উন্নয়নটেকনোলজিবাংলাদেশভ্রমন

মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম

বাংলাদেশের গণ পরিবহন ব্যবস্থায় এ দশকের সবচেয়ে বড় সংযোজন নিসন্দেহে মেট্রোরেল। একদম আনকোরা নতুন এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষের কাছে যেমন একদমই নতুন, তেমনটাই চমকপ্রদ। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অনেকেরই বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই আবার প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল স্টেশন গিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুতই বোধ করছেন। এ সকল অস্পষ্টতা কাটিয়ে মেট্রোরেল এবং মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারনা দিতেই আজকের এই লেখাটি। 

সূচিপত্রঃ

এক নজরে মেট্রোরেল

dhaka metro rail routes

মেট্রোরেলে ভ্রমন এবং মেট্রোরেলের টিকিট কাটার বিস্তারিত জানার আগে চলুন এক ঝলকে দেখা নেওয়া যাক এর সম্পর্কে কিছু তথ্য।

  • বাংলাদেশের জনপরিবহনের দুরবস্থা কাটাতে মেট্রোরেলেরজ জন্য প্রথম সুপারিশ করে বিশ্বব্যাংক।
  • বাংলাদেশী ও বিদেশী নানা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে জাইকা ২০১৬ সালে এর বিস্তারিত ডিজাইন প্রস্তুত করে। 
  • ঢাকা মেট্রোরেলের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে ঢাকা ম্যাস ট্রানসিট কোম্পানি লিমিটেড (Dhaka Mass Transit Company Limited – DMTCL)। 
  • বর্তমানে একটি লাইন চালু হলেও সমগ্র ঢাকা জুড়ে মোট ৬টি লাইন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিচের চিত্রটির সাহায্যে এই ছয়টি লাইন কোন কোন স্থানে হবে তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নিতে পারবেন। 
  • উপরে সবুজ রঙের লাইনটিই হলো বর্তমানে চালু থাকা মেট্রোরেলের একমাত্র লাইন। এটি হলো এমআরটি-৬ (MRT-6)। 
  • এই লাইনটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভবিষ্যতে মতিঝিল থেকে একটি অতিরিক্ত লাইন কমলাপুর রেলস্টেশনকে মূল লাইনের সাথে যুক্ত করবে। লাইনটির মোট বিস্তৃতি হবে ২১.১৭ কিলোমিটার। 
  • এই লাইনে স্টেশন রয়েছে মোট ১৭টি। নিচের একটি চিত্রের সাহায্যে আমরা সহজেই এর স্টেশনগুলোর ধারাবাহিক ক্রম সম্পর্কে ধারনা পাবেন। 

routes of metro rail dhaka

মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম 

লেখার এই অংশে মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে ধাপে ধাপে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। সচিত্র এই লেখাটি পুরো পড়লে আপনি নিজেই খুব সহজে মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। 

ধাপ ১ঃ মেট্রোরেল স্টেশনে গমন 

বর্তমানে আংশিক ভাবে চালু থাকা এমআরটি – ৬ এর মাত্র চারটি স্টেশন এখন ব্যবহারযোগ্য। সেগুলো হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা মধ্য, পল্লবী এবং আগারগাঁও যা যথাক্রমে এমআরটি – ৬ এর ১, ২, ৪ ও ৯ নম্বর স্টেশন। মেট্রোরেল প্রথমে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সরাসরি আগারগাঁও স্টেশন অবধি সার্ভিস দিয়ে আসলেও বর্তমানে উত্তরা মধ্য ও পল্লবী স্টেশন এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তাই মেট্রোরেলে উঠতে হলে আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে এই চারটি স্টেশনের একটিতে। 

