পরিচয় পত্রমৃত্যু নিবন্ধন

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার নিয়ম ২০২৩

বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিকের যেমন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকা চাই, ঠিক তেমনইটাই মৃত্যু নিবন্ধন সনদেরও ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধনপত্র তৈরি করা উচিত। কারণ না হলে সৃষ্টি হতে পারে নানা সমস্যার। চলুন তবে আজ জেনে নেওয়া যাক নতুন মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য এবং এর সম্পূর্ণ নিয়মাবলী।

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার নিয়ম

শুরুতেই একেবারে আলোচনার মূল অংশে অর্থাৎ নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কিত তথ্যে চলে যাওয়া যাক। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য প্রদান করার সময় তথ্য ইনপুট করার ক্ষেত্রে আপনি নিজেই কিন্তু তা তদারকি করতে পারছেন। তবে মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে তথ্য ইনপুটসহ যাবতীয় কাজ সারতে হচ্ছে অন্য জনকে। এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। 

মৃত্যু নিবন্ধন করতে যা যা লাগবে

অনেকেই নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করতে কি কি লাগবে সে ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যান। সুতরাং চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করতে গেলে কি কি তথ্য এবং কোন কোন কাগজপত্রের দরকার পড়তে পারে।

এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা উচিত। তথ্য প্রদানকারীর জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার বলতে যিনি মৃতের যাবতীয় সঠিক তথ্য দেওয়ার ভুমিকা পালন করছেন তার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্য দিলেও চলবে। 

মৃত্যু সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি 

এবার আসি মৃত্যু সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রমাণাদির বিষয়ে। এক্ষেত্রে মৃত্যু সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দেখাতে হবে। 

  • এখানে কাগজপত্র হিসেবে প্রথমেই প্রয়োজন পড়বে একটি প্রত্যায়নপত্রের। যা মৃতের জানাজা পড়ানো ইমাম কিংবা সৎকারের সাথে জড়িত পুরোহিতের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে হবে। 
  • যদি কোনো কারণে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে সেক্ষেত্রে মৃতের মৃতদেহের ময়না তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র দেখাতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি কাগজপত্রকে সত্যায়িত অনুলিপি হতে হবে। 
  • কবরস্থান কিংবা সমাধিক্ষেত্রে দাফন কিংবা সৎকারের অনুমতি সম্পর্কিত রশিদ কিংবা কাগজের ফটোকপি সাথে নিতে হবে। 
  • সবশেষে দরকার পড়বে মৃত্যু সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়নপত্রের। যা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ক্ষেত্রে ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার দ্বারা প্রদানকৃত হতে হবে। 

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার ফি

সরকারি প্রায় সকল সনদ তৈরি করার ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট ফি চার্জ করা হয়ে থাকে। যারা মৃত্যু সনদ তৈরিতে নতুন তারা জেনে নিন নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার ফি সম্পর্কে।

  • মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যেই সনদ তৈরি করালে কোনো ফি প্রদান করতে হবে না।
  • মৃত্যুর ৪৫ দিনের পর থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে যারা এই সনদ তৈরি করাতে চান তাদের সনদ ফি বাবদ গুনতে হবে ২৫ টাকা।
  • পরবর্তী ৫ বছর অর্থ্যাৎ মৃত্যুর ১০ বছর পর সনদ তৈরি করাতে গেলে ফি বাবদ খরচ পড়বে ৫০ টাকা। 

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন

এবার আমরা জানবো কিভাবে নতুন মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন সে ব্যাপারে। চাইলে আপনিও  ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আবেদন করার প্রক্রিয়া জানতে নিচের ধাপগুলো লক্ষ করুন। 

ধাপ ১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

https://bdris.gov.bd/dr/application এই লিংকে প্রবেশ করুন। মৃত ব্যাক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ করুন এবং নিবন্ধকের কার্যালয় বাছাই করে নিন৷ 

ধাপ ২ঃ তথ্য প্রদান করুন

দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। এগুলি হলো: 

