ইনস্যুরেন্সজীবন ও জীবিকাব্যাংকিং

ইন্সুরেন্স কি? ইন্সুরেন্স এর সুবিধা অসুবিধা এবং প্রয়োজনীয়তা

সুলতান সাহেব খুব শখ করে ধানমন্ডিতে একটা বাড়ি কিনেছেন । সস্ত্রীক সেই বাড়িতে উঠলেনও। সপ্তাহ খানেক পরে তারা অফিসের ট্যুরে কক্সবাজারে গেলেন। ফিরে এসে দেখলেন তাদের সাধের বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুজনেই আক্ষেপ করলেন, ইশ যদি আজ তাদের একটা বীমা থাকতো তাহলে কী ভালোই না হতো!মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ভরপুর। তাই এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করতে মানুষ জন্ম দিয়েছে নতুন এক ব্যবস্থার, যার নাম ” বীমা “।

“বীমা” এই শব্দটির সঙ্গে আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা বীমা বলতে আসলে কী বোঝায় এবং এটি আমাদের জীবনে ঠিক কি ভূমিকাই বা পালন করে! তাহলে চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই বীমার আদ্যপান্ত।

ইন্স্যুরেন্স বা বীমা কি?

বীমা বা ইংরেজিতে যাকে ইন্স্যুরেন্স বলে এটি মূলত হলো দুই পক্ষের মধ্যে করা একটি আইনী চুক্তি। এই চুক্তি মূলত বীমাকারী কোম্পানি এবং বীমাকৃত ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এখানে বীমা কোম্পানি গুলি মূলত বীমাকৃত ব্যক্তি যে প্রিমিয়াম প্রদান করেন তার ভিত্তিতে ঐ ব্যক্তির আকস্মিক কোনো বিপদে ঝুঁকি বহন করার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। খুব সহজ কথায় বলতে গেলে, বীমা হলো একধরনের ঝুঁকি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া। বীমার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার ঝুঁকি বীমা কোম্পানিকে হস্তান্তর করেন। আর, হঠাৎ অপ্রত্যাশিত যে কোনো ঘটনার ফলে যদি সেই ব্যক্তি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে বীমা কোম্পানি তাকে বা তার পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে ঝুঁকি বহন করে থাকে। আর এই বীমার ব্যবস্থার করার জন্যে একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন, তাকেই বলা হয় ‘প্রিমিয়াম’।

একজন মানুষ তার জীবন থেকে শুরু করে নিত্যদিনে ব্যবহৃত স্মার্টফোন পর্যন্ত বিভিন্ন জিনিসের উপর বীমার ব্যবস্থা করতে পারেন। অর্থাৎ, এক কথায় বলা যায় যে, একজন ব্যক্তির কাছে যাই-ই গুরুত্বপূর্ণ তাই-ই সে বীমার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বীমার এই কার্যক্রমকে “আর্থিক সুরক্ষা নীতি”র আকারে বর্ণিত একধরণের চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্ট হিসেবে বলা যেতে পারে। এই নীতি অপ্রত্যাশিত যেকোনো ঘটনা থেকে হওয়া আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বীমাকৃত ব্যক্তিকে রক্ষা করে থাকে। 

বীমার উপাদান

এবার জেনে নেওয়া যাক একটি বীমা ঠিক কতটি উপাদানের উপরে নির্ভরশীল থাকে। সাধারণত একটি বীমা পলিসির চারটি মূল উপাদান থেকে থাকে। সেগুলো হলোঃ- 

১. প্রিমিয়াম

খুব সহজ কথায় বলতে গেলে প্রিমিয়াম হলো একটি বীমার মূল্য। সাধারণত মাসিক খরচ ভিত্তিতে প্রিমিয়াম হিসেব করা হয়ে থাকে। যেকোনো বীমা পলিসিতেই প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় মূলত ব্যবসায়ে কতটুকু ঝুঁকি বা রিস্ক আছে তার উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে একজন ব্যক্তির কোন ধরণের বীমা কাভারেজ প্রয়োজন তা নির্ধারিত হয়। উদাহরণ হিসেবে ধরুন সুলতান সাহেব এবার একটি গাড়ি কিনলেন। কিন্ত তার দূর্ঘটনায় পতিত হবার পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। অপরদিকে রহিম সাহেবও একটি গাড়ি কিনলেন কিন্তু তিনি একজন সাবধানী চালক। সুতরাং সুলতান সাহেব ও রহিম সাহেবের ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম অবশ্যই একভাবে নির্ধারণ করা যাবেনা কারণ দুজনের ঝুঁকির মাত্রা একদমই আলাদা! 

