অভিবাসনভ্রমনলাইফ স্টাইল

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

বিশ্বের দ্বিতীয়তম সুন্দর এবং ৯৫% অভিবাসীদের দেশ কানাডা। এই দেশটিতে প্রতিবছর ৩৪৭ টি পেশায় ৩ লক্ষ দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় বিভিন্ন কাজে। সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ছাড়া ভিন্নভাবে ওয়ার্ক পারমিট ও অন্যান্য ভিসায় কানাডা যাওয়া কঠিন। তাই বিভিন্ন পেশায় বা প্রয়োজনে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় জেনে নিন আজকের আলোচনায়।

কানাডায় যাবার ও স্থায়ীভাবে বসবাস করার স্বপ্ন আমাদের অনেকেরই মনে। প্রতিবছর কানাডা ভিসার জন্য লক্ষ লক্ষ আবেদনপত্র দাখিল হয়। তবে অধিকাংশই বাতিল হয়ে যায় দিক-নির্দেশনার অভাবে। কানাডা ভিসা আবেদন থেকে ভিসা প্রাপ্তি পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য থাকছে এই লেখাটিতে।

সূচিপত্রঃ

কানাডার ভিসা ক্যাটাগরি

বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসাতে কানাডা যাওয়া যায়। তবে কানাডায় গমনকারীদের মূল উদ্দেশ্য থাকে অভিবাসী হওয়া। কানাডার জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় দেশের উপকারে আসবে এমন দক্ষ কর্মীদের কানাডার অভিবাসী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী বর্তমানে কানাডার ভিসা ক্যাটাগরি দুই ধরনের। যথা-

  1. অস্থায়ী ভিসা
  2. স্থায়ী ভিসা

(১) অস্থায়ী ক্যাটাগরিতে যে ভিসাগুলো রয়েছে তা হলো-

  • স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
  • ভিজিট ভিসা (Visit Visa) 
  • মেডিকেল ভিসা (Medical Visa)
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা/ কাজের ভিসা (Work Permit Visa)

(২) স্থায়ী ক্যাটাগরিতে যে ভিসাগুলো রয়েছে তা হলো-

  • ব্যবসায় অভিবাসী ভিসা (Business Immigrant Visa)
  • এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম ভিসা (Express Entry Programme Visa)
  • ফ্যামিলি স্পন্সরশীপ (Family Sponsorship)

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

সরকারি ভাবে কানাডা যাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কাজে যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শী হলে কানাডার সরকারিভাবে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট www.jobbank.gc.ca বা অন্যান্য জব সেক্টরের সার্কুলার প্রকাশ করলে তাতে আবেদন করতে হবে। যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড (Standard) মানের বায়োডাটা (Bio data) সহ আবেদন করলে নিয়োগ কারী প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করে ভিসা প্রদানের সম্মতি দিতে পারেন। 

সাধারণত উচ্চতর দক্ষতার অধিকারী কর্মীগণ, যেমন-

  • সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
  • আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার
  • একাউন্টেন্ট
  • ম্যানুফ্যাকচারিং হেড
  • ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট ম্যানেজার

ইত্যাদি কাজগুলোতে এভাবে উচ্চ বেতনে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় হিসেবে কানাডার বেশ কিছু এন্ট্রি প্রোগ্রাম রয়েছে।

কানাডার বিভিন্ন এন্ট্রি প্রোগ্রাম

বর্তমানে কানাডা যাওয়ার জন্য মূলত ৫ ধরনের এন্ট্রি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলো হলো:-

  • এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম (Express Entry Programme)- এই প্রোগ্রামের আওতায় সরকারিভাবে কানাডায় দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এখানে একজন ব্যক্তিকে তার দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন ও অনেকের মধ্যে থেকে নির্বাচন করে বাছাই করা হয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় দীর্ঘদিন কানাডায় অবস্থান করলে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই প্রোগ্রামে তিনটি সরকারি পলিসি রয়েছে। যথা- 
    • কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস (Canadian Experience Class)
    • ফেডারেল স্কিল ওয়ার্কার প্রোগ্রাম (Federal Skill Worker Programme) 
    • ফেডারেল স্কিল ট্রেড প্রোগ্রাম (Federal Skill Trade Programme)
  • প্রাদেশিক মনোনীত প্রগ্রাম (Provincial Designated Programme)- এই প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন কর্মী সংস্থানকারী ব্রোকার (Brooker) কোম্পানি জড়িত রয়েছে। অন্য কোন কোম্পানিতে শ্রমিকের প্রয়োজন হলে ব্রোকার কোম্পানিগুলো দক্ষতা অনুযায়ী বাছাই করে কর্মীর যোগান দিয়ে থাকেন।
  • ইনভেস্টমেন্ট ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম (Investment Immigration Programme)- কানাডায় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করার জন্য সরকারি অনুমতি রয়েছে। অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হলে কানাডায় বিনিয়োগের জন্য এই প্রোগ্রামে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করা যায়।
  • ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশীপ (Family Class Sponsorship)- পরিবারের কেউ কানাডায় অধিবাসী হলে ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশীপ প্রোগ্রামে কানাডা যাওয়া যায়।
  • এল এম আই এ ওয়ার্ক ভিসা (LIMA Work Permit)- এল এম আই এ কানাডার একটি সরকারিভাবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন পেশায় এই প্রোগ্রামে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।

এছাড়াও দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, কৃষি ভিসা, বিজনেস ভিসা সংগ্রহ করা যায়।

কানাডা ভিসা পাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে কানাডা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়ার উপায় বিভিন্ন। যেমন-

  • অভিবাসী- কানাডায় অভিবাসী হতে চাইলে আপনার মাধ্যমে কানাডার কি উপকার হতে পারে তা উল্লেখ করে যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণপত্রসহ এন্ট্রি প্রোগ্রামে আবেদন করতে হবে।
  • ওয়ার্ক ভিসা– কাজের ভিসায় কানাডা যেতে কানাডার বিভিন্ন এন্ট্রি প্রোগ্রাম এর সাথে সংযুক্ত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান প্রকল্পে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি কানাডার ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হয়।
  • স্টুডেন্ট ভিসা- সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বা স্কলারশিপ পেতে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে স্টাডি পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
  • ভিজিট ভিসা- ভিজিট ভিসার জন্য কানাডা ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (Canada Electronic Travel Authorization) সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।

প্রতিটি ভিসার জন্যই সঠিকভাবে আবেদন করার পর আবেদন গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশে থাকা কানাডিয়ান এম্বাসির মাধ্যমে সাক্ষাৎকার, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান, ভিসা প্রসেসিং ফি পরিশোধ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।

সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়ার যোগ্যতা

সরকারিভাবে কাজের ভিসার কানাডায় নিয়োগ দেওয়ার জন্য এন্ট্রি প্রোগ্রামের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীর প্রাথমিক যোগ্যতা নির্ধারণ করেছেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারী-

  1. কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) বা তার সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতা।
  2. হচ্ছে পর্যায়ের সরকারি কাজের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬। তবে শ্রমিক বা সাধারণ পর্যায়ের কাজের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৪ থাকতে হয়।
  3. ব্যাংক সলভেন্সি হিসেবে ৭-১০ লক্ষ টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয়
  4. যে কাজের জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সেই কাজে কমপক্ষে এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা।

এছাড়াও সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী অন্যান্য বৈধ ডকুমেন্টস থাকতে হবে।

কানাডা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে ভিসা প্রাপ্তি ও কানাডা যাওয়ার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। কানাডা ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজন হয়:-

  • মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট;
  • আবেদনকারীর একটি বায়োডাটা (Biodata);
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র;
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন;
  • আবেদনকারীর ছবি;
  • নির্দিষ্ট কাজে কমপক্ষে এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র।

উপরোক্ত ডকুমেন্টসগুলো নিয়ে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে।

