তাদের বোঝানোর জন্য। সেখান থেকেই বর্তমান কম্পিউটারের নামকরণ।
কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার হলো এমন একটি ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যাকে বিভিন্ন এরিথমেটিক এবং লজিকাল অপারেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রোগ্রাম করা যায়। আরও সহজ ভাষায় বললে কম্পিউটার হলো সেই যন্ত্র যা সাধারণ বাইনারি হিসাব নিকাশের মাধ্যমে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন হিসাব নিমিষেই কষতে পারে। পূর্বে সাধারণ হিসাব নিকাশ রাখার কাজে এটির ব্যবহার হলেও বর্তমানে গবেষণা, কাজ, পড়ালেখা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর অবদান অসীম।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটারের প্রকারভেদ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। তবে আকারের দিক থেকে কম্পিউটারকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়।
- সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
- মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
- ওয়ার্কস্টেশন (Workstation)
- মাইক্রো কম্পিউটার বা পারসোনাল কম্পিউটার (PC)
অপরদিকে কর্মক্ষমতা এবং কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে কম্পিউটারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- এনালগ কম্পিউটার (Analog Computer)
- ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
- হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
আসুন কম্পিউটারের এ সকল ধরন সম্পর্কে জানা যাক কিছুটা বিস্তারিত।
সুপার কম্পিউটার
কম্পিউটারের সকল ধরনের মধ্যে সুপার কম্পিউটারগুলোই সবচেয়ে বৃহৎ এবং শক্তিশালী হয়। কম্পিউটারের সর্বোচ্চ গতির কথা কল্পনা করলে প্রথমেই সুপার কম্পিউটারের নামটিই মাথায় আসে। এ সকল কম্পিউটারে মিলিয়ন বিলিয়ন নয় বরং ট্রিলিয়ন সংখ্যক ইন্সট্রাকশন বা ডাটা প্রতি মূহুর্তে প্রসেস হতে থাকে। সাধারণ কম্পিউটারের মতো এদের কর্মক্ষমতার হিসাব ‘মিলিয়ন ইন্সট্রাকশনস পার সেকেন্ড’ (Milliom Instructions per Second) নয় বরং ‘ফ্লোটিং পয়েন্ট পার সেকেন্ড’ (Floating Point per Second), দ্বারা হয়ে থাকে। ১৯৭৬ সালে প্রথম সুপার কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন রজার ক্রে।
সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- সুপার কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতির এবং এদের দাম অত্যাধিক বেশি।
- সুপার কম্পিউটারগুলো সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে সিধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে আগাম বার্তা দেওয়ার কাজেও ব্যবহৃত হয় সুপার কম্পিউটার।
- পাইলটদের জন্য অথবা অন্য কোনো খাতে সিমুলেশন দেওয়া ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পৃথিবী তৈরির ক্ষেত্রে সুপারকম্পিউটার অনবদ্য।
- পৃথিবীখ্যাত বিটকয়েন এবং স্টক কারেন্সির বাজার প্রভাবিত করতেও ব্যবহৃত হয় সুপার কম্পিউটার।
- রোগ বিশ্লেষণ এবং প্রতিষেধক তৈরির হিসেব নিকেশও বৃহৎ মাত্রায় সুপার কম্পিউটার করে থাকে।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার হলো ফ্রন্টিয়ার (Frontier)। এটি অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’ তে। এছাড়াও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাপানের কোবে শহরে অবস্থিত ফুগাকু। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে লুমি, সামিট এবং সিয়েরা।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটার যা একই সাথে শত শত এমনকি হাজারখানেক লোকও ব্যবহার করতে পারবে। এই কম্পিউটার সুপার কম্পিউটারের সমান না হলেও অত্যন্ত শক্তিশালী। এতে খুব সহজেই একাধিক সফটওয়্যার চালানো যায় এবং শত শত ব্যবহারকারী এর সাহায্যে সুবিধা পেতে পারেন। এ ধরনের মেইনফ্রেম কম্পিউটার সাধারণত ব্যাংকিং, টেলিকম এসব সেক্টরে ব্যবহৃত হয়।