২. পলিসি লিমিট

একটি বীমার জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ইন্স্যুরেন্সকৃত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ যত টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে তাই হলো পলিসি লিমিট। এখানে পলিসি হলো বীমা। আর পলিসি লিমিট মানে স্বভাবতই হলো বীমার সীমা বা বীমাতে কত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তার সীমা। উল্লেখ্য যে, আপনি যদি কোনো কোম্পানি থেকে কোনো বীমার বিপরীতে বেশি পরিমাণের ক্ষতিপূরণ চান, অর্থাৎ উচ্চ পলিসি লিমিট চান, তাহলে আপনাকে মাসিক প্রিমিয়ামও বেশি দিতে হবে।  

৩. ডিডাক্টিবল বা বাদ

প্রতিটি ইন্স্যুরেন্স পলিসির একটি ডিডাক্টিবল রয়েছে যাকে বাংলায় বলে ‘বাদ’। এই ডিডাক্টিবল বা বাদ দিয়ে মূলত টাকার একটি পরিমাণ বোঝায়। আমরা জানি যে একজন বীমাকারি প্রতি মাসে মাসে প্রিমিয়াম দিয়ে থাকেন। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে হলে তাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ আগে কোম্পানিতে জমা করতে হবে। তবেই তিনি ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। এই নূন্যতম অর্থের পরিমাণকেই বলে ডিডাক্টিবল বা বাদ। 

৪. বিশেষ বিবেচনার বিষয় 

অনেক সময় বিশেষ বিবেচনার কিছু বিষয় থাকে। যেমন কারোর হয়তো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা আছে। তারা হয়তো স্বাস্থ্য বীমা করাতে চান সেক্ষেত্রে তাদের জন্য বীমা পলিসি এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত যেখানে ডিডাক্টিবল মূল্য কম রয়েছে। যদিও, এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে বাৎসরিক যে প্রিমিয়াম দেওয়া লাগে তা তুলনামূলকভাবে উচ্চ ডিডাক্টিবলযুক্ত ইন্স্যুরেন্স পলিসির বাৎসরিক মোট প্রিমিয়ামের চেয়ে বেশি। তবে কমখরচে সারা বছর চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় এমন বীমা নেওয়া এক্ষেত্রে সবার জন্যেই শ্রেয়।

ইন্স্যুরেন্স এর প্রকারভেদ

চলুন এবার জেনে নিই, কয় ধরনের বীমা একজন ব্যক্তি করতে পারেন। বীমা ব্যবস্থা মূলত শুরু হয়েছিল “নৌ বীমা”র মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বীমা আরও নানাভাবে বিবর্ধিত হয়েছে। বীমাকে মূলত দুটো মোটা দাগে প্রথমত ভাগ করা যেতে পারে।

  • কারবারি দৃষ্টিকোণ থেকে
  • ঝুঁকির দৃষ্টিকোণ থেকে

এখানে এখন আমরা দুটি ভাগকে সমন্বয় করে বাস্তবে যে কয়ধরনের বীমা দেখা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো। কারবারি ও ঝুকির দৃষ্টিকোণকে সমন্বয় করলে বীমাকে আরও দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো :

জীবন বীমা

নামের মধ্যেই এই বীমার কাজ লুকিয়ে আছে। এধরনের বীমার মূল কাজই হল একজন মানুষের জীবনকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে সুরক্ষা দেওয়া। এই বীমাপলিসি বীমাকৃত ব্যক্তি বা পলিসিহোল্ডারের মৃত্যুর সময় বা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ব্যক্তির নমিনিকে দিয়ে থাকে। বর্তমানে জীবন বীমা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বীমা। জীবন মানুষের কাছে সবচেয়ে দামি সম্পত্তি। এই সম্পত্তির যদি সুরক্ষা না দেওয়া যায় তাহলে অন্য যেকোনো সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা অর্থবহ হয়ে ওঠে না। এই ধরণের বীমা পলিসিহোল্ডারের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারকে সুরক্ষা প্রদান করে। আবার বৃদ্ধ বয়সে যখন উপার্জনের ক্ষমতা থাকেনা তখনো একজন মানুষকে জীবনের এবং অর্থের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে এই বীমা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কেন এই বীমা এতো বেশি জনপ্রিয়!

সাধারণ বীমা

জীবনবীমা বাদে অন্যান্য সকল বীমা ব্যবসা সাধারণভাবে পরিচালিত হয় বলে একে সাধারণ বীমা বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের বীমায় বীমা  কোম্পানিগুলো পলিসিহোল্ডারের যে তৃতীয় পক্ষের কাছে ধার রয়েছে, সেই ধারের অর্থ পরিশোধ করে থাকে। জীবনবীমা বাদে অন্যান্য প্রায় সব বীমাকেই সাধারণ বীমার আওতাভুক্ত করা যায়। এবার আমরা কয়েক ধরনের সাধারণ বীমা নিয়ে কথা বলবো।

