কম্পিউটারটেকনোলজি

সুপার কম্পিউটার কি? সুপার কম্পিউটারের সুবিধা, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার 

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির স্পর্শে থাকা এই পৃথিবীতে অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে কম্পিউটার। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই মহা বিষ্ময়কর আবিষ্কার সময়ের বিবর্তনে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রযুক্তির সাহায্যে ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে সুপার কম্পিউটার নামে কম্পিউটারের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে। সুপার কম্পিউটার নামে প্রযুক্তির এই মহা বিষ্ময় পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এক নব-যুগের উত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। 

সুপার কম্পিউটার কী?

“Supercomputer” বা “সুপার কম্পিউটার” হচ্ছে সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে উচ্চ গতি ও ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্পিউটারের সংস্করণ; প্রতি সেকেন্ডে যার মাধ্যমে Million Information Per Second(MIPS) এর পরিবর্তে Floating Point Operation Per Second (FLOPS) পরিমাপে হিসেব করে ডেটা বা ইনফরমেশন আদান-প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, একটি সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে ১০^১৭ FLOPS পরিমাণ তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। উচ্চ স্তরের বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলী সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণত সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। 

সুপার কম্পিউটারের ইতিহাস

১৯৬০ সালে সুপার কম্পিউটার সর্বপ্রথম তৈরি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। Control Data Corporation(CDC) ও ক্রে রিসার্চ এর অধিভুক্ত কিছু কোম্পানি সর্বপ্রথম এই দ্রুত গতি সম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি করতে সক্ষম হয়। যার নাম ছিল Livermore Advanced Research Computer (LARC)United States Navvy Research & Development জন্য ব্যবহৃত হতো LARC। পরবর্তীতে আর ও চারটি প্রসেসর সমান্তরালে সংযুক্ত হয়ে ক্রে-১১৯৭৬ নামে ১৯৭০ সালে আরেকটি কম্পিউটার তৈরি করা হয়। যা আর ও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে সক্ষম। এই সময়ে IBM তৈরি করেছিল IBM 7030 নামের আরেকটি সুপার কম্পিউটার। IBM 7030 এ ব্যবহৃত ট্রানজিস্টর, মেমরি, পাইপলাইন Random Access Memory(RAM) এর সাথে সংযুক্ত ও ডেটা সমূহ RAM এর অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীতে এটি IBM 7950 এ রূপান্তরিত করা হয়।

তৎকালীন সময়ে তৃতীয় সুপার কম্পিউটার টি ছিল ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ATLAS। ATLAS এ ১৬০০০ শব্দ ও অতিরিক্ত ৯৬০০০ হাজার শব্দের মেমরি ছিল। এটি ম্যাগনেটিক কোরের মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করতো। মাইক্রো সেকেন্ডের কাছাকাছি সময়ে কাজ করতে সক্ষম ছিল ATLAS। এই সময়ে আবিস্কৃত আরেকটা সুপার কম্পিউটার হচ্ছে CDC 6600। যেটি সিলিকন ট্রানজিস্টরের হওয়ায় রেফ্রিজারেশন সমস্যার সমাধান হয়েছিল, ফলে গরম হওয়ার সমস্যা মুক্ত হয়ে সমসাময়িক কম্পিউটার থেকে ১০ গুণ দ্রুত সময়ে কাজ করতে সক্ষম ছিল। এটি তৈরি করেছিল সিমার ক্রে। পরবর্তীতে ক্রে ১৯৭৬ ও ১৯৮৫ সালে ক্রে-১ ও ক্রে-২ নামের দুইটি সুপার কম্পিউটার তৈরি করেন। এই কম্পিউটার গুলো আটটি Central Processing Unit(CPU), Liquid Cooling এবং পাম্প করার ফ্লুরিনার্ট দিয়ে গঠিত। এর ক্ষমতা ১.৯ গিগা FLOP। 

সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

সময়ের সাথে সাথে যেমন সুপার কম্পিউটারের সক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে, ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যের ও ব্যপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ক্রে-১ কে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ৭০ এর দশকে ILLIAC IV নামের আরেকটা কম্পিউটার ছিল। এই কম্পিউটার গুলো তে একাধিক প্রসেসর ছিল বৃহত্তর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে। ডেটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে ডেটাকে আবার ভিন্নভাবে সজ্জিত করার জন্য ভেক্টর সিস্টেমের বিপরীতে এই ডিজাইন করা হয়েছিল। ILLIAC এর নকশায় ২৫৬ টি প্রসেসর ছিল যা ১ গিগা ফ্লপসের প্রস্তাব দিলে ও শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫০ মেগা ফ্লপ্স তুলতে সক্ষম হয়েছে। 

