কৃষিকৃষি ব্যবসাজীবন ও জীবিকাপেশাব্যবসা

কবুতর পালন ও চিকিৎসা পদ্ধতি

কবুতর এমন একটি পাখি যা কিনা আজ থেকে ১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের সাথে রয়েছে। যুগে যুগে মানুষ নানা ধরনের কবুতরকে পোষ মানিয়েছে। আর ঠিক সেই ধারা রয়ে গেছে এখনো। তাই তো আজও আমাদের দেশে অসংখ্য কবুতর প্রেমী কবুতর পালন করে চলেছেন। আর দিনে দিনে সেই সংখ্যাটা যেনো বেড়েই চলছে। কারণ কবুতর পালন একটি সহজ এবং তুলনামূলক অনেক কম খরচের একটি সখ বা পেশা।

আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় কবুতর পালন ও এর চিকিৎসা পদ্ধতি।

সূচিপত্রঃ

 কবুতর পালনের সুবিধা সমূহ

কবুতর পালনের সুবিধা

আমাদের দেশের আবহাওয়া কবুতর বিচরণের অনুকূল হওয়ায় কবুতর পালনের জন্য বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। চাইলে কম খরচে খুব সহজেই কবুতর পালন করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কবুতর পালনের সুবিধা সমূহ সম্পর্কেঃ-

১) কবুতর পালনের খরচঃ

লাভজনকভাবে একটি প্রাণী পালনের প্রথম শর্তই হলো কম খরচ। খরচ যত কম হবে প্রাণীটি প্রতিপালন ততো সহজ হবে। এদিক দিয়ে কবুতর পালন বেশ সুবিধাজনক। কবুতর পালনের জন্য খুব বেশি মূলধনের দরকার হয় না। কারণ এর বাসস্থান খরচ একদমই কম। কবুতর দেওয়াল থেকে ঝুলিয়ে রাখা বাক্সের মধ্যেও ঘর বাঁধতে পারে। বাসার কোণ, আঙিনা বা কার্নিশে কবুতরের ঘর করতে পারায় প্রয়োজন হয় না তেমন অধিক কোনো জায়গার। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যেতে পারে এক জোড়া দেশি প্রজাতির কবুতর। তাই কিনতেও খুব বেশি খরচ হবে না। আবার খাবারের দিকে তাকালেও খরচ খুব একটা বেশি নয়। সবমিলিয়ে বেশ অল্প খরচেই শুরু করতে পারবেন।

২) কবুতরের ব্যাপক চাহিদাঃ

প্রাচীন কাল থেকে পুরো বিশ্বেই কবুতরের চাহিদা রয়েছে। আর বর্তমানে আমাদের দেশে সে চাহিদা বেড়েই চলেছে। এদেশে মূলত তিনটি কাজের জন্য কবুতর পালা হয়। সেগুলো হলোঃ

  • মাংস উৎপাদন
  • কবুতর রেস
  • শখের বসে কবুতর পালা

আমদের দেশে সবচেয়ে বেশী মাংস উৎপাদনের জন্যই কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। কবুতরের মাংসের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। সাধারণত একটি কবুতরের বাচ্চা জন্মানোর মাত্র ৪ সপ্তাহের মধ্যেই তা খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। এক জোড়া সুস্থ-সবল কবুতর বছরে প্রায় ১২ জোড়া বাচ্চা দেয়। তাই সহজেই সেগুলো বেচে আপনি হতে পারেন লাভবান। এছাড়াও কবুতরের রেসের জন্য এবং শখের জন্যও অনেকে অনেক দামি দামি কবুতর পালন করে থাকে। প্রজাতি ভেদে এসকল কবুতরের দাম হতে পারে ৫-৭ হাজার থেকে ১ লাখেরও বেশী। শুনতে অবাক মনে হলেও আমাদের দেশে এমন অনেক কবুতর প্রেমী আছে যারা দূর্লভ প্রজাতির কবুতরের জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করবে না। তাই আপনার যদি অধিক পুঁজি থাকে তাহলে বেশি দামের কবুতরও পালন করতে পারবেন। তাতে লাভও বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে।

৩) কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ

খামারি বা শখের পাখি পালক সবার কাছেই পোষা প্রাণীর রোগ বালাই একটি আতঙ্কের নাম। তারপরেও কবুতরের ক্ষেত্রে সে ভয় কিছুটা কম। নিয়ম মেনে চললে খুব বেশি রোগের সম্ভাবনা নেই। কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশ ভালো। তাই রোগ হলেও যত্ন নিলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবে সহজে।

