কম্পিউটার

অপারেটিং সিস্টেম কি? অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি?

আপনি যদি কম্পিউটার, মোবাইল অথবা যেকোনো আজকালকার যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস চালিয়ে থাকেন, তবে আপনি ইতোমধ্যে অপারেটিং সিস্টেম এর সাহায্য নিয়েছেন। আমাদের এই দৈনন্দিন প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে বর্তমান পৃথিবীতে প্রযুক্তির সংস্পর্শে আছে এমন একটি মানুষও অপারেটিং সিস্টেমের আওতার বাইরে নেই। অপারেটিং সিস্টেম নামটি অসখ্য বার শোনা হলেও এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা খুব বেশি মানুষের নেই। কিন্তু যেই সকল সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করে আমাদের কম্পিউটার ভিত্তিক সকল কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে, সে সকল সফটওয়্যার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা রাখাটা এখন সময়ের প্রয়োজন বলা চলে। সে প্রয়োজন মেটাতেই আজকের এই লেখাটি। 

সূচিপত্রঃ

অপারেটিং সিস্টেম কি?

অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন এক ধরনের সিস্টেম সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের সকল হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অন্য সফটওয়্যার গুলোর কার্যক্রম নির্বাহের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীর সাথে কম্পিউটারের সকল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের একটি ইন্টারফেস সৃষ্টি করে।

অপারেটিং সফটওয়্যার কি তা বোঝার পূর্বে আমাদের অবশ্যই সিস্টেম সফটওয়্যার কি তা সম্পর্কে ধারনা নেওয়া উচিত। সিস্টেম সফটওয়্যার হলো মূলত এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যা অন্য একাধিক সফটওয়্যারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ অন্য এক বা একাধিক সফটওয়্যার এই ধরনের সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকে। যেমন আমরা কম্পিউটারে যেই সকল গেম খেলে থাকি সেগুলোর অনেক গুলোই নির্দিষ্ট কিছু ইঞ্জিন এর উপর বানানো। যেমন ইউনিটি ইঞ্জিন (Unity Engine) আনরিয়েল ইঞ্জিন (Unreal Engine)। ’ইঞ্জিন’ হিসেবে পরিচিতি এই সফটওয়্যার গুলো যেমন বিভিন্ন গেমসের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে ঠিক একই ভাবে অপারেটিং সিস্টেম এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যা একটি কম্পিউটারের সকল সফটওয়্যারের জন্যই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। তার পাশাপাশি সফটওয়্যার গুলো কখন কতটুকু হার্ডওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ পাবে তাও পরিচালিত হয় অপারেটিং সিস্টেমের দ্বারা। একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সাথে তার কম্পিউটারের পুরো সংযোগটাই স্থাপন করে ঐ কম্পিউটারে থাকা অপারেটিং সিস্টেম। 

অপারেটিং সিস্টেম সৃষ্টির ইতিহাস

প্রথম দিকের মেইনফ্রেম কম্পিউটারে কোনো অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। সে সময় প্রত্যেক ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব প্রোগ্রাম এবং ডাটা নিয়ে হাজির হতো। সে সব প্রোগ্রাম অথবা ডাটা থাকতো পাঞ্চড পেপার কার্ড, পেপার টেপ অথবা ম্যাগনেটিক টেপে।অতঃপর সময়ের ধারাবাহিকতায় যেভাবে সৃষ্টি হলো অপারেটিং সিস্টেমেরঃ- 

‘৫০ এর দশক 

১৯৫০ এর দশকে টেপ স্টোরেজের ব্যবস্থাপনার জন্যই উদ্ভব হয় অপারেটিং সিস্টেমের। আসল কাজের জন্য প্রথম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। স্থান ছিল আমেরিকার জেনারেল মটরস (General Motors) কোম্পানির রিসার্চ ল্যাব। GM-NAA I/O নামের এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো IBM 704 নামক কম্পিউটারে।