মেইনফ্রেম কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- মেইনফ্রেম কম্পিউটারগুলো গতি ও শক্তির দিক থেকে দ্বিতীয়। একই সাথে এগুলোর দামও অনেক বেশি।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার একই সাথে প্রয়োজনে ১০ লক্ষেরও অধিক ডাটা প্রসেস করতে পারে।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটারের সার্ভিস লাইফ অনেক বড়। সঠিক ভাবে বসিয়ে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করলে ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এটি চলতে পারে।
- এটি এর কাজের ভার অন্যান্য প্রসেসর এবং ইনপুট, আউটপুট টার্মিনালের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারে।
- সাধারণত যে সকল ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ডাটা প্রসেস করতে হয় সে সকল ক্ষেত্রেই মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মেইনফ্রেম কম্পিউটারের স্থানটি এখন দখল করে রেখেছে আইবিএম জেড১৬ (IBM Z16)। বিশ্ববিখ্যাত আইবিএম কোম্পানির এই মেইনফ্রেম কম্পিউটারটির প্রতিটি চিপে রয়েছে ৫ গিগা হার্টজ এর ৮টি কোর। এরকম মোট ২০০টি কোর সম্বলিত এই কম্পিউটারটি ডিপ লার্নিং এনালাইসিস এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরুপ এই কম্পিউটারটি কোনো ব্যাংকের সফটওয়্যার সিস্টেমে হ্যাকিং অথবা জালিয়াতি হতে থাকলে তা চলাকালীনই সতর্কবার্তা দিতে পারে।
মিনি কম্পিউটার
এটি মধ্যম সাইজের এক ধরনের কম্পিউটার। এই ধরনের কম্পিউটারে একের অধিক প্রসেসর বসানো যায়। এই কম্পিউটারের ব্যবহারকারী হতে পারে ৪ থেকে ২০০ জন। সাধারণত কোনো অফিস বা ব্যাংকেই বিলিং, একাউন্টিং, পণ্য ব্যবস্থাপনা এসব কাজে এই কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই কম্পিউটারগুলো মাইক্রো কম্পিউটার থেকে আকারে বড় হলেও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের তুলনায় বেশ ছোট।
মিনি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- মিনি কম্পিউটারের আকারের তুলনায় এর কর্মক্ষমতা অনেক বেশি।
- আকারের কারণে একে বেশ সহজেই বিভিন্ন স্থানে বসানো যায় এবং এর খরচও কম।
- একে পরিচালনার জন্য কোনো বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজন হয় না।
- মিনি কম্পিউটার শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
- তথ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে সাধারণ ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ রক্ষার মতো কাজগুলোও করে থাকে মিনি কম্পিউটার।
বর্তমানে খুব পরিচিত একটি মিনি কম্পিউটার হলো অ্যাপলের ম্যাক স্টুডিও। এছাড়াও ইন্টেল, এসার, ডেল এর মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই মিনিকম্পিউটার তৈরি করে থাকে।
ওয়ার্কস্টেশন
ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটার এবং পারসোনাল কম্পিউটারের বা পিসি এর মধ্যে গঠনগত কোনো পার্থক্য নেই। তবে এদের কর্মক্ষমতা, কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এগুলোকে ওয়ার্কস্টেশন অথবা ব্যক্তিগত কম্পিউটার এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাধারণত ওয়ার্কস্টেশন হলো সেই ধরনের কম্পিউটার যেগুলোতে বেশ শক্তিশালী প্রসেসর, বিশাল পরিমাণের র্যাম এবং অতিরিক্ত ভিডিও র্যাম সমৃদ্ধ গ্রাফিক্স কার্ড থাকে। এ ধরনের কম্পিউটার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কাজে টানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ওয়ার্কস্টেশনের বৈশিষ্ট্য
- এ ধরনের কম্পিউটারের কোর কাউন্ট এবং ক্লক কাউন্ট বেশি থাকে। অর্থাৎ প্রসেসরে কোরের সংখ্যা সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় অনেকটাই বেশি থাকে এবং তাদের ক্লকস্পিডও বেশি থাকে।
- এ ধরনের কম্পিউটারে সাধারণ র্যামের পরিবর্তে ইসিসি র্যাম (ECC RAM) ব্যবহার হয়ে থাকে। ইসিসি র্যাম হলো এরর কারেক্টিং কোড র্যাম (Error Correcting Code RAM)। এই ধরনের র্যাম মেমরির এররগুলো নিজে থেকে শুধরে নিয়ে একটি কম্পিউটারকে হটাৎ ক্রাশ করা থেকে রক্ষা করে।
- রেইড (RAID) সিস্টেমের উপস্থিতি। রেইড হলো রেডান্ডেন্ট এরে অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিস্কস (Redundant Array of Independent Disks)। মূলত এই সিস্টেমে একটি হার্ড ড্রাইভের বদলে একাধিক হার্ড ড্রাইভ থাকে। বেশ কয়েকটি হার্ড ড্রাইভের সম্বনয়ে গড়ে ওঠা এই সিস্টেমে আবার ব্যাকআপ হার্ড ড্রাইভও থাকে। এছাড়াও দ্রুত গতির স্টোরেজ হিসেবে থাকে এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ।
