কম্পিউটারটেকনোলজি

কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস

আধুনিক মানব সভ্যতার চাবিকাঠি হিসেবে যদি কোনো যন্ত্রকে বিবেচনা করার সুযোগ থাকে, তবে সেটি কম্পিউটার। তবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই কম্পিউটার একদিনে আজকের এই অবস্থানে আসে নি। কম্পিউটারের আবিষ্কারের ইতিহাসে মিশে আছে অনেক জটিলতা, পরিশ্রম আর ব্যর্থতার গল্প। আর প্রথম আমলের কম্পিউটারের সাথে রয়েছে বর্তমান কম্পিউটারের আকাশ-পাতাল তফাত। বিশেষত যে সকল যন্ত্রকে কম্পিউটারের আদি পুরুষ বলা হয় তাদের সাথে বর্তমান কম্পিউটারের অমিলটা আরো বেশি।

সূচিপত্রঃ

কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি 

‘Computers’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৬১৩ সালে। তখন এই শব্দটি দ্বারা কোনো বস্তু বোঝানো হতো না। বরঞ্চ এটি ছিল একটি পেশার নাম। তৎকালীন সময়ে যে সকল মানুষ বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে হিসাব নিকাশ করতো তাদেরকেই বলা হতো কম্পিউটারস। দীর্ঘদিন এই শব্দটি এই অর্থে ব্যবহার হয়ে আসার পর ১৯ শতকের শেষের দিকে এর অর্থের বদল হয়। কালের পরিক্রমায় আমরা বর্তমানে কম্পিউটার হিসেবে এক বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রকেই চিনি। যদিও এর কার্যক্রম আর সাধারণ হিসাব-নিকাশে সীমাবদ্ধ নেই, বিস্তৃত হয়েছে বহুদূর। 

কম্পিউটারের ধরন

কম্পিউটারের রয়েছে অসংখ্য ধরন। কিন্তু সাধারণত কম্পিউটারের বলতে আমরা যা বুঝি এখানে তা বোঝানো হচ্ছে না। এই লেখায় আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

  • যান্ত্রিক কম্পিউটার
  • বৈদ্যুতিক কম্পিউটার 

মূলত বর্তমানে আমরা যে সকল কম্পিউটার চিনি তার সকলই বৈদ্যুতিক কম্পিউটার। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় পাতায় অনেক যন্ত্রই রয়েছে যার সাথে বর্তমান কম্পিউটারের তেমন কোনো মিলই নেই। কিন্তু এসব যন্ত্রই আজকের কম্পিউটার সৃষ্টির ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে কাজ করেছে। আর মূলত এ সকল কম্পিউটারই যান্ত্রিক কম্পিউটার।

আদি কম্পিউটার

লেখার প্রথম অংশে মূলত ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকারী আদি যন্ত্র সকলকেই তুলে ধরা হয়েছে। 

অ্যাবাকাস (Abacus) 

প্রায় ৪০০০ বছর আগে চাইনীজরা নির্মাণ করে এই অ্যাবাকাস। অ্যাবাকাসকে ধরা হয় পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার। এখানে কম্পিউটার দ্বারা বোঝানো হয়েছে হিসাব করার যন্ত্র। এটি খুবই সরল যন্ত্র যাতে একাধিক লৌহদন্ডে বেশ কিছু বিড বা গুটি লাগানো থাকে। অ্যাবাকাসের পরিচালক নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে গুটিগুলো পরিচালনা করে হিসাব নিকাশ করে থাকে। যন্ত্রটি এতই সরল যে এখন অবধি চীন, ভারতের অনেকেই এই অ্যাবাকাস ব্যবহার করে থাকেন। 

নেপিয়ারস বোনস (Napier’s Bones) 

নেপিয়ারস বোনস আবিষ্কার করেন জন নেপিয়ার (১৫৫০-১৬১৭)। তার নামানুসারের এই যন্ত্রটিতে ছিল মোট ৯টি হাতির দাঁতের টুকরো। এই টুকরোগুলো ছিল দাগ কাটা এবং এটিই পৃথিবীর প্রথম যন্ত্র যার সাহায্যে দশমিকের পরে পরিমাপ করা যেতো। 

প্যাসকালিন (Pascaline)