‘৬০-৭০ এর দশক

৬০ এর দশকের মাঝামাঝি অপারেটিং সিস্টেম গুলো ডিস্কে আসা শুরু করে। শেষের দিকে সৃষ্টি হয় বিখ্যাত ইউনিক্স ওএস (Unix OS)। ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো বাজারজাতকরণ করা হয় ইউনিক্স ওএস কে। ১৯৭৮ সালে অ্যাপল বাজারে নিয়ে আসে তাদের প্রথম অপারেটিং সিস্টেম। অ্যাপল ডস ৩.১। 

‘৮০-৯০ এর দশক

৮০-৯০ এর দশককে বলা যায় অপারেটিং সিস্টেমের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। ১৯৮১ সালে মাইক্রোসফট তৈরি করে তাদের প্রথম অপারেটিং সিস্টেম। মাইক্রোসফট ডস। যদিও এটি তৈরি হয়েছিলো সিয়াটলের একটি কোম্পানি থেকে ৮৬-ডস সফটওয়্যার কিনে নেওয়ার মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে বাজারে আসে উইন্ডোজের প্রথম ভার্সন, উইন্ডোজ ১.০। ১৯৯৯ সালে অ্যাপল প্রথম বাজারে আনে তাদের বিখ্যাত ম্যাক ওএস। 

‘২০০০ এর দশক

অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার মুকুটটা অবশ্যই থাকবে মাইক্রোসফটের ‘উইন্ডোজ এক্সপি’ এর দখলে। দ্বিতীয় স্থানটাও দখল করে রেখেছে মাইক্রোসফট এরই ‘উইন্ডোজ ৭’। এ দুটিই বাজারে আসে ২০০০ এর দশকে। যথাক্রমে ২০০১ ও ২০০৯ সালে। এর পর থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরও অসংখ্য অপারেটিং সিস্টেমের। তার পাশাপাশি অ্যাপলের ম্যাক ওএস এবং মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ও এগিয়েছে বহুদূর। 

অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ

অপারেটিং সিস্টেমের উদ্ভবের পর থেকে এখন অবধি অবশ্যই অনেক প্রকারের অপারেটিং সিস্টেমের সৃষ্টি হয়েছে। তার ভেতর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদ নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে লেখার এই অংশে।  

ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Batch Operating System) 

ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হতো ১৯৭০ এর দশকে যখন মানুষ মূলত মেইনফ্রেম কম্পিউটারই ব্যবহার করতো। এক্ষেত্রে একই ধরনের প্রবলেম গুলো সব একটি কম্পিউটারকেই দেওয়া হতো। কম্পিউটার কয়েকটি প্রবলেম কে ক্রমানুসারে সাজিয়ে তার কাজ শুরু করতো। প্রথম কাজটি সম্পন্ন হওয়ার পরেই দ্বিতীয় কাজটি শুরু করতো। 

সুবিধা 

অসুবিধা 

১। প্রথম কাজটি করার পরেই দ্বিতীয় কাজটি শুরু করার জন্য আলাদা রেসিডেন্ট মনিটর থাকতো। ১। এক ব্যাচের একাধিক কাজের মধ্যে প্রথম কাজটিতে অনেক বেশি সময় লাগলে পরের কাজ গুলো হয়তো সম্পন্নই হতো না বা হলেও অনেক সময় লাগতো। 

২। ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারকারীর একের অধিক ইনপুট দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। 

মাল্টিপ্রোগ্রামিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprogramming Operating System) 

মাল্টিপ্রোগ্রামিং অপারেটিং সিস্টেম হলো ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম এরই পরবর্তী রুপ। এটি এমন এক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম যেখানে প্রসেসর সবসময়ই কাজে ব্যস্ত থাকে। সাধারণত কম্পিউটারের কাজের সময়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • আই/ও টাইম (I/O Time)
  • প্রসেসিং টাইম (Processing Time)