- ডিসক্রিট জিপিইউ (Discreet GPU) এই ধরনের কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ডিসক্রিট জিপিইউ বলতে মূলত বোঝায় অধিক ভিডিও র্যাম সম্পন্ন গ্রাফিক্স কার্ড যার কার্যক্ষমতা সাধারণ গ্রাফিক্স কার্ড থেকে বহুগুনে বেশি।
মাইক্রোকম্পিউটার বা পারসোনাল কম্পিউটার
মাইক্রোকম্পিউটার বা পারসোনাল কম্পিউটারই হলো কম্পিউটারের সেই ধরন যা সাধারণ জনজীবনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সিংহভাগ জনগণ কম্পিউটার বলতে মূলত এই পারসোনাল কম্পিউটার বা পিসিকেই বোঝেন। বর্তমানের ডিজিটাল দুনিয়ায় কোনো যন্ত্রকে যদি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আখ্যা দিতে হয় তবে তা নিসন্দেহে এই পারসোনাল কম্পিউটার।
পারসোনাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- পাচ ধরনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এই পারসোনাল কম্পিউটার।
- এর দাম হাতের নাগালের মধ্যেই।
- একটি পারসোনাল কম্পিউটার এক সময়ে একজনই ব্যবহার করতে পারে।
- সাধারণ মাল্টিটাস্কিং, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং এর মতো কাজগুলো করা গেলেও ভারী শিল্পের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণের মতো কাজ করা যায় না।
- পারসোনাল কম্পিউটার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, হাইব্রিড নানা ধরনের হতে পারে।
সর্বোপরি পারসোনাল কম্পিউটার হলো কম্পিউটারের বিশ্বনন্দিত ধরন যা নিয়ে এই অংশে আলোচনা না থাকলেও লেখার পরবর্তী অংশে রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা।
কম্পিউটারের অংশসমূহ
উপরের পাচ ধরনের কম্পিউটারই নানা ধরনের অংশ দিয়ে গঠিত। সুপার কম্পিউটারের এমন অনেক অংশই রয়েছে যা হয়তো একটি পারসোনাল কম্পিউটারের নেই। তবে এই লেখাতে কম্পিউটারের অংশ বলতে মূলত পারসোনাল কম্পিউটারের অংশগুলোকেই তুলে ধরা হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ ব্যবহারকারী কম্পিউটার বলতে পারসোনাল কম্পিউটারকেই চেনে। এক্ষেত্রে সকল অংশকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- হার্ডওয়্যার (Hardware)
- সফটওয়্যার (Software)
হার্ডওয়্যার বলতে মূলত বোঝায় কম্পিউটারের সে সকল অংশকে যা যান্ত্রিক, সরাসরি দৃশ্যমান এবং যাকে সরাসরি বস্তু হিসেবে গণ্য করা যায়। এই হার্ডওয়্যাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ইনপুট ডিভাইস
- প্রসেসিং ডিভাইস
- আউটপুট ডিভাইস
ইনপুট ডিভাইস (Input Device)
ইনপুট ডিভাইস বলতে মূলত বোঝায় সেই সকল যান্ত্রিক বস্তুকে যাদের সাহায্যে একটি কম্পিউটারে সরাসরি তথ্য বা ডাটা প্রবেশ করানো হয়।
কিবোর্ড (Keyboard)
সাধারণ পারসোনাল কম্পিউটারের প্রধান ইনপুট ডিভাইসই হলো এই কিবোর্ড। মূলত কিবোর্ডের হলো এমন একটি যন্ত্র যাতে বেশ কিছু সুইচ থাকে যা ‘কি’ (Key) বামে পরিচিত। এই প্রতিটি ‘কি’ এর জন্য এক বা একাধিক বর্ণ, সংখ্যা অথবা চিহ্ন প্রোগ্রাম করা থাকে। একটি ‘কি’ চাপলেই সেই ‘কি’ এর জন্য প্রোগ্রাম করা বর্ণটি ইনপুট হয়ে যায়। প্রয়োজনে বিশেষ কোনো বাটন যেমন ‘শিফট’ (Shift) চেপে ঐ ‘কি’ এর দ্বিতীয় চিহ্নটিকে ইনপুট দেওয়া যায়।
মাউস (Mouse)
মাউসকে বলা হয় একটি পয়েন্টিং ডিভাইস। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় নির্দেশনাকারী যন্ত্র। হাতের মুঠোয় এই বস্তুটির সাহায্যে আপনি খুব সহজেই কম্পিউটারের মনিটরে কার্সর নাড়াতে পারবেন এবং সিলেকশনের যাবতীয় কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে অপটিক্যাল মাউসই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কম্পিউটারের সাথে মাউসের সংযোগ দিতে তারের পাশাপাশি এখন ব্লুটুথ ও পুরো দমে ব্যবহৃত হচ্ছে।
টাচ প্যাড (Touch Pad)
মাউসের ন্যায় একই কাজ করার জন্যই টাচ প্যাডের জন্ম। ট্যাচ প্যাড একটি পয়েন্টিং ডিভাইস যা মূলত একটি বিশেষায়িত তল। এই তলটির নিচে থাকে সেন্সর যা আপনার আঙুলের নড়াচড়া সনাক্ত করতে পারে। এর সাহায্যে মাউসের ন্যায় সকল কাজ করা গেলেও এর কার্যকারিতা মাউস থেকে বেশ কম।
গ্রাফিক্স প্যাড (Graphics Pad)
