ইমেইলইমেইল মার্কেটিংটিপসটেকনোলজিপড়াশুনা

বাংলা ও ইংরেজি তে ইমেইল লেখার নিয়ম

ইমেইল, শব্দটি চেনেন না এমন কাউকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য আদান প্রদান থেকে শুরু করে দৈনিক বার্তা প্রেরণ, চাকরির আবেদন, ইমেইল মার্কেটিং সহ ডিজিটাল জগতের প্রধান যোগাযোগই মাধ্যমই হলো ইমেইল। স্ট্যাটিস্টা (Statista) এর তথ্য মতে ২০২১ সালে সারা বিশ্ব জুড়ে দৈনিক প্রেরিত ইমেইলের সংখ্যা ছিল ৩২০ বিলিয়ন! সংখ্যাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। তবে উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে ইমেইলের উপর অনেকটাই কম নির্ভর করা হয়। কিন্তু বর্তমানের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বৈশ্বিক গ্রাহকদের সাথেই যোগাযোগ করতে হবে। আর তার প্রধান মাধ্যমই হলো ইমেইল। তবে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ ২০২৩ সালে এসেও সঠিক উপায়ে ইমেইল করার নিয়ম জানেন না। আর সঠিক ভাবে ইমেইল না করতে পারাটা বাংলাদেশের বেকার সমস্যার অন্যতম অর্ন্তনিহিত কারণ। ঠিক সেজন্যই এই লেখাতে সহজ বাংলায় তুলে ধরা হয়েছে একটি পেশাদার ইমেইল লেখার বিস্তারিত। সাথে থাকছে যেকোনো ইমেইলকেই আরও সহবোধ্য করার দারুণ কিছু টিপস। 

সূচিপত্রঃ

ইমেইল কি?

এক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে কোনো নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আরেক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে প্রেরিত বার্তাকেই বলে ইমেইল বা ইলেক্ট্রনিক মেইল। সহজ কথায় এটি মেইল বা বার্তার ইলেক্ট্রনিক সংস্করণ। তবে ইমেইল লেখার নিয়ম সম্পর্কে পড়ছেন তার মানে অবশ্যই আপনার ইমেইল সম্পর্কে কিছুটা ধারনা রয়েছে। তাহলে চলুন সরাসরি জানা যাক ইমেইলের ধরন ও গঠন সম্পর্কে। 

ইমেইলের ধরন 

ইমেইলকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। 

  • ইনফরমাল
  • সেমি-ফরমাল 
  • ফরমাল 

ইনফরমাল

ইনফরমাল এর সহজ বাংলা হলো অনানুষ্ঠানিক। অনেকে ‘ঘরোয়া’ ও বলে থাকেন। আর এক্ষেত্রে ঘরোয়া শব্দটিই বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ ইনফরমাল ইমেইল সাধারণত ঘরের মানুষকেই পাঠানো হয়। এ ধরনের ইমেইলে নিয়ম-কানুনের তেমন কোনো বালাই থাকে না বললেই চলে। এমন ইমেইলের প্রাপক সাধারণত হয়ে থাকেন বন্ধু-বান্ধব ও আত্নীয় স্বজনেরা। 

সেমি-ফরমাল 

সেমি-ফরমাল ইমেইলকে বলা চলে অর্ধ-আনুষ্ঠানিক। এই ইমেইল গুলো মূলত আনুষ্ঠানিক ইমেইলই। কিন্তু অনেকবার কারও সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করলে কিছুটা অনানুষ্ঠানিকতা চলেই আসে। এ ধরনের মেইলকেই বলা হয়ে থাকে সেমি-ফরমাল ইমেইল। আর এর প্রাপক সাধারণত হয়ে থাকেন টিমমেট অথবা আপনার অফিসের কলিগ। 

ফরমাল

ফরমাল এর বাংলা প্রতিশব্দ আনুষ্ঠানিক বা পেশাদার। আর মূলত এই ধরনের ইমেইল লেখা নিয়েই কথা বলবো আজকের লেখাতে। কারণ ফরমাল ইমেইলেই সকল নিয়ম-কানুন রক্ষা করা লিখতে হয়। আর এসব ইমেইলের প্রাপক সাধারণত হয়ে থাকেন সম্পূর্ণ অপরচিত ব্যক্তিরা। চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক চুক্তি, সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন ফরমাল ইমেইল এর। 

ইমেইলের গঠন 

ইমেইলের গঠন সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই অল্প বিস্তর ধারনা রয়েছে। কিন্তু ইমেইলের গঠন সবচেয়ে বেশি মানা হয়ে থাকে ফরমাল ইমেইল এ। আর ইমেইলকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। 

  • বিষয় বা সাবজেক্ট (Subject) 
  • ভূমিকা বা ওপেনার (Opener) 
  • মূল অংশ বা বডি (Body) 
  • ইতিকথা বা ক্লোজার (Closure) 