আই/ও টাইম এর পূর্ণরুপ হলো ‘ইনপুট/আউটপুট’ টাইম। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর ইনপুট দিতে যেই সময় প্রয়োজন হয় এবং তার পাশাপাশি কম্পিউটারের ফলাফল বা আউটপুট দেখাতে যেই সময়ের প্রয়োজন হয় তাদের একত্রে বলে ইনপুট/আউটপুট অথবা আই/ও টাইম। অপরদিকে কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে কম্পিউটারের কাজ করার জন্য যে সময় প্রয়োজন সেটিই হলো প্রসেসিং টাইম। আর মাল্টিপ্রোগ্রামিং অপারেটিং সিস্টেমে এই আই/ও টাইমের সময়েও প্রসেসর কে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা হয়। এটিই এই অপারেটিং সিস্টেম এর বিশেষত্ব। 

সুবিধা 

অসুবিধা

১। সিপিইউ সবসময়ই ব্যস্ত থাকে বলে এর সঠিক ও পূর্ণ ব্যবহার হয়।

২। রেস্পন্স টাইম কম থাকে।  

১। এটি ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেমেরই পরবর্তী রুপ বিধায় কাজ চলাকালীন ব্যবহারকারীর কোনো ইনপুট গ্রহণ করতে পারে না। 

মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprocessing Operating System) 

মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেমের নামের সাথে মিল রেখেই এটি একই সাথে একাধিক প্রসেসরকে কাজে লাগায়। সাধারণ সিস্টেম গুলোতে সাধারণত একটিই প্রসেসর থেকে থাকে। কিন্তু ভারী কাজের জন্য কিছু বিশেষ সিস্টেমে একাধিক প্রসেসর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সে ধরনের সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেমের জন্ম। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমও আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। 

  • সিমেট্রিকাল (Symmetrical)
  • অ্যাসিমেট্রিকাল (Asymmetrical) 

সিমেট্রিকাল মাল্টিপ্রসেসিং সিস্টেমে সকল প্রসেসরকে সমান হিসাবে দেখা হয়। এখানে কোনো মাস্টার প্রসেসরের উপস্থিতি নেই। এ ধরনের সিস্টেমে একাধিক প্রসেসর একটি মেইন মেমোরির সাহায্যে যুক্ত থাকে। কাজও একেকটি প্রসেসর স্বতন্ত্র ভাবে করে থাকে। অপরদিকে অ্যাসিমেট্রিকাল সিস্টেমে একটি প্রসেসরকে মাস্টার প্রসেসর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ গুলোও মাস্টার প্রসেসরই করে থাকে। 

সুবিধা

অসুবিধা

১। একাধিক প্রসেসর থাকে বিধায় এসব সিস্টেমের কর্মদক্ষতা অনেক বেশি হয়। ১। মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম এর খরচ তুলনামূলক বেশি। 
২। একাধিক প্রসেসর থাকায় নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। একটি প্রসেসরে সমস্যা হলেও অন্য প্রসেসরটি কাজ চালিয়ে যেতে পারে। ২। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম অনেক জটিল হয়ে থাকে। 

মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Multitasking Operating System)

মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেমে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারে। এজন্যই একে বলে ‘মাল্টিটাস্কিং’ (Multitasking)। এই মাল্টিটাস্কিংকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • প্রিএম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং (Preemptive Multitasking)
  • কো-অপারেশন মাল্টিটাস্কিং (Cooperation Multitasking)

প্রিএম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং হলো মাল্টিটাস্কিং এর এমন এক ধরন যেখানে একটি প্রসেস চলাকালীনই অপারেটিং সিস্টেম একটি সফটওয়্যারকে বাধাগ্রস্থ করে প্রসেসরকে অন্য সফটওয়্যারের সাথে শেয়ার করতে পারে। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি কম্পিউটারের জন্য আদর্শ ছিল। অপরদিকে কো-অপারেশন মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে কখনোই কোনো প্রসেস হুট করে থামিয়ে দেওয়া হতো না বা প্রসেসরকে শেয়ার করা হতো না। এটি একজন ব্যবহারকারির জন্যই আদর্শ ছিল।