  • উত্তরা উত্তরঃ উত্তরা উত্তর স্টেশনে যেতে উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত সরাসরি লেগুনা যায়। এছাড়াও বিআরটিসি বাস থাকে যাত্রীদের আনা নেওয়ার জন্য। 
  • উত্তরা মধ্যঃ উত্তরা মধ্য স্টেশনে পৌছাতে দিয়াবাড়ি ৫ নম্বর ব্রীজ দিয়ে এগোতে হবে। স্টেশনের স্থানটি বাকারা চত্ত্বর নামেও পরিচিত। 
  • পল্লবীঃ পল্লবী স্টেশনের নাম ‘পল্লবী’ হলেও এটি আসলে মিরপুর-১২ স্টেশন হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই স্টেশনে যেতে আপনাকে চলে যেতে হবে মিরপুর-১২ নম্বরের বাসস্ট্যান্ডে। 
  • আগারগাঁওঃ আগারগাঁও স্টেশনটি স্বভাবতই আগারগাঁও এ অবস্থিত। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঠিক সামনেই আগারগাঁও স্টেশন। 

উল্লেখ্য যে, আগামী ১লা মার্চ মিরপুর-১০ স্টেশনও খুলে দেওয়া হবে। আগারগাঁও অবধি সব স্টেশনই ২০২৩ এর মার্চ মাসের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে। 

ধাপ ২ঃ টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের লাইনে দাঁড়ানো

সিড়ি অথবা চলন্ট সিড়ি বেয়ে স্টেশন ঢোকার পরেই সাইনবোর্ডের নির্দেশনা দেখতে পাবেন। এছাড়াও ডিজিটাল ডিসপ্লেতে পরবর্তী ট্রেন কখন কোন স্টেশনে থামবে এবং আপনার স্টেশনে কখন আসবে তা নিখুঁত ভাবে দেওয়া থাকবে। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট ক্রয় করার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। 

ধাপ ৩ঃ যাত্রার ধরন নির্ধারণ করা 

টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের স্ক্রিনের প্রথমেই নিচের চিত্রের ন্যায় দৃশ্য ভেসে উঠবে। স্ক্রিনের সর্ববামে তিনটি অপশন রয়েছে ‘একক যাত্রা টিকিট’, ‘টপ-আপ’ এবং ‘কার্ডের তথ্য’। 

  • একক যাত্রা টিকিটঃ আপনি যদি মেট্রোরেলে স্বাভাবিক ভাবে একবার ভ্রমণ করতে চান তাহলে এই অপশনটি নির্ধারণ করুন। 
  • টপ-আপঃ আপনার যদি এমআরটি পাস থেকে থাকে এবং কার্ডে টাকা ভরার প্রয়োজন হয় তাহলে এই অপশনটি নির্ধারণ করুন। 
  • কার্ডের তথ্যঃ আপনার কার্ডের তথ্য জানতে হলে এই অপশনটি নির্ধারণ করুন। 

এই লেখাতে উদাহরণ হিসেবে আমি স্বাভাবিক একক যাত্রার টিকিট কেনার প্রক্রিয়াই দেখানোর চেষ্টা করেছি।

যাত্রার ধরন নির্ধারণ করা

ধাপ ৪ঃ যাত্রার গন্তব্য নির্ধারণ

সাধারণত যেই স্টেশন থেকে আপনি যাত্রা করছেন সেই স্টেশনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘যাত্রার স্টেশন’ হিসেবে নির্ধারিত হয়ে থাকে। এবার আপনাকে আপনার গন্তব্যের স্টেশনটি নির্ধারণ করতে হবে। 

প্রতিটি স্টেশনের একটি নম্বর রয়েছে এবং সেই নম্বরের পাশে স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে। যেমন আমি পল্লবী স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছি যা ৪ নম্বর স্টেশন। গোল বৃত্তের ভেতরে ৪ লেখার পাশে বৃত্তের বাইরে ‘পল্লবী’ লেখা রয়েছে। 