গ্রাফিক্স প্যাড বস্তুটি প্রায় পুরোপুরি টাচ প্যাডের মতোই। কিন্তু টাচ প্যাডের চাইতে এটি অনেক বেশি সংবেদনশীল। এতে ইলেক্ট্রিকাল কলমের সাহায্যে খুবই সূক্ষ্ণ ভাবে কোনো ছবি বা এনিমেশন আঁকা যায়। এগুলো মূলত ব্যবহার করে চিত্রশিল্পী অথবা গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা।
প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device)
প্রসেসিং ডিভাইসগুলোই হলো মূলত কম্পিউটারের প্রধান অংশ। মূলত এসব অংশের সাহায্যেই কম্পিউটার সকল কার্যক্রম সম্পাদন করে। প্রসেসিং ডিভাইসগুলো হলোঃ
মাদারবোর্ড (Motherboard)
মাদারবোর্ড হলো যেকোনো কম্পিউটারের প্রধান সার্কিট বোর্ড। এটি অনেকটা একটি দালানের ভিত্তির মতো। একটি দালান তার ভিত্তির ওপর যেমন দাঁড়িয়ে থাকে, ঠিক তেমনি কম্পিউটারের সকল প্রসেসিং ডিভাইস মাদারবোর্ডের সাহায্যেই একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয় এবং কাজ করে। যেমন সিপিইউ, জিপিইউ, র্যাম, হার্ড ড্রাইভ, এসএসডি। নিচে একটি মাদারবোর্ডে সাধারণত কি কি অংশ থাকে তা তুলে ধরা হলোঃ
- সিপিইউ সকেট (CPU Socket)
- চিপসেট (Chipset)
- র্যাম স্লট (RAM Slot)
- পিসিআই ই * ১৬ স্লট (PCIe * 16 Slot)
- পিসিআই ই * ১ স্লট (PCIe * 1 Slot)
- এম.২ কানেক্টর (M.2 Connector)
- সাটা পোর্টস (SATA Ports)
- ফ্রন্ট প্যানেল কানেক্টর (Front Panel Connector)
- ইউএসবি ২ হেডার (USB 2 Header)
- ইউএসবি ৩.১ হেডার (USB 3.1 Header)
- এটিএক্স পাওয়ার কানেক্টর (ATX Power Connector)
- সিপিইউ পাওয়ার কানেক্টর (CPU Power Connector)
- বায়োস চিপ (BIOS Chip)
- সিএমওএস ব্যাটারি (CMOS Battery
- ফ্যান হেডার (FAN Header)
- ফ্রন্ট প্যানেল হেডার (Front Panel Header)
- ভির্যাম হিটসিংক (VRAM Heatsink)
- সিরিয়াল হেডার (Serial Header)
- টিপিএম হেডার (TPM Header)
- আরজিবি হেডার (RGB Header)
মাদারবোর্ডের প্রকারভেদ
মাদারবোর্ডের আবার অনেক রকম ফের রয়েছে। ফর্ম ফ্যাক্টর থেকে শুরু করে চিপসেট, জেনারেশন এমন নানা কারণেই মাদারবোর্ডের প্রকারভেদ তৈরি হয়।
ফর্ম ফ্যাক্টর
মাদারবোর্ডের ক্ষেত্রে ফর্ম ফ্যাক্টর দিয়ে মূলত বোঝায় মাদারবোর্ডের আকার ও পোর্টের সংখ্যা। আকারের দিক থেকে মাদারবোর্ডের সাধারণত তিনটি ফর্ম ফ্যাক্টর হয়।
- এটিএক্স (ATX) – এসব মাদারবোর্ডের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৯.৬২৫ ইঞ্চি। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে বড়। আপগ্রেডের কথা বিবেচনা করলে এটিএক্স মাদারবোর্ডই সবচেয়ে সুবিধাজনক।
- মাইক্রো-এটিএক্স (Micro-ATX) – এসব মাদারবোর্ডের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দুটিই ৯.৬২৫ ইঞ্চি। বর্তমানে এ ধরনের মাদারবোর্ডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- মিনি এটিএক্স (Mini-ATX) – আকারের দিক থেকে এগুলো সবচেয়ে ছোট মাদারবোর্ড। এদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দুটিই ৬.৭৫ ইঞ্চি। এসব মাদারবোর্ড সাধারণত সৌখিনতার জন্যই ব্যবহৃত হয়।
চিপসেট / সকেট
মাদারবোর্ডের মূল অংশটিকে বলে ‘চিপসেট’ বা ‘সকেট’। চিপসেট বা সকেট হলো এমন একটি অংশ যা সার্বক্ষণিক মাদারবোর্ডের সাথেই লাগানো থাকে। এই অংশটিতেই প্রসেসর বসানো হয়। মাদারবোর্ডের চিপসেট অথবা সকেট কেমন হবে তা নির্ভর করবে মাদারবোর্ডটটি কোন জেনারেশনের কোন প্রসেসরের জন্য তৈরি করা হয়েছে তার ওপর।
একটি মাদারবোর্ডের নাম থেকেই তার চিপসেট এবং মাদারবোর্ডটি কোন প্রসেসরের জন্য তৈরি করা হয়েছে তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাওয়া সম্ভব। যেমন বর্তমানে ইন্টেল প্রসেসরের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাদারবোর্ডের নাম, ‘MSI MEG Z790 Godlike 13th Gen E-ATX Motherboard। এখানে
- MSI হলো মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম।
- MEG হলো ঐ কোম্পানির মাদারবোর্ড সিরিজের নাম ।
- Z790 এর ‘Z’ দ্বারা বোঝায় মাদারবোর্ডের ধরন এবং তা কোন কোম্পানির প্রসেসরের জন্য তৈরি সেটি । ‘790’ নির্দেশ করে কোন জেনারেশনের জন্য তৈরি মাদারবোর্ড সেটি। এখানে ‘Z790’ ই হলো মাদারবোর্ডের চিপসেটের মডেল।
বর্তমানে কিছু বিশ্ববিখ্যাত মাদারবোর্ড নির্মাতা কোম্পানি হলোঃ আসুস (Asus), এমএসআই (MSI), গিগাবাইট (Gigabyte), অ্যাশরক (AsRock), ইভিজিএ (EVGA)।
