ই-কমার্স ব্যবসাব্যবসা

ই কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন

বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। ইন্টারনেটের অগ্রগতির সাথে সাথে তাই এই সেবা পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ইন্টারনেটের সেবা গ্রহণ করছে। প্রযুক্তির এই আশীর্বাদের কারণে গোটা বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। প্রতিটি সেক্টরে ইন্টারনেটের ব্যবহার অব্যাহত আছে। বর্তমান দুনিয়ায় তাই এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। ব্যবসা-বাণিজ্যে লেগেছে ইন্টারনেটের ছোঁয়া। ইন্টারনেট যেনো ব্যবসায়ের জন্য এক আশীর্বাদ। 

আধুনিক যুগে ইন্টারনেটের কল্যাণেই গড়ে উঠেছে অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স বাণিজ্য। যা বর্তমান সময়ে ব্যবসাকে আরও সমৃদ্ধ ও ত্বরান্বিত হয়েছে। প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা বেশ প্রসার লাভ করেছে। ই-কমার্স বিজনেসের মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মাধ্যমে অর্ডার করা যায় বিভিন্ন প্রোডাক্ট যা এক সময় মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না। 

বিশেষ করে করোনা মহামারীর পর থেকে ই-কমার্সের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমানেও চলমান। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনেকেই এই সেক্টরে আগ্রহী হচ্ছেন আবার অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়েছেন সফলতা। 

তবে ই-কমার্স বিজনেসে সফলতা যেমন আসে, ঠিক তেমনি আসে বিফলতা। কারণ অনেকেই কোনো প্রকার গাইডলাইন ছাড়াই হঠাৎ করে ই-কমার্স শুরু করেন। এতে সফল হবার থেকে বিফল হবার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। এই খাতে সফলতার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক রাখা জরুরি। 

সূচিপত্রঃ

ই-কমার্স ব্যবসা

ই-কমার্স ব্যবসার গাইডলাইন সম্পর্কে জানার আগে ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। 

ই-কমার্স বিজনেস কে ইলেকট্রনিক বিজনেস বা ইন্টারনেট বিজনেস বলা হয়। যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য-দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব ধরণের লেনদেন ও পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়াকেই ই-কমার্স ব্যবসা বলে।

ই-কমার্স বিজনেসের মাধ্যমে আপনি সহজেই পণ্য কিনতে পারেন। এই ব্যবসা আপনার সময়ের অপচয় কমিয়েছে ও সেই সাথে দূরত্বকে করেছে সীমাবদ্ধ। এ ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। 

আপনি আপনার হাতে থাকা মুঠোফোন দিয়েই প্রয়োজনীয় ও পছন্দমত জিনিসপত্র অর্ডার করতে পারেন এবং তা পৌঁছে যাবে আপনার ঘরের দোরগোড়ায়। তাইতো বর্তমান সময়ে পণ্য কেনার ঝামেলা থাকে না ক্রেতাদের।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন

যেকোনো ব্যবসায় শুরু করার আগে গাইডলাইন মেনে ব্যবসা শুরু করা খুবই জরুরি। যা ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই এই ব্যবসার গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। সেজন্য ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর আগে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা জরুরী। ঠিক করে নিন কোন কাজটি আগে প্রাধান্য পাবে। কারণ এসময় অনেক ধরণের বিষয় মাথায় আসতে পারে। তাই গাইডলাইন অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়া ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন- 

মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন

যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। ই-কমার্স বিজনেসও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স ব্যবসা বর্তমানে বেশ চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। এজন্য অবশ্যই আপনাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি রাখতে হবে। ব্যবসা করতে গেলে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে আর সেগুলো প্রতিরোধ করার মানসিকতাও থাকতে হবে। 

অনেক সময় ব্যবসা করতে গেলে লাভ-ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যা মেনে নেবার মানসিকতা থাকাও প্রয়োজন। আর ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বিক্রি কম হতেই পারে। এক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না। ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। 