  • গন্তব্যের স্টেশন নির্ধারণ করতে যেই স্টেশনে যেতে চান সেই স্টেশনের বৃত্তে সাধারণভাবে ছুঁয়ে দিন। এতে স্টেশনটি গন্তব্য হিসেবে নির্ধারিত হয়ে যাবে। 
  • চাইলে ‘পূর্ববর্তী স্টেশন’ বা ‘পরবর্তী স্টেশন’ বাটনগুলোতে চাপ দিয়ে একটি একটি করে স্টেশন পার হয়ে গন্তব্যের স্টেশন নির্ধারণ করতে পারেন। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।  

স্টেশনটি গন্তব্য হিসেবে নির্ধারিত হলে নিচের চিত্রের ন্যায় দেখাবে। 

যাত্রার গন্তব্য নির্ধারণ

ধাপ ৫ঃ টিকিট সংখ্যা নির্ধারণ 

মেট্রোরেলের টিকিট কাটার সময় আপনি একবারে সর্বোচ্চ ৫টি টিকিট কাটতে পারবেন। প্রথমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট সংখ্যা একটিই নির্ধারিত থাকবে। আপনি চাইলে স্ক্রিনের হলুদ বাটন গুলো ব্যবহার করে টিকিট সংখ্যা ১ – ৫ এর মধ্যে নির্ধারণ করে দিতে পারেন। নির্ধারিত টিকিট সংখ্যা সবুজ রঙে দেখাবে। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে প্রতিটি টিকিটের গন্তব্য একই থাকবে। আলাদা আলাদা গন্তব্যের টিকিট ক্রয় করতে চাইলে আলাদা আলাদা টিকিট কাটতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে সবুজ রঙের ‘ঠিক আছে’ বাটনে স্পর্শ করুন। 

ধাপ ৬ঃ টিকিটের মূল্য পরিশোধ

এবার টিকিটের মূল্য পরিশোধের পালা। ‘ঠিক আছে’ বাটনে স্পর্শ করার পরেই নিচের স্ক্রিনটি দেখাবে। 

টিকেটের মূল্য পরিশোধ

স্ক্রিনের বাম দিকে আপনার সকল টিকিটের সর্বমোট মূল্য, প্রবেশকৃত অর্থের পরিমাণ এবং আপনি কতটাকা ফেরত পাবেন তা দেখাবে। আবার স্ক্রিনের ডান দিকে আপনার টিকিট ক্রয়ের সারাংশ থাকবে। স্ক্রিনের ডানে আপনি দেখতে পারবেন যাত্রার ধরন, যাত্রার স্টেশন, গন্তব্য, টিকিটের মূল্য, টিকিটের সংখ্যা এবং সর্বমোট মূল্য। 

স্ক্রিনে যদিও লেখা উঠবে যে ১০০০, ৫০০, ২০০ এবং ১০০ টাকার নোট গ্রহণযোগ্য নয় কিন্তু বস্তুত এ সকল নোট আপনি দিতে পারবেন। তবে ভাংতি টাকা থাকলে ভাংতি দেওয়াই ভাল। যদি আপনার টিকিট ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল হয়ে থাকে তবে ‘বাতিল’ বাটনে স্পর্শ করে ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারবেন।

টিকেটের মূল্য পরিশোধ 2

উপরের দৃশ্যে ডানদিকে দুইটি স্লট দেখতে পাচ্ছেন। এই দুইটির উপরেরটি হলো টাকা প্রবেশ করানোর স্লট, নিচেরটি হলো ফিরতি টাকা পাওয়ার স্লট। টাকা প্রবেশ করানোর স্লটে টিকিটের মূল্যের সমান বা বেশি টাকা প্রবেশ করান। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি একটি করে নোট দিন। একটি নোট দেওয়ার পরে আর টাকা না দিলে টিকিট আসবে না। নিচের চিত্রের ন্যায় কতটাকা অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন তা উল্লেখ করে দেবে।