৪) কবুতরের উর্বরতা এবং পোষ মানানোঃ

কবুতর খুবই উর্বর একটি প্রাণী। সাধারণ হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার সম্ভাবনা যেখানে ৮০-৮৫%। সেখানে কবুতরের ক্ষেত্রে তা ৯৮-৯৯%। এছাড়াও কবুতর পোষ মানেও বেশ দ্রুত।

কবুতরের জীবনকাল

কবুতরের জীবনকাল সাধারণত ১২ থেকে ১৫ বছর হয়ে থাকে। কবুতর ডিম দেওয়ার পর সাধারণত ১৮ দিনেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার পর মাত্র ১ মাস বয়সেই কবুতরের বাচ্চা মাংস হিসবে খাওয়ার উপযুক্ত যায় এবং ৫-৬ মাস বয়সেই এরা বংশবিস্তার করার জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। এরপরে তারা নিজেরাই ডিম দেয়া শুরু করে। এভাবে প্রায় ৩ মাস পর পর কবুতর ডিম উৎপাদন এবং বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে।

কবুতরের জাত নির্বাচন

কবুতরের জাত

বর্তমানে আমাদের দেশে মূলত ২০-৩০ প্রজাতির কবুতরের দেখা মেলে। কবুতরের জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। ভালো জাতের কবুতর না হলে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়াও কি উদ্দেশ্যে কবুতর পালন করবেন তার উপর নির্ভর করবে জাত নির্বাচন। মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে যদি শখের কবুতরের জাত নির্বাচন করেন তাহলে ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই জেনে নেওয়া যাক কোন কাজের জন্য কোন জাত আদর্শ।

১) মাংস উৎপাদনঃ- কিং, হোমার।

২) রেসের কবুতরঃ- রেসের জন্য সবচেয়ে ভাল হলো ‘রেসার’ জাত। তবে কবুতরকে রেসে খেলাতে চাইলে ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

৩) শখের কবুতরঃ- লক্ষা (ফ্যানটেল), সিরাজী, জ্যাকোবিন, মুক্কি, পটার, সাটিং, নান, জ্যাকোবিন, রোলার লোটন, গ্যালাতী রোলার (মাঝারি দামী)  ফ্লেজার, বোখারা, আউল, ফ্রিলব্যাক, ভিক্টোরিয়া ক্রাউন (বেশী দামী)

কবুতরের খাদ্য

কবুতরের খাদ্য

কবুতরের খাদ্যে হাঁস-মুরগির মতই শর্করা, স্নেহ, আমিষ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি থাকা জরুরী। মনে রাখতে হবে একটি পাখির পালকের ৮০ শতাংশ আমিষ দ্বারা গঠিত। তাই সুষম খাদ্যে ১৫-১৬% আমিষ থাকা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও প্রতি কেজি খাবারে ২৫০০-২৬০০ কিলোক্যালরি থাকা উচিত। কবুতর সাধারণত তার ওজনের ১০ ভাগের এক ভাগ খাবার খেয়ে থাকে। তাই ওজনের ওপর নির্ভর করে কবুতর প্রতিদিন ২০-৯০ গ্রাম অবধি খাবার খেতে পারে। খাবার হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা, খেসারি, সরিষা, যব, ডাল ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও ঝিনুকের খোসা, কয়লা গূড়া, চুনাপাথর, লবণ ইত্যাদি খাবারের সাথে মেশাতে হয়।

কবুতরের খাদ্য উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ

খাদ্যের উপাদান

খাদ্যের পরিমাণ (%)

গম

৩০%

ভুট্টা

৩০%

মটর

৩৫%

চুনাপাথর চূর্ণ/ঝিনুকের গুঁড়া/অস্থিচূর্ণ

০৭%

এমাইনো এসিড প্রিমিক্স/ভিটামিন

০৭%

লবণ

০১%

মোট =

১০০%

 

রেখে দিলে প্রয়োজন মত তারা খেতে পারবে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।

এছাড়াও রেসের কবুতরের ক্ষেত্রে খাদ্যে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যেমন, দূরপাল্লার রেসারের খাবারে চর্বির পরিমাণ কিছুটা বেশি রাখতে হবে। কারণ দূরপাল্লায় কবুতর চর্বি থেকে শক্তি লাভ করে। অন্যদিকে স্বল্পপাল্লার রেসারকে হালকা রাখতে খাবারে চর্বির পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়াও সকল কবুতরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। 