প্রসেসর (Processor)
প্রসেসরকে বলা চলে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। প্রসেসর কয়েক প্রকারের হতে পারে। তবে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে মাইক্রোপ্রসেসরই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো মূলত সিলিকনের তৈরি একটি চিপ যা মাদারবোর্ডে বসে কম্পিউটারের সকল হিসাব নিকাশের কাজগুলো সম্পন্ন করে। এই প্রসেসরকে সহায়তা করতেই বাকি সকল অংশের উপস্থিতি। বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রসেসর বানানোর সক্ষমতা রাখে। ।
- ইন্টেল (Intel)
- এএমডি (AMD)
- অ্যাপল (Apple)
উল্লেখ্য যে, আইবিএম, কোয়ালকম, স্যামসং এসব প্রতিষ্ঠান প্রসেসর নির্মাণ করলেও তা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয় না।
ইন্টেল (Intel)
ইন্টেলের নাম প্রায় সকলেই শুনেছেন। কম্পিউটার বিপ্লবের শুরু থেকেই ইন্টেলই ছিল প্রসেসর জগতের একছত্র অধিপতি। ১৯৭১ সালে বাজারে আসে ইন্টেলের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর, ইন্টেল ৪০০৪। ১৯৭১ সালেই ৬০ ডলারে বিক্রি হওয়া প্রসেসরটি দিয়ে যাত্রা শুরু করা ইন্টেল এখনো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রসেসর নির্মাতা। অর্ধ শত বছর পাড়ি দিয়ে বর্তমানে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টেলের সেরা প্রসেসরটি হলো Intel Core i9-13900K। এটি খুব শীঘ্রই বাজারে আসছে।
ভোক্তা পর্যায়ে বর্তমানে ইন্টেল মোট ৫ ধরনের প্রসেসর বানায়।
- পেন্টিয়াম (Pentium)
- কোর আই থ্রি (Core i3)
- কোর আই ফাইভ (Core i5)
- কোর আই সেভেন (Core i7)
- কোর আই নাইন (Core i9)
ল্যাপটপের জন্য এসবের পাশাপাশি ইন্টেলের রয়েছে ‘ইন্টেল সেলেরন’ প্রসেসর। তবে এর বাইরেও ইন্টেলের ‘জিয়ন’ (Xeon) এর মতো অনেক প্রসেসর লাইন আপ রয়েছে যা আসলে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার বা বিক্রি কোনটাই হয় না। তাই সে সকল নিয়ে এই লেখাতে বিস্তারিত লেখা হচ্ছে না।
এএমডি (AMD)
কিছু বছর আগেও প্রসেসরের বাজারে এএমডিকে (AMD) খুজেই পাওয়া যেত না। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আজীবন পিছিয়ে থাকা এএমডি বাজারে আনে ‘রাইজেন’ (Ryzen) সিরিজের প্রসেসর। রাইজেন ১৭০০এক্স, ১৮০০এক্স এর মতো প্রসেসরগুলো ধীরে ধীরে পাল্লা দিতে শুরু করে ইন্টেলের সাথে। আর তার ঠিক দু’বছরের মাথ্যা প্রসেসর মার্কেটের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যায়। ২০১৯ এর জুলাই এ রাইজেন এর ৩০০০ সিরিজের প্রসেসরগুলো বাজারে আসার পরই আগুন ঝড়াতে থাকে। সমসাময়িক ইন্টেলের অষ্টম ও নবম জেনারেশন পাত্তাই পায় নি এএমডির সামনে। সর্বশেষ ইন্টেলের ১০ম জেনারেশন এসে কিছুটা ভারসাম্য আনে। প্রসেসর জগতের এই দুই রথী মহারথীদের যুদ্ধে আদতে লাভ হয়েছে সাধারণ ভোক্তাদেরই। একচেটিয়া ব্যবসা থেকে ইন্টেলকে বাধ্য হয়ে সরে যেয়ে হতে হয়েছে আরো আক্রমণাত্নক। ফলে কম দামে অধিক শক্তিশালী প্রসেসরের নাগাল পেয়েছে মানুষ। আর বর্তমানে ইন্টেলের ত্রয়োদোশ জেনারেশন যা পরিচিত ‘Intel Raptor Lake’ নামে, তার বিরুদ্ধে এএমডি খুব শীঘ্রই মাঠে নামছে রাইজেন ৭০০০ সিরিজের প্রসেসর নিয়ে। যার ডাক নাম থাকবে ‘Raphael’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ইশ্বরের পুন্রুথান।
আ্যপল (Apple)
অ্যাপল কোম্পানিকে চেনেন না এমন মানুষ কমই আছেন। বাংলাদেশের জনমনে যদিও অ্যাপল বেশি পরিচিত এর আইফোনের জন্য। কিন্তু অ্যাপলের রয়েছে ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে শুরু করে ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটার। আর সেসবের জন্য অ্যাপলের তৈরি এম১, এম১ প্রো চিপগুলো কাজের জন্য অন্যতম সেরা কিছু প্রসেসর।
গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)
বাংলাদেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের অনেক বড় একটি অংশ এই গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখেন না। এটি মূলত মাদারবোর্ডের মতই একটি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড যাতে প্রসেসর হিসেবে থাকে ’গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট’ (Graphics Processing Uni-GPU)। কম্পিউটারের অন্য যন্ত্রাংশ থেকে এটি অনেকটাই আলাদা কারণ একে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। এতে রয়েছে এর নিজস্ব গ্রাফিক্স প্রসেসর, আলাদা কুলিং ফ্যান, আলাদা হিটসিংক।