৫১৪ টি মাইক্রোপ্রসেসর, ২৫৭ জিল্গের Z8001 কন্ট্রোল প্রসেসর ও 257 IAPX 86/20 ফ্লোটিং এর সমান্তরালে প্রসেসিং ইউনিট ব্যবহৃত হয় LINKS-1 সুপার কম্পিউটারে, যেটি ১৯৮২ সালে ওসাকা ইউনিভার্সিটি তৈরি করে। 3D গ্রাফিক্সের জন্য মূলত এটা তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে 

১৬৬ টি ভেক্টর প্রসেসর ব্যবহার করে VPP500 এ। ক্রসবার নেটওয়ার্ক এর দ্বিমাত্রিক মাধ্যেমের সাথে যুক্ত হতে ২০৪৮ টি প্রসেসর ব্যবহৃত হয় Hitachi SR2201 এ ; যার আদানপ্রদান এর হার ছিল ৬০০ GFLOPS এর মতো। Intel Paragon এ 1000-4000 এর মতো I1860 দ্বিমাত্রিক প্রসেসর থাকে যেগুলো সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন হয় ১৯৯৩ সালে।

CPU এর অত্যাধুনিক চিপের মাধ্যমে অনেক গুলো ইউনিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো গ্রাফিক্স ইউনিটে যুক্ত হচ্ছে। এই অসংখ্য প্রসেসর ও সিস্টেম গুলি সাধারণত দুটি পথ অনুসরণ করে।

  • গ্রিড কম্পিউটিং 
  • কম্পিউটার ক্লাস্টার

গ্রিড কম্পিউটিং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ, শক্তি বিতরণ, প্রশাসনিক ডোমেন হিসেবে সংগঠিত হয়। অপরদিকে ক্লাস্টার কম্পিউটারে সমস্ত সমান্তরাল শক্তিগুলি একীভূত হয়ে ইনফিনিটি ব্যান্ড থেকে শুরু করে ত্রিমাত্রিক টরাস পর্যন্ত বিভিন্ন প্রসেসর ব্যবহৃত হয়। সাইক্লোপ্স ৬৪ একটি উদীয়মান মাল্টি কোর প্রসেসর। 

উন্নত গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (GPGPUs) মূল্য, কর্মক্ষমত ও দক্ষতার উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতির ফলে PetaFlops কম্পিউটার ক্রমেই আস্থার জায়গা হারাচ্ছে। সুপার কম্পিউটারের মতো অন্যান্য কম্পিউটার গুলো প্রচলিত প্রসেসর ও তার প্রয়োজনীয়তা ব্যবহার করতে উদ্যত হয়েছে। একটি সুপার কম্পিউটারের ডিজাইন নির্ভর করে সেই কম্পিউটার কোন উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছে তার ওপর। FGPA, ASIC চিপ গুলো সাধারণ সব কিছুর পরিবর্তে আরও কর্মক্ষমতার নিশ্চয়তা দেয়।

শক্তি ব্যবহার

একটি সুপার কম্পিউটার বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে থাকে। এই শক্তির অধিকাংশ ব্যায়িত হয় তাপ শক্তি হিসেবে। ফলে তাপ শক্তিতে উত্তপ্ত এই যন্রাংশ গুলির শীতলীকরণের প্রয়োজন হয়। একটি সুপার কম্পিউটার প্রায় ৪.০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ করচ করে 1A হারে। অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় ৪০০০০ টাকা। এই বিপুল অর্থ কম্পিউটারের পাওয়ার ও শীতলীকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। 

তাপীয় ব্যবস্থাপনা

সুপার কম্পিউটারের তাপীয় ব্যবস্থাপনা একটা অন্যতম প্রধান ইস্যু। ফ্লুরিনার্ট পাম, হাইব্রিড এয়ার কুলিং বা সাধারণ এয়ার কন্ডিশন, প্রত্যেকটি মাধ্যম ব্যবহৃত হয় তাপীয় ব্যাবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ করতে। অসংখ্য প্রসেসরের একত্রে কাজ তাপীয় অবস্থার সৃষ্টি করে। ক্রে-২ সুপার কম্পিউটারে ফ্লুরিনার্ট কুলিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে মাল্টি ক্যাবিনেট কুলিং সিস্টেম ছিল না এই প্রসেসরে। সিস্টেম-এক্স এ কুলিং সিস্টেম কে সম্পুর্ণ একত্রীকরণ করা হয়ে ছিল। 