ই-কমার্সসহ অন্যান্য বিজনেসে ইনভেস্টমেন্ট খুবই বড় একটি বিষয়। আপনাকে বুঝে-শুনে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। সেজন্য আর্থিকভাবেও প্রস্তুত থাকা জরুরি। ঠিক কি পরিমাণ অর্থ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে সে বিষয়ে অবগত থাকতে হবে।

ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিন

ই-কমার্স ব্যবসায়ের আরও একটি দিকনির্দেশনা হলো ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা। আপনাকে আপনার পরিকল্পিত ব্যবসায়ের ধরণ, পরিধি প্রভৃতি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। আপনি ঠিক কি ধরণের ই-কমার্স বিজনেস করতে চাচ্ছেন সেটি নির্ধারণ করুন। 

প্রোডাক্ট রিসার্চ করুন

কোনো ব্যবসা শুরুর আগে যেমন ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরি, ঠিক তেমনি প্রোডাক্টের বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে। ই-কমার্স ব্যবসায়ের আরও একটি গাইডলাইন হলো প্রোডাক্ট রিসার্চ। কি পণ্য বা পণ্যসমূহ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে এ বিষয়ে ধারণা রাখুন। আর সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট রিসার্চ করা খুবই জরুরি। 

ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করতে চান সেই পণ্যের মার্কেট ভ্যালু, প্রোডাক্ট ডিমান্ড জানতে হবে। বর্তমানে আপনার পণ্য কেমন চলবে আর ভবিষ্যতে এই পণ্যের চাহিদা কেমন থাকবে এসব বিষয়ে রিসার্চ করতে হবে। এসব বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নিয়ে আপানকে পণ্য সিলেক্ট করতে হবে। পণ্যের গুণগত মান, ক্রেতাদের মনস্তাত্ত্বিক দিক, দাম, মার্কেটের একই পণ্যের ভিন্ন প্রতিযোগী ও তাদের পণ্যের দাম, মান প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।

তাছাড়া পণ্যের লাভ-লসের বিষয়টিও রিসার্চ করতে হবে। আপনার নির্ধারিত প্রোডাক্টের মাধ্যমে কতটা লাভ বা লস হবার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। অর্থাৎ, এমন পণ্য নির্ধারণ করুন যার মাধ্যমে ক্রেতা আকৃষ্ট করা সম্ভব। আপনার পণ্য যত ইউনিক ও ক্রিয়েটিভ হবে আপনি তত বেশি প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। এতে আপনার প্রোডাক্ট প্রোফিট বৃদ্ধি পাবার সম্ভবনা বাড়ে।

প্রোডাক্ট সোর্স করুন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স নিঃসন্দেহে একটি নতুন ও চ্যালেঞ্জিং বিজনেস। ই-কমার্স বিজনেসে সফলতা আনতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আপনার নির্ধারিত পণ্যের বাজার ও রিসার্চের পাশাপাশি প্রোডাক্ট সোর্সও খুঁজে বের করতে হবে। কারণ পণ্যের উৎস নির্ধারণ ও সেই সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখা খুবই জরুরি বিষয়। আপনি আসলে কি ধরনের পণ্য নির্ধারণ করেছেন তার উপর নির্ভর করে পণ্যের উৎস খোঁজা। প্রোডাক্ট সোর্সের বিষয়টি অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আপনাকে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পণ্যের দামের উপর নজর দেওয়া জরুরি। আপনি যদি পণ্যের নির্ধারিত উৎস থেকে পাইকারি মূল্যে পণ্য কিনে আনতে পারেন তবে বেশি লাভবান হবেন। কারণ যত কম মূল্যে পণ্যটি কিনতে পারবেন তত কম মূল্যেই পণ্যটি বিক্রিও করতে পারবেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। 