  • মৃত্যুর কারণ
  • মৃত্যু স্থানের ঠিকানা
  • স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
  • আবেদনকারী ও তথ্য প্রদানকারীর তথ্য

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর নাম এবং তাদের জন্ম নিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারের প্রয়োজন পড়বে।

ধাপ ৩ঃ তথ্য যাচাই করুন

এবার আবেদন সাবমিট করে ফেলবার আগে যে তথ্যগুলি দিয়েছেন তা সঠিক কিনা তা ভালোভাবে চেক করে দেখুন। কারণ কোনো তথ্য ভুল দিলে তা পরবর্তীতে বিশেষ করে সনদ বেরিয়ে যাওয়ার পর সংশোধন করতে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হবে। সুতরাং ভালোভাবে চেক করেছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। 

ধাপ ৪ঃ অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করুন 

পরিশেষে সাবমিট করার পালা। সাবমিট করে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। আপনার অ্যাপ্লিকেশন করা শেষ হলে স্ক্রিনে একটি পেইজ দেখাবে। সেখানের একটি অংশে অ্যাপ্লিকেশন নাম্বারও উল্লেখ করা থাকবে। পেইজটি ‘Save as’ অপশন ব্যবহার করে সংরক্ষণ করে রাখুন। অথবা পুরো পেইজটি স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন। পরবর্তীতে প্রিন্ট আউট করার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। আর যদি হাতের কাছে প্রিন্টার মেশিন থাকে তবে তো কোনো কথাই নেই! চট জলদি প্রিন্ট আউট করে ফেলুন৷

মৃত্যু সনদের অনলাইন কপি ডাউনলোড

মোবাইল অথবা কম্পিউটার যেই মাধ্যমেই আবেদন করুন না কেন, প্রতিটি মাধ্যমেই কিন্তু সনদ পত্রের কপি পিডিএফ ফাইল আকারে ডাউনলোড করার অপশন থাকবে। এই পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট আউট করে নিন। পরবর্তীতে এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জমা দিলে তারা আবেদন পত্রের ভিত্তিতে যথেষ্ট দ্রুত সময়ে মৃত্যু সনদ সরবরাহ করবে।

মৃত্যু সনদ এর প্রয়োজনীয়তা

আলোচনার এই অংশে আমরা জানবো মৃত্যু সনদ এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। আপাত দৃষ্টিতে মৃত্যু সনদকে ফেলনা মনে হলে উত্তরসূরীদের জন্যে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট হিসেবে পরিগনিত হবে। কেন তা জানতে হলে মনযোগ সহকারে নিচের পয়েন্টগুলো পড়ুন।

  • পিতা-মাতার ওয়ারিশ হিসেবে কোনো সম্পত্তির মালিকানা পেতে দরকার এই মৃত্যু সনদ।
  • বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হবে এই সনদ।
  • এছাড়াও নির্বাচনী বিষয়াদিসহ বাজেট প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট তহবিল গঠনের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

এই পর্যায়ে নতুন মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখতে চাই। যা আপনার আবেদনকে আরো সহজ করে তুলবে।

মনে রাখবেন মৃত ব্যাক্তির অনলাইন এবং মুদ্রিত জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র না থাকলে আবেদন করা যাবে না। এছাড়াও চেষ্টা করতে হবে প্রথম ৪৫ দিনের মধ্যেই আবেদন করার। যদি কোনো কারণে মৃতের জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মৃত্যু সনদপত্রের জন্য আবেদন করার সময় নতুন জন্ম নিবন্ধনও তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে বাড়তি কোনো ফি এর প্রয়োজন পড়বে না৷

শেষ কথা

নতুন মৃত্যু নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে এই ছিলো সম্পূর্ণ বিস্তারিত। আশা করি এ ব্যাপারে সকল বিভ্রান্তি দূর করতে পেরেছি। এতে করে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। ঝামেলা এড়াতে দায়িত্বর সাথে মৃত্যু নিবন্ধন সময় মতো তৈরি করুন। সুনাগরিক হিসেবে সচেতন হোন এবং ভালো থাকুন। ধন্যবাদ। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button