ইমেইল লেখার বিস্তারিত নিয়মাবলী

ইমেইল লেখার নিয়ম লিখে সার্চ করলে আপনি হয়তো অনেক নিয়মই পাবেন। কিন্তু একটি কার্যকরী ইমেইল লিখতে হলে আপনার ইমেইলের গঠন হওয়া চাই সুপষ্ট এবং সঠিক। আর সাধারণ ইমেইল লিখতে পারলেও গঠন অনুসারে প্রতি ধাপে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ইমেইল লিখতে পারেন না অনেকেই। আর তাই যেভাবে ইমেইলটিকে গঠন অনুসারে লিখবেন তা সম্পর্কে থাকছে বিস্তারিত। 

ইমেইলের বিষয় লেখার নিয়ম

ইমেইলের সাবজেক্ট তথা বিষয়কে বলা চলে ইমেইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ইমেইলটা যদি থেকে থাকে একজন অপরিচিত ব্যক্তির ইনবক্সে, তাহলে এই সাবজেক্টই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কথায় আছে ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী’। ঠিক সে কথার মতই অপর প্রান্তের অপরিচিত ব্যক্তিটি আপনার সাবজেক্ট লাইনটি দেখেই সিধান্ত নেবে যে সে ইমেইলটি খুলবে নাকি খুলবে না। এক্ষেত্রে ইমেইলের একটি কার্যকরী বিষয় লিখতে যা করণীয়ঃ- 

  • ইমেইলের বিষয় খুব সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করুন, ৬০ অক্ষরের মধ্যে হলে ভাল হয়। 
  • এক লাইনে আপনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার ভাবে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করুন। ব্যক্তি যাতে ইমেইলের বিষয় পড়েই বুঝতে পারেন যে আপনি কি সম্পর্কিত ইমেইল করেছেন। 
  • স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে এমন শব্দ সাবজেক্ট লাইনের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলুন। যেমন আর্জেন্ট (Urgent), লিমিটেড টাইম অফার (Limited time offer) ইত্যাদি। এছাড়াও অহেতুক আর্জেন্ট বা এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করলে পাঠক আপনার উপরে বিশ্বাস হারাবে। যার ফলে ইমেইলটিকে গুরুত্ব না দেওয়া বা জবাব না দেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। 
  • খানিকটা ব্যক্তিগতকরণ করুন। প্রয়োজনে ব্যক্তির নাম ইমেইলের বিষয়ের মধ্যে কৌশলে উল্লেখ করুন। 
  • ইমেইলের বিষয় লেখার বিভিন্ন ধরন ব্যবহার করে দেখুন কোন ধরনটি বেশি ভাল কাজ করছে। 

ইমেইলের ভূমিকা লেখার নিয়ম

যেকোনো ইমেইলের ক্ষেত্রেই ভূমিকাটি বেশ তাৎপর্য বহন করে। পেশাদার ইমেইলের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। কারণ ইমেইলের বিষয় দেখে ইমেইলটি খোলার পরে এই ভূমিকা পড়েই অধিকাংশ মানুষ ঠিক করেন পুরো ইমেইলটি পড়বেন কি না। এক্ষেত্রে ইমেইলের ভূমিকা বলতে শুধু প্রথম প্যারাটিই নয় বরং প্রাপকের নাম, পদবী, সম্ভাষণ এগুলোও ভূমিকার অন্তর্ভুক্ত। আর ইমেইলের কার্যকরী একটি ভূমিকা লিখতেঃ- 

পদ ও নাম উল্লেখ করুন

বাংলাদেশে এর খুব বেশি প্রচলন না থাকলেও একটি পেশাদার ইমেইলের প্রথমেই প্রাপকের নাম ও পদবী আলাদা করে উল্লেখ থাকা উচিত। যেমনঃ-

এস, এম, নাহিয়ান

বিভাগীয় প্রধান 

প্রোগ্রেস বাংলাদেশ 

পেশাদার ইমেইলের শুরুতে এভাবেই প্রাপকের নাম, তার পদবী এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামটি উল্লেখ করে দিন। সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত ঠিকানাও উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে প্রাপক ইমেইলটিকে একটু বেশি গুরুত্বের সহিত নেবেন। এটিও বুঝতে পারবেন যে আপনি তার সম্পর্কে জেনেই তাকে ইমেইলটি করেছেন। 

সঠিক সম্ভাষণ

পেশাদার ইমেইলের ক্ষেত্রে সঠিক সম্ভাষণ ভূমিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ সম্ভাষণ সঠিক না হলে অনেক কর্মকর্তাই ইমেইল পড়েও দেখেন না। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তিকে ডিয়ার স্যার (Dear Sir) বলে সম্বোধন করাই শ্রেয়। তবে সকলেই এমন সম্বোধন করে থাকেন। এক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা হতেঃ- 

