![ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বিস্তারিত নিয়ম](https://progressbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/06/ড্রাইভিং-লাইসেন্স-করার-নিয়ম.jpg)
সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম (২০২৩)
দৈনন্দিন চলাচলে আমরা প্রায় সকলেই গাড়ি বা অন্যান্য মোটরযান ব্যবহার করি। কখনো যাত্রী হিসেবে আবার কখনো চালক হিসেবে। চালক হিসেবে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে ভালোভাবে ড্রাইভিং শেখার কোন বিকল্প নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স আপনার সেই দক্ষতারই পরিচয় দিয়ে থাকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করা একটি বেশ সময়সাপেক্ষ ও কিছু ক্ষেত্রে জটিল একটি প্রক্রিয়া। ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে সহজে ও নির্ভুলভাবে করা যায় সে বিষয়েই থাকছে আজকের এই লেখাটি।
সূচিপত্রঃ
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?
ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন গাড়ি চালকের অপরিহার্য সঙ্গী। পৃথিবীর সকল দেশেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাতিত গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যেকোনো সময়ই যেকোনো কারণে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ বা যেকোনো আইন রক্ষাকারী বাহিনী আপনার গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে আপনাকে। এসময় প্রথমেই আপনার কাছে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাওয়া হবে। এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর আরো কিছু ব্যবহার রয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স মোটরযান চালানোর অনুমতি বহন ছাড়াও আপনার পরিচয় বহন করে। এই কাজটি এনআইডি কার্ড বা অন্যান্য পরিচয়পত্র গুলো করে থাকলেও সবসময় সেগুলো সাথে রাখা হয় না, প্রয়োজনও পরে না। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স সবসময়ই সাথে রাখতে হয় বলে এটি অনেক সময় নিজের পরিচয় অন্য কারো কাছে নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা যায়। আবার কখনো কোন দুর্ঘটনার পর আপনার পরিচয় জানার কাজেও এটি প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে, বিদেশ ভ্রমণে, কারো কাছে নিজের বয়স নিশ্চিত করতেও ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করা যায়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে বেশ কিছু সহজ শর্ত পূরণ করতে হয়। যা কেউ পূরণ করতে অসমর্থ হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করতে পারবেন না।
শর্তগুলো হলোঃ
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্সঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করার আগে আবেদনকারীকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীর নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ থাকতে হবে।
- বয়সঃ সাধারণ বা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীর বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে। এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীর বয়স ২১ বছর হতে হবে।
- সুস্থতাঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর প্রকারভেদ
ব্যবহার ও প্রয়োজন ভেদে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কিছু প্রকারভেদঃ
১) লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স
২) স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
৩) আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স
এই তিন ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা শর্তাবলী। নিচে প্রত্যেক ধরনের লাইসেন্স ও তা পাওয়ার শর্তাবলী আলোচনা করা হল।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স
![লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স](https://progressbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/06/learner-driving-license.jpg)
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এটি মোটরযান চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই লাইসেন্সটি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নেওয়া শেষ হলে বা সম্পূর্ণভাবে ড্রাইভিং শিখে ফেললে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বেশ সহজ একটি কাজ। এখানে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পদ্ধতি উল্লেখ করছি।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আপনার নিম্নোক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- পরিচয়পত্র/এনআইডি কার্ড অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি।
- আবেদনকারী যে বাসায় স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছে তার এক মাসের বিদ্যুত বিল বা অন্য কোন ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি।
- পূর্ববর্তী ড্রাইভিং লাইসেন্স ও শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে) এর তথ্যাদি। (এটি শুধুমাত্র ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আবেদন এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।)
- নির্ধারিত ফি বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে পরিশোধ এর রশিদ।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফরম
![লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র](https://progressbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/06/papers.jpg)
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
উপরে উল্লিখিত কাগজপত্র সংগ্রহ করা শেষ হলে আপনি লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার কাজ শুরু করতে পারবেন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এ আবেদন করার ধাপসমূহঃ
ধাপ-১: বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা বা ডাউনলোড করা ফরমটির প্রথম পৃষ্ঠা নিজে পূরন করুন।