ডোমেইন-হোস্টিং ক্রয়

অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স বিজনেস সাইটগুলোর জন্য ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন। কারণ ছোট-বড় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নামকরণ খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো ব্যক্তিকে যেমন তার নামের মাধ্যমে চিনতে হয়, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানও পরিচিত হয় নামের মাধ্যমেই। প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন নাম বেঁছে নেবার চেষ্টা করুন যা মানুষ সহজেই মনে রাখতে পারে। 

তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয় করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ই-কমার্স বিজনেস সম্পূর্ণটা অনলাইন ভিত্তিক। তাই নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই জরুরি। তবে অনেকেই ফ্রি ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে শুরু করে থাকে যা মোটেই নিরাপদ এবং সুবিধাজনক নয়। ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার প্লাটফর্মগুলোর ফিচারস এবং সিকিউরিটি তুলনামূলক কম থাকে।

ই-কমার্স বিজনেসের নামকরণের ক্ষেত্রে সহজ ও ইউনিক নাম নির্বাচন করুন। নাম সিলেকশনের আগে আপনার নির্ধারিত নামের ডোমেইনটি ফাঁকা আছে কিনা তা খুঁজে বের করুন। সেটি যদি না পান তবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সহজ ও ইউনিক নাম খুঁজে বের করুন। যা মূলত আপনার প্রোডাক্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যেহেতু ই-কমার্স অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাই প্রতিষ্ঠানের নাম ও ডোমেইন নেম এক হওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। 

ডোমেইন-হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনি ভালো ভালো কোনো ডোমেইন-হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানির কাছ থেকে ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় করতে পারেন। GoDaddy, NameCheap এসকল ডেমোইন প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান থেকে ডোমেইন কেনা যায়। ডোমেইন কেনার সময় অবশ্যই ডট কম দেখে কেনার চেষ্টা করবেন। কারণ অধিকাংশ মানুষই ডটকম লিখে সার্চ করেন। 

ডোমেইন নেমের সাথে হোস্টিং এর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল করতে হবে৷ যেমন- আপনার কাস্টমার বেইস, প্রতি দিন বা মাস হিসাবে আপনার সাইটের ট্রাফিক জেনারেট বা আপনার ক্যাপাসিটির উপর বেইস করে হোস্টিং নির্বাচন করতে হবে। তবে ই-কমার্স বিজনেসের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং না কেনা ভালো। এক্ষেত্রে ডেডিকেটেড হেস্টিং কেনা উত্তম। Linux hosting, VPS hosting, Cloud hosting এসব হোস্টিং প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং নিতে পারেন।

আইনি কাজ ও নীতিমালা

ফিজিক্যাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরুর আগে যেমন ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয় তেমনি ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রেও আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এর সাথে ব্যবসায়ের বৈধতা সার্টিফিকেটও লাগবে। মূলত আপনাকে জানতে হবে ই-কমার্স বিজনেসের আইনি কার্যক্রম সম্পর্কে। ই-কমার্স বিজনেসে কিছু আইনি নীতিমালা রয়েছে। যেমন-

  • অনলাইন প্লাটফর্মে যেকোনো পণ্য প্রকাশের  সময় সেই পণ্য সম্পর্কে সব ধরণের তথ্য পণ্যের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। যেমন- শর্তাবলি, পণ্যের দাম, সরবরাহ, ডেলিভারির সময়সীমা নির্ধারণ এবং পণ্য পরিবর্তনের নিয়ম।
  • ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে মাল্টিলেভেল ব্যবসা করা যাবে না। 
  • ডিজিটাল মাধ্যম অনুসরণ করে কোনো অর্থের ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে।
  • কোনো ধরনের মাদক অথাব নেশাদ্রব্য ই-কমার্সে বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
  • গ্রাহক সম্পর্কে কোনো ধরণের তথ্যের প্রয়োজন হলে প্রথমে অবশ্যই গ্রাহকের নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে।
  • ঔষধ জাতীয় যাবতীয় পণ্য বিক্রি করার জন্য ঔষধ প্রশাসনের কাছে থেকে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে কোনো প্রকারের ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না।
  • অর্থের বিনিময়ে ব্যবহৃত হয় এমন পণ্য, যেমন- কোনো ধরনের ভাউচার, গুগল প্লেকার্ড, ক্যাশ ভাউচার ইত্যাদি বিক্রির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে হবে।
  • সাত দিনের মধ্যে গ্রাহকের প্রোডাক্ট ডেলিভারি বা হস্তান্তর করতে হবে নতুবা জরিমানা দিতে হবে।
  • প্রতিটি ডিজিটাল ব্যবসায়ীকে অবশ্যই লাইসেন্স প্রাপ্ত হতে হবে। যেমন- টিআইএন সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, পিআরএ, ইউবিআইডি থাকতে হবে।

