কম্পিউটারটেকনোলজিসফটওয়্যারহার্ডওয়্যার

হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর মধ্যে পার্থক্য

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারকে যদি বলা হয় একটি আরেকটির পরিপূরক, তাহলে খুব ভুল হবে না। মূলত একটি কম্পিউটার অথবা যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইসকেই দু’টি মোটা দাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো হার্ডওয়্যার, অপরটি হলো সফটওয়্যার। এই দু’টো যে ভিন্ন জিনিস তা মোটামুটি সকলে জানলেও ঠিক কোন কোন দিক দিয়ে ভিন্ন তা সকলের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু কম্পিউটারের বেসিক পরিষ্কার করতে হলে এ সকল পার্থক্য জানা জরুরি। তারই প্রেক্ষিতে আজকের লেখাতে বিভিন্ন ধরন অনুযায়ী হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের পার্থক্য ব্যাখা করা হয়েছে বিস্তারিত। 

হার্ডওয়্যার কি?

হার্ডওয়্যার হলো মূলত সে সকল অংশ যেগুলোর অস্তিত্ব আছে, আকার ও আকৃতি আছে এবং যেগুলো সরাসরি ধরা যায় অথবা ছোঁয়া যায়। মূলত একটি কম্পিউটার বা একটি ডিজিটাল ডিভাইস এর বস্তুগত রুপটিই হলো হার্ডওয়্যার।  

সফটওয়্যার কি? 

কম্পিউটার বা কোনো ডিজিটাল ডিভাইস যে সকল কোড, ডাটা, নির্দেশনা ইত্যাদির সম্বনয়ে কাজ করে সেগুলোকে একত্রে সফটওয়্যার বলে। সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সমূহকে ব্যবহারের মূল চাবিকাঠি। 

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের পার্থক্য 

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার মৌলিকগত ভাবেই ভিন্ন জিনিস। তাই স্বভাবতই এদের মধ্যে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। সে সকল পার্থক্যের সাহায্যে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারনা পাওয়া সম্ভব।