আইবিএমে কম শক্তির প্রসেসর ব্যবহারের রেকর্ড আছে তাপীয় ঘনত্বের কারণে। পাওয়ার ৭৭৫ এ জল শীতলি করণের প্রযুক্তি রেখেছে আইবিএম। এই সিস্টেমের নাম আ্যকোয়াসার। কম্পিউটার সিস্টেমে শক্তি সাধারণত FLOAPS ওয়াট এর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে 3.76 MFLOPS/W, ২০১০ সালে ১৬৮৪ MFLOPS/W ও ২০১১ সালে ২০৯৭ MFLOPS/W এ পৌছে ছিল পরিমাপ করা শক্তি। তন্মধ্যে প্রথম দুটি ব্লু জিন ও রোডরানার হলেও শেষ টা DEGIMA Cluster এর দ্বারা পরিচালিত ছিল। তামার তারগুলো বাতাসের চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত কম্পিউটারে শক্তি স্থানান্তর করতে পারে। বর্তমানের ডিজাইনাররা সাধারণত সর্বোচ্চ বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার চেয়ে রক্ষণশীল ভাবে শীতলিকরণ শক্তি ও সামগ্রিক শক্তির সমন্বয় করে ডিজাইন করে। ফলে সর্ব সাপেক্ষে খরচ আগের চেয়ে কম হয়।

অপারেটিং সিস্টেম

সুপার কম্পিউটারের পরিবর্তনের ফলে সুপার কম্পিউটারের অপারেটরের ও পরিবর্তন হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের তুলনায়। প্রথমদিকে সুপার কম্পিউটারের কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম ছিল। যার ফলে Linux বা লিনাক্সের মতো সফটওয়্যার গুলোর অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন সিস্টেম থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার প্রবপণতায় ছিল এর প্রধান কারণ। আধুনিক সুপার কম্পিউটার গুলো বিভিন্ন নোড ব্যবহারের কারণে ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্য নিয়ে থাকে। একটি CNK, CNL ব্যবহৃত হয় কম্পিউট নোডে, লিনাক্স সার্ভার, IO নোডে ব্যবহৃত হয়। কাজের সময়সূচি, প্রক্রিয়াকরণ, পেরিফেরাল রিসোর্স নিয়ে টাস্কিং প্রবলেম, চাকরির ব্যবস্থাপনা কম্পিউটেশনাল এবং কমিউনিকেশন সিস্টেমে বরাদ্দকৃত অংশ থাকতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ সুপার কম্পিউটারে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয় ও নির্দিষ্ট লিনাক্স এর ডেরিভেটিভ ও রয়েছে। 

সফটওয়্যার সিস্টেম 

সুপার কম্পিউটারের গতি ও কর্মক্ষমতা কে কাজে লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট সফটওয়্যার প্রোগ্রাম আছে। যেমন MPI, PVM, VTL, বিউলফ ইত্যাদি। বিউলফ ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সাধারণ ক্লাস্টার গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে PVM ও MPI। Open MP ব্যবহৃত হয় সমন্বিত মেশিন মেমোরি গুলোর জন্য। অ্যালগরিদম অপ্টিমাইজড করে ইন্টারকানেক্ট বৈশিষ্ট্য গুলোর জন্য সিপিউ কে ডেটার কালেকশনের জন্য নোড থেকে প্রতিরোধ করা মেশিনের মাধ্যমে। CUDA, OpenCL ব্যবহার করে তৈরি প্রোগ্রামে শত শত কোর থাকে GPGPU তে। প্রোগ্রামিং ডিবাগ,ব্যবহার ক্ষেত্র নির্ধারণের জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে সুপার কম্পিউটারে।

সুপার কম্পিউটারের সুবিধা 

সুপার কম্পিউটারের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধাজনক দিক রয়েছে। 

গ্রিড কম্পিউটিং সুবিধা

গ্রিড কম্পিউটিং সুবিধার কারণে অনেক বড়ো বড়ো কম্পিউটিং কাজ গুলো সহজেই সম্পন্ন করা যায়। গ্রিড আকারে সমান্তরালে প্রয়োগের ফলে কর্মক্ষমতা স্কিল বৃদ্ধি পায়। ক্লাউড কম্পিউটিং এর ওপর নির্ভরশীল কাজ গুলো গ্রিড কম্পিউটিং সহজেই করতে সক্ষম। সেচ্ছাসেবক কম্পিউটার প্রকল্প হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগামী গ্রিড কম্পিউটিং সিস্টেম। F@h×86 প্রসেসিং পাওয়ারের ফলে 2.5 exaFlops রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বার্কলে ওপেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেশ কিছু কম্পিউটিং প্লাটফর্ম হোস্ট করে নেটওয়ার্ক কম্পিউটিং এর জন্য। BOINC এ ৭৬২ হাজারের অধিক ও Mersenne Prime এর মাধ্যমে যথাক্রমে 166PFLOPS ও 0.313PFLOPS অর্জিত হয়েছে। 