ফ্রেঞ্চ দার্শনিক বিয়াস প্যাসকাল (Biaise Pascal) ১৬৪২ থেকে ১৬৪৪ সালে এই যন্ত্রটি প্রথম তৈরি করেন। এই যন্ত্রটি পৃথিবীর প্রথম যান্ত্রিক এবং স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর। গিয়ার সম্বলিত কাঠের তৈরি এই যন্ত্রটি শুধু যোগ বিয়োগই করতে পারতো। মূলত বাবার সাহায্যের জন্যই প্যাসকাল এই যন্ত্রটি তৈরি করেন। এটি একই সাথে এরিথমেটিক মেশিন, অ্যাডিং মেশিন এ সকল নামেও পরিচিত। 

চালর্স ব্যাবেজ এবং ডিফারেন্স ইঞ্জিন

আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে চার্লস ব্যাবেজকে। ১৮২২ সালে তিনি তার প্রথম কম্পিউটার ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’ এর উপর কাজ শুরু করেন। এই কম্পিউটারটি মূলত তৈরি হয়েছিলো দ্বিপদী বিস্তৃতি সমাধানের জন্য। কম্পিউটার তৈরির কাজটি তিনি কখনো শেষ করতে পারেন নি। শেষ করতে পারলে এই কম্পিউটারে থাকতো অন্তত ২৫,০০০ যন্ত্রাংশ এবং এর ওজন হতো ১৩,৬০০ কেজি এরও বেশি। 

পরবর্তীতে ১৮৪৭ থেকে ১৮৪৯ এর মধ্যে চার্লস ব্যাবেজ ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন ২’ এর ড্রয়িং করেন। যদিও এই যন্ত্রটিও তিনি অর্থের অভাবে সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। তবে ১৯৯১ সালে ব্রিটিশ সাইন্স মিউজিয়াম ব্যাবেজ এর ডিজাইন অনুসারে এই ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন ২’ তৈরি করেছিলো। আর্শ্চর্যের ব্যাপার হলো, যন্ত্রটি সফল ভাবে কাজও করেছিলো।  

এনালিটিকাল ইঞ্জিন ও অ্যাডা লাভলেস 

এর মধ্যেই ১৮৩০ সালে চার্লস ব্যাবেজ আরেকটি হিসাব করার যন্ত্র ডিজাইন করেন। যন্ত্রটির নাম ছিল ‘এনালিটিকাল ইঞ্জিন’। ১৮৩০ সালে তৈরি এই যান্ত্রিক কম্পিউটারটি ইনপুট হিসেবে পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করতো। এই যন্ত্রের হাত ধরেই এসেছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

অ্যাডা লাভলেসকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার। কারণ তিনি ১৯৪৮ সালে ব্যাবেজের এই এনালিটিকাল ইঞ্জিনের ওপর একটি গবেষণাপত্র ফ্রেঞ্চ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের সময় পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন। মূলত তিনি অনুবাদের সময় নিজস্ব অনেক নোট লিখেছিলেন যার আকার দাড়িয়েছিলো আসল লেখার তিন গুণ। এভাবেই সৃষ্টি হয় পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামের। 

পৃথিবীর প্রথম তড়িৎ-যান্ত্রিক কম্পিউটার

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আদিকালে কম্পিউটার বলতে বৈদ্যুতিক কোনো বস্তু নয় বরং গিয়ার, বেল্ট, শ্যাফট সমন্বিত যান্ত্রিক বস্তুকেই বোঝানো হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটার হয়ে উঠেছে একটি তড়িৎচালিত বৈদ্যুতিক যন্ত্র। আর এই পরিবর্তনের সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এই পরিবর্তনটা ঘটে এক সংমিশ্রণের মাধ্যমে। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পৃথিবীর প্রথম তড়িৎ-যান্ত্রিক কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রো-মেকানিকাল কম্পিউটার তৈরি করে। এটি ব্যবহৃত হতো সাবমেরিনে এবং এর কাজ মূলত ছিল শত্রু জাহাজের অবস্থান, গতিপথ নির্ণয় করে টর্পেডো ছুড়তে সহায়তা করা। 

এলান টুরিং এবং প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার

বর্তমানে আমরা যেই ডিজিটাল কম্পিউটার চিনি, সেই ডিজিটাল কম্পিউটার এসেছে মূলত এলান টুরিং এর হাত ধরে। ১৯৪০ সালে এলান টুরিং নির্মাণ করেন ‘টুরিং-ওয়েলশম্যান বম্বে’ নামক ইলেক্ট্রোমেকানিকাল কম্পিউটার। এর সাহায্যে ব্রিটিশরা জার্মানদের বেতার যোগাযোগ মাধ্যম ‘এনিগমা’ যন্ত্রে আড়ি পাততে পারতো। 