এই গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ হলো মূলত কম্পিউটারের গ্রাফিকাল কাজগুলো করা ও মনিটরে তা দেখানো। এই কাজের মধ্যে রয়েছে মনিটরে সাধারণ একটি ছবি দেখানো থেকে শুরু করে হাজার হাজার পিক্সেলের একটি পোস্টার তৈরি করা অথবা একটি সম্পূর্ণ থ্রিডি শহরের মডেল তৈরি করা। গ্রাফিক্স কার্ড মূলত দুই ধরনের
- ইন্টারনাল গ্রাফিক্স কার্ড (IGPU)
- এক্সটার্নাল / ডেডিকেটেড / ডিসক্রিট গ্রাফিক্স কার্ড
ইন্টারনাল গ্রাফিক্স কার্ড মূলত গ্রাফিক্স কার্ডের সবচেয়ে দুর্বল রুপ। এ ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড সরাসরি প্রসেসর এর সাথেই সংযুক্ত থাকে। ইন্টেলের যেসব প্রসেসরের শেষে ‘F’ লেখা থাকে সেগুলো বাদে সকল প্রসেসর এই ইন্টারনাল গ্রাফিক্স কার্ড আছে। তবে এগুলোর কার্যক্ষমতা মূলত মনিটরে সাধারণ ছবি ভিডিও দেখানো এবং খুবই যৎসামান্য গেম খেলা অবধি সীমাবদ্ধ।
অপরদিকে এএমডির যেসব প্রসেসরের নামের শেষে ‘G’ থাকে সেগুলোতে থাকে এএমডি এর ‘Vega IGPU’। এগুলোও দুর্বল গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। তবে এদের কার্যক্ষমতা ইন্টেল থেকে অনেকটাই বেশি।
অপরদিকে এক্সটার্নাল বা ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড নামটি থেকেই বোঝা যায় যে আলাদা জিপিইউ এর অন্য এই কার্ডের জন্ম। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সার্কিট বোর্ড যার গ্রাফিকাল কন্টেন্ট প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে এক ভিন্ন মাত্রার শক্তি এনে দেয়। গ্রাফিক্স কার্ডের কার্যক্ষমতা মূলত নির্ভর করে এর আলাদা প্রসেসরের ওপর। এছাড়াও এতে থাকে ডেডিকেটেড ভিডিও র্যাম যা এর কার্যক্ষমতার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে সারা বিশ্বে দুইটি প্রতিষ্ঠান গ্রাফিক্স কার্ড উদ্ভাবনের জন্য ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়।
- এনভিডিয়া (NVIDIA)
- এএমডি (AMD)
এছাড়াও অতি সম্প্রতি ইন্টেলও তাদের নতুন ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড উন্মুক্ত করেছে যা দামের তুলনায় বেশ ভালই কার্যক্ষমতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মূলত এনভিডিয়া, এএমডি এবং বর্তমানে ইন্টেল তারা তাদের গ্রাফিক্স কার্ডের চিপটি তৈরি করে দেয়। সেগুলো আমদানি করে অন্যান্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন আসুস (Asus), গিগাবাইট (Gigabyte), এমএসআই (MSI), কালারফুল (Colourful)। অত:পর এসব কোম্পানি নিজেদের মতো করে কার্ডগুলো বানিয়ে বিক্রি করে।
র্যাম (RAM)
র্যাম (RAM) এর পূর্ণরুপ হলো ‘র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি’ (Random Access Memory)। র্যামকে বলা যায় ডাটা সংরক্ষণের জন্য স্বল্প মেয়াদী একটি স্থান। যখন প্রসেসর কোনো কিছু প্রসেস করে তখন সেই সম্পর্কিত ডাটাগুলো র্যামে স্থানান্তর করে নেয়। যেকোনো র্যাম মূলত কিছু মেমরি চিপের সমন্বয়ে গঠিত। আর এই মেমরি চিপেই তাৎক্ষণিকভাবে ডাটাগুলো সংরক্ষণ করা হয়। র্যামের বৈশিষ্ট্য হলো কম্পিউটার বন্ধ করে দিলে র্যামের কোনো ডাটাই আর থাকে না।
ব্যক্তিগত কম্পিউটারে যে সকল র্যাম আজকাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার সবকয়টিই আসলে ডিডিআর এসডির্যাম (DDR SDRAM)। যার পূর্ণরুপ হলো ‘ডাবল ডাটা রেট সিনক্রোনাস ডাইনামিক র্যাম’ (Double Data Rate Synchronous Dynamic RAM)। এই ডাবল ডাটা রেট এর রয়েছে আবার মোট পাচটি জেনারেশন। বর্তমানে ডিডিআর ১ ও ডিডিআর ২ র্যাম দেখা যায় না বললেই চলে। কিছু ডিডিআর ৩ র্যাম ব্যবহৃত হলেও বেশিরভাগই ডিডিআর ৪ র্যাম। আর বেশ কিছুদিন হলো ডিডিআর এর ৫ম জেনারেশনের র্যামও বাজারে রয়েছে।
র্যামের জেনারেশনের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এর গতি। র্যামের গতিকে মেগা হার্টজ (Mhz) এ হিসাব করা হয়। কয়েকটি সাধারণ গতি হলো ১৬০০ মেগা হার্টজ, ২২০০ মেগা হার্টজ, ২৬৬৬ মেগা হার্টজ, ৩২০০ মেগা হার্টজ, ৩৬০০ মেগা হার্টজ। বর্তমানে এরকম সর্বোচ্চ ৫২০০ মেগা হার্টজ এর র্যাম বাজারে পাওয়া যায়। র্যামের গতি যত বেশি হয় এর কার্যক্ষমতা তত বেশি হয়।
