টিপসটেকনোলজিরাউটার

রাউটার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

ইন্টারনেট ছাড়া বর্তমানে এক মুহূর্তের কথাও ভাবা যায় না। ইন্টারনেট ব্যবহারের শুরুর দিকে ব্যবহারকারীরা ডেস্কটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের বিবর্তনের সাথে প্রযুক্তি এগিয়ে যায় তখন ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপের ব্যবহার বাড়তে থাকে। আর এখন মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। টিভি, স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন টুলস ও ডিভাইসগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকছে তারহীন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। আর এই তারহীন ইন্টারনেটের জন্য যে যন্ত্রটি জরুরি, সেটা হলো রাউটার। কারণ ইন্টারনেটের স্প্রিড যত ফাস্ট হয় তত দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাজ করা সম্ভব হয়। কারণ মোবাইল ডেটা ব্যবহার করে ফাস্ট ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না। বাড়িতে অথবা অফিসে হাই স্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে প্রয়োজন একটি রাউটার। সেজন্য বাড়ি কিংবা অফিসে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পেতে হলে আপনাকে রাউটার সঠিক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।   

রাউটারের স্পিড বাড়াতে সঠিকভাবে ব্যবহারের নিয়ম

প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল জিনিস ব্যবহারে কিছু নিয়ম মানা আবশ্যক। রাউটারও তার ব্যতিক্রম নয়। নিচে রাউটার ব্যবহারের কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো-

রাউটারের পাসওয়ার্ড  

আপনার রাউটারটি ব্যবহারের জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। এতে আপনার রাউটারটি থাকবে নিরাপদ ও সুরক্ষিত, এছাড়া আপনিও পাবেন আপনার প্রত্যাশিত ইন্টারনেট স্প্রিড। প্রথমেই আসা যাক রাউটার সংযোগের বিষয়টিতে। প্রথমবার রাউটার সংযোগ স্থাপন করে অবশ্যই আপনার ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের নাম পরিবর্তন করতে হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড দিতে হবে। কারণ আপনার রাউটারের পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকলে এটি সুরক্ষিত থাকবে। ফলে অযাচিত কেউ ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছে না। তবে অনেক সময় পাবলিক প্লেসে রাউটারের পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকে না। তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কখনোই পাসওয়ার্ড ছাড়া রাউটার ব্যবহার করা উচিত নয়।

পাসওয়ার্ড রিসেট 

আমরা অনেক সময়ই রাউটারের পাসওয়ার্ড ভুলে যায়। তবে আপনি জেনে স্বস্তি পাবেন যে, পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও ভয়ের কিছু নেই কারণ রাউটার রিসেট দেওয়া যায়। আর রাউটারের পাসওয়ার্ড রিসেট দিতে রাউটারের পাশে থাকা একটি বোতাম চেপে এটি রিসেট দেওয়া যায়। তাছাড়া ভালো স্প্রিড পেতে মাঝেমধ্যে রাউটার রিসেট দিতে পারেন।

সেন্ট্রাল পয়েন্ট নির্বাচন

ওয়াইফাই সিগন্যালগুলি কর্ডলেস ফোন, বেবি মনিটর, মাইক্রোওয়েভ এবং ব্লুটুথ স্পিকার সহ অন্যান্য ডিভাইসের রেডিও ওয়েভ দ্বারাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আপনি যদি আপনার বাড়ির এক প্রান্তে আপনার ওয়্যারলেস রাউটার রাখেন, তাহলে অন্য প্রান্তে নেটওয়ার্কের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য আপনার রাউটার রাখার জন্য উপযুক্ত একটি স্থান নির্বাচন করুন। কারণ বাসা বাড়িতে এক ঘরে রাউটার রাখলে অন্য ঘরে নেটওয়ার্ক পেতে বেশ সমস্যা হয়। তাই এমন একটি সেন্ট্রাল পয়েন্টে রাখুন যেখানে আপনি প্রায়শই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে বাড়ির মাঝ বরাবর কোনো স্থানে রাউটার স্থাপন করা ভালো। এতে রাউটার ফুল স্পেস কাভার করতে পারে যাতে ইন্টারনেট স্প্রিডও ভালো পাওয়া যায়। 

