বয়স্ক ভাতা কি? বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম
বয়স্ক ভাতা (Old Age Allowance) – বাংলাদেশ সমাজসেবা অধিদপ্তরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উন্নয়ন কর্মসূচি। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত প্রার্থীদের অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তাই আপনার/আপনার পরিবারের/এলাকার কারো বয়স্ক ভাতা আবেদন করার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই নিবন্ধে।
অনলাইনে আবেদনের পর আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি (Print Copy) প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (Documents)-সহ স্থানীয় জনপ্রশাসন কার্যালয়ে (উপজেলা সমাজসেবা অফিসে) জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের বয়স্ক ভাতার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে।
তাই সঠিকভাবে আবেদন করতে বয়স্ক ভাতা কী, ভাতা প্রাপ্তির শর্তাবলী, অযোগ্যতা, অনলাইনে আবেদনের নিয়ম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন, কতো টাকা পাবেন ও ভাতার মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচিত হলো-
সূচিপত্রঃ
বয়স্ক ভাতা কী?
বয়স্কভাতা হলো বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর (Department of Social Services)-এর একটি উন্নয়ন কর্মসূচি। এর আওতায় দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজ করা হয়। এছাড়া পরিবার ও সমাজে বয়স্কদের মর্যাদা বৃদ্ধিও এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
বর্তমানে উপযুক্ত প্রার্থীরা সরাসরি অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে পারেন। বয়স্ক ভাতার অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জিটুপি (G2P) পদ্ধতিতে সরাসরি সরকার থেকে ভোক্তার (Government to People) নিকট পাঠানো হয়।
ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলী
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিটি- “বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা”-এর আলোকে পরিচালনা করা হয়। একজন ব্যক্তির বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো থাকতে হবে:
- আবেদনকারীর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৭ সংখ্যার) বা ভোটার আইডি কার্ড থাকতে হবে।
- যেই এলাকা থেকে আবেদন করবেন সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- ভাতা প্রাপ্তির জন্য, আবেদনকারী পুরুষ হলে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর বয়সী এবং মহিলা হলে সর্বনিম্ন ৬২ বছর বয়সী হতে হবে।
- আবেদনকারীর বার্ষিক গড় আয় ১০,০০০ টাকা বা তার কম হতে হবে।
- ভাতা প্রাপ্তির জন্য প্রাপককে, অবশ্যই উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটি (Committee) কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন/এসএসসি (SSC) বা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট (Certificate) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কমিটি কর্তৃক যাচাই করা হবে।
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী বয়সের সীমা অতিক্রম করলেও সকলেই বয়স্ক ভাতা পাবে না। যেসব ক্ষেত্রে বয়স্ক ভাতা পাবেনা, সেগুলো হলোঃ
- আবেদনকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং পেনশনভোগী হলে ভাতা পাবেন না।
- দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ডিডব্লিউএ (DWA) বা ভিজিডি (VGD) কার্ডধারী হলে ভাতার আওতাভুক্ত হবেন না।
- কোনো বেসরকারি সহযোগিতা সংস্থা (NGO)/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান পেলে আবেদনকারী ভাতা পাবেন না।
- অন্যকোনো কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত সরকারি ভাতা পেলেও আবেদনকারী বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন না।
অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে হয়। বয়স্ক ভাতার জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পেতে সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। তাছাড়া আবেদন করার পর এর তথ্য পুনরায় সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।
তাই সঠিকভাবে অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি নিচে ছবিসহ ধাপে ধাপে দেখানো হলোঃ
ধাপ ১: সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ
বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদন করতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওয়েব পেইজের, https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication-এই লিংকে প্রবেশ করুন। (যারা ইতিমধ্যে ভাতা পাচ্ছেন তাদের আবেদন করতে হবে না)
এখানে, কার্যক্রম ঘর থেকে ভাতার ধরন নির্বাচন করতে হবে। সেজন্য, নির্বাচন করুন ঘরের ডানপাশের ড্রপডাউন (Drop-down) অপশনে ক্লিক করুন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা-এই অপশনগুলো থেকে বয়স্ক ভাতা নির্বাচন করুন। এবার আবেদনের জন্য একটি সম্পূর্ণ অনলাইন ফরম দেখতে পাবেন।
ধাপ ২: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
ব্যক্তিগত তথ্য পূরণের জন্য প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে হবে। এজন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার লিখুন। জন্ম তারিখের ঘরে ক্যালেন্ডার (Calendar) অপশনে ক্লিক করে, সঠিক তারিখটি নির্বাচন করুন। (জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার অবশ্যই ১০ বা ১৭ সংখ্যার হতে হবে)।