টিকেটের মূল্য পরিশোধ 3

প্রয়োজনীয় অর্থ প্রবেশ করানোর পরে যদি আপনি কোনো টাকা ফেরত পান তাহলে তা টাকা ফেরত পাওয়ার স্লটের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। 

ধাপ ৭ঃ টিকিট সংগ্রহ

টিকিটের মূল্য পরিশোধের পরে টিকিট বিক্রয় মেশিনের স্ক্রিনের ঠিক নিচে অবস্থিত স্লটের মাধ্যমে টিকিট বেরিয়ে আসবে।

টিকেট সংগ্রহ

উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন টিকিটের স্লটের নিচের কার্ড হোল্ডারে একটি কার্ড। মূলত এই কার্ডটিই মেট্রোরেলের টিকিট। এই স্লট থেকে টিকিট বেরিয়েই কার্ড হোল্ডারে টিকিটটি জমা হয়েছে। আপনি যেই কয়টি টিকিটক্রয় করেছেন, একে একে সেই কয়টি কার্ডই এখানে জমা হবে। এবার কার্ড হোল্ডার থেকে কার্ড অর্থাৎ মেট্রোরেলের কাঙ্খিত টিকিটটি সংগ্রহ করে নিন।

ব্যাস, এর মাধ্যমেই শেষ হলো আপনার মেট্রোরেলের টিকিট কাটার প্রক্রিয়া। তবে টিকিট কাটা সম্পন্ন হলেই হবে না, জানতে হবে মেট্রোরেলের এই কার্ড ব্যবহারের কি কি নির্দেশনা রয়েছে। 

মেট্রোরেলের টিকিট ব্যবহারের নিয়ম 

  • একক যাত্রার টিকিট যেই দিন ক্রয় করেছেন সেই দিনই ব্যবহার করতে হবে। 
  • একসাথে সর্বোচ্চ ৫টি টিকিট কাটা যাবে। 
  • টিকিট কাটার পর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের গেটে যখন টিকিটটি সুইপ করবেন তখন থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মিনিট টিকিটটি ব্যবহার্য থাকবে। অর্থাৎ আপনি প্ল্যাটফর্মে উঠে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিন্তু ট্রেনের পর ট্রেন চলে গেলো, উঠলেন না। এমনটি করা যাবে না। 
  • যতটুকুর জন্য টিকিট কেটেছেন ততটুকুই যেতে পারবেন। এর বেশি গেলেও কার্ড ফেরত দেওয়ার সময় আটকে যাবেন এবং অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে। 
  • একক যাত্রার টিকিট কোনো ভাবেই স্টেশনের বাইরে নেওয়া যাবে না। 
  • টিকিট অব্যবহৃত থাকলে তা কাউন্টারে জমা দিয়ে টাকা ফেরত নিতে পারবেন। 

কাউন্টার থেকে মেট্রোরেলের টিকিট ক্রয় 

আপনি যদি টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে টিকিট কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, অথবা কোনো কারণে টিকিট বিক্রয় মেশিন বন্ধ থাকে তাহলেও রয়েছে টিকিট কাটার বিকল্প ব্যবস্থা। টিকিট বিক্রয় মেশিনের উলটো দিকেই সাধারণ ভাবে টিকিট কাটার কাউন্টার আছে। সেই কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে চাইলে আপনি আপনার গন্তব্যস্থল ও টিকিটের সংখ্যা বলে কাউন্টার থেকেই সরাসরি কিনতে পারবেন মেট্রোরেলের টিকিট।

যে সকল নোট দিয়ে মেট্রোরেলের টিকিট কাটা যাবে 

সকল নোট দিয়েই মেট্রোরেলের স্বয়ংক্রিয় মেশিন থেকে টিকিট কাটা যাবে এমনটি নয়। অনেক পুরোনো নোট হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ মেশিনে এসব নোটের ইনপুট দেওয়া হয় নি। যে সকল নোট গ্রহণযোগ্য হবেঃ 

জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিতঃ

  • ১০ টাকার নোট
  • ২০ টাকার নোট 
  • ৫০ টাকার নোট
  • ১০০ টাকার নোট
  • ৫০০ টাকার নোট 
  • ১০০০ টাকার নোট

জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যাতীতঃ 

  • জাতীয় সংসদের ছবি সম্বলিত ১০ টাকার নোট
  • জাতীয় স্মৃতি সৌধের ছবি সম্বলিত ১০০ টাকার নোট
  • জাতীয় শহীদ মিনারের ছবি সম্বলিত ১০০০ টাকার নোট। 

নিচে নোটগুলো চেনার সুবিধার্থে একটি ছবি যুক্ত করা হলো। 

মেট্রো রেলের ভারা দেয়ার জন্য নোট

উল্লেখ্য, কোনো ছেড়া, অতিরিক্ত ময়লা বা অতিরিক্ত কুচকানো নোট মেট্রোরেলের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন গ্রহণ করবে না। 

মেট্রোরেলে ভ্রমণের নিয়ম 

টিকিট ক্রয়ের পরে এবার আসল মেট্রোরেল ভ্রমণের পালা। টিকিট ক্রয় করার পরে আপনি যেই কার্ডটি পাবেন সেটি হাতে রাখুন। একাধিক কার্ড হয়ে থাকলে প্রত্যেক ভ্রমণকারীর হাতে তার নিজস্ব কার্ড দিন। এবার গেটের দিকে অগ্রসর হোন। 

ধাপ ১ঃ কার্ড সুইপ (Sweep) করা 

সাধারণ ট্রেনের সাথে মেট্রোরেলের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো, টিকিট না কিনলে আপনি মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মেই যেতেই পারবেন না। কারণ প্ল্যাটফর্ম মূলত হলো উপরের তালায়। আর টিকিট ক্রয় করতে হয় নিচের তালা থেকে। নিচ তলাতেই স্বয়ংক্রিয় গেট রয়েছে যাতে কার্ড সুইপ করার মাধ্যমে আপনি প্ল্যাটফর্মে ওঠার অংশে প্রবেশ করতে পারবেন। 

কার্ড সুইপ (Sweep) করা

স্বয়ংক্রিয় গেটের উপরে ‘হাতে কার্ড ধরে রাখা’ অঙ্কিত স্থানটিই মেট্রোরেলের কার্ড সুইপ করা যায়গা। গেটটি খুলতে এই স্থানে আপনার টিকিটটি একবার সুইপ করুন। অতঃপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেট খুলে গেলে খুব দ্রুত পার হয়ে যান। কারণ গেটটি পরবর্তী টিকিটধারীর জন্য আবার খুব দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাবে। 

ধাপ ২ঃ প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা ও ভ্রমণ 

প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা ও ভ্রমণ

গেটে কার্ড সুইপ করার পর খানিকটা হাটলেই উপরের তলায় প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য চলন্ত সিড়ির দেখা মিলবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে যেই প্ল্যাটফর্মে উঠছেন সেটিই আপনার কাঙ্খিত প্ল্যাটফর্ম কি না। যেমন পল্লবী স্টেশন থেকে উত্তরা যাওয়ার প্ল্যাটফর্ম বাম দিকে এবং আগারগাঁও যাওয়ার প্ল্যাটফর্ম ডান দিকে। প্ল্যাটফর্মে উঠে অপেক্ষা করুন। অতঃপর ট্রেন আসলে নিয়ম মেনে ট্রেনে উঠুন। উল্লেখ্য যে ট্রেনে ওঠার ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করবেন না কারণ মেট্রোরেলের দরজা খুব দ্রুতই বন্ধ হয়ে যায়।

ধাপ ৩ঃ টিকিট ফেরত দেওয়া 

সাধারণত বাংলাদেশের কোনো পরিবহনেই টিকিট ফেরত দেওয়ার বালাই নেই। তা স্বাভাবিক বটে, কাগুজে টিকিট ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন হবেই বা কেন। কিন্তু মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেহেতু এটি একটি কার্ড তাই এটি যথেষ্ট মূল্যবান। আর তাই এটি ফেরত না দিয়ে আপনি স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন না। 