  • ডিয়ার স্যার লেখার পরিবর্তে ডিয়ার এর পরে সরাসরি উনার নাম লিখুন। যেমন ডিয়ার এস এম নাহিয়ান (Dear S. M. Nahiyan)। 
  • যদি ইমেইল গ্রহিতার পিএইচডি ডিগ্রি থেকে থাকে তাহলে নামের আগে ডক্টর (Dr. ) লিখে সম্বোধন করুন। 
  • যদি ইমেইল গ্রহিতা একজন চিকিৎসক হয়ে থাকেন তাহলেও নামের আগে ডক্টর (Dr. ) লিখে সম্বোধন করুন। 
  • যদি ইমেইল গ্রহিতা একজন অধ্যাপক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তার নামের পূর্বে প্রফেসর (Prof. ) লিখে সম্বোধন করুন। এক্ষেত্রে তিনি যদি সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক হয়ে থাকেন তাহলেও অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যাসোশিয়েট লেখার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রফেসর (Prof. ) লিখুন। 
  • পেশাদার ইমেইলে প্রথমেই হাই, হ্যালো ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা সম্পূর্ণ রুপে পরিহার করুন। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রথমেই এমন সম্ভাষণকে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়। 

ভূমিকা লিখুন

ইমেইলের প্রথম প্যারাটিই সাধারণত এর ভূমিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এ প্যারাতেই যদি গ্রাহক ইমেইলের বিষয়বস্তু ধরতে না পারেন তাহলে তার ইমেইলটিকে অবহেলা করার সম্ভাবনা অনেক। এক্ষেত্রেঃ- 

  • প্রথমে ধন্যবাদমূলক একটি বাক্য লিখুন। যেমন ‘I hope this email finds you well’। 
  • এরপরে সরাসরি চলে যান আপনি কেন ইমেইলটি করছেন সেই বিষয়ে। চেষ্টা করুন একটি বাক্যেই আপনার ইমেইলের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে তোলার।
  • উদ্দেশ্য বলার আগে বা পরে চাইলে এমন কিছু প্রাসঙ্গিক কথা লিখতে পারেন যা আপনার ইমেইলকে আরও অর্থবহ করে তুলবে। যেমন প্রাপকের সাথে পূর্বে কোথাও পরিচয় হয়ে থাকলে, অথবা তার কোনো লেখা ভাল লেগে থাকলে সেটি সংক্ষিপ্ত ভাবে উল্লেখ করতে পারেন। 
  • ভূমিকাটকে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত রাখুন। ভূমিকা এমন হওয়া উচিত যেন মাত্র ২০-২৫ সেকেন্ডেই তা পড়া হয়ে যায়। 

ইমেইলের মূল অংশ লেখার নিয়ম 

ইমেইলের বডিকেই বলা হয় ইমেইলের মূল অংশ। কারণ ইমেইলের এই অংশেই আপনি আপনার কাঙ্খিত বিষয় বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবেন। তাই স্বভাবতই ইমেইলের বডি বা মূল অংশ লেখার সময় আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রেখে লিখতে হবে। এতে আপনার ইমেইলের গ্রহণযোগ্যতা আরও অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। 

সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় লিখুন 

ইমেইলের মূল অংশ লেখার ক্ষেত্রে এই দুইটি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবে কেউই হাজার শব্দের একটি ইমেইল পড়ে দেখে নি। বরং অধিকাংশ মানুষই ইমেইলে একবার চোখ বুলিয়েই বোঝার চেষ্টা করে যে আসলে ইমেইলে কি বলেছে। তাই ইমেইলের ভাষা সহজ ও সংক্ষিপ্ত হওয়া প্রায় বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রেঃ- 

  • ভাষা সহজ রাখতে সংক্ষিপ্ত বাক্যে ইমেইল লিখুন। একটি বড় বাক্যকে ভেঙ্গে প্রয়োজনে একাধিক বাক্য করুন। 
  • নতুন কাউকে ইমেইল করার সময় টেকনিক্যাল (Technical) শব্দ এড়িয়ে চলুন। যেমন ডাক্তারী পেশায় মাত্র দুইটি শব্দ দ্বারাই একজন ডাক্তার অনেক কিছু আরেকজনকে বুঝিয়ে ফেলতে পারবে যা একজন সাধারণ মানুষ বুঝবে না। তাই প্রাপক আপনার ব্যবহৃত শব্দ বুঝবে কি না তা মাথায় রেখে লিখুন। 

মূল বক্তব্য পরিষ্কার করুন

আপনি সব নিয়ম মেনে সুন্দর ফরম্যাটে একটি ইমেইল লিখলেও আপনার ইমেইলের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু আপনার কাজ হাসিল করা। আর আপনি আসলে কি চাচ্ছেন সেই ব্যাপারটি এক কথায় বলে দেওয়াতেই রয়েছে ইমেইলের স্বার্থকতা। এই কাজটিকেই ইংরেজিতে অনেকেই বলে সিটিএ (CTA) বা কল টু একশন। এটি মূলত ইমেইল মার্কেটিং এর বিষয় হলেও সাধারণ ইমেইলেও আপনি আসলে কি চাচ্ছেন সেটি এক লাইনের মাধ্যমে শেষ করাকে কল টু একশন বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেঃ-