স্টোরেজ (Storage)
কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণের স্থানকে বলে স্টোরেজ। বর্তমানে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে স্টোরেজ হিসেবে মূলত দুই ধরনের মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।
- এইচডিডি – হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard Disc Drive)
- এসএসডি – সলিড স্টেট ড্রাইভ (Solid State Drive)
হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard Disc Drive)
হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ প্রায় সকলেরই পরিচিত। এটি মূলত একটি চৌম্বকীয় মাধ্যম যেখানে ডাটা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। হার্ড ড্রাইভে একটি এলুমিনিয়াম বা গ্লাসের তৈরি সিডি আকৃতির বস্তু চৌম্বকীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। সিডিটি অনবরত ঘুরতে থাকে এবং সেখানে আরেকটি যন্ত্রাংশ ডাটা ইনপুট করতে থাকে। এভাবেই মূলত সকল ডাটা সংরক্ষিত হয়। একটি হার্ড ড্রাইভ ৫০০ জিবি থেকে শুরু করে ১ টেরাবাইট, ২ টেরাবাইট এমনকি সর্বোচ্চ ২২ টেরাবাইট ধারণক্ষমতারও হতে পারে।
সলিড স্টেট ড্রাইভ (Solid State Drive)
সলিড স্টেট ড্রাইভ এর সংক্ষিপ্ত রুপ ‘এসএসডি’ নামেই বেশি পরিচিত। এটিও একটি স্টোরেজ ডিভাইস। কিন্তু হার্ড ড্রাইভ এর সাথে এর গঠনগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত হার্ড ড্রাইভের ন্যায় এর মধ্যে কোনো ঘূর্ণায়মান ডিস্ক নেই। কোনো কিছু ঘুরতে হয় না বলে এর কার্যক্ষমতায় ঘূর্ণন গতির কোনো প্রভাব নেই। এসএসডি তে বেশ কিছু মেমোরি চিপ থাকে যা ফ্ল্যাশ মেমোরি বলে পরিচিত। মেমোরি চিপের ব্যবহারের কারণে এর গতিও হার্ড ড্রাইভ থেকে বহুগুণে বেশি।
হার্ড ড্রাইভের তুলনায় এসএসডি বেশ অনেকটাই দামী হওয়ায় আগে শুধু অপারেটিং সিস্টেমের জন্যই এসএসডি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, এসএসডি হার্ড ড্রাইভকেই স্থানান্তর করতে শুরু করেছে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে সিংহভাগ হার্ড ড্রাইভই এসএসডি দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আউটপুট ডিভাইস
আউটপুট ডিভাইস হলো সে সকল ডিভাইস যেগুলো কম্পিউটারের প্রসেসকৃত ডাটাগুলোকে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরে। এদের কাজ বস্তুত ইনপুট ডিভাইসের বিপরীতধর্মী।
মনিটর (Monitor)
মনিটর বা স্ক্রিন হলো যেকোনো কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট ডিভাইস। মনিটর ছাড়া বেশিরভাগ কম্পিউটারই ব্যবহার করা সম্ভব নয়। বর্তমানে মনিটরগুলো মাদারবোর্ড অথবা গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে ভিজিএ (VGA) অথবা এইচডিএমআই (HDMI) ক্যাবল দিয়ে যুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে প্রসেসিং ডিভাইস থেকে আউটপুট গ্রহণ করে তা প্রদর্শন করে।
বর্তমানে প্রধানত তিন ধরনের মনিটর বাজারে পাওয়া যায়। এই ধরনগুলো নির্ভর করে মনিটরের প্যানেলের ওপর।
- টিন প্যানেল (TIN Panel)
- আইপিএস প্যানেল (IPS Panel)
- ভিএ প্যানেল (VA Panel)
মনিটরের মান নির্ভর করে মূলত দুইটি বিষয়ের ওপর। প্রথমটি হলো মনিটরের প্রতি সেকেন্ডে ছবি দেখানোর ক্ষমতা। একে বলে রিফ্রেশ রেট। একে প্রকাশ করা হয় হার্টজ দিয়ে। অর্থাৎ ৬০ হার্টজের একটি মনিটর প্রতি সেকেন্ডে ৬০টি ছবি দেখাতে পারবে। আবার ২৬৫ হার্টজের মনিটর প্রতি সেকেন্ডে দেখাতে পারবে ২৬৫টি ছবি।
দ্বিতীয়টি হলো কালার একুরেসি। এর অর্থ কতটা ভাল ভাবে মনিটরের রংগুলো ফুটে উঠবে। উপরের তিন ধরনের প্যানেলের মধ্যে টিন প্যানেলের রিফ্রেশ রেট অনেক বেশি। আইপিএস প্যানেলের কালার একুরেসি অনেক ভাল। অপরপদিকে ভিএ প্যানেল এই দুইটিরই সম্বনয়ে গঠিত।
হেডফোন / স্পিকার (Headphone / Speaker)
কম্পিউটারের তৈরি শব্দগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে স্পিকার অথবা হেডফোন। স্পিকার অনেক ধরনের হতে পারে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত কম্পিউটার যেমন একদম সস্তা দুই ইউনিটের স্পিকারে যুক্ত হতে পারে, তেমনি সম্পূর্ণ ঘরের জন্য তৈরি আন্তর্জাতিক মানের অডিও সিস্টেমকেও কার্যকর করে তুলতে পারে। হেডফোন স্পিকার দুইটিই সরাসরি তার দিয়ে যুক্ত করা যায় আবার ব্লুটুথ দিয়েও যুক্ত করা যায়।