পার্থক্যের ধরন হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার 
স্পর্শ হার্ডওয়্যার স্পৃশ। অর্থাৎ একে স্পর্শ করা যায়। সরাসরি ধরে অনুভব করা যায়। সফটওয়্যার অস্পৃশ। একে স্পর্শ করা যায় না। 
কাজমানুষের দেওয়া ইনপুট অনুযায়ী সফটওয়্যারের নির্দেশনা অনুসারে জটিল হিসেব নিকেশ করা। মানুষের ইনপুট গ্রহণ করা, তা হার্ডওয়্যারের কাছে পৌছে দেওয়া এবং হার্ডওয়্যার দ্বারা লব্ধ ফলাফলকে আউটপুট হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরাই সফটওয়্যারের প্রধান কাজ। 
ভাষা হার্ডওয়্যার নিম্ন-স্তরের মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। সফটওয়্যার উচ্চ স্তরের মনুষ্য ভাষা বুঝতে পারে। এবং সেই ভাষাকে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে পরিবর্তন করতে পারে। 
তৈরির প্রক্রিয়া ফ্যাক্টরিতে কাচামালের সমন্বয়ে আর দশটি পণ্যের মতো তৈরি হয়। এক বা একাধিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মিলে কোড লেখার মাধ্যমে একটি সফটওয়্যার তৈরি করে। 
উপাদান ইলেক্ট্রনিক বোর্ড, সার্কিট, সেমিকন্ডাক্টর ইত্যাদি। সোর্স কোড, প্রোগ্রাম, ডকুমেন্ট, ইন্সট্রাকশন বা নির্দেশনা ইত্যাদি। 
প্রয়োজনীয় মানবসম্পদচাইলেই যে কেউ হার্ডওয়্যার বানিয়ে ফেলতে পারে না। এর জন্য মাঝারি থেকে ভারী শিল্পের প্রয়োজন।দক্ষতা থাকলে চাইলে যে কেউই সফটওয়্যার বানিয়ে ফেলতে পারে। 
সৃজনশীলতাহার্ডওয়্যার তৈরিতে সৃজনশীলতার দেখানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। সফটওয়্যার তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে সৃজনশীল ক্ষেত্রগুলোর একটা। 
আয়ুনির্দিষ্ট আয়ু রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে আয়ুষ্কাল কমে আসে। পদার্থ ক্ষয়িষ্ণু বিধায় হার্ডওয়্যারেরও ক্ষয় আছে। কোনো আয়ু নেই। কোনো ক্ষয় নেই।
কার্যক্ষমতার স্থায়ীত্বসময়ের সাথে সাথে কার্যক্ষমতা অবশ্যম্ভাবী কমে। তবে কার্যক্ষমতা ক্ষমার হার আকষ্মিক নয়, ধারাবিক।   সময়ের সাথে কার্যক্ষমতা নাও কমতে পারে। অনেক আগের সফটওয়্যারও বর্তমান সময়ে কার্যকর হতে পারে। কিন্তু নতুন সফটওয়্যার আকষ্মিক ভাবে স্থান দখল করে নেয় এবং পুরোনো সফটওয়্যার হটাৎ করে তার কার্যক্ষমতা হারায়। 
নির্ভরশীলতাহার্ডওয়্যার সফটওয়্যার উভয়ে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সফটওয়্যার বাদেও হার্ডওয়্যারের অস্তিত্ব থাকতে পারে। হার্ডওয়্যারের অস্তিত্ব না থাকলে সফটওয়্যারের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। 
দাম কোনো হার্ডওয়্যারই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। তবে এর সর্বোচ্চ দাম সফটওয়্যার থেকে কম। অনেক সফটওয়্যারই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কিছু সফটওয়্যারের সর্বোচ্চ দাম যেকোনো হার্ডওয়্যার থেকে অনেক বেশি। 
পরিবহন হার্ডওয়্যার পরিবহন অনেক ঝামেলাদায়ক এবং বিপজ্জনক। অনাকাঙ্খিত যেকোনো আঘাতেই হার্ডওয়্যার ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সফটওয়্যার পরিবহন করতে একটি মেমোরি স্টোরেজই যথেষ্ট। চাইলে ইন্টারনেটের সাহায্যে আরও সহজেই সফটওয়্যারের আদান প্রদান করা সম্ভব। 
সমস্যার কারণ সরাসরি আঘাত, অতিরিক্ত বা অতি নিম্ন তাপ, ধুলা, বৈদ্যুতিক বিভ্রাট, বজ্রপাত, পানি অথবা অন্যান্য তরল, ছত্রাক, পোকামাকড় ইত্যাদি। ভাইরাস, হ্যাকিং, ভুল কোডিং, সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাগ, ওভারলোড, সিস্টেমেটিক এরর, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ড্রাইভার ফেইলর ইত্যাদি। 
ভাইরাস এর প্রভাবসাধারণ পর্যায়ের ভাইরাসের কারণে তেমন হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্থত হয় না। তবে মারাত্নক ভাইরাস হলে তা হার্ডওয়্যারকে স্থায়ী ভাবে অকেজো করে ফেলতে পারে। সাধারণ থেকে অসাধারণ, সকল পর্যায়ের ভাইরাসের ক্ষতিসাধনের মূল লক্ষ্যই থাকে সফটওয়্যার। সফটওয়্যার সকল ক্ষেত্রেই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 
হ্যাকিং এর প্রভাবভাইরাসের মত হ্যাকিং এর ক্ষেত্রেও হার্ডওয়্যার কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে ভাল হ্যাকার হলে কম্পিউটার হ্যাক করে কম্পিউটারের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে কথা রেকর্ড করা এমনকি ক্যামেরা ব্যবহার করে ঘরের ছবি বা ভিডিও করাটাও খুব অসম্ভব কিছু নয়। হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে প্রথমেই স্বীকার হয় সফটওয়্যার। 
প্রতিস্থাপনহার্ডওয়্যার একবার নষ্ট হলে তা ঠিক করাটা সময় এবং পরিশ্রমসাধ্য। কোনো ভাবে একটি সফটওয়্যার করাপ্টেড বা নষ্ট হয়ে গেলেও এর ব্যাকআপ থাকলে খুব সহজেই একে প্রতিস্থাপন করা যায়। 
উদাহরণ প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র‍্যাম, হার্ড ড্রাইভ, সলিড স্টেট ড্রাইভ, গ্রাফিক্স কার্ড, সিপিইউ কুলার, মনিটর, মাউস, কিবোর্ড, স্পিকার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, সিডি ড্রাইভ, কার্ড রিডার ইত্যাদি। উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস, লিনাক্স, ম্যাথেমেটিকা, ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার, গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, জিটিএ ফাইভ, জুম, ইত্যাদি। 