  • আপনি যদি প্রাপকের সাথে দেখা করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চান সেক্ষেত্রে ইমেইলের মূল অংশের শেষে সরাসরি যুক্ত করতে পারেন ‘It would be an great oppurtunity to meet you, please let me know your convenient time’ 
  • যদি প্রাপকের কাছ থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ চেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এমনটি লিখতে পারেন, ‘It would be really great if you could find the time to give your valuable opinion on the matter’

এভাবে আপনি আসলে কি চাচ্ছেন তা এক বাক্যে প্রকাশ করুন। এক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন এমন বাক্যটি শুরুতে রাখার। কিন্তু যদি তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে এরপরে তার মতামত / অ্যাপয়েন্টমেন্ট / অনুমতি চান তাহলে সেটি বলেই প্যারাটি শেষ করুন।

ইমেইল শেষ করার নিয়ম 

আপনার ইমেইলটি শেষ করার পর প্রাপকের আপনার প্রতি কেমন ধারনা থাকবে তা নির্ভর করে আপনার ইমেইলের ইতিকথা বা ক্লোজার (Closure) এর উপর। যদিও ইমেইলের মূল অংশে আপনি আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কিন্তু ইমেইলের শেষ অংশ যদি হয় অপেশাদার, তাহলে এত পরিশ্রম বৃথা। 

বক্তব্যের সাথে প্রাসঙ্গিক ইতি টানা 

ইমেইলের বডি বা মূল অংশের পর সেটির বক্তব্যের সাথে মিল রেখেই আপনার ইতি টানতে হবে। যেমন যদি কারো মতামতের জন্য আপনি ইমেইল করে থাকেন তাহলে ইতি টানার সময়েও সে কথা উল্লেখ করতে হবে। বা যেই বিষয়ে ইমেইল করেছেন তা উল্লেখ করে ইতি টানতে হবে। 

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা 

ইমেইলে আপনি ইতিবাচক নেতিবাচক যাই লিখে থাকুন না কেন, ইমেইলের শেষে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাক্যগুলো অনেকটাই এমন হতে পারেঃ ‘Thanks for taking the time to read this email’ / ‘Thank you for your valuable time and consideration’। 

সম্ভাষণ 

ইমেইলের ক্ষেত্রে সম্ভাষণ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা পূর্বেই বলেছি। তবে মনে রাখতে হবে যে, ইমেইলের শুরুতে সম্ভাষন এবং শেষে সম্ভাষণ এক রকমের নয়। ইমেইলের শেষে এক অথবা দুই শব্দে সম্ভাষণ করতে হয়। পেশাদার ইমেইলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সম্ভাষণ হলো ‘সিনসিয়ারলি’ (Sincerely) অথবা ‘সিনসিয়ারলি ইউরস’ (Sincerely Yours)। তবে এছাড়াও আরও যা যা সম্ভাষণ ব্যবহার করতে পারেনঃ- 

  • বেস্ট রিগার্ডস (Best regards)
  • কাইন্ড রিগার্ডস (Kind regards)
  • ওয়ার্ম রিগার্ডস (Warm regards)
  • রিগার্ডস (Regards)
  • অল দ্যা বেস্ট (All the best)
  • থ্যাংকস (Thanks)
  • থ্যাংক ইউ (Thank you)
  • বেস্ট উইশেস (Best wishes)
  • টেক কেয়ার (Take care)

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি কাকে ইমেইল করছেন, তার সাথে আপনার পরিচয় কি রকম সেটি বিবেচনায় রেখেই সম্ভাষণ ব্যবহার করতে হবে। 

স্বাক্ষর প্রদান

পেশাদার ইমেইলের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর প্রদান করাটা বেশ ইতিবাচক একটি বিষয়। স্বাক্ষর সাধারণত সম্ভাষণের পরে এবং নাম পরিচয় প্রদানের আগেই দেওয়া হয়ে থাকে। আপনি চাইলে ইমেইলে আইডিতে আগে থেকেই আপনার স্বাক্ষর সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। 

নাম ও পরিচয় প্রদান 

সাধারণ ইমেইলের ক্ষেত্রে অতটা প্রয়োজনীয় না হলেও পেশাদার ইমেইলের ক্ষেত্রে ইমেইলের শেষে নিজের নাম পরিচয় দেওয়াটা খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে আপনি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলেঃ- 

  • নাম 
  • বিভাগ 
  • অনুষদ
  • বিশ্ববিদ্যালয় 

উপর্যুক্ত তথ্য গুলো ইমেইলে সংযুক্ত করুন। কিন্তু যদি আপনি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলেঃ-