কবুতরের বাসস্থান বা খাঁচার মাপ

কবুতরের বাসস্থান

কবুতর পালনের সুবিধাতে আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, কবুতরকে চাইলে বাসার কোণ, আঙিনা এমনকি কার্ণিশ এও পালন করা যায়। তবে সুষ্ঠ এবং বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করতে চাইলে কবুতরের ঘর তৈরির নিয়ম অনুযায়ী ঘর তৈরি করা চাই। কবুতরের খাঁচার মাপ ছোট কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি. x ৩০ সে.মি. x ২০ এবং বড় কবুতরের জন্য ৫০ সে. মি. x ৫৫ সে.মি. x ৩০ সে.মি. আদর্শ। কবুতরের খোপ সাধারণত ২-৩ তালা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেসকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ-

১) কবুতরের ঘরটি উঁচু, শুষ্ক ও আলো-বাতাস সম্পন্ন হওয়া উচিত। খেয়াল রাখতে হবে যেনো কুকুর, বেড়াল কিংবা বেজির নাগালের বাইরে থাকে।

২) কবুতরকে আরামদায়ক পরিস্থিতিতে রাখার জন্য প্রতি খোপে শুধু এক জোড়া কবুতর রাখতে হবে। বাচ্চা জন্মানোর সুবিধার্থে একটি মাটির পাত্র দিয়ে রাখতে হবে।

৩) পোকামাকড়, কৃমি, জীবাণু যাতে না আক্রমণ করে এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৪) ঘরের ভেতর কচি ও শুকনো খড়-কুটো রেখে দিলে নিজেরাই সেগুলো দিয়ে খোপের ভেতর সুন্দর বাসা বানিয়ে নিবে।  ডিম পাড়ার সময় শুকনো ঘাস ও কচি ঘাসের ডগাজাতীয় উপাদান দিতে হবে।

উক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে ঘর তৈরি করলে তা একটি যেকোনো জাতের কবুতরের জন্য আদর্শ বাসস্থান হবে।

কবুতরের প্রজনন প্রক্রিয়া

কবুতরের প্রজনন

কবুতরের প্রজনন সম্পর্কে জানা কবুতর পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। কারণ কবুতর পালনের মূল লক্ষ্যই থাকে কবুতর প্রজননের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন এবং তা বিক্রি। কবুতরের প্রজনন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয় এবং নিচে ধাপগুলো বিশ্লেষণ করা হলঃ

ধাপ ১ঃ জোড় বাঁধা

জোড় বাঁধা কবুতরের প্রজননের প্রাথমিক ধাপ। হাঁস-মুরগির মতো কবুতর হুট করে জোড় বাঁধে না। সাধারণত একটি মদ্দা ও একটি মাদি কবুতরকে একই খোপে এক সপ্তাহ রাখলে জোড় বাঁধে।

 ধাপ ২ঃ ডিম পাড়া

জোড় বাঁধা মাদী কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয়। কবুতর একবারে সাধারণত দুটি ডিম পেড়ে থাকে। ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘন্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয়। তাই ডিম পারার আগে মাদী কবুতরকে এক বা দুইদিনের জন্য বসে থাকতে দেখা যায়। ডিম পাড়ার ২৪ ঘন্টা পূর্বে ডিমটি নিষিক্ত হয়। অতঃপর মাদী কবুতর ডিম পাড়ে।

ধাপ ৩ঃ ডিমের পরিচর্যা

ডিমের পরিচর্যা মাদী ও মদ্দা কবুতর উভয়েই করে থাকে। ডিম পাড়ার পর থেকেই তারা ডিমকে তা দিতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াতে মূলত নিজের শরীরের উত্তাপের সাহায্যে তারা ডিমের ভেতর বাচ্চা কবুতরকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। ডিম পাড়ার পঞ্চম দিনের মাথাতেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ডিমটি থেকে বাচ্চা হবে কিনা। সূর্যের আলো বা বাতির সামনে ধরলেই উর্বর ডিমের ভেতর রক্তনালী দেখা যাবে। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ভেতর তা দেখা যাবে না। ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিনের মাঝেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