টিকেট ফেরত দেওয়া

চলন্ত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসার পরেই স্বয়ংক্রিয় গেটের কার্ড স্লটে এই কার্ডটি ফেলতে হবে। তবেই খুলবে দরজা। আর কার্ড যদি কোনো ভাবে হারিয়ে ফেলেন, তাহলে অবশ্যই গুণতে হবে জরিমানা। 

মেট্রোরেলের ভাড়া 

মেট্রোরেলের ভাড়া

মেট্রোরেলে ভাড়া সাধারণ সকল যাত্রীর জন্যই এক। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আর প্রতি দুইটি স্টেশন পর পর ভাড়া বাড়বে ১০ টাকা করে। অর্থাৎ আপনি যদি উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে ওঠেন তাহলে উত্তরা মধ্য ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে যেতে পারবেন ২০ টাকাতেই। আবার পল্লবী এবং মিরপুর ১১ এই দুইটি স্টেশনের জন্যই ভাড়া সমান, ৩০ টাকা। এভাবেই প্রতি দুই স্টেশনে ১০ টাকা করে বেড়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন অবধি এমআরটি – ৬ এর সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। নিচে ভাড়ার একটি পূর্ণাঙ্গ চার্ট যুক্ত করা হলো। 

মেট্রোরেলের ভাড়ায় ছাড় 

মেট্রোরেলের ভাড়াতেও কিছুটা ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। এক্ষেত্রে

ব্যক্তি

ছাড়ের পরিমাণ 

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাবৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে ১০০% ছাড়। 
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিবৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে একক যাত্রার টিকিট ১৫% ছাড়। 
৯০ সেন্টিমিটার অবধি উচ্চতার শিশুঅভিভাবকের সাথে থাকলে ১০০% ছাড়। 
এমআরটি পাস (MRT Pass) ব্যবহারকারী প্রতি যাত্রায় ১০% ছাড়। 

মেট্রোরেলের সময়সূচি

নিচের টেবিলে মেট্রোরেলের চলাচল ও আনুষাঙ্গিক সময়সূচি উল্লেখ করা হলো। 

কাজের ধরন 

সময় 

একক যাত্রার টিকিট বিক্রয় সকাল ৮ঃ০০ টা থেকে দুপুর ১২ঃ০০ অবধি।  
এমআরটি পাস বিক্রয় সকাল ৮ঃ০০ টা থেকে দুপুর ২ঃ৩০ অবধি উত্তরা উত্তর, পল্লবী এবংআগারগাও স্টেশনে এমআরটি পাস বিক্রয় করা হয়।
মেট্রোরেল চলার সময়সকাল ৮ঃ৩০ থেকে ১২ঃ৩০ অবধি, প্রতি ১০ মিনিট পর পর। উল্লেখ্য যে, ১২টার সময়ই স্টেশনে ওঠার গেট বন্ধ হয়ে যায়। 
সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার

উল্লেখ্য যে আগামী জুন মাস থেকে মেট্রোরেল চলাচলের সময়কাল বাড়িয়ে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা অবধি করা হবে বলে আশা করা যায়।

মেট্রোরেলে ভ্রমণের বিধি নিষেধ 

গণপরিবহন হলেও বাংলাদেশের অন্যান্য গণপরিবহনের তুলনায় মেট্রোরেল অনেকটাই স্পর্শকাতর। তাই এটির সুষ্ঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু বিধি নিষেধ প্রণয়ন করা হয়েছে যা আমাদের সকলেরই মেনে চলা উচিত। উল্লেখ্য যে এ সকল বিধি নিষেধ মেট্রোরেল এবং মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্ম, সকল স্থানেই প্রযোজ্য। এ সকল বিধি নিষেধগুলো হলোঃ 