সফটওয়্যার (Software)
সফটওয়্যার মূলত দুই ধরনেরর।
- অপারেটিং সিস্টেম
- সাধারণ সফটওয়্যার
যেই সফটওয়্যারের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে বলে অপারেটিং সিস্টেম বা অপারেটিং সফটওয়্যার। এটিকে সকল সফটওয়্যারের ভিত্তি বলা চলে বাকি সকল সফটওয়্যারগুলোকে সাধারণ সফটওয়্যারের অর্ন্তগত করা হয়ে থাকে।
কম্পিউটারের কাজের পরিধি
কম্পিউটারের কাজের পরিধি, বিস্তার আর কার্যকারিতা সম্পর্কে লিখে শেষ করা দুষ্কর। তবে কম্পিউটারের ধরন আর এর প্রতিটি অংশসমূহ সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার পরে লেখার এই অংশে খুব সংক্ষেপে এর কাজের বিস্তার আলোচনা করা হলো।
অফিস ওয়ার্ক (Office Work)
বাংলাদেশে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের অধিকাংশই আসলে অফিস ওয়ার্কের জন্যই কম্পিউটার ব্যবহার করেন। অফিস ওয়ার্ক বলতে কোনো কিছু লেখা, কম্পোজ করা, প্রেজেন্টেশন বানানো, এক্সেল শিট তৈরি করা অথবা ডাটা টেবিল বানানো, এই সকলই অফিস ওয়ার্কের আওতায় পড়ে। এসবের জন্য সফটওয়্যার হিসেবে রয়েছে বিখ্যাত মাইক্রোসফট অফিস সুইট। এর বাইরেও রয়েছে গুগল ওয়ার্ক স্পেস এর মতো নানা বিনামূল্যের সেবা।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)
ফ্রিল্যান্সিং আসলে একটি এত বড় টার্ম যে এর ভেতরের কাজগুলো বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। ফ্রিল্যান্সিংকেই অনেকে কাজ মনে করেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং মূলত অসংখ্য কাজের সমাহার। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে সাবলম্বী হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার একটি পর্যায়ে লাগবেই। এরপরে আপনি ডাটা ইনপুটের সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে আনরিয়েল ইঞ্জিন এর অসাধারণ কাজ, যেটিই করুন না কেন, কম্পিউটারই হবে আপনার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি বই খাতা নির্ভর হলেও উন্নত বিশ্বে পড়ালেখার মাধ্যম এখন অনেকটাই কম্পিউটার। আর যত দিন যাবে, আন্তর্জাতিক শিক্ষা ততটাই কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
গবেষণা
গবেষণা মানে কোনো বিষয়ে বার বার অনুসন্ধান করে সে সম্পর্কে তথ্য বের করা। আর বর্তমানে এমন কোনো আধুনিক গবেষণা নেই যাতে কম্পিউটার লাগে না। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাতে তো লাগেই, সামান্য মার্কেট রিসার্চ করতে গেলেও এখন জটিল সফটওয়্যারের স্মরণাপন্ন হতে হয়।
বিনোদন
সর্বশেষে বিনোদনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। বর্তমান পৃথিবীতে টিভি খুব দ্রুতই তার স্থান হারাচ্ছে। তার স্থান অতি দ্রুত দখল করে নিচ্ছে কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন। কম্পিউটারের সাহায্যে আপনি দেখতে পারবেন যেকোনো ভিডিও, শুনতে পারবেন যেকোনো অডিও। আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন তাহলে গেমের সেরা পারফর্মেন্স পেতে কম্পিউটারের কোনো বিকল্প নেই।
শেষকথা
কম্পিউটার কি আজকালকার যুগে প্রায় সবাই কম বেশি জানে। তাই এই লেখায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে কম্পিউটারের সাধারণ বিষয়গুলো সম্পর্কেও নানা অজানা তথ্য দেওয়ার, যাতে লেখাটি পড়ে আক্ষরিক অর্থেই জ্ঞান বৃদ্ধি হয়। কারণ কম্পিউটার ব্যবহার যেমন জরুরী, এর কোন অংশ কি কাজে জড়িত তা জানাটাও অনেক বেশি জরুরী।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নবলী
১। কম্পিউটারের পূর্ণরুপ কি?
উত্তরঃ Computer কোনো সংক্ষিপ্ত রুপ নয়। এর কোনো পূর্ণরুপ নেই। কিছু স্থানে এর পূর্ণরুপ উল্লেখ করা হলেও এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
২। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের দাম কেমন?
উত্তরঃ কম্পিউটারের দাম কেমন তা সম্পূর্ণ রুপে নির্ভর করবে কি কি যন্ত্রাংশ দিয়ে কম্পিউটারটি গঠিত তার ওপর।
৩। বাংলাদেশে কি সুপার কম্পিউটার রয়েছে?
উত্তরঃ না, বাংলাদেশে কোনো সুপার কম্পিউটার নেই।