পরবর্তীতে ১৯৪৩ সালে এলান টুরিং ব্রিটেনের ব্লেচলি পার্কে নির্মাণ করেন পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। এর নাম ছিল ‘কলোসাস কম্পিউটার’ (Colossus Computer)। এর ফলে জার্মানদের সকল যোগাযোগকে ডিক্রিপ্ট (Decrypt) করার প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর হয়। এই দুই কম্পিউটারের আবিষ্কার ছিল মিত্র শক্তির যুদ্ধে জেতার অন্যতম গোপন নিয়ামক।  

আধুনিক কম্পিউটারের ইতিহাস 

আধুনিক কম্পিউটার বলতে আসলে বোঝায় ডিজিটাল বা বৈদ্যুতিক কম্পিউটারকেই। আর ডিজিটাল কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করার পর সকল কম্পিউটারকে মূলত পাঁচটি জেনারেশনে ভাগ করা যায়। আর এই পাঁচ জেনারেশনের কম্পিউটারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আধুনিক কম্পিউটারের ইতিহাস। 

১ম জেনারেশন  

সাধারণত ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯ সালের কম্পিউটারগুলো ১ম জেনারেশন কম্পিউটারের অর্ন্তভুক্ত। এই কম্পিউটারগুলো ছিল বিশাল, প্রচন্ড ব্যয়বহুল এবং খুবই কম কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। এ সকল কম্পিউটারে সিপিইউ এবং মেমোরির অংশ হিসেবে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে আউটপুট ইনপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহৃত হতো ম্যাগনেটিক টেপ এবং পেপার টেপ। ১ম জেনারেশনের কিছু বিখ্যাত কম্পিউটার হলোঃ 

  • এনিয়াক (ENIAC – Electronic Numerical Integrator and Computer)
  • এডভ্যাক (EDVAC – Electronic Discrete Variable Automatic Computer)
  • ইউনিভ্যাকই (UNIVACI – Universal Automatic Computer)
  • আইবিএম – ৭০১ (IBM – 710)
  • আইবিএম – ৭৫০ (IBM – 750)

এর মধ্যে ‘এনিয়াক’ ছিল পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রাম করার ক্ষমতা সমৃদ্ধ, ইলেক্ট্রিকাল জেনারেল পারপস কম্পিউটার। অর্থাৎ এটি জেনারেল বা সাধারণ যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যেতো। এর পূর্বের সকল ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত কোনো একটি বিশেষ কাজের জন্যই তৈরি হয়েছিলো। 

২য় জেনারেশন

আধুনিক কম্পিউটারের ২য় জেনারেশনের সময়কাল ধরা হয় ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত। এই সকল কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ট্রান্সিস্টর (Transistor)। ট্রান্সিস্টর ভ্যাকুয়াম টিউব এর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। এছাড়াও পরিবর্তন আসে কম্পিউটারের মেমোরিতে। প্রধান স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে চৌম্বকীয় কোর আর সেকেন্ডারি কোর (Secondary Core) হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে চৌম্বকীয় টেপ এবং ডিস্ক। এই জেনারেশনের কম্পিউটারগুলোর এমনকি ছিল প্রোগ্রামিং এর ভাষা। যেমনঃ কোবোল (Cobol) ফোরট্রান (Fortran) কিছু বিখ্যাত ২য় জেনারেশনের কম্পিউটারের নাম হলোঃ

  • আইবিএম ১৬২০ (IBM 1620)
  • আইবিএম ৭০৯৪ (IBM 7094)
  • সিডিসি ১৬০৪ (CDC 1604)
  • সিডিসি ৩৬০০ (CDC 3600)
  • ইউনিভ্যাক ১১০৮ (UNIVAC 1108)

৩য় জেনারেশন 

৩য় জেনারেশনের কম্পিউটারগুলোর সময়কাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১। অন্য সকল জেনারেশনের তুলনায় এর সময়কাল বেশ কম। এই জেনারেশনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো কম্পিউটারে ট্রান্সসিস্টরের বদলে আইসি (IC) এর ব্যবহার। আইসি এর পূর্ণরুপ হলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। এটি মূলত একটি সিলিকনের তৈরি সেমিকন্ডাক্টর বোর্ডের উপর অসংখ্য ইলেক্ট্রনিক সার্কিট এর সমাহার। এই আইসি এর জনক হলেন রবার্ট নয়েস এবং জ্যাক কিলবি। একটি আইসি এর মধ্যে সহস্রাধিক, লক্ষাধিক ট্রান্সসিস্টর থাকে। অর্থাৎ আইসি এর আবিষ্কারের ফলে ট্রান্সিসিস্টরের ব্যবহার স্বভাবতই কমে গেলো। আইসি হয়ে উঠলো অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য, দ্রুত এবং কম খরুচে একটি মাধ্যম। আইসির ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের হিসাবের সময় মাইক্রোসেকেন্ড থেকে ন্যানোসেকেন্ডে নেমে আসলো। তার পাশাপাশি প্রচলন হলো মাউস ও কিবোর্ডের। এ সকল কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে থাকলো কোবল, প্যাসকাল, অ্যালগল-৬৮, ফরট্রান-২ এর মতো প্রোগ্রামিং ভাষা। এই জেনারেশনের কিছু উল্লেখযোগ্য কম্পিউটারঃ

