পরিচয় পত্রপাসপোর্ট

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম 

ডিজিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এর পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। ই-পাসপোর্ট এর জন্য/ পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করতে আবেদন করার পর পাসপোর্টটি ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হয়েছে কিনা তা জানতে অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম, চেক করতে কি কি লাগে ও পাসপোর্টের বিভিন্ন স্ট্যাটাসের অর্থ জেনে নিন এই পোস্টে।

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে ১০ টি ধাপ অতিক্রম করে একটি পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হয়। আপনার পাসপোর্টটি বর্তমানে কোন ধাপে আছে তা জানতে, www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, সেখানে আবেদনের সময় প্রাপ্ত অ্যাপ্লিকেশন আইডি (Application ID) ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন। বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি থাকছে সম্পূর্ণ আলোচনায়।

সূচিপত্রঃ

ই-পাসপোর্ট চেক করতে যা যা প্রয়োজন 

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট চেক করার জন্য প্রয়োজন হয়-

১। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি (Online Registration ID- OID)। যা অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনপত্রের অ্যাপ্লিকেশন সামারি (Application Summary) পেইজে উল্লেখিত থাকে (e.g. OID1000001234)। 

ই-পাসপোর্ট চেক করতে যা যা প্রয়োজন - 1

অথবা, অ্যাপ্লিকেশন আইডি (Application ID)। যা পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রাপ্ত ডেলিভারি স্লিপে উল্লেখিত থাকে (e.g. 4000-100000000)।

২। জন্ম তারিখ (Date of Birth)। ই-পাসপোর্ট আবেদনের সময় প্রদান করা জন্ম তারিখ।

এ দুটি তথ্য দিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন সহ স্মার্টফোন বা কম্পিউটার দিয়ে অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাটাস জানতে পারবেন।

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

ই-পাসপোর্ট চেক করার জন্য পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য সংগ্রহ করে, নিচের ছবিসহ দেখানো ধাপগুলো অনুসরণ করুন:-

ধাপ ১: ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে ভিজিট

পাসপোর্ট সম্পর্কিত যেকোন সেবা পেতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট (Department of Immigration and Passport) এর ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। সরাসরি ই পাসপোর্ট চেক করার ওয়েব পেইজে যেতে https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status এই লিংকে ভিজিট করুন। 

এছাড়াও আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যেকোনো ব্রাউজার ওপেন করে সার্চবারে ই পাসপোর্ট চেক (epassport check / Passport Application Status) লিখে সার্চ করে প্রথম পেইজটিতে প্রবেশ করতে পারেন।

ধাপ ২: পাসপোর্টের তথ্য প্রদান

এই পেইজে, অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক / অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস চেক করার জন্য একটি অনুসন্ধান ফরম পাবেন। এখানে ধারাবাহিকভাবে আবেদনকারীর- 

  • অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি (Online Registration ID) লিখুন। অথবা, আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন আইডি (Application ID) ও দিতে পারেন।
  • Select date of birth- ঘরে ডান পাশের ক্যালেন্ডার অপশন থেকে আবেদনের সময় প্রধানকৃত আপনার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করুন।

ই-পাসপোর্ট চেক

ধাপ ৩: ক্যাপচা পূরণ ও সাবমিট

একই পেইজ এর নিচের অংশে, 

  • হিউম্যান ভেরিফিকেশন এর জন্য, আই এম হিউম্যান (I am human) লেখার পাশের খালি ঘরে ক্লিক করে ক্যাপচাটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  • সর্বশেষ, চেক (Check) বাটনে ক্লিক করুন।

ব্যাস, আপনার দেওয়া সকল তথ্য সঠিক হলে পরবর্তী পেইজে আপনার ই পাসপোর্ট টির স্ট্যাটাস কি তা দেখতে পাবেন।

ই পাসপোর্ট স্ট্যাটাসের অর্থ ও ব্যাখ্যা

অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাটাস চেক করলে ১০ টি ধাপ বা স্ট্যাটাস দেখা যায়। প্রতিটি ধাপের আলাদা আলাদা পর্যায় রয়েছে। আপনার ই পাসপোর্ট এর এ সকল স্ট্যাটাস এবং এর অর্থ নিম্নে তুলে ধরা হলো:-

১। পেমেন্ট ভেরিফিকেশন রেজাল্ট – নেম মিসম্যাচ (Payment Verification Result- Name Mismatch)

ব্যাংক বা চালানোর মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করলে, চালানের নাম বা নামের বানান এবং পাসপোর্ট আবেদনের নামের বানানে অমিল রয়েছে।

এ সমস্যা সমাধানে, পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ ও এনআইডি/জন্ম নিবন্ধন সহ দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।

২। অ্যাপ্লিকেশন পেন্ডিং অন পেমেন্ট ইনভেস্টিগেশন (Your application is pending on payment investigation)

পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালানে টাকার পরিমাণ ও নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণে ভিন্নতা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে, পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ ও চালানের কপি নিয়ে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।

৩। পেন্ডিং ফর পুলিশ অ্যাপ্রুভাল (Pending for Police Approval)

পাসপোর্ট করাতে চাইলে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন আছে। এ প্রক্রিয়ায় পুলিশ আপনার সার্বিক কার্যক্রম যাচাই করে একটি রিপোর্ট করবে। আপনি কোনো অনৈতিক বা জঙ্গি কার্যক্রমে লিপ্ত থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যাবেন। পেন্ডিং ফর পুলিশ অ্যাপ্রুভাল এর মানে হলো আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদনটি পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন ও প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। আবেদনের বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।

৪। পেন্ডিং ফর ডিরেক্টর অ্যাপ্রুভাল (Pending of Assistant Director/ Deputy Director Approval)