প্রাথমিক ভিসা আবেদন গ্রহণ করার পর প্রয়োজনীয় কাগপত্র 

  • কানাডা ভিসা আবেদন ফরমের কপি;
  • ভিসা ফি প্রদানের প্রমাণপত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স;
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট বা করোনা টিকা সনদ;
  • নিবন্ধিত হাসপাতাল থেকে মেডিকেল রিপোর্ট;
  • ব্যাংক সলভেন্সি হিসেবে ব্যাংক ব্যালেন্স ১০ লক্ষ টাকার স্টেটমেন্ট, (ফিক্সড ডিপোজিট, চলতি হিসাব, সঞ্চয়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা শেয়ারবাজার ব্যালেন্স ইত্যাদি);
  • কানাডিয়ান কনস্যুলেটে সাক্ষাৎকারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা স্ক্যান ও ছবি;
  • ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতিপত্র।
  • আবেদনকারী বিবাহিত হলে বিবাহ সনদের কপি।

উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো পর্যায়ক্রমিক ভাবে কানাডা ভিসার জন্য প্রয়োজন হয়।

কানাডা ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী কানাডার জব সেক্টরে চাকরির সার্কুলার প্রকাশ করলে তাতে আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত আবেদন প্রক্রিয়াটি নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো:-

ধাপ ১: প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন

প্রথমেই, যেকোনো দেশে যেতেই একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরাসরি নিকটস্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে পারেন অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।

ধাপ ২: কানাডা জব সার্কুলার

কানাডার জব সেক্টরে সার্কুলারের খোঁজখবর রাখুন। এজন্য বৈদেশিক চাকরির খবর প্রকাশ করে এমন পত্রিকা ও অনলাইন ম্যাগাজিনে খেয়াল রাখবেন। এছাড়াও ওয়েবসাইট, যেমন- 

এসকল ওয়েবসাইট গুলোতে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ও কানাডার জব সার্কুলার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ধাপ ৩: কানাডা ভিসা আবেদন

যে প্রতিষ্ঠানের জব সার্কুলারে আবেদন করতে চান তার ওয়েবসাইটে ভিজিট করে এপ্লিকেশন অপশনে ধারাবাহিকভাবে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, বায়োডাটা ইত্যাদির তথ্য প্রদান করে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের আবেদন করুন। দক্ষতা ছাড়া কানাডায় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয় না।

ধাপ ৪: কানাডিয়ান কনস্যুলেটে যোগাযোগ

আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হলে আপনার প্রদানকৃত ইমেইল বা অন্য যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর কানাডিয়ান কনস্যুলেটে বা এম্বাসিতে যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হবে। 

ধাপ ৫: নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাৎকার

কানাডার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশের কানাডিয়ান হাইকমিশনে/ কনস্যুলেটে আপনার সাক্ষাৎকার নিবেন এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বাছাই করবেন।

ধাপ ৬: ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান

সাক্ষাৎকারে সিলেক্টেড হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখ স্ক্যান, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পন্ন ছবি কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে। একইসাথে ভিসা প্রসেসিং ফি ৳১৫০০০ বা $১৫৫ ব্যাংক চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

ধাপ ৭: ভিসা সংগ্রহ

কানাডিয়ান ভিসা প্রসেসিং হতে ৩-৭ দিন সময় চাওয়া হয়। তবে সাধারণভাবে ভিসা হাতে পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। 

চাকরিজীবী হিসেবে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

কানাডা স্বল্প জনসংখ্যার দেশ এবং দক্ষ জনবলের জন্য সমগ্র পৃথিবী থেকেই এখানে চাকরিজীবী নিয়োগ করা হয়। কানাডার সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন চাকরিগুলো হলো-

  1. সি লেভেল নির্বাহী কর্মকর্তা
  2. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
  3. আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার
  4. কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ
  5. প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নির্বাহী কর্মকর্তা
  6. সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
  7. একাউন্টেন্ট