ধাপ-২: ফরমের দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট হিসেবে দেয়া হয়েছে। সে পৃষ্ঠাটি কোন রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক পূরণ করান এবং তার স্বাক্ষর নিন।
ধাপ-৩: ফরমের সাথে নির্ধারিত ব্যাংকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পরিশোধ করা ফি এর রশিদ, এনআইডি (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি, ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি যুক্ত করুন।
ধাপ-৪: ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন।
ধাপ-৫: ফরমের সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন্য একটি তারিখ দেয়া হবে। তারিখটি জমা দেয়ার ১/২ দিনের মধ্যেই দেয়া থাকে। ঐ নির্দিষ্ট তারিখে বিআরটিএ এর অফিসে উপস্থিত হয়ে রিসিপশন বুথ থেকে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফরমটি সংগ্রহ করুন।
ধাপ-৬: ফরম ও লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি সংগ্রহের পর বিআরটিএ এর নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে সেগুলো স্বাক্ষর করিয়ে নিন।
ধাপ-৭: ফরমটি আবার রিসিপশন বুথে জমা দিন এবং লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি সাথে করে নিয়ে যান। আপনি এই লাইসেন্সটি ব্যবহার করেই ড্রাইভিং এর প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এবং স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর মেয়াদ ৩ মাস। ৩ মাস পর আপনি লাইসেন্সটি ব্যবহার করতে পারবেন না।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
![স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স](https://progressbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/06/smartcard-driving-license.jpg)
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি মোটরযান চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স উত্তোলন এর কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। এটি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নামে পরিচিত। এই স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি পেশাদার বা অপেশাদারভাবে দেশের যেকোনো রাস্তায় আইনানুসারে মোটরযান চালাতে পারবেন।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করার সময় বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলো-
- স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম।
- রেজিস্টারকৃত ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি (NID) কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- নির্দিষ্ট ফি বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর মূল কপি ও ফটোকপি।
পরীক্ষা পদ্ধতি
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এ ড্রাইভিং এর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থান উল্লেখ করা থাকে। নির্দিষ্ট পরীক্ষার দিনে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক এই তিন ধরনের পরীক্ষা দিতে হবে। সাধারণত পরীক্ষার তারিখটি লার্নার লাইসেন্স নেয়ার ২ থেকে ৩ মাস পর হয়ে থাকে।
নিচে পরিক্ষা পদ্ধতি আলোচনা করা হলঃ
- নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কলম সহ উপস্থিত হতে হবে।
- প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নে মূলত ড্রাইভিং ও গাড়ির রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন আসবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সাধারণত ২৫-৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়। পরীক্ষায় পাশ করতে নূন্যতম ৬৬% নম্বর লাগবে।
- এরপর মৌখিক পরীক্ষা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় রাস্তার বিভিন্ন চিহ্নের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে।
- সবশেষে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় আপনাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালিয়ে দেখাতে হবে। সাধারণত এই পরীক্ষায় পার্কিং করা, জিগজ্যাগ করা চালানো, একটি নির্দিষ্ট লাইন ধরে গাড়ি চালানো সহ আরো কিছু ড্রাইভিং-এর দক্ষতা দেখাতে হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
উপরে উল্লেখিত পরীক্ষা সমূহে উত্তীর্ণ হলে আপনি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন নিচের সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করে।
ধাপ-১: নির্দিষ্ট ফরমটি পূরণ করুন। ফরম পূরণের ক্ষেত্রে সকল ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের দিন। যে সকল পয়েন্ট আপনার জন্য নয় সেগুলো খালি রাখুন।
ধাপ-২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের সাথে যুক্ত করুন।
ধাপ-৩: পরীক্ষায় পাশের রেজাল্ট আসার পর কাগজপত্র সহ ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন। রেজাল্ট টি বিআরটিএ অফিসে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ধাপ-৪: ফরমটি জমা দিলে তারা ফরমটি গ্রহণ করে একটি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ দিবে। রশিদে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্যাদি নেয়ার তারিখ দেয়া থাকবে। সাধারণত তারিখটি ফরম জমা দেয়ার তারিখের ১ মাস পর হয়ে থাকে।
ধাপ-৫: বায়োমেট্রিক তথ্যাদি নেয়ার তারিখে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদটি নিয়ে বিআরটিএ অফিসে চলে যান। সেখান থেকে প্রথমে টোকেন সংগ্রহ করে টোকেনের নাম্বার অনুযায়ী ভিতরে প্রবেশ করুন।
ধাপ-৬: ভিতরে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে আপনার তথ্য দিন। এরপর তথ্যগুলো পরীক্ষা করে দেখুন।
ধাপ-৭: তথ্যগুলো ঠিক থাকলে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্যাদি প্রদান করুন। বায়োমেট্রিক তথ্যাদি হিসাবে এখানে আপনার ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর গ্রহণ করা হবে।
ধাপ-৮: বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণ করে আপনাকে একটি কাগজ দেয়া হবে যেখানে স্মার্টকার্ড লাইসেন্স দেয়ার তারিখ লেখা থাকবে।
