জীবন ও জীবিকাটেকনোলজিমোবাইল ফোনলাইফ স্টাইল

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মোবাইল ফোন বা মুঠো ফোন। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে মোবাইলের ব্যবহার করছি। বর্তমান সময়ে তাই যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মোবাইল ফোন। শুধুমাত্র কমিউনিকেশন নয়, বিভিন্ন কাজে আমরা হাতে থাকা স্মার্টফোনটি ব্যবহার করি। কি নেই এই স্মার্টফোন ফোনে। সবই পাবেন এক ক্লিকেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে বাড়ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। সকালের এলার্ম থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত হাতে থাকা মোবাইল নিয়েই আপনি ব্যস্ত থাকেন। সেটা হতে পারে ভিডিও স্ট্রিমিং, অডিও মিউজিক শোনা, ই-পেপার পড়া, যোগাযোগ, সময় দেখা বা গেম খেলা সহ ইত্যাদি। 

কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কোনো কিছুর অতিরিক্ত ব্যবহার থেকেই জন্মে আসক্তি। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হাতে থাকা স্মার্টফোনটির ব্যবহার যতটা বাড়ছে ঠিক তেমনি বাড়ছে অপব্যবহারও। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ক্রমশঃ এর ব্যবহার বাড়ছে। তাই এর থেকে তৈরি হচ্ছে আসক্তি। মোবাইল ফোনের প্রতি মানুষের অতিরিক্ত এই আসক্তির ফলাফলও অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফলও নেতিবাচক। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে। এছাড়া বাড়ছে মানবিক ও সামাজিক অবক্ষয়। বর্তমান সময়ে মোবাইলের গুরুত্ব যেমন রয়েছে সেই সাথে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো অবহেলা করার সুযোগ নেই। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি দেখা দিতে পারে। যারা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে। 

সূচিপত্রঃ

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। মোবাইল ফোনের নানা ক্ষতিকর দিকসমূহের কথা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদদের বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলাফল:

সময় নষ্ট

সময়ের মূল্য অনেক হলেও বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন কেঁড়ে নিচ্ছে আমাদের মূল্যবান সময়। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের কারণে যেভাবে আমাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় হারাচ্ছে তা সত্যিই বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রয়োজনীয় কাজের বাহিরেও মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। কারণ মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ প্রজন্ম। অপ্রয়োজনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, চ্যাটিং, মুভি দেখা, গান শোনা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা, গেমিং প্রভৃতি বিষয়গুলোর কারণে ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। 

তাই  দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত। তবে সেটি ১/২ ঘন্টার বেশি নয়। প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।

কাজে অমনোযোগী

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতির অনেকগুলো দিক রয়েছে যার মধ্যে কাজে মন না বসা অন্যতম। অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার মানুষের কনসেনট্রেশন পাউয়ারকে নষ্ট করে ফেলে।

ছোট বয়স থেকে যারা মোবাইল ব্যবহার করে তাদের মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। কোনো কাজে মন দিতে চাইলে মন সব সময় মোবাইলের দিকে চলে যায়। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে কাজে মন বসে না। এতে আপনার মূল্যবান কাজে বাঁধা সৃষ্টি হয়। কাজে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন। সেই সাথে মেডিটেশন করুন।

পড়াশোনায় অমনোযোগী

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ইদানীং মোবাইলের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। পড়াশুনার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য মোবাইল ফোন একটি অনেক বড় সমস্যার নাম। বেশিরভাগ সময় মোবাইলে নষ্ট হয়। গেম খেলতে, ফোনে কথা বলতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে চ্যাটিং করতে, ভিডিও দেখতে, গান শুনতে ইত্যাদি আরও অনেক কাজে তাদের নষ্ট হয়ে থাকে। তাই তাদের পড়াশোনায় মনযোগী হতে হলে প্রয়োজন  ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। 

আসক্তি সৃষ্টি

অভ্যাস যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনই জন্মায় আসক্তি। বর্তমান যুগে ও নতুন প্রজন্মের কাছে মোবাইল ফোন একটি আসক্তির নাম। 