  • নাম
  • পদ
  • বিভাগ
  • প্রতিষ্ঠান 

এই তথ্য গুলো ইমেইলের শেষে সংযুক্ত করুন। তবে চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অনেকেরই একই সময়ে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি যাকে ইমেইল করছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক পদটি ব্যবহার করুন। যেমন ধরা যাক আপনি একটি অফিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (Senior Executive) এবং একই সাথে পারচেজিং কমিটি (Purchasing Comittee) এর প্রধান। এক্ষেত্রে মাল প্রদানকারী ব্যবসায়ীকে ইমেইল করলে আপনার ‘Head of the Purchasing Comittee’ পদটি ব্যবহার করাই বেশি যুক্তিযুক্ত। 

মোবাইল নম্বর প্রদান

প্রয়োজন হলে ইমেইলের শেষে নাম ও পরিচয়ের পরে মোবাইল নম্বর দেওয়ারও রীতি রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে যাকে ইমেইল করছেন তাকে মোবাইল নম্বর দেওয়ার দরকার আছে কি না। কারণ অহেতুক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করলে প্রাপক উলটো বিরক্ত হতে পারেন। 

মূলত এই সকল ধাপের মাধ্যমেই একটি ইমেইলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাবলীল ভাবে লেখা সম্ভব। তবে এর বাইরেও সমগ্র ইমেইল জুড়েই বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়, কিছু বিষয় পরিহার করতে হয়। আর সে সকল নিয়েই লেখার পরবর্তী অংশে কথা বলবো বিস্তারিত। 

ইমেইলকে কার্যকরী করে তোলার উপায় 

উপরে মূলত একটি পূর্ণাঙ্গ ইমেইল লেখার ব্যাপারেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইমেইলের বিভিন্ন অংশ লেখার বাইরেও আর বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। এতে করে ইমেইলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ- 

পেশাদার ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করুন 

ইমেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই পেশাদার ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করা উচিত। অনেকেই তা করেন না। এটি শুনতে অবাস্তব মনে হলেও মোটেও অবাস্তব নয়। বরং অনেক চাকরিপ্রার্থীই চাকরির আবেদনেও ইমেইল করেন ‘cutipie2002@…..’ এমন অ্যাড্রেস থেকে। এতে করে প্রথমেই তার উপর একটি নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হয়। তাই যেকোনো ইমেইল পেশাদার অ্যাড্রেস থেকে করুন। তেমন অ্যাড্রেস না থাকলে নতুন তৈরি করুন।

ব্যাকরণ, যতিচিহ্ন ও বানানের দিকে লক্ষ্য রাখুন

একটি ইমেইল কতটা নির্ভুল সেটিও অনেক সময় বেশ বড় প্রভাব ফেলে। যেমন চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে। তাই এ সকল ইমেইলের প্রতিটি বাক্যই সঠিক গ্রামার বা ব্যাকরণ মেনে লেখা উচিত। তার পাশাপাশি যতিচিহ্নের ব্যবহারও এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। একই সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে বানানের দিকে। প্রতিটি বানানই হওয়া চাই নির্ভুল। 

প্রুফরিড (Proofread) করুন

প্রুফরিড বলতে অনেকেই মনে করে বানান ঠিক করা। আসলে তা নয়। একটি লেখার প্রুফরিড মানে হলো ঐ লেখার সকল ভুল চিহ্নিত করার চেষ্টা করা। তাই যেকোনো ইমেইল পাঠানোর আগে বানান সহ পুরো ইমেইল ভাল ভাবে যাচাই করে নিন। 

সিসি ও বিসিসি (CC & BCC) এর সঠিক ব্যবহার

অনেকেই দীর্ঘদিন ইমেইল ব্যবহার করলেও সিসি এবং বিসিসি এর সঠিক ব্যবহার জানেন না। সিসি হলো কার্বন কপি এবং বিসিসি হলো ব্লাইন্ড কার্বন কপি। এই দুটোই ব্যবহার করা হয় একই ইমেইল একাধিক ব্যক্তিকে পাঠানোর জন্য। কিন্তু এদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। আপনি যখন সিসি তে কারও ইমেইল রাখবেন তখন ইমেইলের প্রধান প্রাপক ও সিসি তে থাকা ব্যক্তিরা ইমেইল কাদের কাদের কাছে গিয়েছে তা দেখতে পারবে। অনেকেই এটি পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে বিসিসি ব্যবহার করলে প্রধান প্রাপক বাকি প্রাপকদের দেখতে পাবেন না। তাই ইমেইল এ সিসি ও বিসিসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হওয়া উচিত। 

ইমেইল অ্যাড্রেস সবার পরে যুক্ত করুন 

যেকোনো ইমেইলে এই রিসিপেন্ট (Receipent) ফিল্ডে নূন্যতম একটি ইমেইল অ্যাড্রেস যুক্ত করতে হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই আগে ইমেইলটি যুক্ত করে এরপরে লিখতে বসেন। কিন্তু এতে করে প্রায়শই একটি সমস্যা দেখা যায়। ভুল বশত চাপ লেগে ইমেইল চলে গেলে তা আসলে খুবই অপেশাদার দেখায়। এই সমস্যা এড়াতে সম্পূর্ণ ইমেইল লিখে, যাচাই করে এরপরেই রিসিপেন্ট ফিল্ডে ইমেইল অ্যাড্রেস লেখা যুক্তিযুক্ত। 

গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল পেলে প্রেরককে নিশ্চিত করুন 

অধিকাংশ অফিসিয়াল যোগাযোগ যেহেতু ইমেইল এই হয়ে থাকে তাই ইনবক্সের বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে কর্মক্ষেত্রের ইমেইল। এর ভেতর অনেক ইমেইলই থাকতে পারে যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনি যে ইমেইলটি পেয়েছেন এবং খুলে দেখেছেন তা প্রেরককে নিশ্চিত করুন। সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে ফিরতি ইমেইলের ধরনও পরিবর্তিত হবে। যেমন আপনার অধীনে কাজ করা একজনকে জবাব দিতে চাইলে তার নাম পদবী লিখে, ‘Received with thanks’ এবং ও আপনার নাম পদবী লিখে দিলেও চলবে। আবার যদি আপনার বসের কাছ থেকে ইমেইল আসে তাহলে তার জবাবটাও সেভাবেই দিতে হবে। 

ছবির আকারের দিকে খেয়াল রাখুন 

ইমেইলে খুব বৃহৎ আকারের ছবি না পাঠানোই শ্রেয়। যদিও ইমেইলে অনেকেই উচ্চ রেজুলেশনের ছবি পাঠাতে চান। সেক্ষেত্রে অনলাইনে থাকা বিভিন্ন ফ্রি ইমেজ রেসাইজার (Image Resizer) দিয়ে ছবি গুলোকে রিসাইজ করে ছোট করে নিতে পারেন। 

ইমেইলের ট্রেইল কেটে দিন 

রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করলে আগের সকল কথোকপকথন সহ রিপ্লাই যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা বিরক্তিকর। এমথাবস্থায় সকলেরই উচিত আগের অংশ পুরোপুরি সিলেক্ট করে পূর্ববর্তী সকল ট্রেইল কেটে দেওয়া। 

লেখার ভঙ্গি যাচাই করুন

সব কিছু ঠিক থাকলেও ইমেইলটি পাঠানোর আগে ইমেইলটি এক-দুইবার পড়ে নিন। আপনার নিজের লেখাটির ভাবই বুঝতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় আমরা আমাদের মনোভাব এক ভাবে প্রকাশ করতে চাই। কিন্তু তা প্রকাশিত হয় ভিন্ন ভাবে। এমন সমস্যা এড়াতে ইমেইল পাঠানোর আগে লেখার ভঙ্গি যাচাই করে নিন। 

ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে যা যা পরিহার করবেন

ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে কি কি লিখবেন তা যেমন জানা জরুরী, তার থেকেও বেশি জানা জরুরী কি কি লিখবেন না। কারণ যা যা করা প্রয়োজন তার কোনো একটি না করলে হয়তো আপনার ইমেইল পুরোপুরি বাতিলের কাতারে পড়বে না। কিন্তু এমন কিছু যদি করে বসেন যা একদমই করা উচিত নয়, তাহলে আপনি বাকি ইমেইল যত ভাল করেই লিখুন না কেন; কোন লাভ হবে না। তাই কোন কোন বিষয় এড়িয়ে চলবেন একটি ইমেইল লেখা সময়, তা জেনে নিন বিস্তারিত। 

বাজে বা অযাচিত ভাষা পরিহার করুন

ইমেইলে এবং বিশেষ করে পেশাদার ইমেইলে যেকোনো প্রকারের গালি-গালাজ সম্পূর্ণ রকমের পরিহার করতে হবে। এমনকি যেই ব্যক্তির সাথে আপনার কিছুটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে ইমেইল করছেন, তার সাথেও ইমেইলে এ সকল বিষয় মেনে চলতে হবে। কারণ মানুষ ইমেইলকে পেশাদার মাধ্যম হিসেবেই দেখে। সেখানে বাজে বা অশালীন ভাষার ব্যবহার আপনার কার্যসিদ্ধির সকল সম্ভাবনা এক নিমিষে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।

একাধিক ফন্ট, ফন্ট সাইজ ও রঙ ব্যবহার পরিহার করুন 

আপনি যখন একটি লেখাতে একাধিক ফন্ট ব্যবহার করবেন তখন লেখাটি এমনিতেই খুব খাপছাড়া লাগবে। শুধু তাই নয়, একই ফন্টের লেখা এক অংশে ছোট আরেক অংশে বড় খুবই বেখাপ্পা লাগে। আবার অনেকে আছেই ইমেইলের লেখাতে রঙের ব্যবহারও করেন। কিন্তু এটি উলটো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনার যদি কোনো অংশকে হাইলাইট করার প্রয়োজন থাকে তাহলে সেই অংশ বোল্ড করুন। এভাবে পুরো ইমেইল জুড়েই একই ফন্ট, একই ফন্ট সাইজ এবং একই রঙ ব্যবহার করুন। 

