ব্যবসা

চা পাতার ব্যবসা শুরু করুন অল্প পুঁজিতে

বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা রয়েছে। যেগুলো আপনি আপনার বাসায় থেকে করতে পারেন। তার মধ্যে অন্যতম হল চা পাতার ব্যবসা। কিভাবে শুরু করবেন এই ব্যবসা, কী কী প্রয়োজন, ডিলারশিপ বা ডিপো নিবেন কোন কোম্পানী থেকে, লাভ কেমন আর ঝুঁকিও বা কেমন আছে, চা পাতার কিছু কোম্পানীর পরিচিতি সহ আজ আমি আপনাদের চা পাতার ব্যবসার সকল প্রকার আইডিয়া সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। আর আশা করি আপনি পোস্টটি পড়ে চা পাতার ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে পাবেন।

চায়ের পরিচিতি

চা একটি প্রাচীন পানীয়। প্রথমে চা পাতার প্রচলন শুরু হয় চীন দেশ থেকে। তারপর একটু একটু করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই চা পানীয়। থেমে নেই আমাদের বাংলাদেশও। চা পাতা দেখতে এক রকম হলেও এই চায়ের কুঁড়ি থেকে অনেক রকম চা তৈরি হয়।

যেমনঃ ব্ল্যাক টি, গ্রীন টি, হোয়াইট টি-সহ আরো অনেক রকম চা তৈরি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। চা পাতা

এখানে আবার ব্ল্যাক টি অনেক রকমের হয়ে থাকে যেমনঃ বিওপি, জিবিওপি, ওএফ, পিএফ, সিডি ডাস্ট-সহ আরো বেশ কিছু প্রকার। উপরোক্ত প্রকারগুলো চায়ের ফ্যাক্টরি কাটিং থেকে নাম দেওয়া হয়। আপনি হয়তো জানেন যে গরম পানিতে চা দিলেই চা তৈরি হয়ে যায়। আসলে একদমই তা নয় চায়ের গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য কোম্পানীগুলো অনেক পরিশ্রম করে। যেন মার্কেট থেকে কোনরকম কমপ্লেন ছাড়া চা পাতা বিক্রি হয়।

চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে যে সকল জিনিস প্রয়োজন

আপনারা হয়তো সকলেই জানেন চা পাতা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই আপনাকে অবশ্যই সরকারী বিধি-নিষেধ অনুযায়ী চলতে হবে। আপনি যখন চা পাতা বিক্রয় করার চিন্তা করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে চা পাতার খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স নিতে হবে। এটি অনলাইনে বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে পাওয়া যায়।

চা পাতার ব্যবসায় লাইসেন্স নিতে হলে যা প্রয়োজনঃ

  1. ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স
  2. ভোটার আইডি কার্ড
  3. পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  4. দোকানের ঠিকানা
  5. আপনার গোডাউনের ঠিকানা
  6. একটি ই-মেইল এড্রেস
  7. একটি ফোন নাম্বার
  8. আপনার একটি স্বাক্ষরসহ ২৫০০/- টাকা।

এসকল প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে আপনাকে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড যদি আপনার সব কিছু ঠিক পায় তাহলে আপনাকে চা বোর্ড থেকে একটি লাইসেন্স প্রদান করবে। যা প্রতিবছর রিনিউ করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, এখানে আমি একটি লাইসেন্স-এর কথা লিখেছি, কারণ আপনি এখানে চা পাতার মার্কেট প্লেসে ব্যবসা করবেন। এছাড়াও চা পাতার হোলসেল ব্যবসা করতে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ প্রয়োজন।

হোলসেল ব্যবসা করতে যা প্রয়োজন

হোলসেল ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অনেক ধরনের এবং অনেক দামী দামী লাইসেন্স নিতে হবে বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে যেমনঃ

  1. বিডার লাইসেন্স
  2. ব্লেন্ডিং লাইসেন্স
  3. ব্রোকার লাইসেন্স
  4. আমদানি লাইসেন্স ও রপ্তানি লাইসেন্স
  5. বিএসটিআই লাইসেন্স ও ট্রেডমার্ক

বাংলাদেশ চা বোর্ড সর্বমোট ছয়টি লাইসেন্স প্রদান করে। শুরুতে আপনাকে এসব ব্যাপারে ভালোমতো জেনে নিয়ে কাজ করতে হবে যেন কোন রকম ঝামেলায় না পরতে হয়। আপনি প্রথমে খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স নিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে চা পাতা কিনে বিক্রি করতে পারেন। এরপর আপনি ধাপে ধাপে এই ব্যবসার ধারণা পাওয়ার পর সব লাইসেন্স নিয়ে নিজেই একটি কোম্পানী খুলতে পারবেন।

কোথায় থেকে ক্রয় করবেন চা পাতা?