ভালো মানের রাউটার সিলেকশন 

রাউটার সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক হলো ভালো মানের রাউটার সিলেকশন। আসলে আপনি কতটুকু এরিয়ার মধ্যে ওয়াইফাই কানেকশন দিতে চাচ্ছেন তার উপর বেইস করে রাউটার সিলেক্ট করুন। যেমন ধরুন আপনি পাবলিক প্লেস বা অফিসে ব্যবহারের জন্য রাউটার নিতে চাইলে অবশ্যই ভালো মানের রাউটার সিলেক্ট করুন, কারণ এখানে অনেকগুলো লোক একসাথে কাজ করবে তাই ইন্টারনেট স্প্রিডও ফাস্ট হওয়া চাই। দাম একটু বেশি হলেও ভালো মানের রাউটার কেনায় শ্রেয়।

অ্যান্টিনা এডজাস্ট করুন

রাউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো নেটওয়ার্কের জন্য আপনার রাউটারের অ্যান্টেনা এডজাস্ট করুন।

অনেক ওয়্যারলেস রাউটার এবং গেটওয়েতে অভ্যন্তরীণ অ্যান্টেনা রয়েছে অর্থাৎ সেগুলি ডিভাইসের ভিতরে মাউন্ট করা হয়েছে এবং আপনি সেগুলি এডজাস্ট করতে পারবেন না। কিন্তু রাউটারের সাথে সংযুক্ত অ্যান্টেনাগুলো এডজাস্ট করে নিতে পারেন। সংযুক্ত অ্যান্টেনাগুলো সবদিকে মুভ করানো যায়। তাই আপনার যদি একাধিক ফ্লোরে সিগন্যাল পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে যেদিকে সিগন্যাল পাঠাতে চান ওদিকে অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে দিন। 

নিচু স্থান বর্জন করুন 

আপনার প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ব্যবহৃত রাউটারটি কখনই নীচু কোনো স্থান বা মেঝেতে রাখবেন না। কারণ এতে ইন্টারনেট স্প্রিড একদমই স্লো পাওয়া যায়। তাই চেষ্টা করবেন এমন কোনো উঁচু স্থানে রাখতে যেখান থেকে পুরো প্লেস কাভার করে। উঁচু স্থানে রাখলে ফাস্ট স্প্রিড পাবেন। তাইতো ভালো স্প্রিড পেতে উঁচু ও ফাঁকা স্থান বেঁছে নিন।

বাধাপ্রাপ্ত স্থানে রাউটার স্থাপন নয়

রাউটার ব্যবহার করার মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো ইন্টারনেট স্প্রিড পাওয়া। তাইতো সিগন্যাল যেনো বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেদিকটাও আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি। সেজন্য এমন কোনো জায়গা নির্বাচন করা যাবে না যেখানে সিগন্যাল পায় না। বড় কোনো ব্যারিয়ার যেমন- ঘরের ওয়াল, সিলিং, বড় টুলস, ফিজিক্যাল অবজেক্ট বা বড় ফার্নিচারের পাশে রাউটার রাখলে সিগন্যাল পায় না এবং সিগন্যাল বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এতে আপনি কাঙ্ক্ষিত স্প্রিড থেকে বঞ্চিত হবেন।

ঝড়ে সতর্ক থাকুন

যারা রাউটার ব্যবহার করেন তারা বজ্রপাত ও ঝড়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকুন আপনার বাড়ি বা অফিসের রাউটার নিয়ে। কারণ রাউটারের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো বজ্রপাত ও ঝড়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ সময় অবশ্যই আপনার ওয়াইফাই রাউটারটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন অর্থাৎ লাইনটি খুলে রাখুন। সেই সাথে ল্যান ক্যাবলটিও খুলে দিন। এতে আপনার রাউটার ও রাউটারের সাথে সরাসরি যুক্ত ডিভাইসটিও সুরক্ষিত থাকবে।

রাউটার রেডিয়েশন 

ওয়াইফাই রাউটার থেকে রেডিয়েশন নির্গত হয়৷ তাই রাউটার ব্যবহারের বিষয়ে রেডিয়েশনের দিকটি নিয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘদিন রাউটারের কাছে থাকলে স্কিন ডিজিজ হতে পারে। তাছাড়া শিশু ও গর্ভবতী মায়ের জন্য রাউটারের রেডিয়েশন বেশ ভয়াবহ। রেডিয়েশন শিশুর মানসিক বিকাশ ও গর্ভবতী নারীর ভ্রুণের বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়া প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে এটি দায়ী। এজন্য রাউটারের ব্যবহারের দিকে সতর্ক হতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় সংযোগগুলি ছাঁটাই করুন 

রাউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার অব্যবহৃত ডিভাইস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা উচিত। বাড়িতে ব্যবহৃত রাউটারে আপনি এক বা একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত করলে ওয়াইফাই স্প্রিড ভালো পাবেন না। গেমিং কনসোল, পিসি, স্মার্টফোন, স্মার্টটিভি, স্মার্ট হোম ডিভাইস সহ বিভিন্ন ডিভাইসে সংযোগ থাকলে এবং একাধিক ডিভাইস চালালে স্প্রিডের রদবদল ঘটে এবং স্লো হয়ে যায়। তাই একটি অথবা দুটি ডিভাইস সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাজ করুন।

 

এছাড়া অপ্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দ্রুততম উপায় হলো আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। তাছাড়া আপনি বর্তমানে ব্যবহার করছেন এমন প্রতিটি ডিভাইসে নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার নেটওয়ার্কে আবার লগ ইন করতে হবে। এই পদ্ধতিটি সমস্ত অপ্রয়োজনীয় সংযোগগুলিকে মুছে ফেলবে, এতে আপনি ফাস্ট নেট পাবেন ও রাউটার সিকিউর থাকবে।

সাময়িক বন্ধ রাখা

যেকোনো জিনিস একভাবে চালানো ঠিক নয়। সবকিছুরই সাময়িক বিরতির প্রয়োজন। রাউটারও তার ব্যতিক্রম নয়৷ প্রতিদিন বা মাঝেমধ্যেই রাউটার অল্প সময়ের জন্য বন্ধ রাখুন এবং পুনরায় চালু করুন। এতে ওয়াইফাই স্প্রিড ভালো পাবে এবং আপনিও প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত গতিতে করতে পারবেন। 

রাউটার প্রতিস্থাপন

ভালো ইন্টারনেট সেবা পেতে আমরা কমবেশি রাউটারের উপর নির্ভর করি। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে রাউটার তুলনামূলক খারাপ সার্ভিস দেয় বা স্প্রিড স্লো হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পুরাতন রাউটারটি বদলে নতুন একটি রাউটার নেওয়া প্রয়োজন৷ 

ক্যাবল পরিবর্তন  

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকসময় নিম্নমানের বা দুর্বল ক্যাবল দিয়ে ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন করে। দুর্বল ও নিম্নমানের তার ব্যবহার এর ফলে কিছুদিন পরই তার ছিঁড়ে  যায় বা রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ব্যবহারকারী পড়েন চরম বিপাকে। তাছাড়া নিম্নমানের ক্যাবল স্লো স্প্রিডের জন্য অনেকটাই দায়ী৷ তাইতো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানকে ভালো মানের ক্যাবল দিয়ে ওয়াইফাই সংযোগ দিতে বলুন৷ তাতে নেট স্প্রিড ভালো পাবেন। তবে ক্যাবল অনেকদিন ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই পরিবর্তন করে নিন।

শেষকথা

ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজ গুলো অনেক সহজেই করে নিতে পারছি। আর ইন্টারনেটকে আরও শক্তিশালী ও সহজপ্রাপ্য করে তুলেছে রাউটার। ভালো রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতিও বৃদ্ধি পায়। আর সঠিকভাবে রাউটার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি রাউটারের যথাযথ ব্যবহারও করতে পারবেন। 

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. রাউটার কত প্রকার?

উত্তর: বিভিন্ন প্রকারের রাউটার রয়েছে। যেমন – pocket router,  broadband router, wireless router, core router,  Edge router এবং internet provider broad router।

২. বর্তমান বাজারে রাউটারের দাম কেমন?

উত্তর: শুধু ইন্টারনেট শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশে রাউটারের দাম শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে যেটিতে সাধারণত অ্যান্টেনা থাকে। আর ৩/৪ অ্যান্টিনা হলে দাম শুরু হয় ১,৫০০ টাকা থেকে যা অনেক ব্যবহারকারীর জন্য ভালো। 

৩. ওয়াইফাই স্পিড বাড়াবেন কিভাবে?

উত্তর: ওয়াইফাই স্পিড বাড়ানোর জন্য রাউটার রাখার সঠিক স্থান নির্বাচন করুন এছাড়া ভালো মানের অ্যান্টিনা লাগাতে পারেন।

৪. নতুন রাউটার লাগবে কিভাবে বুঝবেন?

উত্তর: আপনার রাউটার প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন কিনা তা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ওয়াইফাইয়ের স্লো স্প্রীড, খারাপ সার্ভিস, নষ্ট হয়ে যাওয়া।

৫. পকেট রাউটার কি?

উত্তর: পকেট রাউটার হলো এমন একটি যন্ত্র যা দেখতে ছোট মোবাইল ব্যাটারির মতো। এটা ওজনে খুবই হালকা হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই হাতের তালু বা পকেটে জায়গা হয়ে যায়।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button