সুবিধা

অসুবিধা

১। এই সিস্টেম একাধিক ব্যবহারকারীকে সাপোর্ট করতে পারে। 

২। এই সিস্টেমের সুষ্ঠ মেমোরি ম্যানেজমেন্ট রয়েছে। 

১। একাধিক প্রসেসর একই সাথে একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে ব্যস্ত থাকে বিধায় সিস্টেমের তাপমাত্রা বেশ অনেকটাই বেশি হয়। 

নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (Network Operating System) 

নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন এক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম যা ব্যবহৃত হয় মূলত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) এ যুক্ত ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটার, ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইস যেমন রাউটার, সুইচ এসব ব্যবস্থাপনার জন্য। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  • পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম (Peer to Peer System) 
  • ক্লায়েন্ট সার্ভার সিস্টেম (Client Server System) 

পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেমে এক নেটওয়ার্কে যুক্ত সকল কম্পিউটারই একে অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু ক্লায়েন্ট টু সার্ভার সিস্টেমে একটি শক্তিশালী কম্পিউটারকে সার্ভার হিসেবে বিশেষায়িত করা হয় এবং তার মাধ্যমে সকল কম্পিউটার যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। সার্ভার কম্পিউটারের ব্যবহারকারী চাইলে যেকোনো কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ অথবা তাকে নেটওয়ার্ক থেকে বিছিন্ন করতে পারে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সিস্টেম খুবই জরুরী। আর এই সিস্টেম ব্যবস্থাপনার জন্যই রয়েছে নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম। 

সুবিধা

অসুবিধা

১। এসব সিস্টেমে সার্ভার ও ক্লায়েন্ট এই দুই ভাগে ভাগ করলে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক কম হয়। ১। তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা বেশ কঠিন। 
২। খরচ তুলনামূলক কম। ২। যেকোনো একটি কম্পিউটার বা ডিভাইস নষ্ট হয়ে গেলেই পুরো সিস্টেমে তার প্রভাব পড়ে। 

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real-time Operating System) 

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম এর ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজের জন্যই নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা থাকে। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার সামরিক খাতেই বেশি দেখা যায়। নমনীয়তার উপর ভিত্তি করে এই অপারেটিং সিস্টেমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  • হার্ড রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Hard Real-time Operating System) 
  • সফট রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Soft Real-time Operating System) 
  • ফার্ম রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Firm Real-time Operating System) 

ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System) 

ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম এর ধরন কিছুটা এক। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম থেকে অনেক বেশি বড়, জটিল এবং স্পর্শকাতর একটি জিনিস। এই সিস্টেমে একাধিক কম্পিউটার একটি একক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে। এতে একাধিক সেন্ট্রাল প্রসেসর থাকে যেগুলো একাধিক ব্যক্তিকে একাধিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করেন। মূলত একাধিক কম্পিউটার একই রিসোর্স শেয়ারের মাধ্যমে অনেক দক্ষতার সাথে ব্যবহারকারীদের সেবা দিয়ে থাকে। এতে যার যতটুকু রিসোর্স দরকার ততটুকু রিসোর্সই ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের কার্যনীতি সাধারণত মেইনফ্রেম কম্পিউটার অথবা মিনি কম্পিউটারে দেখা যায়।

সুবিধা

অসুবিধা

১। রিসোর্স শেয়ারিং এর মাধ্যমে আলাদা আলাদা সিস্টেম তৈরি করার খরচ অনেকটাই কমে যায়। ১। এই অপারেটিং সিস্টেম এর ডাটাবেজ অনেক বেশি জটিল।  
২। সিস্টেমের একটি কম্পিউটারে সমস্যা হলেও বাকি কম্পিউটার গুলোতে তার খুব একটা প্রভাব পড়ে না। ২। এই সিস্টেম গুলো প্রতিষ্ঠান বাদে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। 

অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ 

অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ গুলো আসলে কার্যকর হয় এর বিভিন্ন অংশ দ্বারা। অপারেটিং সিস্টেম এর একেকটি অংশ একেকটি কাজে নিয়োজিত থাকে। কোন অংশটি কি কি কাজ করবে তাও খুব নির্দিষ্ট ভাবে কোড করা থাকে। অপারেটিং সিস্টেম এর এই অংশ গুলো থেকেই এর কাজ সম্পর্কে বেশ পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়। অপারেটিং সিস্টেম এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ ও তাদের কাজ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (Process Management) 

একটি প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের একাংশ যখন প্রধান মেমোরিতে লোড  হয় তখন তাকে প্রসেস বলে। যেকোনো প্রসেস চলার জন্য অপারেটিং সিস্টেমকে অবশ্যই ঐ প্রসেসের জন্য কিছু রিসোর্স ঠিক করে দিতে হয়। যেমন সিপিইউ, মেইন মেমোরি, ফাইল, স্টোরেজ ইত্যাদি। কোন প্রসেস এর জন্য কম্পিউটারের কতটুকু রিসোর্স দিতে হবে তাই ঠিক হয় এই প্রসেস ম্যানেজমেন্টের সাহায্যে।

আই/ও ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট (I/O Device Management) 

একটি কম্পিউটারের অনেক ইনপুট আউটপুট ডিভাইস থাকে। এ সকল ডিভাইস থেকে আসা সমস্ত ইনপুটকে প্রসেস এ রুপান্তরের দায়িত্ব আই/ও ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট এর। ইনপুট অনুযায়ী প্রসেস সম্পন্ন  হওয়ার পর তা আউটপুট ডিভাইসের সাহায্যে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরাটাও ডিভাইস ম্যানেজমেন্টের কাজ। 

ফাইল ম্যানেজমেন্ট (File Management) 

ফাইল ম্যানেজমেন্ট অপারেটিং সিস্টেম এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। যেকোনো কম্পিউটারের বিপুল পরিমাণে ডাটা নিয়মিত তৈরি হয়, মুছে দেওয়া হয় আবার সংরক্ষণও করা হয়। ফাইল তৈরি করা থেকে শুরু করে তা সংরক্ষণ করা, তা মেমোরির কোথায় থাকবে তা নির্ধারণ করা, ডিরেক্টরি তৈরি করা অথবা মুছে ফেলা এ সকলই হয় ফাইল ম্যানেজমেন্টের সাহায্যে। কোনো স্থানে ফাইলের ব্যাকআপ রাখতে হলেও অবশ্যই তা ফাইল ম্যানেজমেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত। 

মেইন মেমোরি ম্যানেজমেন্ট (Memory Management)

অনেকেই মেমোরি ম্যানেজমেন্ট বলতে বোঝেন স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ কোথায় কিভাবে ফাইল রাখা হবে তা। কিন্তু সেটি আসলে ফাইল ম্যানেজমেন্টের ভেতরে পড়ে। কম্পিউটারের পরিভাষায় মেইন মেমোরি হলো র‍্যাম (RAM)। এই র‍্যামকেই প্রধান মেমোরি ধরে কাজ করতে হয় এবং প্রতিটি চলমান প্রসেসই র‍্যামের উপর নির্ভরশীল থাকে। র‍্যাম এমন এক ধরনের ভলাটাইল (Volatile) স্টোরেজ যা অতি উচ্চ গতিসম্পন্ন এবং এর থেকে সিপিইউ এর সাথে ডাটা শেয়ার করা খুবই সহজ। তাই কোন প্রসেস মেইন মেমোরিকে কখন কতটুকু ব্যবহার করতে পারবে সেটি ঠিক করাই মেইন মেমোরি ম্যানেজমেন্টের কাজ। 

সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট (Security Management) 

কম্পিউটারের সকল তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করাই সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্টের কাজ। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের এক ব্যবহারকারীর তথ্য যেন আরেক ব্যবহাকারীর কাছে না যায় সেটি নিশ্চিত করে সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট। এছাড়াও ম্যালওয়ারের আক্রমণ থেকে বাচার পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। 