ধাপ ৪ঃ পিজিয়ন মিল্ক

কবুতরের একটি বিশেষ গুণ আছে। কবুতর ডিম তা দিতে শুরু করার কিছুদিন পর থেকেই নিজেদের শরীরের ভেতরে কবুতর ছানার জন্য খাবার তৈরি করতে শুরু করে যা ‘পিজিয়ন মিল্ক’ নামে পরিচিত। এটি তৈরি হয়ে থাকে কবুতরের দেহের ক্রপ (Crop) নামক স্থানের কোষগুলো থেকে। কবুতর খাদ্য পরিপাক করার আগে ক্রপ এ খাদ্য জমা রাখে। আর এখান থেকেই কবুতরছানার জন্য মাতা-পিতা দুজনেই ‘পিজিয়ন মিল্ক’ উৎপন্ন করে থাকে। এটি খুবই পুষ্টিকর এবং কবুতর ছানার প্রাথমিক সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এতে থাকেঃ ৭% পানি, ১৭.% আমিষ, ১০% , স্নেহ এবং .% নানা খনিজ পদার্থ। কবুতর ছানা জন্মানোর পর ১০ দিন অবধি বাবা-মা তাকে এই খাবার খাওয়ায়। এসময় মাদি ও মদ্দা কবুতরকে বেশি করে তরল ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার দিতে হয়। এতে করে ‘পিজিয়ন মিল্ক’ এর উৎপাদন ভাল হয়।

ধাপ ৫ঃ কবুতরের বাচ্চা 

কবুতরের বাচ্চা জন্মানোর ৪-৫ দিন পরে এদের চোখ ফুটে থাকে। জন্মানোর পর এদের দেহ হলুদ লোমে ঢাকা থাকে। এরপরে ১৩-১৫ দিন নাগাদ সারা শরীরে পালক ওঠে। ১৯-২০ দিনের সময় এদের ডানা ও লেজ পূর্ণতা লাভ করে এবং ২৬-৩০ দিনের মাঝে কবুতরটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে। চাইলে বাচ্চা কবুতর ১৫ অথবা ৩০ দিনের সময়ও বিক্রি করা যেতে পারে। এছাড়াও বাচ্চার বয়স ১ মাস হলেই মা কবুতর আবার ডিম দিতে পারে।

কবুতরের রোগ ও তার চিকিৎসা

কবুতরের রোগ ও তার চিকিৎসা

প্রত্যেক প্রাণী পালনের ক্ষেত্রেই রোগ বালাই এর সম্মুখীন হতে হয়। এর থেকে কোনো নিস্তার নেই। আর তাই কবুতরকে নিরাপদ রাখতে অবশ্যই থাকা চাই এর রোগ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা। পাশাপাশি জেনে নিতে হবে সাধারণ দূর্ঘটনার প্রতিকার সম্পর্কেও।

 রক্তপাতঃ

রক্তপাত একটি সাধারণ দূর্ঘটনা যা আঘাতজনিত কারণে হতে পারে। উড়তে গিয়ে ধারালো কিছুর সাথে বাড়ি খেলে অথবা বিড়াল বা বাজপাখির আক্রমণে রক্তপাত হতে পারে। খুব বেশি রক্তপাত হলে কবুতরের মাথা ঢলে পড়ে। এসময় কবুতরকে আলতো করে যাতে বুকে চাপ না লাগে এমন ভাবে ধরে রাখতে হব। দ্রুত রক্তক্ষরণ থামানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অগভীর ক্ষত হলে রক্তপাতের স্থানে স্যাভলন বা অন্য এন্টিসেপটিক ক্রিম মেখে চেপে ধরে রাখতে হবে। রক্তক্ষরণ পুরোপুরি বন্ধ হলে জীবাণুনাশক দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম দিয়ে আবার বেঁধে রাখতে হবে। ক্ষত গভীর হলে সেলাই করতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তার অথবা অভিজ্ঞ কারো সহায়তা প্রয়োজন। কোনো ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে পশু ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিতে হবে।

 হাড়ভাঙ্গাঃ 

হাড়ভাঙ্গা কবুতরের আরেকটি সাধারণ সমস্যা। হাড় সম্পূর্ণ ও আংশিক দু’ভাবেই ভাঙতে পারে। আংশিকভাবে ভাঙা হাড় সাধারণত তিন রকমের হয়ঃ-

  • হাড় বাকা হয়ে যায়।
  • হাড়ের কিছু অংশে খসে পড়ে।
  • হাড়ে চিড় ধরে।

অন্যদিকে সম্পূর্ণ হাড় ভাঙলে হাড়ের দুই বা ততোধিক অংশের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে হাড়কে যথাসম্ভব সঠিক অবস্থানে এনে ত্বকের বাইরে ৩-৪ টুকরা কাঠি বা বাঁশ সহকারে মোটা তুলার প্রলেপ দিয়ে দিতে হবে। চাইলে প্লাস্টার করা যেতে পারে। এই ধরনের ব্যান্ডেজ সাধারণত ২১-৪০ দিন রাখতে হয়। কবুতরের বসার সুবিধা রাখতে হয় এবং এ সময়ে তরল খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও ফসফরাস সরবরাহ করতে হবে যাতে হাড় দ্রুত জোড়া লাগে। ওষুধের ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কবুতরের কিছু জীবাণুঘটিত রোগের নাম, কারণ ও চিকিৎসাঃ