ওয়েবসাইট তৈরি করুন

ই-কমার্স বিজনেসের অন্যতম গাইডলাইন হলো ওয়েবসাইট তৈরি করা৷ মূলত দুইভাবেই আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। প্রথমত, যেকোনো মার্কেটপ্লেস থেকে ভালো ফ্রিল্যান্সার হায়ার করা এবং তাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন। আবার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে। তাদের থেকে তাদের ওয়েবসাইট মেকিং সার্ভিসও গ্রহণ করতে পারেন।

বর্তমানে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর অনেক উন্নত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় অনেক ফ্রিল্যান্সারা ঘরে বসেই বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং নিজস্ব উদ্যোগে তাদের দক্ষতাও বাড়ছে।

আপনি আপানার ই-কমার্স বিজনেসের জন্য ফ্রিল্যান্সার হায়ার করতে পারেন। তবে আপনার যদি এ বিষয়ে অর্থাৎ ওয়েব সাইটের বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে ধারণা একদমই শূণ্য থাকে তাহলে মার্কেটপ্লেস থেকে ফ্রিল্যান্সার হায়ার না করা ভালো। এক্ষেত্রে আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি সার্ভিসটি নিতে পারেন । এজন্য ভালো কোনো ওয়েবসাইট তৈরির অফিসে গিয়ে সরাসরি কথা বলে তাদের সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সার্ভিস নেওয়া ভালো। যে অনুযায়ী আপনার কাছে যে প্রতিষ্ঠান ভালো মনে হয় সেখানকার সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। 

ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট মেনু করুন

আপনি যেহেতু ব্যবসার উদ্দেশ্যে ই-কমার্সসাইট চালু করবেন তাই আপনার ই-কমার্স সাইটের নেভিগেশন বা ইউজার মেনু হতে হবে সহজবোধ্য। কারণ যেকোনো ভিজিটর যেনো সহজেই বুঝতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নেভিগেশন মেনুতে ড্রপ ডাউন ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে ভিজিটর প্রতিটি হেডিং এর ভিতরে যে কন্টেন্টগুলো আছে সেগুলো সহজে দেখতে পাববে। আপনি যে প্রোডাক্ট দেখাতে চান ভিজিটরকে তা দেখাতে পারবেন। আবার ভিজিটরও যে জিনিস খুঁজছেন সেটিও সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন।

ওয়েবসাইটে ইনফো এড করুন

ই-কমার্স বিজনেসে ভিজিটরদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ভিজিটররা যেনো সহজেই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য সহজভাবে ওয়েবসাইট সাজান। আপনার অফিস বা যোগাযোগের ঠিকানা পেইজে রাখুন। আপনার হোমপেজের উপরের দিকের ডান অথবা বাম দিকে রাখতে পারেন। তাছাড়া প্রতিটি পেজের ফুটার অথবা সাইড বারে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে রাখতে পারেন। এর ফলে ভিজিটরের জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করা সহজ হবে। আপনার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমকে বিস্তৃত করুন। অর্থাৎ যোগাযোগের জন্য একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করুন। যেমন: ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ই-মেইল কিংবা ফেসবুক পেজ ইত্যাদি ব্যবহার করুন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের এসব ইনফো এড করলে ভিজিটরের জন্যও আপনার সাথে কমিউনিকেশন করা সহজ হবে।