জনপ্রিয় কিছু অপারেটিং সিস্টেম

বর্তমানে অসংখ্য অপারেটিং সিস্টেম থাকলেও জনপ্রিয় সিস্টেম খুব বেশি নেই। হাতে গোণা দুই তিনটে অপারেটিং সিস্টেমই পুরো পৃথিবীর অপারেটিং সিস্টেমের বাজার দখল করে রেখেছে। 

মাইক্রোসফট উইন্ডোজ

পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অবশ্যই যার নাম সবার মাথায় আসবে সেটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ। বিল গেটসের প্রতিষ্ঠান অপারেটিং সিস্টেম বানাতে এতটাই সফলতার পরিচয় দিয়েছে যে, বিশ্বের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ এখনও অপারেটিং সিস্টেম আর উইন্ডোজ এই দুইটিকে সমার্থক শব্দ হিসেবেই জানে। বর্তমানে পৃথিবীর সকল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর শতকরা ৮০ ভাগই উইন্ডোজ ব্যবহারকারী। মূলত উইন্ডোজ এক্সপি এর পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে সর্বশেষ উইন্ডোজ ভার্সন হলো উইন্ডোজ ১১ যাতে মাইক্রসফট মোবাইলের কিছু অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। 

ম্যাক ওএস 

অ্যাপলের তৈরি ম্যাকবুক সবার ব্যবহার করার সামর্থ্য না থাকলেও কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা এর সাথে ভালই পরিচিত। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এর মৌলিক পার্থক্য হলো উইন্ডোজ যেকোনো কোম্পানির তৈরি কম্পিউটারেই কাজ করার মতো করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ম্যাক ওএস শুধু মাত্র আইম্যাক (iMac) অথবা ম্যাকবুক (Macbook) কম্পিউটারেই চালু হয়ে থাকে। বর্তমানে সকল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০% ম্যাক ওএস ব্যবহার করছে। 

লিনাক্স

মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস এর সাথে লিনাক্স এর মৌলিক পার্থক্য হলো লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। ওপেন সোর্স অর্থ হলো এই অপারেটিং সিস্টেম কোনো কোম্পানির সম্পত্তি নয়। বরং সারা পৃথিবীর অসংখ্য প্রোগ্রামার বিনা পারিশ্রমিকে এটি তৈরি করেছে। এর রয়েছে অসংখ্য ভার্সন এবং সব কয়টিই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এটিও সাধারণ যেকোনো কম্পিউটারেই ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে এর মার্কেট শেয়ার ২%। 

অপারেটিং সিস্টেমের ইন্টারফেস

আমরা ইতোমধ্যে জানি যে অপারেটিং সিস্টেম মূলত ইউজারের সাথে কম্পিউটারের একটি ইন্টারফেস। কিন্তু এই ইন্টারফেসের ধরন কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। 

  • গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (Graphical User Interface – GUI) 
  • কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (Command Line Interface – CLI) 

গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (Graphical User Interface – GUI)

গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেসের অর্থ স্বভাবতই ঐ ইন্টারফেসটি অনেকটাই গ্রাফিক্স সম্বলিত। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী বিভিন্ন গ্রাফিকাল ফাংশন বা ফিচারের মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে থাকেন। যেমন উইন্ডোজে প্রতিটি ফোল্ডারের জন্য নানা আইকন আছে। ব্যবহারকারী চাইলেই বিভিন্ন স্থানে ক্লিক করে অথবা মাউস দিয়ে ড্র্যাগ করে অনেক কিছু করতে পারেন। ফলে পুরো অভিজ্ঞতাটাই অনেক সহজ হয়ে যায়। এই ধরনের গ্রাফিক্স নির্ভর ইন্টারফেসকেই বলে জিইউআই (GUI)। এই ধরনের অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকেই বলে উইন্ডোজ এতটা জনপ্রিয়। 

কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (Command LIne Interface) 