  • আইবিএম – ৩৬০ সিরিজ (IBM – 360 Series) 
  • হানিওয়েল – ৬০০০ সিরিজ (Honeywell – 6000 Series) 
  • টিডিসি – ৩১৬ (TDC – 316) 

৪র্থ জেনারেশন 

১৯৭১ থেকে ১৯৮০ এর সময়কালটাকে বলা হয় কম্পিউটারের ৪র্থ জেনারেশন। ৩য় জেনারেশনের সাথে ৪র্থ জেনারেশনের মূল পার্থক্য হলো ভিএলএসআই (VLSI) বা ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। এই ধরনের সার্কিটে চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটারগুলোয় একটি আইসিতে ৫০০০ ট্রানসিস্টর অবধি থাকতো। ৪র্থ জেনারেশনেই প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পারসোনাল কম্পিউটারের যাত্রা শুরু। চতুর্থ জেনারেশনেই অতি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা সি, সি++ এর ব্যবহার শুরু। এরকম কিছু ৪র্থ জেনারেশনের কম্পিউটারের নাম হলোঃ

  • ক্রে – ১ সুপারকম্পিউটার (CRAY – 1)
  • স্টার ১০০০ (STAR 1000)
  • পিডিপি (PDP) 

৫ম জেনারেশন

১৯৮২ থেকে বর্তমান অবধি সকল কম্পিউটারই ৫ম জেনারেশনের কম্পিউটারের মধ্যে পড়ে। এই কম্পিউটারে ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের বদলে আল্ট্রা লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহৃত হয়েছে। সেই ১৯৮২ সাল থেকে আজ অবধি ৫ম জেনারেশনের কম্পিউটারের পরিবর্তন এসেছে অনেক বেশি। সাধারণ হিসাব নিকাশের কাজ থেকে বর্তমানে কম্পিউটার দিয়ে করা যায় না এমন খুব কম কাজই আছে। গেম খেলা, মুভি ভিডিও দেখা, রিসার্চের কাজ করা, ডাটা এনালাইসিস করা, থ্রিডি রেন্ডারিং করা থেকে শুরু করে এখন সব কাজেই কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বর্তমানে কম্পিউটারের আরও একটি প্রধান দিক হচ্ছে এআই (AI)। এছাড়াও অন্যান্য সকল প্রোগ্রাম ও সফটওয়্যারের দিকে থেকেও ৮০ এর দশকের সাথে এখনের রয়েছে আকাশ পাতাল তফাত। হার্ডওয়্যারের দিক থেকেও এসেছে অনেক পার্থক্য। ইনপুট মেথড হিসেবে শুধু মাউস-কিবোর্ড নয় বরং ব্যবহৃত হচ্ছে টাচস্ক্রিনও। আবার আউটপুট মেথডে হিসেবে প্রধানত মনিটর ব্যবহার হলেও রয়েছে প্রিন্টার, স্পিকার এর মতো আরও অনেক কিছু। পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটারের সংখ্যা এত বেশি যে আলাদা করে কোনো মডেলের নাম লেখাটা অনুচিত। তবে নিচের সব ধরনের কম্পিউটারই ৫ম জেনারেশনের অর্ন্তভুক্ত। 

  • ল্যাপটপ
  • ডেস্কটপ
  • নোটবুক
  • আল্ট্রাবুক
  • ম্যাকবুক 

বিশেষ ঘটনাবলী

আধুনিক কম্পিউটারের ইতিহাসে উপরে উল্লিখিত ঘটনাবলী ছাড়াও কিছু ঘটনা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। 