ইমেইলে হিজিবিজি করবেন না 

ইমেইলের সৌর্ন্দয বজায় রাখতে ইমেইলকে যথা সম্ভব সহজ রাখা উচিত। বর্তমানে এখন অনেকেই অনেক ধরনের টেমপ্লেট ব্যবহার করে ইমেইল পাঠান। অনেক সময়ই টেমপ্লেট ঠিক করে কাজ করে না। আবার অনেক টেমপ্লেটই অনেক হিজিবিজি। তাই সকলের উচিত এমন টেমপ্লেট পুরোপুরি পরিহার করা। এমনকি সাধারণ ইমেইল এও অতিরিক্ত বোল্ড করা, অনেকি লিংক যুক্ত করা এসব বিষয় পরিহার করা উচিত। 

অসময়ে ইমেইল দেবেন না

কোনো কাজই অসময়ে করা উচিত নয়। ঠিক তেমনই ইমেইলও অসময়ে দেওয়া উচিত নয়। অনেকেই মনে করেন ইমেইল পাঠিয়ে রাখি, তার সময় হলে চেক করবে। কিন্তু পেশাদার জীবনে এমন কাজ করা অপেশাদারিত্বের লক্ষণ। তাই পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে ইমেইল গুলো অফিসের সময়ের মধ্যে করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় ইমেইল শিডিউল করে রাখলে। এতে করে নির্দিষ্ট সময়েই ইমেইল চলে যাবে। অফিস শুরু হওয়ার আগে সকাল ৮টা অথবা লাঞ্চ টাইমের পর পর অর্থাৎ দুপুর ২-৩টার দিকে ইমেইল শিডিউল করে রাখতে পারেন। এতে করে ইমেইলের উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে। 

সাবজেক্টে অহেতুক আর্জেন্ট (Urgent) শব্দের ব্যবহার করবেন না 

ইমেইল খোলার আগে সাবজেক্টই যেহেতু সবার চোখে পড়ে তাই অনেকেই প্রাপকের মনোযোগ টানতে অহেতুক আর্জেন্ট শব্দের ব্যবহার করেন। এমন এক ধরনের সাবজেক্ট লাইন লেখেন যা দেখে মনে হবে ইমেইলটি অত্যন্ত জরুরী কিছু। কিন্তু ভেতরে পড়ার পরে বোঝা যায় তেমন জরুরী কিছুই না। এমনটি করা একদমই অনুচিত। কারণ এতে করে প্রাপক বিরক্ত হয়ে আপনাকে স্প্যামে ফেলতে পারেন। ফলে আপনার ইমেইল আর কখনই তার ইনবক্সে সরাসরি যাবে না। 

বিনা বিবরণে লিংক পাঠাবেন না 

ইমেইল হিসেবে অনেকেই শুধু একটি লিংক পাঠিয়ে দেন। এর আগে পড়ে কিছুই লেখা থাকে না। এটি নিতান্তই ঘরের মানুষ ছাড়া অন্য যে কারো সাথে করা চূড়ান্ত অভদ্রতা। তাই ইমেইলে কোনো লিংক পাঠাতে হলে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ইমেইলে লিংকের বিবরণ লিখে তার সাথে লিংকটি যুক্ত করে দিন। 

অবশ্যই ভাইরাস চেক করে নিন

আপনার ইমেইলে পাঠানো ফাইলে যদি থাকে ভাইরাস, তাহলে এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতেই পারে না। তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পাঠানোর আগে অবশ্যই সেটি ভাইরাস মুক্ত কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন। 

অপ্রয়োজনে রিপ্লাই টু অল বাটনের ব্যবহার করবেন না

একটি ইমেইল যেমন একই সাথে অনেকের কাছেই পাঠানো যায়। তেমনই একই রিপ্লাইও অনেকের কাছেই পাঠানো যায়। এজন্যই রয়েছে রিপ্লাই টু অল বাটন। কিন্তু নিতান্তই প্রয়োজন না হলে এই বাটন ব্যবহার করা উচিত নয়। যেমন, আপনাদের কাজের আপডেট জানতে চেয়ে আপনার ডিপার্টমেন্টের হেড ইমেইল করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার আপডেট শুধু আপনার বস জানলেই চলবে। তাই এমন ক্ষেত্রে রিপ্লাই টু অল বাটন ব্যবহার করে আপনার ইমেইল সবাইকে পাঠানো নিষ্প্রয়োজন। একই সাথে অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তিকর। 

কিভাবে লিখলে ইমেইল স্প্যামে যাবে না?