ইত্যাদি পেশায় দক্ষ হলে চাকরিজীবী হিসেবে কানাডা যেতে পারবেন।

শ্রমিক ভিসায় সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

কানাডা উন্নত রাষ্ট্র এবং নিজের প্রয়োজনীয় সাধারণ শ্রমিক বহিঃস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করে। প্রতিবছর প্রায় ৩৪৭ টি পেশায় কানাডায় কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৮-২০২১ সালে কানাডাতে প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানেও রেস্টুরেন্টে, প্রশাসনিক সহকারী, সেলসম্যান, হেয়ার স্টাইলিশ, ক্লিনার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার উপায়

শিক্ষার দিক থেকে কানাডা অনেকটাই এগিয়ে। প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় যায়। কানাডা স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার জন্য-

  • সর্বনিম্ন এইচএসসি (HSC) পাশ হতে হবে।
  • আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ বা তার বেশি হতে হবে। 
  • কানাডা সরকারের স্টাডি পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
  • স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে ৪-৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি খরচ হয়। 

এছাড়াও বিভিন্ন সময় স্কলারশিপের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসায় সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় রয়েছে।

কানাডা কৃষি ভিসায় যাওয়ার উপায়

কানাডায় কৃষক শ্রমিকের চাহিদা অনেক বেশি। কৃষিকাজের দক্ষতা থাকলে অধিক উপার্জনের জন্য কানাডা অন্যতম উপায়। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আইইএলটিএস স্কোর তেমন প্রভাব ফেলেনা। কানাডিয়ান এম্বাসি কিংবা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে কানাডা কৃষি ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এই ভিসায় সর্বমোট ৫-৮ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।

বিজনেস ভিসায় সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের জন্য কানাডায় সবসময় ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কানাডার ইনভেস্টমেন্ট ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম (Investment Immigration Programme) এর আওতায় ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বড় অংকের বিনিয়োগ কারীরাই এ ধরনের ভিসা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কানাডার মূলধন ও বিনিয়োগের নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়।

সরকারিভাবে পরিবার নিয়ে কানাডা যাওয়ার উপায়

পরিবার নিয়ে সরকারিভাবে কানাডা যেতে প্রথমে পরিবারের একজন কানাডার অভিবাসী সদস্য থাকতে হবে। সেই অভিবাসী কানাডায় ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশীপ (Family Class Sponsorship) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এছাড়াও পরিবারের কানাডিয়ান অভিবাসী সদস্য কানাডায় চাকরি পেতে রেফারেন্স (Reference) হিসেবে আবেদন করতে পারবে।

কানাডায় অভিবাসন এর জন্য আবেদন

কানাডায় অভিবাসন বা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য শুরুতেই আবেদন করা যায়না। যেকোন ভিসায় কানাডা যেতে পারলে এবং দীর্ঘদিন সেখানে কর্মরত থাকলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর কানাডায় অভিবাসনের জন্য আবেদন করা যায়। এছাড়াও কোন কানাডিয়ান নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হলে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতারণা কিংবা মিথ্যা পন্থা অবলম্বন করলে কঠোর শাস্তি রয়েছে।

কানাডা থেকে আমন্ত্রণপত্র পাবো কিভাবে 

ভিজিট ভিসায় বা অভিবাসনের জন্য কানাডা যেতে কানাডায় বসবাসকারীদের আমন্ত্রণপত্র অত্যন্ত অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। শুধুমাত্র কোন কানাডিয়ান সিটিজেনধারী আত্মীয়/ পরিবারের সদস্য কানাডা থেকে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুসরণ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে পারবে।

কানাডা ভিসা প্রসেসিং

কানাডা ভিসার আবেদন অনুমোদন করার পর ভিসা প্রসেসিং ফি $১৫৫ প্রদান করতে হয়। তারপর ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রসেসিং হতে ৭২ ঘন্টা থেকে শুরু করে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। তবে সম্পূর্ণরূপে ভিসা হাতে পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। কানাডার বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য ভিসা প্রসেসিং ফি, ভিসা প্রসেসিং সময়, ও ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কানাডা যাওয়ার জন্য IELTS