একজন এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (Assistant Director) বা ডেপুটি ডিরেক্টর (Deputy Director) পদমর্যাদার অফিসার পাসপোর্টের আবেদনটি চেক করবেন। এই স্টেপে সাধারণত ৫/৭ দিন সময় লাগে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তিনি এপ্রোভ (Approve) করলে পরবর্তী ধাপে যায়।

৫। পেন্ডিং ফর ব্যাকএন্ড ভেরিফিকেশন (Pending for Backend Verification) 

পাসপোর্ট ঢাকার প্রিন্টিং অফিসে প্রেরণের পূর্বে পুনরায় সকল তথ্য যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে, ২/৩ দিন সময় লাগে। 

তবে, Pending for Backend Verification- ধাপে বিভিন্ন সমস্যা হলে, যেমন-

  • আবেদনের সময় জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী নাম, পিতা-মাতার নামে ভিন্নতা থাকলে।
  • পূর্বের এমআরপি পাসপোর্ট থাকলে, সে অনুযায়ী তথ্য না মিললে।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার এই স্টেপে ৪/৫ দিন সময় লেগে গেলে আপনার ডকুমেন্টের পরিবর্তিত তথ্যের প্রমাণ পত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিস যোগাযোগ করুন।

৬। পেন্ডিং ফর পাসপোর্ট পারসোনালাইজেশন (Pending for Passport Personalization) 

ই পাসপোর্ট এর টেকনিক্যাল কাজগুলো, যেমন- লেজার ইনগ্রেভিং (Laser Engraving),সিকিউরিটি লেমিনেশন (Security Lamination), ইনলাইন কোয়ালিটি কন্ট্রোল (Inline Quality Control), আর এফ আই টি এনকোডিং (RFID Encoding) ইত্যাদি সম্পন্ন করা হয়।

৭। ইন প্রিন্টার কিউ (In Printer Queue)

পাসপোর্টটি প্রিন্টিং শাখায় প্রিন্ট করা হচ্ছে।

৮। প্রিন্টিং সম্পন্ন (Printing Succeeded)

পাসপোর্টটি সফলভাবে প্রিন্টিং সম্পন্ন হয়েছে। তারপর, কোয়ালিটি কন্ট্রোল শাখায় পাঠানো হয়েছে।

৯। কিউ সি সাকসিডেড, রেডি ফর ডিসপ্যাচ (QC Succeed, Ready for Dispatch) 

অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করলে এই ধাপে কোয়ালিটি কন্ট্রোল (Quality Control) শাখায় পাসপোর্ট এর সকল ত্রুটি যাচাই করা হয়। তারপর আপনার জেলা পাসপোর্ট অফিসে প্রেরনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

১০। পাসপোর্ট ইজ রেডি, পেন্ডিং ফর ইস্যুয়েন্স (Passport is Ready, Pending for Issuance) 

পাসপোর্টটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়েছে। জেলা পাসপোর্ট অফিসে আসতে ৪/৫ দিন সময় লাগতে পারে। পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছালে আপনার আবেদনের সময় প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে এসএমএস (SMS) এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এভাবে উপরোক্ত ১০ টি ধাপ সম্পন্ন হলে আপনার ই-পাসপোর্টটি পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং 

পাসপোর্ট সংগ্রহ করার পর পরবর্তীতে তা অনলাইনে যাচাই করার জন্য পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার কোন উপায় রাখা হয়নি। তবে, বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন করে থাকলে পাসপোর্ট এর তথ্য স্ক্যান করে চেক করতে পারবেন।

শেষকথা

ই-পাসপোর্টের আবেদনের সময় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ এবং রিভিশন দিয়ে সাবমিট করুন। আবেদন করে থাকলে অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাটাস চেক করে প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করুন। কোন ধাপে আপনার পাসপোর্টের ধীরগতি বা সমস্যা দেখা দিলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ই-পাসপোর্ট পেতে কতদিন সময় লাগে?

ই-পাসপোর্ট আবেদনের ধরন অনুযায়ী পাসপোর্ট পেতে সময় কম বেশি লাগতে পারে। ১০ বছর মেয়াদসম্পন্ন ই-পাসপোর্ট পেতে রেগুলার ডেলিভারি= ২১ দিন, এক্সপ্রেস ডেলিভারি= ১০দিন এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি= ২-৩ দিন সময় লাগে।

২। এমআরপি (MRP) পাসপোর্ট রিনিউ করলে কি ই-পাসপোর্ট করতে হয়?

হ্যা, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। তাই নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে কিংবা পুরাতন এমআরপি (MRP) পাসপোর্ট রিনিউ করতে চাইলে ই-পাসপোর্ট করতে হয়।

৩। ব্যাকএন্ড ভেরিফিকেশন (Backend Verification) কি?

ই পাসপোর্টের আবেদন ডেপুটি ডাইরেক্টর (Deputy Director) কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর পাসপোর্ট প্রিন্টিং অফিসে পাঠানোর পূর্বে পুনরায় যাচাই করা হয়, একে ব্যাকএন্ড ভেরিফিকেশন (Backend Verification) বলে। অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করে এ সময় তথ্য যাচাইয়ে অমিল দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হয়।

৪। ই পাসপোর্ট সংশোধন ফি কত টাকা?

ই পাসপোর্ট করার পর তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সংশোধন ফি সর্বনিম্ন ৪,০২৫ ৳ থেকে সর্বোচ্চ ১০,৩৫০ ৳ প্রদান করতে হয়। সংশোধনের তথ্যের ধরন অনুযায়ী ফি কম-বেশি নির্ধারিত।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button