কোয়ার্সি অপর্চুনিস্টিক কম্পিউটিং

কোয়ার্সি অপর্চুনিস্টিক সুপার কম্পিউটিং প্রযুক্তি হলো মূলত বিতরণকৃত কম্পিউটিং এর একটি মাধ্যম যার ফলে বিচ্ছুরিত অসংখ্য কম্পিউটার কে সুপার ভার্চুয়াল কম্পিউটিং এর মাধ্যমে বিপুল শক্তির উদঘাটন করে। গ্রিডিং কম্পিউটারের চেয়ে তুলনামূলক উন্নত এই কম্পিউটিং সিস্টেম পরিষেবা দানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার হয়ে কাজের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে সক্ষম। টপোলজি, ত্রুটি পূর্ণ বার্তা,পাসিং লাইব্রেরি, ডেটার পূর্বশর্ত নির্ধারণ ইত্যাদি সবকিছুই কোয়ার্সি অপর্চুনিস্টিক কম্পিউটিং এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।

ক্লাউড কম্পিউটিং

দ্রুত সম্প্রসারণ, হাই পার্ফরমেন্স কম্পিউটিং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে ক্লাউড কম্পিউটিং। সফটওয়্যার, প্ল্যাটফর্ম ও পরি কাঠামোর মতো হাই পার্ফরমেন্স কম্পিউটিং ক্লাউড কম্পিউটিং এর অন্যতম প্রধান সুবিধা। HPC এপ্লিকেশন ক্লাউড থেকে রিসোর্স অন ডিমান্ড, স্কেলেবিলিটি দ্রুত ও স্বস্তা তুলনামূলক। আবার HPC এর ব্যবহার ক্ষেত্র গুলো সরানো একটা চ্যালেঞ্জ বর্তমানে। ভার্চুলাইজেশন, ক্লাউডে ওভার হেড, মাল্টি টেন্ডেন্সি, নেটওয়ার্ক ল্যাপিং ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে আরও গবেষণা হচ্ছে। প্যারালাল ওয়ার্ক্স, পেঙ্গুইন কম্পিউটিং, আর-এইচপিসি, ওয়েব সার্ভিসেস, ইউনিভা, সিলিকন, গ্রাফিকস ইন্টারন্যাশনাল, রেস্কেল, সাবালকোর গোম্পুট ২০১৬ সালে ক্লাউড কম্পিউটিং অফার শুরু করেছিল।

কর্মক্ষমতা পরিমাপ

সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা অনেকগুন বেশি। এটি সাধারণত জটিল ক্ষেত্রে যেমন আবহাওয়া সিমুলেশন অ্যাপ্লিকেশন, অন্য কোনো জটিল সমস্যা সমাধান করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত অনেক বড়ো বড়ো ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হিসেবে সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় খরচ কার্যকরী একজন দক্ষ ব্যবহারকারীর মাধ্যমে।

কর্মক্ষমতা মেট্রিক্স 

সুপার কম্পিউটার গুলোর গতি FLOPS এ পরিমাপ করা হয় MIPS এর পরিবর্তে সাধারণত। এই পরিমাপ গুলো এস আই এককে যেমন টেরা বা TFLOPS, পেটা বা PFLOPS আকারে প্রকাশিত হয়। ১০^১৫ বা এক কোয়াড্রিলিয়ন পরিমাণ ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে পারে সুপার কম্পিউটার। আরেকটি পরিমাপ একক হলো Exascale বা exaFLOPS (১০^১৮) কুইন্টিলিয়ন পরিমাণ EFLOPS পরিমাণ করা যায়।

কোনো নির্দিষ্ট কম্পিউটার পুরো সামগ্রিক কর্মক্ষমতা কখনোই দেখাতে সক্ষম হয় না। তবুও কত দ্রু সমস্যার সমাধান করতে পারে সেটিই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শিল্পক্ষেত্র সহ বিভিন্ন জায়গায় পার্ফরমেন্স বিবেচনা করে ও FLOPS পরিমাপ হয় প্রসেসরের তাত্ত্বিক পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে। এভাবেই ফ্লোটের হিসাব উদ্বৃত হয়।