ধাপ-৯: নির্দিষ্ট তারিখে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সটি গ্রহণ করুন। নির্ধারিত তারিখের আগেই কখনো কখনো লাইসেন্স তৈরী হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
ধাপ-১০: ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী হয়ে যাওয়ার এসএমএস পেয়ে গেলে এসএমএস এর তারিখ ও এসএমএস-এ উল্লেখিত ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার এবং প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ সহ বিআরটিএ অফিসে উপস্থিত হোন।
ধাপ-১১: নির্দিষ্ট লাইনে দাঁড়িয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স
![আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স](https://progressbangladesh.com/wp-content/uploads/2021/06/international-driving-license.jpg)
বিআরটিএ থেকে সাধারণ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে আপনি সেটি ব্যবহার করে দেশের ভেতরের যেকোনো রাস্তায় মোটরযান চালাতে পারবেন। কিন্তু এই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি দেশের বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ থেকে আলাদা ভাবে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করার পদ্ধতি রয়েছে। যে ড্রাইভিং লাইসেন্সটি দেশের বাইরেও একইভাবে কার্যকর।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে নির্ধারিত কিছু ধাপ পূরণ করতে হবে। ধাপগুলো হলো:
- স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
- আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে নিন।
- ফরমটি পূরণ করুন।
- ফরমের সাথে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর সত্যায়িত ফটোকপি, ১ কপি পাসপোর্ট ও ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি এবং পাসপোর্টের ১ থেকে ৪ নং পাতার ফটোকপি যুক্ত করুন।
- আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর অফিসে ফরম ও কাগজপত্র জমা দিন।
- আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর অফিসে ফি জমা দিয়ে একটি রশিদ গ্রহণ করুন।
- রশিদে উল্লেখিত তারিখে অফিস থেকে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
ড্রাইভিং লাইসেন্স ১৮ বছরের উপরে যে কেউ তৈরী করতে পারলেও পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আপনার বয়স ২০ বছর বা তারও বেশী হতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া আপনি ভারী যানবাহন চালাতে পারবেন না। এমনকি সাধারণ হালকা যানবাহন চালানোর চাকরিও আপনি করতে পারবেন না। তাই অনেকের জন্যই পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়ে থাকে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর প্রকারভেদ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ৩ ধরনের হয়ে থাকেঃ
- পেশাদার হালকা
- পেশাদার মধ্যম
- পেশাদার ভারী
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই তিন ধরনের লাইসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
১) পেশাদার হালকা
এধরণের পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি ২৫০০ কেজি এর কম ওজনের যানবাহন পেশাদারভাবে চালাতে পারবেন। এই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর বয়স নূন্যতম ২০ বছর হতে হবে।
২) পেশাদার মধ্যম
এধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি ২৫০০ কেজি থেকে ৬৫০০ কেজি এর মধ্যে ওজন যুক্ত যানবাহন পেশাদারভাবে চালাতে পারবেন। এধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনার বয়স নূন্যতম ২৩ বছর হতে হবে। এবং একইসাথে আপনার পেশাদারভাবে হালকা যানবাহন চালানোর ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৩) পেশাদার ভারী
এধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি ৬৫০০ কেজি এর বেশি ওজনের যানবাহন চালানোর অনুমতি পাবেন। এধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনার বয়স নূন্যতম ২৬ বছর হতে হবে। এবং পেশাদার হালকা যানবাহন চালানোর ৩ বছরের ও পেশাদার মধ্যম যানবাহন চালানোর ৩ বছরের অর্থাৎ মোট ৬ বছরের পেশাদার ড্রাইভিং-এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি সাধারণ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করার মতোই। শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজ হিসেবে এক্ষেত্রে আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করিয়ে নিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার খরচ
ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরীর প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। নিচে এগুলোর তালিকা দেওয়া হলঃ
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর খরচঃ
- ক্যাটাগরি-১: শুধুমাত্র এক ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য প্রযোজ্য লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রে- ৩৪৫ টাকা
- ক্যাটাগরি-২: গাড়ি এবং মোটরসাইকেল উভয়ের লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রে- ৫১৮ টাকা
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর খরচঃ
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রেঃ ১৬৭৯ টাকা (৫ বছরের নবায়ন ফি সহ)
- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রেঃ ২৫৪২ টাকা (১০ বছরের নবায়ন ফি সহ)
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর খরচঃ
- ১২ কর্মদিবসে লাইসেন্সটি পেতে হলেঃ ২৫০০ টাকা
- ৫ কর্মদিবসে লাইসেন্সটি পেতে হলেঃ ৩৫০০ টাকা
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
আপনি চাইলে আপনার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে আপনার লাইসেন্স-এর অবস্থা জানতে পারবেন। প্রথমে আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন DL DM****** ( * এর স্থানে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে উল্লেখিত রেফারেন্স নাম্বার বসবে) এবং পাঠিয়ে দিন 6969 এই নাম্বারে।
Type: “DL DM9914601 and Send to “6969”