কমান্ড লাইন ইন্টারফেসও এক ধরনের ইন্টারফেস যেখানে গ্রাফিকাল কমান্ডের বদলে টাইপ করে করে কমান্ড দিতে হয়। সাধারণত লিনাক্স (Linux) অপারেটিং সিস্টেমে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উইন্ডোজে যেমন একটি নতুন ফোল্ডার খুলতে চাইলে মাউসে রাইট ক্লিক করে কার্সর ‘New’ এর উপর নিলেই নতুন জিনিস তৈরি করার একটি লিস্ট ভেসে উঠে। সেখান থেকে ‘Folder’ সিলেক্ট করে দিলেই একটি ফোল্ডার তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু লিনাক্সে বা কমান্ড লাইন ইন্টারফেসে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয় টাইপ করে। সেখানে প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোড রয়েছে। আপনি ফোল্ডার শুরু থেকে যা কাজই করতে চান, আপনাকে টার্মিনাল অ্যাপ্লিকেশন (কোড লেখার স্থান) খুলে একটি নির্দিষ্ট কমান্ড টাইপ করতে হবে। 

অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে এত ঝামেলা হলে এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবেন কেন। সত্যি বলতে সাধারণ মানুষেরা লিনাক্স অতটা ব্যবহার করেন না। কিন্তু কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা অনেকেই লিনাক্স পছন্দ করেন কারণ অনেক কাজের ক্ষেত্রে লিনাক্স অনেক বেশি দ্রুত ও কার্যকরী। 

শেষকথা

কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হলো এর সকল কার্যক্রমের ভিত্তি। কোনো কম্পিউটারের পক্ষেই সম্ভব না একটি অপারেটিং সিস্টেম এর অনুপস্থিতেই কার্যকর হওয়া। যদিও সাধারণ ব্যবহারকারীরা অপারেটিং সিস্টেম এর কাজে অতটা জড়িত হন না, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকলে তা পুরো কম্পিউটার সম্পর্কেই ধারনা অনেক বাড়িয়ে দেয়। অপারেটিং সিস্টেমকে নিসন্ধেহে কম্পিউটারের সকল কার্যক্রমের ভিত্তি বলা যায়। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। অপারেটিং সিস্টেম কি ক্রয় করতে হয়?

উত্তরঃ হ্যা, অপারেটিং সিস্টেম ক্রয় করতে হয়। বাংলাদেশে ৯৯ ভাগ কম্পিউটারই পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে চললেও ক্রয় করা অপারেটিং সিস্টেম সবসময়ই ব্যবহারকারীকে বেশি সুবিধা দেয়।

২। ম্যাকবুক ছাড়া কি ম্যাক ওএস ব্যবহারের সুযোগ আছে?

উত্তরঃ না, ম্যাকবুক ছাড়া ম্যাক ওএস ব্যবহারের সুযোগ নেই।

৩। এক কম্পিউটারে একই সাথে কি দুইটি অপারেটিং সিস্টেম চালানো যায়?

উত্তরঃ একই মূহুর্তে চালানো যায় না। কিন্তু একই সাথে এক কম্পিউটারে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখা যায়।

৪। অপারেটিং সিস্টেম ক্রাশ করলে কি করবো?

উত্তরঃ অপারেটিং সিস্টেম ক্রাশ করলে কয়েকবার চালু করে দেখার চেষ্টা করা ভাল। এতে অনেক সময় নিজে নিজেও ঠিক হয়ে যায়। নাহলে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে হবে। 

 

 

 

তথ্যসূত্র

১। টিউটোরিয়ালস পয়েন্ট (১)

২। টিউটোরিয়ালস পয়েন্ট (২) 

৩। গুরু ৯৯ (১)

৪। জিসিএফ গ্লোবাল 

৫। জাভাটিপয়েন্ট (১)

৬। জাভাটিপয়েন্ট (২)

৭। জাভাটিপয়েন্ট (৩) 

৮। মাই গ্রেট লার্নিং

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button