শেষকথা

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের পার্থক্য কম্পিউটার বেসিকের মধ্যেই পড়ে। এসব পার্থক্যকে কম্পিউটার শিক্ষার ভিত্তি বলা চলে। এ সকল বেসিক ধারনা গুলো ভাল ভাবে জানা থাকলে কম্পিউটার জনিত অনেক কিছুই খুব সহজে বোধগম্য হবে, তাতেই এই লেখার স্বার্থকতা।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১। মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ (Machine Language) কি?

উত্তরঃ যে সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে নির্দেশনা গুলো শুধু বাইনারি (Binary) অথবা হেক্সাডেসিমেল (Hexadesimal) এ দেওয়া থাকে এবং সে অনুযায়ী কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সরাসরি কাজ করতে পারে, সেসব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ বলে। 

২। ছত্রাক কিংবা পোকামাকড় কিভাবে হার্ডওয়্যারের সমস্যা করতে পারে? 

উত্তরঃ বেশিরভাগ কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটি ওয়ারেন্টি থাকে। কিন্তু কোনো হার্ডওয়্যারে ছত্রাক পড়লে সাথে সাথেই তার ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যায়। এছাড়াও পোকামাকড় বিভিন্ন সার্কিটের মধ্যে গিয়ে পুড়ে গেলে তার কারণে হার্ডওয়্যারে শর্ট সার্কিট হতে পারে। 

৩। রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Resource Management) দিয়ে কি বোঝানো হয়েছে? এটি কিভাবে সফটওয়্যারের সমস্যা হতে পারে? 

উত্তরঃ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Resource Management) দ্বারা মূলত একটি সফটওয়্যার কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য হার্ডওয়্যারের কতটুকু ক্ষমতা ব্যবহার করবে সেটির ব্যবস্থাপনাকে বোঝানো হয়। এটি মূলত সিস্টেম সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ। এক্ষেত্রে কম রিসোর্স ব্যবহার করলে কাজ ধীরে হতে পারে। বেশি ব্যবহার করলে হার্ডওয়্যার অতিরিক্ত গরম হতে পারে। সব মিলিয়ে রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হলে সফটওয়্যারের সম্পূর্ণ কাজের প্রক্রিয়াতেই বিঘ্ন ঘটতে পারে। 

৪। ড্রাইভার ফেইলর (Driver Failure) কি? এটি কেমন সমস্যার সৃষ্টি করে? 

উত্তরঃ ড্রাইভার হলো এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যা হার্ডওয়্যার এবং এবং সিস্টেম সফটওয়্যারের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করে। কিন্তু ড্রাইভার নিজেই যেহেতু একটি সফটওয়্যার আর এই সফটওয়্যারের সমস্যার কারণে এটি অনেক সময় ফেইল করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যারও কাজ করতে ব্যর্থ হয়। 

৫। হার্ডওয়্যার তৈরিতে বিভিন্ন বস্তুগত উপাদানের প্রয়োজন হলেও সফটওয়্যার তৈরিতে তা লাগে না। তবুও সফটওয়্যারের দাম এত বেশি কেন?

উত্তরঃ সফটওয়্যারের দামটি মূলত মেধার দাম। একটি সফটওয়্যার তৈরিতে ডেভেলপারদের অনেক পরিশ্রম ও মেধা খরচ করতে হয়। যেকোনো হার্ডওয়্যার চালাতে হলে সফটওয়্যার লাগবেই। এর পাশাপাশি অনেক সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনেক উৎপাদনশীল কাজও করা যায়। যেমনঃ এডোবি ফটোশপ, ব্লেন্ডার ইত্যাদি। এ সকল কারণেই সফটওয়্যারের দাম এত বেশি হয়ে থাকে। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button