প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটার

বর্তমানে সিংহভাগ মানুষ ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পিসি’কেই কম্পিউটার হিসেবে চেনে। আর কম্পিউটারকে প্রথম ব্যক্তিগত রুপ দিয়েছিলেন যেই ব্যক্তি তার নাম François Gernelle। ১৯৭৩ সালে তিনি তৈরি করেন ‘মিক্রাই এন’ (Micrai N), পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটার। যদিও এই কম্পিউটারটি ব্যবসায়িক সফলতা পায় নি। সে সময় এটির দাম ছিল ৮৫০০ ফ্রেঞ্চ ফ্রা যা ২০২০ এর হিসেবে সাড়ে ৭ হাজার ইউরোর কিছুটা বেশি। ব্যবসায়িক ভাবে প্রথম সফলতার দেখা পায় ‘মিটস আলতাইর ৮৮০০’ (MITS Altair 8800)। ১৯৭৪ সালে এই ব্যক্তিগত কম্পিউটারটির মূল ছিল ৪৩৯ ডলারে। 

প্রথম বহনযোগ্য কম্পিউটার

বর্তমানে কম্পিউটার যত সহজেই স্থানান্তর করা যায়, সবসময় এমনটা ছিল না। প্রথম বহনযোগ্য কম্পিউটার ছিল ‘আইবিএম ৫১০০’ যা বাজারে এসেছিল ১৯৭৫ সালে। যদিও আইবিএম কোম্পানি এটিকে বহনযোগ্য হিসেবেই মার্কেটিং ও বিক্রয় করেছিল, কিন্তু এর ভর ছিল ২৩ কেজি। অর্থাৎ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে আজকের দিনের বহনযোগ্যতা আর তৎকালীন বহনযোগ্যতার তফাতটা আকাশ পাতাল। 

প্রথম ল্যাপটপ

২৩ কেজির ‘আইবিএম ৫১০০’ এর পর ১৯৮১ সালে জাপানে বের হওয়া ‘এপসন এইক্সএচ-২০’ ছিল বহনযোগ্যতার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। মাত্র ১.৬ কেজির এই কম্পিউটারকে ধরা হয় পৃথিবীর প্রথম ল্যাপটপ। এর আকার ছিল মাত্র একটি এ৪ কাগজের সমান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো এর ব্যাটারি ব্যাকআপ, যা ছিল ৫০ ঘন্টারও বেশি। 

প্রথম ম্যাক

কম্পিউটার জগতে ম্যাক এক অন্যন্য ন্যাম। স্টিভ জবস এর আবিষ্কার ম্যাক এর আদিপুরুষ ‘ম্যাকিন্টশ’ প্রথম বাজারে আসে ১৯৮৪ সালে। ২৩ বর্গ সেন্টিমিটার স্ক্রিনের এই কম্পিউটারটি হ্যান্ডেলের সাহায্যে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সহজেই নেওয়া যেত। সে সময় এর দাম ছিল ২,৪৯৫ ডলার। 

শেষকথা

মানবজাতির আধুনিক ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কম্পিউটার। মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে মানবজাতির যে ইতিহাস সংরক্ষিত হচ্ছে, তাও কিন্তু হচ্ছে কম্পিউটারেই। তাই সকলেরই উচিত এই যন্ত্রটির ইতিহাস সম্পর্কেও ধারনা রাখা। কারণ ভবিষ্যতে এর সাথেই জড়িত থাকবে মানবজাতির ইতিহাস। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। বাংলাদেশের ইতিহাসে কম্পিউটার আগমন প্রথম কবে ঘটে?

উত্তরঃ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের আনবিক শক্তি কমিশন এর জন্য ১৯৬৪ সালে ঢাকাতে আনা হয় বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার। সেটির নাম ছিল ‘আইবিএম মেইনফ্রেম ১৬২০’। 

২। কম্পিউটারের ইতিহাসে কম্পিউটারের আদিরূপের ভূমিকা কতটুকু?

উত্তরঃ কম্পিউটারের আদিরুপ যেমন অ্যাবাকাস, নেপিয়ারস বোনস এসবের ভূমিকা অনেক। বর্তমান কম্পিউটারের সাথে এর প্রত্যক্ষ সংযোগ না থাকলেও এসবের সাহায্যেই মানুষের যন্ত্রের সাহায্যে হিসাব নিকাশের হাতে খড়ি। যার সর্বশেষ ফলাফল আজকের এই কম্পিউটার।

৩। আধুনিক কম্পিউটারের জনক আসলে কে? 

উত্তরঃ আধুনিক কম্পিউটারের জনক হিসেবে চার্লস ব্যাবেজ এর নাম উচ্চারিত হলেও বর্তমানে টুরিং, হোসে এর নামও বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।  

 

 

 

তথ্যসূত্র

১। ব্রিকসিস

২। জাভাট পয়েন্ট 

৩। লাইভ সাইন্স

৪। গিকস ফর গিকস

৫। জি২ 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button