ফিরতি ম্যাসেজে আপনাকে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর অবস্থা জানিয়ে দেওয়া হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন
সাধারণত স্মার্টকার্ড পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর মেয়াদ হয়ে থাকে ৫ বছর এবং স্মার্টকার্ড অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর মেয়াদ হয়ে থাকে ১০ বছর। এই নির্দিষ্ট সময় পরে লাইসেন্সটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। তাই মেয়াদ শেষ হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা আবশ্যক। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার পদ্ধতি দেয়া হলো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফরম।
- রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট-এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
- নির্ধারিত ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়ার রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের খরচ
অপেশাদারঃ
১) লাইসেন্স-এর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ২৪২৭ টাকা।
২) লাইসেন্স-এর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন বা তারও পরে আবেদন করলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৩০ টাকা জরিমানা সহ।
পেশাদারঃ
১) লাইসেন্স-এর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ১৫৬৫ টাকা।
২) লাইসেন্স-এর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন বা তারও পর আবেদন করলে প্রতি বছর ২৩০ টাকা জরিমানা সহ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন বা রিনিউ করতে নিচের নিচের ধাপসমূহ অনুসরন করুনঃ
ধাপ-১: প্রথমে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের পুনরায় একটি ড্রাইভিং-এর ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের জন্য ধাপটি প্রযোজ্য নয়।
ধাপ-২: ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফরম পূরণ করুন।
ধাপ-৩: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের সাথে যুক্ত করুন।
ধাপ-৪: বিআরটিএ অফিসের নির্দিষ্ট জায়গায় ফরমটি কাগজপত্র সহ জমা দিন।
ধাপ-৫: কাগজপত্রে সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্যাদি প্রদান করতে হবে। বায়োমেট্রিক তথ্যাদি দেওয়ার জন্য বিআরটিএ অফিসের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর প্রদান করুন। এরপর আপনাকে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ-৬: স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করা শেষ হলে আপনার মোবাইলে এসএমএস আসবে। এসএমএস আসলে বিআরটিএ অফিস থেকে নিয়মানুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সটি সংগ্রহ করুন।
শেষকথা
ড্রাইভিং লাইসেন্স একই সাথে যেমন আপনার মোটরযান চালানোর অনুমতি বহন করে, তেমনি এটি আপনার পরিচয়পত্র হিসাবেও কাজ করে। ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিকভাবে অর্জন করা একজন লোকের হাতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই সঠিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করা সকল মোটরযান চালকের নিরাপদে চলাচলের জন্য অপরিহার্য।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়েছে কিনা কিভাবে জানবো?
উত্তরঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়ে কিনা তা জানার একটি মাত্র উপায় সেটি হল মোবাইলে এসএমএস মাধ্যমে চেক করা। যা উপরে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায় কিভাবে?
উত্তরঃ অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায়না। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর স্ট্যাটাস চেক করতে হলে মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে চেক করতে হবে।
স্মার্টকার্ড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দেয়া নির্দিষ্ট পরীক্ষার তারিখে উপস্থিত হতে না পারলে কি করবো?
উত্তরঃ স্মার্টকার্ড লাইসেন্স-এর জন্য নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা দিতে উপস্থিত না হলে নির্দিষ্ট ব্যাংকে ৮৭ টাকা জমা দিয়ে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করে নিতে হবে।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় ফরমে প্রশিক্ষকের তথ্য ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর তথ্য কোথায় পাবো?
উত্তরঃ আপনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ড্রাইভিং শিখে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকের ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর তথ্য দিন। অন্যথায় আপনি চাইলে আপনার পরিচিত যে কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর নাম্বার তার অনুমতি নিয়ে ফরমে ব্যবহার করতে পারেন।
ঢাকার বাইরের কোন ব্যাক্তি কি ঢাকা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবে?
উত্তরঃ লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানাকেই শুধুমাত্র গুরুত্ব দেয়া হয়। তাই আপনি পরিচয় কারো ঠিকানা ও তার ইউটিলিটি বিলের কাগজপত্র ব্যবহার করে সেই জায়গা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স কি বিআরটিএ-এর একই অফিস থেকে তৈরী করতে পারবো?
উত্তরঃ ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অন্যান্য বিআরটিএ অফিস থেকে দেয়া হয় না। ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে বিআরটিএ-এর ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার আলাদা অফিসে যেতে হবে। যার সারাদেশে একটি মাত্র শাখা রয়েছে। অফিসটির ঠিকানা: ৩বি, আউটার সার্কুলার রোড, মগবাজার, ঢাকা।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য নেয়া পরীক্ষায় কি বিষয়ক প্রশ্ন আসে?
উত্তরঃ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য নেয়া পরীক্ষায় সাধারণত গাড়ি চালানো ও গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন দেয়া হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১) বিআরটিএ
সর্বশেষ আপডেটের তারিখঃ ০৭/০২/২০২১