ব্যবসা করার মোটামোটি সবকিছু জানার পাশাপাশি চলুন এবার জেনে নেই কোথায় থেকে চা পাতা ক্রয় করতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক চা কোম্পানী চা পাতা বাজারজাত করছে। আপনি অবশ্যই ভালমানের কোম্পানী থেকে চা পাতা ক্রয় করে তা কমিশন বা এজেন্ট অথবা ডিলারের মতো করে বিক্রি করতে পারেন।

বাংলাদেশের কিছু স্বনামধন্য চা কোম্পানিঃ

ইস্পাহানি চা কোম্পানীঃইস্পাহানি চা কোম্পানী

ইস্পাহানি চা কোম্পানী বাংলাদেশের বড় কোম্পানী। আপনি আপনার জেলায় এক কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কমিশন ভিত্তিতে চা পাতা বিক্রি করতে পারেন।

সিলন চা কোম্পানী

সিলন চা কোম্পানী চা বাজারজাত করছে। এই কোম্পানী আবুল খায়ের গ্রুপ-এর একটি কনজুমার প্রতিষ্ঠান। আপনি সিলন ব্র্যান্ডের চা পাতা ক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকতে পারেন।

ফিনলে চা কোম্পানীঃ

ফিনলে চা কোম্পানী

ফিনলে চা কোম্পানী হল বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন একটি চা কোম্পানী। যেখানে আপনি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চা পাতার ব্যবসা করতে পারেন।

রেবনল চা কোম্পানীঃ রেবনল চা কোম্পানী

রেবনল চা কোম্পানী একটি বাংলাদেশের চা পাতার ব্র্যান্ড। এটি সিলেট থেকে পরিচালিত হচ্ছে। আপনি রেবনল চা কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ডিলার ও ডিপো মূল্যে চা পাতা ক্রয় করে বাজারজাত করতে পারেন।

নাম্বার ওয়ান চা কোম্পানীঃ নাম্বার ওয়ান চা কোম্পানী

নাম্বার ওয়ান বাংলাদেশের একটি চা কোম্পানী। নাম্বার ওয়ান চা কোম্পানী চায়ের সাথে দুধ বাজারজাত করে। তাই আপনি এখান থেকে কমিশন ও ডিলার নিয়েও ব্যবসা করতে পারেন।

এছাড়াও বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক চা কোম্পানী রয়েছে।

চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে মূলধন কত লাগে?

বাজারে আপনি যে ধরনের ব্যবসাই করুন না কেন তার জন্য প্রথমে আপনার প্রয়োজন মূলধন। আপনি যতবেশি মূলধন বিনিয়োগ করবেন ও যত পরিশ্রম করবেন ঠিক তত মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।

তার পরেও অল্প কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি পুঁজি সম্বন্ধেঃ – আপনি যে কোন কোম্পানী থেকে চা পাতা কিনুন না কেন অবশ্যই সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ১০০ কেজি চা পাতা আপনাকে কিনতে হবে। ধরুন ৫০ কেজি চা পাতার ডিলার মূল্যঃ ৫০x২৯০= ১৪৫০০/- টাকা।

এখানে আপনাকে এই ১৪৫০০/- টাকা তিন গুণ করতে হবে। কারণ একটি চালান আপনাকে গোডাউনে রাখতে হবে , একটি চালান আপনাকে মার্কেটে রাখতে হবে আবার আরেকটি চালান আপনাকে স্টকে রাখতে হবে যেটা যে কোন ধরনের দূর্যোগ, হরতাল ও ভিন্ন দূর্ঘটনার জন্য সব সময় স্টক রাখতে হবে এতে করে মার্কেটে চা পাতার শূণ্যতা পূরণ হবে। তাহলে হিসাবটি দাঁড়ায় ১৪০০০x৩= ৪২০০০০/- টাকা।

এটা সর্বনিম্ন হিসাব এখানে দেওয়া হয়েছে। তবে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে এই ব্যবসা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে।