সুপার কম্পিউটারের ব্যবহার 

  • পরমাণু থেকে শুরু করে উপ-পরমানুর গঠন, তার বিস্তৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে উচ্চস্তরের গবেষনায় সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। পারমাণবিক শক্তি ও পারমাণবিক অস্ত্র বিভিন্ন অত্যাধুনিক ও জটিল বিষয়ের গবেষণাত ব্যবহৃত হয়।
  • আবহাওয়াবিদ্যা, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো জটিল বিষয় গুলো সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
  • বৈজ্ঞানিক সিমুলেশন, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হচ্ছে জটিল সমস্যার সমাধানে।
  • রোগ নির্ণয়, স্ট্রোক ও মস্তিস্কের রক্তক্ষরণের উন্নততর গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • সামরিক বাহিনীর বিমান, ট্যাংক সহ অস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি ডেটা নিয়ে গবেষনায় এনক্রিপ্ট করতে সক্ষম সুপার কম্পিউটার।
  • অ্যানিমেশন জগতে গ্রাফিক্স উন্নত 3D নিঁখুত প্রযুক্তি তে ব্যবহৃত হয় সুপার কম্পিউটার। 
  • উচ্চমানের অনলাইন গেইম ও গেইমের কর্মক্ষমতা স্থিতিশীল নির্ধারণে ব্যবহৃত হতে পারে সুপার কম্পিউটার।
  • বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি সহ স্টক মার্কেটের শীর্ষস্থানীয় ক্ষেত্রে সাফল্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে সুপার কম্পিউটার।
  • মহাকাশযান থেকে শুরু করে সৌরজগতের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় সুপার কম্পিউটার। 
  • বিভিন্ন বড়ো বড়ো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ক্লাউড স্টোরেজ থেকে ডেটা খুঁজে বের করতে প্রয়োজন হয় সুপার কম্পিউটারের। 
  • জ্বিন তত্ত্ব বিশ্লেষণের মতো সুক্ষ্মতম কাজে ব্যবহৃত হয় সুপার কম্পিউটার। 
  • তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধানে ডেটা নিয়ে বিশ্লেষণ ও ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সুপার কম্পিউটার। 

পৃথিবীর বিখ্যাত সুপার কম্পিউটার সমূহ 

পৃথিবী জুড়ে অন্য সবকিছুর মতোই সুপার কম্পিউটার জগতেও আধিপত্য ধরে রেখেছে দুই টেক জায়ান্ট যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তাদের পাশাপাশি জাপান ও সুপার কম্পিউটার জগতে অনেক অগ্রসর হয়েছে। পৃথিবীর সেরা ১০ টি সুপার কম্পিউটার হলো,

উপসংহার

সুপার কম্পিউটার পৃথিবী কে যে কতটা সহজ করে দিয়েছে আরও মানুষের নিকট তা সহজেই বোধগম্য হবে ক্রমেই সুপার কম্পিউটারের ব্যবহারের বৃদ্ধির পর, যার সুফল ইতিমধ্যে মানুষ ভোগ করছে। পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের সাহায্যে হয়তো সুপার কম্পিউটার কখনো আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত হবে, কিন্তু সেই উন্নতি যেন মানুষের জন্য কোনো হুমকি স্বরুপ না হয়ে আসে ভবিষ্যতে, সেটাই একমাত্র কামনা রইলো পরিশেষে। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১.সুপার কম্পিউটারের দাম কত?

উত্তর : একটি সাধারণ সুপার কম্পিউটারের মূল্য সাধারণত ৫ লক্ষ ডলার থেকে শুরু হয়ে ২০০ মিলিয়ন ডলার বা তার ও বেশি হতে পারে।

২.বাংলাদেশে কী সুপার কম্পিউটার আছে?

উত্তর : না, বাংলাদেশে সুপার কম্পিউটার নেই। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম সুপার কম্পিউটার আবিস্কারে কাজ করেছেন বাংলাদেশি কয়েকজন বিজ্ঞানী। তাই টাইটান এর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে বাংলাদেশি কর্মরত হওয়ায় বাংলাদেশের পতাকাও আছে সেখানে।

৩.সুপার কম্পিউটারের জনক কে?

উত্তর:  সুপার কম্পিউটারের উদ্ভাবক হলেন Seymour CrayBoris Babayan। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button