মার্কেটিং করুন

অনলাইন হোক বা অফলাইন বিজনেস উভয় ক্ষেত্রেই মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কারণ প্রচারেই প্রসার। গ্রাহকদের আপনার পণ্য সম্পর্কে অবগত করার জন্য মার্কেটিং করতে হবে৷ নয়তো গ্রাহক আপনার পণ্য সম্পর্কে অবগত হবেন না। ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে মার্কেটিং করতে হবে৷ কারণ প্রতিটি ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা এবং সফলতা পাবার মূলমন্ত্রই হলো মার্কেটিং। আপনি আপনার পণ্যের যত ভালো মার্কেটিং করতে পারবেন ততই আপনার বিজনেসের উন্নতি হবে৷ 

ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রেও অনলাইনে মার্কেটিং এর পাশাপাশি অফলাইনে মার্কেটিং করতে হয়। তাই অফলাইনেও ই-কমার্স বিজনেসের প্রচারণার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিলবোর্ড, পোস্টারিং, মাইকিং করে বিজনেসের মার্কেটিং করতে হবে।

যেহেতু ই-কমার্স অনলাইন ভিত্তিক তাই অনলাইন মার্কেটিং এ বেশি জোর দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে নিজে নিজেই মার্কেটিং করতে পারেন অর্থাৎ ফ্রি মার্কেটিং আবার অর্থের বিনিময়ে অর্থাৎ পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে এক্সপার্ট হায়ার করেও মার্কেটিং করতে পারেন।

বিজনেস সম্পর্কে নানা রকম তথ্য এবং চমৎকার চমৎকার কনটেন্ট ইউটিউব, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে শেয়ার করে প্রচার করতে পারেন। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে তা শেয়ার করতে পারেন। এগুলোতেই আপনি আবার পেইড এড রান করতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছতে পারবেন। প্রোডাক্ট রিলেটেড বিভিন্ন ব্লগ আর্টিকেল লিখে সেগুলো আপনার সাইটে পাবলিশ করতে পারেন। সেগুলোতে প্রপার এসইও করে গুগলের টপে আনা গেলে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন থেকে সরাসরি প্রোডাক্ট রিলেটেড ভিজিটর পেতে পারেন। 

আপনার ই-কমার্সের নামে ফেসবুক পেজে প্রোডাক্টের ছবি সুন্দরভাবে পোস্ট করতে হবে। এর সাথে প্রোডাক্টের বিস্তারিত বর্ণনা থাকা জরুরি। এছাড়া কম সময়ের ভিডিও বানিয়ে পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করতে পারেন। আপনার টার্গেটেড এলাকা, অর্ডিয়েন্স (বয়স, ছেলে নাকি মেয়ে কাস্টমার) এর কাছে আপনার পেজ পৌঁছানোর জন্য কোয়ালটি সম্পন্ন পেজ বুস্ট করতে পারেন। আর এর জন্য প্রয়োজন সুন্দর ব্যানার ডিজাইন। সুন্দর কন্টেন্ট লেখার পাশাপাশি আবার টার্গেটেড অর্ডিয়েন্স নিয়ে রিসার্চ করতে হবে। আবার গুগল র‍্যাঙ্কিং এর জন্য এসইও এক্সপার্ট এর পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি এসব কাজ করা অনেকটাই কঠিন বিষয়, তাই এসবের দায়িত্ব ভালো কোনো সার্ভিস প্রোভাইডারকে পারেন।

টিম তৈরি করুন

ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে টিম বিল্ড করা প্রয়োজন। কারণ এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের পরিধি দিন দিন বড় হতে থাকে। আর কাস্টমার বাড়ার সাথে সাথে আপনার কাজও বৃদ্ধি পাবে এটা স্বাভাবিক। যেহেতু সব কাজ একা করা সম্ভব না তাই একটি ভালো, বিশ্বস্ত ও দক্ষ টিম গঠন করুন। সেই সাথে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। 