আপনি যদি ইমেইল লেখেন এবং তা প্রাপক দেখার আগেই স্প্যামে চলে যায় তাহলে আপনার সময় ও পরিশ্রম দুটোই নষ্ট। আর তাই লেখার শেষ অংশে থাকছে স্প্যাম এড়িয়ে ইমেইল লেখার কিছু টিপস। 

স্প্যাম ট্রিগার করে এমন শব্দ সাবজেক্ট লাইনে এড়িয়ে চলুন 

ইমেইল স্প্যামে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো কিছু শব্দ বা শব্দ সমষ্টির ব্যবহার। এদেরকে বলে স্প্যাম ট্রিগার ওয়ার্ড (Spam Trigger Word)। মূলত প্রত্যেক ইমেইল সার্ভিস এরই স্প্যাম ধরার নিজস্ব উপায় আছে। আর কিছু শব্দাবলী সাবজেক্টে লাইনে থাকলে প্রায় সকল ইমেইল সার্ভিসই ইমেইলটিকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করে। 

  • সরাসরি কিনুন (Buy Direct) 
  • অতিরিক্ত আয় (Additional Income)
  • অতিরিক্ত আয় (Extra Income) 
  • বিক্রি বাড়ান (Increase Sales) 
  • কেন বেশি টাকা দেবেন (Why pay more?) 
  • এখন কল করুন (Call now)

এমন আরও অনেক ট্রিগার ওয়ার্ড ব্যবহারের কারণেই আপনার ইমেইলটি স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তবে এটি মূলত ইংরেজি শব্দ গুলোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। 

ইমেইলের বিষয়ের সাথে মূল বক্তব্যের মিল রাখুন 

ইমেইল সার্ভিস গুলো ইমেইলের বিষয়ের সাথে ইমেইলের মূল বক্তব্যকে মিলিয়ে দেখে। তাই এমন বিষয় ব্যবহার করুন যার সাথে আপনার ইমেইলের আসল অংশের মিল রয়েছে। ইমেইলের বিষয়ের সাথে মূল বক্তব্যের একদমই মিল না থাকলে ইমেইলটি স্প্যামে যেতেই পারে। 

আপনার ঠিকানা দিন 

উপরে ইমেইল লেখার নিয়মে ইমেইলের শুরুতে প্রাপকের নাম ও পদবির পরে ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে। একই ভাবে ইমেইলের শেষে আপনার নাম পদবীর পরেও ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে। কারণ একটি আসল ঠিকানা দিলে অনেক সময়ই ইমেইল স্প্যাম ফোল্ডারের হাত থেকে বেঁচে যায়।

লিংক কোয়ালিটি (Link Quality) চেক করুন 

আপনি যখন ইমেইলে কোনো সাইটের লিংক যুক্ত করবেন তখন অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে তার লিংক কোয়ালিটি কেমন। কারণ একেক সাইটের রেপুটেশন একেক রকম। আর ইমেইল স্প্যামে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাইট রেপুটেশন অনেকটাই প্রভাব ফেলে। তাই এমন অবস্থা এড়াতে স্বনামধন্য সাইটের লিংকই যুক্ত করুন। এছাড়াও অনলাইনে অনেক লিংক কোয়ালিটি চেকার (Link Quality Chekcer) আছে যার সাহায্যে লিংকের মান চেক করে নিতে পারেন। 

শেষকথা

বর্তমান এই যুগে ইমেইল করতে পারা কোনো বিশেষ নয় বরং প্রায় আবশ্যক একটি দক্ষতা। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বাংলাদেশের সিংহভাগেরই ইমেইল করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই। আর এটিই হয়ে উঠে চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে অন্যান্য পেশাদারি ক্ষেত্রের অন্যতম অন্তরায়। সেই প্রেক্ষিতেই লেখা হয়েছে আজকের লেখাটি। আশা করি এ সকল নিয়ম মেনে ইমেইল লিখলে আপনার লেখনী হবে অনেকটাই ফলপ্রসূ। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। ইমেইলে কোন ফন্ট গুলো ব্যবহার করবো?

উত্তরঃ ইমেইলে সাধারণত Sans Serif ফন্ট থাকে। নিজের মন মতো ফন্ট ব্যবহার করার চাইতে ইমেইল সার্ভিস থেকে যেই ফন্ট গুলো দেওয়া থেকে সেগুলো ব্যবহার করলেই ভাল। 

২। ২৫ মেগা বাইটের বেশি আকারের ফাইল পাঠাতে হলে কি করবো? 

উত্তরঃ জিমেইল ২৫ মেগাবাইটের উপরের ফাইল সরাসরি ইমেইলের সাথে পাঠাতে দেয় না। এক্ষেত্রে একটি ড্রাইভ ফোল্ডারে আপলোড করে সেটির লিংকটি ওপেন ফর অল (Open for all) হিসেবে শেয়ার করতে পারেন। 

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ

১। উইকিহাউ

২। জোহো

৩। ইনডিড

৪। গ্রামারলি 

৫। হাবস্পট 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button