এবার যাচাই করুন লেখাতে ক্লিক করলে আপনার এনআইডি কার্ডের (NID Card) বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। এনআইডি কার্ডের ছবিসহ সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। কোনো তথ্য পূরণ না হলে তা লিখে পূরণ করুন।
ধাপ ৩: বয়স্ক ভাতা অনুযায়ী আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য
বয়স্ক ভাতা আবেদনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ছাড়াও আবেদনকারীর কিছু বাড়তি তথ্য এখানে দিতে হবে। এই তথ্যগুলো আবেদন অনুমোদনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো হলোঃ
- বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ ইত্যাদি) নির্বাচন করুন।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া) কতোজন তা লিখুন।
- আবেদনকারীর পেশা।
- বার্ষিক আয়ের পরিমাণ।
- স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য।
- সরকারি বা বেসরকারি অন্যকোনো আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির বিবরণ।
- বাসস্থানের তথ্য (নিজস্ব, ভাড়া, গৃহহীন বা অন্যান্য)।
- কতোটুকু ভূমির মালিক তা নির্বাচন করুন।
ধাপ ৪: আবেদনকারীর যোগাযোগ ও ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য
এই ধাপে, আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানার বিবরণ দিতে হবে। যেমন-
- বিভাগ
- জেলা
- অবস্থান (ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা), আপনি যেই এলাকার আওতাধীন তা নির্বাচন করতে হবে
- উপজেলা
- পোস্ট কোড
- এবং গ্রাম/বাড়ির হোল্ডিং (Holding) নাম্বার দিতে হবে।
একইভাবে স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিন। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা অনুরূপ হলে ‘একই ঠিকানা’ লেখার পার্শ্ববর্তী ঘরে ক্লিক করুন।
এবার, আপনি যেই মোবাইল নাম্বারে ভাতার টাকা পেতে ইচ্ছুক, সেই মোবাইল নাম্বার লিখুন। একইসাথে, সেই মোবাইল নাম্বারের মালিক আপনি নাকি অন্য কেউ তা নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে সক্রিয় নগদ/বিকাশ একাউন্ট থাকা আবশ্যক।
ধাপ ৫: বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য
এখানে, বয়স্ক ভাতা আবেদনের জন্য আপনি যোগ্য কিনা সে সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর-
- বাসগৃহের তথ্য
- খানা প্রধানের বিস্তারিত তথ্য
- খানায় বিভিন্ন সুবিধা/অসুবিধা
- গত ১ বছরে আবেদনকারীর খানায় বিদেশে অবস্থানকারী কারো নিকট থেকে অর্থ পেয়েছে কিনা।
- পরিবারের কেউ গত ১ বছরে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় সহায়তা পেয়েছে কিনা ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
এসকল তথ্যগুলো আবেদন অনুমোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সব তথ্যপূরণ সম্পন্ন হলে নিচের ‘সংরক্ষণ’ বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা দিন।
বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদন ফরম ডাউনলোড
আবেদন সম্পন্ন করার পর “আপনার আবেদনটি সফলভাবে গৃহীত হয়েছে” এরকম একটি স্বয়ংক্রিয় মেসেজ দেখতে পাবেন। নিচের প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করে আবেদন ফরমটি ডাউনলোড (Download) করে নিন। এক্ষেত্রে বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদনের পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড হবে। ফরমটি প্রিন্ট করে স্থানীয় চেয়ারম্যান/পৌরসভা কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সংরক্ষণ করুন।
স্থানীয় জনপ্রশাসন কার্যালয়ে বয়স্ক ভাতা আবেদন জমা
বয়স্ক ভাতার চূড়ান্ত আবেদনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে, আবেদনের জন্য প্রয়োজন হবে-
- অনলাইনে আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- বয়স প্রমাণের প্রত্যয়ন পত্র।
- নাগরিকত্ব সনদ বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।
এসব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জমা দিন। পরবর্তীতে আবেদনের তথ্যসমূহ সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে সঠিক মানদণ্ড বিবেচনা করে যোগ্য প্রার্থীদের অনুমোদন দেওয়া হবে।
বয়স্ক ভাতা আবেদনের প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড
উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করা হয়। আবেদনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীরাই বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। প্রার্থী বাছাই করার জন্য একটি স্থানীয় কমিটি নিযুক্ত থাকে। প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ডে বিবেচিত বিষয়সমূহ হলোঃ
(১) নাগরিকত্ব: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
(২) বয়স বিবেচনা: সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিরা উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার পাবেন।
(৩) স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা: আবেদনকারীদের মধ্যে যিনি সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।
(ঘ) আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা:
- আর্থিক অবস্থা: গৃহহীন, ভূমিহীন, নিঃস্ব ও উদ্বাস্তু আবেদনকারীরা ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।
- সামাজিক অবস্থা: সামাজিকভাবে দুর্দশাগ্রস্থ, বিধবা, বিপত্নীক, তালাকপ্রাপ্ত, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এমন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
- ভূমির মালিকানা বিবেচনা: আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের বসতবাড়ি ব্যতীত জমির পরিমাণ ০.৫ একর বা তার কম, তারা ভূমিহীন বলে বিবেচিত হবেন। আর ভূমিহীনরা ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।
এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে উপযুক্ত প্রার্থীদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে নির্বাচিত বৃদ্ধরা আবেদনের সময় দেওয়া মোবাইল নাম্বারে বিকাশ/নগদ একাউন্টে জিটুপি পদ্ধতিতে টাকা পাবেন।
বাংলাদেশে কতো টাকা বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়
১৯৯৭-৯৮ সালে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি চালু হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে দরিদ্র বয়স্কদের জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা দেওয়া হতো। ত্রৈমাসিক চক্র সম্পন্ন হওয়ার পর পর একসাথে ৩০০ টাকা বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো।
বর্তমানে, ২০২৩-২০২৪ চলমান অর্থবছরে জনপ্রতি মাসিক ৬০০ টাকা দেওয়া হবে। প্রতি ৩ মাস পর পর একসাথে ১,৮০০ টাকা বয়স্ক ভাতাভোগীদের বিকাশ/নগদ/রকেট মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে জিটুপি পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে।
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির রেখাচিত্র
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে সর্বপ্রথম প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে দেশের বিপুলসংখ্যক বয়স্ক দরিদ্র ব্যক্তিদের এই ভাতার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়। ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির রেখাচিত্র কয়েকটি ধাপে নিচে দেওয়া হলোঃ
অর্থবছর | উপকারভোগীর সংখ্যা | ভাতার হার (টাকায়) | বার্ষিক বাজেট |
১৯৯৭-১৯৯৮ | দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। (মোট- ৪.০৩ লক্ষ জন) | জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা | ১২.৫০ কোটি টাকা |
২০০৮-২০০৯ | ২০ লক্ষ জন | জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা | ৬০০ কোটি টাকা |
২০০৯-২০১০ | ২২ লক্ষ ৫০ হাজার জন | জনপ্রতি মাসিক ৩০০ টাকা | ৮১০ কোটি টাকা |
২০১৬-২০১৭ | ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার জন | জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা | ১৮৯০ কোটি টাকা |
২০২৩-২০২৪ | ৫৮.০১ লক্ষ জন | জনপ্রতি মাসিক ৬০০ টাকা | ৪২০৫.৯৬ কোটি টাকা |
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের সামগ্রিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি চালু হয়। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হলো:
- বাংলাদেশের বয়স্ক নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান।
- পরিবার ও সমাজে বয়স্ক ব্যক্তিবর্গের মর্যাদা বৃদ্ধি।
- আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে, এসব বয়স্কদের অনুপ্রাণিত করা।
- বয়স্ক ব্যক্তিবর্গের চিকিৎসা সেবা ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং
করোনাকালীন সময় থেকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অনুদান, ত্রান, ভাতার নির্ধারিত অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা বিকাশ, নগদ ও রকেট মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন।
বয়স্ক ভাতা আবেদন করার পর স্থানীয় সমাজসেবা অফিস থেকে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে সমাজসেবা কর্মকর্তা আবেদনকারীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য (বিকাশ, রকেট বা নগদ) একাউন্ট খুলতে নির্দেশনা দেন।
পূর্বে ভাতার অর্থ বন্টনের সময় একটি উপজেলার সকল ভাতাভোগীকে নির্দিষ্ট ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে বয়স্ক ভাতা নিতে হতো। যা ছিল অত্যন্ত দুর্ভোগের এবং বন্টন প্রক্রিয়ায় নানারকম প্রতারণা ও দুর্নীতি হতো। বর্তমানে, সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায়। এতে করে ভাতাভোগীদের দুর্ভোগ এবং বয়স্ক ভাতা নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকটাই কমে গেছে।
শেষকথা
বয়স্ক ভাতা বাংলাদেশ সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দুস্থ ও অসহায় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। আমরা আশা করছি, উপরে উল্লেখিত বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে উপযুক্ত ব্যক্তিরা এই ভাতার জন্য সহজে আবেদন করতে পারবেন। আর তাতেই আপনি বা আপনার পরিবার/এলাকার অসহায় বয়স্করা এই ভাতা কার্যক্রমের আওতায় এসে দেশের প্রবীণ হিসেবে নূন্যতম মর্যাদাটুকু পেতে পারেন।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
(১) কতো বছর বয়সে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়?
পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর বয়স হতে হবে। জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে বয়স বিবেচনা করা হবে।
(২) বয়স্ক ভাতা আবেদনের শেষ তারিখ?
চলতি বছরে বয়স্ক ভাতার আবেদন কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে।
(৩) বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা চালু হয় কতো সাল থেকে?
দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও অসহায় জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে এবং পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়।
(৪) জিটুপি (G2P) পদ্ধতি কী?
জিটুপি (G2P) পদ্ধতি হলো সেই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে (Government to Person) অর্থাৎ সরকার থেকে সরাসরি উপকারভোগী মানুষের কাছে ভাতার অর্থ প্রেরণ করা হয়।