১. সম্পত্তি বীমা

এই বীমার অধীনে ব্যক্তির সম্পত্তিকে একটি নির্দিষ্ট ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়া হয়। নানাধরনের দুর্যোগ, অগ্নিকান্ড, চুরি বা অন্যান্য যেকোনো ভাবে সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হারিয়ে গেলে এই বীমার আওতায় ব্যক্তি সুরক্ষা পেতে পারে। 

২. মেরিন বীমা

এই বীমার অধীনে সমুদ্রের জাহাজগুলো সুরক্ষিত থাকে।  ধরুন একজন ব্যক্তির কোটি টাকা দিয়ে কেনা জাহাজ চলতে চলতে হঠাৎ বড়ো কোনো পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়ে গেলো, তখন এই মালিক এই বীমার আওতায় ক্ষতিপূরণ পাবে। সমুদ্রে পাথরের সাথে ধাক্কা থেকে শুরু করে, শত্রুর আক্রমণ সবক্ষেত্রেই এই বীমা কার্যকরী। এই বীমা দু ধরণের হয় – ইনল্যান্ড ও ওশান মেরিন বীমা। এখানে জাহাজ, মালবাহী জাহাজ ও জাহাজে থাকা মালের উপরেও বীমা কার্যকর করা যায়।

৩. অগ্নি বীমা

আগুন মানবজীবনে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু কখনো কখনো এই আগুনই হয়ে যায় ত্রাস।  দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও দুর্ঘটনায় বা যেকোনো ভাবে লেগে যাওয়া আগুনের দ্বারা সম্পত্তির যে ক্ষতি হয় তা এই বীমার মাধ্যমে কভার করা হয়ে থাকে।

৪. সামাজিক বীমা

সমাজের সমতা আনার জন্য এই বীমার জন্ম। এই বীমায় সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়। যারা হয়তো পর্যাপ্ত  প্রিমিয়াম দিতে অক্ষম তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয় সামাজিক বীমার মাধ্যমে। পেনশন পরিকল্পনা, অক্ষমতা বেনিফিট, শিল্প বীমা, বেকারত্ব সুবিধা, অসুস্থতা বীমা প্রভৃতি সামাজিক বীমার বিভিন্ন প্রকার।

৫. স্বাস্থ্য বীমা

স্বাস্থ্য বীমা এমন একটা বিশেষ ধরনের বীমা যেখানে একজন ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের সুরক্ষা দেওয়া হয়। তবে হ্যাঁ এমন নয় যে সকল বীমাকারী ব্যক্তির জন্য এই সুরক্ষা সমান। একজন ব্যক্তি কত বেশি প্রিমিয়াম দিচ্ছেন এবং তার পলিসি লিমিটের ওপরে নির্ভর করে বীমা কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য বা চিকিৎসার খরচ প্রদান করে থাকে। 

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট যে ৭৯টি বীমা কোম্পানি বীমা সেবা দিচ্ছে যার মধ্যে ৪৬টি সাধারণ বীমাকারী কোম্পানি রয়েছে । সাধারণ বীমাকারী কোম্পানির মধ্যে ১টি সরকারী এবং ৪৫টি বেসরকারি মালিকানাধীন। একমাত্র সরকারি সাধারণ বীমাকোম্পানিটির নাম “সাধারণ বীমা কর্পোরেশন”। বাংলাদেশের বীমা কোম্পানি গুলি ” বীমা আইন, ২০১০” এর আওতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। 

ইন্স্যুরেন্স এর সুবিধা

ইনস্যুরেন্স বা বীমা কী, বিমার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে তো জানলেন। এবারে জানার পালা,বীমা পলিসির সুবিধাগুলি কি কি। 

১. ব্যক্তিগত সুবিধা

যখন কোনো দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন বা মারা যান, তখন সেই পরিবারকে যেতে হয় দুর্বিষহ সময়ের মধ্যে দিয়ে। বীমা এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও এমন পরিবারকে আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারে। জীবন বীমা, অগ্নিবীমা এধরনের ঘটনার খুব সাধারণ উদাহরণ। একজন বীমা কারীর পরিবার বীমার ফলে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি ভোগ করে থাকেন।

  • বীমাকারীর মৃত্যুর পরে তার উত্তরাধিকারীগণ বীমা সুরক্ষার নিশ্চয়তা পান। কেননা আমরা জানি বীমার অন্যতম কাজই হলো সুরক্ষা প্রদান।
  • কোনো বন্ধকি সম্পত্তি বীমা করা থাকলে, বীমা সেটিরও সুরক্ষা বিধান করে থাকে।
  • পারিবারিক চাহিদা পূরণ, বৃদ্ধ বয়সের আর্থিক সহায়তা, সন্তানের শিক্ষা, বিয়ে ইত্যাদি নানাবিধ কাজে বীমা আর্থিক নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।