সোশ্যাল মিডিয়াতে শো অফ করা আজকাল নেশায় পরিণত হয়েছে। সেই সাথে সারাক্ষণ ফেসবুকের ব্যবহার, গেম খেলা, ভিডিও দেখা, সিনেমা দেখা, ওয়েব সিরিজ দেখা বেড়েই চলছে। এগুলো তৈরি করছে আসক্তি। ধ্বংস করছে মূল্যবান সময়। আসক্তি কমাতে তাই ফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

প্রতারণা ও জালিয়াতির স্বীকার 

আজকাল স্মার্ট ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ প্রতারণা ও জালিয়াতির স্বীকার হচ্ছে। বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া মোবাইল ব্যংকিং ও ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেবার মত ঘটনা ঘটছে মোবাইলের মাধ্যমেই। ইমেইল ও ইনবক্সে টেক্সট দিয়ে, ফোন করে এসব কর্মকান্ড করা হয়। ফলে সাধারণ স্তরের মানুষ প্রতারিত হয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

অর্থ ব্যয়

বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ। আজকাল ফেসবুক পেজ ও নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যবসা করছে। অনলাইনে কেনাকাটা তাই আজকাল ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটাকে নেশায় পরিণত করেছেন। সারাক্ষণ নিউজ ফিডে ঘুরছে রকমারি সব জিনিসপত্র। আপনি হয়তো চাইছেন না বা প্রয়োজন নেই তবুও মনের খোরাক মেটাতে বা চোখের ক্ষুধা মেটাতে বা শো অফ করতে অথবা আসক্তি মেটাতেই অর্ডার করছেন। আর এসব জিনিসপত্র অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে আপনার ঘরে। যেমন ধরুন শাড়ি বা থ্রি-পিসের অফার চলছে কোনো পেইজে, আপনি অফার দেখেই কিনে ফেললেন অথচ এগুলোর আপাতত আপনার প্রয়োজন নেই। আবার চোখের সামনে বিরিয়ানীর ছবি ঘুরছে, অর্ডার করে দিলেন ফুড ডেলিভারি অ্যাপে। এগুলোর কোনো কিছুই হয়তো আপনার প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র নেশা মেটাতেই অর্থের অপচয় করছেন। সেজন্য প্রোডাক্ট অর্ডার করার আগে ভেবে নিন এটি আদৌও আপনার প্রয়োজন কিনা। প্রয়োজন হলে অবশ্যই কিনুন কিন্তু অপ্রয়োজনে কেনা মানেই অর্থের অপচয় করা।

নিরাপত্তার অভাব

আজকাল আমাদের যাবতীয় তথ্যের জন্য আমরা  মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল। নিজের পারসোনাল ডেটা, ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টস, ব্যাংকের যাবতীয় ডেটা সবকিছুই থাকে মোবাইলে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে। কারোও যদি এক্ষেত্রে মোবাইল হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তখন আপনার সেই জরুরি ডেটা, ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টস, ব্যাংকের যাবতীয় ডেটা অন্যের হাতে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। মোবাইল ফোনের এই ক্ষতিকর দিকটির কারণে আপনি বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাছাড়া আমরা মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করে থাকি। অনেক অ্যাপস আপনার পারসোনাল ডেটা ও ফাইল গোপনে চুরি করে নিতে পারে। যেখানে গোপনীয় সব কিছুই চলে যাচ্ছে অন্যের হাতে। তাই এ বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ

বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন থেকেও ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাইক বা গাড়ি চালানো থেকে, হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে গাড়ি বা বাইক চালানো থেকে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাছাড়া মোবাইল ফোন ওভার হিটিং হয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাই মোবাইল ফোন সাবধানে ব্যবহার করুন।

চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা

মোবাইল ফোন মানুষের চিন্তা শক্তিকে ব্যাহত করছে।অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের কারণে মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। অথবা নতুন কিছু চিন্তা করার ক্ষেত্রে বা সৃজনশীল কাজে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়।  ডিজিটাল রিডারের থেকে মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা  ভাবনা করার ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু সারাক্ষণ  ডিজিটাল মিডিয়াতে সময় কাটানোর ফলে সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। সারাক্ষণ নানা রকমের বাহারি বিজ্ঞাপন, ভিডিও, গেম মানুষকে কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত করে। নষ্ট করে মানুষের সৃজনশীলতা। তাই সৃজনশীলতার বিকাশে মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