ডেলিভারি মেথড যোগ করুন

সঠিক সময়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা হলে কাস্টমারের মন জয় করা সহজ হয়। খুব দ্রুত ও অক্ষত অবস্থায় কাস্টমার যেনো তার প্রোডাক্টটি পেতে পারে সেটি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজটাতে ব্যর্থ হলে রিপিট কাস্টমার পাওয়া যায় না। তাছাড়া নতুন কাস্টমারের সংখ্যাও কমে আসে।

সর্বনিম্ন খরচে উন্নত এবং ভালো সার্ভিসে প্রোডাক্ট নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ডেলিভারি সার্ভিস ও কুরিয়ার সার্ভিস এর শরণাপন্ন হতে পারেন। 

সহজ পেমেন্ট পদ্ধতি যোগ করুন

পেমেন্ট মেথড করতে হবে সহজ পদ্ধতির। কাস্টমাররা প্রোডাক্ট কেনার সময় কোন মাধ্যমে পেমেন্ট করবে সেটার ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে। বর্তমানে অনেক অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। যেমন- বিকাশ, রকেট, নগদ এবং ব্যাংক। এছাড়া কাস্টমাদের সুবিধার্থে ক্যাশ অন ডেলিভারি মেথড চালু করতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, ই-কমার্স ব্যবসা বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। আর সময়ের সাথে সাথে কাস্টমারের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনি যদি সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করে ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেন তাহলে ব্যবসায়ে উন্নতি সম্ভব। তাই অনলাইন ভিত্তিক এই বিজনেস শুরুর আগে সঠিক গাইডলাইন মেনে চলুন।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. E Commerce এবং F Commerce এর মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর: ই-কমার্স ইলেকট্রনিক বা ইন্টারনেট মাধ্যম  ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে। আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসাকে ফেসবুক কমার্স বা এফ-কমার্স বলে। অর্থাৎ ই-কমার্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসা আর এফ-কমার্স শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসা।

২. ই কমার্সের কত ধরনের প্রতিষ্ঠান লক্ষ করা যায়?

উত্তর: ই-কমার্সে কয়েক ধরনের প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। যেমন- ই কমার্স, ই বিজনেস, ই মার্কেটিং, ই রিটেলিং, ই ব্যাংকিং, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি।

৩. বাংলাদেশের প্রথম ই-কমার্স সাইট কোনটি?

উত্তর: বাংলাদেশের প্রথম ই-কমার্স সাইট হলো মুন্সিজি ডট কম। 

৪. ই-কমার্স ক্যাটালগ ম্যানেজমেন্ট বলতে কি বুঝায়? 

উত্তর: ই-কমার্স ক্যাটালগ ম্যানেজমেন্ট হলো একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া। অনলাইনের বিক্রয় মাধ্যমগুলোতে পণ্য উপস্থাপন,পণ্য সম্পর্কিত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন-পণ্যের টাইটেল, বিবরণ, মূল্য, রং ইত্যাদি নিশ্চিত করাকেই ই-কমার্স ক্যাটালগ ম্যানেজমেন্ট বলে।

৫. বর্তমান যুগে ই-কমার্স জরুরি কেন?

উত্তর: বর্তমান সময়ে ই-কমার্স বিজনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করণ, ই-কমার্স বিজনেসের মাধ্যমে পণ্য অর্ডার করলে নিজের বাড়িতে বা নির্দিষ্ট লোকেশনে  ডেলিভারি করা প্রোডাক্ট চলে আসে। আবার কিছু কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোতে রয়েছে আকর্ষণীয় সব ডিসকাউন্টের সুবিধা। ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার সময় অপচয় হয় না  এবং কেনাকাটা আরও সহজতর হচ্ছে। এর মাধ্যমে আপনার কেনাকাটার ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে যাচ্ছে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button