সালমেনেলোসিসঃ

এই রোগটি মূলত সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে। এর লক্ষণগুলো হলোঃ

১) শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা  দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেওয়া।

২) দেহ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়া। তবে অনেক সময় হাড়ের জোড়া গুলো মোটা হয়।

৩) ভারসাম্যহীনতা এবং পক্ষাঘাত দেখা দেয়।

প্রতিকারঃ

১) অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া।

২) doxycyclin-t সহকারে চিকিৎসা চললে কোনো ধরনের ক্যালসিয়ামজাত খাবার না দেওয়া।

৩) গোসল না করানো।

৪) শুধুমাত্র আক্রান্ত কবুতরটির চিকিৎসা না করিয়ে সবকটির চিকিৎসা করানো।

পাসটিউরেলা মালটোসিডাঃ

এক ধরনের প্যাথোজেনের কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগের লক্ষণসমূহঃ-

১) ডাইরিয়া ও জ্বর। তেমন কোন লক্ষণ ছাড়াই ২৪-৪৮ ঘন্টার মাঝে কবুতর মারা যেতে পারে।

প্রতিকারঃ

১) রোগ নির্ণয় করতে পারলে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা।

২) খাবারের সাথে ভিটামিন ও খনিজ লবণ দেওয়া।

আউল হেড

এটি হেমোফিলিস ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণসমূহঃ-

১) সর্দি হয়, চোখের পাতা মারাত্মক ফুলে পেঁচার মতো দেখায়। এজন্য এর নাম আউল’স হেড।

২) চোখের কনজাংক্টিভা (Conjunctiva) হতে পদার্থ (Mucopurulent) বের হয়।

প্রতিকারঃ

অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান, ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করা।

ডিপথেরিয়া স্মলপক্সঃ 

এ রোগের কারণ বোরেলিয়া কলাম্বরি ভাইরাস। এর লক্ষণসমূহঃ-

১) ত্বক পালকহীন হয়ে যায়।

২) চোখ ও ঠোঁটের আশেপাশে এবং পায়ে ক্ষত হয়।

প্রতিকারঃ

অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। সাথে এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ ও সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর এবং টপিক্যাল আয়োডিন খাওয়াতে হবে। তবে কবুতরের কাছে গেলে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজের নাখ মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কারণ এ রোগ মানুষেও সংক্রামক।

এছাড়াও কবুতরের নানা ধরনের রোগ হতে পারে। ভিটামিন জনিত বা পরজীবির কারণেও রোগ হয়ে থাকে। এ সকল রোগ প্রতিরোধ করতে অবশ্যই কবুতরের খাবারে ছোটবেলা থেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ লবণ সররাহ করতে হবে। এছাড়াও এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য শুঁটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল  চীনাবাদামের খৈল ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। জীব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। যেমনঃ

  • খামারের কবুতরকে বুনো কবুতরের সাথে মিশতে দেওয়া যাবে না।
  • একই ইনজেকশন দিয়ে সকল কবুতরকে ঔষুধ দেওয়া যাবে না।
  • কবুতরের ঘরে ঢোকার জন্য আলাদা পোষাক নির্ধারণ করতে হবে।
  • সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে প্রবেশ করতে হবে।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর চেক আপ করাতে হবে।

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, কবুতর পালন নিঃসন্দেহে অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা। সঠিক নিয়ম মেনে, সাবধানতা অবলম্বন করে এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করে কবুতর পালন করলে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়না। কবুতর পালন কৃষি ভিত্তিক ব্যবসাগুলো‘র মধ্যে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে অনেক বেকার যুবকই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন। আর তাই আপনিও কবুতর পালন করে দূর করতে পারেন নিজের বেকারত্ব, সাহায্য করতে পারেন নিজের পরিবারকে অথবা পূরণ করতে পারেন নিছক শখ।

 

 

তথ্যসূত্রঃ

১) লিংকঃ https://pigeon.bdfort.com/diagnosis-treatment

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button