কানাডা যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে আইইএলটিএস (IELTS) করতে হবে। সারা পৃথিবীর প্রায় ৭,০০০ এরও বেশি প্রতিষ্ঠান থেকে আইইএলটিএস করা যায়। কানাডায় যাওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষায় রিডিং (Reading), রাইটিং (Writing), লিসেনিং (Listening) ও স্পিকিং (Speaking)- এই চারটি দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং আইইএলটিএস স্কোর ভালো থাকতে হবে। 

আইইসি এর মাধ্যমে কানাডা যাবার উপায়

আইইসি (IEC) বা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা (International Experience Canada) পৃথিবীর কয়েকটি দেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী যুবকদের দুই বছর পর্যন্ত কানাডায় ভ্রমণ ও কাজ করার সুযোগ দেয়। সাধারণত তিন ধরনের প্রোগ্রামে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাওয়া যায়। যথা-

  1. কোন কাজে নিযুক্ত না থাকলে ভ্রমণ।
  2. তরুণ পেশাদার নিয়োগ।
  3. আন্তর্জাতিক কো-অপারেটিভ (ইন্টার্নশীপ)।

এর আওতায় চাকরির অফারেটর ছাড়াও সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় রয়েছে। তবে প্রথমেই যে দেশগুলো থেকে এর সুযোগ রয়েছে সেখানে অবস্থানকারী হতে হবে।

সরকারিভাবে কানাডা যেতে কত টাকা লাগে

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুসরণ করলে কাজের ভিসার ক্ষেত্রে ভিসা প্রসেসিং ফি $১৫৫ বা প্রায় ১৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। তবে পাসপোর্ট, আইইএলটিএস, মেডিকেল রিপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ, ইমিগ্রেশন, বিমান টিকেট ইত্যাদি সকল খরচ মিলিয়ে সরকারিভাবে কানাডা যেতে ৫-৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। 

বাংলাদেশে কানাডা ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট

বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং করতে কানাডিয়ান কনস্যুলেট অথবা বিভিন্ন প্রসেসিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হয়। বাংলাদেশে কানাডার প্রসেসিং এজেন্সি গুলো হলো:-

শেষকথা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় সুন্দর দেশ কানাডায় যাবার স্বপ্ন লাখো বাঙালির মনে। তবে কানাডা যাওয়া অনেকটাই কঠিন এবং খরচ তুলনামূলক বেশি। কিন্তু বিভিন্ন এজেন্সি কানাডিয়ান ভিসার নাম করে জাল ভিসা দিয়ে অনেককেই প্রতারিত করেছে অথবা জীবনের ঝুঁকিবহুল চোরাপথে কানাডায় প্রেরণ করছে। এসকল জালিয়াতি থেকে রক্ষা পেতে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় অনুযায়ী চেষ্টা করুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

কানাডা যেতে কত বছর বয়স লাগে?

কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে সর্বনিম্ন ১৮ বছর প্রয়োজন। এবং ১৮ বছর থেকে যেকোন বয়স পর্যন্ত কানাডার বিধি নিষেধ মেনে ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারলে অভিবাসনের জন্য আবেদন করা যায়। তবে পরিবারের সাথে ভিজিট ভিসা গেলে শিশুদের বয়স তেমন প্রভাব ফেলেনা।

বাংলাদেশে কানাডা এম্বাসি কোথায় অবস্থিত?

কানাডিয়ান হাই কমিশন, বাংলাদেশ এর ঠিকানা – জাতিসংঘ সড়ক, বারিধারা, ঢাকা -১২১২, বাংলাদেশ।

কানাডা যেতে কোন ভ্যাকসিন নিতে হয়?

২০২৩ সালে কানাডা যেতে Pfizer-BioNtech, Moderna, Novavax, AstraZeneca, John & Johnson, Medicago ইত্যাদি যেকোন একটির করোনা ভ্যাকসিন নিতে হবে।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button