নেগেটিভিটির জন্ম দেয়

মোবাইল ফোন শুধু মানুষের সৃজনশীলতাই নষ্ট করে না, অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার মানুষের মধ্যে নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনারও জন্ম দেয়। আমরা সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সুখের অনুভূতি, ছবি শেয়ার করে থাকি, যা অন্য জনের খারাপ লাগারও কারণ। আবার ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অনেক সময় অনেক গুজব, মিথ্যা, বিভ্রান্তমূলক খবর, দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়, যা মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি করে। সারাক্ষণ এসব নিউজ দেখার ফলে মনের মধ্যে নেগেটিভির সৃষ্টি হয়। 

ওজন বৃদ্ধি 

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সাথে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি সম্পর্কিত। কারণ অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করলে শরীরের দুটি হরমোন যেমন গ্রেলিং এবং লেপটিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এর ফলে আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। 

শরীরে ব্যথা

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। অধিক গেম আসক্তি, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখা অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিতে গিয়ে দূরত্ব মেইনটেন করা ও বডি পজিশন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এর কারণে ঘাড়ে ব্যাথা দেখা দেয়। একটানা বসে বা শুয়ে কখনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘাড় ও কোমরে ব্যথা পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা

অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। আমরা সাধারণত রাতে ফোন স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায়৷ ঘুম না আসলে বা কাজ না থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটে স্ক্রিন টাইম। তাছাড়া ফোনের ব্লু লাইট আপনাকে দীর্ঘসময় জাগিয়ে রাখতেও সহায়তা করে। আর ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরণের জটিলতা। ঘুমের সমস্যা সমাধানে দেখে নিতে পারেন রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য কার্যকরী কিছু উপায়

দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা

আপনি যদি একটানা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চোখের উপর  অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে আপনার দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তাছাড়া অনেকক্ষণ মোবাইলে নেট ব্যবহারে নানাবিধ স্ক্রিন ভিশন সিনড্রোম দেখা দেয়। যেমন ধরুন- চোখ লাল হওয়া ও জ্বালা ভাব, আই-স্ট্রেন, ড্রাই-আই, আই ইরিটেশন, ঝাপসা দৃষ্টি, রাতকানা ইত্যাদি। তাই অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার আগে আপনাকে এই বিষয়টির উপর  নজর রাখতে হবে।

শ্রবণশক্তিতে সমস্যা

আজকাল অনেকেই দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোনে হেডফোন বা ইয়ারফোনে লাগিয়ে গান শুনে থাকে। একটানা অনেকক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে উচ্চস্বরে গান শুনলে বা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বললে শ্রবণশক্তির সমস্যা অর্থাৎ ইয়ার ড্যামেজ ও ককলিয়ার হতে পারে। তাছাড়া হেয়ারিং লসের মত সমস্যাও হতে পারে। বাম দিকের কানে ফোন ধরে কথা বললে ব্রেনের ক্ষতি কম হয়। আবার ডানদিকের কানে ফোন ধরে কথা বললে মস্তিষ্কে সরাসরি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শ্রবণশক্তি হ্রাসের সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখে ফোন ব্যবহার করা উচিত। 

আত্মহত্যার প্রবণতা

আপনি শুনলে অবাক হবে যে একটানা অনেকক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৪৮ শতাংশ মানুষ যারা দিনে ৫ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা অন্যান্য মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। উস্কানিমূলক ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া টিনএজারদের মনে প্রভাব ফেলে। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

রিংটোন অ্যাংজাইটি

মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির ফলে রিংটোন অ্যাংজাইটি নামক এক ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যাক্তি ছোটখাটো যে কোনো শব্দে সতর্ক হয়ে পড়েন। তারা  ভাবেন এই বুঝি তার মোবাইলের রিং-টোন বাজছে। আবার অনেকে এক-দুই ঘন্টা ফোন না আসলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আবার অনেকে ফেসবুকের নোটিফিকেশনের টিউনে উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার ফেসবুক চেক করেন। এই বুঝি নোটিফিকেশন এলো।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি  

আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির পেছনে মোবাইল ফোন অনেকাংশেই দায়ী। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, ক্ষুধা নষ্ট হয়, মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে মানুষ ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়। ঘিরে ধরে একাকীত্ব। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম আজকাল খুব বেশিই ডিপ্রেশনে পড়ে। একাকীত্বের বেঁড়া জালে নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রাখছে। 

প্রতিকার:

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন যেমন ক্ষতির কারণ ঠিক এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিকারের উপায় সমূহ:

  • শরীর থেকে ফোন যথাসম্ভব দূরে রেখে কথা বলার অভ্যাস করুন।
  • হেডফোন বা লাউড স্পিকারে কথা বলুন। স্পিকার অন করে দূর থেকে কথা বলার অভ্যাস করা যথেষ্ট ভালো।
  • কানে ব্লু-টুথ ব্যবহার নিরাপদ নয়। কারণ ব্লু-টুথ থেকেও সমমাত্রার রেডিয়েশন নির্গত হয়।
  • পকেটে মোবাইল ফোন রাখা উচিত নয়। মোবাইলের ভাইব্রেশন থেকে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া পকেটে ফোন থেকে ব্লাস্ট হবার মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
  • বদ্ধ স্থানে ফোন রাখা নয়। কারণ মোবাইলে সিগন্যাল যখন কম থাকে তখন রেডিয়েশন বেশী হয়। 
  • আমরা কমবেশি অনেকেই রাতে ঘুমানোর সময় ফোন ব্যবহার করে থাকি। যা ঘুমের সমস্যা করে। ঘুমানোর সময় ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। 
  • অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। এতে আসক্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকে। অথবা ল্যাপটপে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। ল্যাপটপে বারবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে আসক্তি কমে যাবে।
  • বাহিরে গেলে বা কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকলে ফোনের ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন। 
  • মোবাইলে নানা ধরনের জীবাণু বাসা বাঁধে। সঠিকভাবে তাই প্রতিদিন ফোনকে জীবাণু মুক্ত করুন।
  • ছোট বাচ্চাদের ফোন ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন। 

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান সমাজ ও প্রজন্মের জন্য মোবাইল ফোন একটি হুমকির নাম। মোবাইল ফোন আমাদের জন্য যতটা কল্যাণ বয়ে এনেছে ঠিক ততটায় ক্ষতি বয়ে এনেছে। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতিকর। শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার যেমনটা ক্ষতি বয়ে আনে, সৃষ্টি করে জটিল সমস্যা। ঠিক তেমনি মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত মোবাইল ফোনের সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার করা।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তর: মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাচতে শরীর থেকে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখে মোবাইল ফোনে কথা বলা উচিত। তাছাড়া ফোনে কথা বলার সময় হেডফোন বা ব্লুটুথ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন অথবা লাউড স্পিকারে কথা বলুন।

২. নিরাপদে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কি নিয়ম মানতে হবে?

উত্তর: প্রয়োজন ছাড়া বাচ্চাদের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না। সঠিক নিয়মে মোবাইল চার্জ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে ফোনের মূল চার্জার ব্যবহার করুন। চার্জ দেবার সময় ফোনে কথা বলা উচিত নয়। 

৩. মোবাইল ফোন কত সময় ব্যবহার করা উচিত? 

উত্তর: একটানা বেশিক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত না। এতে চোখের উপর চাপ পড়ে। একটানা ১৫-২০ মিনিট ব্যবহারের পর একটু ব্রেক নেওয়া উচিত। 

৪. স্মার্টফোনে আসক্তি কি?

উত্তর: দিনে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করাকে স্মার্টফোন আসক্তি বলে। এতে তৈরি হচ্ছে বিষণ্নতা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদ। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

৫. বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কত সালে চালু হয়?

উত্তর: ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয়। ঢাকা শহরে হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে। AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু হয়।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button