চা পাতার ব্যবসার লাভ বা মুনাফা

ধরুন আপনি একজন ছাত্র অথবা অন্য কোন পেশায় জড়িত। আর আপনি যদি এই চা পাতার ব্যবসা করার ইচ্ছে পোষণ করেন তাহলে আপনি করতে পারবেন অনায়াসে এবং ভাল মুনাফা পাবেন। আপনি উপরোক্ত কোম্পানী থেকে চা পাতা কিনে দিনের যে কোন এক সময় মার্কেটিং করতে পারেন। অবশ্যই আপনার এলাকায় অথবা এলাকা থেকে দূরের হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে ৪০০ থেকে ৫০০ টা চায়ের দোকান আছে। আপনি সেখান থেকে যদি ১০০ টি চা দোকানে আপনার চা পাতার মার্কেটিং করে দিনে গড়ে ৩০ কেজি চা পাতা বিক্রয় করেন তাহলে প্রতি কেজিতে যদি আপনার ৩০ টাকা করে আসতে থাকে, তবে সেই হিসেবে আপনার দৈনিক ইনকাম ৩০x২০/- = ৬০০/- টাকা। এবার মাসিক হিসেব যদি করি তাহলে দাঁড়ায় ৩০x৬০০/- = ১৮০০০/- টাকা। এই হিসাবটি একদমই সর্বনিম্ন একটি হিসাব। আপনি এর থেকে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবেন। চা পাতার ব্যবসার লাভ বা মুনাফা

এছাড়াও আপনি লোক দিয়ে টার্গেটের মাধ্যমে চা পাতা বিক্রি করতে পারেন। যেখানে আপনার টাকা উঠে আসবে এবং আপনার কর্মচারীর বেতনও পরিশোধ করতে পারবেন। এতে করে আপনার পরিবারসহ আরো একটি পরিবারও ভালোভাবে চলতে পারবে।

কোন অঞ্চলে কোন কোন চা পাতা চলে?

এখানে একটি কথা বলে রাখি বাংলাদেশে প্রায় চা পাতার মধ্যে ব্ল্যাক টি সব জায়গায় চলে। আর ব্ল্যাক টি’র মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কাটিং যেমনঃ বিওপি, জিবিওপি, ওএফ, পিএফ, ডাস্ট, সিডি। এখন আপনার মাথায় আসবে কোন অঞ্চলে কোন চা পাতা চলে?

তাই সহজ করে এখানে কিছু জরিপ ভিত্তিক চা পাতা যে অঞ্চলে চলে সেটি হলোঃ বিওপি চা পাতা ঢাকা চট্রগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে চলে। জিবিওপি ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে চলে। ওএফ ও পিএফ বরিশাল ও রংপুর অঞ্চলে চলে। সিডি/ডাস্ট খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে বেশি চলে। তবে বাজার অনুযায়ী বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন শ্রেণীর চা পাতা চলে। আপনি যে অঞ্চলেই চা পাতা বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন না কেন অবশ্যই আপনাকে চা পাতার সাইজ অনুযায়ী চা পাতা কিনে বিক্রি করতে হবে।

চা পাতা ব্যবসার ঝুঁকি

প্রত্যেক ব্যবসায় যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমন এই চা পাতা ব্যবসাতেও রয়েছে নানা রকম ঝুঁকি। কারণ এটি একটি গাছের পাতা থেকে উৎপন্ন একটি পানীয়। কেউ বলবে লিকার শর্ট, কেউ বলবে কালো হয়, কেউ বলবে ঘ্রাণ কমসহ আরো অনেক কিছু। তবে আপনি যদি ভাল কোম্পানী থেকে চা পাতা ক্রয় করে বিক্রি করেন তাহলে আপনি এই ব্যবসায় টিকতে পারবেন। না হলে আপনাকে পুঁজি হারাতে হবে।

যেহেতু চা পাতার ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা এবং অনেকটা ক্রিটিক্যাল। তাই অবশ্যই মার্কেট যাচাই করে এসব ব্যবসা করতে পারেন। এমনকি অনেক প্রতারক চক্র রয়েছে এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। তাই আপনি জেনে-শুনে তারপর, কোন কোম্পানী থেকে চা পাতা কিনবেন সেটি নির্ধারণ করবেন।

আপনি যে কোম্পানী থেকে চা পাতা ক্রয় করেন না কেন অবশ্যই যাচাই করে কিনবেন এবং ভাল করে মার্কেটিং করবেন। ইনশাআল্লাহ আপনি একদিন সফল ব্যবসায়ি হবেন।

শেষ কথা

উপরিউক্ত লেখাগুলো পরে আপনি জানতে পারলেন কিভাবে চা পাতার ব্যবসা শুরু করা যায়, আর অল্প টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে চা পাতার ব্যবসা হতে পারে আপনার জন্য সহজ এবং লাভজনক। আপনি যদি হয়ে থাকেন বাংলাদেশের নব উদ্যোক্তা, তাহলে অল্প পরিশ্রম এবং অল্প পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ব্যবসায়ি এবং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারবেন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button