২. ব্যবসায় সুবিধা

ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে থাকে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা। তাই তো ব্যবসাকে বলা হয়ে থাকে মূলত ঝুঁকির খেলা। যেমন হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে, কাঁচামালের যোগানে ঘাটতি পড়লে বা কোনো যুদ্ধ বা অস্থিতিশীল অবস্থার কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়লে তার জের দেখা যায় দেশীয় অর্থনীতিতেও। এছাড়াও হরতাল, যানবাহনের অচলাবস্থা, গুদাম আগুন লাগা সহ অনেক কারণেই ব্যবসা ঝুকির মুখে পড়তে পারে। বীমার সাহায্য নিয়ে এসব ঝুঁকি সহজেই মোকাবিলা করা যায়। ব্যবসার ক্ষেত্রে বীমা নিম্নলিখিত ভাবে সাহায্য করে থাকে।

  • আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে ব্যবসায়ে ক্ষতির ঝুঁকি কমায়।
  • ব্যবসা বীমা করা থাকলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা ও সুবিধা বৃদ্ধি পায় । রপ্তানি বীমা, অগ্নিবীমা ইত্যাদি ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বীমার উদাহরণ।

৩. অর্থনীতিতে সুবিধা

একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি নির্ভর করে দেশটির অর্থনীতির উপর। অর্থনীতিতে বীমা নিম্নলিখিত ভাবে সাহায্য করে থাকে।

  • বীমা কোম্পানিগুলি প্রিমিয়াম হিসেবে যে অর্থ নিয়ে থাকে তা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলি অর্থনীটিতে ভূমিকা রাখে।
  • বীমা কোম্পানিগুলি পরোক্ষভাবে মূলত রাষ্ট্রের সম্পত্তিকেই সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
  • বীমা কোম্পানিগুলো বড় বড় ব্যবসা, শিল্প কারখানা ইত্যাদির ঝুঁকি বহন করে থাকে বলে জনগন এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। এভাবে বীমা নতুন বিনিয়োগের সংখ্যাও বাড়ায়।

তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে বীমা একইসঙ্গে ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক ঝুঁকিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে পারে।

ইন্স্যুরেন্স এর অসুবিধা

এতকিছু পড়ে পাঠকের মনে হতেই পারে তাহলে বুঝি বাংলাদেশে বীমা পলিসির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যাই নেই! না, এমনটি একেবারেই নয়। বাংলাদেশে বীমা পলিসিতে কোম্পানি বা বীমাকারী ও পলিসি হোল্ডার বা বীমাকৃত এই দুই পক্ষেই বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায়। চলুন এবার সেগুলো সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নেওয়া যাক।

১. আস্থার অভাব

যারা বীমা কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কাজের সাথে যুক্ত তারা জনগণের কাছে নিজেদের সম্পর্কে একধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরী করে ফেলেছেন। ফলে সাধারণ জনগণের একটা বড় অংশ বীমা কোম্পানি গুলোর উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না।

২. কেন্দ্রিকীকরণ

বীমা কোম্পানি গুলি অধিকাংশই শহর এলাকা থেকে পরিচালিত হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলকে পুরোপুরি বীমা পলিসির আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ গ্রামেই বাস করে থাকেন।

৩. দক্ষ নিয়ন্ত্রণের অভাব

বীমা কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অধিকাংশই অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ। ফলে অনেক সময়েই তারা মানুষকে বীমা পলিসি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন না। এতে বীমা কোম্পানি গুলির প্রসার ব্যাহত হয়।

৪. ব্যবসায় মূল্যবোধের অভাব

বর্তমান বাজার প্রতিযোগিতা মূলক বাজার। এই বাজারে নিজেদের ধরে রাখতে অনেক বীমা কোম্পানিই অনৈতিক বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে। যা মূলত জনগণের কাছে বীমা পলিসি নিয়ে একটি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।

৫. সরকারি তত্ববধায়নের অভাব

সরকারি তেমন কোনো তত্ববধায়ন না থাকায় বীমা কোম্পানি গুলো সহজেই জনগণকে অনেকক্ষেত্রে বিভ্রান্ত করে থাকে এবং তা আইনের আওতায় আনার কোনো দৃষ্টান্ত তেমন ভাবে দেখা যায়না। 

শেষকথা

বীমা ব্যবসা বাংলাদেশে বর্তমানে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং লাভজনক ব্যবসা। প্রতি বছর নতুন নতুন বীমা কোম্পানির উদ্ভব এটা নিশ্চই নিশ্চিত করে যে বাংলাদেশে এই ব্যবসা জনপ্রিয়ও বটে।  বাংলাদেশে বীমা খাত একটি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক স্থানে রয়েছে।  কিন্তু এদেশে বীমাপলিসির ঝুঁকি বা অসুবিধাও কম নেই । যদি বীমা কোম্পানিগুলো এ দেশে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই বীমা খাত ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button