  • যেকোনো ধরনের বিপজ্জনক বস্তু যেমন চাকু, বন্দুক অথবা যেকোনো অস্ত্র বহন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। 
  • ময়লা ফেলা নিষেধ। 
  • পানের পিক বা থুতু ফেলা নিষেধ।
  • ধুমপান নিষেধ।
  • বৃহদাকার, ভারী ও দুর্গন্ধযুক্ত মালপত্র বহন নিষেধ।
  • ফেরি করা বা ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ 
  • ফোনের স্পিকার ব্যবহার করা নিষেধ।
  • খাবার খাওয়া নিষেধ। 
  • পোষা প্রাণী পরিবহন নিষেধ। 
  • যেকোনো ধরনের পোস্টার বা ব্যানার লাগানো নিষেধ 
  • অভদ্র্য ও অসৌজন্য মূলক কিছু করা নিষেধ 
  • লাইন ভাঙ্গা নিষেধ 
  • দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হলুদ ট্যাকলাইনে দাঁড়ানো নিষেধ। 
  • প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইনের উপর হাত বা শরীরের অন্য যেকোনো অঙ্গ বাড়িয়ে দেওয়া নিষেধ। 
  • প্ল্যাটফর্মের স্বয়ংক্রিয় দরজায় হাত দেওয়া ও তার উপরে কিছু রাখা নিষেধ।
  • প্ল্যাটফর্মের স্বয়ংক্রিয় দরজা খুললে তার মাঝে দাঁড়ানো নিষেধ।
  • মেট্রোরেলের নিজস্ব দরজা বন্ধ হওয়ার সময় মাঝে দাঁড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ। 
  • মেট্রোরেল চলাকালীন এর দরজায় হেলান দেওয়া নিষেধ। 
  • বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রবীণ ব্যক্তিগণ ব্যাতীত লিফটে ওঠা নিষেধ। 

শেষকথা

মেট্রোরেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই এ সম্পর্কিত বিধি নিষেধগুলো জানা ও মানাটাও আমাদের দায়িত্ব। এছাড়াও জনজীবনকে সহজ করতে মেট্রোরেলের ভূমিকা থাকতে পারে অনেকটাই। তাই এতে দ্রুত অভ্যস্থ হয়ে যাওয়াই কাম্য। আশা করি এই লেখাতে মেট্রোরেলে ভ্রমণের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জেনে হয়তো মেট্রোরেলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না আপনাকে। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১। মেট্রোরেলে বসার সুযোগ কেমন?

উত্তরঃ মেট্রোরেলে বসার তেমন একটি সুযোগ নেই। সিটের পরিমাণ অল্প যেগুলো মূলত বয়ষ্ক, অক্ষম, শিশু কিংবা মহিলাদের জন্যই। পৃথিবীর সকল দেশেই মানুষ দাঁড়িয়ে মেট্রোতে ভ্রমণ করে। কারণ এতে এক সঙ্গে বেশি মানুষ পরিবহন করা যায়। বাংলাদেশের মেট্রোরেলও তার ব্যতিক্রম নয়। 

২। মেট্রোরেল বিদ্যুতে চলে বিধায় যাত্রীদের কোনো ঝুঁকি আছে কি না?

উত্তরঃ না, সকল দেশের মেট্রোরেলই বিদ্যুতে চলে। এতে যাত্রীদের কোনো ঝুঁকি নেই। 

৩। মেট্রোরেলে গতি কেমন?

উত্তরঃ মেট্রোরেলে গতি গড়ে ৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। সর্বোচ্চ গতি ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। 

৪। মেট্রোরেলে টিকিট নিয়ে আসার কি কোনো সুযোগ আছে?

উত্তরঃ মেট্রোরেলে টিকিট অথবা কার্ডটি স্থায়ী ভাবে রাখতে চাইলে এমআরটি পাস ক্রয় করতে পারেন। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button